ঢাকা: বাংলাদেশের রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর

ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী ও মহানগর বা বৃহত্তম শহর। প্রশাসনিকভাবে এটি ঢাকা বিভাগের ও জেলার প্রধান শহর। ভৌগোলিকভাবে এটি বাংলাদেশের মধ্যভাগে বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তর তীরে একটি সমতল অঞ্চলে অবস্থিত। ঢাকা দক্ষিণ এশিয়ায় মুম্বাইয়ের পরে দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনৈতিক শহর। ঢাকার জিডিপি ১৬২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (২০২০)। এছাড়া ঢাকার পিপিপি ২৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (২০২০)। ভৌগোলিকভাবে ঢাকা একটি অতিমহানগরী বা মেগাসিটি; ঢাকা মহানগরীর মোট জনসংখ্যা ৪ কোটি ৪২ লাখ ১৫ হাজার ১০৭ জন, যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১১ ভাগ। জনসংখ্যার বিচারে ঢাকা দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম শহর। জনঘনত্বের বিচারে ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহর; ৩০৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই শহরে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় ২৩ হাজার লোক বাস করে।

ঢাকা
রাজধানীঅতিমহানগরী
ডাকনাম: মসজিদের শহর
বাংলাদেশের মানচিত্রে ঢাকা শহরের অবস্থান
বাংলাদেশের মানচিত্রে ঢাকা শহরের অবস্থান
ঢাকা ঢাকা-এ অবস্থিত
ঢাকা
ঢাকা
ঢাকা ঢাকা বিভাগ-এ অবস্থিত
ঢাকা
ঢাকা
ঢাকা বাংলাদেশ-এ অবস্থিত
ঢাকা
ঢাকা
ঢাকা এশিয়া-এ অবস্থিত
ঢাকা
ঢাকা
ঢাকা পৃথিবী-এ অবস্থিত
ঢাকা
ঢাকা
ঢাকার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৩°৪২′০″ উত্তর ৯০°২২′৩০″ পূর্ব / ২৩.৭০০০০° উত্তর ৯০.৩৭৫০০° পূর্ব / 23.70000; 90.37500
দেশঢাকা: নামকরণের ইতিহাস, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ভূগোল বাংলাদেশ
বিভাগঢাকা বিভাগ
জেলাঢাকা জেলা
প্রতিষ্ঠাকাল১৬০৮ খ্রিষ্টাব্দ
শহরের মর্যাদা প্রদান১৯৪৭
সরকার
 • ধরনমেয়র - কাউন্সিলর
 • শাসক
 • ঢাকা উত্তরের মেয়রআতিকুল ইসলাম
 • ঢাকা দক্ষিণের মেয়রশেখ ফজলে নূর তাপস
আয়তন
 • রাজধানীঅতিমহানগরী৩০৬.৩৮ বর্গকিমি (১১৮.২৯ বর্গমাইল)
 • মহানগর২,১৬১.১৭ বর্গকিমি (৮৩৪.৪৩২ বর্গমাইল)
উচ্চতা৪ মিটার (১৩.১২ ফুট)
জনসংখ্যা (২০২০)
 • রাজধানীঅতিমহানগরী২,১০,০৫,৮৬০
 • জনঘনত্ব৪৫,০০০/বর্গকিমি (১,১৫,২০০/বর্গমাইল)
 • মহানগর৭০,০০,৯৪০(২০০৮)
 • সাক্ষরতার হার৯৫.৭%
বিশেষণঢাকাইয়া বা ঢাকাই
সময় অঞ্চলবাংলাদেশ মান সময় (ইউটিসি+০৬:০০)
পোস্ট কোড১০০০, ১১০০, ১২xx, ১৩xx
দেশের টেলিফোন কোড+৮৮০
এলাকার টেলিফোন কোড০২
ওয়েবসাইটঢাকা উত্তর
ঢাকা দক্ষিণ

ঢাকা শহর "মসজিদের শহর" নামেও সুপরিচিত। এখানে প্রায় দশ হাজারেরও বেশি মসজিদ আছে(ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এর তথ্য মতে)। এই শহরে রোজ প্রায় ৫ লক্ষ রিকশা চলাচল করে। বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান সংস্কৃতি, শিক্ষাবাণিজ্যকেন্দ্র

ঢাকা শহরের জলবায়ু ক্রান্তীয় আর্দ্র ও শুষ্ক প্রকৃতির। গড় তাপমাত্রা এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ প্রায় ৩৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং জানুয়ারি মাসে সর্বনিম্ন প্রায় ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এই অঞ্চলে বর্ষাকাল, সেসময় প্রতি মাসে গড়ে ৩০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়।

সপ্তদশ শতাব্দীতে পুরান ঢাকা মুঘল সাম্রাজ্যের সুবা বাংলা (বাংলা প্রদেশ) এর প্রাদেশিক রাজধানী ছিল। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে এই শহর জাহাঙ্গীর নগর নামে পরিচিত ছিলো। বিশ্বব্যাপী মসলিন বাণিজ্যের একটি কেন্দ্র ছিলো ঢাকা এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীগণ এখানে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে আসতেন। ঢাকাতে বিশ্বের সেরা মসলিন কাপড় উৎপাদিত হতো। যদিও আধুনিক ঢাকা শহরের বিকাশ ঘটে ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ শাসন আমলে, এই সময় নবাবগণ ঢাকা শাসন করতেন। এই সময় কলকাতার পরেই ঢাকা বাংলা প্রেসিডেন্সির দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী হয়ে ওঠে। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের পরে ঢাকা নবগঠিত পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের রাজধানী হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পরে ঢাকা পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসনিক রাজধানীতে পরিণত হয়। ১৯৫০-১৯৬০ সালের মধ্যে এই শহর বিভিন্ন সামাজিক, জাতীয়তাবাদী ও গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। ১৯৭১ সালে ঢাকা “স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের রাজধানী” ঘোষিত হয়। ইতঃপূর্বে সামরিক আইন বলবৎ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা, সামরিক দমন, যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের তাণ্ডবলীলার মতো একাধিক ঘটনার সাক্ষী হয় এই শহর।

বাংলাদেশের সংবিধানের ৫(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। আধুনিক ঢাকাকে বাংলাদেশের আপামর জনতা রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক জীবনের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করে। এটির প্রশংসিত জাতীয় দর্শনীয় স্থানগুলো যেমনঃ জাতীয় সংসদ ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ,মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, লালবাগের কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, হাতিরঝিল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বায়তুল মোকাররম মসজিদ, তারা মসজিদ, ঢাকেশ্বরী মন্দির, আর্মেনীয় গির্জা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান।

এই শহরের অবকাঠামো বিশ্বের মধ্যে উন্নত হলেও দূষণ, যানজট এবং শহরমুখী মানুষের আধিক্যের কারণে জীবনমান উন্নয়নে ঋনাত্মক প্রভাব লক্ষ্যণীয়। সাম্প্রতিক দশকগুলিতে ঢাকার পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, গণপূর্ত ব্যবস্থায় যে আধুনিকীকরণ হয়েছে, তা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। বর্তমানে এই শহর প্রচুর বিদেশী বিনিয়োগ টানতে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। সারা দেশ থেকে প্রচুর মানুষ ঢাকায় আসেন জীবন ও জীবিকার সন্ধানে। এ কারণে ঢাকা হয়ে উঠেছে বিশ্বের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান নগরী, এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে মালয়েশিয়া, জাপান, চীন, ভারত সহ বিভিন্ন দেশ অর্থ সহযোগিতা ও বিনিয়োগ করছে।

নামকরণের ইতিহাস

ঢাকা: নামকরণের ইতিহাস, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ভূগোল 
পুরান ঢাকার আর্মেনিয়ান গির্জার প্রবেশপথ

ঢাকার নামকরণের সঠিক ইতিহাস নিয়ে ব্যাপক মতভেদ রয়েছে। কথিত আছে যে, সেন বংশের রাজা বল্লাল সেন বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভ্রমণকালে সন্নিহিত জঙ্গলে হিন্দু দেবী দুর্গার একটি বিগ্রহ খুঁজে পান। দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ রাজা বল্লাল সেন ঐ এলাকায় একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। যেহেতু দেবীর বিগ্রহ ঢাকা বা গুপ্ত অবস্থায় খুঁজে পাওয়া গিয়েছিলো, তাই রাজা, মন্দিরের নাম রাখেন ঢাকেশ্বরী মন্দির। মন্দিরের নাম থেকেই কালক্রমে স্থানটির নাম ঢাকা হিসেবে গড়ে ওঠে।

আবার অনেক ঐতিহাসিকের মতে, মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর যখন ঢাকাকে সুবাহ বাংলার রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেন; তখন সুবাদার ইসলাম খান আনন্দের বহিঃপ্রকাশস্বরূপ শহরে “ঢাক” বাজানোর নির্দেশ দেন। এই ঢাক বাজানোর কাহিনী লোকমুখে কিংবদন্তির রূপ নেয় এবং তা থেকেই শহরের নাম ঢাকা হয়ে যায়। এখানে উল্লেখ্য যে, মোঘল সাম্রাজ্যের বেশ কিছু সময় ঢাকা সম্রাট জাহাঙ্গীরের প্রতি সম্মান জানিয়ে জাহাঙ্গীরনগর নামে পরিচিত ছিলো।

ঢাকা নগরীকে বর্তমানে দু'ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে - ঢাকা দক্ষিণ ও ঢাকা উত্তর। ঢাকা দক্ষিণই হলো পুরাতন মূল নগরী। ঢাকা উত্তর ঢাকার নবীন বর্ধিত উপশহরগুলো নিয়ে গঠিত।

ইতিহাস ও ঐতিহ্য

ঢাকা: নামকরণের ইতিহাস, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ভূগোল 
লালবাগের কেল্লা মোঘল আমলের একটি স্থাপনা
ঢাকা: নামকরণের ইতিহাস, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ভূগোল 
১৮৯৫-১৯০০ সময়কালে পিলখানা এলাকায় হাতির পালের দৌড়।
ঢাকা: নামকরণের ইতিহাস, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ভূগোল 
১৯২৪ সালে ঢাকার মানচিত্র

ধারণা করা হয়, কালের পরিক্রমায় ঢাকা প্রথমে সমতট, পরে বঙ্গ ও গৌড় প্রভৃতি রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। খ্রিষ্টীয় ১৩শ শতাব্দীর শেষের দিকে মুসলমানেরা ঢাকা দখল করে। মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের ফরমান অনুযায়ী ১৬ জুলাই ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকাকে সুবাহ বাংলার রাজধানী ঘোষণা করা হয়। সম্রাট জাহাঙ্গীর-এর নাম অনুসারে রাজধানীর নাম জাহাঙ্গীরনগর রাখা হয়। সম্রাট জাহাঙ্গীরের জীবিতকাল পর্যন্ত এ নাম বজায় ছিলো।

এর আগে সম্রাট আকবরের আমলে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার প্রাদেশিক রাজধানী ছিলো বিহারের রাজমহল। সুবা বাংলায় তখন চলছিলো মোঘলবিরোধী স্বাধীন বারো ভূইঁয়াদের রাজত্ব। বারো ভূইয়ার নিয়ন্ত্রণ থেকে বাংলাকে করতলগত করতে ১৫৭৬ থেকে ১৬০৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বারবার চেষ্টা চালানো হয়। এরপর সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে ১৬০৮ খ্রিষ্টাব্দে ইসলাম খান চিশতীকে রাজমহলের সুবেদার নিযুক্ত করেন। তিনি ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করে রাজধানী রাজমহল থেকে সরিয়ে ঢাকায় স্থানান্তর করেন।

সুবেদার ইসলাম খান চিশতী দায়িত্ব নেবার মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে বারো ভূঁইয়ার পতন ঘটে ও বর্তমান চট্টগ্রামের কিছু অংশ বাদে পুরো সুবে বাংলা মোগল সাম্রাজ্যের অধীনে চলে আসে।

১৬১০ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা সুবা বাংলার রাজধানী হলেও সুবাহ বাংলার রাজধানী বারবার পরিবর্তন করা হয়েছে। ১৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে সুবেদার শাহ সুজা রাজধানী আবার রাজমহলে স্থানান্তর করেছিলেন। শাহ সুজার পতনের পর ১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দে সুবেদার মীর জুমলা আবার রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তর করেন। এরপর বেশ কিছুকাল ঢাকা নির্বিঘ্নে রাজধানীর মর্যাদা ভোগ করার পর ১৭১৭ খ্রিষ্টাব্দে সুবেদার মুর্শিদ কুলি খান রাজধানী মুর্শিদাবাদে স্থানান্তর করেন। এরপর ঢাকায় মোঘল শাসনামলে চলতো নায়েবে নাজিমদের শাসন, যা চলেছিল ১৭৯৩ সালে ব্রিটিশ শাসন শুরু হবার আগে পর্যন্ত। ব্রিটিশরা রাজধানী হিসেবে কলকাতাকে নির্বাচিত করলে ঢাকার গুরুত্ব আবারো কমতে থাকে।

এরপর দীর্ঘকাল পরে ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা আবার তার গুরুত্ব ফিরে পায়। বঙ্গভঙ্গের পর ১৯০৫ সালে ঢাকাকে আসাম ও বাংলার রাজধানী করা হয়। কংগ্রেসের বাধার মুখে ব্রিটিশ রাজ আবার ১৯১১ সালে রাজধানী কলকাতায় ফিরিয়ে নেয়।

ভূগোল

ঢাকা: নামকরণের ইতিহাস, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ভূগোল 
জাতীয় সংসদ ভবন
ঢাকা: নামকরণের ইতিহাস, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ভূগোল 
ঢাকার দিগন্ত রূপরেখা

ঢাকা মধ্য বাংলাদেশে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ২৩°৪২' থেকে ২৩°৫৪' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°২০' থেকে ৯০°২৮' পূর্ব দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। নিম্ন গাঙ্গেয় সমভূমিতে অবস্থিত এই শহরের মোট আয়তন ৩০৬ বর্গকিলোমিটার (১১৮ মা)। ঢাকায় মোট ৪৬ টি থানা আছে। এগুলো হলো - চকবাজার, লালবাগ, কোতোয়ালি, সূত্রাপুর, হাজারীবাগ, রমনা, মতিঝিল, পল্টন, ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও, গুলশান, মিরপুর, পল্লবী, শাহ আলী, তুরাগ,খিলক্ষেত, সবুজবাগ, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, ডেমরা, শ্যামপুর, বাড্ডা, কাফরুল, কামরাঙ্গীর চর, খিলগাঁও ও উত্তরা। ঢাকা শহরটি মোট ১৩০টি ওয়ার্ড ও ৭২৫টি মহল্লায় বিভক্ত। ঢাকা জেলার আয়তন ১৪৬৩.৬০ বর্গ কিলোমিটার (৫৬৫ বর্গমাইল)। এই জেলাটি গাজীপুর, টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ, রাজবাড়ী, নারায়ণগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলা দ্বারা বেষ্টিত।

ক্রান্তীয় বৃক্ষ, আর্দ্র মৃত্তিকা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের সঙ্গে সমান সমতলভূমি এই জেলার বৈশিষ্ট্য। এই কারণে বর্ষাকালে ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ঢাকা জেলায় প্রায়শই বন্যা দেখা যায়।

আবহাওয়া ও জলবায়ু

ঢাকার জলবায়ু প্রধানত উষ্ণ, বর্ষণমুখর এবং আর্দ্র গ্রীষ্মমণ্ডলীয়। কোপেন জলবায়ু শ্রেণিবিভাগ এর অধীনে, ঢাকার জলবায়ু ক্রান্তীয় সাভানা জলবায়ু। এই শহরের একটি স্বতন্ত্র মৌসুম রয়েছে, এখানে বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ২৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস(৮১.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট) এবং জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে তাপমাত্রা ১৯.৫ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের(৬৭ থেকে ৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) মধ্যে থাকে। মে থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে গড়ে প্রায় ২১২১ মিলিমিটার(৮৩.৫ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে, যা সারাবছরের মোট বৃষ্টিপাতের প্রায় ৮৭%। যানজট এবং এবং শিল্প কারখানার অপরিকল্পিত বর্জ্য নির্গমনের ফলে প্রতিনিয়ত বায়ু এবং পানি দূষণ বাড়ছে, ফলে শহরের জনস্বাস্থ্য এবং জীবন মান মারাত্বকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। ঢাকার চারপাশে জলাশয় এবং জলাভূমি গুলি ধ্বংসের সম্মুখীন কারণ, এগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে বহুতল ভবন এবং অন্যান্য আবাসন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে। দূষণের ফলে প্রকৃতির যে ক্ষতি হচ্ছে তার ফলে এই এলাকার জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন। যদিও বর্তমানে ঢাকাকে বসবাস উপযোগী করার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।

ঢাকা-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য
মাস জানু ফেব্রু মার্চ এপ্রিল মে জুন জুলাই আগস্ট সেপ্টে অক্টো নভে ডিসে বছর
সর্বোচ্চ রেকর্ড °সে ৩২.০ ৩৪.৪ ৪০.৯ ৪২.২ ৪১.৮ ৪০.৪ ৩৯.৩ ৩৮.৫ ৩৭.৮ ৩৬.২ ৩৪.৭ ৩১.২ ৪২.২
সর্বোচ্চ গড় °সে ২৫.৪ ২৮.১ ৩২.৫ ৩৩.৭ ৩২.৯ ৩২.১ ৩১.৪ ৩১.৬ ৩১.৬ ৩১.৬ ২৯.৬ ২৬.৪ ৩০.৬
দৈনিক গড় °সে ১৯.১ ২১.৮ ২৬.৫ ২৮.৭ ২৮.৭ ২৯.১ ২৮.৮ ২৯.০ ২৮.৮ ২৭.৭ ২৪.৪ ২০.৩ ২৬.১
সর্বনিম্ন গড় °সে ১২.৭ ১৫.৫ ২০.৪ ২৩.৬ ২৪.৫ ২৬.১ ২৬.২ ২৬.৩ ২৫.৯ ২৩.৮ ১৯.২ ১৪.১ ২১.৫
সর্বনিম্ন রেকর্ড °সে ১.১ ০.০ ৭.৪ ১২.৬ ১২.১ ১৯.২ ১৭.০ ১৭.৫ ১৫.৫ ১০.১ ৮.৩ ৪.০ ০.০
অধঃক্ষেপণের গড় মিমি ৭.৭ ২৮.৯ ৬৫.৮ ১৫৬.৩ ৩৩৯.৪ ৩৪০.৪ ৩৭৩.১ ৩১৬.৫ ৩০০.৪ ১৭২.৩ ৩৪.৪ ১২.৮ ২,১৪৮
সর্বোচ্চ রেকর্ড °ফা ৮৯.৬ ৯৩.৯ ১০৫.৬ ১০৮.০ ১০৭.২ ১০৪.৭ ১০২.৭ ১০১.৩ ১০০.০ ৯৭.২ ৯৪.৫ ৮৮.২ ১০৮.০
সর্বোচ্চ গড় °ফা ৭৭.৭ ৮২.৬ ৯০.৫ ৯২.৭ ৯১.২ ৮৯.৮ ৮৮.৫ ৮৮.৯ ৮৮.৯ ৮৮.৯ ৮৫.৩ ৭৯.৫ ৮৭.১
দৈনিক গড় °ফা ৬৬.৪ ৭১.২ ৭৯.৭ ৮৩.৭ ৮৩.৭ ৮৪.৪ ৮৩.৮ ৮৪.২ ৮৩.৮ ৮১.৯ ৭৫.৯ ৬৮.৫ ৭৯.০
সর্বনিম্ন গড় °ফা ৫৪.৯ ৫৯.৯ ৬৮.৭ ৭৪.৫ ৭৬.১ ৭৯.০ ৭৯.২ ৭৯.৩ ৭৮.৬ ৭৪.৮ ৬৬.৬ ৫৭.৪ ৭০.৭
সর্বনিম্ন রেকর্ড °ফা ৩৪.০ ৩২.০ ৪৫.৩ ৫৪.৭ ৫৩.৮ ৬৬.৬ ৬২.৬ ৬৩.৫ ৫৯.৯ ৫০.২ ৪৬.৯ ৩৯.২ ৩২.০
অধঃক্ষেপণের গড় ইঞ্চি ০.৩০ ১.১৪ ২.৫৯ ৬.১৫ ১৩.৩৬ ১৩.৪০ ১৪.৬৯ ১২.৪৬ ১১.৮৩ ৬.৭৮ ১.৩৫ ০.৫০ ৮৪.৫৭
অধঃক্ষেপণ দিনগুলির গড় (≥ ০.১ মিমি) ১১ ১৬ ১২ ১৬ ১২ ৮৬
আপেক্ষিক আদ্রতার গড় (%) ৪৬ ৩৭ ৩৮ ৪২ ৫৯ ৭২ ৭২ ৭৪ ৭১ ৬৫ ৫৩ ৫০ ৫৭
মাসিক সূর্যালোক ঘণ্টার গড় ২৭৯ ২২৬ ২১৭ ১৮০ ১৫৫ ৯০ ৬২ ৬২ ৯০ ১৮৬ ২৪০ ২৭৯ ২,০৬৬
উৎস ১: ওয়েদারবেজ (নিয়মাফিক, ৩০ বছর সময়)
উৎস ২: সিস্তেমা দে ক্লাসিফিকেশন বিয়োক্লিমাতিকা মন্দিয়াল (চরম), বিবিসি ওয়েদার (আর্দ্রতা ও সূর্য)

স্থানীয় সরকার

ঢাকা: নামকরণের ইতিহাস, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ভূগোল 
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান-এর সমাধি, চন্দ্রিমা উদ্যান
ঢাকা: নামকরণের ইতিহাস, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ভূগোল 
ঢাকায় সূর্যোদয়।

ঢাকা পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১ আগস্ট, ১৮৬৪ সালে এবং পরবর্তীকালে ১৯৭৮ সালে এটি "কর্পোরেশন"-এ উন্নীত করা হয়। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নামের ২ টি স্ব-শাসিত সংস্থা ঢাকা শহরের পরিচালনের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে। এই শহর অনেকগুলি প্রশাসনিক ওয়ার্ডে বিভক্ত এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন কমিশনার দায়িত্বপ্রাপ্ত আছেন। প্রতি ৫ বছর পরপর সরাসরি ভোটের মাধ্যমে উভয় সিটি কর্পোরেশনে একজন করে মেয়র নির্বাচন করা হয়, যিনি প্রতিষ্ঠানের কার্যনির্বাহী প্রধান হিসাবে কাজ করেন। ওয়ার্ড কমিশনারও ৫ বছরের জন্য সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। এছাড়াও মহিলাদের জন্য ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে ৩০টি সংরক্ষিত কমিশনার পদ রয়েছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সকল সরকারি স্কুল এবং অধিকাংশ বেসরকারি স্কুলের প্রশাসনিক দায়িত্বে রয়েছে। তবে মাদ্রাসা এবং ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলসমূহ এই বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত নয়। বাংলাদেশের সকল মাদ্রাসা একটি কেন্দ্রীয় বোর্ডের মাধ্যমে এবং ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল সমূহ একটি পৃথক শিক্ষাবোর্ড এবং প্রশাসনিক কাঠামোর অধিনে পরিচালিত হয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। মোট ১২টি পুলিশ স্টেশনে প্রায় ৬০০০ এরও বেশি পুলিশ সদস্য ছিলেন। শহরের জনসংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় পুলিশবাহিনীতে সদস্য সংখ্যা ৩৪০০০ এ উন্নীত করা হয়, এবং এর কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় ৫০টি পুলিশ স্টেশন রয়েছে।

ঢাকা শহর ২৫টি সংসদীয় এলাকায় বিভক্ত। এখানে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল হল আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। রমনায় সচিবালয় অবস্থিত এবং এখানেই সরকারের প্রায় সকল মন্ত্রণালয় রয়েছে। বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট এবং ঢাকা হাই কোর্ট এই শহরে অবস্থিত। বঙ্গভবন ভারতের গভর্নর-জেনারেল ও পূর্ব পাকিস্তান গভর্নর এর বাসভবন হিসেবে ব্যবহার হতো এবং বর্তমানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির বাসভবন হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। জাতীয় সংসদ ভবন বাংলাদেশ সরকারের এক কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ কার্যক্রমের কাজে ব্যবহৃত হয়। খ্যাতনামা স্থপতি লুইস কান এই জাতীয় সংসদ ভবনের স্থপতি ছিলেন।বায়তুল মুকাররম এদেশের জাতীয় মসজিদ, মক্কার কাবা শরিফের নকশায় অনুপ্রাণিত হয়ে এই মসজিদের ডিজাইন করা হয়েছে। এই শহরের অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থান সমূহের মধ্যে রয়েছে বড় কাটরা, লালবাগ কেল্লা, হোসেনী দালান, আহসান মঞ্জিল, বাহাদুর শাহ পার্ক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইত্যাদি।

ঢাকায় একটি কেন্দ্রীয় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকলেও মোট জনসংখ্যার মাত্র ২৫% এই ব্যবস্থার আওতাভুক্ত, এর পাশাপাশি আরও ৩০% এই সুবিধা ব্যবহার করে সেপটিক ট্যাংকের মাধ্যমে। মাত্র দুই তৃতীয়াংশ লোক শহরে সরবরাহকৃত পানি ব্যবহার করতে পারে। এখানে প্রতি বছর ৯৭ লক্ষ টন কঠিন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। সরকারি এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সফলতার সাথে এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করা হয়ে থাকে। কেন্দ্রীয়ভাবে এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বেশ কয়েকটি স্থান রয়েছে, তবে অনেক ক্ষেত্রেই এগুলো কাছাকাছি নিচু এলাকায় অথবা জলাশয়ে ফেলা হয়ে থাকে।

পৌর প্রশাসন

ঢাকা: নামকরণের ইতিহাস, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ভূগোল 
ঢাকা মহানগরীর প্রশাসনিক কেন্দ্র - নগর ভবন

ঢাকা পৌরসভা ১৮৬৪ সালের ১লা আগস্ট প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এবং ১৯৭৮ সালে কর্পোরেশন অবস্থা উন্নীত হয়েছে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের একটি স্বায়ত্ত কর্পোরেশন যা শহর বিষয়াবলি পরিচালনা করে (অর্থাৎ ২০১১ সাল থেকে), ঢাকা সিটি করপোরেশন বর্তমানে দুই প্রশাসনিক অংশে বিভক্ত করা হয়েছে – এইগুলো হলো (১) ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এবং (২) ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন – ভাল নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য। এই দুটি কর্পোরেশন প্রশাসকদের দ্বারা চালিত হয়। অন্তর্ভুক্ত এলাকায়গুলো কয়েকটি পৌরসভায় বিভক্ত করা হয়েছে, যা কমিশনার নির্বাচিত করেছেন। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের দায়িত্ব ও নির্দেশ অনুযায়ী সমস্ত সরকারি স্কুল এবং অধিকাংশ বেসরকারি স্কুলগুলো চালানো হয়, শুধুমাত্র ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলো এবং মাদ্রাসাগুলো ছাড়া। বাংলাদেশে সকল মাদ্রাসা একটি কেন্দ্রীয় বোর্ড দ্বারা পরিচালিত যখন ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলো পৃথক শিক্ষা ও শাসন কাঠামোর অধীনে হয়ে থাকে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সেইসময় ৬,০০০ পুলিশ-বাহিনী মোট ১২টি পুলিশ থানায় কর্মরত ছিল। শহর দ্রুত বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে, বর্তমানে পুলিশ-বাহিনী উত্থাপিত হয়েছে প্রায় ৩৪০০০ জনে এবং ৫০টি পুলিশ থানা স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

ক্রমবর্ধমান যানজট এবং জনসংখ্যা সমস্যার মোকাবিলায় জাতীয় সরকার সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী এলাকার দ্রুত নগরায়নের একটি নীতি বাস্তবায়ন করেছে। ঢাকা মহানগরীকে কেন্দ্র করে বিশেষত বর্তমানে দ্রুত জনবিস্ফোরণের যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাতে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে ২০৩৫ সালের মধ্যে নগরীর জনসংখ্যা ৩ কোটিকেও ছুঁয়ে ফেলতে পারে। ফলে স্বাভাবিক নাগরিক পরিষেবা ভেঙে পড়ার উপক্রম হবে। তাই ঢাকা শহরকে ঘিরে একদিকে বর্তমানে বিভিন্ন উপনগরীর প্রবর্তন করে ও অন্যদিকে সমগ্র দেশ জুড়েই দারিদ্রের যথাসাধ্য মোকাবিলা করে নগরমুখী লাগামছাড়া জনস্রোতকে কিছুটা মোকাবিলা করাই এই পরিকল্পনার লক্ষ্য।

প্রশাসনিক সংস্থা

ঢাকা: নামকরণের ইতিহাস, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ভূগোল 
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবন

ঢাকা বিশ্বের অন্যান্য মেগা শহরগুলো থেকে ভিন্ন, ঢাকা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে চার বার সরকার প্রতিষ্ঠানের দ্বারা সেবা নিয়েছে। দুই কর্পোরেশন, উত্তর এবং দক্ষিণ, দুই ক্ষমতাহীন মেয়রদের নেতৃত্বে চালিত হয় যখন তাদের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। তাছাড়া, তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এবং বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সকল ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন, একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি উন্নয়ন এবং তারা শহর রক্ষণাবেক্ষণ চালিয়ে যায়।

প্রতিনিধিত্ব সেবা জনকসংস্থা
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন
জনসেবা স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়
 ∟ স্থানীয় সরকার বিভাগ
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ আইন প্রয়োগকারী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
 ∟ বাংলাদেশ পুলিশ
ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড
বিদ্যুৎ বিতরণ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়
 ∟ বিদ্যুৎ বিভাগ
ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ পানি সরবরাহ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়
 ∟ স্থানীয় সরকার বিভাগ
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) নগর পরিকল্পনা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা
স্কুল শিক্ষা শিক্ষা মন্ত্রণালয়
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়
ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ পরিবহন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়
 ∟সড়ক পরিবহন ও জনপথ বিভাগ

পানি ব্যবস্থাপনা

ঢাকায় একটি জলবাহিত নিকাশী ব্যবস্থা রয়েছে, কিন্তু ঢাকার জনসংখ্যার মাত্র ১৫% এই সেবা পায় এবং অপরদিকে ৩০% সেপটিক ট্যাংক সেবা পায়।

অর্থনীতি

ঢাকা: নামকরণের ইতিহাস, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ভূগোল 
সিটি সেন্টার বাংলাদেশ হল ঢাকার সবচেয়ে উঁচু অট্টালিকা

ঢাকা শহরের প্রকৃত নমিনাল জিডিপি ১৬২ বিলিয়ান মার্কিন ডলার এবং শহরের পিপিপি প্রায় ২৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ঢাকা বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র। শহরে উঠতি মধ্যবিত্ত জনসংখ্যা বাড়ছে ঢাকা পাশাপাশি আধুনিক ভোক্তা এবং বিলাস পণ্যের বাজার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঐতিহাসিকভাবেই এই শহরে অভিবাসী শ্রমিকদের আকৃষ্ট করে আসছে। হকার, ছোটো দোকান, রিকশা, রাস্তার ধারের দোকান শহরের মোট জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশ। শুধুমাত্র রিকশা চালকের সংখ্যাই ৫ লাখ এর বেশি। কর্মপ্রবাহের প্রায় অর্ধেকই গৃহস্থালি অথবা অপরিকল্পিত শ্রমজীবী হিসাবে কর্মরত আছেন। যদিও টেক্সটাইল শিল্পে প্রায় ৮০০,০০০ এরও বেশি মানুষ কাজ করছেন। তারপরও এখানে বেকারত্বের হার ছিলো প্রায় ১৯%। ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী ঢাকা শহরের স্থাবর সম্পদের মূল্য প্রায় ১৪২ বিলিয়ন ডলার। যার প্রবৃদ্ধি ৬.৪%। ঢাকার বার্ষিক মাথাপিছু আয় ১৩০০ মার্কিন ডলার এবং এখানে প্রায় ১৫% মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে। এই জনসংখ্যার একটি বড় অংশ কর্মসংস্থানের সন্ধানে গ্রাম থেকে শহরে এসেছে এবং এদের অনেকেরই দৈনিক আয় ৫ মার্কিন ডলারের কম।

শহরের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকাগুলো হলো মতিঝিল, চকবাজার, নবাবপুর, নিউ মার্কেট, ফার্মগেট ইত্যাদি এবং প্রধান শিল্প এলাকা গুলো হল তেজগাঁও, হাজারীবাগ ও লালবাগ। বসুন্ধরা-বারিধারা একটি উন্নয়নশীল অর্থনৈতিক এলাকা এবং আগামী ৫ বছরের মধ্যে এই এলাকায় উচ্চ প্রযুক্তির শিল্পকারখানা, কর্পোরেশন এবং শপিং মল তৈরী করা হবে। ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল প্রধানত গার্মেন্টস, টেক্সটাইল এবং অন্যান্য পণ্য রপ্তানিতে উদ্বুদ্ধ করর লক্ষ্যে তৈরী করা হয়েছিল। ঢাকায় মোট দুটি ইপিজেড-এ মোট ৪১৩টি শিল্প স্থাপনা রয়েছে। এখানকার অধিকাংশ কর্মীই নারী। এই শহরের ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ দেশের অন্যতম বৃহত স্টক এক্সচেঞ্জ, এখানে তালিকাভুক্ত বৃহত্তম আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে সিটিগ্রুপ, এইচএসবিসি ব্যাঙ্ক বাংলাদেশ, জেপি মর্গান চেজ, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাঙ্ক (বাংলাদেশ), আমেরিকান এক্সপ্রেস, শেভরন, এক্সন মবিল, টোটাল, ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম, ইউনিলিভার, নেসলে, ডিএইচএল, ফেডএক্স, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো ইত্যাদি। স্থানীয় বড় আকারের শিল্পগ্রুপ যেমন কনকর্ড গ্রুপ, র‌্যাংগস গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, টি কে শিল্প গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, নাভানা গ্রুপ, জামান গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, রহিম আফরোজ ইত্যাদি প্রতিষ্টানের প্রধান বাণিজ্যিক কার্যালয় ঢাকায় অবস্থিত। এই শহরেই নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক এবং বাংলাদেশের প্রথম ভূমি উন্নয়ন ব্যাংক প্রগতি কো-অপারেটিভ ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (প্রগতি ব্যাংক) এর প্রধান কার্যালয় ঢাকা বিভাগেই অবস্থিত। নগরায়নের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে শহরের উন্নয়ন চলছে, নতুন নতুন বহুতল ভবন তৈরী হচ্ছে ফলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই শহরের পরিবর্তন হয়েছে। ফাইন্যান্স, ব্যাংকিং, শিল্পোৎপাদন, টেলিযোগাযোগ এবং সেবা খাতে বিশেষভাবে উন্নয়ন হচ্ছে। পাশাপাশি শহরের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য পর্যটন এবং হোটেল রেস্তোরাঁর উন্নয়নও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

পরিবহন

ঢাকা: নামকরণের ইতিহাস, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ভূগোল 
নিউ মার্কেট এলাকার যানবাহন
ঢাকা: নামকরণের ইতিহাস, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ভূগোল 
রিকশা
ঢাকা: নামকরণের ইতিহাস, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ভূগোল 
বিআরটিসি পরিচালিত দ্বিতল বাস
ঢাকা: নামকরণের ইতিহাস, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ভূগোল 
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স Boeing 777-300ER উড্ডয়ন
ঢাকা: নামকরণের ইতিহাস, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ভূগোল 
সদরঘাট নদীবন্দরে স্টিমারের চলাচল
অবকাঠামো সংখ্যা নাম পরিষেবা
প্রধান রেলওয়ে স্টেশন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন

বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন

রেল
বাসস্ট্যান্ড সায়েদাবাদ

গাবতলী

মহাখালী

ফুলবাড়িয়া

সড়কপথ
লঞ্চ স্ট্যান্ড সদরঘাট নৌপথ
বিমানবন্দর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

তেজগাঁও বিমানবন্দর

আকাশপথ
ফ্লাইওভার ১২
  • মহাখালী উড়ালসেতু
  • খিলগাঁও উড়ালসেতু
  • কুড়িল উড়ালসেতু
  • মিরপুর এয়ারপোর্ট রোড উড়ালসেতু
  • মেয়র হানিফ উড়ালসেতু
  • কালসী উড়ালসেতু
  • বিমানবন্দর উড়ালসেতু
  • জসীম উদদীন উড়ালসেতু
  • মগবাজার-মৌচাক উড়ালসেতু
  • কেরানীগঞ্জ উড়ালসেতু
  • বিজয় সরণি – তেজগাঁও লিংক রোড উড়ালসেতু
  • গাউসিয়া-ভুলতা উড়ালসেতু
সড়কপথ
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সড়কপথ
মেট্রোরেল ঢাকা মেট্রোরেল এমআরটি লাইন ৬ মেট্রো রেল

ঢাকা বিশ্বের মধ্যে রিকশার রাজধানী নামে পরিচিত। প্রতিদিন গড়ে এখানে প্রায় ৪,০০,০০০ রিকশা চলাচল করে।

রিকশা এবং ইঞ্জিন চালিত অটো রিকশা ঢাকার অন্যতম প্রধান বাহন, আর এই শহরে যে প্রায় ৪০০০০০০ এর বেশি রিকশা চলাচল করে, তা অন্য সকল দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ যদিও সরকারি হিসাব মতে ঢাকা শহরের জন্য মোট ৮৫,০০০ রিকশার নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। রিকশা ঢাকা শহরের রাস্তার যানজটের অন্যতম কারণ এবং কিছু বড় বড় রাস্তায় রিকশা চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন পরিচালিত বাস ঢাকা শহরের পরিবহনের আরেকটি জনপ্রিয় উপায়। এছাড়া রয়েছে বহু বেসরকারি বাস সার্ভিস। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে ঢাকা শহরে পেট্রোল ও ডিজেলচালিত কিছু যানবাহন (বেবি ট্যাক্সি, টেম্পো ইত্যাদি) বন্ধ করে দেওয়া হয় ও পরিবর্তে প্রাকৃতিক গ্যাস (Compressed Natural Gas – CNG) বা সিএনজিচালিত সবুজ অটোরিক্সা চালু হয়। এর ফলে পরিবেশ দূষণ অনেক কমে এসেছে।

স্কুটার, ট্যাক্সি এবং ব্যক্তিগত মালিকানাধীন যানবাহনগুলো শহরের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সরকার দুই স্ট্রোক ইঞ্জিন বিশিষ্ট অটো রিকশার প্রতিস্থাপন করে "সবুজ অটোরিকশা" চালু করেছে যা সিএনজি অটোরিকশার বা বেবি-ট্যাক্সি নামে পরিচিত এগুলোতে পরিবেশ বান্ধব সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হয়। ঢাকা রাস্তা চলাচলকারী ট্যাক্সিগুলো দুই ধরনের হয়। হলুদ ট্যাক্সিগুলো কিছুটা উচ্চ মান সম্পন্ন হয়ে থাকে যদিও এটি ব্যয়বহুল। এই ট্যাক্সিগুলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত; টয়োটা করোলা এর, টয়োটা প্রিমিও এর এবং টয়োটা এলিয়ন মডেলের গাড়িগুলো ট্যক্সি হিসাবে ব্যবহার করা হয় এখানে। ২০১৩ সালে এই সেবাটি প্রথমে ২০০-২৫০০ টি ট্যক্সি নিয়ে শুরু করা হয়েছিলো। সরকার ১,৫০০সিসি ক্ষমতা বিশিষ্ট ইঞ্জিনের আরও ৫,০০০ নতুন ট্যাক্সি আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এই ধরনের ট্যাক্সির সংখ্যা ১৮,০০০ পর্যন্ত বাড়ানো হবে।

১৯৮৬-এর হিসাব অনুযায়ী, ঢাকার ১,৮৬৮ কিলোমিটার (১,১৬১ মা) রাস্তাগুলো বাঁধানো ছিলো। সড়কপথ, রেলপথের মাধ্যমে ঢাকা শহর দেশের অন্যন্য অংশের সাথে সংযুক্ত আছে। ঢাকা থেকে ভারতের কলকাতা ও আগরতলা ​​শহরে যাতায়াতের জন্য বিআরটিসি পরিচালিত নিয়মিত বাস সার্ভিস রয়েছে।

ঢাকার রেলওয়ে স্টেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে, বনানী রেলওয়ে স্টেশনে, তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন, ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশনে এবং গেন্ডারিয়া রেলওয়ে স্টেশন, রাষ্ট্র পরিচালিত বাংলাদেশ রেলওয়ে শহরতলি এবং জাতীয় রুটে সেবা প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা ও কলকাতার মধ্যে একটি নিয়মিত আন্তর্জাতিক ট্রেন সার্ভিস পরিচালনা করে থাকে। ঢাকা থেকে অন্যান্য শহরতলি এলাকায় রেল যোগাযোগ রয়েছে, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে ডেমু (DEMU) ট্রেনের মাধ্যমে নিয়মিত রেলসেবা পরিচালনা করে আসছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে সদরঘাট নৌবন্দরের মাধ্যমে নদীর অপর পারে এবং বাংলাদেশের অন্যান্য বিভিন্ন স্থানে যাত্রী এবং মালপত্র পরিবহন করা হয়।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকা শহরের কেন্দ্রে থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত, এটি দেশের বৃহত্তম এবং ব্যস্ততম বিমানবন্দর। দেশের মোট বিমান আগমন এবং প্রস্থানের ৫২% পরিচালনা করা হয় এখানে। চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, কক্সবাজার, যশোর, বরিশাল, সৈয়দপুরে অভ্যন্তরীণ সেবা এবং এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং পশ্চিম ইউরোপের প্রধান শহরগুলোতে আন্তর্জাতিক সেবাপরিচালনা করা হয়।

নাগরিক পরিষেবা

ঢাকায় নাগরিক পরিষেবা প্রদানের জন্য বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান কাজ করে থাকে। ঢাকা শহরের পানি চাহিদা পূরণের জন্য ঢাকা ওয়াসা, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন বা বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য ডেসা এবং ডেসকো, গ্যাস সরবারহ করার জন্য তিতাস গ্যাস প্রভৃতি সেবামূলক সংস্থা নিয়োজিত রয়েছে।

জনগোষ্ঠী

ঢাকা: নামকরণের ইতিহাস, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ভূগোল 
ঢাকার তোপখানা রোডের কাছে ফেরিওয়ালারা, জুলাই ২০০১

ঢাকা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শহর যা বাঙালি সংস্কৃতির একটি ছবিও বলা চলে। ঢাকায় বসবাসকারীদের কিছু অংশের পূর্বপুরুষরা ভারতীয়। তারা অনেকেই ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে দেশ বিভাগের সময় ভারত থেকে এসেছিলেন। এদের মধ্যে কিছু বিহারী মুসলমানও ছিলেন। এদের সংখ্যা বর্তমানে কয়েক লক্ষ। এখানকার বেশিরভাগ লোক মুসলমান সম্প্রদায়ের, এদের সংখ্যা শতকরা ৮৫%। কিন্তু সাথে বহু হিন্দু সম্প্রদায়ের বাস এই শহরে যারা জনসংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে শতকরা ১০%। এছাড়াও খ্রিস্টান, বৌদ্ধ এবং শিখ ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের লোক বসবাস করেন। ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠীর মাঝে হরিজন, ঋষি ও বাহাই সম্প্রদায়ের লোক বসবাস করে। ঢাকায় বসবাসকারী প্রায় সবাই বাংলা ভাষায় কথা বলেন, পুরান ঢাকা'র লোকেরা উর্দুতেও কথা বলে থাকেন। বর্তমানে নতুন প্রজন্মের অনেকেই ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করে। ঢাকা নগরী অনেকগুলো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল আছে যারা ইংরেজি ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে। কিছু ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠীরা হিন্দি, তামিল, তেলুগু ও ভোজপুরী ভাষাও ব্যবহার করে।

পুরান ঢাকার স্থানীয় আদি অধিবাসীদের 'ঢাকাইয়া' বলা হয়। তাদের আলাদা উপভাষা এবং সংস্কৃতি রয়েছে। ঢাকা রাজধানী হওয়ায় সারা বাংলাদেশ থেকেই এখানে লোকজন উন্নত জীবনযাপনের উদ্দেশ্যে আসে।

সংস্কৃতি

ঢাকা: নামকরণের ইতিহাস, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ভূগোল 
রমনা পার্কে পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কে মূল ধরে তার পার্শ্ববর্তী এলাকা হচ্ছে ঢাকা শহরের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা একাডেমি, চারুকলা ইনস্টিটিউট, কেন্দ্রীয় গণ গ্রন্থাগার ও জাতীয় জাদুঘর এলাকা সংস্কৃতি-কর্মীদের চর্চা ও সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীর মূল ক্ষেত্র। এর বাইরে বেইলি রোডকে নাটকপাড়া বলা হয় সেখানকার নাট্যমঞ্চগুলোর জন্য। এছাড়াও নবনির্মিত শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হল এবং অন্যান্য মঞ্চসমূহ নাট্য ও সঙ্গীত উৎসবে সব সময়ই সাংস্কৃতিক চর্চাকে অব্যাহত ধারায় এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় বছরের বিভিন্ন সময়ে নাট্যোৎসব ও সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। একুশে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের পুরোটা জুড়ে বাংলা একাডেমিতে একুশে বইমেলার আয়োজন করা হয়। বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে পহেলা বৈশাখে রমনা পার্কে ছায়ানটের অনুষ্ঠানসহ সারাদিন গোটা অঞ্চলে সাংস্কৃতিক উৎসব চলে। সাংস্কৃতিক হৃদ্যতার ধারাবাহিকতায় আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরও সারা বছর ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে।

শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

ঢাকা: নামকরণের ইতিহাস, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ভূগোল 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এর কেন্দ্রস্থলের অপরাজেয় বাংলা ভাস্কর্য

১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গভঙ্গের সময় হতেই ঢাকা এই প্রাদেশিক রাজধানীর শিক্ষার কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এই সময়ই ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। ১৯৮০'র দশক পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে এর আশেপাশের এলাকাকে এডুকেশন ডিস্ট্রিক্ট বলা হতো। এই এডুকেশন ডিস্ট্রিক্টের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ,মতিঝিল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল,সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, ভিকারুননেসা নুন স্কুল এন্ড কলেজ, উইলস্ লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজ, ঢাকা কলেজ,ঢাকা সিটি কলেজ,হলিক্রস কলেজ, নটর ডেম কলেজ, তেজগাঁও কলেজ (পূর্বে নাইট কলেজ), ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরী স্কুল, ইডেন মহিলা কলেজ, ইষ্ট এন্ড হাই স্কুল, অগ্রণী বালিকা বিদ্যালয়, আজিমপুর গার্লস স্কুল, বেগম বদরুন্নেসা কলেজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ, ঢাকা আর্ট কলেজ (চারুকলা ইন্সটিটিউট) প্রভৃতি।

ঢাকা: নামকরণের ইতিহাস, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ভূগোল 
ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকায় অবস্থিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর একটি।

ঐতিহ্যগতভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম সৃষ্টি হয়েছিলো ব্রিটিশ শাসনামলে। তখন একে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হতো। বুদ্ধদেব বসুর মতো ছাত্র এবং বিজ্ঞানী সত্যেন বোসের মতো শিক্ষক তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনামকে উচ্চ শিখরে নিয়ে গিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলটি সভ্যতার স্বাক্ষর বহন করে। চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে পহেলা বৈশাখে আয়োজিত হয় বর্ণিল শোভাযাত্রা। অন্যদিকে পুরান ঢাকায় ১৮৫৮ সাল থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে চলে আসছে।

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রধানত তিনটি মূল ধারা রয়েছে; এগুলোর প্রথমটি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত পাঠক্রম (যা বাংলা অথবা ইংরেজি মিডিয়ামে পড়াশোনা করা যায়), দ্বিতীয়টি হচ্ছে বেসরকারি কেজি লেভেল হতে এ লেভেল পর্যন্ত ইংরেজি মিডিয়ামের ব্রিটিশ পাঠক্রম এবং তুতীয়টি হচ্ছে মূলত আরবি, ফার্সি ও উর্দু ভাষানির্ভর মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা। মাদ্রাসাভিত্তিক এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো কোনোটি সরকার নির্ধারিত পাঠক্রম এবং কোনো কোনোটি নিজস্ব পাঠক্রম ব্যবহার করে শিক্ষা প্রদান করে। শেষোক্ত এশ্রেণীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর সরকারের কোনো প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ নেই। এই একই চিত্র ঢাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে প্রায় একশভাগ প্রযোজ্য।

বলা বাহুল্য নয় যে, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশই ঢাকায় অবস্থিত। আশির দশক পর্যন্ত ঢাকাসহ বাংলাদেশে পাবলিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই শিক্ষাক্ষেত্রে মূল চালিকাশক্তি ছিলো। এর পর হতেই বেসরকারি খাতে কিন্ডারগার্টেন ও স্কুলের প্রসার হতে শুরু করে। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে তার সংশোধন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে এক বাঁধভাঙ্গা জোয়ার নিয়ে আসে। এযাবত প্রায় ৫৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে সরকার। লক্ষণীয় বিষয় হলো এর মধ্যে প্রায় ৪৫টিই হলো ঢাকা বিভাগে।

ঢাকার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ

বাংলাদেশে বর্তমানে সর্বমোট ৫৩টির অধিক পাবলিক বা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি হচ্ছে ঢাকা শহরে (তন্মধ্যে ২টি ক্যাম্পাস অস্থায়ী)। এগুলো হলো :

  1. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (স্থাপিত : ১৯২১)
  2. বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (স্থাপিত : ১৯৬২)
  3. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (স্থাপিত : ১৯৯৮)
  4. শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (স্থাপিত : ২০০১)
  5. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (স্থাপিত : ২০০৫)
  6. বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (স্থাপিত : ২০০৮)
  7. বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (স্থাপিত : ২০১০)
  8. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় (অস্থায়ী ক্যাম্পাস) (স্থাপিত : ২০১৩)
  9. ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় (স্থাপিত : ২০১৪)
  10. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় (স্থাপিত :২০১৯)

বাংলাদেশে বর্তমানে সর্বমোট ৭০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রায় ৪৫টিই হলো ঢাকা বিভাগে।

ঢাকার উল্লেখযোগ্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ

  1. নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়
  2. ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি
  3. আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
  4. গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
  5. ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়
  6. অ্যামেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ
  7. ইউনাইটেড ইন্টান্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
  8. বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলোজি
  9. ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
  10. ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভারসিটি বাংলাদেশ
  11. স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ
  12. প্রাইম ইউনিভার্সিটি
  13. ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ
  14. প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি
  15. ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগরিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি
  16. সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি
  17. নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ
  18. উত্তরা ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ
  19. ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি
  20. ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

গণমাধ্যম

ঢাকা থেকে প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য বাংলা দৈনিক পত্রিকাগুলোর মধ্যে রয়েছে ইত্তেফাক, সংবাদ, প্রথম আলো, আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ, জনকণ্ঠ, যুগান্তর, ইনকিলাব, নয়া দিগন্ত, সমকাল, মানবজমিন, পূর্বাঞ্চল, সংগ্রাম, কালের কণ্ঠ‌।
ইংরেজি দৈনিক পত্রিকাসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাংলাদেশ অবজারভার, বাংলাদেশ টুডে, ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস, ইন্ডিপেন্ডেন্ট, নিউ এইজ, নিউ নেশন, ডেইলি স্টার, নিউজ টুডে। ঢাকায় অবস্থিত সংবাদ সংস্থাগুলো হলো বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস), ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ, (ইউ.এন.বি)।

সাহিত্য পত্রিকা গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কালি ও কলম, সমুদিত (ত্রৈমাসিক সাহিত্য ডাক), সমধারা, অণুপ্রাণন, নান্দিক, কালাঞ্জলি, কথা, বাংলার কবিতাপত্র, জলধি।

অনলাইন পত্রিকার গুলোর মদ্ধে উল্লেখযোগ্য বিডিনিউজ২৪.কম, বাংলানিউজ২৪.কম ।

স্থানীয় টেরেস্ট্রিয়াল টেলিভিশন সম্প্রচার কেন্দ্র হলো বাংলাদেশ টেলিভিশন বা বিটিভি। এছাড়া স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিটিভি ওয়ার্ল্ড, মাই টিভি, চ্যানেল আই, এটিএন বাংলা, এনটিভি, আরটিভি, বৈশাখী টিভি, বাংলাভিশন, দিগন্ত টিভি, দেশ টিভি, একুশে টেলিভিশন, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন, একাত্তর টিভি, আনন্দ টিভি।

ঢাকার রেডিও চ্যানেল (সরকারি ও বেসরকারি), বাংলাদেশ বেতার (সরকারি রেডিও চ্যানেল), রেডিও ভূমি, রেডিও ফুর্তি, রেডিও টুডে, রেডিও আমার, এবিসি রেডিও, বাংলাদেশ বেতারের ট্রাফিক সম্প্রচার কার্যক্রম।

খেলাধুলা

ঢাকা: নামকরণের ইতিহাস, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ভূগোল 
ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম

ক্রিকেট এবং ফুটবল ঢাকার অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। এই খেলাগুলো শুধুমাত্র ঢাকাতেই নয়, বরং পুরো বাংলাদেশেই এই খেলাগুলোর জনপ্রিয়তা রয়েছে। মোহামেডান এবং আবাহনী ঢাকার দুটি বিখ্যাত ক্লাব যারা ফুটবল এমন ক্রিকেটে নিয়মিত সাফল্য অর্জন করে আসছে। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট জাতীয় ক্রিকেট লীগে ঢাকার দল হিসাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন ক্রিকেট দল অংশ নিয়ে থাকে। এছাড়া ঘরোয়া টুয়েন্টি২০ প্রতিযোগিতা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে এই শহরের দল ঢাকা প্লাটুন অংশ নিয়ে থাকে।

ঢাকা: নামকরণের ইতিহাস, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ভূগোল 
ঢাকা বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ক্রিকেট খেলার দৃশ্য

সারা বাংলাদেশের খেলাধুলার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম) (সাবেক ঢাকা স্টেডিয়াম) ও এর আশেপাশের এলাকা। বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডি হলেও ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল, হকি, হ্যান্ডবল সহ আরও অনেক খেলা ঢাকায় নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

এক সময় প্রতি বছর ঢাকা স্টেডিয়ামে আগা খান গোল্ড কাপ-এর মতো আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট সারাদেশের মানুষকে উদ্দীপিত করে রাখতো। অল্প কিছু সময় প্রেসিডেন্টস গোল্ড কাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট ঢাকা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। এছাড়াও ঢাকা স্টেডিয়ামে উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হয়েছিলো এশিয়া কাপ, অনূর্ধ্ব ২১ ফুটবল টুর্নামেন্ট।

বর্তমানে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তায় অন্যান্য খেলাধুলা ম্রীয়মান হয়ে গেছে বলা যায়। স্বাধীনতা পূর্বের ন্যায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম পুনরায় আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেট ভেন্যু হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এছাড়াও শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই স্টেডিয়ামগুলোতে এখন নিয়মিতভাবে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলাসমূহ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

বাংলাদেশের খেলাধুলার সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা হচ্ছে জাতীয় ক্রীড়া কাউন্সিল। এর সদর দপ্তর ঢাকায় অবস্থিত। এছাড়াও প্রায় ৩০টি ক্রীড়া ফেডারেশন ঢাকার সদরদপ্তর হতেই জেলা ক্রীড়া সমিতিগুলোর মাধ্যমে সারা দেশের খেলাধুলার কার্যক্রম দেখাশোনা ও পরিচালনা করে। এই ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন যার সদরদপ্তরও ঢাকায় অবস্থিত। উল্লেখযোগ্য ক্রীড়া ফেডারেশনগুলো হলো: বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন, বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন, বাংলাদেশ বাস্কেটবল ফেডারেশন, বাংলাদেশ শ্যুটিং ফেডারেশন, বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন, বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশন, বাংলাদেশ টেবিল টেনিস ফেডারেশন, বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশন, বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশন, বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশন, বাংলাদেশ আর্চারী ফেডারেশন, বাংলাদেশ এ্যামেচার এথলেটিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ খো খো ফেডারেশন, বাংলাদেশ তাইকুন্ডু ফেডারেশন।

ঢাকার উল্লেখযোগ্য খেলাধুলার কেন্দ্রগুলো হচ্ছে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম এলাকা সংলগ্ন আউটার স্টেডিয়াম, ন্যাশনাল সুইমিংপুল, মাওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়াম, মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়াম, উডেনফ্লোর জিমনেশিয়াম, ঢাকা জেলা ক্রীড়া সমিতি; মিরপুর জাতীয় ষ্টেডিয়াম ও তা সংলগ্ন সুইমিংপুল কমপ্লেক্স; মিরপুর জাতীয় ইনডোর স্টেডিয়াম; বনানীর আর্মি স্টেডিয়াম ও নৌবাহিনীর সুইমিং কমপ্লেক্স। এছাড়াও ধানমন্ডির আবাহনী ক্লাব মাঠ, ধানমন্ডি ক্লাব মাঠ এবং কলাবাগান ক্লাব মাঠেও সারা বছর ধরে বিভিন্ন লীগ ও টুর্নামেন্টের খেলা চলে।

দর্শনীয় স্থানসমূহ

ঢাকা: নামকরণের ইতিহাস, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ভূগোল 
বোটানিক্যাল গার্ডেনের লেকের একাংশ
ঢাকা: নামকরণের ইতিহাস, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ভূগোল 
ঢাকার দর্শনীয় স্থানসমূহের অবস্থান ও সময়সূচী

ঐতিহাসিক স্থানসমূহ: লালবাগের কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ হল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শাঁখারিবাজার, হোসেনি দালান, ছোট কাটারা, বড় কাটরা, কার্জন হল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভবন (পুরাতন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলা ভবন), ঢাকেশ্বরী মন্দির, তারা মসজিদ, মীর জুমলা গেট, পরিবিবির মাজার

পার্ক, বিনোদন ও প্রাকৃতিক স্থানঃ রমনা পার্ক, বাহাদুর শাহ্‌ পার্ক- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বোটানিক্যাল গার্ডেন, ঢাকা শিশু পার্ক, বুড়িগঙ্গা নদী, ঢাকা চিড়িয়াখানা, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বলধা গার্ডেন

স্মৃতিসৌধ ও স্মারকঃ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, (রায়ের বাজার), অপরাজেয় বাংলা-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, একাত্তরের গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি (ভাস্কর্য) আসাদ গেইট

আধুনিক স্থাপত্যঃ জাতীয় সংসদ ভবন, বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার, বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভার, হজরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।

হ্রদঃ ধানমন্ডি লেক, গুলশান লেক, বনানী লেক, দিয়াবাড়ি হ্রদ,

ঢাকা: নামকরণের ইতিহাস, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ভূগোল 
বনানী লেক

ঝিল হাতিরঝিল

ঢাকার প্রথম

  • মন্দির : ঢাকার প্রথম মন্দির সম্ভবত বকশিবাজারের ঢাকেশ্বরী মন্দির। ধারণা করা হয় এ মন্দিরের নাম থেকেই এই শহরের নামকরণ হয়েছে 'ঢাকা'।এটির প্রতিষ্ঠাতা সেনবংশের রাজা বল্লাল সেন।এর মাধ্যমেই ঢাকার প্রাচীনত্ব প্রমাণিত হয়।
  • মসজিদ : ১৪৫৬-৫৭ সালে নির্মিত নারিন্দার বিনত বিবির মসজিদই সম্ভবত ঢাকার প্রথম মসজিদ।
  • মুসলিম শিলালিপি : নারিন্দার বিনত বিবি মসজিদে প্রাপ্ত শিলালিপিটিই সম্ভবত ঢাকার প্রথম মুসলিম শিলালিপি।
  • গির্জা : পর্যটক তাভারনিয়ার ও মানরিকের বর্ণনায় প্রাপ্ত গির্জাটি ১৬১২ সালের দিকে অগাস্টিয়ানদের নির্মিত বলে জানা গেলেও এর অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
  • নির্বাক চলচ্চিত্র : ১৯৩১ সালে নির্মিত ঢাকার প্রথম পূর্ণাঙ্গ নির্বাক চলচ্চিত্র দ্য লাস্ট কিস
  • পাবলিক মার্কেট : ঢাকা পৌরসভার চেয়ারম্যান নবাব ইউসুফজান ১৯১৩ সালে ঢাকায় প্রথম পাবলিক মার্কেট স্থাপন করেন।
  • খেলাফত কমিটির অধিবেশন : নবাব সলিমুল্লার জ্যেষ্ঠপুত্র খাজা হাবিবুল্লাহর উদ্যোগে ডিসেম্বর ১৯২০ সালে আহসান মঞ্জিলে ঢাকা খেলাফত কমিটির প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
  • পৌরসভা : ১৮৬৪ সালে ঢাকায় প্রথম পৌরসভা গঠিত হয়।
  • ব্যালট পেপারে নির্বাচন : ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯১৯ সালের পরের নির্বাচনে ঢাকায় প্রথম ব্যালট পেপার ব্যবহৃত হয়।
  • ঘোড়াগাড়ির প্রবর্তক : আরমেনিয়ান জিএম সিরকোর প্রথম ঢাকায় ঘোড়াগাড়ি প্রবর্তন করেন বলে ধারণা করা হয়। তার প্রবর্তিত ঘোড়াগাড়ি ঢাকায় পরিচিতি পায় ঠিকাগাড়ি নামে।
  • জেনারেটরে বৈদ্যুতিক বাতি : ৭ ডিসেম্বর ১৯০১ সালে নবাব আহসান উল্লাহর আমন্ত্রণে ছোট লাটের সেক্রেটারি বোলটন ঢাকায় আসেন। বোলটন আহসান মঞ্জিলে হেমন্তের এক শনিবার বিকাল ৫টার সময় সুইচ টিপে ব্যক্তিগত জেনারেটর চালু করে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালান।
  • ম্যাজিস্ট্রেট : সম্ভবত ইংরেজ মি. ডে ঢাকার প্রথম ম্যাজিস্ট্রেট।
  • নির্বাচিত চেয়ারম্যান : জনগণের ভোটে নির্বাচিত ঢাকার প্রথম চেয়ারম্যান আনন্দ চন্দ্র রায়।
  • হাসপাতাল : কলকাতার দেশীয় হাসপাতালের শাখা হিসেবে ১৮০৩ সালে ঢাকার প্রথম হাসপাতাল স্থাপিত হয়।
  • ডিপার্টমেন্টাল স্টোর : ঢাকার নবাব পরিবারের খাজা নাজিমউদ্দিন ও খাজা শাহাবউদ্দিন ২৩ মার্চ ১৯২৩ সালে ঢাকায় প্রথম ডিপার্টমেন্টাল স্টোর খোলেন।
  • জজ : ১৭৭৮ সালে ঢাকার প্রথম জজ নিযুক্ত হন মি. ডানকানসান।
  • ইমামবাড়া : বেশ কয়েকটি প্রাচীন ইমামবাড়ার কথা জানা গেলেও ঢাকার প্রথম ইমামবাড়া সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় না।
  • গুরুদুয়ারা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগারের পশ্চিম পাশে তপুর শিখ সঙ্গত নামে স্থাপিত শিখ মন্দির। এটি গুরুদুয়ারা নানক শাহী নামে পরিচিত।
  • ব্রাহ্মসমাজ মন্দির : পাটুয়াটুলীর মুখে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের পাশে ২২ আগস্ট ১৮৬৯ সালে ঢাকা ব্রাহ্মসমাজ মন্দিরটি নির্মিত হয়।
  • বিদ্যালয় : ১৮১৬ সালের এপ্রিলে ছোট কাটরায় স্থাপিত লিওনার্দোর স্কুল।
  • সরকারি বিদ্যালয় : ১৫ জুলাই ১৯৩৫ সালে প্রতিষ্ঠিত কলেজিয়েট স্কুলটিই ঢাকার প্রথম সরকারি বিদ্যালয়। এটি তখনকার সময় বেশ সুপরিচিত একটি বিদ্যালয় ছিল। বুদ্ধদেব বসু, স্যার জগদীশচন্দ্র বসু, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান প্রমুখ এই বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছেন।
  • বালিকা বিদ্যালয় : ১৮৭৩ সালে ব্রাহ্মসমাজের উদ্যোগে ফরাশগঞ্জের একটি বাড়িতে মাত্র দুজন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে ঢাকার প্রথম বালিকা বিদ্যালয়।
  • কারিগরি বিদ্যালয় : ১৮৭৬ সালে ঢাকায় প্রথম সার্ভে স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এটিই ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত।
  • সরকারি কলেজ : ১৮৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকার প্রথম সরকারি কলেজ ঢাকা কলেজ
  • বেসরকারি কলেজ : ঢাকার প্রথম বেসরকারি কলেজ জগন্নাথ কলেজ।
  • নৈশ্য কলেজ : ১৯৬১ সালে স্থাপিত বকশিবাজারে অবস্থানরত নাইট কলেজ। বর্তমানে ফার্মগেটে স্থানান্তরিত তেজগাঁও কলেজ।
  • মেডিকেল কলেজ : ঢাকার প্রথম মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল কলেজ।
  • মাদ্রাসা-মক্তব : ঢাকা শহরে অনেক মসজিদের সঙ্গেই ছিল মক্তব ও মাদ্রাসা। সরকারের স্বীকৃত মাদ্রাসা হিসেবে ঢাকা মাদ্রাসাই সম্ভবত ঢাকার প্রথম মাদ্রাসা।
  • বেতার কেন্দ্র : ১৬ ডিসেম্বর ১৯৩৯ সালে নাজিমউদ্দিন রোডে খান বাহাদুর নাজির উদ্দিন সাহেবের ভাড়া বাড়িতে দুটি স্টুডিও নিয়ে অল ইন্ডিয়া রেডিও ঢাকার বেতার সম্প্রচার শুরু করে।
  • ফটোগ্রাফিক স্টুডিও : ১৯১০ সালে ১৬ নম্বর নবাবপুর রোডে আর সি দাস অ্যান্ড সন্স নামে ঢাকায় প্রথম ফটোগ্রাফিক স্টুডিও প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • মোটরগাড়ি : ১৯০৫ সালে ঢাকায় প্রথম মোটরগাড়ি চালু করেন নবাব সলিমুল্লাহ।
  • রিকশা : সম্ভবত ১৯৩৬-৩৭ সালে ঢাকার মৌলভীবাজারের দুই ব্যক্তি ব্যবসায়িক উদ্দেশে কলকাতার চন্দননগর থেকে ১৮০ টাকায় ঢাকায় দুটি সাইকেল রিকশা আমদানি করেন।
  • মুদ্রণযন্ত্র : ঢাকার প্রথম মুদ্রণযন্ত্র বাংলা মুদ্রণযন্ত্র। মুদ্রণযন্ত্রটি ঢাকায় ১৮৬০ সালে স্থাপন করা হয়।
  • বই : মুনতাসীর মামুনের মতে, ঢাকার ছোট কাটরা থেকে ১৮৪৯ সালে কাটরা প্রেস থেকে ব্যাপটিস্ট মিশনারির প্রকাশিত The first report of the East bengal Missionary Society MDCC-CXL VIII, with an Appendix etc. রিপোর্টিই ঢাকার প্রকাশিত প্রথম বই।
  • সংবাদপত্র : ঢাকার প্রথম সংবাদপত্র ঢাকা নিউজ।
  • বাংলা সংবাদপত্র : ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রথম বাংলা সংবাদপত্র ঢাকা প্রকাশ
  • ইংরেজি সংবাদপত্র : ঢাকার প্রথম সংবাদপত্র ঢাকা নিউজ।
  • উর্দু সংবাদপত্র : ১৯০৬ সালে ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয় উর্দু সংবাদপত্র আল মাশরিক।
  • বিজ্ঞান পত্রিকা : জানুয়ারি ১৮৮১ সালে ঢাকার প্রথম বিজ্ঞান পত্রিকা ভিষক প্রকাশিত হয়।
  • থিয়েটার : ঢাকার প্রথম থিয়েটার সম্ভবত পূর্ববঙ্গ রঙ্গভূমি। প্রতিষ্ঠাকাল নিয়ে মতভেদ থাকলেও ধারণা করা হয় ১৮৬১ সালের দিকে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • নাটক : ঢাকায় প্রথম মঞ্চস্থ নাটক নিয়ে দ্বিধা থাকলেও এক্ষেত্রে দীনবন্ধু মিত্রের নীল দর্পণকেই প্রথম মানা হয়।
  • যাত্রা : সম্ভবত 'সীতার বনবাস' যাত্রাপালাটি ঢাকায় প্রদর্শিত প্রথম যাত্রা।
  • বায়োস্কোপ : ১৮৯৮ সালে নবাব আহসানউল্লাহ কলকাতা থেকে বায়োস্কোপ এনে পরিবার ও ঢাকাবাসীকে দেখানোর ব্যবস্থা করেন।
  • সিনেমা হল : ঢাকার পিকচার হাউস নাট্যমঞ্চটি (শাবিস্তান হল) ১৯১৪ সালে সিনেমা হলে রূপান্তরিত হয়।
  • বাণিজ্যিক ব্যাংক : ঢাকার প্রথম বাণিজ্যিক ব্যাংক ছিল ঢাকা ব্যাংক।
  • বিদ্যুৎ বাতি : ৭ ডিসেম্বর-১৯০১ সালে নবাব আহসানউল্লাহর অর্থায়নে ঢাকার বেশকিছু রাস্তায় বিদ্যুৎ বাতির ব্যবস্থা করা হয়।
  • তেলের বাতি : ১৮৭১ সালে সাধারণ ঢাকাবাসীর চাঁদায় শহরে সর্বপ্রথম ১০০টি ল্যাম্পপোস্ট আর তেলের বাতি চালু করা হয়।
  • শ্মশান : আদিতে ঢাকার নদী ও খালপাড়ে মরদেহ পোড়ানো হতো। ঢাকার আদি স্বীকৃত শ্মশানের মধ্যে দয়াগঞ্জ শ্মশানঘাট, পোস্তগোলা ও লালবাগের শ্মশানের কথা জানা যায়।
  • কবরস্থান : আদি ঢাকায় যত্রতত্র কবর দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। ১৮৮২ সালে ঢাকার পুরনো নাখাসে মিউনিসিপ্যালিটির তত্ত্বাবধানে প্রথম কবরস্থান স্থাপন করা হয়।
  • ডক্টরেট-পিএইচডি : নিশিকান্ত চট্টোপাধ্যায় বাংলার যাত্রাপালা নিয়ে গবেষণা করে সুইজারল্যান্ড থেকে প্রথম ঢাকাবাসী হিসেবে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
  • নায়েব নাজিম : ঢাকার প্রথম নায়েব নাজিম মুহম্মদ আলী খান।
  • মুসলমান গ্র্যাজুয়েট : আদিনাথ সেনের মতে, ঢাকার প্রথম মুসলমান গ্র্যাজুয়েট খাজা মুহম্মদ আসগর।
  • নারী চিত্রশিল্পী : নবাব পরিবারের মেহেরবানু খানমই সম্ভবত ঢাকার প্রথম নারী চিত্রশিল্পী।
  • ঢাকার প্রথম চলচ্চিত্র : ঢাকার নবাব পরিবারের খাজা আদিল ও খাজা আজমল ঢাকার প্রথম ছবি সুকুমারী নির্মাণ করেন। এ চলচ্চিত্রটি ছিল পরীক্ষামূলক।
  • ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার—১ : ১৭৮৮ সালে একটি ক্রিমিনাল ওয়ার্ড নির্মাণের মাধ্যমে এই কারাগারে যাত্রা শুরু করা হয় এবং ২০১৬ সালের ২৯ শে জুলাই এই কারাগারটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় এবং বন্ধ করা হয়।

বিখ্যাত অধিবাসী

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

Tags:

ঢাকা নামকরণের ইতিহাসঢাকা ইতিহাস ও ঐতিহ্যঢাকা ভূগোলঢাকা আবহাওয়া ও জলবায়ুঢাকা স্থানীয় সরকারঢাকা পানি ব্যবস্থাপনাঢাকা অর্থনীতিঢাকা পরিবহনঢাকা নাগরিক পরিষেবাঢাকা জনগোষ্ঠীঢাকা সংস্কৃতিঢাকা শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঢাকা গণমাধ্যমঢাকা খেলাধুলাঢাকা দর্শনীয় স্থানসমূহঢাকা র প্রথমঢাকা বিখ্যাত অধিবাসীঢাকা আরও দেখুনঢাকা তথ্যসূত্রঢাকা আরও পড়ুনঢাকা বহিঃসংযোগঢাকাঅতিমহানগরীঢাকা জেলাবাংলাদেশবুড়িগঙ্গা নদীরাজধানীশহর

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

আলমগীর (অভিনেতা)বাংলা সাহিত্যযক্ষ্মাচার্লি চ্যাপলিনজায়েদ খান (বাংলাদেশী অভিনেতা)জামালপুর জেলাপশ্চিমবঙ্গএম. চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামসুভাষচন্দ্র বসুঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরজবাচাঁদহানিফ সংকেতফাতিমাভাইরাসঅর্থনীতিকাতারবিতর নামাজবাংলাদেশের অর্থনীতিবাংলা বাগধারার তালিকামুখমৈথুনবেঞ্জামিন নেতানিয়াহুশ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়চড়ক পূজাখোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরফিলিস্তিনঐশ্বর্যা রাইরূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রবাংলাদেশ আওয়ামী লীগআডলফ হিটলারশ্যামলী পরিবহনফেসবুকবাংলাদেশে পালিত দিবসসমূহচাঁদপুর জেলাসূরা ফালাকপাবনা মানসিক হাসপাতালকোষ (জীববিজ্ঞান)বাউল সঙ্গীতনেপোলিয়ন বোনাপার্টজনসংখ্যা অনুযায়ী সার্বভৌম রাষ্ট্র ও নির্ভরশীল অঞ্চলসমূহের তালিকাপূরণবাচক সংখ্যা (ভাষাতত্ত্ব)ভূমধ্যসাগরসৌদি আরবের ইতিহাসগর্ভধারণমুনাফিকইসরায়েলের ইতিহাসবিশ্বের মানচিত্রআমাজন অরণ্যথ্যালাসেমিয়াভাষাঠাকুর অনুকূলচন্দ্রময়মনসিংহরাগ (সংগীত)ভারতীয় জনতা পার্টি১৮৫৭ সিপাহি বিদ্রোহসার্বিয়াআওরঙ্গজেবঅন্নপূর্ণা পূজাশবনম বুবলিলগইনচট্টগ্রাম বিভাগসুন্দরবনমুসাফিরের নামাজফিলিস্তিনের ইতিহাসআকবরডাচ্-বাংলা ব্যাংক পিএলসিশাহরুখ খানবাংলাদেশের যাত্রীবাহী ট্রেনের তালিকার‍‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ননিক্ষেপী ক্ষেপণাস্ত্রবরিশালমুজিবনগর সরকারপরমাণুকক্সবাজারলাঙ্গলবন্দবিকাশপল্লী সঞ্চয় ব্যাংক🡆 More