জার্মান ভাষা

জার্মান ভাষা (ⓘ ডয়চ্‌, আ-ধ্ব-ব ) জার্মান জাতি, তাদের নিকটাত্মীয় কিংবা ইতিহাসের কোন পর্যায়ে তাদের সাথে রাজনৈতিকভাবে একতাবদ্ধ আরও কিছু জাতির মুখের ভাষা। বংশগতভাবে এই ভাষা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা-পরিবারের জার্মানিয় উপ-পরিবারের পশ্চিম শাখার নেদারল্যান্ডীয়-জার্মান দলের অন্তর্গত একটি ভাষা। জার্মান ভাষার উপভাষাগুলিকে উচ্চ জার্মান (যার মধ্যে মান্য সাহিত্যিক জার্মান অন্তর্গত) এবং নিম্ন জার্মান – এই দুই দলে ভাগ করা যায়। জার্মান ভাষার উপভাষাগুলি সুইজারল্যান্ডের উত্তরাংশ থেকে শুরু হয়ে অবিচ্ছিন্নভাবে উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে উত্তর সাগর পর্যন্ত চলে গেছে।

জার্মান ভাষা
Deutsch, Deutsche Sprache
উচ্চারণ[ˈdɔʏtʃ]
দেশোদ্ভবপ্রধানত ইউরোপে জার্মান-ভাষী, যেমন একটি সংখ্যালঘু ভাষা এবং বিশ্বব্যাপী জার্মান অভিবাসীদের মধ্যে
মাতৃভাষী
স্ট্যান্ডার্ড জার্মান: ৯০ মিলিয়ন (১৯৯০) – ৯৮ মিলিয়ন (২০০৫)
মোট জার্মান: ১২০ মিলিয়ন (১৯৯০–২০০৫)
এল২ ভাষী: ৮০ মিলিয়ন (২০০৬)
ইন্দো-ইউরোপীয়
  • জার্মানিয়
    • পশ্চিম জার্মানিয়
      • উচ্চ জার্মানিয়
        • জার্মান ভাষা
লাতিন (জার্মান বর্ণমালা)
সরকারি অবস্থা
সরকারি ভাষা
জার্মান ভাষা ইউরোপীয় ইউনিয়ন
(সরকারি এবং কাজের ভাষা)

জার্মান ভাষা জার্মানি
জার্মান ভাষা অস্ট্রিয়া
জার্মান ভাষা  সুইজারল্যান্ড
জার্মান ভাষা লিশ্‌টেনশ্‌টাইন
জার্মান ভাষা লুক্সেমবুর্গ

জার্মান ভাষা বেলজিয়াম
(বেলজিয়ামের জার্মান-ভাষী কমিউনিটি)
সংখ্যালঘু ভাষায় স্বীকৃত
জার্মান ভাষা চেক প্রজাতন্ত্র
জার্মান ভাষা ডেনমার্ক
জার্মান ভাষা হাঙ্গেরি

জার্মান ভাষা কাজাখস্তান
জার্মান ভাষা ইতালি
(ত্রেন্তিনো)

জার্মান ভাষা নামিবিয়া (জাতীয় ভাষা;সরকারি ভাষা ১৯৮৪-৯০)
জার্মান ভাষা পোল্যান্ড (ওপোলে ভোইভোদেশীপের ২৮টি মিউনিসিপালিটির এবং সিলেসিয়ান ভোইভোদেশীপের ১টির সহায়ক ভাষা)
জার্মান ভাষা রোমানিয়া
জার্মান ভাষা রাশিয়া
জার্মান ভাষা স্লোভাকিয়া (ক্রাহুলে/Blaufuß এর পৌর অফিসিয়াল ভাষা)
জার্মান ভাষা ভ্যাটিকান সিটি (সুইস গার্ড এর প্রশাসনিক এবং সৈনিক ভাষা)
নিয়ন্ত্রক সংস্থাকোন সরকারি নিয়ন্ত্রণ নয়
জার্মান লিখনবিধি কাউন্সিল (Rat für deutsche Rechtschreibung) অনুযায়ী জার্মান লিখনবিধি নিয়ন্ত্রিত।
ভাষা কোডসমূহ
আইএসও ৬৩৯-১de
আইএসও ৬৩৯-২ger (বি)
deu (টি)
আইএসও ৬৩৯-৩বিভিন্ন প্রকার:
deu – New High German
gmh – Middle High German
goh – Old High German
gct – Alemán Coloniero
bar – Austro-Bavarian
cim – Cimbrian
geh – Hutterite German
ksh – Kölsch
nds – Low German
sli – Lower Silesian
ltz – Luxembourgish
vmf – Main-Franconian
mhn – Mócheno
pfl – Palatinate German
pdc – Pennsylvania German
pdt – Plautdietsch
swg – Swabian German
gsw – সুইস জার্মান
uln – Unserdeutsch
sxu – Upper Saxon
wae – Walser German
wep – Westphalian
লিঙ্গুয়াস্ফেরা52-AC (মহাদেশীয় পশ্চিম জার্মানিক) > 52-ACB (জার্মান ও ডাচ) >
52-ACB-d (Central German incl. 52-ACB–dl & -dm Standard/Generalised High German) + 52-ACB-e & -f (Upper German & Swiss German) + 52-ACB-g (Yiddish) + 52-ACB-h (émigré German varieties incl.
52-ACB-hc Hutterite German & 52-ACB-he Pennsylvania German etc.) + 52-ACB-i (Yenish); totalling 285 varieties: 52-ACB-daa to 52-ACB-i
জার্মান ভাষা

জার্মানভাষী অঞ্চলের সর্বত্র ভাষাটি একই রকম নয়; এর বহু উপভাষা রয়েছে। জার্মানের কোন স্থানীয় উপভাষা তার আশেপাশের অন্যান্য উপভাষা অঞ্চলের মানুষ সহজে বুঝতে পারলেও দূরবর্তী অঞ্চলের জার্মানভাষীরা সেভাবে না-ও বুঝতে পারেন।

বর্তমানে সারা পৃথিবী জুড়ে প্রায় ১১ কোটি মানুষ মাতৃভাষা হিসেবে এবং আরও প্রায় ১ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে জামার্ন ভাষায় ভাব-আদান প্রদান করে থাকেন।

বৈশিষ্ট্য

জার্মান ভাষার গঠন কিছু নির্দিষ্ট ব্যঞ্জনের অনেকগুলি নিয়মতান্ত্রিক পরিবর্তন বা সরণের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়েছে। প্রথমেই জার্মানিয় ব্যঞ্জনধ্বনি সরণের মাধ্যমে প্রত্ন-জার্মানিয় ভাষাগুলি অন্যান্য ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগুলি থেকে আলাদা হয়ে যায়। গ্রিমের সূত্র অনুসারে এই সরণে ইন্দো-ইউরোপীয় প, ট ও ক ধ্বনিগুলি জার্মানিয় ফ, ঠ ও হ-তে পরিবর্তিত হয়ে যায়; ব, ড ও গ ধ্বনিগুলি জার্মানিয় প, ট, ও ক ধ্বনিতে এবং একইভাবে ভ, ঢ ও ঘ ধ্বনিগুলি জার্মানিয় ব, ড ও গ-তে রূপান্তরিত হয়।

পশ্চিম জার্মানিয় ভাষাগুলি নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ধারণ করার পর ৫ম ও ৭ম শতকের মাঝামাঝি সময়ে উচ্চ জার্মান ব্যঞ্জনধ্বনি সরণ ঘটে, যার ফলে বর্তমান উচ্চ জার্মান উপভাষাগুলি অন্যান্য পশ্চিম জার্মানিয় ভাষাগুলি থেকে আলাদা হয়ে যায়। এই সরণে জার্মানিয় প (p) ধ্বনিটি শব্দের আদিতে, ব্যঞ্জনের পরে, কিংবা দ্বিত্বকরণের সময় প্‌ফ (pf)-তে পরিণত হয়, যেমন - উচ্চ জার্মান Apfel, নিম্ন জার্মান Aupel। আবার একই p শব্দের মাঝে বা শেষে স্বরধ্বনির পরে বসলে উচ্চ জার্মানে ff কিংবা f-এ পরিণত হয়, যেমন - উচ্চ জার্মান hoffen, নিম্ন জার্মান hopfen। একই শর্তের অধীনে জার্মানিয় t উচ্চ জার্মানে z (তথা ৎস)-তে বা ss-এ পরিণত হয়। স্বরধ্বনির পর k পরিণত হয় ch-এ। এরকম আরও বেশ কিছু পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল।

জার্মান ভাষা এবং অন্যান্য সমস্ত জার্মানিয় ভাষার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল উচ্চারণের শব্দের প্রথম অক্ষরে প্রধান ঝোঁক বা শ্বাসাঘাত (stress) পড়ে। তবে ক্রিয়ামূলক শব্দে উপসর্গে নয়, বরং ধাতুমূলেই ঝোঁক পড়ে।

ধ্বনিতত্ত্ব

জার্মান ভাষার প্রধান ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগুলি এরকম:

  • সরল শব্দের বা শব্দাংশের শুরুতে স্বরধ্বনিতে ঝোঁক পড়লে তার আগে কন্ঠনালীয় স্পর্শধ্বনি উচ্চারিত হয়।
  • u, o, ö, ü উচ্চারণের সময় ঠোঁট গোল রাখতে হয়।
  • দীর্ঘ স্বরধ্বনিগুলি টানটানভাবে উচ্চারিত হয়, আর হ্রস্বস্বরগুলি হালকাভাবে উচ্চারিত হয়।
  • r জিহ্বা দিয়ে কিংবা কন্ঠ্যধ্বনি হিসেবে উচ্চারিত হতে পারে।
  • স্বরধ্বনির আগে কিংবা দুই স্বরধ্বনির মাঝখানে বসলে অঘোষ s, ঘোষ হয়ে z-এর মত উচ্চারিত হয়।
  • শব্দের শেষে b, d, g এই ঘোষ ধ্বনিগুলি অঘোষ p, t, k হিসেবে উচ্চারিত হয়।
  • দুইটি ঘৃষ্ট ধ্বনি pf (প্‌ফ) এবং ts (ৎস) জার্মান ভাষার বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
  • w ধ্বনিটি v-এর মত এবং v ধ্বনিটি f-এর মত উচ্চারিত হয়।
  • কেবল ফরাসি থেকে ধার করা শব্দগুলিতেই স্বরধ্বনির নাসিক্যভবন ঘটে।

ব্যাকরণ

জার্মান একটি বিভক্তিগত (inflectional) ভাষা। এতে তিনটি ব্যাকরণিক লিঙ্গ ও চারটি কারক রয়েছে। বিশেষণগুলি সবল ও দুর্বল দুইভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। শব্দবিভক্তি ও ক্রিয়াবিভক্তির কারণে অন্যান্য বিভক্তিগতভাবে দুর্বল ভাষার তুলনায় জার্মান ভাষায় সহজেই বাক্যের কোন্‌ শব্দটি কী পদ (বিশেষ্য, বিশেষণ, ক্রিয়া, ইত্যাদি) তা বলে দেয়া যায়।

জার্মান ভাষার বাক্যে পদক্রম কঠোর নিয়ম মেনে চলে। উদাহরণস্বরূপ ক্রিয়াবিশেষণ, পূর্বসর্গীয় পদ কিংবা আশ্রিত খণ্ডবাক্যের উপস্থিতিতে অবধারিতভাবে মূল বাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয় জায়গা বদল করে। সম্বন্ধবাচক সর্বনাম কিংবা সংযোজক অব্যয় দ্বারা শুরু হওয়া আশ্রিত খণ্ডবাক্যে ক্রিয়া সর্বদা শেষে বসে।

জার্মান ভাষায় নতুন শব্দ গঠনে উপসর্গ, প্রত্যয়সমাসের ব্যাপক ব্যবহার করা হয়, ফলে Kraftfahrzeug-এর মত শব্দ জার্মানে প্রায়ই দেখা যায় (Kraftfahrzeug 'মোটরযান': Kraft 'শক্তি', + fahren/fahr 'গাড়িচালনা', + zeug 'যন্ত্র')। জার্মান ভাষার কবিতা ও দর্শনের শব্দভাণ্ডার এবং বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি পরিভাষা খুবই সমৃদ্ধ।

উপভাষা

জার্মান ভাষা 
ইউরোপে জার্মান ভাষার আইনি মর্যাদা:
  জার্মান ভাষাঞ্চল বা "ষ্প্রাখরাউম" (Sprachraum): সরকারি ভাষা (আইনগতভাবে অথবা বাস্তব জীবনে) এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের মাতৃভাষা
  সহ-সরকারী ভাষা, তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের মাতৃভাষা নয়।
  জার্মান (বা জার্মানের কোন উপভাষা) আইনগতভাবে সংখ্যালঘু ভাষা হিসেবে স্বীকৃত। (যেখানে বর্গক্ষেত্র হিসেবে দেখানো হয়েছে, সেখানে ভৌগোলিক বিস্তার অত্যধিক লঘু বা মানচিত্রের তুলনায় অত্যন্ত ক্ষুদ্র।)
  জার্মান (বা এর কোন রূপ) উল্লেখযোগ্য মাপের সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ভাষা, কিন্তু এর কোন আইনগত স্বীকৃতি নেই।

উচ্চ জার্মান

পূর্বে আখেন শহর থেকে শুরু হয়ে ডুসেলডর্ফ, কাসেল, মাগডেবুর্গ ও বার্লিন শহরের দক্ষিণ দিয়ে ফ্রাঙ্কফুর্ট পর্যন্ত চলে যাওয়া একটি কাল্পনিক রেখার দক্ষিণে লোকেরা উচ্চ জার্মান ভাষায় কথা বলে। উচ্চ জার্মানকে আবার ঊর্ধ্ব জার্মান ও মধ্য জার্মান এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়। সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, লিশ্‌টেনশ্‌টাইন ও দক্ষিণ জার্মানিতে ঊর্ধ্ব জার্মান ভাষা প্রচলিত। আর লুক্সেমবুর্গ ও মধ্য জার্মানিতে মধ্য জার্মান ভাষা প্রচলিত।

ঊর্ধ্ব জার্মান ভাষা আবার নিচের শাখাগুলি নিয়ে গঠিত:

  • আলেমানীয়: এটি বাডেন-ভ্যুর্টেমবের্গ ও আলজাসের দক্ষিণাংশে, বায়ার্নের দক্ষিণ-পশ্চিম কোনায়, এবং সুইজারল্যান্ডের জার্মানভাষী এলাকাগুলিতে, বিশেষ করে বাজেল, জুরিখবের্ন শহরে প্রচলিত।
  • বাভারীয়-অস্ট্রীয়: ন্যুর্নবের্গের দক্ষিণে ও লেশ নদীর পূর্বে দক্ষিণ-পূর্ব জার্মানিতে (যার মধ্যে মিউনিখ শহর পড়েছে) এবং অস্ট্রিয়ায় (ইন্সব্র্যুক, ভিয়েনা, ও গ্রাৎস শহর যার মধ্যে পড়েছে) প্রচলিত।
  • ফ্রাঙ্কোনীয়: দক্ষিণ ফ্রাঙ্কোনীয় উপভাষাগুলি কার্লসরুয়ে ও হাইলব্রনের মাঝামাঝি এলাকায়, এবং পূর্ব ফ্রাঙ্কোনীয় উপভাষাগুলি ন্যুর্নবের্গ, ভ্যুর্ৎস্‌বুর্গ, বামবের্গ, ও ফুলডার আশেপাশের এলাকায় প্রচলিত।
  • লাঙ্গোবার্ডীয়: এক সময় এটি বর্তমান ইতালির লোম্বার্দিয়াতে জার্মানিয় গোত্র লাংগোবার্ডদের মধ্যে প্রচলিত ছিল। বর্তমানে এটি ঐ এলাকার কিয়দংশে এখনো বেঁচে আছে। এই উপভাষাটি ঐতিহাসিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেননা এটিই জানামতে প্রাচীনতম জার্মান উপভাষা (৭ম শতকের মাঝামাঝিতে এর জন্ম)। জার্মান ভাষার বাকী উপভাষাগুলির ইতিহাস এত অতীত পর্যন্ত খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি।

মধ্য জার্মান ভাষাগুলি নিচের শাখাগুলিতে বিভক্ত:

  • রাইন-ফ্রাঙ্কোনীয়: প্‌ফাল্‌ৎস ও হেসেনের অধিকাংশ এলাকায় প্রচলিত। এর মধ্যে মাইন্‌ৎস, হাইডেলবের্গ, ফ্রাংকফুর্ট আম মাইন এবং মারবুর্গ আন ডের লান পড়েছে।
  • মোজেল-ফ্রাঙ্কোনীয়: ট্রিয়ার শহরকে কেন্দ্র করে মোজেল নদীর দুই তীরে প্রচলিত।
  • রিপুয়ারীয়: আখেনকোলন শহরের মধ্যবর্তী এলাকায় প্রচলিত।
  • টুরিঙ্গীয়: ভাইমার, ইয়েনা, ও এরফুর্ট-এর চারপাশের এলাকায় প্রচলিত।
  • ঊর্ধ্ব-স্যাক্সন: জাখ্‌সেন রাজ্যে প্রচলিত। এর মধ্যে ড্রেসডেনলাইপ্‌ৎসিশ শহর পড়েছে।
  • সাইলেসীয়: নিম্ন ও ঊর্ধ্ব সাইলেসিয়ায় এবং পোল্যান্ডের ভ্রোকলাউ-এর উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্বে প্রচলিত।

নিম্ন জার্মান

নিম্ন জার্মান (Plattdeutsch) নিচের শাখাগুলি নিয়ে গঠিত:

  • নিম্ন ফ্রাংকোনীয়: নেদারল্যান্ডস ও জার্মানির সীমান্তবর্তী এলাকায় সরু অঞ্চলে প্রচলিত। ওলন্দাজফ্লেমিশ ভাষার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।
  • নিম্ন স্যাক্সন: উত্তরের নিম্নভূমিতে পূর্বে ও উত্তর-পূর্বে এল্‌বে নদী পর্যন্ত প্রচলিত। এর মধ্যে ম্যুন্‌স্টার, কাসাল, ব্রেমেন, হানোভার, হামবুর্গ ও মাগডেবুর্গ শহর পড়েছে।

বাল্টিক অঞ্চলে জার্মান নাইটদের উপনিবেশ স্থাপনের সুবাদে এল্‌বে নদীর পূর্বে ব্রান্ডেনবুর্গ, মেকলেনবুর্গ, পোমেরানিয়া ও প্রুশিয়ার অংশবিশেষেও নিম্ন জার্মান প্রচলিত।

বিস্তার

জার্মানিতে প্রায় সাড়ে সাত কোটি মানুষ জার্মান ভাষায় কথা বলেন। অস্ট্রিয়াতে ৭৫ লক্ষ, সুইজারল্যান্ডে প্রায় ৫০ লক্ষ এবং কাজাকিস্তানে ১০ লক্ষ মানুষের মাতৃভাষা জার্মান। এছাড়া লিশ্‌টেনশ্‌টাইন, লুক্সেমবুর্গ, ইতালি, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, রোমানিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরি, ও রাশিয়া-তেও জার্মান ভাষাভাষীরা বাস করেন। পর্তুগাল, স্পেন, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ড্‌স, এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় অনেক বিদেশী জামার্ন ভাষাভাষীও (অর্থাৎ মাতৃভাষী নন, কিন্তু স্বচ্ছন্দে জার্মান বলেন) দেখতে পাওয়া যায়।

ইউরোপ ও প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের বাইরে সবচেয়ে বেশি জামার্ন ভাষাভাষী অঞ্চল হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রধান স্থান দখল করেছে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক-চতুর্থাংশ লোকই জার্মান রক্ত বহন করেন। ব্রাজিল (প্রায় ১৫ লক্ষ) এবং আর্জেন্টিনায় (৪ লক্ষ) ২০০ বছর আগেও জামার্ন ভাষাভাষীর সংখ্যা ছিল অনেক, কিন্তু পরবর্তীকালে এই ভাষায় চর্চার গুরুত্ব কমে যাওয়ায় সংখ্যাও অনেক অনেক কমে আসে। কানাডাতেও প্রায় ৫ লক্ষ জার্মান ভাষাভাষী আছেন।

ইতিহাস

১৪শ শতকের মাঝমাঝি পর্যন্ত লাতিন ভাষা ছিল রোমান সাম্রাজ্যের সরকারি লেখ্য ভাষা। সেসময় বর্তমান কালের বেশির ভাগ জার্মানভাষী এলাকা রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। রোমান সম্রাট চতুর্থ লুইসের শাসনামলে (১৩১৪-৪৭) এই এলাকায় জার্মান ভাষা আদালতের ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এরপর ১৪৮০ থেকে ১৫০০ সালের মধ্যে জাখসেন ও মাইসেনের বহু পৌর এলাকা ও আদালতে জার্মান ভাষা সরকারীভাবে ব্যবহার করা শুরু হয়। একই সময় লাইপৎসিশ ও ভিটেনবের্গ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও জার্মান ভাষায় পাঠদান শুরু করে। ১৫০০ সাল নাগাদ জাখসেন ও ট্যুরিঙ্গেনের সব জায়গায় জার্মান সরকারি ভাষায় পরিণত হয় এবং শিক্ষিত শ্রেণী এটিকে লেখ্য ভাষা হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করে। এছাড়াও এ সময় পূর্ব-মধ্য জার্মান শহর যেমন ভিটেনবের্গ, এরফুর্ট, ও লাইপৎসিশ এবং পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমের মাইনৎস, স্ট্রাসবুর্গ, বাজেল, ন্যুর্নবের্গ, আউগসবুর্গ, ইত্যাদি শহরগুলিতে বইয়ের মুদ্রণের হার বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে লিখিত সাহিত্যিক ভাষার আঞ্চলিক পার্থক্য কমে আসে ও ভাষাটি একটি আদর্শ রূপ পরিগ্রহ করতে শুরু করে।

১৬শ শতকের প্রথম ভাগে পূর্ব-মধ্য জার্মানিতে এরফুর্ট, মাইসেন, ড্রেসডেন, লাইপৎসিশ শহর এলাকায় আদর্শ লিখিত জার্মান ভাষার উদ্ভব ঘটে। এই অঞ্চলের লোকেরা আদিতে আরও পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমে বাস করতেন ও বিভিন্ন উচ্চ জার্মান উপভাষায় কথা বলতেন। মার্টিন লুথারের করা বাইবেলের জার্মান অনুবাদ, ধর্মীয় প্রশ্নোত্তর পুস্তিকা, ধর্মীয় গানের বই, ইত্যাদির মাধ্যমে উচ্চ জার্মান ভিত্তিক এই আদর্শ লিখিত ভাষা ধীরে ধীরে পূর্ব মধ্য জার্মানি থেকে জার্মানির বাকী অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে উচ্চ জার্মান জার্মানির সাহিত্যিক ভাষায় পরিণত হয়। ১৬০০ সালের মধ্যেই সাহিত্যিক ভাষাটি সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়, তবে এটি ১৮শ শতকের মধ্যভাগে এসে এর বর্তমান রূপ ধারণ করে।

বিংশ শতাব্দীর আগ পর্যন্তও জার্মানির বিভিন্ন অংশে ও ইউরোপের অন্যান্য যেসমস্ত এলাকায় জার্মান প্রচলিত ছিল, সে সব জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন জার্মান বানানের নিয়ম অনুসরণ করা হত। এই সমস্যা দূর করতে ১৯০১ সালে উত্তর জার্মানি, দক্ষিণ জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ডের প্রতিনিধিরা একটি সম্মেলনে অংশ নেন ও একটি অভিন্ন বানানের নিয়ম তৈরি করেন, যা পরবর্তীত ধীরে ধীরে লোকে মেনে নেয়। জার্মান ভাষাতাত্ত্বিক কনরাড ডুডেন-এর লেখা Rechtschreibung der Deutschen Sprache (জার্মান ভাষার বানানের নিয়ম) বইতে এই নিয়মটি বর্ণনা করা হয়েছে।

জার্মান ভাষার কোন সর্বমান্য আদর্শ উচ্চারণ নেই। তবে ১৮৯৮ সালে একটি কমিশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও জার্মান থিয়েটারের প্রতিনিধিদের দিয়ে গঠিত একটি কমিশনে এ ব্যাপারে কাজ হয়, যার ফলশ্রুতিতে আদর্শ উচ্চারণের কতগুলি রীতিনীতি গড়ে উঠেছে। এ সত্ত্বেও উচ্চ শিক্ষিত জার্মানদের ভাষাতেও আঞ্চলিক টান এসে পড়ে এবং এদের মধ্যে অনেকগুলি আঞ্চলিক টান (বিশেষত স্‌ভাবিয়া, জাখসেন, অস্ট্রিয়া, সুইজ্যারল্যান্ড) এতটাই প্রকট যে শুনেই বলে যায় বক্তা কোন্‌ অঞ্চলের অধিবাসী।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Tags:

জার্মান ভাষা বৈশিষ্ট্যজার্মান ভাষা ধ্বনিতত্ত্বজার্মান ভাষা ব্যাকরণজার্মান ভাষা উপভাষাজার্মান ভাষা বিস্তারজার্মান ভাষা ইতিহাসজার্মান ভাষা আরও দেখুনজার্মান ভাষা তথ্যসূত্রজার্মান ভাষা বহিঃসংযোগজার্মান ভাষাআন্তর্জাতিক ধ্বনিমূলক বর্ণমালাইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা-পরিবারউচ্চ জার্মান ভাষাসমূহউত্তর সাগরচিত্র:De-Deutsch.oggজার্মান জাতিসুইজারল্যান্ড

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

ভিটামিনডিএনএবাংলাদেশের সংবাদপত্রের তালিকাসমাজবিজ্ঞানবাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীদের তালিকাবিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সগুলঞ্চসালোকসংশ্লেষণব্যঞ্জনবর্ণঅক্ষয় তৃতীয়াঅমর্ত্য সেনধরিত্রী দিবসএরিস্টটলসমাসআবু হানিফাতুরস্কবাঙালি হিন্দুদের পদবিসমূহহনুমান (রামায়ণ)ক্যান্সাররামকাজী নজরুল ইসলামের রচনাবলিগণতন্ত্রবিজ্ঞাপনবঙ্গবন্ধু সেতুভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪শেখ মুজিবুর রহমানমুজিবনগরসাঁওতাল বিদ্রোহআবদুল হামিদ খান ভাসানীফরাসি বিপ্লবউত্তম কুমারভৌগোলিক নির্দেশকবাংলাদেশের নদীবন্দরের তালিকাজয় চৌধুরীচৈতন্যচরিতামৃতসংস্কৃতিপদ্মশ্রীআয়াতুল কুরসিবাস্তুতন্ত্ররাজনীতিভারত বিভাজনইউরোপবাংলাদেশের সংবিধানঅসমাপ্ত আত্মজীবনীঅসহযোগ আন্দোলন (১৯৭১)তাপপ্রবাহতক্ষকরক্তশূন্যতানোরা ফাতেহিচিরস্থায়ী বন্দোবস্তবাংলাদেশ পুলিশবাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সূরা ফাতিহাজনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় (বাংলাদেশ)ভরিবাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীঅর্থ মন্ত্রণালয় (বাংলাদেশ)ব্যবস্থাপনাভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্মবাংলা ভাষা আন্দোলনদৈনিক ইনকিলাববিভিন্ন ধর্ম ও বিশ্বাসের তালিকাবাংলাদেশের জনগণের মৌলিক অধিকারথানকুনিঢাকা কলেজস্ক্যাবিসপানিচক্রকবিতাফিলিস্তিনরূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রহারুন-অর-রশিদ (পুলিশ কর্মকর্তা)হরিচাঁদ ঠাকুররাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়বঙ্গভঙ্গ (১৯০৫)পূর্ণিমাবাংলাদেশের সর্বাধিক ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রসমূহের তালিকাচট্টগ্রাম জেলাতাপমাত্রা🡆 More