কুস্তি হলো শারিরীক লড়াইকে কেন্দ্র করে একটি খেলা, যেখানে দু’জন কুস্তিগির একজন আরেকজনের অপেক্ষা সুবিধাজনক অবস্থা অর্জণ করতে চায়। এ খেলায় ক্লিঞ্চ লড়াই, থ্রো এবং চেকডাউন, জয়েন্ট লোক, পিন এবং গ্র্যাপলিং হোল্ড এর মতো গ্র্যাপলিং কৌশলগুলো ব্যবহৃত হয়। সমরকলা, শারীরিক লড়াই এর বিভিন্ন খেলা এবং সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন ক্ষেত্রে কুস্তির বিভিন্ন কৌশল অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এই খেলাটি সম্পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলকভাবে অথবা খেলাধূলামূলক বিনোদন হিসেবেও খেলা যেতে পারে।
লক্ষ্য | গ্র্যাপলিং |
---|---|
অলিম্পিক খেলা | ফ্রিস্টাইল, গ্রিকো-রোমান, এবং জুডো |
ফ্রিস্টাইল, গ্রিক-রোমান, জুডো, সামবো, ফোকস্টাইল, ক্যাচ, সুমো, সাবমিশন, পালোয়ানী, সুয়াই যাও সহ কুস্তির বিভিন্ন প্রকারভেদ আছে। প্রাচীন অলিম্পিক গেমসে কুস্তির প্রথম আবির্ভাব হয়। খ্রিষ্টপূর্ব ৭০৮ সালে ১৮ তম অলিম্পিয়াডের একটি অংশ হিসেবে কুস্তি প্রথম অনুষ্ঠিত হয়।
কুস্তির বিভিন্ন প্রকারভেদ আছে, যার অনেকগুলো ঐতিহ্যগতভাবে ঐতিহাসিক এবং অনেকগুলো আধুনিক। বিভিন্ন ধরনের কুস্তির নিয়মও ভিন্ন। “wrestling” (কুস্তি) শব্দটি প্রথম প্রাচীন ইংরেজি ভাষায় “wræstlunge” (অর্থ: স্বচ্ছ আলোচনা) হিসেবে প্রণিত হয়।
কুস্তি হলো শারিরীক লড়াই এর সবচেয়ে প্রাচীন খেলাগুলোর একটি। ফ্রান্সে গুহায় অঙ্কিত চিত্র দেখা ধারণা করা হয় কুস্তির উৎপত্তি ১৫০০০ বছর আগে হয়েছে। ব্যাবিলনিয়ান এবং মিশরীয়দের কুরূশিল্পতে কুস্তিগিরদের বর্তমান সময়ে কুস্তিতে প্রচলিত বিভিন্ন হোল্ড ব্যবহার করতে দেখা যায়, যা থেকে নির্দেশিত হয় যে কুস্তির উৎপত্তি বাইবেলের পুরাতন নিয়ম বা ভারতীয় বেদের সময়ের। আদি পুস্তক অনুযায়ী, প্যাট্রিয়ার্ক যাকোব প্রভু বা একজন ফেরেশতার সাথে কুস্তি করেছেন। ইলিয়াড, যেখানে হোমার খ্রিষ্টপূর্ব ১৩ বা ১২ সালের ট্রোজান যুদ্ধের কথা স্মরণ করেন, সেখানেও কুস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতীয় মহাকাব্য, রামায়ণ এবং মহাভারতেও কুস্তি সহ বিভিন্ন সমরকলাকে নির্দেশ করা হয়েছে।
প্রাচীন গ্রিসের কিংবদন্তি, সংস্কিৃতি এবং দর্শনে কুস্তির গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল। কুস্তি প্রতিযোগিতা প্রাচীন অলিম্পিক গেমসের প্রধান খেলা হিসেবে ছিল। এ প্রতিযোগিতা বিভিন্ন দিক থেকে পাশবিক ছিল। প্রাচীন রোমে প্রচলিত কুস্তি অনেকটাই গ্রিক কুস্তির মতো থাকলেও বিভিন্ন নিয়ম প্রচলনের মাধ্যমে এর পাশবিকতা হ্রাস করা হয়েছিল। উভয় গ্রিক এবং রোমান সংস্কৃতিতে কুস্তির কথা উল্লেখ আছে। অনেক দার্শনিক এবং নেতা কুস্তি অনুশীলন এবং/অথবা কুস্তির কথা তাদের কীর্তিতে উল্লেখ করতেন, যাদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিলেন প্লেটো, সক্রেটিস এরিস্টটল, জেনোফোন, এরিস্টটল, সেনেকা, প্লুতার্ক এবং মার্কাস অরেলিয়াস। প্লেটো অনেক সংলাপ এর স্থান ছিল বিভিন্ন কুস্তি বিদ্যালয়। দিকাইয়ারখোস এর লেখা অনুসারে, প্লেটো ইসমিয়ান গেমসে কুস্তি করতেন। প্রাচীন গীতিকার কবি, পিন্ডার কিছু বিজয়ের গীতিকাব্য লিখেছিলেন, যা চারটি বইয়ে বিভক্ত ছিল। অলিম্পিয়ায় অনুষ্ঠিত অলিম্পিয়ান গেমস, ডেলফিতে অনুষ্ঠিত পিথিয়ান গেমস, করিন্থে অনুষ্ঠিত ইসমিয়ান গেমস এবং নেমিয়ায় অবস্থায় নেমিয়ান গেমস এর নামানুসারে এ চারটি বইয়ের নামকরণ করা হয়। যারা কুস্তি, বক্সিং, মুষ্টিযুদ্ধ সহ অন্যান্য শারীরিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছেন তাদের সম্মান প্রদর্শনে এ গীতিকাব্যগুলো লেখা হয়েছিল।
মধ্যযুগে (৫-১৫ শতক) কুস্তির খ্যাতি ছিল। ফ্রান্স, জাপান এবং ইংল্যান্ড সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের রাজকীয় পরিবারের সমর্থন লাভ করে খেলাটি।
যুক্তরাষ্ট্রে পথম দিকে আগত ইংরেজরা কুস্তির একটি শক্তিশালী ঐতিহ্য তৈরি করে। এছাড়াও, কুস্তি আমেরিকার আদিবাসীদের মধ্যেও জনপ্রিয় বলে তারা লক্ষ্য করে। অনানুষ্ঠানিক কুস্তি উত্তর আমেরিকার জনবসতিগুলোতে প্রথমদিকে জনপ্রিয় ছিল এবং পরবর্তীতে এটি বিভিন্ন মেলা, উৎসব এবং সামরিক বাহিনী অনুশীলনের একটি জনপ্রিয় অংশে পরিণত হয়।১৮৮ সালে, নিউ ইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম আনুষ্ঠানিক কুস্তি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯০৪ সালে, মিসৌরির সেন্ট লুইসে অনুষ্ঠিত অলিম্পিক গেমসের আসর থেকে (গ্রিকো-রোমান কুস্তি ১৮৯৬ সালের আধুনিক অলিম্পিক গেমসের আসরে অনুষ্ঠিত হলেও ১৯০০ সালের আসরে তা অনুষ্ঠিত হয়নি) আধুনিক অলিম্পিক গেমসের প্রতি আসরে কুস্তি একটি অংশ হিসেবে ছিল। কুস্তির পরিচালনা সংস্থা, ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড রেস্টলিং ১৯১২ সালে বেলজিয়ামের আন্টভের্পে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব অ্যাসোসিয়েটেড রেস্টলিং স্টাইল নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২৮ সালে, আইওয়া অঙ্গরাজ্যের আমেস এ প্রথম বার্ষিক এনসিএএ রেস্টলিং চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয়। ইউএসএ রেস্টলিং কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের অন্তর্ভূক্ত কলোরাডো স্প্রিংসে অবস্থিত ইউএসএ রেস্টলিং ১৯৮৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অনানুষ্ঠানিক কুস্তির পরিচালনা সংস্থা পরিণত হয়।
কুস্তির সবচেয়ে পুরানো নিদর্শন পাওয়া যায় কুস্তি পুরাণে।
সার্বজনীন বিশ্ব কুস্তি অনুসারে, কুস্তির প্রকরণগুলোকে দুই শ্রেণিতে বিভক্ত: আন্তর্জাতিক কুস্তির প্রকরণ এবং প্রচলিত কুস্তির এবং লোক কুস্তির প্রকরণ। সার্বজনীণ সার্বজনীন বিশ্ব কুস্তি সর্বমোট ছয় প্রকারের কুস্তিকে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। এর মধ্যে তিনটি অলিম্পিকে অনুষ্ঠিত হয়, যেগুলো হলো: গ্রিকো-রোমান কুস্তি, পুরুষ কুস্তি এবং নারী কুস্তি। অন্য তিনটি হলো: অনানুষ্ঠানিক প্যাঙ্ক্রেশন, বেল্ট কুস্তি অ্যালিস এবং তট কুস্তি।
আন্তর্জাতিক কুস্তির প্রকরণ হিসেবে স্বীকৃত অলিম্পিকে অনুষ্ঠিত দুই ধরনের কুস্তির একটি হলো গ্রিকো-রোমান কুস্তি। এ ধরনের কুস্তিতে দেহের উপরের অংশে আঘাত করাকে প্রাধান্য এবং “হাই অ্যাম্পলিটিউড” থ্রো এর উপর জোড় প্রদান করা হয়। এ ধরনের কুস্তির নিয়মানুসারে, প্রতিপক্ষকে কোনো সময়ই বেল্টের নিচে আঘাত করা যায় না, ফলে হোল্ড, ট্রিপ এবং সক্রিয়ভাবে পায়ের ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা (অন্যান্যভাবে পায়ের ব্যবহারে সীমাবদ্ধ থাকে না) থাকে। এ ধরনের কুস্তিতে,থ্রো এর ব্যাপকতার ভিত্তিতে পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়। কোনো প্রতিযোগির পিঠের সাথে তল স্পর্ষ অবস্থায় থাকার সময় এবং তার নিষ্ক্রিয়তার সময় গণনার মাধ্যমে এ কাজটি সম্পাদন করা হয়। কোনো গ্রিকো-রোমান কুস্তিগির তার প্রতিপক্ষের অংসফলক তলের সাথে আটকে রেখে অনেক অল্প সময়েই বিজয়ী হতে পারেন (এ কৌশলটি “ফোল নামে অভিহিত”)। রাশিয়ার আলেক্সান্ডার কেরেলিন সুপরিচিত গ্রিকো-রোমান কুস্তিগিরদের মধ্যে একজন।
আন্তর্জাতিক কুস্তির প্রকরণ দুটির একটি হলো ফ্রিস্টাইল কুস্তি, যা অলিম্পিকে নারী এবং পুরুষ উভয়ের জন্যই অনুষ্ঠিত হয়। এ ধরনের কুস্তিতে প্রতিযোগিরা আক্রমণ এবং আত্মরক্ষা উভয় উদ্দেশ্যেই তাদের পা ব্যবহার করতে পারেন। ক্যাচ কুস্তি থেকে ফ্রিস্টাইল কুস্তির উৎপত্তি হয় এবং এ ধরনের কুস্তিতেও থ্রো এর ব্যাপকতা, প্রতিযোগির পিঠের সাথে তল স্পর্ষ অবস্থায় থাকার সময় এবং তার নিষ্ক্রিয়তার সময় গণনার ভিত্তিতে পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়। গ্রিকো-রোমান কুস্তির মতো এ ধরনের কুস্তিতেও কোনো কুস্তিগির তার প্রতিপক্ষের অংসফলক তলের সাথে আটকে রেখে অনেক অল্প সময়েই বিজয়ী হতে পারেন। এ ধরনের কুস্তির সাথে আমেরিকান স্কোলাস্টিক কুস্তি এবং কলেজিয়েট কুস্তির সাদৃশ্য থাকলেও, এ ধরনের কুস্তিতে থ্রো এর ব্যাপকতার উপর অধিক জোড় দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নারী কুস্তিগিররা অলিম্পিক ফ্রিস্টাইলের কুস্তির নিয়মে অংশগ্রহণ করেন, তবে একই পর্যায়ে পুরুষ কুস্তিগিরদের জন্য আমেরিকান লোক/কলেজিয়েট কুস্তির নিয়ম প্রযোজ্য।
“প্যাঙ্ক্রেশন” শব্দটি গ্রিক শব্দ “পান” এবং “ক্র্যাটোস” শব্দ দুটি থেকে আসছে এবং এর অর্থ “সম্পূর্ণ শক্তি”। প্যাঙ্ক্রেশন হলো খ্রিষ্টপূর্ব ৬৪৮ সালে প্রাচীন অলিম্পিক গেমসে উদ্ভূত একটি ঐতিহ্যবাহী সমরকলার। আধুনিক অনানুষ্ঠানিক প্যাঙ্ক্রেশন হলো সম্মিলিত সমরকলার (এমএমএ) এর এবং এতে বিভিন্ন সমরকলার কৌশল ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের কুস্তির ম্যাচে গ্রাপল হোল্ড এবং বিভিন্ন কৌশল ব্যবহৃত হতে দেখা যায়।
“অ্যালিস” শব্দটি দ্বারা তুর্কি ভাষায় মধ্য এশীয় এক ধরনের কুস্তিকে নির্দেশ করা হয় যাতে কুস্তিগিররা জ্যাকেট, পায়জামা এবং মোটা একটি বেল্ট পরিধান করে কুস্তি করেন। এ ধরনের কুস্তিতে ম্যাচ চলাকালীন কুস্তিগিরদের তাদের প্রতিপক্ষের বেল্ট ধরে রাখতে হয়, যে কারণে একে “বেল্ট কুস্তি অ্যালিস” বা “অ্যালিস বেল্ট কুস্তি” নামেও অভিহিত করা হয়।
সম্মিলিত বিশ্ব কুস্তি (তৎকালীন “ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব অ্যাসোসিয়েটেড রেস্টলিং স্টাইল” (এফআইএলএ) নামে পরিচিত) ২০০৪ সালে প্রথম তট কুস্তি পরিচালনা করে। এ ধরনের কুস্তিতে কুস্তিগিররা একটি ৭ মিটার ব্যাসের (২৩ ফুট) বালুর বৃত্তের মধ্যে দাড়িয়ে কুস্তি করেন এবং এতে নারী এবং পুরুষের উভয়েই অংশগ্রহণ করতে পারে। এতে কুস্তি ম্যাট ব্যবহারের পূর্বে প্রচলিত নিয়মগুলো প্রযোজ্য। এ কুস্তিকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক কুস্তির সবচেয়ে প্রাচীন রূপ হিসেবে গণনা করা হয় এবং এতে কুস্তিগিররা কুস্তির বিশেষ পোষাকের পরিবর্তে সাঁতারের পোষাক পরিধান করে কুস্তি করেন, তবে কুস্তিগিররা চাইলে স্প্যানডেক্স বা অ্যাথলেটিক শর্ট পরিধান করেও কুস্তি করতে পারেন।
২০১৫ সালে সম্মিলিত বিশ্ব কুস্তি তট কুস্তির আন্তর্জাতিক নিয়ম পরিবর্তন করে এবং বর্তমান নিয়মানুসারে, কোনো কুস্তিগির তার প্রতিপক্ষকে বৃত্তের বাহিরে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়ে বা তাকে ফেলে দিয়ে অথবা টেকডাউনের মাধ্যমে পয়েন্ট পেতে পারেন। বার্ষিক বিশ্ব তট কুস্তি চ্যাম্পিয়নশিপের পাশাপাশি যুব অলিম্পিক গেমস, ম্যাডিটেরেনিয়ান গেমস, ডাউন আন্ডার গেমস, এশিয়ান গেমস এবং ২০১৯ ওয়ার্ল্ড বিচ গেমসেও তট কুস্তি অনুষ্ঠিত হয়।
লোক কুস্তি বলতে কোনো নির্দিষ্ট সংস্কৃতি বা ভৌগলিক অঞ্চলে প্রচলিত কুস্তির প্রকরণকে বোঝায়, যা এফআইএলএ পরিচালনা করে না। এ ধরনের কুস্তির কিছু উদাহরণ: কার্নিশ কুস্তি, বেকহোল্ড কুস্তি (ইউরোপে উৎপত্ত), কামবারল্যান্ড কুস্তি এবং ক্যাচ কুস্তি ইংল্যান্ডে উৎপত্ত), কুরাস (উজবেকিস্তানে উৎপত্ত) গুস্তিনগিরি (তাজিকিস্তানে উৎপত্ত), কুরেস সাইবেরিয়ায় উৎপত্ত), লোটা কামপিদানেজে (ইতালিতে উৎপত্ত), কোস্তি পালেভানি ইরানে উৎপত্ত), নাবান (মিয়ানমারে উৎপত্ত) পালোয়ানী (ভারতে উৎপত্ত), পেনজাং গুলাত (ইন্দোনেশিয়ায় উৎপত্ত), সুইংগেন (সুইজারল্যান্ডে উৎপত্ত) টাইগেল (ইথিওপিয়ায় উৎপত্ত), কেনে বা নাগা কুস্তি (ভারতে উৎপত্ত), সুয়াই যাও (চীনে উৎপত্ত), সিরেউম (কোরিয়ায় উৎপত্ত)।
সম্মিলিত বিশ্ব কুস্তি লোক কুস্তির প্রকরণগুলোকে কুস্তির আন্তর্জাতিক প্রকরণ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না।
সেল্টদের মধ্যে উৎপত্ত কুস্তির প্রকরণগুলো (যেমণ: কার্নিস কুস্তি, স্কটীয় ব্যাকহোল্ড, কাম্বারল্যান্ড কুস্তি, গৌরেন এবং কোলার এন্ড অ্যালবো) লোক কুস্তির মধ্যে অন্তর্ভূক্ত এবং এর অনেকগুলো নিজস্ব পরিচালক সংস্থা বা অন্যান্য সংস্থা দ্বারা পরিচালিত। কানির্স কুস্তি সংঘ ব্রিটিশ কুস্তির সংঘের সাথে সংযুক্ত এবং ব্রিটিশ কুস্তি সংঘ আবার সম্মিলিত বিশ্ব কুস্তির সাথে সম্পর্কিত। আন্তর্জাতিক সেল্টিক কুস্তি ফেডারেশন কুস্তিগিরদের মধ্যে এ ধরনের কুস্তি পরিচালনা করে।
লোক কুস্তিও অনেকটা আন্তর্জাতিক প্রকৃতির, উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউ জিল্যান্ড, ইংল্যান্ড এবং কর্নওয়ালে কার্নিশ কুস্তির নিয়মিত ট্যুরনামেন্ট এবং জাপান, কানাডা এবং মেক্সিকোতে অনিয়মিত ট্যুরনামেন্ট এবং ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। সেল্টদের মধ্যে ১৫২০ সালের ফিল্ড অব দ্য ক্লথ অব গোল্ড এর সময় থেকে কর্নওয়াল এবং ব্রিটানির মাঝে অনিয়মিত ট্যুরনামেন্ট এবং ১৯২৮ সালের পর থেকে ট্যুরনামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
গ্রিজ কুস্তি বা তেল কুস্তি হলো তুরস্কের জাতীয় খেলা। এ ধরনের কুস্তিতে কুস্তিগিররা তেল মেখে কুস্তি করতে করেন বলে আর এ কারণেই এর নাম তেল কুস্তি। এই কুস্তি উজবেক কুরাস, টুভান কুরেস এবং তাতার এবং বাশকির সাথে সম্পর্কিত। এ ধরনের কুস্তিতে বীজয়ী বা পালেভানার (অর্থ: চ্যাম্পিয়ন) কিসপেটলার নামক একটি হাতে সেলাই করা লেদারহোসেন পরিধান করেন, যা ঐতিহ্যগতভাবে ওয়াটার বাফেলো জাতের মহিষের চামড়া দিয়ে তৈরি হতো এবং সাম্প্রতিক সময়েবাছুরের চামড়া চামড়া দিয়ে তৈরি করা হয়।
তেল কুস্তিতে কোনো কুস্তিগির তার প্রতিদ্বন্দী কুস্তিগিরের কিসবেতের উপর শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে বীজয়ী হতে পারেন, যা এটিকে অলিম্পিকে অনুষ্ঠিত কুস্তির থেকে আলাদা করেছে। অর্থাৎ এ ধরনের কুস্তিতে কোনো পালেভান তার প্রতিপক্ষের কিসবেতের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে তার প্রতিপক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। এ কৌশলের মাধ্যমে বিজয়ী হওয়াকে পাচা কাজিক বলে। অতিতে তেল কুস্তি ম্যাচের কোনো সময়সীমা ছিল না এবং কোনো এক কুস্তিগিরের এগিয়ে যাওয়া পর্যন্ত ম্যাচ চলতে থাকতো, যা কখনো কখনো এক বা দুই দিন ধরেও চলত তবে পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে বাসপালেভান এবং পালেভান শ্রেণির জন্য এ ধরনের কুস্তি ম্যাচের সময়সীমা যথাক্রমে ৪০ এবং ৩০ মিনিট করা হয়। কোনো প্রতিযোগী এ সময়ের মধ্যে বিজয় অজর্ণ করতে না পারলে, বাসপালেভানি শ্রেণির ম্যাচে আরো ১৫ মিনিট এবং পালেভানি শ্রেণির জন্য আরো ১০ মিনিট কুস্তি শুরু হয়, যেখানে বিজয়ী নির্বাচনের জন্য স্কোর রেখে দেওয়া হয়।
১৩৬২ সাল থেকে তুরস্কের এডির্নেতে অনুষ্ঠিত কুর্কপিনাজ ট্যুরনামেন্ট পৃথিবীর সবচেয়ে পুরানো বর্তমানে চলাকালীন স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ক্রিড়া প্রতিযোগিতা। সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের কুস্তি অন্যান্য দেশেও জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
কলেজিয়েট কুস্তি (যার আরেক নাম “ফোকস্টাইল কুস্তি”) যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যে ধরনের কুস্তি অনুশীলণ করা হয় তাকে বোঝায়। এ ধরনের কুস্তি কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে উচ্চ এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে এবং আরো কম বয়সী অংশগ্রহণকারীদের জন্য অনুষ্ঠিত হয়। “আমেরিকান কলেজিয়েত কুস্তি” নামটি এটিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচলিত বা অলিম্পিকে অনুষ্ঠিত কুস্তির অন্যান্য প্রকরণ (গ্রিকো-রোমান কুস্তি এবং ফ্রিস্টাইল কুস্তি) থেকে আলাদা করতে ব্যবহার করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু উচ্চ বিদ্যালয় ভার্সিটি দলের পাশাপাশি জুনিয়ন ভার্সিটি এবং প্রথম বছরের শিক্ষার্থীদের নিয়েও কুস্তি দল গঠন করেছে। জুনিয়র ভার্সিটি বা প্রথম বছরের শিক্ষার্থীদের দলে প্রতিযোগিদের ওজন, বয়স এবং কতক্ষণ একজন প্রতিযোগী কুস্তি করতে পারবেন তার উপর সীমা নির্ধারণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ,জুনিয়র ভার্সিটি বা প্রথম বছরের শিক্ষার্থী দলের কিছু প্রতিযোগী স্বল্প সময়ের মধ্যে কতক্ষণ ম্যাট টাইম পাবে তার উপর ভিত্তি করে ট্যুরনামেন্ট প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে নারী কলেজ কুস্তির জন্য কলেজিয়েট কুস্তির নিয়ম এর পরিবর্তে সাধারণ ফ্রিস্টাইল নিয়ম প্রযোজ্য।
কলেজিয়েট কুস্তি প্রতিযোগিতাগুলো পরিচালনার জন্য কিছু সংস্থা রয়েছে: এনসিএএ এর ১ম, ২য় এবং ৩য় ডিভিশন, এনএআইএ, এজেসিএএ এবং এনসিএএ।এনসিএএ ডিভিশন ১ কুস্তি প্রতিযোগিতার সবচেয়ে সম্মানজনক এবং কঠিন পর্যায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কোনো বিদ্যালয় সেটি কোন পরিচালক সংস্থার সাথে যুক্ত হবে তা নির্ধারণ করতে পারে। তবে সাধারণ প্রতিযোগিতার মৌসূমে কোনো বিদ্যালয় অন্যান্য সংস্থা বা পর্যায়ের কুস্তি দলের সাথে কুস্তি করতে পারে। কলেজিয়েট মৌসূম অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে শুরু হয় এবং মার্চ মাসে এনসিএএ ট্যুরনামেন্ট এর মাধ্যমে শেষ হয়।
মুষ্টিযুদ্ধের মতো পেশাদার কুস্তিও একটি উঁচু রিং এ আয়োজিত হয়। প্রতিযোগিতা হিসেবে প্রচার করা হলেও, পেশাদার কুস্তির ম্যাচগুলো প্রকৃতপক্ষে শুধু মাত্র প্রদর্শনী এবং বিনোদনের স্বর্থে বিজয়ী আগে থেকেই নির্ধারণ করা থাকে। বিংশ শতাব্দির শেষের দিক পর্যন্ত কুস্তির ক্ষেত্রে প্রকৃত কুস্তির প্রতিভা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। পেশাদার কুস্তির প্রথম দিকে শুট ম্যাচ আয়োজন করা হতো (সাধারণত ভেতরের ব্যক্তিগত বা কর্মজীবন সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে) ১৯৩০ এবং ১৯৪০ এর দশকেও এ ধরনের ম্যাচ আয়োজিত হতো। কয়েক দশক পর এখনো কুস্তিগিরদের কুস্তির প্রকৃত দক্ষতা ব্যবহার করতে অনেক সময়ই দেখা যায়।
পেশাদার কুস্তি ১৯ শতকের ক্যাচ কুস্তি প্রতিযোগিতার থেকে উৎপত্ত হয়। ইউরোপে যখন অধিক নিয়ন্ত্রিত ঐতিহ্যবাহী গিকো-রোমান কুস্তি বিখ্যাত, ১৮৮০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে তখন আরো স্বাধীন ধরনের কুস্তি জনপ্রিয় ছিল, যাকে পরবর্তীতে ফ্রিস্টাইল কুস্তি নামে অভিহিত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে সেরা ক্যাচ কুস্তিগিররা তাদের দক্ষতা ব্যবহার করে উপার্জন শুরু করলে পেশাদার কুস্তির সৃষ্টি হয়। প্রথমদিকে পেশাদার কুস্তি প্রতিযোগিতাগুলো অনেকটা অনানুষ্ঠানিক কুস্তি প্রতিযোগিতাগুলোর মতো থাকলেও এতে কোনো সময়সীমা বা সাবমিশন ছিল না এবং চোক হোল্ড অনুমোদিত ছিল না। কুস্তির সাথে নাটকীয়তা যুক্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত পেশাদার কুস্তির সাথে অনানুষ্ঠানিক কুস্তিও ১৯৪০ এর দশক পর্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। এ সময়ের কুস্তিগিরদের তাদের প্রকৃত দক্ষতার জন্য “হুকার” বা “শুটার” নামেও অভিহিত করা হতো, যাদের একটি ক্ষুদ্র অংশ আধুনিক সময় পর্যন্ত কুস্তি শিল্পের সাথে জড়িত ছিল। সে সময়ের বিখ্যাত কুস্তিগিরদের মধ্যে ছিলেন: মার্টিন ফার্মার বার্নস, টম জেটকিনস, ফ্রাঙ্ক গোচ, চার্লস কাটার, জো স্টেচার, আর্ল ক্যাডেক, স্টানিস্লাস জিবিসকো, এড “স্ট্রেংলার” লুইস, জন পেসেক, জিম লনডেস, রেয় স্টিল, রিচার্ড সিকাত এবং কিংবদন্তি, লে থেজ।
পেশাদার কুস্তিকে অনেক “আমেরিকান স্টাইল” পেশাদার কুস্তি বলে অভিহিত করা হলেও, ডাবলিউডাবলিউই, এইডাব্লিউ, ইমপ্যাক্ট রেসলিং এবং রিং অফ অনার এর মতো কম্পনিগুলো বিশ্বব্যাপী পেশাদার কুস্তির ইভেন্ট আযোজন করা হয়। এ ম্যাচগুলোতে অনেক নাটকীয়তা বিদ্যমান থাকে। এছাড়াও কোনো ম্যাচকে কেন্দ্র করে একটি নাটকীয় কাহিনী সাজানো হয় (উদাহরণস্বরূপ, কোনো ম্যাচকে আকর্ষণীয় করতে বা প্রচারণার স্বার্থে প্রতিদ্বন্দী কুস্তিগিরদের মধ্যে শত্রুতা বা শত্রুতা সৃষ্টির কাহিনী দেখানো হতে পারে)। ১৯৮০ এর দশকের মাঝে এ ধরনের কুস্তির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির পূর্বে যুক্তরাষ্ট্রে পেশাদার কুস্তি “টেরিটোরিস” নামে আঞ্চলিক আধিপত্ত বিস্তারের একটি মাধ্যম হিসেবে আয়োজিত হতো। এর মধ্যে কিছু অঞ্চলে (বিশেষ করে, দক্ষিণ এবং মধ্যপশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রে) প্রচলিত পেশাদার কুস্তিতে তুলনামূলক কম নাটকীয়তা এবং অধিক বাস্তবতা বিদ্যমান ছিল। এ কারণে ম্যাচগুলো অঞ্চলভেদে বাস্তবসম্মতভাবে প্রতিযোগিতামূলক বা ভয়ানকভাবে নির্মম প্রকৃতিরও হতো।
যুক্তরাজ্যে অন্য এক ধরনের পেশাদার কুস্তির উদ্ভব হয় এবং পশ্চিম ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে (ইউরোপের যে দেশগুলোতে ইংরেজি ভাষার প্রচলন নেই সেই দেশগুলোতে এ ধরনের কুস্তিকে “ক্যাচ” কুস্তি বলা হয়)। ঐতিহ্যগতভাবে, এ ধরনের কুস্তি ম্যাচের প্রচরণার জন্য দৃষ্টিকোণ এবং নাটকীয়তার ব্যবহার কম করা হতো, যে কারণে এ ধরনের ম্যাচে প্রকৃত কুস্তির পরিবেশ দেখা যেত। যুক্তরাজ্যের মতো অন্যান্য অনেক দেশেও টেলিভিশনের মাধ্যমে এ ধরনের পেশাদার কুস্তি এবং এর কুস্তিগিররা জনপ্রিয়তা লাভ করলেও পরে আমেরিকান কুস্তির আগমনে টেলিভিশন এবং বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি থেকে এটি হারিয়ে যায়। যুক্তরাজ্যে (এ অন্যান্য দেশেও অল্প কিছু) কিছু নির্মাতা এখনো এ ধরনের কুস্তি নিয়ে সরাসরি অনুষ্ঠান পরিচালনা করে আমেরিকান কুস্তির অনুষ্ঠানগুলোর সাথে কঠিন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়।
পুরোরেসু নামে পরিচিত জাপানী কুস্তিকে উত্তর আমেরিকায় প্রচলিত বিনোদন কেন্দ্রীয় কুস্তির পরিবর্তে খেলা হিসেবেই অধিক বিবেচনা করা হয়। ব্রিটিশ/ইউরোপীয় কুস্তির মতো পুরোরেসুতেও কল্পিত কাহিনীর ব্যবহার কম হয় এবং এতেও প্রকৃতি ক্রিড়া প্রতিযোগিতার পরিবেশ দেখা যায়। জনপ্রিয় জাপানী কুস্তিগিরদের মধ্যে রয়েছেন: ডিকিডোজা, জায়েন্ট বাবা, আন্তোনিও ইনোকি, মিতসুহারু মিসাওয়া, কেনতা কোবাশি, সিনিয়া হাশিমোটো এবং কেনজি মুটো। শারীরিক লড়াইকে কেন্দ্র করে কুস্তির একটি প্রকরণ তৈরির উদ্দেশ্যে ঐতিহ্যবাহী পুরোরেসু কুস্তি থেকে শুট কুস্তির উদ্ভব হয়। শুট কুস্তিতে অনানুষ্ঠানিক কুস্তি, ক্যাচ কুস্তি, কিকবক্সিং এবং সাবমিশন গ্রাপলিং এর একটি মিশ্রণ দেখা যায়। অনেক আগে থেকেই শুট কুস্তির উৎপত্তি মিমিশ্র মার্শাল আর্টস পূর্বে হয়েছে বলে বিবেচনা করা হয়।
লুচা লিবরে বা মেক্সিকোর পেশাদার কুস্তি হলো কুস্তির একটি প্রকরণ যাতে বিশেষ হোল্ড এর ব্যবহার করা হয়। অধিকাংশ কুস্তিগির বা লুচাদোরেস তাদের কর্মজীবনের শুরুতে মুখোস পরিধান করে, তবে পরবর্তীতে আর মুখোস ব্যবহার করেন না। ঐতিহ্যগতভাবে এ ধরনের কুস্তি ম্যাচ ৩ রাউন্ডে বিভক্ত থাকে এবং কোনো সময় সীমা থাকে না। প্রত্যেক লুচাদোর বিভিন্ন এরিয়াল অ্যাটাক কৌশল, স্ট্রাইক এবং জটিল সাবমিশন হোল্ডের সমন্বয়ে তাদের নিজস্ব বিশেষ কৌশল করে কুস্তি করেন। মেক্সিকো এবং পুয়ের্তো রিকোর জনপ্রিয় লুচাদোরদের মধ্যে রয়েছেন: এল সানতো, ব্লু ডিমোন, মিল মাসকারাস, পেররো আয়ুয়ায়য়ো, কার্লোস কোলোনম কোনান, এল. এ. পার্ক এবং মিস্টিকো। যুক্তরাষ্ট্রে সফল এবং মেক্সিকোতেও কুস্তি করেছেন এমন কুস্তিগিরদের মধ্যে রয়েছেন: আলবের্তো দেল রিও, রে মিস্টেরিও এবং এডি গেরেরো।
১৯ শতকের ফ্রান্সে সার্কাসে পেশাদার কুস্তি অনুষ্ঠিত হতো, যাতে সেই অঞ্চলের ক্রিড়াবিদরা অংশগ্রহণ করতেন। পরে এ ধরনের কুস্তি রাশিয়া সহ পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষ করে সোভিয়েত ইউনিয়নে ফরাসি কুস্তি নামে প্রচারিত এ কুস্তি ছিল সেখানে সার্কাসগুলোর মূল অংশ। যুদ্ধকালীন সময়ে নিজ দেশে এবং দেশের বাহির আইভান পোডডাবনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জণ করেন।
জুডো হলো কুস্তিরই একটি প্রকরণ যা জাপানী সমরকলা, জুজুৎসু থেকে এসেছে। জুডোতে খেলোয়াড়রা (জুডোকা) একটি পায়জামা, মোটা জ্যাকেট এবং বেল্ট (জুডোগি) পরিধান করেন। জুডোতে থ্রো বা পিন করার উদ্দেশ্যে প্রতিপক্ষের পোষাক ধরে তাকে টেনে নেওয়া যায় জুডোতে লোক বা চোক অনুমোদিত হলেও, কমবয়সীদের ম্যাচে তার উপর বাধা বা নিষেধ থাকতে পারে। জাপানে জুডো একটি জনপ্রিয় খেলা। পশ্চিম ইউরোপে কুস্তির ক্লাবগুলোর মধ্যে জুডো ক্লাবের (ডোজো) সংখ্যা সবচেয়ে বেশি এবং সাধারণত শহর বা ছোট শহরে তা বেশি দেখা যায়।
সাম্বো হলো বিংশ শতাব্দিতে সোভিয়েত ইউনিয়নে (বিশেষ করে, রাশিয়ায়) উৎপত্ত একটি সমরকলা। “সাম্বো” শব্দটি হলো রূশ ভাষায় “অস্ত্র ছাড়া আত্মরক্ষা” কথাটির সংক্ষিপ্ত রূপ। সোভিয়েত স্বসস্ত্র বাহিনীর মাঝে এ সমরকলার উৎপত্তি হয়। সাম্বোর জনপ্রিয়তার মাত্রা অঞ্চলভেদে ভিন্ন এবং এতে গ্রিকো-রেমান ও ফ্রিস্টাইল কুস্তি, জুডো, জুজুৎসু, ইউরোপীয় লোক কুস্তি এবং ফেন্সিং এর কৌশল ব্যবহৃত হয়। খেলা হিসেবে সাম্বোর নিয়ম অনেকটা প্রতিযোগিতামূলক জুডোর নিয়মের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ এবং এতে সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের কুস্তিতে ব্যবহৃত অনেক রকমের লেগ লোক ও ডিফেন্স হোল্ড ব্যবহার করা যায়, তবে চোকহোল্ডের ব্যবহার অনুমোদিত নয়।
কুস্তিতে মিশ্র মার্শাল আর্টস (এমএমএ) এর কার্যকারিতার জন্য এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সাথে সাথে এটি কুস্তির সাথে যুক্ত হয়ে পড়ে। এটি এমএমএ এর পাঁচটি প্রকরণের মধ্যে একটি, যেখানে বাকি চারটি হলো: কিকবক্সিং, মুই থাই, জুডো এবং ব্রাজিলীয় জিউ-জিৎসু। এমএমএ -এর প্রথম দিক থেকেই কুস্তি ঐতিহ্যবাহী সমরকলার বিপরীতে কার্যকরী হওয়ায় জনপ্রিয়তা লাভ করে। প্রথম দিকে অনুষ্ঠিত ইউএফসি চ্যাম্পিয়নশিপ ট্যুরনামেন্টগুলোর বিজয়ীদের মধ্যে রয়েছেন: ডেন সেভার্ন, ডন ফিয়ার, মার্ক কোলমেন, রেন্ডি কোচার এবং মার্ক কার। কেন স্যামরোক ছিলেন ইউএফসি চ্যাম্পিয়নশিপ ট্যুরনামেন্ট এর প্রথম আসরের বিজয়ী এবং জাপানের “কিং অব পেনক্রেজ”।
ইউএফসি ভাষ্যকার, জো রেগান বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যে কুস্তি হলো এমএমএ -এর সর্বোত্তম দক্ষতা, আমি মনে করি এটিই এখানে আসার প্রথম ভিত্তি কারণ তারাই (কুস্তিগিররা) সরাসরিভাবে নির্ধারণ করে যে কুস্তি কীভাবে হবে (দাড়িয়ে নাকি নিচে পড়ে থেকে)।” “একজন অতি সফল কুস্তিগির হিসেবে মিশ্র মার্শাল আর্টসে প্রবেশ করার চেয়ে এখানে প্রবেশের এ চেয়ে ভালো কোনো ভিত্তি নেই। প্রতিযোগী মানসিকতার বা নতুন সফল কুস্তিগিরদের মধ্যে অসাধারণ মানসিক দৃঢ়তা রয়েছে। আপনি যদি কোনো উচ্চ পর্যায়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের এনসিএ ডিভিশন দল এর কুস্তি ঘর পার হতে পারেন; তারা (ডিভিশন এক এর কুস্তিগিররা) নিমর্ম। তারা যেসবের মধ্যে দিয়ে যায়, যে অতিরিক্ত প্রশিক্ষণ, যে পরিমাণ মানসিক দৃঢ়তা আপনাকে অর্জণ করতে হয়।”
বিভিন্ন ধরনের কুস্তিতে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করা এমএমএ -এর কুস্তিগিরদের মধ্যে রয়েছেন: সাবেক ইউএফসি লাইটওয়েট চ্যাম্পিয়ন, ফ্র্যাঙ্কি এজার, ২০০০ সালের অলিম্পিক মেডেল বিজয়ী, ইয়োয়েল রোমেরো, ইউএফসি লাইট হেভিওয়েট এবং নিউ ইয়র্ক স্যাট রেসলিং চ্যাম্পিয়ন, জন জনস, জুকো ন্যাশনাল রেসলিং চ্যাম্পিয়ন, সাবেক ইউএফসি লাইট হেভিওয়েট ও হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন এবং অতীতে অলিম্পিকে অংশগ্রহণকারী কুস্তিগির, ডেনিয়েল কোর্মিয়ার এবং সাবেক ইউএফসি ওয়াল্টারওয়েট চ্যাম্পিয়ন এবং ২ বারের এনসিএ কুস্তির চ্যাম্পিয়ন, জনি হেন্ড্রিকস।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article কুস্তি, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.