কামরুল হাসান: বাংলাদেশী চিত্রশিল্পী

কামরুল হাসান (২ ডিসেম্বর ১৯২১ - ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৮) প্রখ্যাত বাংলাদেশী চিত্রশিল্পী। তিনি চিত্রাঙ্কন-এ দক্ষতা অর্জন করে বিশ্বব্যাপী সুনাম কুড়িয়েছিলেন। কামরুল হাসানকে সবাই শিল্পী বললেও তিনি নিজে 'পটুয়া' নামে পরিচিত হতে পছন্দ করতেন । শিল্পী কামরুল হাসান মূলত দুটি পোস্টার করেছিলেন । একটি ছিল রক্তচোষা মুখমন্ডল, হাঁ-করা মুখে দুই দিকে দুটো দানবিক দাঁতে লাল রক্ত ঝরছে । বড় দুটো চোখ আর খাড়া বড় কান, দেখলেই মনে হয় রক্তপায়ী এক দানব । আরেকটি পোস্টারে ছিল সম্মুখ দিকে তাকানো বড় বড় রক্তচক্ষু, কান দুটো হাতির কানের মতো খাড়া । মুখ কিছুটা বন্ধ । ঠোঁটের দুই দিকে খোলা, দুই দিকে চারটি দাঁত বের করা। দেখেই মনে হয়, দানবরূপী ইয়াহিয়া খানের মুখাবয়ব । পোস্টারটির ভেতর শিল্পীর রূপকল্পনার গভীরতা ছিল, কলম ও তুলির দক্ষ আঁচড় ছিল আর সবচেয়ে মারাত্মকভাবে যা ছিল, তা হলো শত্রুর প্রতি গভীরতম ঘৃণা। এই ঘৃণাই প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধার ভেতর সঞ্চারিত হয়ে গিয়েছিল । এ পোস্টার দুটোর একটি দুই রঙে ও অন্যটি একরঙে করা হয়। দুটো পোস্টারই ছাপিয়ে মুক্তাঞ্চলে বিতরণ করা হয়। এর মাধ্যমে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার বিরুদ্ধে যেমন তীব্র ধিক্কার ও প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়, তেমনি মুক্তিযোদ্ধাদের মনে দেশমাতৃকার জন্য যুদ্ধের উৎসাহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয় ।

কামরুল হাসান
কামরুল হাসান: জীবনী, শিক্ষাজীবন, কর্মজীবন
জন্ম২ ডিসেম্বর, ১৯২১
মৃত্যু২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৮
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্বকামরুল হাসান: জীবনী, শিক্ষাজীবন, কর্মজীবন বাংলাদেশ
পেশা[{চিত্রশিল্পী}]
উল্লেখযোগ্য কর্ম
জাতীয় পতাকার ডিজাইনার
পুরস্কারস্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৭৯)

জীবনী

কামরুল হাসান কলকাতায় তিনজলা গোরস্তান রোডে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পৈতৃক নিবাস নারেঙ্গ গ্রাম, বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ। তার বাবা মুহাম্মদ হাসিম ছিলেন একটি স্থানীয় কবরস্থানের তত্ত্বাবধায়ক।

শিক্ষাজীবন

কামরুল হাসান কলকাতা মডেল এমই স্কুলে, কলকাতা মাদরাসার অ্যাংলো-পার্সিয়ান বিভাগে এবং পরবর্তীকালে কলকাতা ইন্সটিটিউট অব আর্টসে অধ্যয়ন করেছিলেন। তিনি ১৯৪৭ সালে ফাইন আর্টসে পাস করেন। হাসান ভৌত অনুশীলনে খুব কৌতুহলী ছিলেন এবং একটি ভৌত অনুশীলন প্রতিযোগিতায় ১৯৪৫ সালে বেঙ্গল চ্যাম্পিয়ন হন। পাকিস্তান আন্দোলনের সময় সমসমায়িক অনেক মুসলিম যুবকের মতোই তিনি এ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরে তিনি কলকাতা ছেড়ে ঢাকায় আগমন করেন।

কর্মজীবন

কামরুল হাসান: জীবনী, শিক্ষাজীবন, কর্মজীবন 
শিবনারায়ণ দাশ কর্তৃক ডিজাইনকৃত বাংলাদেশের প্রথম পতাকা
কামরুল হাসান: জীবনী, শিক্ষাজীবন, কর্মজীবন 
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা (কামরুল হাসান কর্তৃক পরিবর্তীত)

ভারত - পাকিস্তান বিভাগের পরে, কামরুল হাসান ঢাকাতে আসেন, যা ছিল সদ্যস্থাপিত পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী। ১৯৪৮ সালে জয়নুল আবেদীনের সঙ্গে একত্রে তিনি গভর্নমেন্ট ইন্সটিটিউট অফ ফাইন আর্টস (বর্তমানে, ফ‍্যাকাল্টি অফ ফাইন আর্টস) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। রাজনৈতিকভাবে প্রগতিপন্থী হাসান অনেক রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন যা স্বাধীন বাংলাদেশ গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও রেডিও- এর কলা বিভাগের পরিচালক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। কামরুল হাসান ১৯৭২ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে শিবনারায়ণ দাস কর্তৃক ডিজাইনকৃত জাতীয় পতাকার বর্তমান রূপ দেন।

কামরুল হাসান: জীবনী, শিক্ষাজীবন, কর্মজীবন 
কামরুল হাসান কর্তৃক নকশাকৃত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর মনোগ্রাম।

জীবিকাসূত্রে তিনি ১৯৪৮ থেকে ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ঢাকা চারুকলা ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতা করেন এবং ১৯৬০ থেকে ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন নকশা পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও প্রচার বিভাগের শিল্প বিভাগের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

প্রদর্শনী

দেশে-বিদেশে তিনি বহু একক এবং যৌথ চিত্র প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। একক প্রদর্শনীগুলো হলো : ১৯৫৪ এবং ১৯৫৫ ঢাকা; ১৯৫৭ রেঙ্গুন, মিয়ানমার; ১৯৬৯ পাকিস্তান; ১৯৭৫ ঢাকা; ১৯৭৯ লন্ডন; ১৯৯১ ঢাকা। উল্লেখযোগ্য যৌথ প্রদর্শনীগুলো হলো : ১৯৫৪ থেকে ১৯৬৯ ঢাকা, করাচি, লাহোর এবং রাওয়ালপিন্ডি; ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৮ বাংলাদেশে ৬টি জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী; ১৯৭৮ জিডিআর; ১৯৮০ ফুকুওকা, জাপান; ১৯৮১ হংকং; ১৯৮৫ মালয়েশিয়া; ১৯৮৭ ভারত; ১৯৮১, ১৯৮৩ ও ১৯৮৬ দ্বি-বার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী, বাংলাদেশ।

মৃত্যু

কামরুল হাসান: জীবনী, শিক্ষাজীবন, কর্মজীবন 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে শায়িত কামরুল হাসানের কবর

কামরুল হাসান জাতীয় কবিতা উৎসবে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত থাকাকালীন সময়ে 'দেশ আজ বিশ্ব বেহায়ার খপ্পরে' স্কেচটির অঙ্কন কার্য সমাপ্ত করার কয়েক মিনিট পরে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৮ তারিখে মারা যান। তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন গোরস্থানে সমাহিত করা হয়।

পুরস্কার ও সম্মননা

শিল্পচর্চায় অসাধারণ অবদানের জন্য ১৯৭৯ সালে দেশের “সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার” হিসাবে পরিচিত “স্বাধীনতা পুরস্কার” প্রদান করা হয় তাকে। এছাড়াও তিনি প্রেসিডেন্ট'স গোল্ড মেডেল (১৯৬৫), বাংলাদেশ চারু শিল্পী সংসদ সম্মাননা (১৯৮৪) ও বাংলা একাডেমির ফেলো (১৯৮৫) সম্মাননা পেয়েছেন। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক প্রাইড অফ পারফরম্যান্স পুরস্কার প্রদান করেন চিত্রাঙ্কন এ উলেখ্যযোগ্য অবদান এর জন্য।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Tags:

কামরুল হাসান জীবনীকামরুল হাসান শিক্ষাজীবনকামরুল হাসান কর্মজীবনকামরুল হাসান প্রদর্শনীকামরুল হাসান মৃত্যুকামরুল হাসান পুরস্কার ও সম্মননাকামরুল হাসান আরও দেখুনকামরুল হাসান তথ্যসূত্রকামরুল হাসান বহিঃসংযোগকামরুল হাসানচিত্রাঙ্কনপটুয়াবাংলাদেশ

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

আরবি বর্ণমালাপাট্টা ও কবুলিয়াতবাঙালি হিন্দু বিবাহনেপালআকবরইসলামে বিবাহবিড়ালকারামান বেয়লিককৃষ্ণমান্নাপাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারভাষাপলাশীর যুদ্ধউদ্ভিদকোষময়মনসিংহউজবেকিস্তানসজনেম্যালেরিয়াঅস্ট্রেলিয়াবিবাহপদ্মাবতীশিখধর্মবিবর্তননিফটি ৫০বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরঅপটিক্যাল ফাইবারবাংলাদেশ পুলিশহিন্দি ভাষাগুগলবনলতা সেন (কবিতা)মিজানুর রহমান আজহারীবাংলাদেশের প্রশাসনিক অঞ্চলইউরোপীয় ইউনিয়নজাতীয় সংসদ ভবনচ্যাটজিপিটিলগইনচিরস্থায়ী বন্দোবস্তউসমানীয় খিলাফতঈদুল আযহানরেন্দ্র মোদীসামাজিক লিঙ্গবাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকাজী নজরুল ইসলামের রচনাবলিসূরা ফালাকবিভিন্ন ধর্ম ও বিশ্বাসের তালিকাহিট স্ট্রোকওয়ালাইকুমুস-সালামউইলিয়াম শেকসপিয়রটাঙ্গাইল জেলাবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতেভাগা আন্দোলনব্রিটিশ রাজের ইতিহাসজনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় (বাংলাদেশ)দুধকুমিল্লা জেলাশিবা শানুভারত ছাড়ো আন্দোলনকলকাতা নাইট রাইডার্সবাইতুল হিকমাহভারতীয় জনতা পার্টিবেগম রোকেয়াপদ্মা নদীএল নিনোদীপু মনিবিকাশমহাদেশ অনুযায়ী সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং নির্ভরশীল অঞ্চলসমূহের তালিকাওপেকআব্বাসীয় খিলাফতভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪আলিহস্তমৈথুনের ইতিহাসভিসাসার্বিয়ানেতৃত্বসুভাষচন্দ্র বসু২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ🡆 More