জীববিদ্যা জগৎ

জগৎ বা রাজ্য হচ্ছে জীববিদ্যার একটি বিশেষ শ্রেণিবিন্যাসবিদ্যার দ্বিতীয় বৃহত্তম ট্যাক্সনমিক ধাপ যা বর্গের উপরে ও পর্বের নিচে অবস্থান করে।

জীববিদ্যা জগৎজীবনঅধিজগৎজগৎপর্বশ্রেণীবর্গপরিবারগণপ্রজাতি
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাসের প্রধান আটটি শ্রেণীবিন্যাস ক্রমের নিন্মতম থেকে উচ্চতম পর্যায় পর্যন্ত ক্রমবিভক্তি। অন্তর্বর্তী অপ্রধান ক্রমগুলো দেখানো হয়নি।

সভ্যতার শুরু থেকে এ পর্যন্ত জীবজগতকে শ্রেণিবিন্যাস করার জন্য বহু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুরুতে শ্রেণিবিন্যাসের ভিত্তি বিজ্ঞানসম্মত ছিল না। তখন শ্রেণিবিন্যাস ছিল মূলত আমাদের প্রয়োজন ভিত্তিক। যেমনঃ খাদ্য, আশ্রয় এবং পোষাকের জন্য। নিউটন সর্বপ্রথম কিছুটা বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তির উপর শ্রেণিবিন্যাস করার উদ্যোগ নেন। তিনি কিছু সাধারণ অঙ্গসংস্থানগত (morphological) বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে উদ্ভিদদের তিনটি বিভাগে ভাগ করেন - বৃক্ষ (trees), গুল্ম (shrubs) এবং লতা (herbs)। তিনি প্রাণীদের দুটি বিভাগে ভাগ করেন - লাল রক্তযুক্ত প্রাণী এবং লাল রক্তবিহীন প্রাণী। ক্যরোলাস লিনিয়াসের সময়ে উদ্ভিদ জগৎ এবং প্রাণী জগৎ - এই দুই রাজ্যের শ্রেণিবিন্যাস গঠিত হয়। এই দুই রাজ্যের শ্রেণিবিন্যাস বিংশ শতক পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু, এই দুই রাজ্যের শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি প্রোক্যারিওট এবং ইউক্যারিওটদের, এককোষী এবং বহুকোষীদের, সালোকসংশ্লেষকারী (সবুজ শৈবাল) এবং ক্লোরোফিলবিহীন পরভোজী (ছত্রাক) জীবদের পৃথক করেনি। জীবজগতকে উদ্ভিদ রাজ্যে এবং প্রাণী রাজ্যে শ্রেণিবিন্যাস খুব সরলভাবে করা হয়েছিল এবং বুঝতেও সহজ ছিল। কিন্তু, বিপুল সংখ্যক জীব উদ্ভিদ বা প্রাণী রাজ্যের একটার মধ্যেও পড়ছিল না। তাই, দীর্ঘকাল যাবৎ ব্যবহৃত হওয়া দুই রাজ্যের শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি অপর্যাপ্ত বলে পরিগণিত হল। জীব জগতকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে ৷ যথাঃ

  1. মনেরা
  2. প্রোটিস্টা
  3. ছত্রাক
  4. প্লান্টি
  5. অ্যানিম্যালিয়া

ইতিহাস

দুই রাজ্য

জীবকে কিছু শ্রেণিতে ভাগ করার প্রয়াস আদিকাল থেকেই  চলে আসছে। অ্যারিস্টটল (৩৮৪-৩২২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) তার রচিত ‘হিস্টোরিয়া এনিমেলিয়াম’ গ্রন্থে প্রাণীদেরকে শ্রেণিবিন্যাস করার চেষ্টা করেন। সেই কালেই তার শিষ্য থিওফ্রাস্টাস (৩৭১-২৮৭ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) তার রচিত ‘হিস্টোরিয়া প্ল্যানটেরাম’ গ্রন্থে বৃক্ষের শ্রেণিবিন্যাস করার চেষ্টা করেন। কার্ল লিনিয়াস (১৭০৭-১৭৭৮) আধুনিক জীববৈজ্ঞানিক নামকরণের ভিত্তি গড়ে তুলেন। তিনি জীবজগতকে প্রধান দুই ভাগে ভাগ করেন - Regnum Animale (প্রাণি জগত) ও Regnum Vegetabile (উদ্ভিদ জগত)। লিনিয়াস তৃতীয় আরেকটি জগত দাড় করান যার নাম তিনি দেন Regnum Lapideum (খনিজ পদার্থ)

জীববিদ্যা জগৎ 
দুই রাজ্য

তিন রাজ্য

১৬৭৪ সালে অ্যন্টনি ভন লিউয়েন হুক, অনুজীববিজ্ঞানের জনক, লন্ডনের রয়েল সোসাইটিতে প্রথম অনুবীক্ষণিক এককোষী জীবের পর্যবেক্ষণের কথা উল্লেখ করেন। এর আগে অনুবীক্ষণিক জীবের অস্তিত্ব সম্পর্কে কারো জানা ছিলো না। শুরুর দিকে এই এককোষী অনুজীবদেরকে জীবজগতে কোনোভাবে রেখে দেওয়া হতো। ১৮৬০ সালে জন হগ একটি তৃতীয় রাজ্যে, প্রোটোকটিস্টা, এর প্রস্তাব করেন এবং Regnum Lapideum কে চতুর্থ রাজ্য হিসেবে গণ্য করেন।

১৮৬৬ সালে আর্নেস্ট হেকেলও তৃতীয় একটি রাজ্যের গুরুত্ব উপলব্ধি করেন এবং তিনি তার নাম দেন প্রোটিস্টা, যারা না প্রাণি রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত না উদ্ভিদ রাজ্যের অন্তর্গত। তবে তিনি Regnum Lapideum রাজ্য হিসেবে গণ্য করেননি। এককোষী প্রাণিদের নিয়ে তিনি যে রাজ্য দেন তাঁকে তিনি বলেন, প্রোটিস্টা (Protista) এবং বহুকোষী জীবদেরকে তিনি দুই রাজ্যে ভাগ করেন ১. প্রাণীজগৎ ও ২. উদ্ভিদজগৎ

জীববিদ্যা জগৎ 
তিন রাজ্য

চার রাজ্য

অনুজীববিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধন হলে জানতে পারা যায় এককোষী জীবদের মাঝে আবার দুইটি ভাগ রয়েছে। কিছু এককোষী জীবের নিউক্লিয়াস সুগঠিত হয় আর কিছু জীবের নিউক্লিয়াস সুগঠিত হয়না। ১৯২৫ সালে এডওয়ার্ড চ্যটন দুইটি নতুন শব্দ জীববিজ্ঞানে আনেন ‘প্রোক্যরিয়ট’ (যাদের নিউক্লিয়াস সুগঠিত নয়) ও ইউক্যরিয়ট (যাদের নিউক্লিয়াস সুগঠিত)। ১৯৩৮ সালে হার্বার্ট এফ. কোপল্যন্ড জীবজগৎকে চার রাজ্যে ভাগ প্রস্তাব দান করেন। এই চারটি রাজ্যের নাম হলো – ১. মনেরা ২. প্রোটিস্টা ৩. প্লান্টি ৪. এনিমেলিয়া। বর্তমানে শনাক্তকৃত ব্যকটেরিয়া ও আর্কিয়া এই মনেরা রাজ্যের অন্তর্গত। ১৯৬০ এর দিকে রজার স্টেনিয়ার ও সি.বি. ভ্যান নীল এই রাজ্যের প্রচারে সহায়তা করেন এবং এই রাজ্যের উর্দ্ধে দুইটি অধিজগতে ভাগ করেন, (১) প্রাককেন্দ্রিক অধিজগৎ ও (২) সুকেন্দ্রিক অধিজগৎ ।

জীববিদ্যা জগৎ 
চার রাজ্য

পাঁচ রাজ্য

হুইটটেকার পরবর্তীতে ফানজাইকে আলাদাভাবে একটি রাজ্য হিসেবে বিবেচনা করার প্রস্তাব করেন। ১৯৬৯ সালে হুইটটেকার তার এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করেন যার ফলে পাঁচ রাজ্যের জীবজগৎ আমরা পাই। এটি প্রধানত পুষ্টির উপর বিবেচনা করে তৈরি করা হয়েছিলো। এই পাঁচ রাজ্যকে আমরা দুই অধি জগতের সাথে যোগ করতে পারে। হুইটটেকারের এই পত্র প্রকাশের ফলে উচ্চ বিদ্যালয়ের বইগুলোতে এই পাঁচ রাজ্যের সিস্টেমটি ব্যবহার শুরু হয়।

জীববিদ্যা জগৎ 
পাঁচ রাজ্য

ছয় রাজ্য

১৯৭৭ সালে, রাবোসোমাল আরএনএ এর ভিত্তিতে কার্ল ওস ও তার সহযোগীরা মনেরাকে দুই ভাগে ভাগ করার চিন্তা করেন। (১) ইউব্যকটেরিয়া (যা পরবর্তীতে যাদেরকে ব্যকটেরিয়া নামকরণ করা হয়) এবং (২) আর্কিব্যকটেরিয়া (যাদেরকে পরবর্তীতে আর্কিয়া নামকরণ করা হয়)। এর ফলে ছয় রাজ্যের জীবজগৎ আমরা দেখতে পাই।

জীববিদ্যা জগৎ 
ছয় রাজ্য

তথ্যসূত্র

Tags:

জীববিদ্যা জগৎ ইতিহাসজীববিদ্যা জগৎ তথ্যসূত্রজীববিদ্যা জগৎপর্ব (জীববিদ্যা)বর্গ (জীববিদ্যা)

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

ভাষা আন্দোলন দিবসকলকাতাবাংলাদেশের জনমিতিআন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলমুজিবনগর সরকারভূমিকম্পবিদ্যাপতিবাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীবাংলাদেশের বন্দরের তালিকাজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশপশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন, ২০২১কাজী নজরুল ইসলামের রচনাবলিবারো ভূঁইয়াউপজেলা পরিষদসানরাইজার্স হায়দ্রাবাদসালমান বিন আবদুল আজিজপানিএম. জাহিদ হাসানতাসনিয়া ফারিণসেলজুক রাজবংশমহাত্মা গান্ধীবাংলাদেশের মন্ত্রিসভা২০২২ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জিম্বাবুয়ে সফরআকবরউদ্ভিদকোষনেপালআমার দেখা নয়াচীনবাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীদের তালিকালক্ষ্মীপুর জেলাজয়নুল আবেদিনদ্বাদশ জাতীয় সংসদ সদস্যদের তালিকাদুধবাংলাদেশের সংবিধানের সংশোধনীসমূহজয় চৌধুরীমমতা বন্দ্যোপাধ্যায়বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মরত জেনারেলদের তালিকাইব্রাহিম (নবী)ঢাকা জেলাবাংলাদেশের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাইসতিসকার নামাজবাংলাদেশের রাজনৈতিক দলসমূহের তালিকাথ্যালাসেমিয়াডাচ্-বাংলা ব্যাংক পিএলসিবাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিউসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতানদের তালিকাসাজেক উপত্যকা২৬ এপ্রিলসিন্ধু সভ্যতাপাট্টা ও কবুলিয়াতন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালবাংলাদেশের উপজেলার তালিকাফাতিমাবাংলাদেশের জেলাপ্রাণ-আরএফএল গ্রুপলোকনাথ ব্রহ্মচারীবাংলাদেশের সংবাদপত্রের তালিকামঙ্গল গ্রহআসামশবনম বুবলিমিয়ানমারআল্লাহব্যাংকসুকান্ত ভট্টাচার্যআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপবিভিন্ন ধর্ম ও বিশ্বাসের তালিকামৃণালিনী দেবীবিদ্রোহী (কবিতা)সাধু ভাষাঅবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরমোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনধর্মধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরাসতীদাহদেশ অনুযায়ী ইসলামবাংলা শব্দভাণ্ডার🡆 More