ইরান (ফার্সি: ایران ইরান (ⓘ)), যা ঐতিহাসিকভাবে পারস্য এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামি প্রজাতন্ত্রী ইরান (ফার্সি: جمهوری اسلامی ایران জোমহুরিয়ে এসলামিয়ে ইরান (ⓘ) ) নামে পরিচিত, হল পশ্চিম এশিয়ার একটি দেশ। এর উত্তর-পশ্চিমে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান, উত্তরে কাস্পিয়ান সাগর, উত্তর-পূর্বে তুর্কমেনিস্তান, পূর্বে আফগানিস্তান, দক্ষিণ-পূর্বে পাকিস্তান, দক্ষিণে পারস্য উপসাগর ও ওমান উপসাগর এবং পশ্চিমে তুরস্ক ও ইরাক অবস্থিত। ইউরেশিয়ার কেন্দ্রে এবং হরমুজ প্রণালীর নিকটে অবস্থিত হওয়ায় দেশটি ভূকৌশলগতভাবে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ইরানের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর তেহরান যা দেশটির অগ্রগামী অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রও বটে। তেহরান পশ্চিম এশিয়ার সবচেয়ে জনবহুল শহর যার জনসংখ্যা ৮.৮ মিলিয়ন এবং মহানগর অঞ্চল মিলিয়ে ১৫ মিলিয়নেরও বেশি। ইরানের জনসংখ্যা ৮৩ মিলিয়ন এবং এটি বিশ্বের ১৭তম সর্বাধিক জনবহুল দেশ। ১৬,৪৮,১৯৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটি মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং পৃথিবীর সপ্তদশ বৃহত্তম রাষ্ট্র।
ইসলামী প্রজাতন্ত্রী ইরান جمهوری اسلامی ایران জোমহুরিয়ে এসলামিয়ে ইরান | |
---|---|
নীতিবাক্য: استقلال، آزادی، جمهوری اسلامی স্বাধীনতা, মুক্তি, ইসলামী প্রজাতন্ত্র | |
রাজধানী ও বৃহত্তম নগরী বা বসতি | তেহরান |
সরকারি ভাষা | ফার্সি |
অন্যান্য ভাষা | আর্মেনীয়, অশূরীয় নব্য-আরামীয়, আজেরি, কুর্দি, লরি, বেলুচি, আরবি, তুর্কমেনীয় |
ধর্ম |
|
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ | ইরানি, ইরানীয়, পারসিক |
সরকার | এককেন্দ্রিক খোমেনীবাদী রাষ্ট্রপতিশাসিত ইসলামি প্রজাতন্ত্র |
আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ী | |
• রাষ্ট্রপতি | ইব্রাহিম রাইসী |
• প্রথম উপরাষ্ট্রপতি | মোহাম্মদ-রেজা রাহিমি |
• পার্লামেন্টের বক্তা | আলি লারিজানি |
সাদেগ লারিজানি | |
• ইরানের বর্তমান উপরাষ্ট্রপতি | মোহাম্মদ মোখবের |
আইন-সভা | ইসলামী মজলিসে শূরা |
একত্রীকরণ | |
• মাদীয় সাম্রাজ্য | প্রায় ৬৭৮ খ্রিস্টপূর্ব |
৫৫০ খ্রিস্টপূর্ব | |
• পার্থীয় সাম্রাজ্য | ২৪৭ খ্রিস্টপূর্ব |
২২৪ খ্রিস্টপূর্ব | |
• বুয়ী সাম্রাজ্য | ৯৩৪ খ্রিস্টপূর্ব |
১৫০১ | |
১লা এপ্রিল ১৯৭৯ | |
• বর্তমান সংবিধান | ২৪শে অক্টোবর ১৯৭৯ |
আয়তন | |
• মোট | ১৬,৪৮,১৯৫ কিমি২ (৬,৩৬,৩৭২ মা২) (১৮তম) |
• পানি (%) | ০.৭ |
জনসংখ্যা | |
• ২০১৭ আনুমানিক | ৮১,০০০,০০০ (১৮তম) |
• ঘনত্ব | ৪৮/কিমি২ (১২৪.৩/বর্গমাইল) (১৬২তম) |
জিডিপি (পিপিপি) | ২০১৭ আনুমানিক |
• মোট | $১.৫৫১ ট্রিলিয়ন (১৮তম) |
• মাথাপিছু | $১৯,০৫০ |
জিডিপি (মনোনীত) | ২০১৭ আনুমানিক |
• মোট | $৪৩৮.৩ বিলিয়ন (২৭তম) |
• মাথাপিছু | $৫,৩৮৩ |
জিনি (২০১৩) | ৩৭.৪ মাধ্যম |
মানব উন্নয়ন সূচক (২০১৪) | ০.৭৬৬ উচ্চ · ৬৯তম |
মুদ্রা | রিয়াল (﷼) (IRR) |
সময় অঞ্চল | ইউটিসি+৩:৩০ (IRST) |
• গ্রীষ্মকালীন (ডিএসটি) | ইউটিসি+৪:৩০ (ইরান দিবালোক সংরক্ষণ সময় (IRDT)) |
গাড়ী চালনার দিক | ডানে |
কলিং কোড | ৯৮ |
ইন্টারনেট টিএলডি | .ir |
|
ইরান বিশ্বের সবচেয়ে পর্বতময় দেশগুলির একটি; এখানে হিমালয়ের পরেই এশিয়ার সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ দামভান্দ অবস্থিত। দেশটির জনগণ জাতিগত ও ভাষাগতভাবে বিচিত্র হলেও এরা প্রায় সবাই মুসলিম। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এ অঞ্চলটি শিয়া মুসলমানদের কেন্দ্র। ইরানে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডার আছে। পারস্য উপসাগরের অন্যান্য তেলসমৃদ্ধ দেশের মতো ইরানেও তেল রপ্তানি ২০শ শতকের শুরু থেকে দেশটির অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি।.
খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে বর্তমান ইরান ছিল বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সাম্রাজ্য পারস্যের কেন্দ্র। প্রায় ২০০০ বছর ধরে এ অঞ্চলের অধিবাসীরা নিজেদের দেশকে "ইরান" নামে ডাকত। ইরান নামটি এই এলাকায় বসতি স্থাপনকারী আর্য গোত্রের নাম থেকে নেয়া। কিন্তু গ্রিকরা এই অঞ্চলকে পার্সিস (বর্তমান ইরানের ফার্স প্রদেশ) বলে ডাকত, এবং সেখান থেকে ইউরোপীয় ভাষায় এর নাম হয় পার্সিয়া , যা বাংলায় লিপ্যন্তর করা হয় পারস্য হিসেবে। ১৯৩৫ সালে ইরানের শাসক দেশটিকে কেবল "ইরান" বলে ডাকার অনুরোধ জানানোর পর থেকে এখন এই নামেই সারা বিশ্বে দেশটি পরিচিত। ১৫০১ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত রাজতন্ত্রী ইরান হয় শাহ কিংবা রাজারা শাসন করতেন। ১৯৭৯ সালে ইরানি বিপ্লব গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজতন্ত্রের পতন ঘটায় এবং ইরানে একটি ইসলামি প্রজাতন্ত্র স্থাপন করে।
ইরান একটি বহু-সাংস্কৃতিক দেশ যেখানে অনেক উপজাতীয় এবং ভাষাগত দল রয়েছে। বৃহত্তম পারস্য (৬১%), আজারবাইজান (১৬%), কুর্দিস্তান (১০%) এবং লোরি (৬%)।
শিশুদের মৃত্যুদন্ড কার্যকরের ক্ষেত্রে ইরান বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে।
ইরান পৃথিবীর প্রাচীনতম কাল থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত অস্তিত্বশীল বৃহৎ সভ্যতাগুলোর মধ্যে অন্যতম। ইরানের ইতিহাস হাজার হাজার বছরের যার সূচনা হিসেবে বলা যায় ইরানি প্লেট-এ অবস্থিত আজারবাইজানের মানইয়ান সভ্যতা। এর পর আসে জাবোলের শহর-ই-সোখতা এবং প্রাচীন জিরফ্ট সম্রাজ্য যা এলাম সম্রাজ্য এবং আকামেনিদ সাম্রাজ্য দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। পরবর্তীতে আসে পারস্য এবং সাসানীয় সাম্রাজ্য যার পতনের মাধ্যমেই আধুনিক ইসলামি প্রজাতন্ত্রী ইরানের অভ্যুদয় ঘটে।
পৃথিবীর উত্তরাংশ থেকে আর্যদের আগমনের পূর্বেই ইরানি প্লেটে অনেক প্রাচীন এবং প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে অগ্রগামী সভ্যতার অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায় যদিও আর্য জাতির অনেক ইতিহাসই এখনও পর্যন্ত অনেক ঐতিহাসিকের কাছে অজানা রয়ে গেছে। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার ফলাফল অনুসারে পারস্যের ইতিহাসের সূচনা ধরা হয়েছে প্যালিওলিথিক যুগের মাঝামাঝি সময়ে অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ১০০,০০০ বছর আগে।
৭ম শতাব্দীরে ইসলামের পারস্য বিজয়-পরবর্তী ইরানের ইতিহাস নিচে দেয়া হল। আরব মুসলিমেরা ৬৩৬ খ্রিষ্টাব্দে পারস্য সাসানীয় সাম্রাজ্যে আক্রমণ শুরু করে। পরবর্তী ৫ বছরের মধ্যে তারা এলবুর্জ পর্বত ও কাস্পিয়ান সাগরের তীরবর্তী সমভূমি ব্যতীত সমগ্র ইরান করায়ত্ত করে। ৬৫১ সালে তারা সাসানিদ সাম্রাজ্যের পূর্ণ পতন ঘটাতে সক্ষম হয়। এর পর প্রায় দুই শতাব্দী ধরে ইরান আরব ইসলামিক সাম্রাজ্যের অধীনে থাকে। এসময় মূল ইরানের বাইরে বর্তমান পশ্চিম আফগানিস্তানের হেরাতেও এই সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটেছিল। ইসলামের খলিফারা প্রথমে মদীনা, ও পরবর্তীকালে সিরিয়ার দামেস্ক ও শেষ পর্যন্ত ইরাকের বাগদাদ থেকে ইরান শাসন করতেন। ৯ম শতাব্দীর শেষে এসে পূর্ব ইরানে স্বাধীন রাজ্যের আবির্ভাব ঘটে এবং ১১শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বাগদাদের আরব খলিফা ইরানের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন।
ইসলামের ইরান বিজয়ের পর ইরানীরা ধীরে ধীরে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়া শুরু করে। এর আগে বেশির ভাগ ইরানি সাসানিদ সাম্রাজ্যের রাষ্ট্রধর্ম জরথুষ্ট্রবাদে বিশ্বাসী ছিল ও কিছু সংখ্যালঘু ইরানি খ্রিস্ট ও ইহুদী ধর্মাবলম্বী ছিল। ১০ম শতকের মধ্যেই ইরানের অধিকাংশ জনগণ মুসলিমে রূপান্তরিত হয়, এবং এদের আধিকাংশই ছিল সুন্নী মুসলিম, তবে কেউ কেউ শিয়া ইসলামের ভিন্ন ভিন্ন ধারা অনুসরণ করত। এদের মধ্যে ইসমাইলি নামের একটি শিয়া গোত্র এলবুরুজ পর্বত এলাকার রুদাবার অঞ্চলে ১১শ থেকে ১৩শ শতক পর্যন্ত একটি ছোট কিন্তু স্বাধীন রাজ্যে বসবাস করত। ১৬শ শতকের আগে ইরানের বর্তমান জাফরি শিয়া ইসলাম-ভিত্তিক পরিচিতি গঠন করেনি।
ইরানের প্রাচীনতম সভ্যতা, ৮ হাজার বছরের ইতিহাসের সাথে এটি "পিরানশাহর" শহর।
ইরানের রাজনীতি একটি ইসলামি প্রজাতন্ত্র কাঠামোয় সংঘটিত হয়। ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বরে গৃহীত সংবিধান এবং ১৯৮৯ সালের সংশোধনী ইরানের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে সংজ্ঞায়িত করেছে। সংবিধানে ইসলাম ধর্মের শিয়া মতটিকে ইরানের রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা হয়েছে।
আলি খামেনেই বর্তমানে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা। আর সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসি দেশটির নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি। আরও আছে ২৯০ সদস্যবিশিষ্ট এককাক্ষিক আইনসভা।
ইরানে দুই ধরনের সেনাবাহিনী রয়েছে। একটি প্রথাগত সেনাবাহিনী ও বৈপ্লবিক সুরক্ষা বাহিনী।
এর ৪ টি ভাগ রয়েছে। ভূ সেনা , নৌ সেনা , বায়ু সেনা ও আকাশ প্রতিরক্ষা সেনা। তবে তাদের বায়ু সেনার বিমানগুলো অধিকাংশ পুরোনো প্রযুক্তির।
ইরান ৩০টি প্রদেশে বিভক্ত। ফার্সি ভাষায় এগুলির নাম ওস্তান (استان ostān ওস্তান, বহুবচনে استانها ওস্তান্হা)। প্রতিটি প্রদেশ একটি স্থানীয় (সাধারণত বৃহত্তম) শহর থেকে শাসিত হয়, যাকে প্রদেশটির রাজধানী (ফার্সি ভাষায়: مرکز মার্কাজ) বলা হয়। প্রদেশের প্রশাসক হিসেবে থাকেন একজন গভর্নর (ফার্সি ভাষায়: استاندار ওস্তানদার), এবং তাকে অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয় নিয়োগদান করে।
প্রতিটি প্রদেশ আবার অনেকগুলি অংশে বিভক্ত, যাদেরকে ফার্সি ভাষায় বলে শাহ্রেস্তান (شهرستان)। প্রতিটি শাহ্রেস্তান আবার অনেকগুলি জেলায় বিভক্ত, যেগুলিকে বাখ্শ বলে। ( بخش)।
একেকটি শাহ্রেস্তান সাধারণত একাধিক শহর (ফার্সি ভাষায়: شهر শাহ্র) এবং অনেক গুচ্ছগ্রাম (ফার্সি ভাষায়: دهستان দেহেস্তান) নিয়ে গঠিত। শাহ্রেস্তানের একটি শহরকে সাধারণত সেটির রাজধানী বা কেন্দ্রীয় শহরের মর্যাদা দেয়া হয়।
১৯৫০ সাল অবধি ইরান ১২টি প্রদেশে বিভক্ত ছিল: আর্দালান, আজারবাইজান, বালুচিস্তান, ফারস, জিলান, আরাক-ই-আজম, খোরাসান, খুজেস্তান, কেরমান, লারেস্তান, লোরেস্তান এবং মাজান্দারান। ১৯৫০ সালে ইরানকে ১০টি প্রদেশে এবং তার অধীনে অনেকগুলো গভর্নরেটে ভাগ করা হয়: গিলান; মাজান্দারান; পূর্ব আজারবাইজান; পশ্চিম আজারবাইজান; কের্মানশাহ; খুজেস্তান; ফার্স; কের্মান; খোরাসান; ইসফাহান। ১৯৬০ হতে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত এক এক করে অনেকগুলো গভর্নরেটকে প্রদেশে উন্নীত করা হয়। সর্বশেষ ২০০৪ সালে তৎকালীন সর্ববৃহৎ খোরাসান প্রদেশকে তিন ভাগে ভাগ করে তিনটি নতুন প্রদেশ সৃষ্টি করা হয়।
সৌদি আরবের পর ইরান মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। দেশটির মোট আয়তন ১৬,৪৮,০০০ বর্গকিলোমিটার। দেশটি মোটামুটি ত্রিভুজাকৃতির, যার দীর্ঘতম বাহু প্রায় ২,৫০০ কিমি দীর্ঘ এবং যা উত্তর-পশ্চিমে তুরষ্কের সাথে সীমান্তে শুরু হয়ে দক্ষিণ-পূর্বে পাকিস্তান সীমান্তে এসে শেষ হয়েছে। ত্রিভুজের তৃতীয় শীর্ষটি উত্তর পূর্বে ইরানের সাথে তুর্কমেনিস্তানের সীমানার মাঝামাঝি অবস্থিত। উত্তর-দক্ষিণে ইরানের সর্বোচ্চ বিস্তার ১,৬০০ কিমি, আর পূর্ব-পশ্চিমে ১,৭০০ কিমি।
ইরানের অভ্যন্তরীণ মালভূমিগুলি প্রায় সম্পূর্ণরূপে পর্বতবেষ্টিত। জগ্রোস পর্বতমালা প্রধান পর্বতমালা এবং এটি দেশটির ভেতরে দিয়ে উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্বে ১,৬০০ কিলোমিটারেরও বেশি দৈর্ঘ্য জুড়ে বিস্তৃত। পারস্য উপসাগরের উত্তর উপকূলের খোঁজেস্তন ছাড়া পশ্চিম ইরানের প্রায় পুরোটাই জগ্রোস পর্বতমালায় গঠিত। পর্বতমালাটির মধ্য অংশ প্রস্থে প্রায় ৩৪০ কিমি চওড়া। এর অধিকাংশ চূড়া ৪,০০০ মিটারেরও অধিক উচ্চতাবিশিষ্ট। এদের মধ্যে ৪,৫৪৭ মিটার উঁচু জার্দ কুহ সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। ২,৩০০ মিটারের চেয়ে উঁচু শৃঙ্গগুলিতে অনেক পানি জমা হয় এবং এগুলি নিচের উপত্যকায় ভূ-গর্ভস্থ পানি আকারে নেমে আসে। এই উপত্যকাগুলি সমুদ্রতল থেকে ১২০০ থেকে ১৫০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত হলেও যথেষ্ট উর্বর এবং এগুলিতে বিভিন্ন ধরনের শস্যের আবাদ করা হয়।
ইরানের উত্তর প্রান্তে একটি খাড়া, সরু পর্বতমালা কাস্পিয়ান সাগরের পুরো দক্ষিণ তীর জুড়ে অবস্থিত; এর নাম আলবোর্জ পর্বতমালা। এই পর্বতমালাটি প্রায় ৬০০ কিমি দীর্ঘ এবং এর গড় প্রস্থ প্রায় ১০০ কিমি। ইরানের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ দামভান্দ (৫,৬৭০ মি) এই পর্বতমালার মধ্যভাগে অবস্থিত। আলবোর্জের আরও অনেকগুলি চূড়া ৩,৬০০ মিটার ছাড়িয়ে গেছে। এই পর্বতমালার উত্তর ঢালের অরণ্যে সারা বছর ধরে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। এই পর্বতমালা ও কাস্পিয়ান সাগরের অন্তর্বর্তী স্থানে গড়ে ২৪ কিমি প্রস্থবিশিষ্ট একটি উর্বর সমভূমি আছে। আলবোর্জ পর্বতমালার পূর্বে সমান্তরাল কতগুলি পর্বতমালা রয়েছে, যেগুলি ২৪০০ থেকে ২৭০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এই পর্বতমালাগুলির মাঝে অনেক সরু, আবাদী উপত্যকা আছে। ইরানের পূর্ব সীমান্ত ধরে অনেকগুলি অপেক্ষাকৃত নিম্ন উচ্চতার শৈলশিরা চলে গেছে; এদেরকে একত্রে পূর্বের উঁচু অঞ্চল নামে ডাকা হয়।
এই পর্বতমালার বেষ্টনীর মাঝের নিচু এলাকাকে একত্রে কেন্দ্রীয় মালভূমি নামে ডাকা হয়। এদের মধ্যে আছে মধ্য-উত্তর ইরানের দাশ্তে কাভির নামের একটি বিরাট লবণাক্ত মরুভূমি, দক্ষিণ-পূর্বের দাশ্তে লুত নামের নুড়ি ও বালির মরুভূমি এবং একাধিক উর্বর মরূদ্যান।
ইরানের পর্বতগুলি একটি সক্রিয় ভূমিকম্প এলাকার উপর অবস্থিত, এবং প্রতি বছর এখানে বহু ছোট আকারের ভূমিকম্প হয়। বড় আকারের ভূমিকম্প কিছুদিন পর পরই ঘটে এবং বিপুল ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ১৮শ শতকে ভূমিকম্পের কারণে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের তাবরিজ শহর দুইবার মাটিতে মিশে যায় এবং প্রতিবার প্রায় ৪০,০০০ করে লোক মারা যায়। ২০শ শতকের মধ্যভাগ থেকে দেশটিতে অনেকগুলি বড় আকারের ভূমিকম্প ঘটেছে যাতে হাজার হাজার লোকের প্রাণহানি ঘটেছে। ১৯৯০ সালের জুনে আলবোর্জ ও জগ্রোসের মিলনস্থলে একটি ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রায় ৩৭,০০০ লোক মারা যান। ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে দক্ষিণ ইরানে এক ভূমিকম্পে প্রাচীন নগরী বামের অধিকাংশ ধ্বংস হয়ে যায় এবং প্রায় ৩০,০০০ লোক মারা যান। ইরানের অনেকগুলি পর্বত আগ্নেয়। এদের মধ্যে কেবল দামভান্দ পর্বত ও দক্ষিণ-পূর্ব ইরানের কুহে তাফতান সক্রিয় আগ্নেয়গিরি; এদের চূড়ার কাছে কিছু সময় পর পর গ্যাস নিঃসরিত হয়।
ইরানে অনেক নদী আছে, কিন্তু এগুলির প্রায় সবগুলিই স্বল্পদৈর্ঘ্য ও অগভীর এবং নৌপরিবহনের অযোগ্য। কারণ দেশটির একমাত্র নৌপরিবহনযোগ্য নদী এবং এটি দক্ষিণ-পশ্চিমের আহওয়াজ শহরের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বেশির ভাগ নদীর উৎপত্তি পার্বত্য অঞ্চলে এবং সমাপ্তি অভ্যন্তরীণ উপত্যকায়। প্রাচীনকাল থেকে ইরানের অধিবাসীরা নদীগুলিকে সেচকাজে ব্যবহার করে আসছে। ২০শ শতকে আব-এ দেজ, কারখেহ, কারুন, সেফিদ রুদ ও অন্যান্য নদীর উপর বাঁধ নির্মাণ করে সেচকাজের পরিধি বাড়ানো হয় এবং জলবিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়। তিনটি নদী ইরানের আন্তর্জাতিক সীমানায় প্রবাহিত হয়। আরাস নদী আর্মেনীয়া ও আজারবাইজানের সাথে সীমান্তে, শাত-আল আরাব নদী ইরাকের সাথে সীমান্তে প্রবাহিত। ইরান চারটি দেশের সাথে বিশ্বের বৃহত্তম হ্রদ কাস্পিয়ান সাগরের অংশীদার। অনেক ছোট ছোট নোনাপানির হ্রদ ইরানের অভ্যন্তরে অবস্থিত, এদের মধ্যে উত্তর-পশ্চিমের ঊর্মিয়া হ্রদ সবচেয়ে বড়। উঁচু পর্বত উপত্যকা এলাকায় কিছু মিষ্টি পানির হ্রদের দেখা মেলে।
ইরানের আন্তর্জাতিক সীমান্তের প্রায় অর্ধেকই তটরেখা। এর মধ্যে আছে কাস্পিয়ান সাগরের তীরে প্রায় ৭৪০ কিমি দীর্ঘ তটরেখা এবং পারস্য উপসাগর ও ওমান উপসাগরের প্রায় ১৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ তটরেখা। কাস্পিয়ান সাগর ও পারস্য উপসাগরে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর আছে এবং এলাকাগুলিতে পানির নিচে প্রচুর তেল ও গ্যাস রয়েছে। ইরানের বৃহত্তম পোতাশ্রয় বন্দর-এ আব্বাস হরমুজ প্রণালীতে অবস্থিত।
ইরানে প্রায় ১০,০০০ প্রজাতির উদ্ভিদ শনাক্ত করা হয়েছে, তবে দেশের অধিকাংশ এলাকায় প্রাকৃতিক বনাঞ্চল উচ্ছেদ করে আবাদী জমি বা পশুচারণভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। বনাঞ্চলে বীচ, ওক ও অন্যান্য পর্ণমোচী গাছ এবং এলবুরুজ পর্বত এলাকায় পাইন, ফার-জাতীয় গাছ জন্মে। জাগরোস পর্বতমালার উঁচু এলাকায় ওক অরণ্য দেখা যায়। এলবুরুজ ও জাগরোস পর্বতমালায় বন্য ফলগাছ যেমন কাঠবাদাম, নাশপাতি, ডালিম, আখরোট জন্মে। দেশের ঊষর কেন্দ্রীয় এলাকায় বন্য পেস্তাবাদাম ও অন্যান্য খরা-সহনশীল গাছ জন্মে। দশ্ত-এ কবীরের প্রান্তে তামারিস্ক বা চিরহরিৎ ঝাউগাছ জন্মে।
ইরানে অনেক স্থানীয় স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ, পাখি ও কীটপতঙ্গ রয়েছে। নেকড়ে, শেয়াল, ভালুক, পাহাড়ি ছাগল, লাল পাহাড়ি ভেড়া ও খরগোশ এখনও বংশবিস্তার করে চলেছে। তবে কাস্পিয়ান বাঘ, কাস্পিয়ান সীলমাছ, হরিণের কিছু প্রজাতি, বনবিড়াল, ইত্যাদি হুমকির সম্মুখীন, যদিও এদের রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ইরানে ৩০০-রও বেশি প্রজাতির পাখি আছে, এদের মধ্যে ২০০-রও বেশি অন্য দেশে অতিথি পাখি হিসেবে বেড়িয়ে আসে।
ইরানের জিডিপি ৪৩৯.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।ইরানের মাথাপিছু আয় ৫,৪১৫.২১ মার্কিন ডলার। ইরানের অর্থনীতি বৃহৎ সরকারী ক্ষেত্র সংবলিত মিশ্র ও ক্রান্তিকালীন অর্থনীতি।বিশ্বের ১০% তেল ও ১৫% গ্যাস সঞ্চয়সহ ইরানকে পরমাণু শক্তিধর বলে গণ্য করা হয়। ইরানের মুদ্রাস্ফীতি হলো ৩০.৪৮৬% (২০১৮)।প্রধান শিল্পসমূহ পেট্রোলিয়াম, জাফরান,পেট্রোকেমিক্যাল, সার, কস্টিক সোডা, গাড়ি উৎপাদন, যন্ত্রাংশ, ফার্মাসিউটিক্যালস, home appliances, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, টেলিযোগাযোগ, শক্তি, power, textiles, নির্মাণ, সিমেন্ট এবং অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ (বিশেষ করে চিনি শোধন ও ভেষজ তেল উৎপাদন), ferrous and non-ferrous metal fabrication, অস্ত্রশিল্প।
ইরানের সর্বত্র পর্যটকদের জন্য আকর্ষনীয় অনেক ঐতিহাসিক স্থান আছে। বাম শহরে বিখ্যাত রেশম পথের উপর ২০০৩ সাল পর্যন্তও আর্গ-এ বাম নামে বিশ্বের বৃহত্তম adobe জাতীয় দালানটি অবস্থিত ছিল, তবে দুর্ভাগ্যবশত ২০০৩ সালে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে ২০০০ বছরের পুরনো দালানটি প্রায় পুরো ধ্বংস হয়ে যায়। এই একই ভূমিকম্পে বাম শহরের আরও অনেক প্রাচীন দালানও ধ্বংস হয়। ইরান সরকার এগুলি পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন।
কের্মানশাহ প্রদেশে রয়েছে বেহিস্তুনের শিলালিপি, যাতে পাহাড়ের গায়ে প্রাচীন পারসিক, ব্যাবিলনীয় এবং এলামীয় অক্ষরে অনেক খোদাইকৃত লেখা পাওয়া যায়। গ্রিকেরা ৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দেও এই শিলালিপিটির উল্লেখ করেছিল।
খুজেস্তান প্রদেশে চোগা জানবিল নামে এলামীয় সভ্যতার একটি প্রাচীন কম্পলেক্স রয়েছে। এটি খ্রিস্টপূর্ব ১৩শ শতকে নির্মিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
ইশফাহান শহরের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে বিখ্যাত নক্শ-ই জাহান ময়দান। এই ময়দান চারপাশ ঘিরে রয়েছে সাফাভিদ রাজত্বের অনেকগুলি প্রাচীন নিদর্শন, যাদের মধ্যে দক্ষিণের শাহ মসজিদটি অন্যতম। শাহ মসজিদের জুম্মা নামাজ এখানেই পড়া হয়।
পাসারগাদায়ে একটি প্রাচীন এলামীয় শহরের ধ্বংসাবশেষ। ফার্স প্রদেশে অবস্থিত শহরটি আর্কেমেনীয় পারসীয় সাম্রাজ্যের প্রথম রাজধানী ছিল। এর দক্ষিণ-পশ্চিমে আছে পার্সেপোলিস শহর, যা প্রাচীন পারস্যের বিখ্যাত রাজা দ্বিতীয় কুরোশ খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে এটি নির্মাণ করেছিলেন। এই শহরের নানা স্থাপত্যকর্ম ও খোদাইকর্মে প্রাচীন পারসিকদের সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়।
এছাড়াও উত্তর-পশ্চিম ইরানের সোলতানিয়েহ শহরের ধ্বংসাবশেষ, বিশেষত ইল-খান ওলজেইতু-র সমাধিস্তম্ভ দর্শনীয় স্থান। পশ্চিম আজারবাইজান প্রদেশে আছে রাজা সুলায়মানের স্মৃতিবিজড়িত তীর্থস্থান তাখ্ত-ই-সুলাইমান।
এছাড়াও ফার্স প্রদেশের তাঙ্গে বোলাগি নামের উপত্যকায় খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৫ সহস্রাব্দ প্রাচীন ১৩০টি মনুষ্য বসতির নিদর্শনবিশিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান বিদ্যমান।
২০০৬ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ইরানের জনসংখ্যা ৭,০০,৪৯,২৬২। এর মধ্যে এক-চতুর্থাংশের বয়স ১৫ বছর বা তার কম। ইরান জাতিগতভাবে ও ভাষাগতভাবে বিচিত্র এক দেশ। কিছু কিছু শহরে, যেমন তেহরানে, বিভিন্ন জাতির লোকের সহাবস্থান পরিলক্ষিত হয়। এছাড়াও ইরানের বাইরে প্রবাসে আরও প্রায় ৪০ লক্ষ ইরানি নাগরিক বসবাস করেন। এরা মূলত উত্তর আমেরিকা, পশ্চিম ইউরোপ, তুরস্ক, পারস্য উপসাগরীয় দেশসমূহ এবং অস্ট্রেলিয়াতে বাস করেন। সিআইএ ফ্যাক্টবুক অনুসারে ইরানের জাতিগুলি এরকম: পারসিক জাতি ৫১%, আজেরি জাতি ২৪%, গিলাকি জাতি ও মাজান্দারানি জাতি ৮%, কুর্দি জাতি ৭%,আরব জাতি ৩%, লুর জাতি ২%, বেলুচি জাতি ২%, তুর্কমেন জাতি ২% এবং অন্যান্য ১% ।
ইরানের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এবং রাষ্ট্রীয় মাজহাব ইসনা আশারিয়া জাফরি। এছাড়া হানাফি, মালিকি, শাফিঈ, হাম্বলি ও জায়েদি মাজহাব দেশটিতে সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত। ইরানের শতকরা ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ লোক শিয়া মুসলমান।
খ্রিস্টধর্ম, ইহুদিধর্ম ও জরথুস্ত্রবাদ ইরানের স্বীকৃত সংখ্যালঘু ধর্ম এবং এই সম্প্রদায়গুলোর জন্য দেশটির মজলিস-এ-শূরায় সংরক্ষিত আসন রয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে, প্রাচীন ইরানি ধর্মসমূহ, যেমন: আদি-ইরানি ধর্ম এবং পরবর্তীকালে জরথুস্ত্রবাদ ও ম্যানিকেইজম, ছিল ইরানের প্রভাবশালী ধর্ম, বিশেষত মধ্য, আকামেনীয়, পার্থীয় ও সাসানীয় যুগে। সাসানীয় সাম্রাজ্যের পতন এবং মুসলিমদের পারস্য বিজয়ের পরবর্তী শতাব্দীকালীন ইসলামিকীকরণের ফলে তা পরিবর্তিত হয়ে পড়ে। ষোড়শ শতাব্দীতে সফবীয় সাম্রাজ্য কর্তৃক শিয়া মতবাদে ধর্মান্তরকরণের পূর্বে ইরান ছিল একটি সুন্নিপ্রধান দেশ। বর্তমানে ইরানের ৪ থেকে ৮ শতাংশ লোক সুন্নি মুসলমান, এদের অধিকাংশই কুর্দি ও বেলুচি। বাকি ২% অমুসলিম সংখ্যালঘু খ্রিস্টান, ইহুদি, বাহাই, মান্দীয়, ইয়াজিদি, ইয়ারসানি, জরথুস্ত্র প্রভৃতি সম্প্রদায়ের লোক।
ইরানের বৃহত্তম (স্বীকৃত নয়) সংখ্যালঘু ধর্ম হল ইয়ারসানবাদ। এটি জরথুস্ত্রবাদের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি কুর্দি লোকধর্ম যার অনুসারী সংখ্যা প্রায় ৩,০০০,০০০। ইয়ারসানিরা মূলত গোরানি কুর্দি ও নির্দিষ্ট লুরস জনগোষ্ঠীর লোক এবং তাদের বসবাস কুর্দিস্তান, কেরমানশাহ ও লোরেস্তান প্রদেশে।
ইরানে ইহুদিধর্মের ইতিহাস বেশ প্রাচীন যা বাবিলের পতনের সময় থেকে শুরু হয়। যদিও বহু ইরানি ইহুদি ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম এবং ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের ফলে দেশত্যাগ করেছিল, এখনও ইরানে প্রায় ৮,৭৫৬ থেকে ২৫,০০০ ইহুদি রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের পর ইরানে সর্বাধিক ইহুদি জনবসতি রয়েছে।
ইরানে প্রায় ২৫০,০০০ থেকে ৩৭০,০০০ খ্রিস্টান বসবাস করে, এবং খ্রিস্টধর্ম দেশটির বৃহত্তম স্বীকৃত সংখ্যালঘু ধর্ম। ইরানি খ্রিস্টানদের বেশিরভাগই আর্মেনীয় এবং একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আসিরীয়।
বাহাই ধর্ম ইরানে সরকারিভাবে স্বীকৃত নয় এবং এর অনুসারীরা প্রায়ই রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হয়। ইউনাইটেড নেশন স্পেশাল র্যাপর্টর অন হিউম্যান রাইটস ইন ইরানের মতে, বাহাইরা ইরানের বৃহত্তম অমুসলিম ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যাদের সংখ্যা আনুমানিক ৩৫০,০০০। ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে বাহাইদের ওপর নিপীড়ন বেড়ে চলেছে, বিশেষত তাদের নাগরিক অধিকার, উচ্চশিক্ষা এবং কর্মসংস্থান থেকে বর্জন ও প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে।
ইরানের সংস্কৃতি, যা পারসিক সংস্কৃতি হিসেবেও পরিচিত, বিশ্বের অন্যতম প্রভাব বিস্তারকারী সংস্কৃতি। ইরানকে সভ্যতার দোলনা হিসেবে অভিহিত করা হয়। বিশ্বে ইরানের আধিপত্য বিস্তারকারী ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান ও সংস্কৃতির কারণে ইরান পশ্চিমে ইতালি, ম্যাসিডোনিয়া, ও গ্রিস, উত্তরে রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপ, দক্ষিণে আরব উপদ্বীপ এবং পূর্বে ভারত উপমহাদেশ ও পূর্ব এশিয়ার সংস্কৃতি ও জনগণের উপর প্রভাব বিস্তার করে। ইরানের সাংস্কৃতিক পরিচয় ও এর ঐতিহাসিক দীর্ঘস্থায়িত্বের অন্যতম বৈশিষ্ট হল সারগ্রাহী সাংস্কৃতিক স্থিতিস্থাপকতা।শিল্পকলাঃ ইরানের শিল্প-ঐতিহ্য বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন, সমৃদ্ধ ও সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী এবং এর আওতায় রয়েছে সাহিত্য, সঙ্গীত, নৃত্য, স্থাপত্যকলা, চিত্রাঙ্কন, বুনন, মৃৎশিল্প, হস্তলিপিবিদ্যা, ধাতব ও পাথুরেকর্ম সহ অসংখ্য শাখা।
ইরানি শিল্পকলা একাধিক পর্যায়ের মধ্য দিয়ে বিবর্তিত হয়েছে, যা ইরানের অদ্বিতীয় নান্দনিকতার প্রমাণ। এই পর্যায়সমূহ এলামাইট চোগা জানবিল থেকে শুরু করে মধ্যযুগীয় ও পার্সেপোলিসের হাখমেনীয় কারুশিল্প থেকে বিশাপুরের মোজাইক পর্যন্ত বিস্তৃত।
ইরানে মূলত তিনটি ভাষাপরিবারের ভাষা প্রচলিত: ইরানীয় ভাষাসমূহ, তুর্কীয় ভাষাসমূহ এবং সেমিটীয় ভাষাসমূহ।সবচেয়ে বেশি ভাষাভাষীবিশিষ্ট ও ভৌগোলিকভাবে সবচেয়ে বেশি বিস্তৃত হল ইরানীয় ভাষাপরিবারের সদস্য ভাষাগুলি। এদের মধ্যে ফার্সি ভাষা প্রধানতম ভাষা। ফার্সি ইরানের জাতীয় ভাষা। ইরানের ফার্স প্রদেশে প্রচলিত ভাষা থেকে এর উৎপত্তি এবং এর লিখিত ভাষার ইতিহাস ১০০০ বছরেরও বেশি পুরনো। অন্যান্য ইরানীয় ভাষাগুলির মধ্যে পশ্চিম ইরানে কুর্দী ভাষা, উত্তর-পশ্চিমে তাতি ওতালিশি ভাষা, এলবুর্জ পর্বতমালার উত্তরে মাজান্দারানি ও গিলাকি ভাষা, ও দক্ষিণ-পূর্ব ইরানে বেলুচি ভাষা অন্যতম।ইরানে প্রচলিত তুর্কীয় ভাষাগুলির মধ্যে উত্তর-পশ্চিমের আজারবাইজানি ভাষা এবং উত্তর-পূর্বের তুর্কমেন ভাষা প্রধান। এছাড়া ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিমে খুজেস্তান প্রদেশে এবং পারস্য উপসাগরের উপকূল ধরে সেমিটীয় ভাষাপরিবারের আরবি ভাষা প্রচলিত।
আধুনিক ফার্সি ইরানের সরকারি ভাষা। ফার্সি একটি প্রাচীন সাহিত্যিক ভাষা। ৭ম শতাব্দীতে আরবদের আক্রমণের আগে এটি পাহলভী লিপিতে লেখা হত। ৯ম ও ১০ম শতাব্দীতে ভাষাটি আরবি লিপি ব্যবহার করতে শুরু করে। ১৯৫০ সাল পর্যন্তও কথ্য ফার্সির অনেকগুলি স্বতন্ত্র উপভাষা ছিল, তবে এর পর সরকারি শিক্ষা ও গণমাধ্যমের প্রসারের ফলে একটি মান্য কথ্য ফার্সির উদ্ভব ঘটেছে। এছাড়া কিছু সংখ্যালঘু ভাষাভাষী আছে যাদের নিজস্ব প্রচার মাধ্যম ও প্রকাশনা আছে। এদের মধ্যে তুর্কী ভাষা আজেরি, কুর্দী, আরবি ও আর্মেনীয় প্রধান।
ইরানের খেলাধুলা
ইরানেই পোলো খেলার প্রচলন শুরু হয়। ইরানের ইসফাহানের নকশ-ই জাহান স্কোয়ারটি মধ্যযুগীয় রাজকীয় পোলো মাঠের স্থান।
বাংলাদেশ · মিশর · ইন্দোনেশিয়া · ইরান · মালয়েশিয়া · নাইজেরিয়া · পাকিস্তান · তুরস্ক
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article ইরান, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.