করোনাভাইরাস রোগ ২০১৯ বা কোভিড-১৯ মানুষের একটি সংক্রামক ব্যাধি যা গুরুতর তীব্র শ্বাসযন্ত্রীয় রোগলক্ষণসমষ্টি সৃষ্টিকারী করোনাভাইরাস ২ (সার্স-কোভ - ২) নামক এক ধরনের ভাইরাসের আক্রমণে হয়ে থাকে। এই ব্যাধিটি সর্বপ্রথম ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনে শনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ২০২০ সালের প্রারম্ভে ব্যাধিটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং বৈশ্বিক মহামারীর রূপ ধারণ করে। ব্যাধিটির সাধারণ উপসর্গ হিসেবে জ্বর, সর্দি এবং শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে মাংসপেশীর ব্যথা, বারবার থুতু সৃষ্টি এবং গলায় ব্যথা দেখা যেতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উপসর্গগুলো নমনীয় আকারে দেখা যায়, কিন্তু কিছু গুরুতর ক্ষেত্রে ফুসুফুস প্রদাহ (নিউমোনিয়া) এবং বিভিন্ন অঙ্গের বিকলতাও দেখা যায়। সংক্রমিত হবার পরে এই ব্যাধিতে মৃত্যুর হার গড়ে ১.১%, যেখানে ২০ বছরের নিচের রোগীদের মৃত্যুর হার ০.২% এবং ৮০ বছরের ঊর্ধ্বে রোগীদের প্রায় ১৫%।
করোনাভাইরাস রোগ ২০১৯ (কোভিড-১৯) | |
---|---|
প্রতিশব্দ |
|
কোভিড-১৯ লক্ষণসমূহ | |
উচ্চারণ | |
বিশেষত্ব | তীব্র শ্বসনতন্ত্র সংক্রমণ |
লক্ষণ | জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট |
জটিলতা | নিউমোনিয়া, আর্ডস, যকৃৎ বিকল |
কারণ | সার্স-কোভ-২ |
ঝুঁকির কারণ | প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করা |
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি | rRT-PCR পরীক্ষা, ইমিউনিঅ্যাসে, সিটি স্ক্যান |
প্রতিরোধ | সঠিকভাবে হাত ধোয়ার পদ্ধতি অনুসরণ, কাশি শিষ্টাচার, অসুস্থ মানুষ বা সাবক্লিনিক্যাল বাহকের সাথে সংস্পর্শ এড়ানো |
চিকিৎসা | উপসর্গবিশিষ্ট এবং সহায়তামূলক |
সংঘটনের হার | ৬১,২৫,২৬,৯৪৮ জন চিহ্নিত রোগী |
মৃতের সংখ্যা | ৬৫,২৮,১০৫ (নিশ্চিত রোগীর ১%) |
এই রোগ সাধারণত সংক্রমিত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে সৃষ্ট বায়ুকণা থেকে ছড়ায়। এছাড়া সংক্রমিত ব্যক্তির জীবাণু হাঁচি-কাশির কারণে বা জীবাণুযুক্ত হাত দিয়ে স্পর্শ করার কারণে পরিবেশের বিভিন্ন বস্তুর পৃষ্ঠতলে লেগে থাকলে এবং সেই ভাইরাসযুক্ত পৃষ্ঠতল অন্য কেউ হাত দিয়ে স্পর্শ করে নাকে-মুখে-চোখে হাত দিলে করোনাভাইরাস নাক-মুখ-চোখের শ্লেষ্মাঝিল্লী দিয়ে দেহে প্রবেশ করে। আক্রান্ত হওয়ার ২-১৪ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়; গড়ে ৫ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা যায়। সাধারণত নাক কিংবা গলার শ্লেষা পরীক্ষাগারে নিয়ে বিপরীত প্রতিলিপিকরণ পলিমার শৃঙ্খল বিক্রিয়ার (rRT-PCR) মাধ্যমে রোগনির্ণয় করা হয়। এছাড়াও স্বাস্থঝুঁকি, বক্ষের সিটি চিত্রগ্রহণের (সিটি স্ক্যানের) মাধ্যমে ফুসফুস প্রদাহের (নিউমোনিয়ার) উপস্থিতি এবং উপসর্গ থেকেও ব্যাধিটি নির্ণয় করা যায়।
করোনাভাইরাস রোগ প্রতিরোধের জন্য ঘনঘন হাত ধোয়া, নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা, এবং অন্য কোনও ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ থেকে বিরত থাকা উচিত। সাধারণ ও সুস্থ ব্যক্তির মুখোশ (মাস্ক) ব্যবহার না করলেও চলবে কিন্তু আক্রান্ত ব্যক্তি কিংবা আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন এমন ব্যক্তি এবং তাদের পরিচর্যার লোকেদের চিকিৎসা-মুখোশ (মাস্ক) ব্যবহার অপরিহার্য। কোভিড-১৯ এর কোনো টিকা কিংবা নির্দিষ্ট ভাইরাস নিরোধক নেই। উপসর্গুগলোর চিকিৎসা, সহায়ক যত্ন, অন্তরণ বা আইসোলেশন), এবং পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণই করণীয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ২০১৯-২০২০ করোনাভাইরাস এর আক্রমণকে বৈশ্বিক মহামারী এবং আন্তর্জাতিক উদ্বেগের জনস্বাস্থ্য জরুরী অবস্থা (PHEIC) ঘোষণা করেছে। ছয়টি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অঞ্চলে এই ব্যাধির স্থানীয় সংক্রমণ দেখা গেছে।
উপসর্গ | শতাংশ |
---|---|
জ্বর | ৮৭.৯% |
শুকনো কাশি | ৬৭.৭% |
ক্লান্তি | ৩৮.১% |
থুতু উৎপাদন | ৩৩.৪% |
শ্বাসকষ্ট | ১৮.৬% |
মাংসপেশীতে ব্যথা বা মাংসপেশির সংযোগে ব্যথা | ১৪.৮% |
গলা ব্যথা | ১৩.৯% |
মাথা ব্যথা | ১৩.৬% |
শরীর ঠাণ্ডা | ১১.৪% |
বমি বা বমি-বমিভাব | ৫.০% |
নাক বন্ধ | ৪.৮% |
ডায়রিয়া | ৩.৭% |
হ্যামোপটোসিস | ০.৯% |
কনজাঙ্কটিভাইটিস | ০.৮% |
এই ভাইরাসের ফলে আক্রান্তরা আপাতভাবে সুস্থ মনে হতে পারে, বা ফ্লু-এর মত উপসর্গ দেখা যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট। অপেক্ষাকৃত কম ক্ষেত্রে দেখা যায় ঊর্ধ্ব শ্বসনতন্ত্রের কিছু লক্ষণ যেমন হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া, গলাব্যথা ইত্যাদি। গ্যাস্টোইনটেস্টিনাল উপসর্গ যেমন বমি-বমিভাব, বমি, ডায়রিয়া ইত্যাদিও খুব কম কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়। চীনে সংঘটিত কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে হৃদযন্ত্রের সমস্যা, যেমন বুক ব্যথা বা চেস্ট টাইটনেস এবং বুক ধড়ফড় করা বা পালপিটেশান। কিছুক্ষেত্রে এই ব্যাধির পরবর্তী ধাপ হিসেবে নিউমোনিয়া, একাধিক অঙ্গ বিকল এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে।
অন্যান্য সংক্রমণের মত এক্ষেত্রেও আক্রান্ত ব্যক্তি সংক্রমিত হওয়ার কিছুদিন পরে উপসর্গ দেখাতে শুরু করে। এই সময়কে সুপ্তাবস্থা বলা হয়। কোভিড-১৯ রোগের সুপ্তাবস্থা সাধারণ ৫ থেকে ৬ দিন তবে তা ২ থেকে ১৪ দিনও হতে পারে। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে ভাইরাসটি ২১ দিন পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে পারে বলছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। এটি সাধারণত শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে সৃষ্ট বায়ুকনা দিয়ে ছড়িয়ে থাকে যা শ্লেষ্মা এবং হাঁচি থেকে হয়ে থাকে। ভাইরাসটি প্লাস্টিক এবং স্টিলের উপর তিনদিন পর্যন্ত কার্যক্ষম থাকতে পারে এবং অ্যারোসলে তিনঘণ্টা পর্যন্ত কার্যক্ষম থাকে। ভাইরাসটি খাদ্যাংশেও পাওয়া যায় কিন্তু এখন পর্যন্ত এটি নিশ্চিত নয় যে খাদ্যাংশের মাধম্যে সংক্রমন সম্ভব কি না এবং এর ঝুঁকিও কম ধরা হচ্ছে।
ফুসফুস সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে কোভিড-১৯ এর মাধ্যমে কারণ ভাইরাসটি উৎসেচকের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রক কোষে আক্রমণ করে। এসিই২, যা প্রচুর পরিমানে রয়েছে ফুসফুসের টাইপ ২ এলভিওলার কোষে। ভাইরাসটি 'স্পাইক' নামে গ্লাইকোপ্রোটিন এর একটি বিশেষ পৃষ্ঠতল ব্যবহার করে এসিই২ এ যুক্ত হয় এবং নিয়ন্ত্রক কোষে প্রবেশ করে। প্রতি টিস্যুতে এসিই২ এর ঘনত্ব রোগটির ভয়াবহতা বৃদ্ধি করে দেয় এবং কারো কারো মতে এসিই২ এর কর্মদক্ষতা রোধ করা কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে। যদিও অন্যদিকে অনুমান করা হয় এনজিওটেনসিন ২ গ্রাহক রোধক ব্যবহার করে এসিই২ এর বৃদ্ধি চিকিৎসায় উন্নতি করতে পারে। এই অনুমানটি অবশ্যই পরীক্ষণীয়। এলভিওলার এর সংক্রমন বৃদ্ধির ফলে শ্বাসক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং মৃত্যু ঘটতে পারে।
ধরা হয়ে থাকে ভাইরাসটি প্রাকৃতিক যার উৎস মানুষ থেকে হতে পারে, এবং স্পিলওভার সংক্রমণের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ায়। এটি সর্বপ্রথম ২০১৯ এর নভেম্বর কিংবা ডিসেম্বরে চিনের উহান শহরের মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয় এবং জানুয়ারি ২০২০ এ মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ ঘটা শুরু হয়। ১৭ নভেম্বর ২০১৯ এ প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে। ১৪ মার্চ ২০২০ পর্যন্ত ভাইরাসটির মাধ্যমে ৬৭,৭৯০ জনকে আক্রান্ত শনাক্ত করা হয়েছে এবং ৩,০৭৫ জনকে মৃত তালিকাভুক্ত করা হয়েছে; মৃত্যুর হার (কেস ফ্যাটালিটি রেট বা সিএফআর) ৪.৫৪%।
করোনাভাইরাস রোগ ২০১৯ (কোভিড-১৯) তথা করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে করণীয় বিষয়গুলি নিচে তুলে ধরা হল। এখানে স্মরণীয় যে, করোনাভাইরাস মানুষ-থেকে-মানুষে প্রধানত দুই প্রক্রিয়াতে ছড়াতে পারে। সংক্রমণের প্রথম প্রক্রিয়াটি দুই ধাপে ঘটে। প্রথম ধাপ: করোনাভাইরাস-সংক্রমিত ব্যক্তি ঘরের বাইরে গিয়ে মুখ না ঢেকে হাঁচি-কাশি দিলে করোনাভাইরাস তার আশেপাশের (১-২ মিটার পরিধির মধ্যে) বাতাসে কয়েক ঘণ্টা ভাসমান থাকতে পারে। দ্বিতীয় ধাপ: সেই করোনাভাইরাস কণাযুক্ত বাতাসে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করলে অন্য ব্যক্তিদের ফুসফুসেও শ্বাসনালি দিয়ে করোনাভাইরাস প্রবেশ করতে পারে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় প্রক্রিয়াটিও কয়েক ধাপে ঘটে। প্রথম ধাপ: করোনাভাইরাস-সংক্রমিত ব্যক্তি যদি কাশি শিষ্টাচার না মানেন, তাহলে তার হাতে বা ব্যবহৃত বস্তুতে করোনাভাইরাস লেগে থাকবে। দ্বিতীয় ধাপ: এখন যদি উক্ত ব্যক্তি তার পরিবেশের কোথাও যেকোনও বস্তুর পৃষ্ঠতলে সেই করোনাভাইরাসযুক্ত হাত দিয়ে স্পর্শ করেন, তাহলে সেই পৃষ্ঠতলে করোনাভাইরাস পরবর্তী একাধিক দিন লেগে থাকতে পারে। তৃতীয় ধাপ: এখন যদি অন্য কোনও ব্যক্তি সেই করোনাভাইরাসযুক্ত পৃষ্ঠ হাত দিয়ে স্পর্শ করে, তাহলে ঐ নতুন ব্যক্তির হাতে করোনাভাইরাস লেগে যাবে। চতুর্থ ধাপ : হাতে লাগলেই করোনাভাইরাস দেহের ভেতরে বা ফুসফুসে সংক্রমিত হতে পারে না, তাই এখন নতুন ব্যক্তিটি যদি তার সদ্য-করোনাভাইরাসযুক্ত হাতটি দিয়ে নাকে, মুখে বা চোখে স্পর্শ, কেবল তখনই করোনাভাইরাস ঐসব এলাকার উন্মুক্ত শ্লেষ্মাঝিল্লী দিয়ে দেহের ভিতরে প্রবেশ করবে ও প্রথমে গলায় ও পরে ফুসফুসে বংশবিস্তার করা শুরু করবে। এজন্য উপরে লিখিত করোনাভাইরাস ছড়ানোর দুইটি প্রক্রিয়ার শুরুতেই এবং কিংবা ছড়ানোর প্রতিটি অন্তর্বতী ধাপেই যদি করোনাভাইরাসকে প্রতিহত করা যায়, তাহলে সফলভাবে এই ভাইরাস ও রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। এজন্য নিচের পরামর্শগুলি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পালন করা সকলের আবশ্যিক কর্তব্য।
পরিবেশে অবস্থিত বিভিন্ন বস্তুতে করোনাভাইরাস লেগে থাকতে পারে, তাই এগুলি কেউ হাত দিয়ে স্পর্শ করলে তার হাতেও করোনাভাইরাস লেগে যেতে পারে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে করোনাভাইরাস কাঠ, প্লাস্টিক বা ধাতুর তৈরী বস্তুর পৃষ্ঠে গড়ে চার থেকে পাঁচ দিন লেগে থাকতে পারে। মানুষকে জীবনযাপনের প্রয়োজনে এগুলিকে প্রতিনিয়তই হাত দিয়ে স্পর্শ করতে হয়। তাই এগুলি স্পর্শ করার পরে হাত ভাল করে ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করা অত্যন্ত জরুরী। নিম্নলিখিত হাত স্পর্শ করার ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রগুলির ব্যাপারে বিশেষ নজর দিতে হবে।
উপর্যুক্ত ক্ষেত্রগুলিতে হাত দিয়ে স্পর্শের পরে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং যত ঘনঘন সম্ভব হাত ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। নিম্নলিখিত হাত ধোয়ার পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে:
কখন হাত ধুতে হবে, তা জানার জন্য নিচের নির্দেশনাগুলি মনে রাখা জরুরি:
সরকারি স্বাস্থ্য সংস্থা
উপাত্ত ও মানচিত্র
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article কোভিড-১৯, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.