মলাস্কা: অমেরুদন্ডী প্রাণীর পর্ব

মলাস্কা বা মোলাস্কা (আরও পরিচিত বাংলায় কম্বোজপ্রাণ বা কম্বোজ প্রাণী নামেও) হচ্ছে অমেরুদন্ডী জীব পর্ব আর্থোপোডার পর দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্ব যার জীব মলাস্করা' বা মোলাস্করা' (/ˈmɒləsk/) প্রায় ৮৫,০০০  বিদ্যমান প্রজাতি মোলাস্ক হিসেবে স্বীকৃত হয়। জীবাশ্ম প্রজাতির সংখ্যা অনুমান করা হয় ৬০,০০০ থেকে ১০০,০০০ অধিক প্রজাতি। বর্ণনা হয়নি এমন প্রজাতির খুব বেশি।

কম্বোজপ্রাণ
সময়গত পরিসীমা: ক্যামব্রিয়ান পর্যায় ২–সাম্প্রতিক
কা
পা
ক্রি
প্যা

এক্সপ্রেশন ত্রুটি: অযাচিত < অপারেটর।

চারটি মোলাস্ক প্রজাতির একটি কোলাজ।
ঘড়িরকাটা মাফিক উপরে বাম দিক থেকে: হেলিক্স পোমাটিয়া (একটি উরদপদ), কমন অক্টোপাস (একটি শুঁড়ওয়ালা উরদপদ), টনিসেল্লা লাইনেটা (একটি কাইতেন), এবং আটলান্টিক সার্ফ ক্লাম (একটি দ্বিপুটক প্রাণ).
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: প্রাণীজগত
উপজগৎ: Eumetazoa
মহাপর্ব: Lophotrochozoa
পর্ব: মলাস্কা
বৈচিত্র্য
৮৫,০০০ স্বীকৃত জীবিত প্রজাতি
মলাস্কা: অমেরুদন্ডী প্রাণীর পর্ব
কর্নু আসপেরসাম (পূর্বনাম হেলিক্স আসপেরসা) – একটি বহু জনপরিচিত শামুক

মোলাস্ক হল বৃহত্তম সামুদ্রিক পর্ব, যা সমস্ত নামযুক্ত সামুদ্রিক জীবগুলোর প্রায় ২৩% নিয়ে গঠিত। এছাড়াও অসংখ্য মোলাস্ক মিঠা পানির মোলাস্ক তারা অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়, শুধুমাত্র আকার এবং শারীরবৃত্তীয় গঠনে নয়, আচরণ এবং বাসস্থানেও। পর্ব সাধারণত ৭ বা ৮ ভাগে বিভক্ত শ্রেণিবিন্যাসে বর্গসমূহে,যার মধ্যে দুটি সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত। শুঁড়ওয়ালা উরদপদ মোলাস্ক, যেমন: স্কুইড, কাটলফিশ এবং অক্টোপাস,সমস্ত অমেরুদন্ডী-এর মধ্যে সবচেয়ে স্নায়ুবিকভাবে উন্নত-এবং দৈত্য স্কুইড বা প্রকাণ্ড স্কুইড হল বৃহত্তম পরিচিত অমেরুদণ্ডী প্রজাতি। উরদপদ (শামুক এবং কৃমি এখন পর্যন্ত সর্বাধিক মোলাস্ক এবং মোট শ্রেণীবদ্ধ প্রজাতির প্রায় ৮০%। আধুনিককালে মোলাস্ককে সংজ্ঞায়িত করে এমন তিনটি সর্বজনীন বৈশিষ্ট্য হল একটি ম্যান্টল যার একটি উল্লেখযোগ্য গহ্বর শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং রেচন, একটি রাডুলা] (বাইভালভস) এবং স্নায়ুতন্ত্র এর গঠন। এই সাধারণ উপাদানগুলো ব্যতীত, মোলাস্কগুলো রূপতাত্ত্বিক বৈচিত্র্য প্রকাশ করে, তাই অনেক পাঠ্যপুস্তক তাদের বর্ণনাকে একটি "কাল্পনিক পূর্বপুরুষ মলাস্ক" এর উপর ভিত্তি করে (নীচের চিত্রটি দেখুন)।এর উপরে একটি একক, "লিমপেট-সদৃশ" উরদপদ খোল আছে, যা প্রোটিন এবং কাইটিন ( ক্যালসিয়াম কার্বনেট) নির্মিত। প্রাণীর নীচের অংশে একটি একক পেশীবহুল "পা" থাকে।যদিও মোলাস্কগুলো কোয়েলোমেট, কোয়েলম ছোট হতে থাকে।শরীরের প্রধান গহ্বর হল একটি হিমোকোয়েল যার মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালিত হয়; যেমন, তাদের সংবহনতন্ত্র প্রধানত মুক্ত। সাধারণত মোলাস্কের আহার ও পরিপাক ব্যবস্থায় একটি র‍্যাসিং "জিহ্বা", রেডুলা এবং একটি জটিল পরিপাকতন্ত্র রয়েছে যেখানে নির্গত শ্লেষ্মা এবং মাইক্রোস্কোপিক, পেশী-চালিত "চুল" সিলিয়া নামে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।সাধারণীকৃত মলাস্কে দুটি জোড়া নার্ভ কর্ড, অথবা তিনটি বাইভালভ নিম্নতর শ্রেণীভুক্ত থাকে।মস্তিষ্ক, একটি প্রজাতির মধ্যে, অন্ননালীকে ঘিরে থাকে।বেশিরভাগ মোলাস্কের চোখ আছে এবং সকলেরই রাসায়নিক, কম্পন এবং স্পর্শ সনাক্ত করার জন্য সংবেদনতন্ত্র রয়েছে।সবচেয়ে সহজ প্রকারের মোলাস্কের জননতন্ত্র নির্ভর করে বাহ্যিক নিষিক্তকরণ, তবে আরও জটিল পরিবর্তন ঘটে। প্রায় সকলেই ডিম উৎপন্ন করে, যেখান থেকে ট্রোকোফোর লার্ভা, আরও জটিল ভেলিগার লার্ভা বা ক্ষুদ্র প্রাপ্তবয়স্করা বের হতে পারে। কোলোমিক গহ্বর হ্রাস পেয়ে। তাদের মলত্যাগের জন্য একটি উন্মুক্ত সংবহনতন্ত্র এবং কিডনির মতো অঙ্গ রয়েছে।

৫৪১-৪১৫ খ্রীষ্টপূর্বে ক্যামব্রিয়ান সময়কালে উরদপদ, সেফালোপড এবং বাইভালভের উপস্থিতির জন্য ভাল প্রমাণ বিদ্যমান যা ৪ মিলিয়ন বছর আগের।যাইহোক, পূর্বপুরুষ লোফোট্রোকোজোয়া থেকে মোলাস্কের উদ্ভব এবং তাদের সুপরিচিত জীব ও ফসিল রূপের বৈচিত্র্যের বিবর্তনীয় ইতিহাস এখনও বিজ্ঞানীদের মধ্যে জোরালো বিতর্কের বিষয়।

মলাস্কা: অমেরুদন্ডী প্রাণীর পর্ব
ফিলিপাইনের জাতীয় জাদুঘর এ প্রদর্শিত অ্যামোনাইট মলাস্কের জীবাশ্ম

মোলাস্ক শারীরিকভাবে আধুনিক মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উৎস ছিল এবং এখনও রয়েছে।খাদ্যে বিষক্রিয়ার একটি ঝুঁকি বিদ্যমান, বিষাক্ত পদার্থ থেকে যা নির্দিষ্ট অবস্থার অধীনে নির্দিষ্ট মোলাস্কে জমা হতে পারে এবং এর কারণে অনেক দেশে এই ঝুঁকি কমানোর জন্য নিয়ম রয়েছে।শত শত বছর ধরে মোলাস্কগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিলাস দ্রব্যের উৎস ছিল, বিশেষ করে মুক্তা, টাইরিয়ান বেগুনি রঞ্জক এবং সমুদ্র সিল্ক হিসেবে।এদের শেলগুলোও কিছু প্রাক-শিল্প সমাজে অর্থ হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে।

মুষ্টিমেয় কিছু প্রজাতিকে কখনও কখনও মানুষের ক্রিয়াকলাপের জন্য বিপজ্জনক কীট হিসাবে বিবেচনা করা হয়।নীল আংটিযুক্ত অক্টোপাস এর কামড় প্রায়শই মারাত্মক হয় এবং অক্টোপাস অ্যাপলিয়ন এর কামড় প্রদাহ ঘটায় যা এক মাসের বেশি স্থায়ী হতে পারে।বৃহৎ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় শঙ্কু শেল এর কয়েকটি প্রজাতির দংশনও মেরে ফেলতে পারে, তবে এগুলো অত্যাধুনিকভাবে ও সহজে উৎপাদিত হয়,কারণ বিষগুলো স্নায়বিক গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।শিস্টোসোমিয়াসিস (বিলহারজিয়া, বিলহারজিওসিস বা শামুক জ্বর নামেও পরিচিত) জলের শামুকের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সংক্রামিত হয় এবং প্রায় ২০০ মিলিয়ন মানুষকে আক্রান্ত করে।

বুৎপত্তি

মোলাস্ক (mollusc) এবং মোলাস্ক(mollusk) শব্দ দুটিই ফরাসি মোলাস্ক(mollusque) থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যা ল্যাটিন মোলাস্কাস (molluscus) থেকে এসেছে, মলিস অর্থ নরম ।মোলাস্কাস এরিস্টটলের τὰ μαλάκια এর একটি অভিযোজন ছিল ta malákia (নরম; < μαλακός malakós "soft"), যা তিনি ক্যাটলফিশের সাথে অন্যান্য বিষয়ের সাথে প্রয়োগ করেছিলেন। মোলাস্কের বৈজ্ঞানিক অধ্যয়নকে সেই অনুযায়ী ম্যালাকোলজি বলা হয়।

মোল্লাসকোইডা (Molluscoida) নামটি পূর্বে ব্র্যাচিওপড, ব্রায়োজোয়ান এবং টিউনিকেট সমন্বিত প্রাণীজগতের একটি বিভাগ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছিল, তিনটি দলের সদস্যদের কিছুটা মোলাস্কের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বলে মনে করা হয়েছিল।এখন জানা গেছে, এই গোষ্ঠীগুলোর মোলাস্কের সাথে কোনও সম্পর্ক নেই এবং একে অপরের সাথে খুব কম সম্পর্কিত, তাই মোল্লাসকোইডা নামটি পরিত্যাগ করা হয়েছে।

বৈশিষ্ট্য

  • এদের দেহ নরম। নরম দেহটি শক্ত খোলস ম্যান্টল দিয়ে আবৃত।
  • পেশিবহুল পা দিয়ে এরা চলাচল করে।
  • বহিঃত্বক ,ফুসফুস বা ফুলকার সাহায্যে শ্বাসকার্য চালায়।
  • এরা বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রাণী।
  • এরা অধিকাংশই সামুদ্রিক।
  • সিলোমেট,অধিকাংশ দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম।
  • রক্তে হিমোসায়ানিন (haemocyanin) ও অ্যামিবোসাইট (amoebocyte) কণিকা থাকে।
  • দেহে ম্যান্টল নামক পাতলা আবরণ থাকে।
  • উদাহরণ- শামুক, অক্টোপাস, ললিগো, সেপিয়া প্রভৃতি।

তথ্যসূত্র


পর্ব (জীববিজ্ঞান) মলাস্কা: অমেরুদন্ডী প্রাণীর পর্ব 
পর্ব: পরিফেরা  · নিডারিয়া  · প্লাটিহেলমিনথিস  · নেমাটোডা  · এনিলিডা  · আর্থোপোডা  · মলাস্কা  · একাইনোডার্মাটা  · কর্ডাটা

টেমপ্লেট:গাজী আজমল


Tags:

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

ঐশ্বর্যা রাইনিরাপদ যৌনতামহাদেশকোস্টা রিকাফিলিস্তিনবিভিন্ন ধর্ম ও বিশ্বাসের তালিকাপারাস্বাধীনতাআন্তর্জাতিক টুয়েন্টি২০ ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকাবাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীগারোবাটামুসাপ্রথম বিশ্বযুদ্ধসূরা নাসরক্ত২০২৪ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকিশোরগঞ্জ জেলাফরাসি বিপ্লবের কারণসুভাষচন্দ্র বসুযাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রক্যাসিনোযোনি পিচ্ছিলকারকজেলেমসজিদে হারামগঙ্গা নদীযশোর জেলালিঙ্গ উত্থান ত্রুটিবাংলাদেশের স্থল বন্দরসমূহের তালিকা২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবায়ুদূষণবাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকুরআনসিঙ্গাপুর২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপজনি সিন্সভাইরাসছোলাসালমান এফ রহমানবেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া গওহরডাঙ্গা বাংলাদেশবঙ্গবন্ধু-১পিনাকী ভট্টাচার্যক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনস্ক্যাবিসমোশাররফ করিমপানিপথের প্রথম যুদ্ধশর্করালিওনেল মেসিবিশ্ব ব্যাংকজাতীয় গণহত্যা স্মরণ দিবসজাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদআর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলটুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিকের রেকর্ড তালিকাক্যান্সারশান্তিনিকেতনখালেদা জিয়াআইজাক নিউটনতুরস্কডুগংক্লিওপেট্রাপরমাণুগায়ত্রী মন্ত্রবাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়হেপাটাইটিস সিমুহাম্মাদের বংশধারাবিকাশবাংলাদেশের কোম্পানির তালিকাধান২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগমরিয়ম বিনতে ইমরানশ্রীকৃষ্ণকীর্তনপুনরুত্থান পার্বণতৃণমূল কংগ্রেসদ্বৈত শাসন ব্যবস্থাবাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলজ্বীন জাতিবাঙালি হিন্দু বিবাহসংস্কৃতিওয়েবসাইট🡆 More