শর্করা: শ্বেতসার

শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট (ইংরেজি: Carbohydrate) হল এক ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ যার প্রতিটি অণুতে কার্বনের (C) সাথে হাইড্রোজেন (H) এবং অক্সিজেন (O) থাকে, যেখানে হাইড্রোজেন পরমাণুর সাথে অক্সিজেন পরমাণুর অনুপাত হয় ২:১ (জলের অণুর মতই)। সরল কথায় এটির স্থূল সংকেত হল Cm(H2O)n, যেখানে m এর মান এবং n এর মান ভিন্ন হতে পারে এবং n হল ৩ বা তদূর্ধ্ব সংখ্যা।। কিছু ব্যতিক্রমও অবশ্য আছে, যেমন: ডিঅক্সিরাইবোজ (এটি ডিএনএ তে চিনি হিসেবে থাকে) এর স্থুল সংকেত হল C5H10O4। একটু বৈজ্ঞানিক ভাবে বললে, শর্করা হল আসলে 'Hydrates of Carbon' কিংবা 'Polyhydroxyaldehyde' (পলিহাইড্রোক্সিঅ্যালডিহাইড) বা 'Polyhydroxyketon' (পলিহাইড্রোক্সিকিটোন)। রসায়নের ভাষায়, যে সকল পলিহাইড্রোক্সিঅ্যালডিহাইড বা পলিহাইড্রোক্সিকিটোন বা জৈব যৌগ অম্লীয় আর্দ্রবিশ্লেষণের ফলে পলিহাইড্রোক্সিঅ্যালডিহাইড বা পলিহাইড্রোক্সিকিটোন উৎপন্ন করে তাদেরকে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা বলে।

শর্করা: উৎস, শর্করার কাজ, শর্করার শ্রেণিবিভাগ
কার্বোহাইড্রেটের শ্রেণিবিভাগ

উৎস

উদ্ভিজ্জ উৎস

  • শ্বেতসার বা স্টার্চ: ধান (চাল), গম, ভুট্টা ও অন্যান্য দানা শস্য স্টার্চের প্রধান উৎস। এ ছাড়াও আলু, রাঙা আলু ও কচু,আখ ইত্যাদি এর প্রধান উৎস।
  • গ্লুকোজ: এটি চিনির তুলনায়, মিষ্টি কম। এই শর্করাটি আঙুর, আপেল, গাজর, খেজুর ইত্যাদিতে পাওয়া যায়।
  • ফ্রুকটোজ: আম, পেঁপে, কলা, কমলালেবু প্রভৃতি মিষ্টি ফলে ফুলের মধুতে থাকে।
  • সুক্রোজ: আখের রস, চিনি, গুড়, মিসরি এর উৎস।
  • সেলুলোজ: বেল, আম, কলা, তরমুজ, বাদাম, শুকনা ফল এবং সব ধরনের শাক সবজিতে থাকে।

প্রাণিজ উৎস

  • ল্যাকটোজ বা দুধ শর্করা-গরু, ছাগল ও অন্যান্য প্রাণীর দুধে থাকে।
  • গ্লাইকোজেন-পশু ও পাখি জাতীয় মুুরগি ,কবুতর যকৃৎ ও মাংসে থাকে।

শর্করার কাজ

  • প্রাণী, ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া গ্লাইকোজেন নামক কার্বোহাইড্রেট সঞ্চয় করে। জীবদেহের শক্তির প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করে।
  • উদ্ভিদের সাপোর্টিং টিস্যুর গাঠনিক উপাদান হিসেবে কাজ করে
  • উদ্ভিদের দেহ গঠনকারী পদার্থগুলোর কার্বন কাঠামো প্রদান করে।
  • হাড়ের সন্ধিস্থলে লুব্রিকেন্ট হিসেবে কাজ করে।
  • উদ্ভিদের ফুলে ও দলে মধু এবং কাণ্ড ও মূলে সুক্রোজ থাকে।.
  • উদ্ভিদে অল্প পরিমাণে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ সঞ্চিত খাদ্য হিসেবে থাকে।
  • ফ্যাটি এসিড এবং এমিনো এসিড বিপাকে সাহায্য করে
  • ক্যালভিন চক্র ও ক্রেবস চক্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ চক্রে কার্বোহাইড্রেট সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।

কার্বোহাইড্রেটের কাজঃ শর্করা আমাদের শরীরে কি ধরনের কাজ করে থাকে যা গুণে শেষ করা যাবে না। নিচে এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ দেওয়া হলো:

১।কার্বোহাইড্রেট আমাদের শরীরকে শক্তি দেয়।

২।এটি আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি জমা করে রাখে।

৩।আমাদের পেশীর পরিমাণ ঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং এর রক্ষণাবেক্ষণ করে। স্টার্চ জাতীয় খাদ্যে অনেক ডায়েটারি ফাইবার আছে। এগুলো আমাদের অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে Glucose শরীরে দ্রুত মিশে শরীরকে শক্তি জোগায়।

৪।আমাদের মস্তিস্ক এক্সক্লুসিভভাবে Glucose থেকে শক্তিগ্রহণ করে সচল থাকে।

শর্করার শ্রেণিবিভাগ

  • স্বাদের ভিত্তিতে শর্করা দুই প্রকার, যথা-
    শ্যুগার
    শ্যুগার শর্করা স্বাদে মিষ্টি। সকল মনোস্যাকারাইড এবং অলিগোস্যাকারাইড শ্যুগার। যেমনঃ গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, গ্যালাক্টোজ, সুক্রোজ ইত্যাদি।
    নন-শ্যুগার
    সকল প্রকার নন-শ্যুগার শর্করা হলো পলিস্যাকারাইড। যেমনঃ স্টার্চ, সেলুলোজ ইত্যাদি।
  • সকল কার্বোহাইড্রেট কার্বন, অক্সিজেন এবং হাইড্রোজেনের সমন্বয়ে গঠিত একপ্রকার জৈব যৌগ যার মধ্যে কার্বনের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে ভিত্তিতে শর্করা তিন প্রকার, যথা-
  1. মনোস্যাকারাইড: শর্করা জগতে এরা সবচেয়ে ক্ষুদ্র একক। যাদের পানি বিয়োজন করলে এর চেয়ে ক্ষুদ্র এককের কোনো শর্করা পাওয়া যায়না। এদের অণুতে কার্বন পরমাণুর সংখ্যা ৩-১০ টি। ৩ টি হলে ট্রায়োজ, ৪ টি হলে টেট্রোজ, ৫ টি হলে পেন্টোজ, ৬ টি হলে হেক্সোস ইত্যাদি। কিন্তু কার্বন সংখ্যা ১০ এর বেশি হলেই তা অলিগোস্যাকারাইড কিংবা পলিস্যাকারাইড হিসেবে গণ্য হবে। যেমন, গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ ইত্যাদি।
  2. অলিগোস্যাকারাইড: অলিগোস্যাকারাইড হচ্ছে এমন শর্করা যাদের পানি বিয়োজন তথা হাইড্রোলাইসিস করলে ২-১০ টি মনোস্যাকারাইড অণু পাওয়া যায়। যেমন, ৱ্যাফিনোজ, যাকে পানি বিয়োজন করলে ৩ ধরনের মনোস্যাকারাইড পাওয়া যায়।
  3. পলিস্যাকারাইড: পলিস্যাকারাইড হচ্ছে যে সকল অণুতে অসংখ্য মনোস্যাকারাইড অণু পাওয়া যায়। তথা মনোস্যাকারাইড অণুর পলিমারকেই পলিস্যাকারাইড বলে। যেমন, স্টার্চ।
  • বিজারণ ক্ষমতার ভিত্তিতে সকল কার্বোহাইড্রেট ২ প্রকার, যথা-
  1. বিজারক শর্করা (Reducing sugar)): যাদের অন্য পদার্থকে জারণ করার ক্ষমতা আছে। সাধারণত এসব চিনির জারণ ক্ষমতা প্রদর্শনের কারণ এতে অ্যাল্ডিহাইড মুলক (-CHO) কিংবা কিটোন মূলক (-C=O) এর উপস্থিতি। দুটি মূলকেরই বিজারণ ক্ষমতা থাকায় যেসকল চিনিতে এদের উপস্থিতি আছে তারা বিজারক চিনি হয়। যেমনঃ গ্লুকোজ। এটি একটি বিজারক চিনি কারণ এতে একটি অ্যাল্ডিহাইড মুলক আছে। সুকরোজ ছাড়া সকল মনোস্যাকারাইড এবং অলিগোস্যাকারাইড বিজারক চিনি।
  2. অবিজারক শর্করা: সুকরোজ এবং সকল পলিস্যাকারাইড অবিজারক শর্করা। সুকরোজের বিজারণ ক্ষমতা প্রদর্শন না করার কারণ হলো এর গঠন। সুকরোজ এক অণু গ্লুকোজ এবং এক অণু ফ্রুক্টোজের সমন্বয়ে তৈরি হয়। গঠিত চিনিতে অ্যাল্ডিহাইড অথবা কিটোন মূলক না থাকাতে এটি বিজারণ ক্ষমতা প্রদর্শন করে না।

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Tags:

শর্করা উৎসশর্করা র কাজশর্করা র শ্রেণিবিভাগশর্করা তথ্যসূত্রশর্করা বহিঃসংযোগশর্করাইংরেজি ভাষাজৈব যৌগডিঅক্সিরাইবোজডিএনএহাইড্রোজেন

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

রাধামহাস্থানগড়প্রথম মুয়াবিয়াকুরআনের ইতিহাসজাযাকাল্লাহশাবনূর অভিনীত চলচ্চিত্রের তালিকাশবনম বুবলিইউরোপসূর্যগ্রহণবাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিরাজনীতিব্র্যাক ব্যাংক পিএলসিভারতের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ইলা মিত্রসূর্যনিম২০২৩ বাংলায় তাপপ্রবাহআকবরব্যঞ্জনবর্ণঅর্থনীতিকলকাতা নাইট রাইডার্সরামকৃষ্ণ পরমহংসপ্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় (বাংলাদেশ)ময়মনসিংহসোভিয়েত ইউনিয়নআল্লাহরশিদ চৌধুরীগৌতম বুদ্ধমুআল্লাকাস্ক্যাবিসউইকিপিডিয়াইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনকৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাজালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমিশীর্ষে নারী (যৌনাসন)উমর ইবনুল খাত্তাবসুন্দরবনবাঙালি জাতিমাহমুদ কলিগোপাল ভাঁড়বাংলাদেশের সংবাদপত্রের তালিকাকারবালার যুদ্ধবাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষরাজশাহী বিভাগসিলেটমালদ্বীপের ইতিহাসউসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতানদের তালিকাকাজী নজরুল ইসলামশশাঙ্কপশ্চিমবঙ্গের জেলাইন্সটাগ্রামসুভাষচন্দ্র বসুনিরাপদ যৌনতানড়াইল জেলামুজিবনগর সরকারকোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রহলি ক্রস কলেজম্যানচেস্টার সিটি ফুটবল ক্লাবএশিয়াবাংলার প্ৰাচীন জনপদসমূহমাহিয়া মাহিঅকাল বীর্যপাতইরাককোণপাখিবাংলা লিপিবিশ্ব দিবস তালিকাডিএনএটাঙ্গাইল জেলাকাজল আগরওয়ালবেদে জনগোষ্ঠীদক্ষিণ কোরিয়াআসসালামু আলাইকুমসর্বনামপলি (অভিনেত্রী)বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধানদক্ষিণ এশিয়া২০২৪ ইসরায়েলে ইরানি হামলা🡆 More