ডায়রিয়া বা উদরাময় বলতে মূলত প্রতি দিন কমপক্ষে তিনবার পাতলা বা তরল মলত্যাগ করার ফলে যে রোগ হয় তাকে বোঝায়। এটা প্রায়শই কয়েক দিন স্থায়ী হয় এবং এর ফলে অতিরিক্ত তরল বেরিয়ে যাওয়ার কারণে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। ত্বকের স্বাভাবিক প্রসারণযোগ্যতা নষ্ট হয়ে যাওয়া ও ব্যক্তিত্বের পরিবর্তনের মাধ্যমে পানিশূন্যতার লক্ষণগুলো শুরু হয়।ডায়রিয়ার তীব্রতা বৃদ্ধির সাথে সাথে অন্যান্য লক্ষণগুলোও দেখা দেয়। যেমন প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, ত্বকের রঙ ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া, হৃৎস্পন্দনের দ্রুত হার এবং অচেতন হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। তবে যেসকল শিশুদেরকে স্তন্যপান করানো হয়, তাদের মল পাতলা কিন্তু পানির মতো না হওয়াটা স্বাভাবিক।
উদরাময় | |
---|---|
প্রতিশব্দ | ডায়রিয়া |
রোটাভাইরাসের একটি ইলেকট্রন মাইক্রোগ্রাফ, যা পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে উদরাময় ঘটার প্রায় ৪০% ঘটনার জন্য দায়ী। | |
বিশেষত্ব | সংক্রামক রোগ, পাকান্ত্রবিজ্ঞান |
লক্ষণ | ঘন ঘন মলত্যাগ, পানিশূন্যতা |
কারণ | সাধারণ সংক্রমণ (ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, পরজীবী) |
ঝুঁকির কারণ | দূষিত খাবার বা পানি |
প্রতিরোধ | হাত ধোয়া, রোটাভাইরাস টিকা, স্তন্যদান |
চিকিৎসা | মৌখিক পুনরুদন থেরাপি, জিঙ্কের ঘাটতি |
সংঘটনের হার | ~২.৪ বিলিয়ন (২০১৫} |
মৃতের সংখ্যা | ~১.৫৩ মিলিয়ন (২০১৯) |
সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবিতা বা গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস এর কারণে অন্ত্রের সংক্রমণ। এই সংক্রমণগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মল দ্বারা দূষিত খাবার বা পানীয় থেকে হয় অথবা সংক্রমিত অন্য কোনো ব্যক্তির থেকে সরাসরি সংক্রমিত হয়। ডায়রিয়াকে তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে:
স্বল্প স্থায়িত্বের পানির মতো ডায়রিয়া কলেরা সংক্রমণের কারণে হতে পারে। তবে এর সাথে রক্ত মিশ্রিত থাকলে এটাকে রক্ত আমাশয় বলা হয়। প্যাথোজেনিক জীবাণুর সংক্রমণ ছাড়াও অন্যান্য বেশ কিছু কারণে ডায়রিয়া হতে পারে। এগুলোর মধ্যে হাইপারথাইরয়েডিজম, অন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ ও উপদাহী অন্ত্র সংলক্ষণ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ডায়রিয়া হতে পারে। নিশ্চিতভাবে সঠিক কারণ জানার জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মল পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না।
পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, পরিষ্কার পানীয় জল এবং সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার মাধ্যমে ডায়রিয়া প্রতিরোধ করা যায়। শিশুকে কমপক্ষে ছয় মাস ধরে স্তন্যপান করানো এবং রোটাভাইরাস টিকা দেয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। পরিষ্কার পানির সাথে পরিমিত পরিমাণে লবণ ও চিনির মিশ্রণ বা মৌখিক পুনরুদন থেরাপি (ওআরএস) হলো চিকিৎসার একটি বিকল্প পদ্ধতি। এছাড়া জিংক ট্যাবলেটের পরামর্শও দেওয়া হয়। এই চিকিৎসা পদ্ধতিসমূহ গত ২৫ বছরে আনুমানিক ৫ কোটি শিশুর প্রাণ বাঁচিয়েছে। কেউ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে তাকে স্বাভাবিক খাবার-দাবার চালিয়ে যেতে হবে এবং শিশুদের মায়ের বুকের দুধ পান করানো অব্যাহত রাখতে হবে। যদি বাণিজ্যিক ওআরএস পাওয়া না যায়, তাহলে ঘরে তৈরি স্যালাইন খাওয়ানো যেতে পারে। রোগীর পানিশূন্যতা খুব বেড়ে গেলে শিরায় থেরাপি দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই খাবার স্যালাইনের মাধ্যমেই চিকিৎসা সফল হয়ে থাকে। যাদের রক্ত আমাশয় রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া যেতে পারে। এছাড়াও যাদের তীব্র ভ্রমণকারী ডায়রিয়া আছে এবং যাদের মলে সুনির্দিষ্ট কিছু ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া যায় তাদের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয়ে থাকে। মলত্যাগের পরিমান কমাতে লোপারামাইড সাহায্য করতে পারে, তবে তীব্র রোগে আক্রান্তদের জন্য এর পরামর্শ দেওয়া হয় না।
প্রতি বছর প্রায় ১.৭ থেকে ৫ বিলিয়ন ডায়রিয়ার ঘটনা ঘটে থাকে। এটা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, যেখানে ছোট বাচ্চারা প্রতি বছরে গড়ে তিনবার এ রোগে আক্রান্ত হয়। ২০১২ সাল পর্যন্ত, বিশ্বব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর দ্বিতীয় সবচেয়ে সাধারণ কারণ ডায়রিয়া (০.৭৬ মিলিয়ন বা ১১%)। ঘন ঘন ডায়রিয়ার আরেকটি সাধারণ কারণ অপুষ্টি, যা পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি লক্ষ্য করা যায়। এর ফলস্বরূপ অন্য যেসব দীর্ঘমেয়াদী সমস্যাগুলো হতে পারে তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হল শরীর ও মেধার অযথাযথ বিকাশ।
খোলা জায়গায় মলত্যাগ শিশুদের মধ্যে ডায়রিয়া সৃষ্টির একটি অন্যতম কারণ। ডায়রিয়া উন্নয়নশীল দেশগুলতে শিশুমৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে একটি।
বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া যেমন, সালমোনেলা (Salmonella), শিগেলা (Shigella flexneri), ব্যাসিলাস (Bacillus cereus), ইশ্চেরিচিয়া কোলাই (Escherichia coli), ভিব্রিও (Vibrio) ইত্যাদি ডায়রিয়া ঘটাতে পারে।
রোটাভাইরাস, হেপাটাইটিস-এ ভাইরাস ডায়রিয়া ঘটাতে পারে।
জিয়ার্ডিয়া ও এন্টামিবা জাতীয় প্রোটোজোয়া ডায়রিয়ার জন্য দায়ী।
অনিয়ন্ত্রিত মলত্যাগের ফলে প্রতিদিন তিন বা তার বেশি পানিযুক্ত মলত্যাগকে ডায়রিয়া বলে, যা কয়েক ঘন্টা বা ৪-৫ দিন স্থায়ী হতে পারে। ডায়রিয়া নির্ণয়ের জন্য, রোগীর নিয়মিত সেবনকৃত ঔষধ (যদি থাকে), সাম্প্রতিক দীর্ঘ ভ্রমণের ইতিহাস এবং তিনি যে খাবার খান সে সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে মলের বৈশিষ্ট্যগুলো পরীক্ষা করা হয়।
অনেক সময় কোন এলাকায় বা ব্যক্তির ডায়রিয়ার কারণ জানা যায় না। কোনো কারণ ছাড়াই ডায়রিয়া ঘটতে দেখা যায়। এরুপ একটি ঘটনার উদাহরণ ব্রেইণার্ড ডায়রিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের মেনিসোটার ব্রেইণার্ড নামক অঞ্চলে এই ডায়রিয়ার প্রোকোপ দেখা যায়। এতে কোনো ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, পরজীবী বা অন্য কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রতি দিন কমপক্ষে তিনবার পাতলা বা তরল মলত্যাগ করার মাধ্যমে ডায়রিয়া ঘটে থাকে। এটি মানবশরীরের পানি এবং ইলেকট্রোলাইটের (যেমন, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম) ক্ষতির সাথে যুক্ত।
সাধারণত তীব্র ডায়রিয়ার সময়কাল ১৪ দিন বা এর কম হয়ে থাকে। বেশিরভাগ মানুষ এই সময় তীব্র ডায়রিয়া অনুভব করে। স্থায়ী ডায়রিয়া ১৪ দিনের বেশি কিন্তু এক মাসের কম হয়ে থাকে। দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়ার স্থায়িত্ব এক মাস বা এরচেয়ে বেশি হয়।
মানবদেহের পাচক প্রক্রিয়ার সামগ্রীগুলো পাচক পদ্ধতির মাধ্যমে দ্রুত সরানোর ফলে যখন অন্ত্রের তরল শোষণ করার জন্য পর্যাপ্ত সময় থাকে না বা পাচক প্রক্রিয়া অতিরিক্ত তরল উৎপাদন করে তখন ডায়রিয়া ঘটে থাকে। এসময় মলে অতিরিক্ত তরল থাকে, যা মলকে আলগা ও পানির মতো করে তোলে।
বেশিরভাগ সময়, ডায়রিয়া হলে ডাক্তারের কাছে যেতে হয় না। কিন্তু ডায়রিয়া ৩ দিনের বেশি স্থায়ী হলে অথবা অন্য কোনো উপসর্গ (যেমন, রক্তাক্ত বা কালো মল, জ্বর, তীব্র পেটের ব্যথা) দেখা গেলে অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে।
সাধারণ ডায়রিয়া হলে এটা নিজে নিজেই সেরে যায়। কলেরা জীবাণু দ্বারা ডায়রিয়া হলে প্রতিদিন শরীর থেকে ২০-৩০ লিটার পানি বের হয়ে যায়। যা শরীরের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর। তাই রোগ চলাকালীন রোগীকে স্যালাইন খাওয়াতে হয়। স্যালাইন শরীরের পানিশূন্যতা রোধ করে। ইউনিসেফের মতে, মলত্যাগ করার পর সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ডায়রিয়ার সম্ভাবনাকে ৪০% হ্রাস করে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডায়রিয়া প্রতিরোধের জন্য টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। এরমধ্যে সবথেকে উল্লেখ্যযোগ্য হলো কলেরা টিকা। রোটাভাইরাসের বিরুদ্ধেও টিকা রয়েছে।
বাজারে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানি কর্তৃক সরবরাহকৃত স্যালাইন পাওয়া যায়। আবার ঘরে চিনি (না থাকলে গুড়) ও তিন আঙ্গুলের এক চিমটা লবণ এক মগ পানিতে মিশিয়ে স্যালাইন তৈরি করা যায়।
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article উদরাময়, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.