সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস (সংক্ষেপে তৃণমূল কংগ্রেস; পূর্বনাম পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল কংগ্রেস) ভারতের একটি রাজনৈতিক দল। ১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ভেঙে এই দল প্রতিষ্ঠিত হয়। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান নেত্রী হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্তমানে এটি মোট সদস্য সংখ্যার বিচারে ভারতীয় সংসদের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল।
সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস | |
---|---|
সভাপতি | মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় |
মহাসচিব | অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় |
লোকসভায় নেতা | সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় |
রাজ্যসভায় নেতা | ডেরেক ও'ব্রায়েন |
প্রতিষ্ঠাতা | মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় |
প্রতিষ্ঠা | ১ জানুয়ারি ১৯৯৮ |
সদর দপ্তর | ৩০ বি, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট, কলকাতা – ৭০০ ০২৬ |
ছাত্র শাখা | সর্বভারতীয় তৃণমূল ছাত্র পরিষদ |
যুব শাখা | সর্বভারতীয় তৃণমূল যুব কংগ্রেস |
মহিলা শাখা | সর্বভারতীয় তৃণমূল মহিলা কংগ্রেস |
শ্রমিক শাখা | সর্বভারতীয় তৃণমূল ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস |
কৃষক শাখা | সর্বভারতীয় তৃণমূল কিষাণ কংগ্রেস |
ভাবাদর্শ | গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র সাম্যবাদ-বিরোধিতা সামাজিক উদারনীতি ভারতীয় জাতীয়তাবাদ সামাজিক গণতন্ত্র |
জাতীয় আহ্বায়ক | সুখেন্দু শেখর রায় |
লোকসভায় আসন | ২৩ / ৫৪৫ |
রাজ্যসভায় আসন | ১৩ / ২৪৫ |
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা-এ আসন | ২২২ / ২৯৪ |
ওয়েবসাইট | |
aitcofficial | |
ভারতের রাজনীতি রাজনৈতিক দল নির্বাচন |
২০১১ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বাম-শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস-এর সঙ্গে যৌথভাবে ২২৭টি আসনে জয়লাভ করে (এককভাবে ১৮৪টি আসনে) সরকার গঠন করে। এইসময় ভারতের শাসক সংযুক্ত প্রগতিশীল জোট বা ইউপিএ-এর দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক দল ছিল তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু, ২০১২ সালে ইউপিএ থেকে বেরিয়ে আসে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস। ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস এককভাব ২১৫টি আসনে জয়লাভ করে (মোট ২৯৪টি আসনের মধ্যে) পুনরায় সরকার গঠন করে।
সৃষ্টির কারন
১৯৯৩ সালে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের সময় বিধানসভার নির্বাচনে অসংখ্য ভোট জালিয়াতী ও ব্যাপক ছাপ্পা ভোট হতো। যার ফলে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন অনেকটাই দুর্নীতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলো। ১৯৯৩ সালে ২১শে জুলাই পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস পক্ষ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থিত সদস্যগন উক্ত দিনে সচিত্র ভোটার কার্ডের দাবীতে মহাকরণ অভিযানে অহিংস সত্যাগ্রহ পদযাত্রা করেন। কিন্ত তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের অধিনস্ত পুলিশ, মিছিলে গুলি চালনা করে, যায় ফলে ১৩ জন তরুনের প্রাণ যায়।
এই ঘটনার প্রতিবাদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আইন অমান্য ডাক দিলে প্রদেশ কংগ্রেস তাহায় অসহযোগীতা করে। ঐতিহাসিক গবেষকদের মতে প্রদেশ কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূল কংগ্রেস দলটি তৈরী হবার এই ঘটনাটি ছিলো অন্যতম কারন।
১৩ জন শহীদ-
বন্দন দাস
মুরারী চক্রবর্তী
রতন মন্ডল
বিশ্বনাথ রায়
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
অসীম দাস
কেশব বৈরাগী
শ্রীকান্ত শর্মা
দিলীপ দাস
রঞ্জিত দাস
প্রদীপ রায়
মহম্মদ খালেক
ইনু মিঞা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার নিজস্ব রাজনৈতিক দল হিসেবে 'তৃণমূল কংগ্রেস' প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় নতুন দলটি ভারতের নির্বাচন কমিশনে নথিভুক্ত হয়। কমিশন তৃণমূল কংগ্রেসকে "জোড়া ঘাসফুল" প্রতীক দেয়। ১৯৯৯ সালে তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়।
১৯৯৮ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ৭টি আসন জয় করে। ১৯৯৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধে তৃণমূল কংগ্রেস ৮টি আসনে জয়ী হয়। ২০০০ সালে তৃণমূল কলকাতা পৌরসংস্থায় ক্ষমতায় আসে। ২০০১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে ৬০টি আসনে জয়লাভ করে। ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধে তৃণমূল কংগ্রেস মাত্র একটি আসনে জয়লাভ করে। ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল একক ভাবে লড়ে ৩০টি আসনে জেতে। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাথে জোট বেঁধে লড়ে ২০টি আসনে জেতে।
মা-মাটি-মানুষ হল তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান ও বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী দ্বারা উদ্ভাবিত একটি প্রাথমিক স্লোগান। স্লোগানটি ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময় পশ্চিমবঙ্গে খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পরে মমতা ব্যানার্জী একই শিরোনামের একটি বাংলা বইও লেখেন। এছাড়াও একটি গানের থিম একই শিরোনাম ধারণ করা হয়েছে। জুন ২০১১ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এটি সে সময়ে ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক স্লোগানের তালিকায় এটি ষষ্ঠ অবস্থানে ছিল।অভিযোগ রয়েছে, এই স্লোগান এর আগেই বাংলাদেশে প্রচলিত ছিল। বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির’র চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এই স্লোগান অনেক আগেই দিয়েছেন। মমতা সেখান থেকে বহুল প্রচলিত স্লোগানটি নকল করেছেন।
জাগো বাংলা হল সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস -এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার বাংলা মুখপত্র। ২০০৪ সাল থেকে সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসাবে এটি প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন সৃঞ্জয় বোস। পত্রিকাটি ২০২১ সালের ২১ জুলাই তারিখ থেকে দৈনিক প্রকাশ শুরু হয়।
তৃণমূল কংগ্রেস সংগঠনটি যেহেতু কংগ্রেস দলের ভাঙনে সৃষ্টি; তাই এই সংগঠনটির কর্মসূচি অনেকটা কংগ্রেসী ঘরানার। এছাড়াও দলটি ২০০২ সালে জাতীয় বামপন্থী(কমিউনিষ্ট) ধারণা সংযুক্ত করে।
এছাড়াও বিপ্লবীদের জীবনী আলোচনা, গান্ধী ধারায় জনসেবা, বিপ্লবী ধারায় গনআন্দোলনে অগ্রণী ভুমিকা পালন করে।
২০২১সালে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ং স্বয়ংসেবক সংঘ ও বিজেপির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তারা সুভাষবাদী-সমাজবাদী ধারণা গ্রহন করে। স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপ্লবীদের স্মৃতিরক্ষার্থে তরুন যুবকদের নিয়ে "জয় হিন্দ বাহিনী" গঠন করে। ব্যায়াম, শরীরচর্চা, আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ, স্বদেশপ্রেম, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আদর্শচেতনা জাগ্রত, অঞ্চল রক্ষা, নারী ও শিশুদের রক্ষা ইত্যাদি এই বাহিনীর কর্মসুচী।
এছাড়াও গ্রামীন ও মফস্বল এলাকায় নারী জাগরন ও নারীদের বৈপ্লবিক চেতনা, স্বদেশচেতনার স্ফুরন, আত্মরক্ষা ইত্যাদির কারনে "বঙ্গধ্বনী বাহিনী" গঠন হয়।
২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ও তার জোটসঙ্গীরা পশ্চিমবঙ্গে মোট ২৬টি আসনে জয়লাভ করেছিল। এর মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছিল ১৯টি আসন, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস পেয়েছিল ৬টি আসন ও এসইউসিআই পেয়েছিল ১টি আসন।
২০১০ সালের কলকাতা পৌরসংস্থার নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ১৪১টি আসনের মধ্যে ৯৭টি আসনে জয়লাভ করে। এই নির্বাচনে বিধাননগর (সল্টলেক) সহ অধিকাংশ পুরসভাতেও তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসে।
২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে যৌথভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারের পতন ঘটিয়ে ২২৭টি আসনে (এককভাবে ১৮৪টি আসনে) জয়লাভ করে (মোট ২৯৪টি আসনের মধ্যে) সরকার গঠন করে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীরূপে শপথ গ্রহণ করেন।
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১২ তে, বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ সহ অন্যান্য ইস্যুতে সংঘাত ঘটায় তৃণমূল কংগ্রেস ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সংযুক্ত প্রগতিশীল জোট বা ইউপিএ-এর থেকে বেরিয়ে আসে।
২০১৪ সালে ভারতের লোকসভার নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস এককভাবে লড়ে ৩৪টি আসনে জয়লাভ করে।
২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস এককভাবে ২১১টি আসনে জয়লাভ করে (মোট ২৯৪টি আসনের মধ্যে) সরকার গঠন করে। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীরূপে পুনরায় শপথ পাঠ করেন।
২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর ভারতের নির্বাচন কমিশন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসকে একটি জাতীয় দল হিসেবে ঘোষণা করে। কারণ, উক্ত নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস পাঁচটি আলাদা আলাদা রাজ্য (পশ্চিমবঙ্গ, মণিপুর, ত্রিপুরা, ঝাড়খণ্ড ও অসম) থেকে ৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। ২০২৩ সালে এটি জাতীয় দলের তকমা হারায় ও স্বীকৃত রাজ্য দল হিসেবে মর্যাদা লাভ করে।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article তৃণমূল কংগ্রেস, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.