দারুল উলুম দেওবন্দ (আরবি: دارالعلوم دیوبند) হল ভারতের একটি মাদরাসা। এখান থেকে দেওবন্দি আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর জেলার দেওবন্দ নামক স্থানে এই মাদ্রাসার অবস্থান। ১৮৬৬ সালে বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ইসলামি আলেমগণ এটির প্রতিষ্ঠা করেন। মুহাম্মদ কাসেম নানুতুবি তাদের প্রধান ছিলেন। অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন মাওলানা রশীদ আহমেদ গাঙ্গুহী ও সৈয়দ আবিদ হুসাইন। ইসলামি শিক্ষার প্রসারে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এটি ভারতের মুসলিম সমাজের নানা অসংগতি, কুপ্রথা ও স্থানীয় আচরণকে সংস্কার করে শরিয়তের নৈতিকতা ও আদবকে প্রতিস্থাপন করতে পেরেছিল এবং মুসলিম সমাজের ইসলামায়ন প্রক্রিয়াকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিল। ঔপনিবেশিক ও অমুসলিম অধ্যুষিত ভারতে মুসলমানদোর ধর্ম ও সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার পথ দেখিয়েছে।
دارالعلوم دیوبند | |
ধরন | কওমি মাদ্রাসা |
---|---|
স্থাপিত | ৩০ মে ১৮৬৬ |
প্রতিষ্ঠাতা | আকাবিরে সিত্তাহ |
বাজেট | ৩৮,২৩,৬০,০০০ রুপি (২০২০) |
আচার্য | আবুল কাসেম নোমানী |
অবস্থান | , , |
ওয়েবসাইট | www |
দেওবন্দ ছিল মুহাম্মদ কাসেম নানুতুবির শ্বশুরালয়। সেখানে গেলে তিনি সাত্তা মসজিদে নামাজ আদায় করতেন। হাজী আবেদ হোসেন ছিলেন সাত্তা মসজিদের ইমাম। মাওলানা জুলফিকার আলী ও মাওলানা ফজলুর রহমান অত্র এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। এসব ব্যক্তিবর্গ নামাযান্তে হাজী আবেদ হোসেনের হুজরায় প্রায় সমবেত হতেন। দেশের এহেন পরিস্থিতি তাদেরকেও ভাবিয়ে তুলেছিল ভীষণভাবে। তারা সবচেয়ে বেশি ভাবতেন ইসলামী শিক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে! কিন্তু বিকল্প কোন পথ কেউ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। দীর্ঘ ৬/৭ বছর এভাবে কেটে গেল। ১৮৬৬ সালে মাওলানা কাসেম নানুতুবী দেওবন্দের দেওয়ান মহল্লায় স্বীয় শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসেন। বাড়ি সংলগ্ন সাত্তা মসজিদের ইমাম হাজী আবিদ হোসানের সাথে মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হওয়ার পর সেখানেই একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অভিমত ব্যক্ত করেন।
একদিন সাত্তা মসজিদের ইমাম হাজী আবেদ হোসেন ফজরের নামাজান্তে ইশরাকের নামাজের অপেক্ষায় মসজিদে মোরাকাবারত ছিলেন। হঠাৎ তিনি ধ্যানমগ্নতা ছেড়ে দিয়ে নিজের কাঁধে রুমালের চার কোণ একত্রিত করে একটি থলি বানালেন এবং তাতে নিজের পক্ষ থেকে তিন টাকা রাখলেন। অতঃপর তা নিয়ে তিনি রওয়ানা হয়ে গেলেন মাওলানা মাহতাব আলীর কাছে। তিনি সোৎসাহে ৬ টাকা দিলেন এবং দোয়া করলেন। মাওলানা ফজলুর রহমান দিলেন ১২ টাকা, হাজী ফজলুল হক দিলেন ৬ টাকা। সেখান থেকে উঠে তিনি গেলেন মাওলানা জুলফিকার আলীর নিকট। জ্ঞানানুরাগী এই ব্যক্তিটি দিলেন ১২ টাকা। সেখান থেকে উঠে এই দরবেশ সম্রাট “আবুল বারাকাত” মহল্লার দিকে রওয়ানা হলেন। এভাবে ২০০ টাকা জমা হয়ে গেল এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত জমা হল ৩০০ টাকা। এভাবে বিষয়টি লোকমুখে চর্চা হতে বেশ টাকা জমে যায়। জনগণের উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখে তিনি মিরাটে কর্মরত মাওলানা কাসেম নানুতুবির নিকট এই মর্মে পত্র লিখেন যে, আমরা মাদ্রাসার কাজ শুরু করে দিয়েছি আপনি অনতিবিলম্বে চলে আসুন। চিঠি পেয়ে নানুতুবী মোল্লা মাহমুদকে শিক্ষক নিযুক্ত করে পাঠিয়ে দিলেন এবং তার মাধ্যমে মাদ্রাসার কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে চিঠি লিখে দিলেন। এভাবেই গণচাঁদার উপর ভিত্তি করে ছোট্ট একটি ডালিম গাছের নিচে দেওবন্দ মাদ্রাসার গোড়াপত্তন হয়। মোল্লা মাহমুদ সর্বপ্রথম শিক্ষাদান করেন সর্বপ্রথম ছাত্র মাহমুদকে। যিনি পরবর্তীতে শায়খুল হিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দি দেওবন্দী নামে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন।
দারুল উলুম দেওবন্দের প্রতিষ্ঠাতারা আকাবিরে সিত্তাহ নামে পরিচিত। আকাবিরে সিত্তাহ (আরবি: ﺃﻛﺎﺑﺮ السته) শব্দটি দুটি আরবি শব্দ নিয়ে গঠিত। আকাবির ও সিত্তাহ। আকবার শব্দের বহুবচন আকাবির। এর অর্থ বড় ব্যক্তিত্ব, সম্মানিত ব্যক্তি। আর সিত্তাহ শব্দের অর্থ ছয়। সুতরাং আকাবিরে সিত্তাহ’র শাব্দিক অর্থ ছয়জন সম্মানিত ব্যক্তি। পারিভাষিক অর্থে আকাবিরে সিত্তাহ বলতে দেওবন্দ আন্দোলন তথা দারুল উলুম দেওবন্দের প্রতিষ্ঠাতা ছয়জন ব্যক্তিকে বোঝায়। ছয় মনীষীর নামঃ
ক্রম | নাম | জন্ম | মৃত্যু | প্রতিষ্ঠাকালীন বয়স |
---|---|---|---|---|
১ | মুহাম্মদ কাসেম | ১৮৩২ | ১৮৮০ | ৩৪ |
২ | মুহাম্মদ ইয়াকুব | ১৮৩৩ | ১৮৮৪ | ৩৩ |
৩ | মুহাম্মদ আবেদ | ১৮৩৪ | ১৯১২ | ৩২ |
৪ | রফি উদ্দিন | ১৮৩৬ | ১৮৯০ | ৩০ |
৫ | যুলফিকার আলী | ১৮১৯ | ১৯০৪ | ৪৭ |
৬ | ফজলুর রহমান | ১৮২৯ | ১৯০৭ | ৩৭ |
প্রতিষ্ঠাকালীন বিশেষ কোনো নাম নির্ধারণ করা হয়নি দারুল উলুম দেওবন্দের ৷ লোকমূখে তখন মাদরাসাটি দেওবন্দ আরবী মাদরাসা নামে পরিচিত হয়ে এটিই মাদরাসার নাম হয়ে যায়। ১২৯৬ হিজরিতে তৎকালীন সদরুল মুদাররিসীন ( প্রধান শিক্ষক ) মাওলানা ইয়াকুব নানুতুবীর প্রস্তাবে মাদরাসার নামকরণ করা হয় ‘‘দারুল উলুম দেওবন্দ’’।
দেওবন্দ মাদ্রাসা পরিচালনার ক্ষেত্রে ৮ টি মূলনীতি অনুসরণ করা হয়। এগুলোকে একসাথে ‘উসূলে হাশতেগানা’ বলা হয়। দেওবন্দের আদলে পরিচালিত সকল মাদ্রাসায় এই নীতিগুলো কঠোরভাবে পালন করা হয়। পরাধীন ভারতে ধ্বসে পড়া ইসলামি শিক্ষাকে পুনরুজ্জীবিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত করার মহান লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে তৎকালীন দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠিতা প্রধান মাওলানা কাসেম নানুতুবি রাষ্ট্রীয় অনুদানের প্রাচীন ধারার পরিবর্তে গণচাঁদার বিষয়টির প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ করে এই ৮টি মূলনীতি প্রণয়ন করেন। এগুলো হলঃ
দারুল উলুম দেওবন্দে পঠিত সিলেবাস বিশ্ব জুড়ে দরসে নেজামী নামেই প্রসিদ্ধ৷ দরসে নেজামীর প্রতিষ্ঠা হয় ১১০০ শতাব্দীর পরে৷ ১১০০ শতাব্দীর পূর্ব পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাপকহারে থাকলেও তা কোনো সিলেবাসভিত্তিক বা কারিকুলামের আলোকে ছিল না। ১১০৫ হিজরিতে মোল্লা নিজামুদ্দীন সাহলাভী ইসলামী শিক্ষাকে কিছুটা ঢেলে সাজান। তিনিই দরসে নেজামী আকারে মাদরাসা শিক্ষা পদ্ধতি চালু করেন। তিনি ছিলেন একাধারে দ্বীনের সুদক্ষ আলেম, ফিকাহ শাস্ত্রবিদ, দার্শনিক, ভাষ্যকার এবং একজন শিক্ষাবিদ। তিনি উত্তর ভারতের সাহালী শহরে ১০৮৮/৮৯ মোতাবেক ১৬৭৭-৭৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
হিরাতের প্রসিদ্ধ শিক্ষাবিদ শায়খ আব্দুল্লাহ আনসারী ছিলেন তাঁর পূর্বপুরুষ। শায়খ নিজামুদ্দীন সাহালীতে ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্রের সূচনা করেন। তারই প্রপৌত্র শায়খ হাফিজের জ্ঞানসাধনায় মুগ্ধ হয়ে সম্রাট আকবর তাকে ঐ এলাকায় ভালো একটি জায়গীর প্রদানের নির্দেশ দেন। ফলে শায়খ ও তাঁর পুত্রগণ নিশ্চিন্তে তালীমের কাজে মগ্ন থাকেন। ছাত্রদের খাদ্য ও বাসস্থানের সুষ্ঠু ব্যবস্থাও করেন। ইসলামের শত্রুরা ১১০৩ হিজরি মোতাবেক ১৬৯১ সালে মোল্লা নিজামুদ্দীনের পিতা মোল্লা কুতুবুদ্দীনকে শহীদ করে তার শিক্ষা উপকরণসমূহ জ্বালিয়ে দেন। ফলে মোল্লা নিজামুদ্দীন তার চার ভাইসহ ভারতের উত্তর প্রদেশের রাজধানী লাখনৌ চলে যান।
সম্রাট আওরঙ্গজেব এই পরিবারের শিক্ষার অবদানের কথা বিবেচনা করে লাখনৌর প্রসিদ্ধ মহল্লা ফিরিঙ্গী মহলে একস্থানে সরকারি আদেশবলে জায়গীর দান করেন। মোল্লা নিজামুদ্দীন এখানে দ্বীনি শিক্ষার কাজ চালিয়ে যান, এমন সময় এটাই মাদরাসায়ে নিজামিয়া নামে সুপরিচিতি লাভ করে। এই ফিরিঙ্গী মহলে এসেই তিনি ১১০৫ হিজরি সনে দরসে নেজমী প্রণয়ন করেন৷ তিনি গঠনমূলকভাবে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে প্রায় ১১টি বিষয়ের সমন্বিত সিলেবাসটি প্রণয়ন করেন। ইতিহাসে এটাই দরসে নেজামী নামে পরিচিত। দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার পরে উক্ত দরসে নেজামীই মাদরাসার নেসাবভুক্ত করা হয়৷ আজ অবধি এই দরসে নেজামীই বিদ্যামান রয়েছে দারুল উলুম দেওবন্দের নেসাবে৷
দারুল উলুম দেওবন্দের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত ১০ জন মুহতামিমের দায়িত্ব পালন করেছেন। দারুল উলুম দেওবন্দের বর্তমান মুহতামিম আবুল কাসেম নোমানী।
নং | চিত্র | নাম | কার্যকাল | |
---|---|---|---|---|
১ | হাজী আবেদ হোসেন | ১৮৬৬ | ১৮৬৭ | |
২ | রফি উদ্দিন উসমানী | ১৮৬৭ | ১৮৬৮ | |
৩ | হাজী আবেদ হোসেন | ১৮৬৯ | ১৮৭১ | |
৪ | রফি উদ্দিন উসমানী | ১৮৭২ | ১৮৮৮ | |
৫ | হাজী আবেদ হোসেন | ১৮৮৮ | ১৮৯৩ | |
৬ | হাজী ফজল হক | ১৮৯৩ | ১৮৯৪ | |
৭ | মুহাম্মদ মুনির নানুতুবি | ১৮৯৪ | ১৮৯৫ | |
৮ | হাফেজ মুহাম্মদ আহমদ | ১৮৯৫ | ১৯২৮ | |
৯ | হাবিবুর রহমান উসমানি | ১৯২৮ | ১৯২৯ | |
১০ | কারী মুহাম্মদ তৈয়ব | ১৯৩০ | ১৯৮০ | |
১১ | মারগুবুর রহমান বিজনুরী | ১৯৮২ | ২০১০ | |
১২ | গোলাম মুহাম্মদ বাস্তনবী | ১০ জানুয়ারি ২০১১ | ২৪ জুলাই ২০১১ | |
১৩ | আবুল কাসেম নোমানী | ২০১১ | বর্তমান |
দারুল উলুম দেওবন্দ ভারতের উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুর জেলায় অবস্থিত একটি মাদ্রাসা, যা ১৮৬৬ সালের ৩০ মে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এটি একটি মৌলিক শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে যা দরসে নেজামি নামে পরিচিত। দারুল উলুম দেওবন্দে এটি উল্লেখযোগ্য সংস্কারের সাথে চালু করা হয়েছিল। পরবর্তীতে দারুল উলুম দেওবন্দের অনুসরণে সারাবিশ্বে অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। তাই এটি দরসে নেজামি মাদ্রাসার মূল আদর্শ হিসেবে স্বীকৃত। দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষাক্রম মোট ৩টি ধাপে সমাপ্ত হয়: প্রাথমিক শিক্ষা, ফাযেল কোর্স এবং তাখাচ্ছুছাত। প্রাথমিক শিক্ষা বা দীনিয়াত বিভাগের ব্যপ্তি মোট ৫ বছর। ফাযেল কোর্স বা আলেম কোর্সের ব্যপ্তি মোট ৮ বছর। ফাযেল কোর্স দারুল উলুম দেওবন্দের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোর্স। এই কোর্স সমাপ্তকারীদের আলেম বলা হয়৷ ফাযেল কোর্সের মান সাধারণ শিক্ষার স্নাতকের সমান। ফাযেল কোর্স পরবর্তী বিভিন্ন বিষয়ের বিষেশায়িত উচ্চশিক্ষা তাখাচ্ছুছাত নামে পরিচিত। বিষয় অনুযায়ী এটি ১, ২ বছর বা আরও বেশি হতে পারে।
ফাযেল কোর্সের প্রথম চার বছরকে ছানুভী বিভাগ বলা হয়৷ এই বিভাগে আরবি নাহু ছরফ, আরবি ইনশা মান্তেক (তর্কবিদ্যা), কুরআন তরজমা এবং ইসলামি ইতিহাস সহ ইসলামের মৌলিক বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়। আর শেষ চার বছরে ইলুমল বালাগাত, ফাসাহাত, তাফসির, উসূলে তাফসির, ফিকহ, উসূলে ফিকহ, হাদিস ও উসূলে হাদিসের পাঠ দান করা হয়৷ শেষ বছরকে দাওরায়ে হাদিস বলা হয়। এতে সিহাহ সিত্তাহসহ মোয়াত্তাইন ও তহাবী এবং শামায়েলে তিরমিজীর পাঠদান করা হয়৷
ফাযেল কোর্স পরবর্তী বিশেষায়িত উচ্চশিক্ষা বা তাখাচ্ছুছাতের মধ্যে রয়েছে তাদরিব ফিল ইফতা, তাজবিদ, তাখাস্সুস ফিল হাদিস, তাকমিল আদব, তাকমিল তাফসির ইত্যাদি।
ব্রিটিশদের শাসন থেকে ভারতকে স্বাধীন করার জন্য ভারতীয় মুসলমানরা ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহ সংগঠিত করে। সিপাহি বিদ্রোহের ধারাবাহিকতায় শামলীর যুদ্ধ সহ এই বিদ্রোহে পরাজয়ের পর তার ক্ষতি মিটানোর জন্য কাসেম নানুতুবির নেতৃত্বে কয়েকজন আলেম ১৮৬৬ সালের ৩০ মে দেওবন্দের সাত্তা মসজিদের ডালিম গাছের নিচে দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠা করে। এই মাদ্রাসার প্রথম শিক্ষক মাহমুদ দেওবন্দি ও প্রথম ছাত্র ছিলেন মাহমুদ হাসান দেওবন্দি৷ পরবর্তীতে মাহমুদ হাসান দেওবন্দি দারুল উলুম দেওবন্দের প্রধান শিক্ষকের পদে অধিষ্ঠিত হন এবং তার ছাত্রদের মাধ্যমে তিনি সশস্ত্র বিপ্লব গড়ে তুলতে স্বচেষ্ট হন। তিনি পর্যায়ক্রমে সামরাতুত তারবিয়াত, জমিয়তুল আনসার, নাযারাতুল মাআরিফ আল কুরআনিয়া গঠন করেন। তার রেশমি রুমাল আন্দোলন ফাঁস হয়ে গেলে তিনি মাল্টায় নির্বাসিত হন। এরই মধ্যে তার ছাত্ররা ভারতে জমিয়ত উলামায়ে হিন্দ গঠন করেন। কারামুক্ত হয়ে ভারতে প্রত্যাবর্তন করে তিনি জমিয়তের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের একমাসের মাথায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন৷ জমিয়ত খিলাফত আন্দোলন ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাথে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। পরবর্তীতে জমিয়তের নেতৃত্বে আসেন দারুল উলুম দেওবন্দের অধ্যক্ষ হুসাইন আহমদ মাদানি। তিনি অখণ্ড ভারতের দাবিতে কংগ্রেসের সাথে মিলে স্বাধীনতা সংগ্রাম চালিয়ে যান। দারুল উলুম দেওবন্দের সদরে মুহতামিম শাব্বির আহমদ উসমানির নেতৃত্বে আরেকটি দল জমিয়ত থেকে বের হয়ে জমিয়ত উলামায়ে ইসলাম গঠন করে পাকিস্তান আন্দোলনকে সমর্থন করেন, যাদের তাত্ত্বিক গুরু ছিলেন দারুল উলুম দেওবন্দের আরেক ছাত্র আশরাফ আলী থানভী। ১৯৪৭ দেশ ভাগের মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন সফল হয়।
১৯৮০ সালের ২১, ২২ ও ২৩ মার্চ এই মাদ্রাসার শতবার্ষিকী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সৌদি আরবের বাদশাহর প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুহসিন আত তুর্কির সভাপতিত্ব, মিশরের কারী আব্দুল বাসিত আব্দুস সামাদের কুরআন তেলওয়াত, মাদ্রাসার মুহতামিম কারী মুহাম্মদ তৈয়বের উদ্ভোদনী ভাষণ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বক্তৃতার মাধ্যমে সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয় এবং কারী মুহাম্মদ তৈয়বের মুনাজাতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। আকাশবাণীতে এটি সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য ১০ লক্ষ বর্গমিটারের বিস্তীর্ণ জায়গা প্রস্তুত করা হয়। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা ছিল ১৫ থেকে ২০ লাখ। এর মধ্যে ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা ছিল ১৮,০০০। বিখ্যাত আরবি সাহিত্যিক আবুল হাসান আলী হাসানী নদভীর তার আত্মজীবনী কারওয়ানে যিন্দেগীতে এই সমাবেশকে আরাফাত ময়দানের সাথে তুলনা করেছেন। এই সমাবেশে মাদ্রাসার দশ সহস্রাধিক শিক্ষা সমাপনকারীর দাস্তারবন্দীও করা হয়। সম্মেলনে মিন্নাতুল্লাহ রহমানির প্রচেষ্টায় আফগানিস্তানে রাশিয়ার আক্রমণের বিপক্ষে এবং আফগান মুজাহিদদের জন্য সহযোগিতামূলক সহ কয়েকটি কর্মসূচীও গৃহীত হয়। মূল সম্মেলনের পাশাপাশি দারুল হাদিসে মাদ্রাসা, এর দায়িত্ব ও সিলেবাস নিয়ে একটি বিশেষ আলোচনা মজলিসেরও ব্যবস্থা করা হয়।
দারুল উলুম দেওবন্দের প্রতিষ্ঠাতা কাসেম নানুতুবি আবে হায়াত নামে একটি সীরাত গ্রন্থ রচনা করেন। তার পরবর্তীতে দারুল উলুম দেওবন্দের অন্যান্য আলেমদের রচিত সীরাত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে: যে ফুলের খুশবুতে সারা জাহান মাতোয়ারা, আন নাবিয়্যুল খাতিম, সীরাতে খাতামুল আম্বিয়া, সীরাতুল মুস্তফা, সীরাতে মুবারাকাহ মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ, সীরাতে রাসুলে করিম, আফতাবে নবুয়ত ইত্যাদি। দারুল উলুম দেওবন্দের উল্লেখযোগ্য সীরাতবিদের মধ্যে রয়েছেন; আশরাফ আলী থানভী, মানাজির আহসান গিলানি, শফি উসমানি, ইদ্রিস কান্ধলভি, মুহাম্মদ মিয়া দেওবন্দি, জয়নুল আবেদিন সাজ্জাদ মিরাটী, হিফজুর রহমান সিওহারভি, হাফেজ মুহাম্মদ আহমদ, কারী মুহাম্মদ তৈয়ব, হামিদ আল-আনসারি গাজি, জাফিরুদ্দিন মিফতাহি প্রমুখ।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article দারুল উলুম দেওবন্দ, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.