বাংলার সংস্কৃতি বা বাঙালি সংস্কৃতি ধারণ করে আছে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বাঙালিরা, যার মধ্যে বাংলাদেশ, যেখানে বাংলা একমাত্র জাতীয় ও রাষ্ট্রভাষা এবং ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসাম, যেখানে বাংলা প্রধান এবং দাপ্তরিক ভাষা। বাঙালিদের রয়েছে ৪ হাজার বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতি। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলা অঞ্চলের রয়েছে স্বকীয় ঐতিহ্য এবং স্বতন্ত্র সংস্কৃতি। বাংলা ছিল তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে ধনী অঞ্চল।বাংলা অঞ্চল ছিল তৎকালীন সময়ের উপমহাদেশীয় রাজনীতির এবং সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। এখনো বাংলা দক্ষিণ এশীয় সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করে এবং বাঙালি সংস্কৃতির উৎসবগুলো বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।বাঙালি সংস্কৃতি ধর্মীয় ও জাতীয় দিক দিয়ে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র।
বাংলা সাহিত্য হলো বাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্য। এটি বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ সাহিত্য। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরনো। বাংলা সাহিত্যকে তিনটি প্রধান যুগে ভাগ করা যায়: প্রাচীন যুগ (৬৫০-১২০০), মধ্যযুগ (১২০০-১৮০০) এবং আধুনিক যুগ (১৮০০-বর্তমান)।
প্রাচীন যুগ
বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগ ৬৫০ থেকে ১২০০ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত। এই সময়কালে বাংলা ভাষার বিকাশ ঘটে এবং বাংলা সাহিত্যের প্রথম নিদর্শনগুলি রচিত হয়। প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের প্রধান রচনাগুলি হল:
মধ্যযুগ
বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ ১২০০ থেকে ১৮০০ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত। এই সময়কালে বাংলা সাহিত্য তার স্বর্ণযুগকে অতিক্রম করে। মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের প্রধান রচনাগুলি হল:
আধুনিক যুগ
বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগ ১৮০০ সাল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত বিস্তৃত। এই সময়কালে বাংলা সাহিত্য বিশ্ব সাহিত্যের সাথে যুক্ত হয় এবং আধুনিকতার দিকে অগ্রসর হয়। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রধান রচনাগুলি হলো:
বাংলা সাহিত্যে ইসলাম ধর্মের প্রভাব
বাংলা সাহিত্যে ইসলাম ধর্মের প্রভাব ব্যাপক। মধ্যযুগে বাংলায় ইসলাম ধর্মের প্রসার ঘটে এবং এই ধর্মের আদর্শ ও মূল্যবোধ বাংলা সাহিত্যে প্রতিফলিত হয়। বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগীয় কাব্য, গদ্য, নাটক, লোকসাহিত্য প্রভৃতিতে ইসলাম ধর্মের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে ধর্মীয় সাহিত্যের বিকাশ ঘটে। এই সময়কালে বৈষ্ণব, শাক্ত ও সুফিবাদী পদাবলী রচিত হয়। এই পদাবলীগুলিতে ইসলাম ধর্মের আদর্শ ও মূল্যবোধের প্রতিফলন দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, বৈষ্ণব পদাবলীগুলিতে আল্লাহকে ভগবান বিষ্ণুর রূপে বর্ণনা করা হয়েছে এবং সুফিবাদী পদাবলীগুলিতে আল্লাহর প্রেম ও ভক্তির কথা বলা হয়েছে।
বাংলা সাহিত্যে ইসলাম ধর্মের প্রভাব নিম্নলিখিতভাবে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে:
বাংলা সাহিত্যে ইসলাম ধর্মের প্রভাব বাংলা সাহিত্যের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ইসলাম ধর্মের প্রভাবে বাংলা সাহিত্য আরও সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় হয়েছে।
বাঙালি দর্শন হলো বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রেক্ষাপটে উদ্ভূত একটি দার্শনিক ধারা। এটি মূলত মরমি চেতনার উপর প্রতিষ্ঠিত, যাতে জগৎ ও জীবনের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়। বাঙালি দর্শনের মূল বৈশিষ্ট্য হলো:
বাঙালি দর্শনের ইতিহাস হাজার বছরেরও বেশি পুরনো। প্রাচীনকালে বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মের দর্শনই ছিল বাঙালি দর্শনের প্রধান ধারা। মধ্যযুগে ইসলামের আগমনের সাথে সাথে সুফী দর্শন বাঙালি দর্শনে প্রভাব ফেলে। সুফী দর্শন হলো ইসলামের একটি আধ্যাত্মিক ধারা যা মরমি চেতনার উপর প্রতিষ্ঠিত।
বাঙালি দর্শনের উল্লেখযোগ্য দার্শনিকদের মধ্যে রয়েছেন:
বাঙালি দর্শন বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি বাংলার মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও জীবনদর্শনকে গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
সুফী দর্শন হলো ইসলামের একটি আধ্যাত্মিক ধারা যা মরমি চেতনার উপর প্রতিষ্ঠিত। সুফীরা বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনই হলো মানুষের জীবনের সর্বোচ্চ উদ্দেশ্য। তারা এই উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন আধ্যাত্মিক অনুশীলন ও সাধনা করেন।
বাংলায় সুফী দর্শনের প্রসার ঘটে মধ্যযুগে। এসময় বাংলায় বেশ কয়েকজন বিখ্যাত সুফী দার্শনিক ও সাধক আবির্ভূত হন। তাদের মধ্যে শাহ জালাল, বড়পীর, সৈয়দ আহমদ শেরওয়ানি প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।
বাংলায় সুফী দর্শনের প্রভাব ব্যাপক। সুফী দর্শনের প্রভাবে বাংলার সংস্কৃতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়। সুফী সাহিত্য, সঙ্গীত ও শিল্পে সুফী দর্শনের চিহ্ন সুস্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায়।
বাঙালি দর্শন ও সুফী দর্শনের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ মিল হলো মরমি চেতনার উপর জোর দেওয়া। সুফী দর্শনও বিশ্বাস করে যে, জগতের সবকিছুই এক মহাশক্তির প্রকাশ। এই ধারণা বাঙালি দর্শনের মূল বৈশিষ্ট্যগুলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
বাংলায় সুফী দর্শনের প্রভাব এখনও বিদ্যমান। সুফী দরগাহ ও মাজারগুলি বাংলার মানুষের কাছে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
বাংলা সঙ্গীত বাঙালি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি একটি সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্য যা প্রাচীনকাল থেকে বিকশিত হয়ে আসছে।বাংলা সঙ্গীতের মধ্যে রয়েছে লোকগীতি, ভাওয়াইয়া, দেশপ্রেমমূলক ও আধুনিক বাংলা সঙ্গীত।
বাংলার প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় ধর্মীয় সংগীতের ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময়। এই সময়কালে হিন্দু, বৌদ্ধ ও ইসলাম ধর্মের প্রভাবে বাংলায় বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় সংগীতের বিকাশ ঘটে।
ইসলাম ধর্মীয় সংগীত
বাংলায় ইসলাম ধর্মীয় সংগীতের বিকাশ ঘটে ষোড়শ শতাব্দীতে। ইসলাম ধর্মীয় সংগীতের মূল উদ্দেশ্য হলো মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় অনুভূতি ও আবেগ জাগ্রত করা।
বাংলার প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় ইসলাম ধর্মীয় সংগীতের উল্লেখযোগ্য কিছু রূপ হলো:
হিন্দু ধর্মীয় সংগীত
বাংলার প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় হিন্দু ধর্মীয় সংগীতের মূল উৎস হলো বেদ ও পুরাণ। বেদ ও পুরাণে বর্ণিত দেবদেবী, আচার-অনুষ্ঠান ও নীতিশাস্ত্রের উপর ভিত্তি করে এই সংগীতের বিকাশ ঘটে।
প্রাচীন বাংলায় হিন্দু ধর্মীয় সংগীতের প্রধান রূপ ছিল সংকীর্তন। সংকীর্তন হলো এক ধরনের ভক্তিমূলক গানের অনুষ্ঠান যেখানে ভক্তরা একত্রিত হয়ে গান ও নাচের মাধ্যমে ঈশ্বরের আরাধনা করেন। সংকীর্তনের মূল উদ্দেশ্য হলো ভক্তদের মধ্যে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি ও অনুরাগ জাগ্রত করা।
মধ্যযুগে বাংলায় হিন্দু ধর্মীয় সংগীতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রূপ হল কীর্তন। কীর্তন হলো এক ধরনের ধর্মীয় গান যেখানে ধর্মীয় বিষয়বস্তুকে সুর ও ছন্দের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। কীর্তনের বিষয়বস্তু সাধারণত ঈশ্বরের গুণকীর্তন, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও নীতিশাস্ত্র নিয়ে থাকে।
বাংলার প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় হিন্দু ধর্মীয় সংগীতের উল্লেখযোগ্য কিছু রূপ হল:
বৌদ্ধ ধর্মীয় সংগীত
বাংলায় বৌদ্ধ ধর্মীয় সংগীতের বিকাশ ঘটে খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীতে। বৌদ্ধ ধর্মীয় সংগীতের মূল উদ্দেশ্য হল বৌদ্ধ ধর্মের মূল নীতি ও শিক্ষাগুলিকে জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়া।
বাংলার প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় বৌদ্ধ ধর্মীয় সংগীতের উল্লেখযোগ্য কিছু রূপ হল:
বাউল সঙ্গীত | |
---|---|
দেশ | বাংলাদেশ |
ধরন | সামাজিক চর্চা, ঐতিহ্যবাহী উৎসব |
সূত্র | 00107 |
ইউনেস্কো অঞ্চল | দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া |
অন্তর্ভূক্তির ইতিহাস | |
অন্তর্ভূক্তি | ২০০৮ (তৃতীয় অধিবেশন) |
তালিকা | নির্দশ |
বাউল সঙ্গীত হলো বাংলার একটি প্রাচীন এবং সমৃদ্ধ লোকসঙ্গীতের ধারা। এটি বাউল সম্প্রদায়ের সাধনসঙ্গীত হিসেবে পরিচিত। বাউলরা হলো এক ধরনের সাধক যারা সুফিবাদের অনুসারী। তারা আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভের জন্য গৃহত্যাগ করে সারা দেশে ঘুরে বেড়ায় এবং গান গেয়ে তাদের দর্শন প্রচার করে।বাউল গানের উদ্ভব সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য জানা যায় না। তবে অনুমান করা হয় যে, খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দী থেকেই বাংলায় এ গানের প্রচলন ছিল। বাউল গানের প্রবক্তাদের মধ্যে লালন শাহ্, পাঞ্জু শাহ্, সিরাজ শাহ্ এবং দুদ্দু শাহ্ প্রধান। এঁদের ও অন্যান্য বাউল সাধকের রচিত গান গ্রামাঞ্চলে 'ভাবগান' বা 'ভাবসঙ্গীত' নামে পরিচিত।বাউল গানের মূল বৈশিষ্ট্য হলো এর আধ্যাত্মিকতা। বাউল গানগুলিতে প্রেম, ঈশ্বরপ্রেম, আত্মার যাত্রা, মুক্তি ইত্যাদি বিষয়গুলিকে তুলে ধরা হয়। বাউল গানগুলির ভাষা সরল এবং সুর অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। বাউল গানে একতারা, ঢোল, মৃদঙ্গ, তবলা, সানাই ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয়।বাউল গান বাংলা সংস্কৃতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এটি বাংলা সাহিত্য, সঙ্গীত এবং দর্শনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। বাউল গানগুলো বাংলার মানুষের আত্মার কথা বলে এবং তাদের আধ্যাত্মিকতাকে জাগ্রত করে।অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলায় বাউল নামে এক অধ্যাত্মবাদী চারণকবি সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটে। মনে করা হয়, তান্ত্রিক কর্তাভজা সম্প্রদায় ও ইসলামি সুফি দর্শনের ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল এঁদের গানে। বাউলরা তাদের চিরন্তন অন্তর্যামী সত্ত্বা মনের মানুষ-এর ঘুরে ঘুরে গান গাইতেন এবং ধর্মে ধর্মে অযৌক্তিক ভেদাভেদ ও আনুষ্ঠানিকতার কথা তুলে ধরতেন। কুষ্টিয়ার লালন ফকিরকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাউল মনে করা হয়। তিনি ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্যক্তিত্ব ছিলেন। বাউল সঙ্গীতের আরও কয়েকজন বিশিষ্ট নাম হলেন মধ্যযুগের হাসন রাজা এবং আধুনিক যুগের বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিম ও বাউল-সম্রাট পূর্ণদাস বাউল৷ মানবকল্যাণ কামনায় সবচেয়ে বেশি সুর ধ্বনিত হয়েছে মরমি সাধক লালনের গানে। লালনের সাম্যবাদী চিন্তাই আজকের উদার মানবতাবাদ। লালন বলেন, ‘এমন সমাজ কবে গো সৃজন হবে/যেদিন হিন্দু মুসলমান/বৌদ্ধ খ্রিস্টান/জাতি গোত্র নাহি রবে।’ বস্তুত উনিশ শতকে লালনের গান তার সর্বজনীন আবেদনের কারণে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। লালনের কারণেই হিন্দু, মুসলমান সম্প্রদায়ের দেহতত্ত্ববাদীরা সব বিভেদ ভুলে যুত সাধনায় মিলিত হন। শিষ্য-ভক্তদের মাধ্যমে লালনের গান প্রচার ও প্রসার লাভ করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও লালনের কথা প্রচার করেন বহির্বিশ্বে। লালনের পর পাণ্ডু শাহ, দুদ্ধ শাহ, ভোলা শাহ, পাগলা কানাই, রাধারমণ, কাঙাল হরিনাথ, হাছন রাজা, অতুল প্রসাদ, বিজয় সরকার, দ্বিজদাস, জালাল খাঁ, উকিল মুন্সী, রশিদ উদ্দিন, শাহ আব্দুল করিম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখ কবি ও বাউলের মাধ্যমে এ দেশের ঐতিহ্যবাহী লোকায়ত সংগীতের ধারাটি আরো পুষ্ট হয়। বর্তমান প্রণব কুমার সত্যব্রত ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ আগস্ট ২০২৩ তারিখেনিয়মিত বাউল গান লিখে যাচ্ছেন।
ইউনেস্কো ২০০৫ সালে বিশ্বের মৌখিক এবং দৃশ্যমান ঐতিহ্যসমূহের মাঝে বাউল গানকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করে।
ভাওয়াইয়া গান হলো একটি লোকসঙ্গীতের ধারা যা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার জেলায় প্রচলিত। ভাওয়াইয়া গান মূলত কৃষিজীবী মানুষের আনন্দ-বেদনা, প্রেম-বিরহ, প্রকৃতি ও জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রচিত।ভাওয়াইয়া গানের মূল বিষয়বস্তু হলো কৃষিজীবী মানুষের জীবনযাত্রা। এই গানে কৃষকদের শ্রম, কষ্ট, আনন্দ, দুঃখ, প্রেম, বিরহ, প্রকৃতি ও জীবনের বিভিন্ন বিষয়ের বর্ণনা পাওয়া যায়। ভাওয়াইয়া গানের সুর ও ছন্দ অত্যন্ত মনোরম ও আকর্ষণীয়। এই গানের ভাষাও অত্যন্ত সহজবোধ্য ও প্রাঞ্জল।ভাওয়াইয়া গানে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে প্রধান বাদ্যযন্ত্র হল ঢোল, বাঁশি, একতারা, তবলা, মন্দিরা, ঝুমঝুম, খোল, দোতারা ইত্যাদি। ভাওয়াইয়া গানের পরিবেশনা অত্যন্ত মনোরম ও প্রাণবন্ত। এই গানের পরিবেশনায় সাধারণত দুইজন শিল্পী অংশগ্রহণ করে। একজন শিল্পী গান পরিবেশন করে এবং অন্যজন ঢোল, বাঁশি, তবলা ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র বাজায়।ভাওয়াইয়া গান বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এই গানটি বাংলা লোকসঙ্গীতের এক অনন্য ধারা। ভাওয়াইয়া গান শুধুমাত্র একটি গান নয়, এটি একটি জীবনধারা। ভাওয়াইয়া গান বাংলার কোরবানি উৎযাপনের সময় বিখ্যাত।
ভাটিয়ালি গান হলো বাংলার একটি প্রাচীন লোকসঙ্গীত ধারা। এটি মূলত নৌকা বাইচের সময় পরিবেশিত হত। ভাটিয়ালি গানগুলির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এর সুমধুর সুর এবং গানের কথার আবেগপ্রবণতা। ভাটিয়ালি গানে প্রকৃতির সৌন্দর্য, প্রেম, প্রণয়, বিরহ, বেদনা, ইত্যাদির বর্ণনা করা হয়।ভাটিয়ালি গানের উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন যে এটি ষোড়শ শতাব্দীতে পদ্মা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে উদ্ভূত হয়েছিল। অন্যরা মনে করেন যে এটি আরও প্রাচীন এবং এটি ত্রয়োদশ শতাব্দীতে পদ্মা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে উদ্ভূত হয়।
জারি গান বাংলাদেশের এক প্রকারের ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীতরীতি। ফার্সি জারি শব্দের অর্থ শোক। বাংলা ও বাঙালিদের মুহাররম উৎসব উদযাপনে কারবালার বিয়োগান্তক কাহিনীর স্মরণে মূলত এই গানের উদ্ভব। ১৭শ শতক থেকে বাংলায় এই গানের ধারা শুরু হয়। ইসলামের ইতিহাস ভিত্তিক ঐতিহ্যবাহী নাট্যধারার সর্বাধিক জনপ্রিয় পরিবেশনারীতি হচ্ছে জারিগান। কারবালার যুদ্ধে শহীদ ইমাম হাসান-ইমাম হোসেন ও অন্যান্য চরিত্রের অন্তর্গত বেদনা নিয়ে এক ধরনের আহাজারিমূলক সুরে সাধারণত নৃত্য সহযোগে জারিগান পরিবেশিত হয়ে থাকে। এক সময় সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন আঙ্গিকে জারিগানের প্রচলন ছিল। বর্তমানে এ ধরনের নাট্য পরিবেশনার প্রচলন পূর্বের ধারাবাহিকতার চেয়ে কিছুটা কমে গেলেও তা একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। ‘জারিগান’ কথাটির ব্যাখ্যা : জারি শব্দটির অর্থ বিলাপ বা ক্রন্দন। এ শব্দটির উৎস-মূল ফার্সি ভাষা। তবে, বাঙলায় এসে শব্দটি অর্থ ব্যাপকতা লাভ করেছে। বাংলাদেশে মহররমের বিশেষ দিনে কারবালার শোকাবহ ঘটনা অবলম্বনে নৃত্যগীত সহকারে যে কাহিনী পরিবেশিত হয় তা সাধারণভাবে জারিগান বলে পরিচিত। এছাড়া, যে কোনো ধর্মীয়, অতিলৌকিক বা সামাজিক বিষয় নিয়ে রচিত গানকেও কখনো কখনো জারিগান নামে ডাকা হয়। কোথাও কোথাও আবার কবিগানকেও জারিগান বলা হয়। সে যা-ই হোক, কারবালা শোকাবহ ঘটনা জারিগানের প্রধান উপজীব্য।
সারি গান আবহমান বাংলার লোকসঙ্গীত। শ্রমিক ও কর্মজীবীদের মাঝে বিশেষ জনপ্রিয় হওয়ায় সারি গান ‘শ্রম-সঙ্গীত’ বা ‘কর্ম-সঙ্গীত’ নামেও পরিচিত। ছাদ পেটানোর সময় এ গান গাওয়া হয় বলে এঁকে ছাদ পেটানোর গান ও বলা হয়। সারি গান নৌকার মাঝি-মাল্লাদের সঙ্গেই বেশি যায়। নৌকার মাঝি, কর্মজীবী ও শ্রমিকরা দলবদ্ধভাবে বা সারিবদ্ধভাবে কাজের তালে তালে শ্রম লাঘব করার জন্য এ গান থেকে থাকে। এ জন্যই এ গানের নাম হয়েছে ‘সারি গান’। মধ্যযুগের কবি বিজয় গুপ্তের পদ্মাপুরাণে প্রথম সারি গানের উল্লেখ পাওয়া যায়। সেখানে সঙ্গীতের সমার্থক শব্দ রূপে ‘সারি’ শব্দটির ব্যবহার হয়েছে। পরবর্তীতে মোগল বাদশাহদের নৌ বাহিনীর দ্বারা নৌকা বাইচের গোড়াপত্তন হলে এর ব্যাপক প্রসার ও প্রচার ঘটে। পরবর্তীতে শ্রমজীবীদের মধ্যে যেমন, কৃষকদের ফসল কাটা, ফসল তোলা, ক্ষেত নিড়ানো, হাল চাষ বা হাল বাওয়া ও ফসল ঘরে তোলার পরিশ্রম লাঘবের জন্য এ লোকগানের প্রচলন দেখা যায়। তাছাড়া পরিশ্রম নির্ভর কাজ যেমন, গাছ কাটা, ইমারত ভাঙ্গা ইত্যাদি কাজে এর প্রচলন লক্ষ করা যায়। আবহমান বাংলার এ লোকসঙ্গীতটি এখন শ্রমিকদের গণ্ডি ছাড়িয়ে বাংলার মানুষের চিত্তবিনোদন ও প্রতিযোগিতামূলক খেলার উপাদানে পরিণত হয়েছে।
বাংলা সঙ্গীতের সর্বাপেক্ষ প্রসিদ্ধ ধারাটি হলো রবীন্দ্রসংগীত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সারা জীবনে ২,২৩০টি গান রচনা করেছিলেন। ভক্তি, প্রেম, প্রকৃতি, দেশাত্মবোধ ইত্যাদি নানা বিষয়কেন্দ্রিক এই গানগুলিই রবীন্দ্রসঙ্গীত বা রবীন্দ্রগান নামে পরিচিত। এই গানগুলির কথায় প্রাচীন হিন্দু ধর্মশাস্ত্র উপনিষদ ও মধ্যযুগীয় বৈষ্ণব পদাবলি ও বাউল গানের প্রভাব গভীর। সুরের দিক থেকে হিন্দুস্তানি ও কর্ণাটিক শাস্ত্রীয় সংগীত, কীর্তন, শ্যামাসংগীত, বাউল গান, এমনকি ইংরেজি, আইরিশ ও স্কটিশ লোকসংগীতেরও প্রভাব রয়েছে রবীন্দ্রনাথের গানে। রবীন্দ্রসঙ্গীতের বিশিষ্ট গায়ক-গায়িকারা হলেন: শান্তিদেব ঘোষ, শৈলজারঞ্জন মজুমদার, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবব্রত বিশ্বাস, সুচিত্রা মিত্র, পঙ্কজ কুমার মল্লিক, সন্তোষ সেনগুপ্ত, সুবিনয় রায়, চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়, অশোকতরু বন্দ্যোপাধ্যায়, সাগর সেন, সুমিত্রা সেন, ঋতু গুহ, পূরবী মুখোপাধ্যায়, পূর্বা দাম, সুশীল মল্লিক, মোহন সিংহ, শর্মিলা রায় পোমো, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, ইন্দ্রাণী সেন, স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত, প্রমিতা মল্লিক, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, শ্রাবণী সেন, শাসা ঘোষাল প্রমুখ। বিশেষভাবে উল্লেখ্য, ভারত ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জাতীয় সংগীত, যথাক্রমে, জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ও আমার সোনার বাংলা গানদুটি রবীন্দ্রসংগীত।
কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন একজন বাঙালি কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, নাট্যকার, সাংবাদিক, সম্পাদক, এবং দার্শনিক। তিনি বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। তার লেখা গানগুলোকে "নজরুলগীতি" বলা হয়। নজরুলগীতি বাংলা সঙ্গীতের এক অমূল্য সম্পদ।নজরুলগীতির বিষয়বস্তু বিচিত্র। এতে রয়েছে প্রেম, প্রকৃতি, দেশপ্রেম, মানবতাবাদ, বিদ্রোহ, এবং আধ্যাত্মিকতা। নজরুলগীতির ভাষা ও ছন্দ অত্যন্ত শক্তিশালী ও বৈচিত্র্যময়। তার গানে রয়েছে আবেগ, উচ্ছ্বাস, এবং স্বপ্নের ছোঁয়া।নজরুলগীতি বাংলা সঙ্গীতের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিল। তার গানগুলো বাংলার মানুষের হৃদয়ে গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছে। নজরুলগীতি বাংলা সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। নজরুলের ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ গানটি বাংলার ঈদোৎসবে বিখ্যাত।
বাংলা আধুনিক গানের ধারাটিও যথেষ্ট সমৃদ্ধ। এই ধারায় উল্লেখযোগ্য গায়ক-গায়িকারা হলেন: হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, কিশোর কুমার, রাহুল দেব বর্মন, শচীন দেব বর্মন, গীতা দত্ত, শ্যামল মিত্র, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায়, কানন দেবী, সুধীরলাল চক্রবর্তী, জগন্ময় মিত্র, দিলীপকুমার রায়, আঙুরবালা, ইন্দুবালা, উৎপলা সেন, সুপ্রীতি ঘোষ, আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, কুমার শানু, শান,ও শ্রেয়া ঘোষাল। ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য, পান্নালাল ভট্টাচার্য, মৃণালকান্তি ঘোষ, ভবানীচরণ দাস, রাধারাণী দেবী ও গীতশ্রী ছবি বন্দ্যোপাধ্যায় ভক্তিগীতিতে এবং আধুনিক বাংলা লোকসঙ্গীতে আব্বাসউদ্দীন আহমদ,নির্মলেন্দু চৌধুরী ও অমর পাল কয়েকটি অবিস্মরণীয় নাম।
বাংলা গীতিকারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অজয় ভট্টাচার্য, হিমাংশু দত্ত, সলিল চৌধুরী, হিরেন বসু, সুবোধ পুরকায়স্থ, প্রণব রায়, শৈলেন রায়, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, শ্যামল গুপ্ত, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, মুকুল দত্ত, প্রতুল মুখোপাধ্যায়, কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য ও রতন কাহার। অন্যদিকে সুরকারদের মধ্যে উল্লেখ্য রবি শংকর, হিমাংশু দত্ত, সলিল চৌধুরী, কমল দাশগুপ্ত, রাইচাঁদ বড়াল, তিমিরবরণ ভট্টাচার্য, কালীপদ সেন, নচিকেতা ঘোষ, রবিন চট্টোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সুধীন দাশগুপ্ত, শচীন দেব বর্মন, রাহুল দেব বর্মন, ও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাঙালি নৃত্যশিল্প একটি সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় শিল্প। এটি প্রাচীনকাল থেকেই বাংলার মানুষের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাঙালি নৃত্যশিল্পের মূল ভিত্তি হলো লোকনৃত্য। বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের লোকনৃত্য প্রচলিত রয়েছে।
বাংলার লোকনৃত্যগুলো সাধারণত গ্রামীণ জীবনের বিভিন্ন দিককে প্রতিফলিত করে। এগুলো প্রায়ই কৃষি, প্রেম, বিবাহ, ধর্ম ইত্যাদি বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে।বাংলার কিছু জনপ্রিয় লোকনৃত্যের মধ্যে রয়েছে:
বাঙালি চিত্রকলা একটি সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্য নিয়ে গঠিত। এটি প্রাচীনকাল থেকেই বিবর্তিত হয়ে আসছে, এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও প্রভাব দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে।
বাংলাদেশে চিত্রকলার প্রাচীনতম নিদর্শনগুলি প্রত্নতাত্ত্বিক খনন থেকে পাওয়া গেছে। এই নিদর্শনগুলিতে রয়েছে গুহাচিত্র, মৃৎশিল্পে চিত্রকর্ম এবং ধাতব ও পাথরের বস্তুতে চিত্রকর্ম। এই চিত্রকর্মগুলি প্রায়শই ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক প্রকৃতির এবং তারা প্রাচীন বাংলার শিল্প ও সংস্কৃতির একটি অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে।
মধ্যযুগে, বাংলায় চিত্রকলার একটি সমৃদ্ধ ঐতিহ্য বিকাশ লাভ করে। এই সময়ের চিত্রকর্মগুলো প্রায়শই ধর্মীয় বা ঐতিহাসিক প্রকৃতির ছিল এবং সেগুলোতে ইসলামী ও হিন্দু প্রভাব উভয়ই লক্ষ্য করা যায়। এই চিত্রকর্মগুলিতে রয়েছে মুঘল চিত্রকলা, মিনিয়েচার চিত্রকলা এবং বাংলার নিজস্ব অনন্য শৈলী।
আধুনিক যুগে বাংলায় চিত্রকলা একটি নতুন যুগে প্রবেশ করে। এই সময়ের চিত্রশিল্পীরা পশ্চিমা শিল্পের প্রভাব গ্রহণ করে, এবং তারা নতুন শৈলী ও কৌশলগুলির বিকাশ করে। এই চিত্রশিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন নন্দলাল বসু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, এবং প্রমথেশ বড়ুয়া।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর, বাংলা চিত্রকলা একটি নতুন অধ্যায় শুরু করে। এই সময়ের চিত্রশিল্পীরা বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে প্রতিফলিত করার জন্য নতুন শৈলী ও কৌশলগুলির বিকাশ করে। এই চিত্রশিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন জয়নুল আবেদীন, কামরুল হাসান,হাশেম খান,শাহাবুদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
বাংলার স্থাপত্য একটি সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্য কয়েক শতাব্দী ধরে বিবর্তিত হয়েছে এবং বিভিন্ন ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব দ্বারা গঠিত হয়েছে।
বাংলার স্থাপত্যের প্রাচীনতম নিদর্শনগুলো খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে নির্মিত হয়। এই সময়কালে, বাংলায় বৌদ্ধধর্ম ও হিন্দুধর্মের বিকাশ ঘটে এবং এই ধর্মগুলোর প্রভাবে বিভিন্ন ধরনের ধর্মীস্থাপনা নির্মিত হয়। এই সময়ের উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য নিদর্শনগুলোর মধ্যে রয়েছে পাহাড়পুরের মহাবিহার ও পোড়ামাটির মন্দির।
খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে, গুপ্ত সাম্রাজ্যের উত্থানের সাথে সাথে বাংলায় স্থাপত্যে একটি নতুন যুগের সূচনা ঘটে। এই সময়কালে, মন্দির নির্মাণে নতুন শৈলীর বিকাশ ঘটে। এই শৈলীটিকে "গুপ্ত স্থাপত্য" বলা হয় এবং এটি উত্তর ভারতের অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে। গুপ্ত স্থাপত্যের উল্লেখযোগ্য নিদর্শনগুলোর মধ্যে রয়েছে বগুড়ার রত্নদ্বীপ মন্দির, জোড় বাংলা।
পাল সাম্রাজ্যের সময় (ষষ্ঠ থেকে নবম শতাব্দী), বাংলায় স্থাপত্যে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিকাশ ঘটে। এই সময়কালে, মন্দির নির্মাণে একটি নতুন শৈলীর বিকাশ ঘটে যাকে "পাল স্থাপত্য" বলা হয়। পাল স্থাপত্যশৈলী গুপ্ত স্থাপত্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়, কিন্তু এটিতে নিজস্ব অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। পাল স্থাপত্যের উল্লেখযোগ্য নিদর্শনগুলোর মধ্যে রয়েছে পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার।
নবম শতাব্দীতে, বাংলায় মুসলিমদের আগমনের সাথে সাথে স্থাপত্যে একটি নতুন পরিবর্তন আসে। এই সময়কালে, মসজিদ নির্মাণের একটি নতুন যুগ শুরু হয়। মুসলিম স্থাপত্যশৈলী বাংলার স্থাপত্যশিল্পের উপর গভীর প্রভাব ফেলে এবং বাংলায় একটি নতুন স্থাপত্য শৈলীর বিকাশ ঘটায়। মুসলিম স্থাপত্যের উল্লেখযোগ্য নিদর্শনগুলোর মধ্যে রয়েছে বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ, শাহি মসজিদ, লালবাগ কেল্লা।
বাংলার স্থাপত্যের বিকাশে বিভিন্ন ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। এই প্রভাবগুলো বাংলার স্থাপত্যের বৈচিত্র্য ও সমৃদ্ধির ব্যাপকভাবে ভূমিকা পালন করেছে।
বাংলার স্থাপত্যের কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো:
বাংলার স্থাপত্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্য বাংলার ইতিহাস ও সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বাংলার কাপড়ের একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে যা শত শত বছর ধরে চলে আসছে। প্রাচীনকাল থেকেই বাংলায় কাপড় তৈরির প্রমাণ পাওয়া যায়। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে রচিত বৌদ্ধ গ্রন্থগুলোতে বাংলায় কাপড় তৈরির উল্লেখ রয়েছে।মধ্যযুগে বাংলায় কাপড় তৈরির শিল্প ব্যাপকভাবে বিকশিত হয়। এই সময়কালে বাংলার কাপড় তার উচ্চ মানের জন্য পরিচিত ছিল। বাংলার কাপড়ে মুসলিম সংস্কৃতির প্রভাব সুদূরপ্রসারী। মুসলিম শাসনামলে বাংলায় কাপড় তৈরির শিল্প ব্যাপকভাবে বিকশিত হয়। এই সময়কালে নতুন নতুন কাপড়ের ধরনের আবির্ভাব ঘটে এবং কাপড়ের নকশায় নতুন নতুন উপাদান যোগ করা হয়। বাংলা থেকে কাপড় রপ্তানি বিশ্বব্যাপী একটি বড় ব্যবসা ছিল।ব্রিটিশ শাসনকালে বাংলার কাপড়ের শিল্প কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ব্রিটিশরা বাংলায় তাদের নিজেদের কাপড়ের কারখানা স্থাপন করে এবং বাংলার কাপড়ের বাজারে প্রতিযোগিতা শুরু করে।
স্বাধীনতার পর বাংলার কাপড়ের শিল্প পুনরুজ্জীবিত হয়। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে বাংলার কাপড়ের শিল্প আজ আবারও বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলার কাপড়শিল্পের ইতিহাস খুবই সমৃদ্ধ। প্রাচীনকালে বাংলার কাপড়ের সুনাম ছিল বিশ্বব্যাপী। তখনকার কাপড়গুলোর রং, নকশা, এবং গুণমান ছিল অতুলনীয়। বাংলার কাপড়শিল্পের বিকাশে মুঘল সম্রাটদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। তারা বাংলার কাপড়শিল্পের উন্নতির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন।
মুসলিম শাসনামলে বাংলায় কাপড় তৈরির শিল্পে নিম্নলিখিত প্রভাবগুলি লক্ষ্য করা যায়:
মুসলিম সংস্কৃতির প্রভাবে বাংলার কাপড় একটি অনন্য এবং সুন্দর শিল্পকলা হয়ে ওঠে। এই শিল্প আজও বাংলার সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বাংলার কিছু বিখ্যাত মুসলিম-প্রভাবিত কাপড়ের মধ্যে রয়েছে:
এই কাপড়গুলো তাদের সৌন্দর্য, মানের, এবং ঐতিহ্যবাহী মূল্যের জন্য বিখ্যাত। এগুলি বাংলার সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এগুলি বিশ্বজুড়ে মানুষকে আকর্ষণ করে।
বাংলার কাপড়শিল্পের প্রধান প্রধান শাখাগুলো হলো:
বাংলার কাপড়শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই শিল্পের মাধ্যমে দেশের প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয়। বাংলার কাপড়শিল্পের উন্নতির জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
বাংলার কাপড়শিল্পের কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো:
বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বড় কাপড় উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে পরিচিত। এই শিল্পের মাধ্যমে দেশের প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয়। বাংলার কাপড়শিল্পের উন্নতির জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
বাঙালির পোশাক একটি বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্য যা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে। প্রাচীনকালে, বাঙালিরা মূলত গাছের বাকল, পশুর চামড়া এবং পাতা দিয়ে তৈরি পোশাক পরতেন। আর্যদের আগমনের পর, বাঙালিরা তুলা, রেশম এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক উপকরণ থেকে তৈরি পোশাক পরতে শুরু করেন। প্রাচীন বাংলায় সেলাই করা পোশাক অপবিত্র বলে মনে করা হতো। বাংলায় মুসলমান শাসকদের আগমনের পর সেলাই করা পোশাক যেমন গোল জামা ও মধ্যে এশিয়া থেকে মুঘল শাসকদের দারা আনা সালোয়ার-কামিজ বাঙালি নারীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পুরানো আমলে জামা সাধারনত বাংলা রেশম বা মসলিনের হত। বাঙালি পোশাক বিভিন্ন সময়ের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে। তবে, কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা বাঙালি পোশাকের সাথে সবসময়ই জড়িত থাকে। বাঙালিদের পোশাকের ঐতিহ্য হাজার বছরের পুরনো। ইসলামের আগমনের আগে, বাঙালিরা বিভিন্ন ধরনের পোশাক পরত। ইসলামের আগমনের পর, মুসলমানরা তাদের নিজস্ব পোশাক রীতিনীতি গড়ে তোলে।বাঙালিদের পোশাকের ঐতিহ্য বিভিন্ন উপায়ে প্রকাশিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, বাঙালি মুসলমানরা সাধারণত তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে প্রতিফলিত করার জন্য তাদের পোশাকে সাদা রঙ ব্যবহার করে। তারা তাদের সামাজিক অবস্থানকে প্রতিফলিত করার জন্যও তাদের পোশাকে বিভিন্ন ধরণের কাপড় এবং অলঙ্কার ব্যবহার করে।
পুরুষদের পোশাক
বাঙালি পুরুষদের পোশাকের মূল উপাদান হলো পায়জামা, পাঞ্জাবি এবং টুপি। পায়জামা হলো একটি লম্বা, ঢিলেঢালা প্যান্ট যা গোড়ালি পর্যন্ত পৌঁছায়। পাঞ্জাবি হলো একটি লম্বা, ঢিলেঢালা শার্ট যা হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছায়। টুপি হলো একটি ছোট, গোলাকার টুপি যা মাথায় পরা হয়।
নারীদের পোশাক
বাঙালি নারীদের পোশাকের মূল উপাদান হলো শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, বোরকা এবং হিজাব। শাড়ি হলো একটি দীর্ঘ, সরু কাপড় যা শরীরের চারপাশে জড়ানো হয়। সালোয়ার-কামিজ হলো একটি দুই টুকরো পোশাক যা শাড়ির চেয়ে সহজেই পরার জন্য তৈরি। বোরকা হলো একটি মুখ ঢেকে রাখার জন্য ব্যবহৃত একটি পোশাক।
বাংলার মৃৎশিল্প একটি সমৃদ্ধ ও ঐতিহ্যবাহী শিল্প। এটি বাংলার সংস্কৃতি ও ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলার মৃৎশিল্পের ইতিহাস প্রায় ৫০০০ বছরের পুরনো। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো সভ্যতার সময় থেকেই বাংলায় মৃৎশিল্পের অস্তিত্ব ছিল।
বাংলার মৃৎশিল্পের বিভিন্ন ধরন রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের মৃৎশিল্পের প্রচলন রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
বাংলার মৃৎশিল্প আজও তার ঐতিহ্য ও গুণগত মান ধরে রেখেছে। এটি বাংলার সংস্কৃতি ও ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বাঙালির খাবার |
---|
বাঙালির খাবার ও রন্ধনশৈলী দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় শিল্প। বাঙালি রন্ধনশৈলীর বৈশিষ্ট্য হলো এর স্বাদ ও সুগন্ধ। ভাত, মাছ, মাংস, ডাল, সবজি, তরকারি, মিষ্টান্ন ইত্যাদি দিয়ে বাঙালি খাবারের তালিকা সাজানো হয়। বাঙালি রন্ধনশৈলীর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর মশলার ব্যবহার। বিভিন্ন ধরনের মশলা দিয়ে বাঙালি খাবারের স্বাদ ও গন্ধ আরও বাড়ানো হয়। বাঙালি রান্নায় প্রচুর পরিমাণে মশলা ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে হলুদ, মরিচ, জিরা, ধনে, গরম মশলা, আদা, রসুন, পেঁয়াজ ইত্যাদি।
বাঙালি খাবারের প্রধান উপাদান হলো ভাত, মাছ, মাংস, সবজি, ডাল, এবং বিভিন্ন ধরনের মশলা। ভাত হলো বাঙালির প্রধান খাবার, এবং এটি সাধারণত মাছের ঝোল, মাংসের তরকারি, বা সবজির তরকারির সাথে পরিবেশন করা হয়। মাছ হলো বাঙালিদের সবচেয়ে প্রিয় খাবার, এবং এটি বিভিন্নভাবে রান্না করা হয়, যেমন ভাজা, সিদ্ধ, বা ঝোল। মাংসের মধ্যে মুরগি, গরু, এবং খাসি সবচেয়ে জনপ্রিয়। সবজির মধ্যে আলু, বেগুন, মটরশুঁটি, এবং পটল সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। ডাল হল একটি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যা সাধারণত ভাতের সাথে পরিবেশন করা হয়। মশলা হলো বাঙালি খাবারের স্বাদ এবং সুস্বাদু ঘ্রাণের উপকরণ। বাঙালি রান্নায় সাধারণত হলুদ, মরিচ, জিরা, ধনে, এবং গরম মশলা ব্যবহার করা হয়।
বাঙালির খাদ্যতালিকায় পিঠা একটি অতি পরিচিত এবং জনপ্রিয় খাবার। পিঠার সাথে বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিভিন্ন উৎসব, অনুষ্ঠান, ও পার্বণে পিঠা খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।বাঙালির খাদ্যতালিকায় পিঠার একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। পিঠা প্রধানত দুটি প্রকারের: মিষ্টি পিঠা এবং ঝাল পিঠা। মিষ্টি পিঠার মধ্যে রয়েছে ভাপা পিঠা, ক্ষীর পিঠা, চিতই পিঠা, পাটিসাপটা,নকশী পিঠা,পুলি পিঠা,দুধ চিতই পিঠা রসমালাই, রসগোল্লা পিঠা, মালপোয়া, চন্দ্রপুলি, সন্দেশ পিঠা, মালাইকারি পিঠা ইত্যাদি। ঝাল পিঠার মধ্যে রয়েছে বেগুন পিঠা, আলু পিঠা, নারকেল পিঠা, তেলের পিঠা, ইত্যাদি।বাঙালির বিভিন্ন উৎসব, অনুষ্ঠান, ও পার্বণে পিঠা খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। যেমন, পহেলা বৈশাখ, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, দুর্গাপূজা, লক্ষ্মীপূজা, সরস্বতী পূজা, ইত্যাদি। এইসব উৎসবের সময় বিভিন্ন ধরনের পিঠা তৈরি করা হয় এবং খাওয়া হয়।পিঠা তৈরির জন্য বিভিন্ন ধরনের উপকরণ ব্যবহার করা হয়। যেমন, চালের গুঁড়া, আটা, ময়দা, দুধ, চিনি, নারকেল, গুড়, ইত্যাদি। পিঠা তৈরির বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। যেমন, ভাজা পিঠা, সিদ্ধ পিঠা, বেক করা পিঠা, ইত্যাদি।বাঙালির খাদ্যতালিকায় পিঠা একটি অপরিহার্য খাবার। পিঠা বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বাঙালি রন্ধনশৈলীর কিছু জনপ্রিয় খাবার হলো:
বাংলা চলচ্চিত্র হলো বাংলা ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্র। এই শিল্পটি মূলত বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাস প্রায় শতাব্দী পুরনো। ১৯১৩ সালে দাদাসাহেব ফালকে নির্মিত "রাজা হরিশচন্দ্র" ছিল বাংলা ভাষার প্রথম চলচ্চিত্র। তবে, বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালি যুগ শুরু হয় ১৯৫০-এর দশকে। ঢাকা,কলকাতা দুই মহানগরী বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য বিখ্যাত। মূলত কলকাতাতেই প্রথম বাংলা চলচ্চিত্র নির্মিত হত। পরে ১৯৫৬ সাল থেকে ঢাকায় বাংলা চলচ্চিত্র নির্মান শুরু হয়। বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিত রায়, মৃনাল সেন থেকে তারেক মাসুদ পর্যন্ত সবাই কমবেশ সুপরিচিত। ১৯২৭-২৮ সালে ঢাকায় প্রথম চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। নওয়াব পরিবারের কয়েকজন তরুণ সংস্কৃতিসেবী নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র সুকুমারী।বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সোনালি যুগ শুরু হয় ১৯৭০-এর দশকে। এই সময়ে নির্মিত "জীবন থেকে নেওয়া", "সারেং বৌ", "ছুটির ঘন্টা", "অনুভূতি", "ভাত দে","মনপুরা" প্রভৃতি চলচ্চিত্রগুলো বাংলাদেশের তথা বাঙালি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক অমূল্য সম্পদ।
বাংলা চলচ্চিত্রের প্রধান ধারার মধ্যে রয়েছে:
বাঙালি বিবাহ বাঙালি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি একটি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যা দু'জন মানুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপন করে। বাঙালি বিবাহের অনুষ্ঠানগুলো সাধারণত জাকজমক পূর্ণ হয়, এবং এগুলোতে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রথা জড়িত থাকে।
বাঙালি বিবাহের অনুষ্ঠানগুলো সাধারণত কয়েক দিন ধরে চলে। প্রথম দিনটিতে, বর পক্ষের পরিবার কনের বাড়িতে একটি প্রস্তাব দেয়। যদি প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হয়, তাহলে বর পক্ষের পরিবার একটি কাবিন তৈরি করে, যা একটি আইনি নথি যা বিবাহের শর্তাবলী নির্ধারণ করে। কাবিন তৈরির পর, বর পক্ষের পরিবার কনের বাড়িতে একটি আচার অনুষ্ঠান করে, যাকে "গায়ে হলুদ" বলা হয়। গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে, কনেকে হলুদ মাখানো হয়, যা পবিত্রতা এবং ঐক্যকে প্রতীকী করে।
বাঙালি বিবাহের অনুষ্ঠানগুলো একটি বড় সামাজিক অনুষ্ঠান। এগুলোতে প্রায়শই বিশাল সংখ্যক অতিথি আমন্ত্রিত হয়। বিবাহের অনুষ্ঠানগুলো সাধারণত নানা রকমের খাবার, সঙ্গীত এবং নাচ-গানের সাথে উদযাপিত হয়। বাঙালি বিবাহে ইসলাম ধর্ম ও হিন্দু ধর্মের প্রভাব বেশ উল্লেখযোগ্য। ইসলাম ধর্মে বিবাহকে একটি পবিত্র বন্ধন হিসেবে বিবেচনা করা হয়, এবং এটিকে জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে দেখা হয়।
বাঙালি বিবাহের অনুষ্ঠানগুলি বাঙালি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এগুলো দু'জন মানুষের মধ্যে একটি নতুন জীবন শুরু করার জন্য একটি উৎসব অনুষ্ঠান।
বাংলাদেশে বাঙালি বিবাহের কিছু সাধারণ রীতিনীতি এবং প্রথাগুলোর মধ্যে রয়েছে:
বাঙালি বিবাহের অনুষ্ঠানগুলো সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে। আধুনিক যুগে, অনেক বাঙালি বিবাহের অনুষ্ঠানগুলি আরও ছোট এবং কম আনুষ্ঠানিক হয়ে উঠছে। যাইহোক, বাঙালি বিবাহের অনুষ্ঠানগুলো এখনও বাঙালি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বাঙালিরা উৎসবপ্রিয় জাতি। তাদের জীবনে উৎসবের গুরুত্ব অপরিসীম। বাঙালিদের উৎসবগুলিকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়:
বাঙালিরা তাদের ধর্ম, সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন উৎসব উদযাপন করে। এই উৎসবগুলি তাদের জীবনে আনন্দ এবং ঐক্যের অনুভূতি আনতে সাহায্য করে।
ঈদুল ফিতর
ঈদুল ফিতর হলো বাঙালিদের মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব। ঈদুল ফিতর হলো রমজান মাসের রোজার শেষে উদযাপিত উৎসব। এই সময় গ্ৰামবাংলা ও মফস্বলের বিভিন্ন জায়গায় ছোট খাটো মেলা বসে। প্রতিবছর ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশের জাতীয় ঈদগাহ সাজানো ভিন্ন রূপে। বেতার অনুষ্ঠান, আনন্দ মিছিল, লোককৃরা, নাটক, পুতুল নাচ, ঘোরাঘুরি ইত্যাদি বাংলার ঈদোৎসবে যোগ করে ভিন্ন মাত্রা।
ঈদুল আজহা
ঈদুল আযহা জ্বিলহজ্জ মাসের হজ্ব পালন শেষে উদযাপিত হয়। এই ঈদে যাদের ক্ষমতা আছে তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হালাল পশু কোরবানি করেন। কোরবানিতে বাঙালিরা নতুন পোশাক পরে, ঈদের নামাজ আদায় করে এবং আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ ও আনন্দ করে। কোরবানি পশুকে সাজানো হয় বিভিন্ন প্রকারের রঙিন আনুষাঙ্গিক দিয়ে। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা যায়।
পহেলা বৈশাখ
পহেলা বৈশাখ হলো বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। এটি একটি জাতীয় উৎসব যা সারা বাংলাদেশ এবং ভারতের বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলে উদযাপিত হয়। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে মানুষ নতুন পোশাক পরে, ঐতিহ্যবাহী খাবার খায় এবং গান ও নাচের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়।
বৈশাখী মেলা
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলা বসে। এই মেলাগুলোতে নানা রকম জিনিসপত্র, যেমন ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প, খাবার এবং খেলনা বিক্রি হয়।১৫৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ৫ নভেম্বর থেকে হিজরি, চন্দ্রাসন ও ইংরেজি সৌরসনকে ভিত্তি করে বাংলা সন প্রবর্তিত হয় বলে জানা যায়। নতুন এ সনটি প্রথমে ফসলি সন নামে পরিচিত থাকলেও বঙ্গাব্দ হিসেবেই তা পরিচিতি পায়। বাংলা নববর্ষ সম্রাট আকবরের সময় থেকে পালন করা হত। ঐ সময় বাংলার কৃষকেরা চৈত্র মাসের শেষ দিন পর্যন্ত জমিদার, তালুকদার এবং অন্যান্য ভূস্বামীদের খাজনা পরিশোধ করত। মেলা ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো এ উপলক্ষে। পরবর্তী সময়ে বৈশাখ উপলক্ষে যে মেলার আয়োজন করা হতো, সে মেলাকে ‘বৈশাখী মেলা’ নামে নামকরণ করা হয়।
ঈদে মিলাদুন্নবি
হিজরি বর্ষের তৃতীয় মাস রবিউল আউয়াল মাসের বারো তারিখে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের মুসলমানরা এই দিনকে ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী বলে অভিহিত করেন। অপরদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের কাছে এই দিন নবী দিবস নামে পরিচিত। জসনে জুলুস নামক এক আনন্দ মিছিল থাকে বাংলার ঈদে মিলাদুন্নবি উৎসবের মূল আকর্ষণ। বাংলাদেশের চট্টগ্রামে হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় জসনে জুলুস।
দুর্গাপূজা (নবরাত্রি)
দুর্গাপূজা হলো বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এটি দেবী দুর্গার মূর্তি পূজা করে উদযাপিত হয়, যিনি শক্তি এবং ঐশ্বরিকতাকে প্রতীকিত করেন। দুর্গাপূজা সাত দিন ধরে চলে এবং প্রতি রাতে একটি নতুন নতুন অনুষ্ঠানের সাথে উদযাপিত হয়। নবরাত্রি হলো দুর্গাপূজার চার দিনসহ আগের পাঁচ দিনের ধর্মীয় ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এই সময়, হিন্দুরা দেবী দুর্গার বিভিন্ন রূপের পূজা করে। নবরাত্রি বিভিন্নভাবে উদযাপিত হয়, তবে সাধারণত গান, নাচ, এবং ঐতিহ্যবাহী খাবারের সাথে উদযাপিত হয়।
রথযাত্রা
রথযাত্রা হলো কৃষ্ণের জন্মস্থান বৃন্দাবন থেকে তার স্মৃতি বিজড়িত রথের যাত্রা। এই উৎসবটি হিন্দুরা উদযাপন করে। রথযাত্রায়, ভক্তরা রথের সাথে টানে এবং কৃষ্ণের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য প্রার্থনা করে।
দোলযাত্রা
দোলযাত্রা হলো রঙের উৎসব। এটি বসন্তের আগমনের উদযাপন হিসাবে উদযাপিত হয়। হোলিতে, লোকেরা একে অপরকে রঙের গুঁড়া এবং জলরং ছুঁড়ে দেয়।
বড়দিন
বড়দিন হলো খ্রিস্টানদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এটি যিশু খ্রিস্টের জন্মের উদযাপন হিসাবে উদযাপিত হয়। বড়দিন উপলক্ষে, খ্রিস্টানরা নতুন পোশাক পরে, গির্জায় যায় এবং বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনদের সাথে দেখা করে।
বাঙালিদের অন্যান্য উৎসব
বাঙালিরা আরও অনেক উৎসব উদযাপন করে, যেমন:
এই উৎসবগুলি বাঙালিদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা আনন্দ, ঐক্য এবং তাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশের একটি উপায়।
বাংলা ও বাঙালির খেলাধুলা একটি সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্য। আবহমানকাল ধরে বাঙালিরা বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করে আসছে। এই খেলাধুলাগুলি বাঙালির সংস্কৃতি ও জীবনধারার অঙ্গ হয়ে উঠেছে।
বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার মধ্যে রয়েছে:
বাংলার আধুনিক খেলাধুলার মধ্যে রয়েছে:
ঐতিহ্যবাহী বাংলা খেলায় বিভিন্ন মার্শাল আর্ট এবং বিভিন্ন রেসিং স্পোর্টস অন্তর্ভুক্ত ছিল, যদিও বিলাতী-প্রবর্তিত খেলা ক্রিকেট এবং ফুটবল এখন বাঙালিদের মাঝে সবচেয়ে জনপ্রিয়। ঐতিহাসিকভাবে, লাঠি খেলা ছিল লড়াইয়ের এমন একটি পদ্ধতি যা নিজের জমি ও ধন-দৌলৎ হেফাজৎ করার জন্য বা অন্যের জমি ও ধন-দৌলৎ দখলের একটি উপায়। বাংলার জমিদাররা প্রশিক্ষিত লাঠিয়ালদের নিয়োগ করতেন হেফাজতের একটি রূপ হিসেবে এবং প্রজাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক কর আদায়ের উপায় হিসেবে। দেশব্যাপী লাঠি খেলা প্রতিযোগিতা ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত কুষ্টিয়ায় প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হতো, যদিও এর অনুশীলন এখন হ্রাস পাচ্ছে এবং নির্দিষ্ট কিছু উৎসব ও উদযাপনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কুস্তি আরেকটি জনপ্রিয় লড়াইয়ের খেলা যার বিভিন্ন আঞ্চলিক রূপ আছে। যেমন; ১৮৮৯ সালে চাটগাঁর জমিদার কাদির বখশ শুরু করলেন বলীখেলা। আব্দুল জব্বার নামে পরিচিত একজন সওদাগর ১৯০৭ সালে এমন একটি খেলা গড়ে তোলার অভিপ্রায়ে বলীখেলাকে অভিযোজিত করেছিলেন যা বাঙালিদের বিলাতী হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তৈয়ার করবে। এখন এটি জব্বারের বলীখেলা নামে পরিচিত। ১৯৭২ সালে, কাবাডি নামে একটি জনপ্রিয় দলগত খেলা বাংলাদেশের জাতীয় খেলায় পরিণত হয়। এটি হাডুডু খেলার একটি নিয়ন্ত্রিত সংস্করণ যার কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম ছিল না। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ অ্যামেচার কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়। ব্যুত্থান হলো বিংশ শতাব্দীর একটি বাঙালি মার্শাল আর্ট যা গ্র্যান্ডমাস্টার ম্যাক ইউরীর উদ্ভাবিত। এটি এখন আন্তর্জাতিক ব্যুত্থান ফেডারেশনের অধীনে দুনিয়ার বিভিন্ন স্থানে চর্চা করা হয়।
নৌকা বাইচ হলো একটি বাঙালি নৌ-দৌড় প্রতিযোগিতা যা বর্ষাকালে এবং বর্ষাকালের বাদে খেলা হয় যখন অনেক জমি পানির নিচে চলে যায়। লম্বা ডিঙিগুলিকে খেল নাও হিসাবে উল্লেখ করা হয় এবং গানের সাথে করতালের এস্তেমাল ছিল সাধারণ। বাংলার বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের খেল নাও এস্তেমাল করা হয়। ঘোড়দৌড় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজাদের দ্বারা পৃষ্ঠপোষকতা হতো এবং তাদের চলনবিল ঘোড়দৌড় বহু শতাব্দী ধরে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
কলকাতার মহম্মদ সালিম ১৯৩৬ সালে ইউরোপীয় ফুটবল ক্লাবের হয়ে প্রথম দক্ষিণ এশীয় লোক হয়েছিলেন। স্কটল্যাণ্ডের সেল্টিক এফ.সি-র হয়ে তার দুটি উপস্থিতিতে, তিনি পুরা ম্যাচ খালি পায়ে খেলেছেন এবং বেশ কয়েকটি গোল করেছেন। অ্যাস্টন ভিলার ডিফেন্ডার, নেইল টেলর এবং লেস্টার সিটির মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী হলেন প্রিমিয়ার লীগে খেলা প্রথম বাঙালি বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়। চৌধুরী ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়েও খেলেছেন এবং ভবিষ্যদ্বাণী করা হয় যে তিনিই প্রথম দক্ষিণ এশীয় লোক যিনি ইংল্যান্ড জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে খেলেন।
বোর্ড এবং ঘরের খেলায় যেমন পঁচিশী এবং এর আধুনিক প্রতিরূপ লুডো, সেইসাথে লাটিম, ক্যারাম বোর্ড, চোর-পুলিশ, কানামাছি এবং শতরঞ্জের ক্ষেত্রে বাঙালিরা খুব প্রতিযোগিতামূলক। রানী হামিদ দুনিয়ার অন্যতম সফল শতরঞ্জ খেলোয়াড়, এশিয়া ও ইউরোপে একাধিকবার চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন। রামনাথ বিশ্বাস একজন বিপ্লবী সৈনিক যিনি ১৯ শতকে ঠ্যাংগাড়ীতে তিনটি দুনিয়া-সফর করেছিলেন।
বাংলা মিডিয়া হলো বাংলা ভাষাভাষী জনগণের কাছে তথ্য, সংস্কৃতি, বিনোদন ইত্যাদি সরবরাহকারী গণমাধ্যম। এটি বিভিন্ন মাধ্যমের সমন্বয়ে গঠিত, যার মধ্যে রয়েছে টেলিভিশন, রেডিও, সংবাদপত্র, অনলাইন মিডিয়া, ইত্যাদি। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১০০টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল রয়েছে। এছাড়াও, সরকারী মালিকানাধীন বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) এবং বাংলাদেশ বেতার রয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১০০টি দৈনিক সংবাদপত্র রয়েছে। এছাড়াও, সাপ্তাহিক, মাসিক, এবং ত্রৈমাসিক পত্রিকাও রয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১০০টি জনপ্রিয় অনলাইন মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মগুলো বিভিন্ন ধরনের সংবাদ, মতামত, বিশ্লেষণ, এবং বিনোদনমূলক সামগ্রী প্রদান করে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের নিবন্ধন শাখা থেকে সংবাদপত্রের নিবন্ধন প্রদান করা হয়। চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৮ সালের জুনে মোট নিবন্ধিত পত্র-পত্রিকা ছিল ৩০৬১ টি। সর্বশেষ ৩১শে ডিসেম্বর ২০২০ তারিখের হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশে নিবন্ধিত পত্র-পত্রিকার সংখ্যা ৩২১০ টি (অনলাইন গণমাধ্যম ব্যতীত) যার মধ্যে ১৩৫৭ টি ঢাকা থেকে এবং ১৮৫৩ টি অন্যান্য জেলা থেকে প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে দৈনিক পত্রিকা ১৩০৯ টি, অর্ধ-সাপ্তাহিক ৩ টি, সাপ্তাহিক ১২১৪ টি, পাক্ষিক ২১৬ টি, মাসিক ৪২৫ টি, দ্বি-মাসিক ৮ টি, ত্রৈ-মাসিক ৩০ টি, চর্তুমাসিক ১ টি, ষান্মাসিক ২ টি এবং বার্ষিক পত্রিকা রয়েছে ২ টি।
প্রথম আলো একইসাথে সারাবিশ্বে এবং বাংলাদেশে সর্বাধিক পঠিত ও প্রচলিত বাংলা সংবাদপত্র। আনন্দবাজার পত্রিকা ভারতে সবচেয়ে প্রচলিত বাংলা সংবাদপত্রিকা। বর্তমান, প্রতিদিন, ইত্তেফাক, জনকন্ঠ, ইত্যাদিও বহুল প্রচলিত। দ্য ডেইলি স্টার, নিউ এজ, ঢাকা ট্রিবিউন বিখ্যাত ইংরেজি পত্রিকা। দ্য স্টেটসম্যান কলকাতা থেকে প্রচলিত যা এই বাংলা বা বঙ্গ অঞ্চলের প্রাচীনতম ইংরাজি দৈনিক।
বাংলা মিডিয়া বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং সমাজ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি জনগণকে তথ্য সরবরাহ করে, তাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে, এবং সমাজে পরিবর্তন আনতে সহায়তা করে।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article বাঙালি সংস্কৃতি, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.