রক্ত

রক্ত (ইংরেজি: blood) হলো মানুষ ও অন্যান্য মেরুদণ্ডী প্রাণীর সংবহন তন্ত্রের একটি দৈহিক তরল যা কোষে প্রয়োজনীয় পদার্থসমূহ যেমন পুষ্টিদায়ক পদার্থ ও অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং কোষ থেকে বিপাকীয় বর্জ্য পদার্থসমূহ একই কোষসমূহ থেকে দূরে বহন করে নিয়ে যায়। সংবহন তন্ত্রের রক্ত প্রান্তীয় রক্ত নামেও পরিচিত, এবং এটি যে রক্তকণিকাসমূহ বহন করে তা প্রান্তীয় রক্ত কণিকা নামে পরিচিত।

রক্ত
রক্ত
শিরাস্থ (গাঢ়) ও ধামনিক (উজ্জ্বল) রক্ত।
বিস্তারিত
শনাক্তকারী
লাতিনহিমা (haema)
মে-এসএইচD001769
টিএ৯৮A12.0.00.009
টিএ২3892
এফএমএFMA:9670
শারীরস্থান পরিভাষা


রক্ত রক্তকণিকা দিয়ে গঠিত যেগুলো রক্তরস বা প্লাজমাতে ভাসমান অবস্থায় থাকে। রক্তের ৫৫% হলো রক্তরস যার অধিকাংশই পানি (আয়তনে প্রায় ৯২%), এছাড়াও রক্তরসে প্রোটিন, গ্লুকোজ, খনিজ আয়ন, হরমোন, কার্বন ডাই অক্সাইড (রক্তরস বর্জ্য পদার্থ পরিবহণের প্রধান মাধ্যম হওয়ায়), ও রক্তকণিকা বিদ্যমান। রক্তরসের প্রধান প্রোটিন হলো অ্যালবিউমিন, যা রক্তের কলোয়ডাল অভিস্রবণিক চাপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। রক্তকণিকাগুলো লোহিত রক্তকণিকা (RBC বা ইরিথ্রোসাইট নামেও পরিচিত), শ্বেত রক্তকণিকা, (WBC বা লিউকোসাইট নামেও পরিচিত) ও অণুচক্রিকা (প্লেটলেট বা থ্রম্বোসাইট নামেও পরিচিত)। মেরুদণ্ডী প্রাণীদের সবচেয়ে বেশি থাকে লোহিত রক্তকণিকা, এর মধ্যে থাকে হিমোগ্লোবিন নামক লৌহসমৃদ্ধ প্রোটিন যা রক্তে অক্সিজেন পরিবহণের কাজ করে। অপরদিকে, কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রধানত বহিঃকোষীয়ভাবে পরিবাহিত হয় কারণ বাইকার্বনেট আয়ন রক্তরসে পরিবাহিত হয়। মেরুদণ্ডী প্রাণীদের রক্তের হিমোগ্লোবিন অক্সিজেনের সাথে যুক্ত হলে রং উজ্জ্বল লাল বর্ণের হয় এবং অক্সিজেন মুক্ত হলে গাঢ় লাল বর্ণের হয়। কিছু প্রাণী, যেমন ক্রাস্টেশান বা কবচী ও কম্বোজ প্রাণী অক্সিজেন পরিবহণের জন্য হিমোগ্লোবিনের পরিবর্তে হিমোসায়ানিন ব্যবহার করে। কীটপতঙ্গ ও কিছু মলাস্ক বা কম্বোজ প্রাণী রক্তের পরিবর্তে হিমোলিম্ফ নামক তরল ব্যবহার করে। হিমোলিম্ফ বদ্ধ সংবহনতন্ত্রের মধ্যে থাকে না।

রক্ত হৃদ্‌যন্ত্রের পাম্প বা সঞ্চালন ক্রিয়ার ফলে রক্তনালির মধ্য দিয়ে সারা দেহে পরিবাহিত হয়। ফুসফুসবিশিষ্ট প্রাণীদের ক্ষেত্রে, ধামনিক রক্ত প্রশ্বাসের মাধ্যমে টেনে নেওয়া বায়ু থেকে অক্সিজেন দেহের, টিসুতে বহন করে এবং শিরাস্থ রক্ত কোষে উৎপন্ন কার্বন ডাই-অক্সাইড টিসু থেকে ফুসফুসে বহন করে নিয়ে যায়।

রক্ত সম্পর্কিত চিকিৎসা পরিভাষা প্রায়শই hemo- (হিমো-) অথবা hemato- (হিমাটো-) দিয়ে শুরু হয় (এগুলোর ব্রিটিশ বানান যথাক্রমে haemo-haemato-), এটি এসেছে গ্রিক শব্দ αἷμα (হাইমা) থেকে যার অর্থ "রক্ত"। শারীরস্থানকলাস্থানবিদ্যার পরিভাষায় রক্ত হলো একটি বিশেষ ধরনের তরল যোজক কলা

রক্তের বৈশিষ্ট্যাবলি

  • বর্ণ: রক্ত লাল বর্ণের, ধামনিক রক্ত বেশি অক্সিজেন ধারণ করে বিধায় এটি উজ্জ্বল টকটকে লাল এবং শিরাস্থ রক্তে কার্বন ডাই-অক্সাইড বেশি থাকায় এটি অরুণ বর্ণের বা গাঢ় লাল হয়।
  • আয়তন: স্বাভাবিক অবস্থায় মোট প্রবহমান রক্তের আয়তন দৈহিক ওজনের প্রায় ৮% (৭০ কেজি ওজনবিশিষ্ট ব্যক্তির ক্ষেত্রে ৫৬০০ মি.লি.)। এই আয়তনের ৫৫% হচ্ছে রক্তরস। নবজাতকের ক্ষেত্রে এই আয়তন ৪৫০ মি.লি.। দৈহিক বৃদ্ধির সময় এই আয়তন বাড়তে থাকে এবং বয়ঃসন্ধির সময় ৫ লিটার হয়। মহিলাদের ক্ষেত্রে এই আয়তন একটু কম হয় (প্রায় ৪.৫ লিটার)।
  • বিক্রিয়া ও pH: রক্ত ঈষৎ ক্ষারীয়, স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তের pH ৭.৩৫-৭.৪৫, গড়ে প্রায় ৭.৪০।
  • আপেক্ষিক গুরুত্ব: সমগ্র রক্তের আপেক্ষিক গুরুত্ব ১.০৫২ থেকে ১.০৬১, রক্তকণিকার আপেক্ষিক গুরুত্ব ১.০৯২ থেকে ১.১০১ এবং রক্তরসের আপেক্ষিক গুরুত্ব ১.০২২ থেকে ১.০২৬।
  • সান্দ্রতা: প্লাজমা বা রক্তরস পানির তুলনায় ১.৮ গুণ সান্দ্র, অপরদিকে রক্তের সান্দ্রতা নির্ভর করে প্রধানত হিমাটোক্রিট বা লোহিত রক্তকণিকার ওপর, এছাড়া কিছুটা রক্তরস প্রোটিনের ঘনত্ব ও ধরনের ওপর। হিমাটোক্রিট বেড়ে গেলে রক্তের সান্দ্রতা অনেকগুণ বেড়ে যায়। হিমাটোক্রিট মাত্রা স্বাভাবিক থাকলে সমগ্র রক্তের সান্দ্রতা পানির তুলনায় ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি অর্থাৎ একই রক্তবাহের মধ্য দিয়ে পানি পরিবহণে যে বল প্রয়োগের প্রয়োজন, রক্ত পরিবহণে তার চেয়ে তিন থেকে চারগুণ বেশি বল প্রয়োগের প্রয়োজন। পলিসাইথিমিয়া বা লালিকাধিক্য রোগে যখন হিমাটোক্রিট ৬০ অথবা ৭০ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় তখন রক্তের সান্দ্রতা পানির তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বৃদ্ধি পায় এবং রক্তবাহের মধ্য দিয়ে প্রবাহ অত্যন্ত ধীর হয়ে যায়।,

কাজ

রক্ত 
হিমোগ্লোবিন, একটি বর্তুলাকার প্রোটিন
সবুজ = হিম (haem অথবা heme) গ্রুপ
লাল ও নীল = প্রোটিন উপএকক

রক্ত দেহের অভ্যন্তরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে, যেমন:

  • পুষ্টিবিষয়ক কাজ: পরিপাককৃত খাবার থেকে উদ্ভূত পুষ্টিকর পদার্থসমূহ যেমন গ্লুকোজ, অ্যামিনো অ্যাসিড, লিপিডভিটামিনসমূহ পরিপাক নালি থেকে শোষিত হয়ে রক্তের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে পরিবাহিত হয় এবং দেহের বৃদ্ধি ও শক্তি উৎপাদনে কাজে লাগে।
  • শ্বসনমূলক কাজ: রক্তের মাধ্যমে শ্বসন গ্যাসসমূহ পরিবাহিত হয়। এটি ফুসফুসের অ্যালভিওলাস বা বায়ুস্থলী থেকে দেহের বিভিন্ন টিসুতে অক্সিজেন এবং টিসু থেকে ফুসফুসে কার্বন ডাই-অক্সাইড বহন করে নিয়ে যায়।
  • রেচনমূলক কাজ: দেহের টিসুতে বিভিন্ন বিপাকীয় ক্রিয়া সংঘটিত হওয়ার সময় উৎপাদিত বর্জ্য পদার্থসমূহ রক্তের মাধ্যমে অপসারিত হয় এবং বৃক্ক, ত্বক, যকৃৎ প্রভৃতি রেচন অঙ্গসমূহে পরিবাহিত হয়।
  • হরমোন ও উৎসেচকসমূহের পরিবহণ: অন্তঃক্ষরা বা অনাল গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোনগুলো সরাসরি রক্তে অবমুক্ত হয়। রক্ত এই হরমোনগুলোকে তাদের উদ্দিষ্ট অঙ্গ বা টিসুতে বহন করে নিয়ে যায়। রক্ত উৎসেচকও পরিবহণ করে।
  • জলীয় সাম্য রক্ষা: রক্তের জলীয় অংশ ইন্টারস্টিশিয়াল তরলের সাথে মুক্তভাবে পরস্পর বিনিময়যোগ্য যা দেহের তরলের সাম্য নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
  • অম্ল-ক্ষার সাম্য রক্ষা: রক্তরস প্রোটিন ও হিমোগ্লোবিন বাফার হিসেবে কাজ করে এবং অম্ল-ক্ষার সাম্য রক্ষায় সাহায্য করে।
  • দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ: রক্তের আপেক্ষিক তাপ বেশি হওয়ায় এটি দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে, অর্থাৎ দেহের তাপ হরণ ও তাপ গ্রহণের মধ্যে সাম্য রক্ষা করে।
  • সঞ্চয় কাজ: পানি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদার্থ যেমন প্রোটিন, গ্লুকোজ, সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম টিসুর জন্য অবিরাম প্রয়োজন। রক্ত এ-সকল পদার্থগুলোর জন্য তৈরি উৎস হিসেবে কাজ করে। অনাহার, তরল-হানি, ইলেকট্রোলাইট-হানি প্রভৃতি অবস্থায় রক্ত এ-সকল পদার্থের যোগান দিয়ে থাকে।

উপাদানসমূহ

স্তন্যপায়ীদের ক্ষেত্রে

রক্ত 
রক্তের উপাদানসমুহের নকশাচিত্র

রক্ত একটি প্রোটিন-সমৃদ্ধ তরল দিয়ে গঠিত যা প্লাজমা বা রক্তরস নামে পরিচিত। রক্তরসে ভাসমান অবস্থায় কোষীয় উপাদানগুলো যেমন শ্বেত রক্তকণিকা, লোহিত রক্তকণিকা ও অণুচক্রিকা থাকে। মানব দেহের মোট ওজনের ৭-৮% হলো রক্ত, লোহিত রক্তকণিকার আয়তন মোট রক্তের ৪৫, রক্তরস ৫৪.৩% ও শ্বেত কণিকা প্রায় ০.৭%। রক্তের গড় আপেক্ষিক গুরুত্ব ১০৬০ kg/m3, যা বিশুদ্ধ পানির আপেক্ষিক গুরুত্ব ১০০০ kg/m3-এর কাছাকাছি।



রক্তকণিকাসমূহ

রক্ত 
বিভিন্ন রক্তকণিকা (রক্তকোষ)
রক্ত 
একটি স্ক্যানিং ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রেদৃশ্যমান একটি স্বাভাবিক লোহিত রক্তকণিকা (বামে), একটি অণুচক্রিকা (মাঝখানে) ও একটি শ্বেত কণিকা (ডানে)
মানব রক্তের কোষীয় উপাদানসমূহের স্বাভাবিক মান
কোষ কোষ/μL

(গড়)

প্রায়িক

স্বাভাবিক সীমা

মোট শ্বেতকণিকার

শতকরা হার

মোট শ্বেতকণিকা ৯০০০ ৪০০০-১১,০০০ ...
নিউট্রোফিল ৫৪০০ ৩০০০-৬০০০ ৫০-৭০
ইওসিনোফিল ২৭৫ ১৫০-৩০০ ১-৪
বেসোফিল ৩৫ ০-১০০ ০-৪
লিম্ফোসাইট ২৭৫০ ১৫০০-৪০০০ ২০-৪০
মনোসাইট ৫৪০ ৩০০-৬০০ ২-৮
লোহিত রক্তকণিকা ৪.৮×১০ (মহিলা)
৫.৪×১০ (পুরুষ)
... ...
অণুচক্রিকা ৩,০০,০০০ ২,০০,০০০-৫,০০,০০০ ...

এক মাইক্রোলিটার রক্তে থাকে:

  • ৪৭ থেকে ৬১ লাখ (পুরুষ), ৪২ থেকে ৫৪ লাখ (মহিলা) লোহিত রক্তকণিকা: লোহিত রক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিন থাকে যা অক্সিজেন পরিবহণের কাজ করে। স্তন্যপায়ীদের ক্ষেত্রে পরিপক্ক লোহিত রক্তকণিকায় নিউক্লিয়াসঅঙ্গাণুসমূহ থাকে না। লোহিত রক্তকণিকাসমূহে ( অন্তর্ঝিল্লীয় বাহিকা কোষ ও অন্যান্য কোষসহ) বিশেষ ধরনের গ্লাইকোপ্রোটিন থাকে যা দ্বারা রক্তের গ্রুপ নির্ণীত হয়। রক্তের যে আনুপাতিক অংশ লোহিত রক্তকণিকা দখল করে থাকে তাকে হিমাটোক্রিট বা রক্ত বিকেন্দ্রক বলে এবং স্বাভাবিক অবস্থায় এটি প্রায় ৪৫%। মানব দেহের সমস্ত লোহিত রক্তকণিকার সমন্বিত উপরিতলের ক্ষেত্রফল দেহের বাহ্যিক ক্ষেত্রফলের চেয়ে প্রায় ২০০০ গুণ বেশি হবে।লোহিত রক্তকণিকা দেখতে দ্বি-অবতল চাকতির মতো যা অস্থি মজ্জাতে তৈরি হয়।এর স্বাভাবিক গড় ব্যাস ৭.৮ মাইক্রোমিটার এবং সবচেয়ে পুরু অংশে এর পুরুত্ব ২.৫ মাইক্রোমিটার ও কেন্দ্রে ১ মাইক্রোমিটার বা এর চেয়েও কম।লোহিত রক্তকণিকার গড় আয়তন ৯০ থেকে ৯৫ ঘন মাইক্রোমিটার। স্তন্যপায়ীদের ক্ষেত্রে সংবহনতন্ত্রে প্রবেশের পূর্বেই এদের নিউক্লিয়াস বিলুপ্ত হয়ে যায়। মানবদেহের সংবহনতন্ত্রে এরা গড়ে ১২০ দিন টিকে থাকে। পুরুষের ক্ষেত্রে গড়ে প্রতি মাইক্রোলিটার রক্তে ৫৪ লাখ ও মহিলাদের ক্ষেত্রে ৪৮ লাখ লোহিত রক্তকণিকা থাকে। প্রতিটি লোহিত রক্তকণিকা প্রায় ২৯ পিকোগ্রাম হিমোগ্লোবিন ধারণ করে এবং একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির রক্তে প্রায় ৯০০ গ্রাম হিমোগ্লোবিন থাকে।
  • ৪,০০০–১১,০০০ শ্বেতকণিকা: এদের মধ্যে দানাদার কোষের (পলিমরফোনিউক্লিয়ার লিউকোসাইট বা বহুরূপী শ্বেতকণিকা) সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তরুণ দানাদার কোষের অশ্বখুরাকৃতির নিউক্লিয়াস রয়েছে এবং কোষগুলো বয়ঃপ্রাপ্ত হলে নিউক্লিয়াসটি বহুদলাবিশিষ্ট হয়ে যায়।এদের অধিকাংশই নিউট্রোফিলিক বা নিরাকর্ষী দানা (নিউট্রোফিল) ধারণ করে, কিন্তু কিছু কোষ এমন দানাদার পদার্থ ধারণ করে যা অম্লীয় রং দিয়ে রঞ্জিত হয় (ইওসিনোফিল), কিছু কোষে বেসোফিলিক বা ক্ষারাকর্ষী দানা বিদ্যমান (বেসোফিল)।অন্য যে দুই ধরনের কোষ স্বাভাবিকভাবে প্রান্তীয় রক্তে পাওয়া যায় তা হলো লিম্ফোসাইট, যার নিউক্লিয়াস বড়ো ও গোলাকার এবং অত্যল্প সাইটোপ্লাজম, এবং মনোসাইট, যার প্রচুর অদানাদার সাইটোপ্লাজম ও বৃক্ক-আকৃতির নিউক্লিয়াস রয়েছে। এই কোষগুলো একসাথে কাজ করে দেহকে অর্বুদ বা টিউমার ও ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবী সংক্রমণের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা প্রদান করে।
  • ২,০০,০০০–৫,০০,০০০ অণুচক্রিকা: অণুচক্রিকা হলো ক্ষুদ্র, বর্ণহীন, দানাযুক্ত কণিকা যা রক্তবাহিকার ক্ষতস্থানে জমায়েত হয়। এদের নিউক্লিয়াস থাকে না এবং ব্যাস ২-৪ মাইক্রোমিটার ও আয়তন ৭-৮ ঘন মাইক্রোমিটার।স্বাভাবিকভাবে অণুচক্রিকা বিভিন্ন আকৃতির হয়ে থাকে, যেমন বর্তুলাকার অথবা দণ্ড-আকৃতির এবং নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ডিম্বাকৃতি বা চাকতি-আকৃতির হয়। কখনো কখনো অণুচক্রিকা ডাম-বেল আকৃতি, কমা আকৃতি, চুরুট-আকৃতি অথবা অন্য যে-কোনো অস্বাভাবিক আকৃতির হতে পারে। অণুচক্রিকার অর্ধায়ু ৮-১২ দিন। অস্থি মজ্জায় মেগাক্যারিওসাইট বা মহাকেন্দ্রক কোষ নামক দানব কোষ থেকে অণুচক্রিকার উৎপত্তি হয়ে রক্ত প্রবাহে চলে আসে। অস্থি মজ্জা থেকে বাইরে বের হয়ে আসা অণুচক্রিকার মধ্যে ৬০% থেকে ৭৫% রক্ত সংবহনতন্ত্রে থাকে এবং বাকি অংশ থাকে প্লীহাতে। এজন্য প্লীহাকর্তন করলে অণুচক্রিকার সংখ্যা বেড়ে যায়। অণুচক্রিকার অপর নাম প্লেটলেট বা থ্রম্বোসাইট, এরা রক্ত জমাট বাঁধায় অংশ নেয়।
স্বাভাবিক রক্তের উপাদান
প্যারামিটার মান তথ্যসূত্র
হিমাটোক্রিট

৪৫ ± ৭ (৩৮–৫২%) পুরুষের ক্ষেত্রে

৪২ ± ৫ (৩৭–৪৭%) মহিলাদের ক্ষেত্রে

pH ৭.৩৫–৭.৪৫
ক্ষার আধিক্য −৩ থেকে +৩
PO2 ১০–১৩ kPa (৮০–১০০ mm Hg)
PCO2 ৪.৮–৫.৮ kPa (৩৫–৪৫ mm Hg)
HCO3 ২১–২৭ mM
অক্সিজেন সম্পৃক্তি

অক্সিজেনযুক্তকৃত:৯৮–৯৯%

অক্সিজেন বিযুক্তকৃত: ৭৫%


রক্তরস

রক্তের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদার্থের স্বাভাবিক মান
উপাদানসমূহ এস‌আই একক অন্য একক
গ্লুকোজ (অভুক্তাবস্থা) ৩.৬—৫.৮ mmol/L ৬৫–১০৪ mg/dL
বিলিরুবিন ৩–২১ μmol/L ০.১৮–১.২৩ mg/dL
বাইকার্বনেট (HCO
3
)
২১–২৯ mmol/L ২১–২৯ mEq/L
ক্যালসিয়াম (Ca2+) ২.১–২.৬ mmol/L ৮.৫–১০.৫ mg/dL
৪.২–৫.২ mEq/L
কপার বা তামা (Cu2+) ১০–২২ μmol/L ৬৪–১৪০ μg/dL
কোলেস্টেরল <৫.০ mmol/L <২০০ mg/dL
প্রোটিন (মোট) ৬০–৮০ g/L ৬–৮ g/dL
ম্যাগনেসিয়াম (Mg2+) ০.৭৫–১.০ mmol/L ১.৫–২.০ mEq/L
১.৮২–২.৪৩ mg/dL
পটাশিয়াম (K+) ৩.৬–৫.০ mmol/L ৩.৬–৫.০ mEq/L
সোডিয়াম (Na+) ১৩৫–১৪৫ mmol/L ১৩৫–১৪৫ mEq/L
ক্লোরাইড (Cl) ৯৫–১০৭ mmol/L ৯৫–১০৭ mEq/L
আয়রন বা লৌহ (Fe) ১৪–৩২ μmol/L (পুরুষ)
১০–২৮ μmol/L (মহিলা)
৭৮–১৭৮ μg/dL (পুরুষ)
৫৬–১৫৭ μg/dL (মহিলা)
ক্রিয়েটিনিন ৬৪–১১১ μmol/L (পুরুষ)
৫০–৯৮ μmol/L (মহিলা)
০.৭২–১.২৬ mg/dL (পুরুষ)
০.৫৭—১.১১ mg/dL (মহিলা)
ইউরিয়া ২.৫—৬.৬ mmol/L ১৫—৪০ mg/dL


প্লাজমা বা রক্তরস হলো রক্তের ফ্যাকাশে হলুদ বর্ণের স্বচ্ছ তরল অংশ। এতে ৯১% থেকে ৯২% পানি এবং ৮% থেকে ৯% কঠিন বস্তু থাকে। কঠিন বস্তুর মধ্যে জৈব ও অজৈব উভয় ধরনের পদার্থই বিদ্যমান। স্বাভাবিক রক্তরস আয়তন হলো দৈহিক ওজনের ৫%, অথবা ৭০ কেজি ওজনবিশিষ্ট ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রায় ৩৫০০ মি.লি.। রক্তরস স্থির অবস্থায় জমাট বেঁধে যায়, তবে অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট বা তঞ্চনরোধক যোগ করলে তরল থাকে। যদি সম্পূর্ণ রক্তকে জমাট বাঁধতে দেওয়া হয় এবং জমাট-বাঁধা অংশকে অপসারণ করা হয়, তাহলে অবশিষ্ট তরলকে রক্তাম্বু বা রক্তমস্তু বলে। রক্তাম্বুতে রক্তরসের মতো প্রায় একই ধরনের উপাদান থাকে, তবে এতে ফাইব্রিনোজেন ও তঞ্চন ফ্যাক্টর বা নিয়ামক II, V ও VIII অপসারিত হয় এবং রক্ত তঞ্চনের সময় অণুচক্রিকার ভাঙনের কারণে সেরোটোনিন নামক উপাদান বেশি পরিমাণে থাকে।

pH মান

রক্তের pH কিছুটা ক্ষারীয় এবং খুব কঠোরভাবে ৭.৩৫ থেকে ৭.৪৫ সীমার মধ্যে নিয়ন্ত্রিত রাখা হয়। রক্তে বহিঃস্থ কোষীয় তরলের pH ৭.৩৫-এর নিচে হলে তা খুবই অম্লীয় এবং ৭.৪৫-এর উপরে উঠলে তা খুবই ক্ষারীয়। pH ৬.৯-এর নিচে নামলে বা ৭.৮-এর উপরে উঠলে তা সাধারণত প্রাণঘাতী। রক্তের pH, অক্সিজেনের আংশিক চাপ (pO2), কার্বন ডাই-অক্সাইডের আংশিক চাপ (pCO2) এবং বাইকার্বনেট (HCO3) মাত্রা দেহের সাম্যাবস্থা কৌশলের মাধ্যমে খুব সতর্কতার সাথে নিয়ন্ত্রিত হয় এবং দেহের অম্ল-ক্ষার সাম্যাবস্থা বজায় থাকে। দেহের শ্বসনতন্ত্র ও মূত্রতন্ত্র এক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকা পালন করে।

অস্তন্যপায়ী মেরুদণ্ডী প্রাণীদের ক্ষেত্রে

রক্ত 
মেরুদণ্ডীদের লোহিত রক্ত কণিকার ধরন, মাইক্রোমিটারে পরিমাপ করা।
রক্ত 
১০০০ গুণ বিবর্ধিত ব্যাঙের লোহিত রক্তকণিকাসমূহ
রক্ত 
১০০০ গুণ বিবর্ধিত কচ্ছপের লোহিত রক্তকণিকাসমূহ
রক্ত 
১০০০ গুণ বিবর্ধিত মুরগির লোহিত রক্তকণিকাসমূহ
রক্ত 
১০০০ গুণ বিবর্ধিত মানুষের লোহিত রক্তকণিকা


মানুষের রক্ত প্রায় অন্যান্য স্তন্যপায়ীদের মতোই, তবে কোষের সংখ্যা, আকৃতি, প্রোটিনের গঠন প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রজাতিভেদে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। অস্তন্যপায়ী মেরুদণ্ডীদের ক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রধান পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়:

  • অস্তন্যপায়ী মেরুদণ্ডী প্রাণীদের লোহিত রক্তকণিকা চ্যাপটা, ডিম্বাকৃতির ও নিউক্লিয়াসযুক্ত।
  • শ্বেত রক্তকণিকার ধরন ও অনুপাতে বেশ বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়; উদাহরণস্বরূপ, মানবদেহের তুলনায় অ্যাসিডোফিল বা অম্লাকোর্ষীকোষ একটু বেশি থাকে।
  • প্লেইটলেট বা অণুচক্রিকা স্তন্যপায়ীদের ক্ষেত্রে অনন্য; অন্যান্য মেরুদণ্ডীদের ক্ষেত্রে থ্রম্বোসাইট নামে ক্ষুদ্র নিউক্লিয়াসযুক্ত, অন্যান্য মেরুদণ্ডীদের ক্ষেত্রে থ্রম্বোসাইট নামে ক্ষুদ্র নিউক্লিয়াসযুক্ত, টাকু আকৃতির কোষ রক্ত তঞ্চনের জন্য দায়ী।


শারীরবৃত্ত

সংবহনতন্ত্র

রক্ত 
মানব হৃৎপিণ্ডের মধ্য দিয়ে রক্তের সঞ্চালন।

রক্ত হৃদ্‌যন্ত্রের সঞ্চালন ক্রিয়ার মাধ্যমে রক্তনালির মধ্য দিয়ে সারা দেহে পরিবাহিত হয়। মানবদেহে, রক্ত হৃদ্‌যন্ত্রের শক্তিশালী বাম নিলয় থেকে চালিত হয়ে ধমনিসমূহের মাধ্যমে প্রান্তীয় টিসুতে পৌঁছায় এবং শিরাসমূহের মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দে ফিরে আসে। অতঃপর এটি ডান নিলয়ে প্রবেশ করে এবং ফুসফুসীয় ধমনির মধ্য দিয়ে ফুসফুসে চালিত হয় এবং ফুসফুসীয় শিরার মধ্য দিয়ে বাম অলিন্দে ফিরে আসে। এরপর রক্ত পুনরায় বাম নিলয়ে প্রবেশ করে এবং পুরো শরীরে সঞ্চালিত হয়। প্রশ্বাসের মাধ্যমে গৃহীত বাতাস থেকে প্রাপ্ত অক্সিজেন ধামনিক রক্তের মাধ্যমে বাহিত হয়ে দেহের সকল কোষে পৌঁছে যায় এবং কোষের বিপাকীয় ক্রিয়ার ফলে উৎপাদিত কার্বন ডাই-অক্সাইড শিরাস্থ রক্তের মাধ্যমে বাহিত হয়ে ফুসফুসে পৌঁছায় ও বাইরে নিঃশ্বসিত হয়। তবে একটি ব্যতিক্রম আছে তা হলো, ফুসফুসীয় ধমনি কার্বন ডাই-অক্সাইডসমৃদ্ধ রক্ত বহন করে অন্যদিকে ফুসফুসীয় শিরা অক্সিজেনযুক্ত রক্ত বহন করে। কঙ্কাল পেশির চলনের ফলে একটি অতিরিক্ত ফিরতি প্রবাহ সৃষ্টি হতে পারে, কঙ্কাল পেশি শিরাগুলোকে সংনমিত করতে পারে এবং শিরার কপাটিকাগুলোর মধ্য দিয়ে রক্তকে চালিত করে ডান অলিন্দে পৌঁছায়। ১৬২৮ খ্রিষ্টাব্দে উইলিয়াম হার্ভে রক্ত সংবহনের একটি বিখ্যাত বর্ণনা প্রদান করেন।

কোষ উৎপাদন ও ভাঙন

মেরুদণ্ডী প্রাণীদের ক্ষেত্রে রক্তের বিভিন্ন কোষ হিমাটোপোয়েসিস বা রক্তজনন প্রক্রিয়ায় অস্থি মজ্জাতে তৈরি হয়, এর মধ্যে রয়েছে ইরিথ্রোপোয়েসিস বা লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদন, মায়েলোপোয়েসিস বা শ্বেতকণিকা ও অণুচক্রিকা উৎপাদন। শিশুদের ক্ষেত্রে প্রায় সকল অস্থি থেকে লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদিত হয়; প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে দীর্ঘ অস্থি থেকে উৎপাদিত হয়, যেমন: কশেরুকার দেহ, স্টার্নাম বা বক্ষাস্থি, বক্ষপঞ্জর, শ্রোণিচক্রের অস্থি, ঊর্ধ্ব বাহু ও পায়ের অস্থি। অধিকন্তু, শৈশবকালীন মিডিয়াস্টিনাম বা ফুসফুস মধ্যগ বা মধ্যকাতে অবস্থিত থাইমাস গ্রন্থি টি লিম্ফোসাইটের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে কাজ করে। রক্তের প্রোটিনসমৃদ্ধ উপাদান (তঞ্চনকারী প্রোটিনসহ) প্রধানত যকৃতে উৎপাদিত হয়, অন্যদিকে হরমোনগুলো তৈরি হয় অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিতে এবং জলীয় অংশ নিয়ন্ত্রিত হয় হাইপোথ্যালামাসের মাধ্যমে ও বৃক্ক এটি বজায় রাখতে সাহায্য করে। স্বাস্থ্যবান লোহিত রক্তকণিকার জীবৎকাল ১২০ দিন, প্লীহা ও যকৃতের কুপফার কোষে এগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

অক্সিজেন পরিবহণ

রক্ত 
অক্সিজেন-হিমোগ্লোবিন বিয়োজন লেখচিত্র। অম্লত্ব বেশি হলে (দ্রবীভূত কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেশি)এটি ডান দিকে সরে যায় এবং অম্লত্ব কম হলে (দ্রবীভূত কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ কম) এটি বাম দিকে সরে যায়

স্বাভাবিক সামুদ্রিক উচ্চতার বায়ুচাপে ধামনিক রক্তের একটি নমুনায় ৯৮.৫% অক্সিজেন রাসায়নিকভাবে হিমোগ্লোবিনের সাথে বন্ধন তৈরি করে। প্রায় ১.৫% অক্সিজেন হিমোগ্লোবিনের সাথে যুক্ত না থেকে রক্তের অন্যান্য তরলে ভৌতভাবে দ্রবীভূত থাকে। স্তন্যপায়ী ও অন্যান্য অনেক প্রজাতিতে হিমোগ্লোবিন হলো অক্সিজেনের প্রাথমিক পরিবাহক। প্রতি গ্রাম হিমোগ্লোবিনের সাথে ১.৩৬ থেকে ১.৪০ মি.লি. O2 বন্ধন তৈরি করে, একজন সুস্থ মানুষের দেহে প্রতি ১০০ মি.লি. রক্তে প্রায় ১৫ গ্রাম হিমোগ্লোবিন থাকে। সুতরাং যদি ১০০% হিমোগ্লোবিন অক্সিজেন দ্বারা সম্পৃক্ত হয়, তাহলে প্রতি ১০০ মি.লি. রক্তের ১৫ গ্রাম হিমোগ্লোবিন প্রায় ২০ মি.লি. অক্সিজেনের সাথে বন্ধন তৈরি করতে পারে। স্বাভাবিক সিস্টেমিক ধামনিক রক্তে (যা প্রায় ৯৭% সম্পৃক্ত) প্রতি ১০০ মি.লি. রক্তে প্রায় ১৯.৪ মি.লি. অক্সিজেন হিমোগ্লোবিনের সাথে যুক্ত হয়। টিসুর কৈশিক জালিকার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করার সময় (যেখানে অক্সিজেনের আংশিক চাপ ৪০ মি.মি. পারদ, ৭৫% সম্পৃক্ত হিমোগ্লোবিন) এই পরিমাণ কমে গড়ে ১৪.৪ মি.লি. হয়। সুতরাং স্বাভাবিক অবস্থায়, ফুসফুস থেকে টিসুতে প্রতি ১০০ মি.লি. রক্ত প্রবাহে প্রায় ৫ মি.লি. অক্সিজেন পরিবাহিত হয়। অপরদিকে, ৩৭°C (৯৮.৬°F) তাপমাত্রায় প্রতি ১ মি.মি. পারদ আংশিক চাপে ১ মি.লি. প্লাজমা বা রক্তরসে ০.০০০০৩ মি.লি. O2 ভৌতরূপে দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে। ১০০ মি.মি. পারদ আংশিক চাপে প্রতি মি.লি. রক্তরসে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ০.০০৩ মি.লি., অথবা প্রতি ১০০ মি.লি. রক্তে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ ০.৩ মি.লি. (রক্তের অক্সিজেনের হিসাব শতকরা আয়তন বা প্রতি ১০০ মি.লি. রক্তে কত মি.লি. অক্সিজেন দ্রবীভূত আছে এই হিসেবে প্রকাশ করা হয়।)।কঠোর অনুশীলনের সময় অক্সিজেন চাহিদা প্রায় ১৬ গুণ বা তারও বেশি বেড়ে যেতে পারে। এমন অবস্থায় যদি কেবল ভৌতরূপে দ্রবীভূত অক্সিজেন কে টিসুর প্রয়োজনীয় সকল অক্সিজেন চাহিদা মেটাতে হতো, তাহলে কার্ডিয়াক আউটপুট বা হৃদ্‌গত উৎপাদন প্রতি মিনিটে ১০০০ লিটারের চেয়ে বেশি হতে হতো। কঠোর অনুশীলনের সময় একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির কার্ডিয়াক আউটপুট সর্বোচ্চ প্রতি মিনিটে প্রায় ২৫ লিটার হতে পারে। প্রশিক্ষিত মল্ল ক্রীড়াবিদের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ ৩৫ লিটারের চেয়ে বেশি হতে পারে। এজন্য রক্তে ভৌতরূপে দ্রবীভূত অক্সিজেন দেহের বিপাকীয় চাহিদা মেটাতে সক্ষম না, এমনকি বিশ্রামের সময়েও না। ফুসফুসীয় ও নাভি ধমনি ও তাদের অনুরূপ শিরাসমূহ ব্যতীত, ধমনিসমূহ হৃৎপিণ্ড থেকে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত বহন করে ধমনিকা ও কৈশিকার মধ্য দিয়ে দেহের টিসুতে পৌঁছায়, যেখানে বিপাকীয় কাজে অক্সিজেন ব্যবহৃত হয়; পরবর্তীতে, উপশিরা ও শিরা কার্বন ডাই অক্সাইড সমৃদ্ধ টিসু থেকে হৃৎপিণ্ডে নিয়ে যায়। স্বাভাবিক অবস্থায় প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিশ্রামরত অবস্থায় ফুসফুস ত্যাগ করা রক্তে হিমোগ্লোবিনের অক্সিজেন সম্পৃক্তি ৯৮-৯৯%, এবং দেহে অক্সিজেন সরবরাহের হার ৯৫০ থেকে ১১৫০ মি.লি./মিনিট। বিশ্রামরত অবস্থায় একজন স্বাস্থ্যবান প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির অক্সিজেন ব্যয়ের হার প্রতি মিনিটে ২০০-২৫০ মি.লি., এবং ফুসফুসে ফিরে আসা কার্বন ডাই-অক্সাইড সমৃদ্ধ রক্তেও অক্সিজেন সম্পৃক্তি প্রায় ৭৫% (৭০ থেকে ৭৮%) ক্রমাগত শারীরিক অনুশীলনের সময় অক্সিজেনের ব্যবহার বেড়ে যায় ফলে শিরাস্থ রক্তের অক্সিজেন সম্পৃক্তি হ্রাস পায়, প্রশিক্ষিত মল্ল ক্রীড়াবিদের ক্ষেত্রে তা ১৫ শতাংশের নিচে নেমে আসতে পারে; যদিও এটি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য শ্বসন হার ও রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়, তবে এই অবস্থায় ধামনিক রক্তে অক্সিজেন সম্পৃক্তি ৯৫% বা এর নিচে নামতে পারে। ক্রমাগত হাইপোক্সিয়া (অক্সিজেন সম্পৃক্তি ৯০ শতাংশের নিচে) স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক, তীব্র হাইপোক্সিয়া (সম্পৃক্তি ৩০ শতাংশের কম) খুব দ্রুত প্রাণনাশক।

ভ্রূণ অমরার মাধ্যমে অক্সিজেন গ্রহণ করায় খুব কম অক্সিজেন চাপের সম্মুখীন হয় ( প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ফুসফুসে প্রাপ্ত মাত্রার প্রায় ২১%), তাই ভ্রূণের রক্তে অন্য ধরনের একটি হিমোগ্লোবিন তৈরি হয় যার অক্সিজেনের প্রতি আসক্তি অনেক বেশি। এটি ভ্রূণীয় হিমোগ্লোবিন বা 'হিমোগ্লোবিন এফ' নামে পরিচিত।

কার্বন ডাই অক্সাইড পরিবহণ

রক্তের গ্যাসীয় পদার্থের পরিমাণ
১ dL বা ১০০ mL রক্তে অবস্থিত ১৫ g হিমোগ্লোবিনে গ্যাসের পরিমাণ (mL/dL)
ধামনিক রক্ত (PO2 ৯৫mm Hg;

PCO2 ৪০ mm Hg; Hb ৯৭% সম্পৃক্ত )

শিরাস্থ রক্ত (PO2 ৪০ mm Hg;

PCO2 ৪৬ mm Hg; Hb ৭৫% সম্পৃক্ত )

গ্যাস দ্রবীভূত সমন্বিত দ্রবীভূত সমন্বিত
O2 ০.২৯ ১৯.৫ ০.১২ ১৫.১
CO2 ২.৬২ ৪৬.৪ ২.৯৮ ৪৯.৭
N2 ০.৯৮ ০.৯৮

রক্তে CO2 পরিবহণ O2 পরিবহণের মতো এত সমস্যাসংকুল নয় কারণ অনেক অস্বাভাবিক পরিস্থতিতেও অক্সিজেনের তুলনায় কার্বন ডাই-অক্সাইড বেশি পরিমাণে পরিবাহিত হতে পারে। রক্তে CO2-এর দ্রাব্যতা অক্সিজেনের তুলনায় ২০ গুণ বেশি; সমান আংশিক চাপে একটি সরল দ্রবণে অক্সিজেনের তুলনায় বেশি পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড থাকে। রক্তে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণের সাথে অম্ল-ক্ষার সাম্যের একটি সম্পর্ক রয়েছে। স্বাভাবিক বিশ্রামরত অবস্থায়, প্রতি ১০০ মি.লি. রক্তে গড়ে ৪ মি.লি. CO2 টিসু থেকে ফুসফুসে পরিবাহিত হয়।কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি থাকে মাইটোকন্ড্রিয়ায়, সেখানে কোষীয় শ্বসনের সময় এটি উৎপন্ন হয়। সেখান থেকে ব্যাপনের মাধ্যমে প্রথমে ইন্টারস্টিশিয়ামে, তারপর রক্তে চলে আসে। বিশ্রামরত অবস্থায় ৭০-কেজি ওজনবিশিষ্ট একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রতি মিনিটে টিসু বিপাকের মাধ্যমে প্রায় ২০০-২৫০ মি.লি. কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয় যেটি শিরাস্থ রক্তের মধ্য দিয়ে দেহ থেকে অপসারণ হওয়ার জন্য ফুসফুসে যায়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ ব্যক্তির কার্ডিয়াক আউটপুট প্রতি মিনিটে ৫ লিটার হওয়ায়, ফুসফুসের মধ্য দিয়ে পরিবাহিত প্রতি ১০০ মি.লি. রক্ত থেকে অবশ্যই ৪ থেকে ৫ মি.লি. কার্বন ডাই-অক্সাইড বিমুক্ত হবে। রক্তের মধ্য দিয়ে CO2-এর মাধ্যমে তিনটি উপায়ে ফুসফুসের অ্যালভিওলাস বা বায়ুস্থলীতে পরিবাহিত হয়:

  • বাইকার্বনেট হিসেবে পরিবহণ (৭০%): লোহিত রক্তকণিকার ভিতরে দ্রবীভূত কার্বন ডাই-অক্সাইড পানির সাথে বিক্রিয়া করে কার্বনিক অ্যাসিড (H2CO3) তৈরি করে। লোহিত রক্তকণিকায় অবস্থিত উৎসেচক কার্বনিক অ্যানহাইড্রেজ এই বিক্রিয়ায় অনুঘটক হিসেবে কাজ করে এবং বিক্রিয়ার গতি কয়েক হাজারগুণ বাড়িয়ে দেয়। অধিকাংশ কার্বনিক অ্যাসিড তাৎক্ষণিকভাবে বাইকার্বনেট আয়ন (HCO
    3
    ) ও হাইড্রোজেন আয়নে পরিণত হয়; ইতঃপর হাইড্রোজেন আয়ন হিমোগ্লোবিনের সাথে যুক্ত হয়।

CO2 + H2O → H2CO3 → H+ + HCO
3

অধিকাংশ বাইকার্বনেট আয়ন ব্যাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লোহিত রক্তকণিকা থেকে রক্তরসে চলে আসে এবং বৈদ্যুতিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ক্লোরাইড আয়ন লোহিত রক্তকণিকায় প্রবেশ করে, যা 'ক্লোরাইড শিফট' নামে পরিচিত।

  • হিমোগ্লোবিন ও রক্তরস প্রোটিনের সাথে যৌগ গঠন (২৩%): কার্বন ডাই-অক্সাইড হিমোগ্লোবিন অণু ও রক্তরস প্রোটিনের অ্যামাইন মূলকের সাথে সরাসরি বিক্রিয়া করে কার্বামিনোহিমোগ্লোবিন (Hb CO2) নামক যৌগ গঠন করে যেটি শিরাস্থ রক্তের নীলাভ রঙের জন্য দায়ী। কার্বন ডাই-অক্সাইডের সাথে হিমোগ্লোবিনের এই বিক্রিয়াটি উভমুখী এবং উৎপন্ন যৌগটি দুর্বল বন্ধনের সাহায্যে যুক্ত থাকে, তাই অ্যালভিওলাস বা বায়ুস্থলীতে খুব সহজেই কার্বন ডাই-অক্সাইড অবমুক্ত হয় যেখানে CO2-এর আংশিক চাপ টিসু কৈশিক জালিকার তুলনায় কম।
  • দ্রবীভূত অবস্থায় পরিবহণ (৭%): প্রতি ১০০ মি.লি. রক্তে মাত্র ০.৩ মি.লি. কার্বন ডাই-অক্সাইড দ্রবীভূত অবস্থায় পরিবাহিত হয়; এটি মোট পরিবাহিত কার্বন ডাই-অক্সাইডের প্রায় ৭%। লোহিত রক্তকণিকায় প্রধান অক্সিজেন-বহনকারী অণু হিমোগ্লোবিন অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড উভয়ই বহন করে। তবে, হিমোগ্লোবিন অণুতে যে স্থানে অক্সিজেন যুক্ত হয়, সেখানে CO2 যুক্ত হয় না; বরং এটি চারটি গ্লোবিন শিকলের N-প্রান্তিকের সাথে যুক্ত হয়। অক্সিজেনবিযুক্ত হিমোগ্লোবিনের CO2-এর সাথে বন্ধন তৈরি ও বহন করার সক্ষমতা বেশি, যা হলডেইন প্রভাব নামে পরিচিত। ফলে, শিরাস্থ রক্ত ধামনিক রক্তের তুলনায় বেশি CO2 বহন করে, টিসুতে CO2 গ্রহণ ও ফুসফুসে CO2 অবমুক্তকরন সুবিধাজনক হয়। রক্তে CO2 বৃদ্ধি পেলে বা রক্তের pH হ্রাস পেলে হিমোগ্লোবিনের অক্সিজেনের প্রতি আসক্তি কমে যায় যা বোর প্রভাব নামে পরিচিত।

হাইড্রোজেন আয়নের পরিবহণ

কিছু অক্সিহিমোগ্লোবিন অক্সিজেন ত্যাগ করে ডি‌অক্সিহিমোগ্লোবিনে পরিণত হয়। ডি‌অক্সিহিমোগ্লোবিন অধিকাংশ হাইড্রোজেন আয়নের (H+) সাথে বন্ধন তৈরি করে কারণ অক্সিহিমোগ্লোবিনের তুলনায় এর হাইড্রোজেনের প্রতি আসক্তি বেশি।

লসিকাতন্ত্র

লসিকা হলো টিসু তরল যা লসিকাবাহতে প্রবেশ করে। এটি রক্ত থেকে কৈশিক নালির অতিপরিস্রাবণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে টিসুতে তৈরি হয়। ত্বকের এপিডার্মিস বা উপত্বক, শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি, অস্থি মজ্জা ও কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র ব্যতীত দেহের প্রায় সকল অঞ্চল ও অঙ্গসমূহে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লসিকাবাহিকা রয়েছে (ত্বকের ডার্মিস বা অন্তস্ত্বক, ফুসফুস, অন্ত্র, জেনিটোইউরিনারি সিস্টেমে সবচেয়ে বেশি থাকে)। ক্ষুদ্র বাহিকাসমূহের মাধ্যমে সংগৃহীত লসিকা বৃহৎ লসিকাবাহে প্রবেশ করে। অতঃপর এটি থোরাসিক ডাক্ট ও ডান লসিকা নালির মধ্য দিয়ে যথাক্রমে বাম ও ডান সাবক্লেভিয়ান শিরা বা অক্ষক-নিম্ন শিরার মাধ্যমে শিরাস্থ রক্তে প্রবেশ করে। এটিতে তঞ্চন নিয়ামকসমূহ থাকে এবং স্থির অবস্থায় জমাট বাঁধে। অধিকাংশ অবস্থানেই, এটি প্রোটিনও ধারণ করে যা কৈশিক নালির প্রাচীর ভেদ করে এসেছে এবং পুনরায় লসিকার মাধ্যমে রক্তে ফিরে যেতে পারে। তাসত্ত্বেও রক্তরসের তুলনায় লসিকার প্রোটিন উপাদান সাধারণত কম। অন্ত্র থেকে লসিকাবাহতে লিপিড শোষিত হয়, খাবার খাওয়ার পরে থোরাসিক ডাক্টের লসিকা চর্বি বা স্নেহ পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকায় দুধের মতো হয়। লিম্ফোসাইটসমূহও প্রধানত লসিকাবাহের মাধ্যমে সংবহনে প্রবেশ করে।

তাপ নিয়ন্ত্রণ

রক্তসংবহন সারাদেহে তাপ পরিবহণ করে এবং এই প্রবাহের সমন্বয় তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ত্বকের পৃষ্ঠতলে রক্তপ্রবাহের বৃদ্ধি ঘটলে (যেমন গরম আবহাওয়া অথবা কঠোর অনুশীলন) ত্বক উষ্ণতর হয়ে যায়, ফলে তাপ হরণ দ্রুততর হয়। অপরদিকে, বাহ্যিক তাপমাত্রা হ্রাস পেলে, তাপ হরণ প্রতিরোধ করার জন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও ত্বকের পৃষ্ঠতলে রক্তপ্রবাহ হ্রাস পায় এবং দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসমূহে প্রবাহিত হয়।

রক্তপ্রবাহের হার

অঙ্গভেদে রক্তপ্রবাহের হার ভিন্ন হয়। সবচেয়ে বেশি রক্ত সরবরাহ রয়েছে যকৃতে, যেখানে প্রতি মিনিটে প্রায় ১৩৫০ মি.লি. রক্ত প্রবাহিত হয়। রক্ত প্রবাহের দিক দিয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে বৃক্ক (১১০০ mL/min) ও মস্তিষ্ক (~৭০০ mL/min)। প্রতি ১০০ গ্রাম টিসুতে রক্ত প্রবাহের আপেক্ষিক হার ভিন্ন হয়, এক্ষেত্রে বৃক্ক, অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিথাইরয়েড গ্রন্থি যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে।

বর্ণ


রক্তের রঞ্জক পদার্থ (হিমোক্রোম) রক্তের একটি প্রোটিন যা অক্সিজেন পরিবহণ করে। বিভিন্ন প্রাণী বিভিন্ন প্রোটিন ব্যবহার করে।

হিমোগ্লোবিন

রক্ত 
আঙুলে কৈশিক জালিকা থেকে বের হওয়া রক্ত

মেরুদণ্ডী প্রাণীদের রক্তের রঙের প্রধান নির্ণায়ক হলো হিমোগ্লোবিন। প্রতিটি অণুর চারটি হিম গ্রুপ রয়েছে এবং বিভিন্ন অণুর সাথে তাদের আন্তঃক্রিয়া প্রকৃত রঙের পরিবর্তন ঘটায়। মেরুদণ্ডী প্রাণী ও অন্যান্য হিমোগ্লোবিন-ব্যবহারকারী প্রাণীগুলোর ধামনিক ও কৈশিকার রক্ত উজ্জ্বল লাল, কারণ অক্সিজেন হিম গ্রুপকে একটি কড়া লাল র‌ং প্রদান করে। অক্সিজেন-বিহীন রক্ত একটু গাঢ়তর লাল হয়; এটি শিরায় থাকে এবং রক্তদান ও শিরাস্থ রক্তের নমুনা সংগ্রহ করার সময় দেখা যেতে পারে। এর কারণ হলো, অক্সিজেনযুক্ত ও অক্সিজেন-বিযুক্ত অবস্থায় হিমোগ্লোবিন দ্বারা শোষিত আলোর বর্ণালি আলাদা হয়।

কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়ায় রক্ত টকটকে লাল হয়, কারণ কার্বন মনোক্সাইড (CO) কার্বক্সিহিমোগ্লোবিন ((HbCO) গঠন করে। সায়ানাইড বিষক্রিয়ায়, শরীর অক্সিজেন ব্যবহার করতে পারে না, তাই শিরাস্থ রক্ত অক্সিজেনযুক্ত থাকে, ফলে রক্তের উজ্জ্বলতা বাড়ে। কিছু কিছু অবস্থা আছে যখন হিমোগ্লোবিনের হিম গ্রুপ আক্রান্ত হয়, যা ত্বকের র‌ং কে নীলাভ করে দেয়;– এই লক্ষণটিকে সায়ানোসিস বা নীলাভা বলে। হিম জারিত হলে মেটহিমোগ্লোবিন তৈরি হয়, যেটি অপেক্ষাকৃত বেশি বাদামি রঙের এবং অক্সিজেন পরিবহণে অক্ষম। সালফহিমোগ্লোবিনিমিয়া নামক বিরল ক্ষেত্রে ধামনিক হিমোগ্লোবিন আংশিকভাবে অক্সিজেনযুক্ত হয় এবং নীলাভ আভাযুক্ত গাঢ় লাল বর্ণের হয়। ত্বকের উপরিতলের নিকটবর্তী শিরাগুলো বিবিধ কারণে নীল দেখায়। তবে এই বর্ণ উপলব্ধি বা প্রত্যক্ষকরণের পরিবর্তন শিরাস্থ রক্তের প্রকৃত রঙের তুলনায় বরং ত্বকের আলোক বিক্ষেপণ বৈশিষ্ট্য ও দৃষ্টিকর্টেক্স দ্বারা দৃষ্টিসম্বন্ধীয় ইনপুট প্রক্রিয়াকরণের সাথে সম্পর্কিত। প্রাসিনোহিমা গণের স্কিঙ্ক নামক টিকটিকির রক্তে বিলিভার্ডিন নামক বর্জ্য পদার্থ জমা হওয়ার ফলে এদের রক্ত সবুজ রঙের হয়।

হিমোসায়ানিন

সেফালোপড, গ্যাস্ট্রোপড বা উদরপদ ও কিছু আর্থ্রোপড বা সন্ধিপদী যেমন, রাজ কাঁকড়া অধিকাংশ কম্বোজ প্রাণীর রক্ত নীল, কারণ এদের রক্তে কপারসমৃদ্ধ প্রোটিন হিমোসায়ানিন প্রায় ৫০গ্রাম/লিটার ঘনত্বে থাকে। অক্সিজেনহীন অবস্থায় হিমোসায়ানিন বর্ণহীন, অক্সিজেন যুক্ত হওয়ার পর গাঢ় নীল বর্ণের হয়ে যায়। এই প্রাণীগুলো শীতল পরিবেশে নিম্ন অক্সিজেন চাপে বসবাস করে বলে এদের সংবহনে রক্ত ধূসর-সাদা থেকে অনুজ্জ্বল পীতবর্ণের হয়, এবং রক্তপাতের সময় যখন রক্ত বাতাসের সংস্পর্শে আসে, তখন গাঢ় নীল বর্ণ ধারণ করে। হিমোসায়ানিন জারিত হওয়ায় বর্ণ পরিবর্তিত হয়ে যায়। হিমোসায়ানিন বহিঃকোষীয় তরলে অক্সিজেন বহন করে, যা স্তন্যপায়ীদের লোহিত রক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিনের সাহায্যে অন্তঃকোষীয় অক্সিজেন পরিবহণের বিপরীত।

ক্লোরোক্রুয়োরিন

অধিকাংশ অ্যানিলিডা পর্বের কীট ও কিছু সামুদ্রিক পলিকিট‌্স বা বহুশূকপদী অক্সিজেন পরিবহণের জন্য ক্লোরোক্রুয়োরিন ব্যবহার করে। লঘু দ্রবণে এটি সবুজ বর্ণের।

হিমারিথ্রিন

সামুদ্রিক অমেরুদণ্ডী প্রাণী সাইপাঙ্কিউলিড, প্রায়াপিউলিড বা শিশ্ন কীট, ব্র‍্যাকিয়োপড বা বাহুপদী ও অ্যানেলিড কীট, ম্যাগেলোনার রক্তে অক্সিজেন পরিবহণে হিমারিথ্রিন ব্যবহৃত হয়। অক্সিজেন যুক্ত হলে এটি বেগুনি-গোলাপী রং ধারণ করে।

হিমোভ্যানাডিন

অ্যাসিডিয়ান ও টিউনিকেট উপপর্বের কিছু প্রজাতির (সামুদ্রিক ফোয়ারা নামেও পরিচিত) রক্তে ভ্যানাডিন নামক প্রোটিন থাকে। এই প্রোটিনগুলো ভ্যানাডিয়াম দিয়ে গঠিত, ফলে এদের দেহে পারিপার্শ্বিক সামুদ্রিক পানির চেয়েও প্রায় ১০০ গুণ বেশি ভ্যানাডিয়াম থাকে। হিমোসায়ানিন ও হিমোগ্লোবিনের মতো হিমোভ্যানাডিন অক্সিজেন পরিবহণ করে না। তবে, অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসলে ভ্যানাডিন সরিষার মতো হলুদ রং হয়ে যায়।

রোগসমূহ

সাধারণ রোগ

  • আয়তনসংক্রান্ত রোগ
    • আঘাতের কারণে রক্তক্ষরণের ফলে রক্তের আয়তন কমে যায়।একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি প্রায় ২০% রক্ত আয়তন (১ লিটার) হারানোর পর প্রথম উপসর্গ 'অস্থিরতা' শুরু হয় এবং ৪০% আয়তন (২ লিটার) হারানোর পর শকের উপসর্গগুলো দেখা দেয়। অণুচক্রিকাসমূহ রক্ত তঞ্চন ও রক্তপিণ্ড গঠনের জন্য জরুরি। অভ্যন্তরীণ অঙ্গসমূহ বা অস্থিতে আঘাত পেলে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হতে পারে, যা মাঝে মাঝে গুরুতর অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে।
    • পানিশূন্যতা রক্তের জলীয় উপাদান কমিয়ে দিয়ে রক্ত আয়তন কমিয়ে দিতে পারে, যার ফলে অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন বা ঋজু লঘুরক্তচাপ ও মূর্ছাপ্রাপ্তি ঘটতে পারে।
  • রক্ত সংবহনসংক্রান্ত রোগ
    • শক বা অভিঘাত হলো টিসুর একটি নিষ্ফল পারফিউজন বা সিঞ্চন প্রক্রিয়া, যা বিভিন্ন অবস্থা যেমন রক্তপাত, সংক্রমণ, স্বল্প কার্ডিয়াক আউটপুট দ্বারা ঘটতে পারে।
    • অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস বা ধমনিস্থূলতা ধমনির মধ্য দিয়ে রক্তপ্রবাহ হ্রাস করে, কারণ অ্যাথেরোমা বা মেদচাপড়া ধমনির গাত্রে লেগে থাকে এবং নালিগুলোকে সরু করে দেয়। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে মেদচাপড়াও আকারে বৃদ্ধি পায়। ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ, বহুমূত্ররোগ ও রক্তের অতিরিক্ত লিপিড বা মেদ (হাইপারলিপিডিমিয়া বা রক্তমেদাধিক্য) প্রভৃতি বিষয়াদি মেদচাপড়ার প্রবৃদ্ধি তরাণ্বিত করে।
    • রক্ততঞ্চনের ফলে থ্রম্বোসিস বা অন্তর্তঞ্চন তৈরি হতে পারে, যা রক্তনালিকে অবরুদ্ধ করে দিতে পারে।
    • রক্ত উপাদানের সমস্যা, হৃৎপিণ্ডের পাম্পিং ক্রিয়ার অক্ষমতা অথবা রক্তনালির সরু হয়ে যাওয়ার ফলে অনেক বিপত্তি দেখা দিতে পারে, যেমন, সরবরাহকৃত টিসুর হাইপোক্সিয়া বা রক্ত‌অক্সিজেনস্বল্পতা। ইস্কিমিয়া বা রক্তসংরোধ বলতে এমন টিসুকে বুঝায় যেটিতে রক্ত সরবরাহ পর্যাপ্ত নয় এবং ইনফার্কশন বলতে বুঝায় টিসুর মৃত্যু (নেক্রোসিস বা কলামৃত্যু), এটি ঘটে যখন রক্তের সরবরাহ অবরুদ্ধ হয়ে যায় অথবা খুবই সামান্য।

রক্তরোগসংক্রান্ত

  • রক্তশূন্যতা
    • রক্তক্ষরণ, রক্তরোগ যেমন থ্যালাসেমিয়া অথবা পুষ্টি ঘাটতির ফলে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা কমে যেতে পারে (রক্তশূন্যতা), এবং এক বা একাধিকবার রক্ত পরিসঞ্চালনের প্রয়োজন হতে পারে। রক্তশূন্যতা জেনেটিক রোগজনিত কারণেও হতে পারে, যেখানে লোহিত রক্তকণিকা ফলপ্রসূভাবে কাজ করে না। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে হিমোগ্লোবিন মাত্রা দেখে রক্তশূন্যতা আছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়। হিমোগ্লোবিন মাত্রা পুরুষদের ক্ষেত্রে <১৩.৫ g/dL এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে <১২.০ g/dL হলে তাকে রক্তশূন্যতা বলে। রক্ত পরিসঞ্চালনের চাহিদা মিটানোর জন্য অনেক দেশেরই ব্লাড ব্যাঙ্ক আছে। রক্ত পরিসঞ্চালনের জন্য রক্তগ্রহীতা ও রক্তদাতার রক্তের গ্রুপ একই হতে হবে।
    • কাস্তে-কোষ ব্যাধি
  • কোষের বংশবৃদ্ধিসংক্রান্ত রোগ
    • লিউকেমিয়া হলো রক্ত-গঠনকারী টিসু ও কোষসমূহের ক্যান্সার
    • লোহিত রক্তকণিকার অক্যান্সারমূলক অত্যুৎপাদন যেমন, পলিসাইথিমিয়া ভেরা অথবা অণুচক্রিকার এসেনশিয়াল থ্রম্বোসাইটোসিস বা অপরিহার্য অণুচক্রিকাধিক্য হলো সম্ভাব্য প্রাক্-ক্যান্সার অবস্থা।
    • মায়েলোডিসপ্লাস্টিক সিনড্রোম রোগে এক বা একাধিক কোষ সারির অফলপ্রসূ উৎপাদন হয়।
  • রক্ততঞ্চনের রোগ
    • হিমোফিলিয়া হলো একটি জেনেটিক রোগ যেখানে দেহের স্বাভাবিক রক্ত তঞ্চন পদ্ধতির একটিতে বিচ্যুতি ঘটে, যার ফলে কিছু অনেক প্রাণ-সংহারী অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে, তবে সবচেয়ে বেশি হয় হিমার্থ্রোসিস বা রক্তসন্ধি, অথবা অস্থিসন্ধির মধ্যবর্তী ফাঁকে রক্তক্ষরণ, যা পঙ্গুত্বের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
    • অফলপ্রসূ অথবা অপর্যাপ্ত অণুচক্রিকাসমূহও কোয়াগুলোপ্যাথি বা তঞ্চনবিকার (রক্তক্ষরণমূলক রোগ) করতে পারে।
    • অণুচক্রিকা অথবা তঞ্চন ফ্যাক্টরের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের কোনো ত্রুটির কারণে হাইপারকোয়াগুল্যাবল স্টেট বা অতিতঞ্চনক্ষম অবস্থা (থ্রম্বোফিলিয়া বা তঞ্চন প্রবণতা) হতে পারে।
  • রক্তের সংক্রমণমূলক রোগ
    • রক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ সংক্রমণ বাহক। এইডস রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস, এইচ‌আইভি, সংক্রমিত ব্যক্তির রক্ত, বীর্য বা অন্যান্য দৈহিক তরলের সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে ছড়ায়। হেপাটাইটিস বিহেপাটাইটিস সি ভাইরাস প্রাথমিকভাবে রক্তের সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে ছড়ায়। রক্তবাহী সংক্রমণ ঘটার কারণে রক্ত লেগে থাকা বস্তুগুলোকে জৈবঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
    • রক্তে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটলে তাকে ব্যাক্টেরিমিয়া (জীবাণুরক্ততা) অথবা সেপসিস (জীবাণুদূষণ) বলে। ভাইরেমিয়া (ভাইরাসরক্ততা) হলো রক্তে ভাইরাসের সংক্রমণ। ম্যালেরিয়া ও ট্রিপ্যানোসোমায়াসিস হলো রক্তবাহিত পরজীবী সংক্রমণ।

কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়া

অক্সিজেন ছাড়া অন্যান্য পদার্থসমূহও হিমোগ্লোবিনের সাথে বন্ধন তৈরি করতে পারে; কিছু ক্ষেত্রে, এটি দেহের অনিবর্তনীয় ক্ষতি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কার্বন মনোক্সাইড যখন প্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুস থেকে রক্তে বাহিত হয়, তখন এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ কার্বন মনোক্সাইড একমুখী বিক্রিয়ার মাধ্যমে অনিবর্তনীয়ভাবে হিমোগ্লোবিনের সাথে যুক্ত হয়ে কার্বোক্সিহিমোগ্লোবিন নামক যৌগ গঠন করে, যার ফলে অক্সিজেনের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য খুব অল্প পরিমাণ হিমোগ্লোবিন মুক্ত অবস্থায় থাকে, ফলে রক্তের মাধ্যমে খুব অল্প পরিমাণ অক্সিজেন অণু পরিবাহিত হয় এবং ধীরে ধীরে শ্বাসরোধ ঘটায়। বায়ুচলন বেশি হয় না এমন বদ্ধ কক্ষে আগুন লাগলে ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়, কারণ বায়ুতে কার্বন মনোক্সাইড সঞ্চিত হতে থাকে ধূমপানের সময়েও কিছু কার্বন মনোক্সাইড হিমোগ্লোবিনের সাথে যুক্ত হতে পারে।

চিকিৎসায় ব্যবহার

পরিসঞ্চালন

রক্ত 
রক্তদানের সময় সংগ্রহিত শিরাস্থ রক্ত

রক্ত সঞ্চারণের জন্য মানব দাতার নিকট থেকে রক্ত সংগ্রহ করা হয় এবং রক্ত ব্যাঙ্কে সঞ্চয় করে রাখা হয়। মানুষের রক্তের গ্রুপ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে, রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে এবিও রক্তগ্রুপ পদ্ধতি ও রেসাস রক্তগ্রুপ পদ্ধতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্গতিহীন গ্রুপের রক্ত পরিসঞ্চালনের ফলে গুরুতর, প্রায়শই প্রাণ-সংহারী জটিলতা তৈরি হতে পারে, সঙ্গতিপূর্ণ গ্রুপের রক্ত পরিসঞ্চালন নিশ্চিত করতে রক্তমিল বা ক্রসম্যাচিং করা হয়। শিরাভ্যন্তরীণ প্রয়োগ করা হয় এমন রক্তের উপাদানগুলো হলো অণুচক্রিকা, রক্তরস, ক্রায়োপ্রিসিপিটেট বা হিম‌-অধঃক্ষেপ ও সুনির্দিষ্ট তঞ্চন ফ্যাক্টর কনসেন্ট্রেট।

শিরাভ্যন্তরীণ প্রয়োগ

অনেক ধরনের ওষুধ (অ্যান্টিবায়োটিক থেকে শুরু করে কেমোথেরাপি বা রাসায়নিক চিকিৎসা ) অন্তঃশিরা প্রয়োগ করা হয়, কারণ এগুলো পরিপাক নালি থেকে পর্যাপ্তভাবে শোষিত হয় না। গুরুতর তাৎক্ষণিক রক্তপাতের পর, প্লাজমা বা রক্তরস প্রসারক নামে পরিচিত তরল প্রিপারেশনগুলো, শারীরবৃত্তীয় ঘনত্বে লবণের দ্রবণসমূহ (NaCl, KCl, CaCl2 ইত্যাদি), কলোয়ডাল দ্রবণসমূহ, যেমন ডেক্সট্র‍্যান, মানব সিরাম অ্যালবিউমিন অথবা ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা শিরাভ্যন্তরীণভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে। এ-রকম জরুরি অবস্থায়, রক্ত পরিসঞ্চালনের তুলনায় একটি রক্তরস প্রসারক প্রয়োগ অনেক বেশি ফলপ্রসূ জীবন-রক্ষাকারী পদ্ধতি, কারণ সঞ্চারিত লোহিত রক্তকণিকাসমূহের বিপাক রক্ত সঞ্চারণের পরপরই শুরু হয় না।

রক্তমোক্ষণ

আধুনিক তথ্য-প্রমাণ ভিত্তিক মেডিসিন-এ, রক্তমোক্ষণ কতক বিরল রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়, যেমন, হিমোক্রোমাটোসিস বা লৌহ-সঞ্চয় ব্যাধি ও পলিসাইথিমিয়া বা লালিকাধিক্য। তবে, ঊনবিংশ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত রক্তমোক্ষণ ও হিরুডোথেরাপি বা জোঁক চিকিৎসা ছিল খুবই প্রচলিত দুটি অপ্রমাণিত পদ্ধতি, কারণ হিপোক্রেটিসের মেডিসিন অনুসারে ভ্রমাত্মকভাবে অনেক রোগের কারণ হিসেবে রক্তের আধিক্যকে মনে করা হতো।

ব্যুৎপত্তি

রক্ত 
ইয়ান ইয়ান্সকিকে সর্বপ্রথম রক্তের চারটি ধরনের আবিষ্কারক হিসেবে গণ্য করা হয়।

ইংরেজি blood (প্রাচীন ইংরেজিতে blod) শব্দটির উদ্ভব হয়েছে জার্মানীয় ভাষা থেকে এবং অন্যান্য সকল জার্মানীয় ভাষায় একই রকম অর্থের সমোদ্ভাবিত শব্দ রয়েছে (যেমন, জার্মান Blut, সুইডিশ blod, গথিক blōþ)। কোনো ইন্দ-ইউরোপীয় গৃহীত ব্যুৎপত্তি নেই।

ইতিহাস

চিরায়ত গ্রিক মেডিসিন

রবিন ফহর‍্যাউস (একজন সুইডিশ চিকিৎসক যিনি ই‌এস‌আর আবিষ্কার করেছিলেন) বলেছিলেন যে, হিউমারিজম বা দেহরসবাদের প্রাচীন গ্রিক পদ্ধতি, যেখানে ভাবা হতো যে দেহ চারটি স্বতন্ত্র দৈহিক তরল ধারণ করে (ভিন্ন ভিন্ন ধাত সহযোগে), একটি স্বচ্ছ পাত্রে রক্ত তঞ্চনের পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। একটি কাঁচের পাত্রে রক্ত টেনে প্রায় এক ঘণ্টা রেখে দিলে, চারটি ভিন্ন স্তর দেখা যায়। তলদেশে একটি কালো পিণ্ড গঠিত হয় (কালো পিত্ত)। পিণ্ডের উপরে লোহিত রক্তকণিকার স্তর। এর উপরে শ্বেতকণিকার সাদা স্তর থাকে (শ্লেষ্মা)। শিরোভাগের স্তরটি অচ্ছ হলুদ সিরাম বা রক্তাম্বু (হলুদ পিত্ত)।

ধরন

১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে কার্ল ল্যান্ডস্টাইনার এবিও রক্তগ্রুপ পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। ইয়ান ইয়ান্সকি ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে সর্বপ্রথম রক্তকে চারটি শ্রেণিতে (A, B, AB এবং O) ভাগ করেন বলে স্বীকৃতি প্রদান করা হয় যা আজও ব্যবহৃত হচ্ছে। ১৯০৭ সালে প্রথমবারের মতো উপযুক্ততা নির্ণয়ে এ বি ও পদ্ধতি ব্যবহার করে রক্ত সঞ্চারণ করা হয়। ১৯১৪ সালের ২৭ শে মার্চ সর্বপ্রথম পরোক্ষ রক্ত সঞ্চারণ করা হয়। রেসাস ফ্যাক্টর আবিষ্কার হয় ১৯৩৭ সালে।

আরও দেখুন


তথ্যসূত্র


বহিঃসংযোগ


টেমপ্লেট:Blood টেমপ্লেট:Lymphocytes

Tags:

রক্ত ের বৈশিষ্ট্যাবলিরক্ত কাজরক্ত উপাদানসমূহরক্ত শারীরবৃত্তরক্ত বর্ণরক্ত রোগসমূহরক্ত চিকিৎসায় ব্যবহাররক্ত ব্যুৎপত্তিরক্ত ইতিহাসরক্ত আরও দেখুনরক্ত তথ্যসূত্ররক্ত বহিঃসংযোগরক্তঅক্সিজেনইংরেজি ভাষাকোষ (জীববিজ্ঞান)মানুষমেরুদণ্ডী প্রাণীরক্তকণিকাসংবহন তন্ত্র

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

তাহসান রহমান খানরাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বনলতা সেন (কবিতা)কৃত্তিবাস ওঝাযাকাতভারত বিভাজনহোমিওপ্যাথিসাপভারতের সংবিধানজাতীয় স্মৃতিসৌধমাওলানাচৈতন্য মহাপ্রভুমুহাম্মাদের স্ত্রীগণসাহাবিদের তালিকাবাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসরক্তশূন্যতাআবুল কাশেম ফজলুল হকজনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় (বাংলাদেশ)প্রাচীন ভারতআমশিশ্ন বর্ধনরেজওয়ানা চৌধুরী বন্যামুতাজিলাশাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়অকাল বীর্যপাতদারুল উলুম দেওবন্দক্রিকেটকুড়িগ্রাম জেলাপারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্রসমূহের তালিকাদর্শনইশার নামাজবাংলাদেশের জেলাঅরবরইসূর্য (দেবতা)মালদ্বীপবাংলাদেশের জেলাসমূহের তালিকাসাধু ভাষাআগরতলা ষড়যন্ত্র মামলারবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটোগল্পসামাজিকীকরণকিরগিজস্তানহিসাববিজ্ঞানবাংলাদেশে পালিত দিবসসমূহরানা প্লাজা ধসজাতিসংঘগাণিতিক প্রতীকের তালিকাআর্দ্রতাবাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীপেপসিইন্সটাগ্রাম১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনওপেকইহুদিঅলিউল হক রুমিইন্ডিয়ান সুপার লিগসামন্ততন্ত্রআলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়আয়তন অনুযায়ী এশিয়ার দেশসমূহের তালিকাসালাহুদ্দিন আইয়ুবি২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপর‍‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নঋতুআসিয়ানপেশারক্তমহাসাগরমহাদেশমাহিয়া মাহিপশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন, ২০২১পূরণবাচক সংখ্যা (ভাষাতত্ত্ব)বিশ্বায়নঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়রাধারূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্ররাষ্ট্রবিজ্ঞাননগরায়নভূগোলআবু হানিফা🡆 More