কাম্পালা: উগান্ডার রাজধানী

কাম্পালা (ইউকে: /kæmˈpɑːlə/, ইউএস: /kɑːmˈ-/) উগান্ডার রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। নগরীটি উগান্ডার দক্ষিণ-মধ্যভাগে ভিক্টোরিয়া হ্রদের উত্তর তীরের কাছেই গড়ে প্রায় ৪০০০ ফুট উঁচু একটি পাহাড়ি এলাকার উপরে দাঁড়িয়ে আছে। এটিকে তাই অনেক সময় সাত পাহাড়ের নগরী নামেও ডাকা হয়। কিংবদন্তি অনুসায়ী ঐ পাহাড়গুলিতে একসময় হরিণের মতো এক ধরনের প্রাণী বিচরণ করত, যাদের নাম ইম্পালা; তাদের নামেই শহরটির এরূপ নামকরণ করা হয় কেননা কাম্পালা অর্থ ইম্পালাদের পাহাড়। কাম্পালাতে প্রায় ২৫ লক্ষ অধিবাসীর বাস; এটি দেশটির বৃহত্তম ও সর্বপ্রধান নগরী (পূর্বে জিঞ্জা ও দক্ষিণে এনতেব্বে আরও দুইটি প্রধান নগরী)। ব্যস্ত ও প্রাণচঞ্চল কাম্পালা উগান্ডার প্রশাসন, ব্যবসাবাণিজ্য, পরিবহন ও শিক্ষার কেন্দ্র। মার্কিন পরামর্শক সংস্থা মার্সারের মতে কাম্পালা পূর্ব আফ্রিকার সবচেয়ে বাসযোগ্য নগরী।

কাম্পালা
রাজধানী
উপরে: নাকাসেরো এলাকা থেকে কাম্পালা শহরের দৃশ্য; দ্বিতীয়: বাহাই মন্দির, গাদ্দাফি জাতীয় মসজিদ; তৃতীয়: মাকেরেরে বিশ্ববিদ্যালয়, কাম্পালা ওয়ার্কার্স হাউজ; নিচ: ভিক্টোরিয়া হ্রদের দৃশ্য
উপরে: নাকাসেরো এলাকা থেকে কাম্পালা শহরের দৃশ্য; দ্বিতীয়: বাহাই মন্দির, গাদ্দাফি জাতীয় মসজিদ; তৃতীয়: মাকেরেরে বিশ্ববিদ্যালয়, কাম্পালা ওয়ার্কার্স হাউজ; নিচ: ভিক্টোরিয়া হ্রদের দৃশ্য
কাম্পালা কাম্পালা-এ অবস্থিত
কাম্পালা
কাম্পালা
কাম্পালা উগান্ডা-এ অবস্থিত
কাম্পালা
কাম্পালা
কাম্পালা আফ্রিকা-এ অবস্থিত
কাম্পালা
কাম্পালা
কাম্পালার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ০০°১৮′৪৯″ উত্তর ৩২°৩৪′৫২″ পূর্ব / ০.৩১৩৬১° উত্তর ৩২.৫৮১১১° পূর্ব / 0.31361; 32.58111
দেশউগান্ডা
শহরকাম্পালা
সরকার
 • লর্ড মেয়রএরিয়াস লুকোয়াগো
 • নির্বাহী পরিচালকদরোথি কিসাকা
আয়তন
 • রাজধানী১৮৯ বর্গকিমি (৭৩ বর্গমাইল)
 • স্থলভাগ১৭৬ বর্গকিমি (৬৮ বর্গমাইল)
 • জলভাগ১৩ বর্গকিমি (৫ বর্গমাইল)
 • মহানগর৮,৪৫১.৯ বর্গকিমি (৩,২৬৩.৩ বর্গমাইল)
উচ্চতা১,২০০ মিটার (৩,৯০০ ফুট)
জনসংখ্যা (২০১৯)
 • রাজধানী১৬,৫০,৬০০
 • পৌর এলাকা৩১,৩৮,০০০
 • মহানগর৬৭,০৯,৯০০
সময় অঞ্চলইএটি (ইউটিসি+৩)
ওয়েবসাইটwww.kcca.go.ug

ক্রান্তীয় অতিবৃষ্টি অরণ্য জলবায়ু অঞ্চলে অবস্থিত কাম্পালাতে কোনও শুষ্ক মৌসুম নেই, বরং দুইটি বর্ষা মৌসুম আছে; একটি আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ও অপরটি ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত বিস্তৃত। সারা বছরই বৃষ্টি পড়ে, তবে এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়। তাপমাত্রা সারা বছর গড়ে ২৫ থেকে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে।

কাম্পালা শহরটি বেশ পরিকল্পিত। আইনসভা, বাণিজ্যিকভবন, শিল্প এলাকা ও আবাসিক এলাকাগুলি স্বতন্ত্র সেক্টর বা নগরখণ্ডে পড়েছে। জেলার মর্যাদাবিশীষ্ট নগরটিকে পাঁচটি বরোতে বিভক্ত করা হয়েছে: কেন্দ্রীয় কাম্পালা, কাভেম, মাকিন্ডে, নাকাওয়া ও লুবাগা। কাম্পালাতে ১৯০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত উগান্ডা জাদুঘরটি অবস্থিত। এখানে ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি, পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন, ইতিহাস, বিজ্ঞান ও প্রাকৃতিক ইতিহাসের বিবরণ ছাড়াও বাদ্যযন্ত্রের একটি বৃহৎ সংগ্রহ আছে। অন্যান্য সাংস্কৃতিক গন্তব্যস্থলের মধ্যে আছে জাতীয় নাট্যশালা, নোম্মো জাতীয় চিত্রপ্রদর্শনীগৃহ, শহরের কাছে একটি পাহাড়ের উপরে বুগান্ডার ৪ প্রাচীন রাজার (কাবাকা) সমাধিগুলি অবস্থিত, যাদের নাম দেওয়া হয়েছে কাসুবি সমাধিসমূহ; এটিকে ইউনেস্কো একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান ঘোষণা করেছে।

কাম্পালার ধর্মীয় ভবনগুলি নগরীটির জনগণের বৈচিত্র্যের একটি দর্পণ। এখানে অনেক মসজিদ (যেমন কিবুলি পাহাড়ের উপরে সাদা রঙের উগান্ডার জাতীয় মসজিদ, যা সাহারা-নিম্ন আফ্রিকার ২য় বৃহত্তম), হিন্দু মন্দির ( যেমন শহরকেন্দ্রের শ্রী সনাতন ধর্ম মণ্ডল শিবমন্দির) ও খ্রিস্টান গির্জা (যেমন নামিরেবে ইঙ্গ মহাগির্জা ও সন্তু পিতরের রুবাগা রোমান ক্যাথলিক মহাগির্জা) আছে। শহরের ঠিক বাইরে আফ্রিকা মহাদেশে বাহাই ধর্মের একমাত্র মন্দিরটি অবস্থিত। উগান্ডার আইনসভা ভবন ও স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধটিও প্রতীকী কারণে গুরুত্বপূর্ণ। শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ভিক্টোরিয়া হ্রদের তীরে অবস্থিত স্পেকে মুনিওনিও অবকাশযাপন কেন্দ্রটিতে অনেক বিত্তবান পরিবার বেড়াতে যায়। কাম্পালার জনগণ মূলত স্থানীয় লুগান্ডা ভাষায় কথা বলে; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ইংরেজি ভাষা ও সোয়াহিলি ভাষার শিক্ষা দান করা হয়। মাটুকে নামের সিদ্ধ কাঁচাকলার ভর্তা এখানকার বিশেষ একটি পদ; অদ্ভূত পদের মধ্যে আছে এনসেনেনে নামের ঘাসফড়িং ভাজি।

কাম্পালাতে উগান্ডার সরকারের কেন্দ্রীয় কার্যালয়গুলি ছাড়াও উগান্ডার বেশির ভাগ বৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়গুলি অবস্থিত। শহরের বহু অধিবাসী সরকারি বা ব্যবসায়িক কার্যালয়ে চাকরি করে। এখানে অনেক বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও একটি কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান আছে। এছাড়া ১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠিত ও ১৯৭০ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মর্যাদায় উন্নীত মাকারেরে বিশ্ববিদ্যালয়টিও এখানে অবস্থিত; এটি বহুদিন ধরে পূর্ব আফ্রিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল। আরও আছে উগান্ডা শহীদদের বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯৩), ও এনদেজ্জে বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯২)। উগান্ডাতে বিপুল পরিমাণ পশ্চিমা সাহায্য আসে এবং কাম্পালায় বৈদেশিক সাহায্যনির্ভর বহু সংখ্যক বেসরকারী সংস্থার সদর দপ্তর অবস্থিত; ফলে কাম্পালাতে পশ্চিমা বৈদেশিক নাগরিকদের একটি প্রতিষ্ঠিত অবস্থান রয়েছে।

শহরটি উগান্ডার সবচেয়ে কৃষিসমৃদ্ধ অঞ্চলে অবস্থিত। এটি ৬৪ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত জিঞ্জা নগরীর পরে উগান্ডার দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্পনগরী। কাম্পালার কারখানাগুলিতে উগান্ডার খামারে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যগুলিকে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এই কারখানাগুলিতে চা, কফি, তামাক, চিনি ও তুলা উৎপাদন করে পরে রপ্তানি করা হয়। এছাড়া এখানে ময়দা, তুলার জিনকরণ, চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ, বস্ত্র, কোমল পানীয়, বিয়ার, সিগারেট, সিমেন্ট, ধাতব দ্রব্য, আসবাবপত্র ও ট্রাক্টর সংযোজন কারখানা আছে। নগরীটি ভিক্টোরিয়া হ্রদ অঞ্চলের প্রধান বাজার। কাম্পালা দেশের সড়ক ও রেলব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু। এটি পশ্চিমে কাসেসে শহর থেকে আগত রেলপথের মাধ্যমে আফ্রিকা মহাদেশের পূর্ব উপকূলস্থিত কেনিয়ার মোম্বাসা নগরীর সাথে সংযুক্ত। কাম্পালা থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এন্তেব্বে নগরীতে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অবস্থিত। শহর থেকে ১০ কিলোমিটার পূর্বে ভিক্টোরিয়া হ্রদের তীরে অবস্থিত এবং সড়ক ও রেলপথে সংযুক্ত পোর্ট বেল নামক হ্রদবন্দর শহরটি কাম্পালার সেবায় নিয়োজিত। শহরে অভ্যন্তরে বোডা-বোডা (ইংরেজি বর্ডার-টু-বর্ডার শব্দগুচ্ছের বিকৃত রূপ) নামের এক ধরনের মোটরসাইকেল যাত্রী পরিবহন সেবা আছে, যা দ্রুত কিন্তু বিপজ্জনক। আরও আছে মাটাটু নামের মিনিবাস (স্থানীয় নাম ট্যাক্সি) ও হলুদ ট্যাক্সি সেবা। প্রায় ৪০০০ মিনিবাস ও অন্যান্য যানবাহনগুলি কাম্পালার হৃৎকেন্দ্রে অবস্থিত অত্যন্ত ব্যস্ত কাম্পালা ট্যাক্সি উদ্যানে জমায়েত হয়, যেখান থেকে বাসের হেল্পার ও চালকদের চিৎকারের আবহে এবং পানি আর আইসক্রিমের ফেরিওয়ালাদের মাঝে যাত্রীরা ভোর ৫টা থেকে গভীর রাত ২টা পর্যন্ত ওঠা-নামা করে।

অতীতে কাম্পালা এলাকাটি আফ্রিকার বুগান্ডা রাজ্যের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। কাম্পালা শহরটি এখন যেখানে অবস্থিত, তার ঠিক দক্ষিণে ১৯শ শতকে বুগান্ডা রাজ্যের রাজধানী মেংগো অবস্থিত ছিল, ১৯৬৭ সালে শহরটিকে পরিত্যক্ত করে দেওয়া হয়। ১৮৯০ সালে ব্রিটিশ সাম্রজ্যের পূর্ব আফ্রিকা কোম্পানি বর্তমানে যেখানে উগান্ডা অবস্থিত, সেই অঞ্চলটি দখলে নিয়ে নেয়। সেসময় ব্রিটিশ বাহিনীর ক্যাপ্টেন (পরবর্তীতে লর্ড) ফ্রেডেরিক লুগার্ড কাম্পালাকে ব্রিটিশশাসিত ঔপনিবেশিক অঞ্চলের প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে নির্বাচন করেন ও এসময় পুরাতন কাম্পালা পাহাড়ে একটি দুর্গ নির্মাণ করেন। দুর্গটির প্রতিষ্ঠাস্থলে বর্তমানে একটি প্রস্তরফলক রয়েছে। ২০শ শতকের শুরুর দিকে ১৯০৫ সালে ব্রিটিশরা তাদের রাজধানী এন্তেব্বে শহরে স্থানান্তর করে নেয়। ১৯৪৯ সালে কাম্পালাকে একটি পৌরসভার মর্যাদা দেওয়া হয়। ১৯৬২ সালে উগান্ডা স্বাধীনতা লাভ করলে কাম্পালাকে আবার রাজধানীর মর্যাদা দেওয়া হয়।

নামের ব্যুৎপত্তি

ব্রিটিশ উপনিবেশের আগমনের পূর্বে, বাগন্ডার কাবাক সেই এলাকাটি বেছে নিয়েছিল যেটি কাম্পালার মতো শিকার রেখা হবে। উপত্যকায় ঘাসযুক্ত জলাভূমি সহ ঘূর্ণায়মান পাহাড়গুলির গঠিত এলাকা, বিশেষত ইমপাল এন্টেলোপের বিভিন্ন প্রজাতির আবাসভূমি ছিল। যখন ব্রিটিশরা এসেছিল, তখন তারা এটিকে "ইমপালার পাহাড়" নামে অভিহিত করেছিল। ইংরেজদের সাথে তাদের পারস্পরিক ক্রিয়ার কারণে অনেক ইংরেজি শব্দ গ্রহণ করে, বাগন্ডা, লুগান্ডা ভাষা। বাগান্ডায় "ইম্পালা হিল" "আকাসোজি কে এম্পালা" হিসাবে "" - "কসোজী" অর্থ "পাহাড়", "কে" অর্থ "এর", এবং "এম্পালা" বহুবচন "ইম্পালা"। লুগান্ডায়, "কপাল" শব্দটি "পাহাড়ের" রেফারেন্সে "আগলা" এবং "কাম্পাল" শব্দটি কাবাকা পাহাড় থেকে উৎপত্তির জন্য শহরটির নাম "কাম্পালা" নামে পরিচিত ছিল।

ইতিহাস

কাম্পালা: নামের ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, বৈশিষ্ট্য 
কাম্পালা শহর (১৯৩৬ সালে ক্যাথেড্রাল হিল থেকে তোলা ছবি)

কিউসি টমস (১৮৮১ সালে নির্মিত), লুবিরি প্রাসাদ, বাগান্ডা সংসদ) এবং বুগান্ডা কোর্ট অফ জাস্টিস বুবুদা রাজ্যের রাজধানী হিসেবে এই শহরটি বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৮৯০ সালে, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক প্রশাসক ফ্রেডেরিক লগার্ড মেনগো হিল শহরের ভিতর একটি ফোরাম গঠন করেন, যা ব্রিটিশদের কাম্পালা সহ বাগন্ডা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলটি দখল করে নেয়। ১৮৯৪ সালে, ব্রিটিশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এই অঞ্চলের মধ্যে একটি সুরক্ষিত সুরক্ষা প্রতিষ্ঠা করে। ১৯০৫ সালে, ব্রিটিশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে সমগ্র উপনিবেশটি ব্রিটিশ উপনিবেশ হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৬২ সালে দেশের স্বাধীনতা পর্যন্ত এই রাজধানীকে এনটেবেতে স্থানান্তরিত করা হয়, যদিও শহরটি প্রাথমিক ভাবে উগান্ডার জন্য একটি অর্থনৈতিক ও উৎপাদন অঞ্চলে পরিনত হতে থাকে। ১৯২২ সালে, বর্তমানের মেকরেই বিশ্ববিদ্যালয় পূর্বে পরিচিত ছিল মেকরেই টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট নামে যেটি কাম্পালা এবং আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে ব্রিটিশ উপনিবেশসমূহের মধ্যে স্থাপিত প্রথম কলেজভিত্তিক প্রতিষ্ঠান, ১৯৬২ সালের স্বাধীনতার পর, মিল্টন ওভোট উগান্ডার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং এই পদে ১৯৭১ পর্যন্ত থাকেন, সাবেক সার্জেন্ট ইদি আমিন তার সরকারকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পরাজিত করেন, তিনি কাম্পালায় বসবাসকারী সমস্ত এশিয়ান বাসিন্দাদের বহিষ্কৃত করেন এবং শহরের মধ্যে বসবাসরত ইহুদি জনগোষ্ঠীকে আক্রমণ করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি প্রতিবেশী দেশ তানজানিয়া আক্রমণ করেন, এবং এর পরিবর্তে সরকার উগান্ডা-তানজানিয়া যুদ্ধ শুরু করে, যা কাম্পালার ভবনগুলিকে মারাত্মক ক্ষতি করে। তারপর থেকে, শহরটির হোটেল, ব্যাংক, শপিং মল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল এবং নতুন ভবন নির্মাণ এবং যুদ্ধের ক্ষতিগ্রস্ত ভবন এবং অবকাঠামো উন্নয়নের সাথে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে পুনরায়। ঐতিহ্যগতভাবে, কাম্পালা সাতটি পাহাড়ের একটি শহর ছিল, কিন্তু সময়ের সাথে এটি আরও অনেক কিছুতে এসেছে।

বৈশিষ্ট্য

কাম্পালা: নামের ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, বৈশিষ্ট্য 
কাসুবি টমস

মেকরেই বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রধান ক্যাম্পাসটি শহরটির মেকরেইউর পাহাড় এলাকায় অবস্থিত।

ইকো আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এর সদরদপ্তর নাকাসেরো হিলে অবস্থিত এবং উগান্ডা স্থানীয় সরকার এসোসিয়েশন এর সদর দপ্তর কাম্পালার এম্বেটেবে অবস্থিত।

কাম্পালা মূলত সাত পাহাড়ের উপর নির্মিত হয়েছে , কিন্তু এর আকার বৃদ্ধি পেয়েছে, এটি আরও বেশি পাহাড়ে সাতটি পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে। মূল সাতটি পাহাড়:

  1. ঐতিহাসিক গুরুত্বের প্রথম পাহাড়টি কাসুবি পাহাড়।
  2. দ্বিতীয়টি মেনগো হিল।
  3. তৃতীয়টি কিবুলি হিল, যা কিবুলির মসজিদ বাড়ি।
  4. চতুর্থটি হল নােমিরেমে হিল, নােমিরেমে বাড়ি এংলিকান ক্যাথেড্রাল।
  5. পঞ্চম লুবাগা হিল, রুবাগা ক্যাথলিক ক্যাথিড্রালের স্থান।
  6. ষষ্ঠটি নাসাম্বিয়া পাহাড়।
  7. সপ্তমটি কাম্পালা হিল (পুরনো কাম্পালা)। কাম্পালার কাম্পালা হিলে অবস্থিত উগাণ্ডার গাদ্দাফি জাতীয় মসজিদ। এ মসজিদ উগাণ্ডা তথা পূর্ব আফ্রিকার সর্ববৃহৎ মসজিদ। ২০০৬ সালে মসজিদের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে এটি ২০০৭ সালে চালু করা হয়। গাদ্দাফি মসজিদে একসাথে ১৫০০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে। উগান্ডায় অনেক মসজিদ রয়েছে কিন্তু এটিই একমাত্র গগনচুম্বী মসজিদ।

মসজিদের নামকরণ করা হয় লিবিয়ার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মুয়াম্মর গাদ্দাফির নামে। গাদ্দাফি মসজিদ লিবিয়ার পক্ষ থেকে উগান্ডার মুসলিম জনসংখ্যার জন্য উপহার স্বরুপ ছিল বলে এ নামকরণ করা হয়েছিল। এ মসজিদের এক অংশে উগান্ডা মুসলিম সুপ্রিম কাউন্সিল এর প্রধান কার্যালয় অবস্থিত।

কাম্পালা: নামের ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, বৈশিষ্ট্য 
গাদ্দাফি জাতীয় মসজিদ
কাম্পালা: নামের ব্যুৎপত্তি, ইতিহাস, বৈশিষ্ট্য 
উপবন কাম্পালার একটি দৃশ্য

শহরটি নাকাসেরো হিলে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে কিছু হোটেল রয়েছে। যেমন: হোটেল ইন্টারন্যাশনাল ২০০০, গ্র্যান্ড ইমপেরিয়াল হোটেল, কাম্পালা হিলটন হোটেল, কাম্পালা ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল, ইমপেরিয়াল রয়্যাল হোটেল, কাম্পালা সেরানা হোটেল, কাম্পালা শেরেটেন হোটেল এবং কাম্পালা স্পেক হোটেল।

এছাড়াও ট্যাঙ্ক হিল এবং মুলাগো হিল রয়েছে। শহরটি মাকিন্ডে হিল এবং কোং হিল অন্তর্ভুক্ত করার জন্য দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে।

শহরের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলি হল উগান্ডা মিউজিয়াম, উগান্ডান ন্যাশনাল থিয়েটার, নাকাসোরো মার্কেট এবং সেন্ট বালিকুডেমে মার্কেট (পূর্বে ওভিনো মার্কেট) অন্তর্ভুক্ত করেছে। কাম্পালা তার নাইট লাইফের জন্যও পরিচিত, যাতে রয়েছে অনেকগুলি ক্যাসিনো , বিশেষ করে ক্যাসিনো সিমবা গার্ডেন সিটি শপিং সেন্টারে, কাম্পালা ক্যাসিনো এবং মেফার ক্যাসিনো। পোর্ট বেল লেক ভিক্টোরিয়া এর আশপাশে ১০ কিলোমিটার (৬.২ মা) দূরে অবস্থিত।

কাম্পালা একটি বাহাই হাউস অফ ওরশীপ আয়োজন করে যা আফ্রিকার মাদার টেপ নামে পরিচিত এবং এটি শহরের বাইরে অবস্থিত কিকায়া পাহাড়ে অবস্থিত। ১৯৬১ সালের জানুয়ারিতে এই মন্দিরটি উদ্বোধন করা হয়েছিল।

কাম্পালায় অবস্থিত আহমদীয়া কেন্দ্রীয় মসজিদ আহমদিয়া মুসলিম সম্প্রদায় এর কেন্দ্রীয় মসজিদ, যার ছয়টি মিনারা রয়েছে এবং এতে ৯,০০০ জনের জন্য স্থান রয়েছে।

কাম্পালার ৩০% এরও বেশি অধিবাসীরা শহুরে কৃষি অনুশীলন করে, তবে কাম্পালা নগরটি কায়াংগা এর উত্তরপূর্ব প্যারিশ শহরে শহুরে কৃষি উন্নয়নে ৩২ একর জমি দান করে।

জলবায়ু

কাম্পালায় ক্রান্তীয় অতিবৃষ্টি অরণ্য জলবায়ু বিরাজমান। কাম্পালার জলবায়ুর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর দুটি বর্ষা মৌসুম রয়েছে। আগস্ট থেকে ডিসেম্বর দীর্ঘ বর্ষা মৌসুম এবং ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত স্বল্পকালীন বর্ষা মৌসুম। এই সময়ে ভারী বৃষ্টিপাত হয়, এপ্রিলে গড়ে ১৬৯ মিলিমিটার (৬.৭ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত হয়। বিশ্বের অন্যতম বজ্রপাতের স্থান গুলোর মধ্যে কাম্পালা অন্যতম।

কাম্পালা-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য
মাস জানু ফেব্রু মার্চ এপ্রিল মে জুন জুলাই আগস্ট সেপ্টে অক্টো নভে ডিসে বছর
সর্বোচ্চ রেকর্ড °সে (°ফা) ৩৩
(৯১)
৩৬
(৯৭)
৩৩
(৯১)
৩৩
(৯১)
২৯
(৮৪)
২৯
(৮৪)
২৯
(৮৪)
২৯
(৮৪)
৩১
(৮৮)
৩২
(৯০)
৩২
(৯০)
৩২
(৯০)
৩৬
(৯৭)
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) ২৮.৬
(৮৩.৫)
২৯.৩
(৮৪.৭)
২৮.৭
(৮৩.৭)
২৭.৭
(৮১.৯)
২৭.৩
(৮১.১)
২৭.১
(৮০.৮)
২৬.৯
(৮০.৪)
২৭.২
(৮১.০)
২৭.৯
(৮২.২)
২৭.৭
(৮১.৯)
২৭.৪
(৮১.৩)
২৭.৯
(৮২.২)
২৭.৮
(৮২.০)
দৈনিক গড় °সে (°ফা) ২৩.২
(৭৩.৮)
২৩.৭
(৭৪.৭)
২৩.৪
(৭৪.১)
২২.৯
(৭৩.২)
২২.৬
(৭২.৭)
২২.৪
(৭২.৩)
২২.০
(৭১.৬)
২২.২
(৭২.০)
২২.৬
(৭২.৭)
২২.৬
(৭২.৭)
২২.৫
(৭২.৫)
২২.৭
(৭২.৯)
২২.৭
(৭২.৯)
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) ১৭.৭
(৬৩.৯)
১৮.০
(৬৪.৪)
১৮.১
(৬৪.৬)
১৮.০
(৬৪.৪)
১৭.৯
(৬৪.২)
১৭.৬
(৬৩.৭)
১৭.১
(৬২.৮)
১৭.১
(৬২.৮)
১৭.২
(৬৩.০)
১৭.৪
(৬৩.৩)
১৭.৫
(৬৩.৫)
১৭.৫
(৬৩.৫)
১৭.৬
(৬৩.৭)
সর্বনিম্ন রেকর্ড °সে (°ফা) ১২
(৫৪)
১৪
(৫৭)
১৩
(৫৫)
১৪
(৫৭)
১৫
(৫৯)
১২
(৫৪)
১২
(৫৪)
১২
(৫৪)
১৩
(৫৫)
১৩
(৫৫)
১৪
(৫৭)
১২
(৫৪)
১২
(৫৪)
বৃষ্টিপাতের গড় মিমি (ইঞ্চি) ৬৮.৪
(২.৬৯)
৬৩.০
(২.৪৮)
১৩১.৫
(৫.১৮)
১৬৯.৩
(৬.৬৭)
১১৭.৫
(৪.৬৩)
৬৯.২
(২.৭২)
৬৩.১
(২.৪৮)
৯৫.৭
(৩.৭৭)
১০৮.৪
(৪.২৭)
১৩৮.০
(৫.৪৩)
১৪৮.৭
(৫.৮৫)
৯১.৫
(৩.৬০)
১,২৬৪.৩
(৪৯.৭৭)
বৃষ্টিবহুল দিনগুলির গড় (≥ ১.০ mm) ৪.৮ ৫.১ ৯.৫ ১২.২ ১০.৯ ৬.৩ ৪.৭ ৬.৭ ৮.৬ ৯.১ ৮.৪ ৭.৪ ৯৩.৭
আপেক্ষিক আদ্রতার গড় (%) ৬৬ ৬৮.৫ ৭৩ ৭৮.৫ ৮০.৫ ৭৮.৫ ৭৭.৫ ৭৭.৫ ৭৫.৫ ৭৩.৫ ৭৩ ৭১.৫ ৭৪.৫
মাসিক সূর্যালোক ঘণ্টার গড় ১৫৫ ১৭০ ১৫৫ ১২০ ১২৪ ১৮০ ১৮৬ ১৫৫ ১৫০ ১৫৫ ১৫০ ১২৪ ১,৮২৪
উৎস ১: World Meteorological Organization, Climate-Data.org for mean temperatures
উৎস ২: বিবিসি ওয়েদার

ক্রীড়া

কাম্পালা হচ্ছে সিটি অয়েলার্স এর হোমগ্রাউন্ড, পূর্ব আফ্রিকার শীর্ষ বাস্কেটবল ক্লাব দলগুলোর একটি। এটি ফিবা আফ্রিকান ক্লাবস চ্যাম্পিয়নস কাপ এ প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী একমাত্র পূর্ব আফ্রিকান দল। এমটিএন অরিনা এ অয়েলার্স তাদের হোম গেম খেলে, যা কাম্পালার লোগোগো এলাকা অবস্থিত।

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব

মেজর লীগ সকারের মিকেল আজিরা, উগান্ডান ফুটবলার যিনি কলোরাডো রেপিডস এ খেলে।

  • ইয়াসমিন আলিবহাই-ব্রাউন, ব্রিটিশ সাংবাদিক ও লেখক
  • কর্নেলিয়াস এডওয়ার্ডস, সাবেক বক্সার
  • রিচার্ড গিবসন, ব্রিটিশ অভিনেতা
  • ম্যান্ডি জুরুণি, বাস্কেটবল কোচ
  • আমতাত্তুমুমুম, ফ্যাশন মডেল, আফ্রিকাস নেক্সট টপ মডেল এর প্রথম মৌসুমের বিজয়ী
  • জন মগবি, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন মুষ্টিযোদ্ধা
  • মতিয়েসা আই, 30 তম কাবাকা ববগুন্দ
  • মুভান্ডা মুতবি দ্বিতীয় বুগান্দা, ৩৬ তম কাবাবা_বাগবুডা
  • পাওলো মুওয়াঙ্গা, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী
  • ডেনিস অনাইঙ্গো, ফুটবলার
  • স্যামুয়েল সেজেজাক, অধ্যাপক
  • ওয়াসওয়া সার্ভাঙ্গা, আমেরিকান ফুটবল প্লেয়ার
  • মার্সেল থেরক্স, ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক
  • ফিয়োনা মুটিসী, লেখক

তথ্যসূত্র

Tags:

কাম্পালা নামের ব্যুৎপত্তিকাম্পালা ইতিহাসকাম্পালা বৈশিষ্ট্যকাম্পালা জলবায়ুকাম্পালা ক্রীড়াকাম্পালা উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বকাম্পালা তথ্যসূত্রকাম্পালা বহিঃসংযোগকাম্পালাআমেরিকান ইংরেজিউগান্ডাব্রিটিশ ইংরেজিভিক্টোরিয়া হ্রদরাজধানীসাহায্য:আধ্বব/ইংরেজি

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

সিঙ্গাপুরবাংলাদেশের জেলাসমূহের তালিকাপদ (ব্যাকরণ)বীর্যপুঁজিবাদস্ক্যাবিসআফগানিস্তানগাঁজা (মাদক)মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রতাজমহলঢাকা জেলামাইটোসিসমুরগিইশার নামাজবর্তমান (দৈনিক পত্রিকা)বিশ্ব বই দিবসজন্ডিসআকবরঅক্ষয় তৃতীয়াভারতীয় গণ্ডারকালেমাসাহাবিদের তালিকাদক্ষিণ কোরিয়াসজনেইন্দোনেশিয়াবাংলাদেশের সর্বাধিক ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রসমূহের তালিকাবিজ্ঞাপনপুলিশযৌতুকবাংলা ব্যঞ্জনবর্ণসামন্ততন্ত্রশিক্ষকউইলিয়াম শেকসপিয়রব্রহ্মপুত্র নদতাপ সঞ্চালনউমর ইবনুল খাত্তাবঅলিউল হক রুমিগোত্র (হিন্দুধর্ম)বাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকারিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাববাংলাদেশের সংবিধানের সংশোধনীসমূহকমলাকান্ত ভট্টাচার্যতাপমাত্রা২০২৪ কোপা আমেরিকাপশ্চিমবঙ্গে ভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিলোকসভা কেন্দ্রের তালিকাবাঙালি হিন্দু বিবাহলালবাগের কেল্লাসমাসবাংলাদেশের মন্ত্রিসভাবাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাববাংলা সাহিত্যবায়ুমণ্ডলগাজওয়াতুল হিন্দরামপ্রসাদ সেনবদরের যুদ্ধভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহকৃত্তিবাসী রামায়ণফুটবলবাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিভূগোলমৌলিক পদার্থের তালিকাবাংলা একাডেমিসাইপ্রাসইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খলজিরূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রহযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরভারতীয় উপমহাদেশরাজনীতিমিজানুর রহমান আজহারীহারুন-অর-রশিদ (পুলিশ কর্মকর্তা)কুষ্টিয়া জেলাকামরুল হাসানবাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকাআমলাতন্ত্র🡆 More