কাজু বাদাম: এক প্রকার বাদাম

কাজু বাদাম অত্যন্ত সুস্বাদু একটি বাদাম। কাজু গাছ (বৈজ্ঞানিক নাম Anacardium occidentale; প্রতিশব্দ Anacardium curatellifolium A.St.-Hil.) সপুষ্পক অ্যানাকার্ডিয়েসি পরিবারের বৃক্ষ। এটি একটি অর্থকরি ফসল। এ গাছের বীজ থেকে চারা তৈরি করা হয়। বেলে দো আশঁ মাটি অথবা পাহাড়ের ঢালে ভাল জন্মে।

Cashew
কাজু বাদাম: উৎপত্তিস্থল, বাংলাদেশে কাজু গাছ, খাবার পদ্ধতি
Cashews ready for harvest in Kollam, India
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: উদ্ভিদ
শ্রেণীবিহীন: সপুষ্পক উদ্ভিদ
শ্রেণীবিহীন: Eudicots
শ্রেণীবিহীন: Rosids
বর্গ: Sapindales
পরিবার: Anacardiaceae
গণ: Anacardium
প্রজাতি: A. occidentale
দ্বিপদী নাম
Anacardium occidentale
L.
কাজু বাদাম: উৎপত্তিস্থল, বাংলাদেশে কাজু গাছ, খাবার পদ্ধতি
'অ্যানাকার্ডিয়াম অক্সিডেন্টালে', কহ্লারের মেডিসিনাল প্লান্টস (১৮৮৭) থেকে'

উৎপত্তিস্থল

কাজুবাদামের উৎপত্তিস্থল ব্রাজিল সহ মধ্য আমেরিকা এবং উত্তর দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর পূর্ব ব্রাজিল। বর্তমানে প্রধানত ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত, কেনিয়া, মোজাম্বিক, তানজানিয়া,মাদাগাস্কার প্রভৃতি দেশে কাজুবাদাম উৎপাদিত হয়ে থাকে। কিডনি আকৃতির বীজ কাজু বাদাম গন্ধ ও স্বাদে মিষ্টি-জাতীয়। ওজন হ্রাস, রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যকর হৃদয় গঠন, ডায়াবেটিস ও ক্যান্সার প্রতিরোধ, ত্বক ও চুলের সুরক্ষায় এটি এক দারুণ পুষ্টিকর খাবার।

বাংলাদেশে কাজু গাছ

কাজু বাদাম: উৎপত্তিস্থল, বাংলাদেশে কাজু গাছ, খাবার পদ্ধতি 
কাজু বাদাম

খাগড়াছড়ির পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, হর্টিকালচার সেন্টার খেজুরবাগান, সেনানিবাস, হর্টিকালচার সেন্টার নারানখাইয়া, পানখাইয়া পাড়া, কমলছড়ি ও জামতলী এলাকায় কাজুবাদামের গাছ চোখে পড়ে। এ ছাড়া, রামগড় উপজেলার হর্টিকালচার সেন্টারেও রয়েছে কাজুবাদামের বাগান। পার্বত্য চট্টগ্রামে কাজুবাদাম চাষ সম্প্রসারণের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে মাঝারি আকারে কাজুবাদামের চাষ হচ্ছে। অনাবাদি জমিতে পরিকল্পিতভাবে কাজুবাদাম চাষের যথেষ্ট সুযোগ আছে। ভবিষ্যতে খাগড়াছড়ির কৃষিপণ্যের মধ্যে কাজুবাদামও একটি বিশেষ স্থান করে নিতে পারে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

খাবার পদ্ধতি

কাজু বাদাম: উৎপত্তিস্থল, বাংলাদেশে কাজু গাছ, খাবার পদ্ধতি 
কাজু বাদাম

কাজুবাদাম সাধারণত ভেজে খাওয়া হয়। পাহাড়ি এলাকায় সাধারণত কাজুবাদামকে দা দিয়ে কেটে খুঁচিয়ে শাঁস বের করা হয়। তারপর রোদে শুকিয়ে বীজের আবরণ তুলে ফেলা হয়। লবণ-জলে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে তারপর ভাজা হয়। এতে লবণাক্ত স্বাদের কাজুবাদাম পাওয়া যায়। আর মিষ্টি স্বাদের কাজুবাদামের জন্য বাদাম ভাজার পর চিনির শিরায় ডুবিয়ে নেওয়া হয়। বিভিন্ন খাদ্যের স্বাদ বাড়ানোর জন্যও কাজুবাদাম ব্যবহার করা হয়।

পুষ্টিগুণ

কাজু বাদাম: উৎপত্তিস্থল, বাংলাদেশে কাজু গাছ, খাবার পদ্ধতি 
কাজু বাদাম

বিবিধ পুষ্টিপদার্থ যেমন তামা, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, দস্তা, ফসফরাস, আয়রন, সেলেনিয়াম, থায়ামিন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিপদার্থ ভিটামিন কে, ভিটামিন বি৬ ইত্যাদিতে ঠাসা কাজু বাদাম। এটি একটি ফাইবার জাতীয় খাবার যা কোলেস্টরল কমাতে সাহায্য করে। ১ আউন্স বা প্রায় ২৮.৩ গ্রাম কাজু বাদাম থেকে মোটামুটিভাবে ১৫৭ গ্রাম ক্যালরি, ৫.১৭ গ্রাম প্রোটিন, ১২.৪৩ গ্রাম ফ্যাট, ৮.৫৬ গ্রাম শর্করা, ০.৯ গ্রাম ফাইবার, ১.৬৮ গ্রাম চিনি পাওয়া যায়।

কাজু বাদাম
প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স)-এ পুষ্টিমান
শক্তি৫৫৩ kcal (২,৩১০ কিজু)
৩০.১৯ g
শ্বেতসার২৩.৪৯ g
চিনি ৫.৯১ g
০.০০ g
খাদ্য আঁশ৩.৩ g
৪৩.৮৫ g
সুসিক্ত স্নেহ পদার্থ৭.৭৮৩ g
এককঅসুসিক্ত২৩.৭৯৭ g
বহুঅসুসিক্ত৭.৮৪৫ g
১৮.২২ g
ভিটামিনপরিমাণ দৈপ%
ভিটামিন এ০ IU
থায়ামিন (বি)
৩৭%
০.৪২৩ মিগ্রা
রিবোফ্লাভিন (বি)
৫%
০.০৫৮ মিগ্রা
নায়াসিন (বি)
৭%
১.০৬২ মিগ্রা
প্যানটোথেনিক
অ্যাসিড (বি)
১৭%
০.৮৬ মিগ্রা
ভিটামিন বি
৩২%
০.৪১৭ মিগ্রা
ফোলেট (বি)
৬%
২৫ μg
ভিটামিন বি১২
০%
০ μg
ভিটামিন সি
১%
০.৫ মিগ্রা
ভিটামিন ডি
০%
০ μg
ভিটামিন ই
৬%
০.৯০ মিগ্রা
ভিটামিন কে
৩২%
৩৪.১ μg
খনিজপরিমাণ দৈপ%
ক্যালসিয়াম
৪%
৩৭ মিগ্রা
কপার
১১০%
২.২ মিগ্রা
লৌহ
৫১%
৬.৬৮ মিগ্রা
ম্যাগনেসিয়াম
৮২%
২৯২ মিগ্রা
ম্যাঙ্গানিজ
৭৯%
১.৬৬ মিগ্রা
ফসফরাস
৮৫%
৫৯৩ মিগ্রা
পটাশিয়াম
১৪%
৬৬০ মিগ্রা
সেলেনিয়াম
২৮%
১৯.৯ μg
সোডিয়াম
১%
১২ মিগ্রা
জিংক
৬১%
৫.৭৮ মিগ্রা
অন্যান্য উপাদানপরিমাণ
পানি৫.২০ g

প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য মার্কিন সুপারিশ ব্যবহার করে শতাংশ অনুমান করা হয়েছে।
উৎস: ইউএসডিএ ফুডডাটা সেন্ট্রাল

আকার

কাজু বাদাম: উৎপত্তিস্থল, বাংলাদেশে কাজু গাছ, খাবার পদ্ধতি 
কাজু বাদামের গাছ

পূর্ণবয়স্ক গাছ ১০ থেকে ১২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। পাতা অর্ধডিম্বাকার, দেখতে কাঁঠালের পাতার মতো। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি ফুল ফোটার সময়। এপ্রিল থেকে জুন মাসে ফল সংগ্রহ করা হয়। কাজুবাদামের দৈর্ঘ্য ৪ থেকে ৫ সেন্টিমিটার। এর ওজন ৫ থেকে ২০ গ্রাম হয়ে থাকে।

চাষ পদ্ধতি

রোপন

বীজ এবং কলম উভয় পদ্ধতিতেই কাজু বাদামের বংশ বিস্তার করা যায়। কলমের মধ্যে গুটি কলম, জোড় কলম, চোখ কলম ইত্যাদি প্রধান। কাজু বাদাম গাছ ৬০-৭০ বছর পর্যন্ত বাঁচে এবং ৫০-৬০ বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। বীজ থেকে পলি ব্যাগে চারা তৈরি করে কিংবা কলম প্রস্তুত করে জমিতে রোপণ করতে হবে। চারা রোপণের আগে ৭-৮ মিটার দূরত্ব বজায় রেখে ১ ঘনমিটার আয়তনের গর্ত তৈরি করতে হবে। গর্তে সবুজ সার এবং পরিমাণমত ইউরিয়া ও টিএসপি সার মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে ১৫ দিন পর চারা লাগাতে হবে। চারা গজালে একটি সতেজ চারা রেখে বাকি চারা তুলে ফেলতে হয়। বীজের পরিবর্তে চারা তৈরি করে নিয়েও রোপণ করা যায়। হেক্টর প্রতি প্রয়োজনীয় চারার সংখ্যা ২৪৫-৩৩৫ টি।

সার

কাজু বাদাম গাছে খুব একটা সার দেয়ার প্রয়োজন হয় না। ভাল ফলনের জন্য প্রতি ফলন্ত গাছে গোবর-৪০কেজি, ইউরিয়া-১কেজি, টি.এস.পি.-১কেজি এবং এম.পি.সার ১কেজি প্রয়োগ করা প্রয়োজন। এ ছাড়া পাতা শোষক পোকা ও পাতা কাটা পোকা প্রভৃতি কাজু বাদামের ক্ষতি সাধন করে। তাই পরিমিত পরিমাণে কীটনাশক প্রয়োগ করে কীটপতঙ্গ দমন করা যায়।

পরিচর্যা

আগাছা পরিষ্কার করা, মরা অপ্রয়োজনীয় ডাল ছাটাই করা এবং সাথী ফসল চাষ করা প্রয়োজন।

ফলন

চারা রোপণের পর গাছের বয়স তিন বছর হলে প্রথম ফুল এবং ফল আসে। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি ফুল ফোটার সময়। এপ্রিল থেকে জুন (বৈশাখ-আষাঢ় মাস ) মাস কাজু বাদাম সংগ্রহকাল। গাছ থেকে সুস্থ ফল সংগ্রহ করে খোষ ছাড়িয়ে বাদাম সংগ্রহ করে তারপর ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে ভেজে প্যাকেট-জাত করা হয়। সাধারণত একটি গাছ থেকে ৫০-৬০ কেজি ফলন পাওয়া যায়। ১ কেজি ফল প্রক্রিয়াজাত করে তা থেকে গড়ে ২৫০ গ্রাম কাজু বাদাম পাওয়া যায়। জাতভেদে ফলনের তারতম্য হয়ে থাকে।

চিত্রশালা

তথ্যসূত্র

Tags:

কাজু বাদাম উৎপত্তিস্থলকাজু বাদাম বাংলাদেশে কাজু গাছকাজু বাদাম খাবার পদ্ধতিকাজু বাদাম পুষ্টিগুণকাজু বাদাম আকারকাজু বাদাম চাষ পদ্ধতিকাজু বাদাম পরিচর্যাকাজু বাদাম ফলনকাজু বাদাম চিত্রশালাকাজু বাদাম তথ্যসূত্রকাজু বাদাম

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

শিশ্ন বর্ধনযিনাবাংলাদেশ বিমান বাহিনীভগবদ্গীতাজেমি ম্যাকলারেনআবহাওয়ামেয়েআবুল কাশেম ফজলুল হকডিএনএ২০২২ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জিম্বাবুয়ে সফরসহীহ বুখারীহিন্দি ভাষাবুড়িমারী এক্সপ্রেসসর্বনামব্যাকটেরিয়াহাদিসকর্কটক্রান্তিভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহবেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরঅপু বিশ্বাসসরকারসাঁওতাল বিদ্রোহ২০২২–২৩ উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগযতিচিহ্নপারি সাঁ-জেরমাঁহবিগঞ্জ জেলাভারতের রাষ্ট্রপতিদের তালিকাচট্টগ্রাম জেলাপুরুষে পুরুষে যৌনতাঅর্থনীতিশাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়আফগানিস্তানঈদুল আযহারাশিয়াইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সইসলামবাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডশ্রীকৃষ্ণকীর্তনসালমান খানমুহাম্মাদ ফাতিহশ্রীলঙ্কাগর্ভধারণশাফায়াত (ইসলাম)আসমানী কিতাবব্যাংকবাংলা সাহিত্যের ইতিহাসশ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়বাক্যসিন্ধু সভ্যতাখাওয়ার স্যালাইনলিওনেল মেসিভূগোলনীল বিদ্রোহফুলআডলফ হিটলারবাংলাদেশ সরকারকেন্দ্রীয় শহীদ মিনারপশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীদের তালিকামানব দেহবিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমবাংলাদেশের জাতীয় প্রতীকবঙ্গবন্ধু-১আয়িশাকাজী নজরুল ইসলামের রচনাবলিবাংলাদেশের জাতীয় প্রতীকসমূহপরমাণুবাংলাদেশের নদীর তালিকাঅর্শরোগশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়প্রযুক্তিটাইফয়েড জ্বরবাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পদবিগৌতম বুদ্ধকুড়িগ্রাম জেলাকনডমভারতের সরকারি ভাষাসমূহপ্রাকৃতিক দুর্যোগ🡆 More