ষাট গম্বুজ মসজিদ: বাংলাদেশের মসজিদ

ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ। মসজিদটির গায়ে কোনো শিলালিপি নেই। তাই এটি কে নির্মাণ করেছিলেন বা কোন সময়ে নির্মাণ করা হয়েছিল সে সম্বন্ধে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তবে মসজিদটির স্থাপত্যশৈলী দেখলে এটি যে পীর খান জাহান আলীনির্মাণ করেছিলেন সে সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ থাকে না। ধারণা করা হয় তিনি ১৫শ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করেন। এ মসজিদটি বহু বছর ধরে ও বহু অর্থ খরচ করে নির্মাণ করা হয়েছিল। পাথরগুলো আনা হয়েছিল রাজমহল থেকে। এটি বাংলাদেশের তিনটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের একটির মধ্যে অবস্থিত; বাগেরহাট শহরটিকেই বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে ইউনেস্কো এই সম্মান প্রদান করে।

ষাট গম্বুজ মসজিদ
ষাট গম্বুজ মসজিদ: ইতিহাস, বহির্ভাগ, অভ্যন্তরভাগ
অবস্থানবাগেরহাট, বাংলাদেশ
স্থানাঙ্ক২২°৪০′২৮″ উত্তর ৮৯°৪৪′৩১″ পূর্ব / ২২.৬৭৪৪৪° উত্তর ৮৯.৭৪১৯৪° পূর্ব / 22.67444; 89.74194
অঞ্চল১,৬০৫ মি (১৭,২৮০ ফু)
নির্মিত১৫শ শতক
স্থপতিখান জাহান আলী
স্থাপত্যশৈলীতুগলক

মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে বাইরের দিকে প্রায় ১৬০ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ১৪৩ ফুট লম্বা এবং পূর্ব-পশ্চিমে বাইরের দিকে প্রায় ১০৪ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ৮৮ ফুট চওড়া। দেয়ালগুলো প্রায় ৮·৫ ফুট পুরু। ষাট গম্বুজ মসজিদে গম্বুজের সংখ্যা মোট ৮১ টি, সাত লাইনে ১১ টি করে ৭৭ টি এবং চার কোনায় ৪ টি মোট ৮১ টি। কালের বিবর্তনে লোকমুখে ৬০ গম্বুজ বলতে বলতে ষাট গম্বুজ নামকরণ হয়ে যায়, সেই থেকে ষাট গম্বুজ নামে পরিচিত।

ইতিহাস

সুলতান নসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহের (১৪৩৫-৫৯) আমলে খান আল-আজম উলুগ খানজাহান সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে খলিফাবাদ রাজ্য গড়ে তোলেন। খানজাহান বৈঠক করার জন্য একটি দরবার হল গড়ে তোলেন, যা পরে ষাট গম্বুজ মসজিদ হয়। এ মসজিদটি বহু বছর ধরে ও বহু অর্থ খরচ করে নির্মাণ করা হয়েছিল। পাথরগুলো আনা হয়েছিল রাজমহল থেকে। তুঘলকি ও জৌনপুরী নির্মাণশৈলী এতে সুস্পষ্ট।

বহির্ভাগ

মসজিদটির পূর্ব দেয়ালে ১১টি বিরাট আকারের খিলানযুক্ত দরজা আছে। মাঝের দরজাটি অন্যগুলোর চেয়ে বড়। উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে আছে ৭টি করে দরজা। মসজিদের ৪ কোণে ৪টি মিনার আছে। এগুলোর নকশা গোলাকার এবং এরা উপরের দিকে সরু হয়ে গেছে। এদের কার্ণিশের কাছে বলয়াকার ব্যান্ড ও চূঁড়ায় গোলাকার গম্বুজ আছে। মিনারগুলোর উচ্চতা, ছাদের কার্নিশের চেয়ে বেশি। সামনের দুটি মিনারে প্যাঁচানো সিঁড়ি আছে এবং এখান থেকে আজান দেবার ব্যবস্থা ছিল। এদের একটির নাম রওশন কোঠা, অপরটির নাম আন্ধার কোঠা। মসজিদের ভেতরে ৬০টি স্তম্ভ বা পিলার আছে। এগুলো উত্তর থেকে দক্ষিণে ৬ সারিতে অবস্থিত এবং প্রত্যেক সারিতে ১০টি করে স্তম্ভ আছে। প্রতিটি স্তম্ভই পাথর কেটে বানানো, শুধু ৫টি স্তম্ভ বাইরে থেকে ইট দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এই ৬০টি স্তম্ভ ও চারপাশের দেয়ালের ওপর তৈরি করা হয়েছে গম্বুজ। মসজিদটির নাম ষাট গম্বুজ (৬০ গম্বুজ) মসজিদ হলেও এখানে গম্বুজ মোটেও ৬০টি নয়,বরং গম্বুজ সংখ্যা ৮১টি। ৭৭টি গম্বুজের মধ্যে ৭০ টির উপরিভাগ গোলাকার এবং পূর্ব দেয়ালের মাঝের দরজা ও পশ্চিম দেয়ালের মাঝের মিহরাবের মধ্যবর্তী সারিতে যে সাতটি গম্বুজ সেগুলো দেখতে অনেকটা বাংলাদেশের চৌচালা ঘরের চালের মতো। মিনারে গম্বুজের সংখ্যা ৪ টি-এ হিসেবে গম্বুজের সংখ্যা দাঁড়ায় মোট ৮১ তে । তবুও এর নাম হয়েছে ষাটগম্বুজ। ঐতিহাসিকরা মনে করেন, সাতটি সারিবদ্ধ গম্বুজ সারি আছে বলে এ মসজিদের সাত গম্বুজ এবং তা থেকে ষাটগম্বুজ নাম হয়েছে। আবার অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, গম্বুজগুলো ৬০ টি প্রস্তরনির্মিত স্তম্ভের ওপর অবস্থিত বলেই নাম ষাটগম্বুজ হয়েছে। ।

অভ্যন্তরভাগ

মসজিদের ভেতরে পশ্চিম দেয়ালে ১০টি মিহরাব আছে। মাঝের মিহরাবটি আকারে বড় এবং কারুকার্যমন্ডিত। এ মিহরাবের দক্ষিণে ৫টি ও উত্তরে ৪টি মিহরাব আছে। শুধু মাঝের মিহরাবের ঠিক পরের জায়গাটিতে উত্তর পাশে যেখানে ১টি মিহরাব থাকার কথা সেখানে আছে ১টি ছোট দরজা। কারো কারো মতে, খান-ই-জাহান এই মসজিদটিকে নামাজের কাজ ছাড়াও দরবার ঘর হিসেবে ব্যবহার করতেন, আর এই দরজাটি ছিল দরবার ঘরের প্রবেশ পথ। আবার কেউ কেউ বলেন, মসজিদটি মাদরাসা হিসেবেও ব্যবহৃত হত।ইমাম সাহেবের বসার জায়গা হিসেবে রয়েছে মিম্বার।

চিত্রশালা

তথ্যসূত্র

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ

Tags:

ষাট গম্বুজ মসজিদ ইতিহাসষাট গম্বুজ মসজিদ বহির্ভাগষাট গম্বুজ মসজিদ অভ্যন্তরভাগষাট গম্বুজ মসজিদ চিত্রশালাষাট গম্বুজ মসজিদ তথ্যসূত্রষাট গম্বুজ মসজিদ আরও দেখুনষাট গম্বুজ মসজিদ বহিঃসংযোগষাট গম্বুজ মসজিদইউনেস্কোবাংলাদেশবাগেরহাট জেলাবায়েজীদ বোস্তামীবিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানরাজমহল

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

লোকসভাআহল-ই-হাদীসঅর্থ (টাকা)নেপোলিয়ন বোনাপার্টভারত বিভাজনমারমাআবু হানিফাসমাসযুক্তরাজ্যসুকান্ত ভট্টাচার্যইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসিরাজস্থান রয়্যালসটেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রামহাভারতবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধচণ্ডীমঙ্গলশিবঅন্নদামঙ্গলআমাশয়জলাতংকমুসাফিরের নামাজক্রিস্তিয়ানো রোনালদোবাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মরত জেনারেলদের তালিকাকাবাসোরিয়াসিসসীতাফোড়ামধ্যপ্রাচ্যহনুমান চালিশাবাংলা ভাষাজালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমিলোকনাথ ব্রহ্মচারীবৃষ্টিভারতপথের পাঁচালীআর্যঈসানদীবিহীন দেশগুলির তালিকাপশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ব্যবস্থাভারতের রাষ্ট্রপতিলিওনেল মেসিকোয়েল মল্লিকবিন্দুপুরাণ (ভারতীয় শাস্ত্র)রাবণবন্ধুত্বঅস্ট্রেলিয়াবেগম রোকেয়ানদীভারতের জনপরিসংখ্যানগাঁজাআন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসবাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পদবিফুটবল ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখসূরা ফালাকপরমাণুফারহান আহমেদ জোভানবিকাশবেদকলিঙ্গের যুদ্ধমক্কারাশিয়াছয় দফা আন্দোলনবাংলাদেশ রেলওয়েরিলায়েন্স ফাউন্ডেশনবদরের যুদ্ধব্রহ্মপুত্র নদইব্রাহিম রাইসিফরিদপুর জেলাযৌন প্রবেশক্রিয়াদ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনঅমর্ত্য সেননামাজের নিয়মাবলীবাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রমবাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকাকলি যুগপ্রাণ-আরএফএল গ্রুপসমকামিতা🡆 More