কেনিয়া পূর্ব আফ্রিকার একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং কমনওয়েলথ অভ নেশনসের সদস্য। কেনিয়া মালভূমি ও উঁচু পর্বতে পূর্ণ। এখানে বহু জাতির লোকের বাস। অতীতে এটি একটি ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল। ১৯৬৩ সালে এটি স্বাধীনতা লাভ করে এবং ১৯৬৪ সাল থেকে এটি একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয়। কেনিয়ার উত্তরে সুদান ও ইথিওপিয়া, পূর্বে সোমালিয়া ও ভারত মহাসাগর, দক্ষিণে তানজানিয়া এবং পশ্চিমে ভিক্টোরিয়া হ্রদ ও উগান্ডা। নাইরোবি কেনিয়ার রাজধানী ও বৃহত্তম শহর।
কেনিয়ার প্রজাতন্ত্র Jamhuri ya Kenya | |
---|---|
রাজধানী ও বৃহত্তম নগরী বা বসতি | নাইরোবি |
সরকারি ভাষা | সোয়াহিলি (১৯৬৩ থেকে), ইংরেজি |
স্বীকৃত আঞ্চলিক ভাষা | gKĩkũyũ, লুইয়া, লুও, মাসাই, মেরু, এমবু, আরবি, সোমালি, হিন্দি এবং অন্যান্য অনেক ভাষা। |
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ | কেনিয়ান |
সরকার | একাত্মক অধ্যক্ষীয় সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র |
• রাষ্ট্রপতি | উহুরু কেনিয়াত্তা (কেনিয়া জুবিলী পার্টি) |
• উপ-রাষ্ট্রপতি | উইলিয়াম রুটো (কেনিয়া জুবিলী পার্টি) |
স্বাধীনতা যুক্তরাজ্য থেকে | |
• তারিখ | ১২ই ডিসেম্বর, ১৯৬৩ |
• প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেছিল | ১২ই ডিসেম্বর ১৯৬৪ |
• পানি (%) | ২.৩ |
জনসংখ্যা | |
• জুলাই ২০০৯ আনুমানিক | ৩৯,৮০২,০০০ (৩৪তম) |
• ৮ই ফেব্রুয়ারি ২০০৭ আদমশুমারি | ৩১,১৩৮,৭৩৫ |
জিডিপি (পিপিপি) | ২০০৯ আনুমানিক |
• মোট | $৬২.৮২৬ বিলিয়ন (৭৬তম) |
• মাথাপিছু | $১,৭৫১ (১৫৬তম) |
মানব উন্নয়ন সূচক (২০০৭) | ০.৫২১ ত্রুটি: মানব উন্নয়ন সূচক-এর মান অকার্যকর · ১৪৮তম |
মুদ্রা | কেনিয়ান শিলিং (KES) |
সময় অঞ্চল | ইউটিসি+৩ (EAT) |
• গ্রীষ্মকালীন (ডিএসটি) | ইউটিসি+৩ (পর্যবেক্ষণ করা হয়নি) |
কলিং কোড | ২৫৪ 2 |
ইন্টারনেট টিএলডি | .ke |
2. 005 from Tanzania and Uganda. |
কেনিয়ার এ জায়গাটির মূলত মালিক ছিলেন জাঞ্জিবারের সুলতান। কিন্তু ১৮৮৫ সালে জার্মান এ স্থানটি দখল করে নেয়।
১৮৮৮ সালে ব্রিটেনের ইস্ট আফ্রিকা কোম্পানী সেখানে এসে হাজির হয়। তখন তারা স্থানটি ব্রিটিশদের হাতে হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে শ্বেতাঙ্গরা এখানে আসতে শুরু করে। তারা এখানকার জমিতে কফি ও চা উৎপাদন করে বেশ ধনী হয়ে উঠে। ১৯৩০ সালের দিকে সেখানে আসে ৩০ হাজার শ্বেতাঙ্গ। দেশটির বাজার অর্থনীতিতে অবদান রাখার সুবাদে তারা দেশটির রাজনীতিতেও বেশ শক্তিশালী অবস্থান লাভ করে। এ অঞ্চলটি তখন ছিল মূলত কিকুয়ু আদিবাসীদের অধীনে। তবে জমির প্রতি তাদের কোনো দাবী ছিল না। তারা ভূমিহীন কৃষকের মতোই জীবন নির্বাহ করতো। তাদের এ সামান্য স্বার্থও বিঘ্নিত করার জন্য শ্বেতাঙ্গরা কফি চাষ নিষিদ্ধ করে এবং নির্যাতনমূলক বেশ কিছু কর আরোপ করে। ১৯৫০ সালে দেশটির শ্বেতাঙ্গদের সংখ্যা গিয়ে পৌঁছায় ৮০ হাজারে।
কিকুউউ সম্প্রদায় গরিষ্ঠ ,মাউ মাউ বিপ্লবে কিম্বা, মেরু, এমবু এবং মাশাই সম্প্রদায়ের একাংশে সংগঠিত হয় ,যারা কেনিয়াতে সাদা ইউরোপীয় উপনিবেশবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। ম’ ম’ গোষ্ঠী ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করায় ১৯৫২ থেকে ১৯৫৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কেনিয়াতে জরুরি অবস্থা বহাল থাকে। ১৯৫৬ সালের ২১শে অক্টোবর , দীর্ঘমেয়াদী জরুরি অবস্থা এবং বিদ্রোহী নেতা গ্রেফতার মাউ মাউ বিদ্রোহকে পরাজয় এনে দেয়।
কেনিয়ায় ১৯৫৭ সালে প্রথম সরাসরি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বৃটিশরা চেয়েছিল মধ্যপন্থী আফ্রিকানদের হাতে মতা হস্তান্তর করতে। কিন্তু জুমু কেনিয়াত্তার দল কেনিয়া আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়ন বা কানু ১৯৬৩ সালের ১২ ডিসেম্বর দেশটি স্বাধীন হওয়ার কিছুদিন আগে সরকার গঠন করে। স্বাধীনতার দিনটিতেই তারা দেশটির প্রথম সংবিধান রচনা করে। কেনিয়া স্বাধীন হওয়ার এক বছর পর দ্য রিপাবলিক অব কেনিয়া ঘোষিত হয়। জুমু কেনিয়াত্তা হন দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট। ১৯৭৮ সালে তার মৃত্যুর পর ড্যানিয়েল আরাপ মই প্রেসিডেন্ট হন। তখন দেশটিতে একদলীয় শাসন চলতে থাকায় নির্বাচনে তার বিরোধিতা করার কেউ ছিল না। ১৯৯২ সালের নির্বাচনের সময় অবশ্য কেনিয়া একদলীয় শাসন থেকে বের হয়ে আসে। কিন্তু সেবার ও তার পরের বার অর্থাৎ ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালের নির্বাচনে ড্যানিয়েল আবারো নির্বাচিত হন। তবে ২০০২ সালে সাংবিধানিকভাবেই তার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথ রূদ্ধ হয়ে যায়। এরপর ক্ষমতায় আসেন ‘ন্যাশনাল রেইনবো কোয়ালিশন’ বা নার্কের মাওয়াই কিবাকি।
বিচিত্র সংস্কৃতির কেনিয়াতে কেনিয়ার আদিবাসীরা বিশ্বাস করে কেনিয়া প্রভুর বিশ্রামের স্থান। ভিন্ন বৈচিত্রের সংস্কৃতি, বিশাল বনভূমি, সমৃদ্ধ বনাঞ্চল সব মিলিয়েই কেনিয়া। সেই সাথে তো রয়েছে মাসাইদের গা ভরা উল্কি ও জমকালো সাজ। এবার এই বৈচিত্র্যভরা কেনিয়াকে নিয়েই দেশ পরিচিতির আলোচনা
এক নজরে কেনিয়া : দেশের নাম- কেনিয়া। অফিসিয়াল নাম - দ্য রিপাবলিক অব কেনিয়া। রাজধানী- নাইরোবি। ভাষা- সুয়াহিলি ও ইংরেজি। সরকার ব্যবস্থা - আধা প্রেসিডেন্ট শাসিত প্রজাতন্ত্র। আয়তন- ৫৮০,৩৬৭ বর্গ কিলোমিটার। লোকসংখ্যা- ৪১,০৭০,৯৩৪ জন (২০১১ সালের শুমারী অনুযায়ী)। জনসংখ্যার ঘনত্ব - প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৬৭.২ জন।মাথাপিছু আয়- ১,৭২৫ মার্কিন ডলার। স্বাধীনতা- ১২ ডিসেম্বর ১৯৬৩ (ব্রিটেন থেকে)। প্রজাতন্ত্র ঘোষণা - ১২ ডিসেম্বর ১৯৬৪। মাথাপিছু আয়- ১,৭২৯ ডলার (২০০৯ সালের হিসেব অনুযায়ী) মুদ্রার নাম- কেনিয়ান শিলিং। ইন্টারনেট ডোমিং- .শব। কলিং কোড- +২৫৪
দ্য রিপাবলিক অব কেনিয়া পূর্ব আফ্রিকার একটি দেশ। ভারত মহাসাগরের পাশে অবস্থিত কেনিয়ার সীমান্ত সোমালিয়া ঘিরে রেখেছে উত্তরপূর্ব দিক থেকে। এছাড়া ইথিওপিয়া রয়েছে উত্তরে, আর উগান্ডা ও সুদান আছে উত্তরপশ্চিম দিক ঘিরে। পশ্চিম দিকে রয়েছে লেক ভিক্টোরিয়া। আর তানজানিয়ার অবস্থান দণিপশ্চিমে। কেনিয়ার উল্লেখযোগ্য দিক এর বিশাল বনভূমি। এই বনভূমিতে রয়েছে হাজার হাজার প্রজাতির পশুপাখি। কেনিয়ার রাজধানী হচ্ছে নাইরোবি। ৫ লাখ ৮০ হাজার বর্গকিলোমিটারের দেশটির জনসংখ্যা খুব বেশি নয়। মাত্র ৪১ মিলিয়ন। তবে জনসংখ্যা কম হলেও কেনিয়াতে রয়েছে অন্তত চল্লিশটি পৃথক পৃথক আদিবাসী গোষ্ঠী। আফ্রিকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশিখর ‘মাউন্ড কেনিয়া’ থেকেই কেনিয়া নামটি নেয়া হয়েছে। কেনিয়া শব্দটি মূলত এসেছে কিরিনইয়াগা, কিরিনইয়া এবং কীনইয় শব্দ থেকে। ইংরেজিতে এগুলোর অর্থ হচ্ছে ‘গড’স রেস্টিং প্লেস’ বা প্রভুর বিশ্রাম নেয়ার জায়গা। কেনিয়ার আদিবাসীরা বিশ্বাস করতো এই পর্বত খুবই নিরাপদ এবং পবিত্র স্থান। প্রাগৈতিহাসিক যুগে ‘মাউন্ট কেনিয়া’র অগ্নুৎপাতের ফলে কেনিয়া সৃষ্টি হয়। আর তখন থেকেই এর মূল আদিবাসী কিকুইয়ুরা এ অঞ্চলে বসবাস করতে শুরু করে। ১৯ শতকে জার্মান শাসক লুদউইক কার্প কেনিয়ার বর্তমান নামকরণটি করেন।
প্রেসিডেন্ট শাসিত গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হচ্ছে কেনিয়া। এখানে রাষ্ট্রপতি একাধারে দেশ ও সরকারপ্রধান। এখানে বহুদলীয় রাজনীতি বিদ্যমান। সরকার দেশের নির্বাহী ক্ষমতা চর্চা করে থাকে। আর সরকার ও পার্লামেন্টের হাতে আইনের ক্ষমতা ন্যাস্ত। বিচারবিভাগ প্রশাসন ও আইন বিভাগ থেকে স্বাধীন হয়েই কাজ করে থাকে। ১৯৯৭ কিছু আইনের মাধ্যমে দেশটি গণতান্ত্রিক যুগে প্রবেশ করতে শুরু করে।
আয়তনের দিক থেকে কেনিয়া বিশ্বের ৪৭তম বৃহত্তম রাষ্ট্র। এর আয়তন ৫৮০,৩৬৭ বর্গ কিলোমিটার। ভারত মহাসাগরের পাশ থেকে শুরু হওয়া নিম্ন সমতলভূমি ধীরে ধীরে উচু হয়ে পৌঁছে গেছে দেশটির মাঝখানে। বিস্তৃত এই উচ্চভূমি আবার দেশটির উর্বর মালভূমি গ্রেট রিফ ভ্যালি দ্বারা দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে। কেনিয়ার উচ্চভূমিগুলোকে আফ্রিকার অন্যতম সফল কৃষি উৎপাদক এলাকা হিসেবে গণ্য করা হয়। আর দেশটির অন্যতম পরিচায়ক মাউন্ট কেনিয়া আফ্রিকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থান হিসেবে পরিচিত। এটির উচ্চতা ৫,১৯৯ মিটার। আফ্রিকার সর্বোচ্চ স্থান তাঞ্জানিয়ায় অবস্থিত মাউন্ট কিলিমাঞ্জারো দেখা যায় কেনিয়ার দণি দিক থেকে। দেশটির জলবায়ু গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আবহাওয়া ধারণ করে থাকে। কেনিয়ার উপকূলীয় এলাকার জলবায়ু বেশ গরম ও আর্দ্র। দেশটির উত্তর ও উত্তরপূর্ব দিকের জলবায়ু আবার বেশ শুষ্ক। এখানে মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। আর অক্টোবর ও নভেম্বরে হয় মাঝামাঝি আকারের বৃষ্টি। এ সময় দেশটির তাপমাত্রা পুরোটাই থাকে বেশ উচ্চ পর্যায়ে। কেনিয়াতে প্রায় সারা বছরই সূর্যালোক পাওয়া যায়। দেশটির রাত ও সকাল বেশ ঠাণ্ডা। আর বাকিটা সময় বেশ গরম। এপ্রিল-জুন দেশটিতে বিরাজ করে বর্ষা মৌসুম। এ সময় বেশ বৃষ্টিপাত হয়। আর বেশিরভাগ সময়ই বৃষ্টিপাত হয় দুপুর ও সন্ধ্যায়। দেশটির সবচেয়ে গরমের সময় হচ্ছে ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ এবং সবচেয়ে ঠান্ডার সময় হচ্ছে জুলাই থেকে আগস্ট
বন্যপশুদের অন্যতম বৃহৎ আবাসভুমি কেনিয়া। এটি নীল ওয়াইল্ডবিস্টের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু ইদানীং বছরে প্রায় আড়াই লাখ ওয়াইল্ডবিস্ট ধ্বংস হচ্ছে। আফ্রিকার বড় পাঁচটি পশুর বড় আবাসস্থলও এই কেনিয়া। সিংহ, চিতা, মহিষ, গণ্ডার ও হাতি তো রয়েছেই, এর পাশাপাশি অন্যান্য বন্য পশু ও পাখি দেশটিতে প্রচুর পরিমাণে দেখতে পাওয়া যায়। জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে লাখ লাখ পশু নিজ নিজ স্থান বদল করে। এটি চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য একটি আকর্ষণীয় বিষয়।
কেনিয়াতে প্রদেশ রয়েছে ৮টি। প্রত্যেক প্রদেশে রয়েছে প্রেসিডেন্ট মনোনীত একজন প্রাদেশিক কমিশনার। ১৯৯৯ সালের হিসাবে সেখানে জেলা রয়েছে ৬৯টি। দেশটির রাজধানী নাইরোবি একটি পূর্ণ প্রদেশের মর্যাদা ভোগ করে। সরকার প্রদেশ ও জেলা প্রশাসনগুলোর তত্ত্বাবধান করে থাকে। দেশটির বড় বড় শহর হচ্ছে নাইরোবি, মোম্বাসা, কিসুমু, নাকুরু এবং এল্ডোরেট।
কেনিয়ার অর্থনীতি বাজারকেন্দ্রিক। তবে সেখানে সরকারি বিনিয়োগের পাশাপাশি স্বাধীন বিনিয়োগ ব্যবস্থাও বিদ্যমান। এই দেশটি মূলত পূর্ব এবং মধ্য আফ্রিকার বাণিজ্য, যোগাযোগ এবং পরিবহনের জংশন হিসেবে কাজ করছে থাকে। মে ২০১০ সালে এ বছরের জন্য ৪-৫% জিডিপির প্রত্যাশা করা হয়েছে। দেশটির পর্যটন, টেলিযোগাযোগ, পরিবহন, অবকাঠামো নির্মাণ এবং কৃষির উন্নয়নের ফলে এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়।
দেশটির অর্থনীতিতে বড় আকারের অবদান রাখছে পর্যটন। এখানে ৬০ খানা ন্যাশানাল পার্ক রয়েছে। মোট জিডিপির ৬৩ শতাংশ আসে এই পর্যটন সংশ্লিষ্ট সেবা থেকে। কয়েক বছর ধরেই এ খাতে কেনিয়ার আয় বেড়েই চলছে। মূলত জার্মানি ও ব্রিটেনের পর্যটকরাই কেনিয়া আসেন। কেনিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের ২০, ৮০৮ বর্গ কিলোমিটারের সাভো ন্যাশনাল পার্কটিই পর্যটকদের মূল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত। ২০০৬ সালে এ খাত থেকে দেশটির আয় ছিল ৮০৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা তার আগের বছর ছিল ৬৯৯ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া কেনিয়াতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খাত হচ্ছে কৃষি। এ খাত থেকে জিডিপির ২৪ শতাংশ আসে। এখানকার প্রধান ফসল হচ্ছে, চা কফি ইত্যাদি।
বিদ্যুতের প্রয়োজন মেটাতে কেনিয়াতে রয়েছে কয়েকটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। এছাড়া উপকূলে নাইরোবির কাছাকাছি অঞ্চলে তেলনির্ভর একটি বিদ্যুত প্রকল্প রয়েছে। এরপরও দেশটি তাদের ঘাটতি বিদ্যুতের মোকাবিলায় উগান্ডা থেকে বিদ্যুত আমদানি করে থাকে। ফলে এখানে পানির খুব বেশি ঘাটতি না হলে দেশটি বিদ্যুত সঙ্কটের মুখে পড়ে না।
কেনিয়ার জনসংখ্যা বিগত কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ফলে দেশটির জনসংখ্যার একটি বড় সংখ্যাই হচ্ছে তরুণ ও যুবক। দেশটির আদমশুমারীতে দেখা গেছে জনসংখ্যার ৭৩ শতাংশ নাগরিকের বয়স অনূর্ধ্ব ৩০। গত আশি বছরে কেনিয়ার জনসংখ্যা ২.৯ মিলিয়ন থেকে ৩৯ মিলিয়নে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। কেনিয়া মূলত নানা ধরনের আদিবাসীদের মিলনস্থল। অধিকাংশ কেনিয়ানই ইংরেজি ও সোয়াহিলি ভাষায় কথা বলতে পারে। দেশটির জনগণের বিরাট একটি অংশ তাদের আদিবাসি ভাষায় কথা বলে থাকে। আদিবাসিদের হিসেব করতে গেলে যা পাওয়া যাবে, তা হল- কিকুয়ু ২২%, লুহইয়া- ১৪%, লউ ১৩%, ক্যালেজিন ১২%, কাম্বা ১১%, কিসি ৬%, মেরু ৬%,অন্যান্য আফ্রিকান ১৫%, আফ্রিকার বাইরের জনগণ রয়েছে ১%।
টেমপ্লেট:Largest cities of Kenya
কেনিয়ার শিক্ষাব্যবস্থা মূলত তিনভাগে বিভক্ত। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে। প্রাথমিক পর্যায়ের আগের শিক্ষা ৩ বছর মেয়াদী। প্রাথমিক ৮ বছর, মাধ্যমিক ৪ বছর এবং কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় হচ্ছে ৪ থেকে ৬ বছরের। প্রত্যেকটি স্তরের শেষেই পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। দেশটিতে সরকারি স্কুলের পাশাপাশি অনেক বেসরকারি স্কুলও রয়েছে। এছাড়াও দেশটিতে আন্তর্জাতিক কিছু প্রতিষ্ঠানের শাখাও রয়েছে। ২০০৩ সালে সরকার প্রাইমারী শিক্ষাকে অবৈতনিক করে। ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে ছাত্রসংখ্যা বেড়ে যায় ৭০ শতাংশ। কিন্তু মাধ্যমিক বা কলেজ পর্যায়ে সে হারে শিক্ষার্থী বাড়েনি। কারণ সে ক্ষেত্রে পড়ালেখার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। তবে আশার কথা হচ্ছে সরকারের প থেকে ২০০৮ সাল থেকে মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও বড় অঙ্কের ভর্তুকি দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
কৃষ্টি-কালচারের জন্য কেনিয়া একটি আদর্শ স্থান। এখানে অবস্থান করা প্রত্যেকটি গোষ্ঠীই তাদের নিজ নিজ স্বকীয়তা বজায় রেখে নিজেদের সংস্কৃতি, ধর্ম পালন করে চলছে। বলতে গেলে বিশ্বে কেনিয়ার পরিচিতির অন্যতম একটি মাধ্যমই হচ্ছে তাদের এই সংস্কৃতি। আফ্রিকা মানেই যেখানে ভিন্ন ভিন্ন বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি, সেখানে কেনিয়াও এর বাইরে নয়। দেশটির পুরো অংশ জুড়েই ছড়িয়ে ছিটিয়ে এদের অবস্থান। মাসাইরা তাদের শরীরের উপরের অংশে অসংখ্য উল্কি ও অলংকারে সাজাতে পছন্দ করে, যা এখন বিশ্বের অনেক স্থানেই ফ্যাশন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া কেনিয়াতে মিউজিক, টিভি ও থিয়েটারেরও ব্যাপক প্রাধান্য রয়েছে। ধর্ম ধর্ম বিশ্বাসের দিক দিয়ে কেনিয়ার অধিকাংশ নাগরিকই খৃস্টান। এছাড়া অন্যান্য ধর্মের লোকও রয়েছে কিছু কিছু। পরিসংখ্যান আকারে এর হিসাবটি হলো- প্রেটেস্ট্যান্ট খৃস্টান ৪৫%, রোমান ক্যাথেলিক ৩৩%, মুসলমান ১০%, সনাতন ১০% এবং অন্যান্য ২%।
কেনিয়াতে ২০০৪ সালে স্থল, নৌ ও বিমানবাহিনীতে সদস্যসংখ্যা ছিল যথাক্রমে ২০ হাজার, ১,৬২০ এবং আড়াই হাজার। সামরিক বাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক নয়। কেনিয়ার সামরিক বাহিনী রাজনীতিতে তেমন প্রভাব রাখে না।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article কেনিয়া, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.