শিব: হিন্দুধর্মের অন্যতম প্রধান দেবতা

শিব (সংস্কৃত: शिव , সংস্কৃত: शिवः, আইএএসটি: Śiva, আইএসও: Śiva, ⓘ), হলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্বোচ্চ দেবতা। সনাতন ধর্মের শাস্ত্রসমূহে তিনি পরমসত্ত্বা রূপে ঘোষিত। শিব সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়রূপ তিন কারণের কারণ। তিনি সমসাময়িক হিন্দুধর্মের তিনটি সর্বাধিক প্রাচীন সম্প্রদায়ের অন্যতম শৈব সম্প্রদায়ের প্রধান দেবতা। এছাড়া শিব স্মার্ত সম্প্রদায়ে পূজিত ঈশ্বরের পাঁচটি প্রধান রূপের (গণেশ, শিব, সূর্য, বিষ্ণু ও দুর্গা) একটি রূপ। তার বিশেষ রুদ্ররূপ ধ্বংস, সংহার ও প্রলয়ের দেবতা।

শিব
পরমেশ্বর; দৈব শক্তি, ধ্যান, শিল্পকলা, যোগ, কাল, ধ্বংস, পশু, পঞ্চভূত, নৃত্যের অধিপতি; অমঙ্গলের সর্বোচ্চ ধ্বংসকর্তা; দেবগণের প্রভু
ত্রিমূর্তি গোষ্ঠীর সদস্য
শিব: বুৎপত্তি ও অন্যান্য নাম, ঐতিহাসিক বিবর্তন, রূপ
পদ্মাসনে আসীন ধ্যানমগ্ন শিবের একটি মূর্তি
অন্যান্য নামমহেশ, শঙ্কর, ভোলানাথ, নীলকণ্ঠ, মহাদেব, রুদ্র ইত্যাদি
দেবনাগরীशिव (Śiva)
অন্তর্ভুক্তিপরব্রহ্ম (শৈবধর্ম), ত্রিমূর্তি, পরমাত্মা, ঈশ্বর, দেব
আবাসকৈলাস পর্বত
মন্ত্রওঁ নমঃ শিবায়
ॐ नमः शिवाय॥
অস্ত্রপাশুপতাস্ত্র, ত্রিশূল, পরশু (কুঠার), পিণাক (ধনুক)
প্রতীকসমূহলিঙ্গ, ত্রিশূল, অর্ধচন্দ্র, ডমরু
দিবসসোমবার
বাহননন্দী
উৎসবশ্রাবণ, শিবরাত্রি, একাদশী, কার্তিক পূর্ণিমা, ভৈরব অষ্টমী
ব্যক্তিগত তথ্য
সঙ্গীসতী(প্রথম স্ত্রী), পার্বতী
সন্তানকার্তিকও গণেশ অশোকসুন্দরী (পার্বতীর সন্তান)

সর্বোচ্চ স্তরে শিবকে সর্বোৎকর্ষ, অপরিবর্তনশীল পরম ব্রহ্ম মনে করা হয়। ব্রহ্ম স্বরূপে পরমাত্মা শিব বিন্দুর ন্যায় অর্থাৎ নিরাকার,এই অবস্থায় শিবকে কল্পনাও করা যায়না,তিনি কালচক্র ও সংসারের সকল গুণ-অগুণ এর উর্দ্ধে। শিবের অনেকগুলি সদাশয় ও ভয়ঙ্কর মূর্তিও আছে। সদাশয় রূপে তিনি একজন সর্বজ্ঞ যোগী। তিনি কৈলাস পর্বতে সন্ন্যাসীর জীবন যাপন করেন। আবার গৃহস্থ রূপে তিনি পার্বতীর স্বামী। তার দুই পুত্র বর্তমান। এঁরা হলেন গণেশকার্তিক। ভয়ঙ্কর রূপে তাকে প্রায়শই দৈত্যবিনাশী বলে বর্ণনা করা হয়। শিবকে যোগ, ধ্যান ও শিল্পকলার দেবতাও মনে করা হয়। এছাড়াও তিনি চিকিৎসা বিদ্যা ও কৃষিবিদ্যারও আবিষ্কারক।

শিবমূর্তির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল তাঁর তৃতীয় নয়ন, গলায় বাসুকী নাগ, জটায় অর্ধচন্দ্র, জটার উপর থেকে প্রবাহিত গঙ্গা, অস্ত্র ত্রিশূল ও বাদ্য ডমরু। শিবকে সাধারণত ‘শিবলিঙ্গ’ নামক বিমূর্ত প্রতীকে পূজা করা হয়। সমগ্র হিন্দু সমাজে শিবপূজা প্রচলিত আছে। ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা রাষ্ট্রে ও পাকিস্তানের কিছু অংশে শিবপূজার ব্যাপক প্রচলন লক্ষিত হয়। সনাতন ধর্মীয় শাস্ত্রসমূহে শিব পূজা কে সর্বশ্রেষ্ঠও সর্বাধিক ফলপ্রদ বলে বর্ণনা করা হয়।

বুৎপত্তি ও অন্যান্য নাম

শিব: বুৎপত্তি ও অন্যান্য নাম, ঐতিহাসিক বিবর্তন, রূপ 
দিল্লি-গুরগাঁও হাইওয়ের ধারে শিবের প্রতিমূর্তি

সংস্কৃত শিব (দেবনাগরী: शिव, śiva) শব্দটি একটি বিশেষণ, যার অর্থ "শুভ, দয়ালু ও মহৎ"। ব্যক্তিনাম হিসেবে এই শব্দটির অর্থ "মঙ্গলময়"। রূঢ় রুদ্র শব্দটির পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত কোমল নাম হিসেবে এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়। বিশেষণ হিসেবে শিব শব্দটি কেবলমাত্র রুদ্রেরই নয়, অন্যান্য বৈদিক দেবদেবীদের অভিধা রূপে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

সংস্কৃতে শৈব শব্দটির অর্থ "শিব সংক্রান্ত"। এই শব্দটি হিন্দুধর্মের একটি অন্যতম প্রধান শাখাসম্প্রদায় ও সেই সম্প্রদায়ের মতাবলম্বীদের নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শৈবধর্মের কয়েকটি প্রথা ও ধর্মবিশ্বাসের বিশেষণ রূপেই এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।শৈবধর্ম আবার হিন্দুধর্মের প্রবেশদ্বার শিব শব্দটির একাধিক অর্থ ব্যাখ্যা করেছেন: "পবিত্র ব্যক্তি", "প্রকৃতির তিন গুণের (সত্ত্ব, রজ ও তম) অতীত যিনি", অথবা "যাঁর নাম উচ্চারণ মাত্রেই মানুষ পাপমুক্ত হয়"। স্বামী চিন্ময়ানন্দ তার বিষ্ণু সহস্রনাম অনুবাদে স্তবটির ব্যাখ্যা আরও প্রসারিত করে বলেছেন: শিব শব্দের অর্থ যিনি চিরপবিত্র বা যিনি রজ বা তমের দোষ কর্তৃক স্পর্শিত হন না

শিবের নাম সংবলিত শিব সহস্রনাম স্তোত্রের অন্তত পাঠান্তর পাওয়া যায়। মহাভারতের ত্রয়োদশ পর্ব অনুশাসনপর্ব-এর অন্তর্গত পাঠটি এই ধারার মূলরচনা বলে বিবেচিত হয়। মহান্যাসে শিবের একটি দশ সহস্রনাম স্তোত্রেরও সন্ধান পাওয়া যায়। শতরুদ্রীয় নামে পরিচিত শ্রীরুদ্রম্ চমকম্ স্তোত্রেও শিবকে নানা নামে বন্দনা করা হয়েছে।

ঐতিহাসিক বিবর্তন

ভারত, নেপালশ্রীলঙ্কার সমগ্র হিন্দুসমাজেই শিবের পূজা প্রচলিত। কোনো কোনো ঐতিহাসিক মনে করেন, একাধিক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ধারণা একক মূর্তিতে একীভূত হয়ে শিবের আধুনিক রূপটি দান করেছে। তবে শিবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি কীভাবে একক দেবতায় সম্মিলিত হয়, সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় না। অ্যাক্সেল মাইকেলস শৈবধর্মের এই সম্মিলিত জটিল প্রকৃতিটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন:

বিষ্ণুর মতো, শিবও একজন উচ্চস্থানীয় দেবতা। তাঁর নামানুসারে "শৈবধর্ম" নামক ধর্মীয় মত ও সম্প্রদায়ের নামকরণ হয়েছে। বৈষ্ণবধর্মের মতোই এই শব্দটির দ্বারাও এমন এক ঐকমত্যকে বোঝায় যা ধর্মানুশীলন বা দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক মতবাদের মধ্যে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয় না। তাছাড়া ধর্মানুশীলন ও মতবাদকে পৃথক রাখাই কর্তব্য।

এই ধরনের সম্মিলনের একটি উদাহরণের দেখা মেলে মহারাষ্ট্রে। সেখানে কৃষি ও পশুপালনের দেবতা ছিলেন খন্ডোবা নামে এক স্থানীয় দেবতা। মহারাষ্ট্রে খন্ডোবার প্রধান উপাসনাকেন্দ্র ছিল জেজুরিখন্ডোবার রূপকল্পটি ঠিক শিবের মতো এবং তাকে পূজাও করা হয় লিঙ্গের আকারে। অবশ্য সূর্য ও কার্তিকেয়ের সঙ্গেও খাণ্ডোবার রূপগত মিল লক্ষ্য করা যায়।

পশুপতি সিলমোহর

শিব: বুৎপত্তি ও অন্যান্য নাম, ঐতিহাসিক বিবর্তন, রূপ 
মহেঞ্জোদাড়োয় প্রাপ্ত পশুপতি সিলমোহর

মহেঞ্জোদারোয় খননকার্য চালানোর সময় একটি সিলমোহর আবিষ্কৃত হয়, যাতে খোদিত চিত্রটি "আদি-শিব"-এর ("proto-Shiva") একটি সম্ভাব্য প্রতিকৃতিরূপে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। উপবিষ্ট, সম্ভবত ইথিফেলিক, জন্তুজানোয়ার বেষ্টিত এই মূর্তিটিকে পশুপতি নামে অভিহিত করা হয়। স্যার জন মার্শাল এবং অন্যান্যরা এই ছবিতে হাঁটু মুড়ে বসা "যোগ ভঙ্গিমা" দেখে এটিকে শিবের আদিরূপ বলে দাবি করেন। যদিও গেভিন ফ্লাড ও জন কি প্রমুখ গবেষক এই দাবি অস্বীকার করেছেন।

রুদ্র

আধুনিক শিবের সঙ্গে বৈদিক দেবতা রুদ্রের নানা মিল পরিলক্ষিত হয়। হিন্দুসমাজে রুদ্র ও শিবকে একই ব্যক্তি মনে করা হয়। রুদ্র হলেন বজ্রবিদ্যুৎসহ ঝড়ের দেবতা; তাকে একজন ভয়ানক, ধ্বংসকারী দেবতা হিসেবে কল্পনা করা হতো।

হিন্দুধর্মের প্রাচীনতম ধর্মগ্রন্থ হল ঋগ্বেদভাষাতাত্ত্বিক তথ্যপ্রমাণ থেকে জানা যায় যে ১৭০০ থেকে ১১০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে এই গ্রন্থের রচনা। ঋগ্বেদে রুদ্র নামে এক দেবতার উল্লেখ রয়েছে। রুদ্র নামটি আজও শিবের অপর নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ঋগ্বেদে (২।৩৩) তাকে "মরুৎগণের পিতা" বলে উল্লেখ করা হয়েছে; মরুৎগণ হলেন ঝঞ্ঝার দেবতাদের একটি গোষ্ঠী। এছাড়াও ঋগ্বেদ ও যজুর্বেদে প্রাপ্ত রুদ্রম্ স্তোত্রটিতে রুদ্রকে নানা ক্ষেত্রে শিব নামে বন্দনা করা হয়েছে; এই স্তোত্রটি হিন্দুদের নিকট একটি অতি পবিত্র স্তোত্র। তবে বেদপ শিব শব্দটি ইন্দ্র, মিত্র ও অগ্নির বিশেষণ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে।

শিব: বুৎপত্তি ও অন্যান্য নাম, ঐতিহাসিক বিবর্তন, রূপ 
তিনমুখী শিব, গান্ধার, খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দী

তবে প্রাচীন দেবতা রুদ্রের সঙ্গে শিবের এই সমত্বারোপ সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত নয়। অ্যালেক্স মাইকেলসের ব্যাখ্যা অনুযায়ী:

To what extent Śiva's origins are in fact to be sought in Rudra is extremely unclear. The tendency to consider Śiva an ancient god is based on this identification, even though the facts that justify such a far-reaching assumption are meager. অর্থাৎ রুদ্রের মধ্যে শিব-এর উৎপত্তি কতটুকু তা অস্পষ্ট। শিব একজন প্রাচীন দেবতা বিবেচনা করার প্রবণতা এই শনাক্তকরণের উপর ভিত্তি করে, যদিও এমন একটি সুদূরপ্রসারী অনুমানকে ন্যায্যতা দেয় এমন তথ্যপ্রমাণগুলো খুবই নগণ্য।

রুদ্রকে "শর্ব" (ধনুর্ধর) নামেও অভিহিত করা হয়। রুদ্রের একটি প্রধান অস্ত্র হল ধনুর্বাণ। নামটি শিব সহস্রনাম স্তোত্রেও পাওয়া যায়। আর. কে. শর্মা মনে করেন, পরবর্তীকালের ভাষাগুলোতেও এই নামটি শিবের অপর নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শব্দটির বুৎপত্তি সংস্কৃত শব্দ শর্ব থেকে, যার অর্থ আঘাত করা বা হত্যা করা। আর. কে. শর্মার ব্যাখ্যা অনুযায়ী এই শব্দটির অর্থ "যিনি অন্ধকারের শক্তিসমূহকে হত্যা করতে সক্ষম"। শিবের অপর দুই নাম ধন্বী ("ধনুর্ধারী") ও বাণহস্ত ("ধনুর্বিদ", আক্ষরিক হস্তে "বাণধারী") ধনুর্বিদ্যার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

অন্যান্য বৈদিক দেবতাদের সঙ্গে সম্পর্ক

হিন্দু দেবমণ্ডলী একজন প্রধান দেবতারূপে শিবের উত্থানের পশ্চাতে কার্যকরী ছিল অগ্নি, ইন্দ্র, প্রজাপতি, বায়ু প্রমুখ বৈদিক দেবতাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক।

অগ্নি

রুদ্রের সঙ্গে অগ্নির সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। বৈদিক সাহিত্যে অগ্নি ও রুদ্রের পারস্পরিক অঙ্গীভবন রুদ্রের রুদ্র-শিব রূপে বিবর্তনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। নিরুক্ত নামক প্রাচীন বুৎপত্তিতত্ত্ববিষয়ক একটি গ্রন্থে এই অঙ্গীভবনের বিষয়টি অত্যন্ত সুস্পষ্ট। এই গ্রন্থে লেখা আছে, "অগ্নিকে রুদ্র নামেও অভিহিত করা হয়"। দুই দেবতার পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়টি অত্যন্ত জটিল। স্টেল ক্র্যামরিকের মতে:

The fire myth of Rudra-Śiva plays on the whole gamut of fire, valuing all its potentialities and phases, from conflagration to illumination.

শতরুদ্রীয় স্তবে "সসিপঞ্জর" ("সোনালি লাল রঙের শিখার মতো আভাযুক্ত") ও "তিবষীমতি" ("জ্বলন্ত শিখা") বিশেষণদুটি রুদ্র ও অগ্নির সমরূপত্ব নির্দেশ করছে। অগ্নিকে ষাঁড়ের রূপে কল্পনা করা হয়ে থাকে, এবং শিবের বাহনও হল নন্দী নামে একটি ষাঁড়। ষাঁড়ের মতো অগ্নিরও শিং কল্পনা করা হয়ে থাকে। মধ্যযুগীয় ভাস্কর্যে অগ্নি ও ভৈরব শিব – উভয়েরই বিশেষত্ব হল অগ্নিশিখার ন্যায় মুক্ত কেশরাশি।

ইন্দ্র

ঋগ্বেদে একাধিক স্থলে শিব শব্দটি ইন্দ্রের অভিধা রূপে ব্যবহৃত হয়েছে (২।২০।৩, ৬।৪৫।১৭, এবং ৮।৯৩।৩)

রূপ

শিব: বুৎপত্তি ও অন্যান্য নাম, ঐতিহাসিক বিবর্তন, রূপ 
শিব ও পার্বতী। শিব এখানে ত্রিনয়ন, মস্তকে অর্ধচন্দ্রধারী, সর্প ও নরকরোটির মালা পরিহিত, সর্বাঙ্গে বিভূতি-মণ্ডিত এবং ত্রিশূলডমরুধারী। তাঁর জটাজুট থেকে গঙ্গা প্রবাহিত।
  • তৃতীয় নয়ন: শিবের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল তার তৃতীয় নয়ন। এই নয়ন দ্বারা শিব কামকে ভস্ম করেছিলেন। বিভিন্ন শাস্ত্রগ্রন্থে শিবের যে ত্র্যম্বকম্ (সংস্কৃত: त्र्यम्बकम्) নামটি পাওয়া যায় তার প্রকৃত অর্থ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। ধ্রুপদি সংস্কৃতে অম্বক শব্দের অর্থ চক্ষু; মহাভারতে শিবকে ত্রিনয়ন রূপে কল্পনা করা হয়েছে; তাই উক্ত নামটির আক্ষরিক অর্থ করা হয়ে থাকে "তৃতীয় নয়নধারী"। যদিও বৈদিক সংস্কৃতে অম্বা বা অম্বিকা শব্দের অর্থ মা; এই প্রাচীন অর্থের ভিত্তিতে ত্র্যম্বকম্ নামটির আক্ষরিক অর্থ করা হয়, তিন জননীর সন্তান। ম্যাক্স ম্যুলার ও আর্থার ম্যাকডোনেল শব্দটির শেষোক্ত অর্থটিকেও ধরেছেন। তবে শিবের তিন জননী সংক্রান্ত কোনো কাহিনীর প্রচলন নেই। তাই ই. ওয়াশবার্ন হপকিনস মনে করেন, এই নামটির সঙ্গে তিন জননীর কোনো সম্পর্ক নেই; বরং অম্বিকা নামে পরিচিত তিন মাতৃদেবীর সঙ্গে এটি সম্পর্কযুক্ত। শব্দটির অন্য একটি অর্থ করা হয় "যাঁর তিন স্ত্রী বা ভগিনী বর্তমান"। কেউ কেউ মনে করেন, শব্দটি এসেছে রুদ্রের সঙ্গে শিবের সমত্বারোপের ফলশ্রুতিতে। কারণ রুদ্রের সঙ্গে দেবী অম্বিকার একটি সম্পর্ক রয়েছে।
  • অর্ধচন্দ্র: শিবের মস্তকে একটি অর্ধচন্দ্র বিরাজ করে। এই কারণে শিবের অপর নাম চন্দ্রশেখর (সংস্কৃত: चन्द्रशेखर)। রুদ্রের রুদ্র-শিব রূপে বিবর্তনের প্রথম যুগ থেকেই এই অর্ধচন্দ্র শিবের একটি বৈশিষ্ট্য। সম্ভবত বৈদিক ও পরবর্তীকালের সাহিত্যে চন্দ্রদেবতা সোম ও রুদ্রের একীভবনের সূত্রেই শিবের এই বৈশিষ্ট্যটির উদ্ভব ঘটেছিল।
  • বিভূতি: শিব তাঁর সর্বাঙ্গে বিভূতি বা ভস্ম মাখেন। ভৈরব ইত্যাদি শিবের কয়েকটি রূপ প্রাচীন ভারতীয় শ্মশান বৈরাগ্য দর্শনের সঙ্গে যুক্ত। রক্ষণশীল ব্রাহ্মণ্যবাদের সঙ্গে সম্পর্কহীন কয়েকটি গোষ্ঠী এই মত অনুযায়ী ধর্মসাধনা করেন। থেরোবাদী বৌদ্ধধর্মের পালি ধর্মগ্রন্থেও এই শ্মশান সাধনার উল্লেখ রয়েছে। এই কারণে শিবের অপর নাম শ্মশানবাসী[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]বিভূতিভূষণ
  • জটাজুট: শিবের মস্তকের কেশরাশি জটাবদ্ধ। এই কারণে শিবের অপর নাম জটী বা কপর্দী ("কপর্দ বা কড়ির ন্যায় কেশযুক্ত")।
  • নীলকণ্ঠ: একবার দেবতা আর অসুর মধ্যে যুদ্ধে অমৃত পানের জন্যে দেবতারা সমুদ্রমন্থন করছিলেন। মন্থনকালের এক পর্যায়ে সমুদ্র থেকে হলাহল বিষ উত্থিত হলে তার বিষাক্ত নির্যাসে দেবতারা অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিলেন। তখন দেবতাদের রক্ষা করার জন্য ভগবান শিব সেই বিষাক্ত বিষ পান করেন। এর ফলে উনার কণ্ঠ নীল হয়ে যায়। একারণেই ভগবান শিব নীলকণ্ঠ (সংস্কৃত: नीलकण्ठ) নামে পরিচিত হন।
শিব: বুৎপত্তি ও অন্যান্য নাম, ঐতিহাসিক বিবর্তন, রূপ 
গঙ্গার মর্ত্যে অবতরণকালে শিব তাঁকে জটায় ধারণ করছেন; সম্মুখে পার্বতী, নন্দী ও ভগীরথ, সন্ত নারায়ণের হিন্দি পাণ্ডুলিপির চিত্র, ১৭৪০ খ্রি.
  • পবিত্র গঙ্গা: হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, গঙ্গা নদীর উৎসস্থল শিবের জটা। এই কারণে শিবের অপর নাম গঙ্গাধর
  • ব্যাঘ্রচর্ম: শিবের পরিধেয় বস্ত্র ব্যাঘ্রচর্ম বা বাঘছাল। এই কারণে শিবের অপর নাম কৃত্তিবাস। শিব ব্যাঘ্রচর্মের আসনের উপর উপবিষ্টও থাকেন। উল্লেখ্য, ব্যাঘ্রচর্মের আসন ছিল প্রাচীন ভারতের ব্রহ্মর্ষিদের জন্য রক্ষিত একটি বিশেষ সম্মান।
  • সর্প: শিবের গলায় একটি সাপ সর্বদা শোভা পায়। এই সাপটি হলো শিবের পরম ভক্ত এবং সমস্ত সাপের রাজা নাগরাজ বাসুকি।
  • ত্রিশূল: শিবের অস্ত্র হল ত্রিশূল
  • ডমরু: শিবের হাতে ডমরু নামে একপ্রকার বাদ্যযন্ত্র শোভা পায়। নটরাজ নামে পরিচিত শিবে নৃত্যরত মূর্তির এটি একটি বিশিষ্ট দিক। ডমরুধারণের জন্য নির্দিষ্ট একটি মুদ্রা বা হস্তভঙ্গিমা ডমরুহস্ত নামে পরিচিত। ডমরু কাপালিক সম্প্রদায়ের প্রতীক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
  • নন্দী: নন্দী নামে একটি পৌরাণিক ষাঁড় শিবের বাহন। শিবকে পশুদের দেবতা মনে করা হয়। তাই তার অপর নাম পশুপতি (সংস্কৃত: पशुपति)। আর. কে. শর্মার মতে, পশুপতি শব্দটির অর্থ "গবাদি পশুর দেবতা"। অন্যদিকে ক্র্যামরিক এই নামটিকে প্রাচীন রুদ্রের অভিধা আখ্যা দিয়ে এর অর্থ করেছেন "পশুদের দেবতা"।
  • গণ: শিবের অনুচরদের গণ বলা হয়। এঁদের নিবাসও কৈলাস। এঁদের ভৌতিক প্রকৃতি অনুসারে ভূতগণ নামেও অভিহিত করা হয়। এঁরা সাধারণত দয়ালু। কেবল কোনো কারণে তাদের প্রভু ক্রুদ্ধ হলে এঁরা প্রভুর সঙ্গে ধ্বংসলীলায় মেতে ওঠেন। শিব স্বীয় পুত্র গণেশকে তাদের নেতা মনোনীত করেন। এই কারণেই গণেশ গণপতি নামে অভিহিত হন।
  • কৈলাস: হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, শিবের অধিষ্ঠান হিমালয়ের কৈলাস পর্বতে। হিন্দুপুরাণ অনুসারে, লিঙ্গাকার কৈলাস পর্বত মহাবিশ্বের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত।
  • বারাণসী: বারাণসী শিবের প্রিয় নগরী। এই নগরী হিন্দুদের পবিত্রতম তীর্থগুলির অন্যতম। হিন্দু ধর্মগ্রন্থে এই নগরী কাশীধাম নামে পরিচিত।

রূপভেদ

ভগবান শিবের বিভিন্ন নাম ও তার সম্পর্কে প্রচলিত বিভিন্ন কাহিনিতে এই দ্বিমুখী সত্ত্বার সন্ধান পাওয়া যায়। উল্লেখযোগ্য রূপভেদ হলো শৈলপুত্র,ব্রক্ষচারী,স্কন্দপিতা,কুষ্মান্ড,সিদ্ধিদাতা,সর্পদেব,গৌরীপতি,অর্ধচন্দ্রঘন্টা,কাত্যায়ন ও অন্যান্য।

ধ্বংসকর্তা ও মঙ্গলময় সত্তা

শিব: বুৎপত্তি ও অন্যান্য নাম, ঐতিহাসিক বিবর্তন, রূপ 
প্রথমা পত্নী দাক্ষায়ণী সতীর শবদেহ স্কন্ধে শিব

যজুর্বেদে শিবের দুটি পরস্পরবিরোধী সত্তার উল্লেখ রয়েছে। এখানে একদিকে তিনি যেমন ক্রূর ও ভয়ংকর (রুদ্র); অন্যদিকে তেমনই দয়ালু ও মঙ্গলময় (শিব)। এই কারণে চক্রবর্তী মনে করেন, "যে সকল মৌলিক উপাদান পরবর্তীকালে জটিল রুদ্র-শিব সম্প্রদায়ের জন্ম দিয়েছিল, তার সবই এই গ্রন্থে নিহিত রয়েছে।" মহাভারতেও শিব একাধারে "দুর্জেয়তা, বিশালতা ও ভয়ংকরের প্রতীক" এবং সম্মান, আনন্দ ও মহত্ত্বের দ্বারা ভূষিত। শিবের নানা নামের মধ্যে তার এই ভয়াল ও মঙ্গলময় সত্তার বিরোধের উল্লেখ রয়েছে।

রুদ্র (সংস্কৃত: রুদ্র) নামটি শিবের ভয়ংকর সত্ত্বার পরিচায়ক। প্রথাগত বুৎপত্তি ব্যাখ্যা অনুসারে, রুদ্র শব্দটির মূল শব্দ হল রুদ্-, যার অর্থ রোদন করা বা চিৎকার করা। স্টেলা ক্র্যামরিক অবশ্য এর একটি পৃথক বুৎপত্তি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এই ব্যাখ্যাটি বিশেষণ রৌদ্র শব্দটির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, যার অর্থ বন্য বা রুদ্র প্রকৃতির। এই ব্যাখ্যা অনুযায়ী, তিনি রুদ্র নামটির অর্থ করেছেন যিনি বন্য বা প্রচণ্ড দেবতা। এই বুৎপত্তিব্যাখ্যা অনুসারে, আর. কে. শর্মা রুদ্র শব্দের অর্থ করেছেন ভয়ংকর। মহাভারতের অনুশাসনপর্বের অন্তর্গত শিব সহস্রনাম স্তোত্রে শিবের হর (সংস্কৃত: हर) নামটির উল্লেখ করা হয়েছে তিন বার। এটি শিবের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নাম। অনুশাসনপর্বে তিন বারই এই নামের উল্লেখ করা হয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্নতর অর্থে। আর. কে. শর্মা এই তিনটি উল্লেখে হর নামটির অর্থ করেছেন "যিনি বন্দী করেন", "যিনি এক করেন" এবং "যিনি ধ্বংস করেন"। শিবের অপর দুই ভয়ংকর রূপ হল "কাল" (সংস্কৃত: काल) ও "মহাকাল" (সংস্কৃত: महाकाल)। এই দুই রূপে শিব সকল সৃষ্টি ধ্বংস করেন। ধ্বংসের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত শিবের অপর একটি রূপ হল ভৈরব (সংস্কৃত: भैरव)। "ভৈরব" শব্দটির অর্থও হল "ভয়ানক"।

অপরপক্ষে শিবের শঙ্কর (সংস্কৃত: शङ्कर) নামটির অর্থ "মঙ্গলকারক" বা "আনন্দদায়ক"। এই নামটি শিবের দয়ালু রূপের পরিচায়ক। বৈদান্তিক দার্শনিক আদি শঙ্কর (৭৮৮-৮২০ খ্রি.) এই সন্ন্যাসজীবনের নাম হিসেবে নামটি গ্রহণ করে শঙ্করাচার্য নামে পরিচিতি লাভ করেন। একই ভাবে শম্ভু (সংস্কৃত: शम्भु) নামটির অর্থও "আনন্দদায়ক"। এই নামটিও শিবের দয়ালু রূপের পরিচায়ক।

যোগী ও গৃহী সত্ত্বা

শিব: বুৎপত্তি ও অন্যান্য নাম, ঐতিহাসিক বিবর্তন, রূপ 
সপরিবার শিব; শিবের সঙ্গে পত্নী পার্বতী এবং পুত্র গণেশকার্তিকেয়

শিবকে একাধারে যোগী ও গৃহী রূপে কল্পনা করা হয়। যোগী শিবের মূর্তি ধ্যানরত। যোগশাস্ত্রের সঙ্গে তার সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে মহাযোগী নামে অভিহিত করা হয়। বৈদিক ধর্মে যজ্ঞের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হলেও, মহাকাব্যিক যুগে তপস্যা, যোগ ও কৃচ্ছ্রসাধন অধিকতর গুরুত্ব পেতে শুরু করে। যোগীবেশে শিব কল্পনার আবির্ভাব তাই অপেক্ষাকৃত পরবর্তীকালে ঘটেছিল।

গৃহী রূপে তিনি পার্বতীর স্বামী এবং গণেশকার্তিকেয় নামে দুই পুত্রের জনক। পার্বতী বা উমা তার স্ত্রী বলে তাকে উমাপতি, উমাকান্তউমাধব নামেও অভিহিত করা হয়। শিবের স্ত্রী পার্বতীই বিশ্বজননী বা মহাশক্তি। গৃহী রূপে শিব আপন পত্নীকে ভালবাসেন এবং শ্রদ্ধা করেন।

শিব ও পার্বতীর দুই পুত্র – কার্তিকেয়গণেশ। দক্ষিণ ভারতে সুব্রহ্মণ্যন, ষন্মুখন, স্বামীনাথনমুরুগান নামে কার্তিকেয়ের পূজা বহুল প্রচলিত; উত্তর ভারতে তিনি স্কন্দ, কুমারকার্তিকেয় নামেই সর্বাধিক পরিচিত। শিবের স্ত্রীকে তার শক্তির উৎস মনে করা হয়।

নটরাজ

শিব: বুৎপত্তি ও অন্যান্য নাম, ঐতিহাসিক বিবর্তন, রূপ 
ব্রোঞ্জনির্মিত চোলযুগীয় নটরাজ শিবের মূর্তি, মেট্রোপলিটান মিউজিয়াম অফ আর্ট, নিউ ইয়র্ক

নটরাজ (তামিল: நடராஜா) বেশে শিবের মূর্তি অত্যন্ত জনপ্রিয়। শিব সহস্রনামে শিবের নর্তক ও নিত্যনর্ত নামদুটি পাওয়া যায়। পৌরাণিক যুগ থেকেই নৃত্য ও সঙ্গীতের সঙ্গে শিবের যোগ বিদ্যমান। সারা ভারতে, বিশেষত তামিলনাড়ুতে, নটরাজের পাশাপাশি নৃত্যমূর্তি নামে শিবের নানান নৃত্যরত মূর্তি সারা ভারতে পাওয়া যায়। শিবের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত দুটি নৃত্যের নাম হল তাণ্ডবলাস্য। তাণ্ডব ধ্বংসাত্মক ও পুরুষালি নৃত্য; শিব কাল-মহাকাল বেশে বিশ্বধ্বংসের উদ্দেশ্যে এই নাচ নাচেন এবং মধুর ও সুচারু নৃত্যকলা; এই আবেগময় নৃত্যকে পার্বতীর নাচ রূপে কল্পনা করা হয়। লাস্যকে তাণ্ডবের নারীসুলভ বিকল্প মনে করা হয়। তাণ্ডব ও লাস্য নৃত্য যথাক্রমে ধ্বংস ও সৃষ্টির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

শিব: বুৎপত্তি ও অন্যান্য নাম, ঐতিহাসিক বিবর্তন, রূপ 
সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফিজিক্স ল্যাবে নটরাজ শিবের মূর্তি।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফিজিক্স ল্যাব দ্যা ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ (CERN)। এখানে রয়েছে  মহাদেব শিবের একটি মূর্তি। এটিকে বলা হয় নটরাজ শিব। ভারত এই প্রতিমাটি উপহার দেয়। ২ মিটার উঁচু এই প্রতিমাটি ২০০৪ সালের ১৮ জুন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফিজিক্স ল্যাবে উন্মোচন করা হয়।

দক্ষিণামূর্তি

দক্ষিণামূর্তি (সংস্কৃত: दक्षिणामूर्ति) শিবের একটি বিশিষ্ট রূপ। আক্ষরিকভাবে দক্ষিণামূর্তি কথাটির অর্থ দক্ষিণদিকে মুখ যাঁর। এই রূপে শিব যোগ, সঙ্গীত ও বিদ্যাচর্চার গুরু এবং শাস্ত্রের ব্যাখ্যাকর্তা। প্রধানত তামিলনাড়ুতে শিবের এই মূর্তি প্রচলিত। দক্ষিণামূর্তি শিব মৃগসিংহাসনে অধিষ্ঠিত এবং জ্ঞানপিপাসু ঋষিগণ কর্তৃক পরিবৃত।

মৃত্যুঞ্জয়

"মৃত্যুঞ্জয়" কথাটির আক্ষরিক অর্থ "যিনি মৃত্যুকে জয় করেছেন"। কথিত আছে, শিব মৃত্যুর দেবতা যমকে জয় করেছিলেন। একটি কিংবদন্তি অনুসারে, ঋষি মার্কণ্ডেয়ের ষোলো বছর বয়সে মৃত্যুযোগ ছিল। মার্কণ্ডেয় শিবের আরাধনা করেন। মৃত্যুকাল উপস্থিত হলে, তিনি শিবের নিকট জীবন ভিক্ষা করেন। শিব যমকে পরাজিত করে মার্কণ্ডেয়কে জীবন দান করেন।

অর্ধনারীশ্বর

শিব: বুৎপত্তি ও অন্যান্য নাম, ঐতিহাসিক বিবর্তন, রূপ 
অর্ধনারীশ্বর বেশে শিব; একাদশ শতাব্দীর ব্রোঞ্জনির্মিত চোল ভাস্কর্য

অর্ধনারীশ্বর বেশে শিব অর্ধেক পুরুষ অর্ধেক নারীদেহধারী। এই রূপের অপর একটি নাম হল "তৃতীয় প্রকৃতি"। এলান গোল্ডবার্গের মতে, সংস্কৃত অর্ধনারীশ্বর কথাটির অর্থ যে দেবতা অর্ধেক নারী; অর্ধেক পুরুষ অর্ধেক নারী নয়। হিন্দু দর্শনে এই রূপের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, এই বিশ্বের পবিত্র পরমাশক্তি একাধারে পুরুষ ও নারীশক্তি।

ত্রিপুরান্তক

একটি পৌরাণিক উপাখ্যান অনুসারে, শিব ধনুর্ধর বেশে ত্রিপুর নামে অসুরদের তিনটি দুর্গ ধ্বংস করেন। এই কারণে শিবের অপর নাম ত্রিপুরান্তক (সংস্কৃত: त्रिपुरान्तक)।

শিবের এই নামটির একটি দার্শনিক ব্যাখ্যাও রয়েছে। পণ্ডিতগণ মনে করেন মানবদেহ তিন প্রকার - স্থূল শরীর বা বহিঃস্থ দেহ, সূক্ষ্ম শরীর বা মন এবং কারণ শরীর বা আত্মার চৈতন্যময় রূপ। এই তিন শরীরকে একত্রে ত্রিপুর বলা হয়। ত্রিপুরান্তক বেশে শিব মানব সত্ত্বার এই ত্রিমুখী অস্তিত্বের ধ্বংস ও বিলোপ ঘটিয়ে মানবকে পরমসত্ত্বার সঙ্গে লীন হতে সহায়তা করেন। এই বেশে তিনি মায়া ও অজ্ঞানকে ধ্বংস করে পরম চৈতন্যের সঙ্গে মানুষের মিলন ঘটান।

অষ্টমূর্তি

শিবের আটটি বিশেষ রূপকে একত্রে অষ্টমূর্তি বলে। এঁরা হলেন: ভব (অস্তিত্ব), শর্ভ (ধনুর্ধর), রুদ্র (যিনি দুঃখ ও যন্ত্রণা প্রদান করেন), পশুপতি (পশুপালক), উগ্র (ভয়ংকর), মহান বা মহাদেব (সর্বোচ্চ আত্মা), ভীম (মহাশক্তিধর) ও ঈশান (মহাবিশ্বের দিকপতি)।

শিবলিঙ্গ

শিব: বুৎপত্তি ও অন্যান্য নাম, ঐতিহাসিক বিবর্তন, রূপ 
তিরুবানাইকবলের জম্বুকেশ্বর মন্দিরে সুসজ্জিত শিবলিঙ্গ

নৃতত্ত্বারোপিত মূর্তি ব্যতিরেকেও শিবলিঙ্গ বা লিঙ্গ-এর আকারে শিবের পূজাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। শিবলিঙ্গ বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। শিব শব্দের অর্থ মঙ্গলময় এবং লিঙ্গ শব্দের অর্থ প্রতীক; এই কারণে শিবলিঙ্গ শব্দটির অর্থ সর্বমঙ্গলময় বিশ্ববিধাতার প্রতীকশিব শব্দের অপর একটি অর্থ হল যাঁর মধ্যে প্রলয়ের পর বিশ্ব নিদ্রিত থাকে; এবং লিঙ্গ শব্দটির অর্থও একই – যেখানে বিশ্বধ্বংসের পর যেখানে সকল সৃষ্ট বস্তু বিলীন হয়ে যায়। যেহেতু হিন্দুধর্মের মতে, জগৎের সৃষ্টি, রক্ষা ও ধ্বংস একই ঈশ্বরের দ্বারা সম্পন্ন হয়, সেই হেতু শিবলিঙ্গ স্বয়ং ঈশ্বরের প্রতীক রূপে পরিগণিত হয়। মনিয়ার-উইলিয়ামস ও ওয়েন্ডি ডনিগার প্রমুখ কয়েকজন গবেষক শিবলিঙ্গকে একটি পুরুষাঙ্গ-প্রতিম প্রতীক মনে করেন। যদিও ক্রিস্টোফার ইসারহুড, স্বামী বিবেকানন্দ, স্বামী শিবানন্দ, ও এস. এন. বালগঙ্গাধর প্রমুখ বিশেষজ্ঞগণ এই মতকে খণ্ডন করেছেন।

অথর্ববেদ সংহিতা গ্রন্থে যূপস্তম্ভ নামে একপ্রকার বলিদান স্তম্ভের স্তোত্রে প্রথম শিব-লিঙ্গ পূজার কথা জানা যায়। এই স্তোত্রের আদি ও অন্তহীন এক স্তম্ভ বা স্কম্ভ-এর বর্ণনা পাওয়া যায়। এই স্কম্ভ-টি চিরন্তন ব্রহ্মের স্থলে স্থাপিত। যজ্ঞের আগুন, ধোঁয়া, ছাই, সোম লতা, এবং যজ্ঞকাষ্ঠবাহী ষাঁড়ের ধারণাটির থেকে শিবের উজ্জ্বল দেহ, তার জটাজাল, নীলকণ্ঠ ও বাহন বৃষের একটি ধারণা পাওয়া যায়। তাই মনে করা হয়, উক্ত যূপস্তম্ভই কালক্রমে শিবলিঙ্গের রূপ ধারণ করেছে। লিঙ্গপুরাণ গ্রন্থে এই স্তোত্রটিই উপাখ্যানের আকারে বিবৃত হয়েছে। এই উপাখ্যানে কীর্তিত হয়েছে সেই মহাস্তম্ভ ও মহাদেব রূপে শিবের মাহাত্ম্য্য।

পঞ্চমন্ত্র

শিব: বুৎপত্তি ও অন্যান্য নাম, ঐতিহাসিক বিবর্তন, রূপ 
পঞ্চানন শিব, চারপাশে বিষ্ণু, ব্রহ্মা, গণেশ ও অন্যান্য দেবতারা; লস এঞ্জেলস কাউন্টি মিউজিয়াম অফ আর্টের সংগ্রহ।

শিবের পবিত্র সংখ্যা হল পাঁচ। তার সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রগুলির একটি (নমঃ শিবায়) পাঁচটি অক্ষর দ্বারা গঠিত।

কথিত আছে, শিবের শরীর পাঁচটি মন্ত্র দ্বারা গঠিত। এগুলিকে বলা হয় পঞ্চব্রহ্মণ। দেবতা রূপে এই পাঁচটি মন্ত্রের নিজস্ব নাম ও মূর্তিতত্ত্ব বর্তমান:

শিবের মূর্তি এই পাঁচটি রূপ পঞ্চাননের আকারে কল্পিত হয়। বিভিন্ন শাস্ত্রে এই পাঁচটি রূপ পঞ্চভূত, পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় ও পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তবে এই পাঁচটি রূপের বর্ণনা প্রসঙ্গে পণ্ডিতদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। স্টেলা ক্র্যামরিক এই সম্মিলনের সামগ্রিক অর্থ সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন:

Through these transcendent categories, Śiva, the ultimate reality, becomes the efficient and material cause of all that exists.

অন্যদিকে পঞ্চব্রহ্মণ উপনিষদ মতে:

জানবে, পার্থিব জগৎের সকল বস্তুর পঞ্চমুখী চরিত্র বিদ্যমান। এর কারণ পঞ্চমুখী ব্রহ্মের চরিত্রবৈশিষ্ট্যরূপে শিবের চিরন্তন বৈচিত্র্য। (পঞ্চব্রহ্মণ উপনিষদ ৩১)

শিব লিঙ্গ পূজার তাৎপর্য কি? শিব পূজা দু'রকম ভাবেই হয়। মূর্তি এবং লিঙ্গ। পূবেই বলা হয়েছে লিঙ্গ শব্দে অনেক গুলো অর্থ আছে। লিঙ্গ শব্দের অর্থ চিহ্ন বা প্রতীক। সাকার রূপে এরূপ লিঙ্গ শরীর বা চিহ্ন আমরা সর্বত্রই ব্যবহার করি। একটি দেশের পরিচয় বহন করে একটি পতাকা। বিষ্ণুমন্ত্রের যারা অনুসারী তাদের পরিচয় তারা দেন দেহতে তিলক ফোঁটা অঙ্কিত করে। ঘটে আমরা দেবদেবীর পুত্তলী এঁকে দেবতার চিহ্ন বা প্রতীক বসাই। এরূপ দুটি প্রতীক বা লিঙ্গ বা চিহ্ন আমরা পূজায় ব্যবহার করি। একটি শিব লিঙ্গ আরেকটি নারায়ণ শিলা। শিব লিঙ্গের গঠন প্রণালী সহজ হওয়ায় মূর্তি তৈরী থেকে লিঙ্গ পূজায় আমরা আগ্রহী বেশি। মাটি দিয়ে অতি সহজে অল্প সময়ে এ প্রতীক তৈরী করা যায় এবং পূজান্তে বিসর্জনও দেয়া যায়। কিন্তু প্রতীকটির নাম লিঙ্গ দেয়াতে আমাদের মধ্যে এ নিয়ে নীল সাহিত্য গড়ে উঠেছে যা সত্যিই দু:খজনক। অথচ একই প্রতীক ব্যবহৃত হচ্ছে নারায়ণ পূজায়, তাকে নিয়ে এরূপ আচারণ আমরা করি না। বিশেষ করে শিব-এর সঙ্গে সৃষ্টির কার্যক্রম যুক্ত থাকাতে আমরা লিঙ্গ শব্দটিকে একেবারে পার্থিব কাজের সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছি। এ বিভ্রান্তি থেকে আমাদের মুক্ত হতে হবে এবং আমাদের শিবত্বে উন্নীত হতে হবে।

হরিহর

বৈদিক যুগে বিষ্ণু ও রুদ্ররূপী শিব ছিলেন অপেক্ষাকৃত অপ্রধান দেবতা। তবে ব্রাহ্মণ (১০০০-৭০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) রচনার সময় থেকেই তাদের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে। পৌরাণিক যুগে দুই দেবতাকে কেন্দ্র করেই পৃথক সম্প্রদায় গড়ে ওঠে। এই সম্প্রদায়গুলি ভক্ত টানবার লক্ষ্যে পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়। ফলত এই দুই প্রধান দেবতার পারস্পরিক সম্পর্কটি বর্ণনা করার জন্য রচিত হয় একাধিক ভিন্নধর্মী কাহিনি।

প্রত্যেক সম্প্রদায়ই নিজ নিজ দেবতাকে সর্বোচ্চ দেবতা রূপে উপস্থাপিত করে। এইভাবে বিষ্ণুকেন্দ্রিক পৌরাণিক সাহিত্যে বিষ্ণু শিবে "পরিণত হন"। বিষ্ণুপুরাণ (খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দী) গ্রন্থের উপাখ্যান অনুসারে, বিষ্ণু জাগরিত হয়ে বিশ্ব সৃষ্টির জন্য ব্রহ্মা এবং তা ধ্বংসের জন্য শিবে রূপান্তরিত হয়েছিলেন। ভাগবত পুরাণ অনুসারে, শিব বিষ্ণুরই একটি রূপ মাত্র। অন্যদিকে শিবকেন্দ্রিক পৌরাণিক সাহিত্যে দেখা যায়, শিব একাই এবং স্বাধীনভাবেই বিশ্ব সৃষ্টি, রক্ষা ও ধ্বংস করছেন। শিবলিঙ্গের উৎপত্তি সংক্রান্ত একটি শৈব পুরাণে আছে, জ্যোতির্লিঙ্গরূপী শিবের দেহ থেকেই বিষ্ণু ও ব্রহ্মার উৎপত্তি হয়েছিল। শৈব শতরুদ্রীয় স্তোত্রে শিবকে "বিষ্ণুরূপী"-ও বলা হয়েছে। শরভের উপাখ্যানে দুই দেবতার পারস্পরিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে দুই সম্প্রদায়ের মতবাদের পার্থক্যটি সুষ্পষ্ট হয়। উক্ত কাহিনিতে শিব একাধারে মানুষ, পাখি ও পশুর রূপে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। হিরণ্যকশিপু বধের জন্য নৃসিংহ রূপে অবতার গ্রহণের জন্য বিষ্ণুকে ভর্ৎসনা করার লক্ষ্যেই শিব উক্ত রূপে অবতীর্ণ হন। যদিও বৈষ্ণব ও বিজয়ীন্দ্র তীর্থ (১৫৩৯-৯৫) প্রমুখ দ্বৈতবাদী পণ্ডিতেরা তাদের সাত্ত্বিক পুরাণশ্রুতি পাঠের ভিত্তিতে নৃসিংহ অবতার সম্পর্কে মতবিরোধ পোষণ করতেন।

বিভিন্ন সমন্বয়বাদী গোষ্ঠী অবশ্য দুই দেবতার পারস্পরিক মধুর ও সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্কের কথাই বলে থাকেন। এই সকল গোষ্ঠীর মতবাদে হরিহর নামে এক দেবতার অস্তিত্ব লক্ষিত হয়। ইনি বিষ্ণু (হরি) ও শিব (হর)-এর সম্মিলিত রূপ। এই রূপ হরিরুদ্র নামেও পরিচিত। মহাভারতে এই রূপের উল্লেখ রয়েছে। শিবের মহাবলেশ্বর নামটির উৎপত্তি আখ্যানটি হল এই জাতীয় সমন্বয়মূলক কাহিনির একটি উদাহরণ। এই আখ্যান অনুযায়ী, শিব রাবণকে বরস্বরূপ একটি শিবলিঙ্গ প্রদান করেছিলেন। শর্ত ছিল লিঙ্গটি রাবণকে সর্বদা বহন করতে হবে। একটি স্থানে এসে রাবণ মূত্রত্যাগ করার জন্য ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশধারী বিষ্ণুভক্ত নারদকে লিঙ্গটি কিছুক্ষণের জন্য ধরতে বলেন। নারদ এটি মাটিতে রেখে অদৃশ্য হয়ে যান। রাবণ ফিরে এসে লিঙ্গটি স্থানান্তরে অসমর্থ হন এবং সেই থেকে লিঙ্গটি সেই স্থানেই থেকে যায়। কথিত আছে, এই স্থানটি হল অধুনা ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দেওঘর। কর্ণাটকের গোকর্ণের কাহিনিটিও কতকটা একই প্রকার। এই আখ্যানে দেখা যায়, কৈলাস থেকে লঙ্কায় প্রত্যাবর্তন কালে রাবণ গণেশকে একটি শিবলিঙ্গ ধরতে দিয়ে স্নান করতে যান। কিন্তু গণেশ সেটি ভূমিতে স্থাপন করেন। এই কারণে লিঙ্গটির নাম হয় মহাবলেশ্বর।

অপর একটি কাহিনি অনুসারে, শিব বিষ্ণুর নারী অবতার মোহিনীর রূপে মুগ্ধ হয়ে তার সঙ্গে মিলিত হন। উভয়ের মিলনের ফলে আয়াপ্পার জন্ম হয়। এই আয়াপ্পা শাস্তা বা আয়ানারের সমরূপীয়। একদল উদ্ধত ঋষিকে শিক্ষা দেবার সময়ও মোহিনী শিবের সেবা করেন।

শিবের বিভিন্ন নাম

শিবকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়ে থাকে। অন্য সকল দেবতার মত তারও ১০৮ নাম রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হল - মহাদেব, শিব, নটরাজ, শম্ভু, পশুপতি, নীলকণ্ঠ, চিন্তামণি, মহেশ্বর, রুদ্র, গৌরিপতি, মাতাঙ্গেশ্বর, মহাশম্বরানন্দ ভৈরব, রাক্ষসেশ্বর, ভীমেশ্বর, শৈলেন্দ্রেশ্বর, কোটেশ্বর মহাদেব, কালভৌরব, জগন্নাথদেব, মল্লিকার্জুন, অ্যাকাম্রনাথ, সিদ্ধিনাথ, বাল্ব্রক্ষেশ্বর, লম্বকর্ণ, চামুণ্ডেশ্বর, মহাকাল, ভুবনেশ্বর, বগলামুখেশ্বর, সতীপতি, ত্রিপুরারি, তীর্থরাজ, সদাশিব, যোগীশ্বর ইত্যাদি।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

শিবের পুত্র

হিন্দু মাত্রেই জানেন শিবের পুত্রের সংখ্যা দুই। কার্তিক বা ষড়ানন আর গণেশ বা গজানন। কিন্তু, ‘শিবপুরাণ’ জানাচ্ছে, শিবের মোট পুত্রসংখ্যা ৬। এই পুত্রেরা কেউই কিন্তু পার্বতীর সন্তান নন। শিবের বিভিন্ন লীলার সময়ে তাদের জন্ম হয়েছিল। কার্তিক-গণেশ ছাড়াও বাকি চার পুত্রের সন্ধান রইল এখানে।

• আয়াপ্পান— অসুরদের হাত থেকে অমৃতকে বাঁচানোর জন্য বিষ্ণু মোহিনীরূপ ধারণ করেন। শিব মোহিনীর সৌন্দর্যে বশীভূত, মনোমুগ্ধকর ও মোহিত হন। মোহিনীর সাথে মিলিত হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার আগেই তার বীর্য স্খলন হয়ে মাটিতে পরে। সেখান থেকেই আয়াপ্পানের জন্ম হয়। দক্ষিণ ভারতে আইপ্পানকে গুরুত্বপূর্ণ দেবতা বলেই মনে করা হয়। তাকে হরি ও হরের সম্মিলিত রূপ বলে মনে করা হয়।

• অন্ধকাসুর— দানবরাজ হিরণ্যাক্ষ পুত্রহীন ছিলেন। তিনি পুত্রলাভের আশায় মহাদেবের তপস্যা করেন। শিব তাকে এক পুত্রসন্তান প্রদান করেন। জন্মান্ধ সেই পুত্রের নাম ছিল অন্ধকাসুর। পরে অন্ধকাসুর পার্বতীকে অনৈতিকভাবে অধিকার করতে চাইলে স্বয়ং শিবই তাকে হত্যা করেন।

• ভৌম— শিবের স্বেদবিন্দু ভূমিতে পড়েই ভৌমের জন্ম হয়েছিল। শিব তখন গভীর ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। ভূমিদেবীই ভৌমকে পালন করেন। পরে শিব ভৌমের কথা জানতে পারেন এবং তাকে পুত্র হিসেবে স্বীকার করে নেন।

• খুজ— একবার গভীর ধ্যানে মগ্ন অবস্থায় শিবের দেহ থেকে তীব্র জ্যোতি বিকীর্ণ হতে থাকে। সেই জ্যোতি ভূমিতে প্রবিষ্ট হলে খুজের জন্ম হয়। তাকে লৌহের দেবতা বলে মনে করা হয়।

অবতার

লোকবিশ্বাস অনুসারে, হিন্দুধর্মের অন্যান্য দেবদেবীদের মতো শিবেরও একাধিক অবতার বিদ্যমান। তবে পুরাণ শাস্ত্রে শিবের অবতারের উল্লেখ থাকলেও, এই অবতারতত্ত্ব শৈবধর্মে স্বীকৃত নয়।

উৎসব

প্রতি বছর হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণ চতুর্দশী তিথিতে শিবরাত্রি উৎসব উদযাপিত হয়। এই উৎসব হিন্দুদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এই দিন ভক্তের শিবের মস্তকে ফল, ফুল ও বিল্বপত্র অর্পণ করে।

চৈত্রসংক্রান্তির দিন বাংলায় শিবকেন্দ্রিক একটি বিশেষ উৎসব পালিত হয়। এটি চড়ক উৎসব নামে পরিচিত। এটি পৌরাণিক উৎসব নয়, লোকউৎসব। গাজন এই উৎসবের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

মন্দির

ভারতীয় উপমহাদেশে অনেক শিবমন্দির রয়েছে। এগুলির মধ্যে জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরগুলি সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ।

জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির

শিবের সর্বাপেক্ষা পবিত্র মন্দির হল দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির। এগুলি হল:

জ্যোতির্লিঙ্গ অবস্থান
সোমনাথ শিব: বুৎপত্তি ও অন্যান্য নাম, ঐতিহাসিক বিবর্তন, রূপ  প্রভাস পাটন, বেরাবলের নিকট, গুজরাত
মল্লিকার্জুন শিব: বুৎপত্তি ও অন্যান্য নাম, ঐতিহাসিক বিবর্তন, রূপ  শ্রীশৈলম, অন্ধ্রপ্রদেশ
মহাকালেশ্বর শিব: বুৎপত্তি ও অন্যান্য নাম, ঐতিহাসিক বিবর্তন, রূপ  উজ্জ্বয়িনী, মধ্যপ্রদেশ
ওঙ্কারেশ্বর শিব: বুৎপত্তি ও অন্যান্য নাম, ঐতিহাসিক বিবর্তন, রূপ  ইন্দোরের নিকটস্থ, মধ্যপ্রদেশ
কেদারনাথ শিব: বুৎপত্তি ও অন্যান্য নাম, ঐতিহাসিক বিবর্তন, রূপ  কেদারনাথ, উত্তরাখণ্ড
ভীমাশঙ্কর শিব: বুৎপত্তি ও অন্যান্য নাম, ঐতিহাসিক বিবর্তন, রূপ  বিতর্কিত:
কাশী বিশ্বনাথ বারাণসী, উত্তরপ্রদেশ
ত্র্যম্বকেশ্বর শিব: বুৎপত্তি ও অন্যান্য নাম, ঐতিহাসিক বিবর্তন, রূপ  ত্র্যম্বক, নাসিক, মহারাষ্ট্র
রামনাথস্বামী শিব: বুৎপত্তি ও অন্যান্য নাম, ঐতিহাসিক বিবর্তন, রূপ  রামেশ্বরম, তামিলনাড়ু
ঘৃষ্ণেশ্বর শিব: বুৎপত্তি ও অন্যান্য নাম, ঐতিহাসিক বিবর্তন, রূপ  ইলোরা, মহারাষ্ট্র
বৈদ্যনাথ বিতর্কিত:
নাগেশ্বর শিব: বুৎপত্তি ও অন্যান্য নাম, ঐতিহাসিক বিবর্তন, রূপ  বিতর্কিত:

শিব তান্ডব স্তোত্র

ভগবান শিবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তোত্রগুলির মধ্যে একটি হল 'শিব তান্ডব স্তোত্র'। বিশ্বাস করা হয় যে, রাজা রাবন ছিলেন শিবের একনিষ্ঠ ভক্ত। শিবের অনুসারীগণ মনে করেন যে, রাবন এই স্তোত্রটি রচনা করেন এবং তিনিই প্রথম এটি পাঠ করেন।

শিব তান্ডব স্তোত্র সম্পর্কে রামায়ণের চরিত্র রাবণকে ঘিরে একটি বহুল প্রচলিত কাহিনী রয়েছে। কাহিনীটি এরকম যে, রাবনের পূর্বে তাঁর সৎ ভাই কুবের ছিলেন লঙ্কার রাজা। কুবেরের ছিল দূর্লভ এক পুষ্পক বিমান ( উড়ুক্কু রথ)। একসময় রাবন তাঁর ভাইকে যুদ্ধে পরাজিত করে সেই পুষ্পক বিমানে চড়ে বিশ্ব পরিভ্রমণ করছিলেন। এভাবে একসময় তিনি কৈলাস পর্বতের কাছে আসলে তাঁর পুষ্পক বিমান থেমে যায়। হিন্দুধর্মমতে কৈলাস পর্বত ভগবান শিবের আবাসস্থল এবং গোটা পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল। সেখানে পুষ্পক বিমান থেমে গেলে রাবণ ভীষণ বিরক্ত হন। কৈলাস পর্বত রাবনকে তাঁর বিমানের দিক পরিবর্তন করতে বলে কারণ সেই মূহুর্তে শিব-পার্বতী কৈলাসে বিশ্রামরত ছিলেন। কিন্তু রাবন কৈলাসের কথায় কর্ণপাত করলেন না। তিনি পুষ্পক বিমান থেকে নেমে কৈলাসকে সরিয়ে দেয়ার জন্য প্রচন্ড শক্তি প্রয়োগ করলেন। এতে গোটা পৃথিবী কাঁপতে শুরু করল। 

সেই মুহূর্তে রাবনকে শিক্ষা দেয়ার জন্য ভগবান শিব তাঁর পায়ের আঙুল দিয়ে কৈলাস পর্বতকে প্রচন্ড শক্তিতে চেপে ধরলেন। পর্বতের চাপে রাবনের হাত পিষে যেতে থাকল। যন্ত্রণায় রাবন চিৎকার করতে লাগলেন। সেই চিৎকার ত্রিলোকের (স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল) সব যায়গা থেকে শোনা গেলো। সংস্কৃতে এই চিৎকারের ধ্বণিকে বলে 'রব'। সেই রব শুনে মহর্ষি নারদ সেখানে উপস্থিত হলেন। তিনি সেই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য রাবনকে শিবের আরাধনা করতে পরামর্শ দিলেন। মহর্ষি নারদের পরামর্শ অনুযায়ী রাবন চৌদ্দ দিন ধরে শিব মন্ত্র পাঠ করতে থাকলেন। এরপর প্রদোষকালে (সূর্যোদয়ের পূর্বে একঘন্টা ও সূর্যাস্তের পরে একঘন্টার মধ্যের সময়) শিব তান্ডব স্তোত্র পাঠ করতে থাকলেন। যাদুকরী সেই স্তোত্র পাঠ ত্রিভুবনের সব যায়গা থেকে শোনা গেলো। শিবের সৌন্দর্য ও প্রশংসা সংবলিত সেই স্তোত্র শুনে সবাই মুগ্ধ হল।

স্তোত্র পাঠ শেষ হলে ভগবান শিব রাবনের প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়ে কৈলাস থেকে নেমে এলেন এবং তাঁর নাম দিলেন রাবন। এর আগে রাবনকে দশানন (দশ মাথা যার) বলে ডাকা হতো। রাবন ছিলেন সত্যিকারের একজন বেদজ্ঞ এবং দেবী সরস্বতীর আশির্বাদধন্য। যথাযথ সুর ও ছন্দের সমন্বয়ে তৈরি শিব তান্ডব স্তোত্র পাঠ শুনে রাবনের প্রতি ভগবান শিব এতটাই সন্তুষ্ট হলেন যে, তখন তাঁকে তিনি অতি দূর্লভ চন্দ্রহাস তরবারি দান করলেন।

শিবের অনুসারীগণ বিশ্বাস করেন, শিবের অন্যান্য স্তোত্রের মত শিব তান্ডব স্তোত্রও সবার পাঠ করা উচিত। তাদের মতে, এই স্তোত্রের যাদুকরী ক্ষমতা রয়েছে। তাই আমাদের শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক উন্নতিতে এই স্তোত্র সঠিক নিয়মে এবং ভগবান শিবের প্রতি পূর্ণ ভক্তি নিয়ে পাঠ করা উচিত। তাছাড়া এই স্তোত্র পাঠে আমাদের সুখ, সমৃদ্ধি ও শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং আমরা আমাদের মধ্যে শিবের উপস্থিতি অনুভব করি। যে কোন সময় শিব তান্ডব স্তোত্র পাঠ ও শ্রবণ করা যায়, তবে প্রদোষকালে এই স্তোত্র পাঠ করাই উত্তম।

আরও দেখুন

পাদটীকা

তথ্যসূত্র

  • Apte, Vaman Shivram (১৯৬৫), The Practical Sanskrit Dictionary (Fourth revised and enlarged সংস্করণ), Delhi: Motilal Banarsidass Publishers, আইএসবিএন 81-208-0567-4 
  • Arya, Ravi Prakash & K. L. Joshi. Ṛgveda Saṃhitā: Sanskrit Text, English Translation. Parimal Publications, Delhi, 2001, আইএসবিএন ৮১-৭১১০-১৩৮-৭ (Set of four volumes). Parimal Sanskrit Series No. 45; 2003 reprint: 81-7020-070-9.
  • Chakravarti, Mahadev (১৯৯৪), The Concept of Rudra-Śiva Through The Ages (Second Revised সংস্করণ), Delhi: Motilal Banarsidass, আইএসবিএন 81-208-0053-2 
  • Chidbhavananda, Swami (১৯৯৭)। Siva Sahasranama Stotram: With Navavali, Introduction, and English Rendering.। Sri Ramakrishna Tapovanam। আইএসবিএন 81-208-0567-4  (Third edition). The version provided by Chidbhavananda is from chapter 17 of the Anuśāsana Parva of the Mahābharata.
  • Courtright, Paul B. (১৯৮৫)। Gaṇeśa: Lord of Obstacles, Lord of Beginnings। New York: Oxford University Press। আইএসবিএন [[Special:BookSources/আইএসবিএন ০-১৯-৫০৫৭৪২-২|[[আন্তর্জাতিক মান পুস্তক সংখ্যা|আইএসবিএন]] [[বিশেষ:বইয়ের_উৎস/0-19-505742-2|০-১৯-৫০৫৭৪২-২]]]] |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য) 
  • Flood, Gavin (১৯৯৬)। An Introduction to Hinduism। Cambridge: Cambridge University Press। আইএসবিএন 0-521-43878-0 
  • Flood, Gavin (Editor) (২০০৩)। The Blackwell Companion to Hinduism। Malden, MA: Blackwell Publishing Ltd.। আইএসবিএন 1-4051-3251-5 
  • Goldberg, Ellen (২০০২)। The Lord Who is Half Woman: Ardhanārīśvara in Indian and Feminist Perspective। Albany, New York: State University of New York Press। আইএসবিএন 0-7914-5326-X 
  • Griffith, T. H. (১৯৭৩), The Hymns of the Ṛgveda (New Revised সংস্করণ), Delhi: Motilal Banarsidass, আইএসবিএন 81-208-0046-X 
  • Gupta, Shakti M. (১৯৮৮)। Karttikeya: The Son of Shiva। Bombay: Somaiya Publications Pvt. Ltd.। আইএসবিএন 81-7039-186-5 
  • Hopkins, E. Washburn (১৯৬৯)। Epic Mythology। New York: Biblo and Tannen।  Originally published in 1915.
  • Jansen, Eva Rudy (১৯৯৩)। The Book of Hindu Imagery। Havelte, Holland: Binkey Kok Publications BV। আইএসবিএন 90-74597-07-6 
  • Keay, John (২০০০)। India: A History। New York: Grove Press। আইএসবিএন 0-8021-3797-0 
  • Kramrisch, Stella (১৯৮১)। The Presence of Śiva। Princeton, New Jersey: Princeton University Press। আইএসবিএন 0-691-01930-4 
  • Macdonell, Arthur Anthony (১৯৯৬)। A Practical Sanskrit Dictionary। New Delhi: Munshiram Manoharlal Publishers। আইএসবিএন 81-215-0715-4 
  • Mate, M. S. (১৯৮৮)। Temples and Legends of Maharashtra। Bombay: Bharatiya Vidya Bhavan। 
  • Michaels, Axel (২০০৪)। Hinduism: Past and Present। Princeton, New Jersey: Princeton University Press। আইএসবিএন 0-691-08953-1 
  • Sarup, Lakshman (১৯২০–১৯২৭)। The Nighaṇṭu and The Nirukta  Reprint: Motilal Banarsidass, 2002, আইএসবিএন ৮১-২০৮-১৩৮১-২.
  • Sharma, Ram Karan (১৯৮৮), Elements of Poetry in the Mahābhārata (Second সংস্করণ), Delhi: Motilal Banarsidass, আইএসবিএন 81-208-0544-5 
  • Sharma, Ram Karan (১৯৯৬), Śivasahasranāmāṣṭakam: Eight Collections of Hymns Containing One Thousand and Eight Names of Śiva, Delhi: Nag Publishers, আইএসবিএন 81-7081-350-6  This work compares eight versions of the Śivasahasranāmāstotra with comparative analysis and Śivasahasranāmākoṣa (A Dictionary of Names). The text of the eight versions is given in Sanskrit.
  • Sivaramamurti, C. (১৯৭৬)। Śatarudrīya: Vibhūti of Śiva's Iconography। Delhi: Abhinav Publications। 
  • Stutley, Margaret (১৯৮৫)। The Illustrated Dictionary of Hindu Iconography  First Indian Edition: Munshiram Manoharlal, 2003, আইএসবিএন ৮১-২১৫-১০৮৭-২.
  • Tattwananda, Swami (১৯৮৪)। Vaisnava Sects, Saiva Sects, Mother Worship। Calcutta: Firma KLM Private Ltd.।  First revised edition.
  • Zimmer, Heinrich (১৯৪৬)। Myths and Symbols in Indian Art and Civilization। Princeton, New Jersey: Princeton University Press। আইএসবিএন 0-691-01778-6  First Princeton-Bollingen printing, 1972.
  • of Goswami Tulsidas; original text, transliteration, English translation and notes. (১৯৮৫)। Hanuman Chalisa। Chennai, India: Sri Ramakrishna Math। আইএসবিএন 81-7120-086-9 

Tags:

শিব বুৎপত্তি ও অন্যান্য নামশিব ঐতিহাসিক বিবর্তনশিব রূপশিব রূপভেদশিব পঞ্চমন্ত্রশিব হরিহরশিব ের বিভিন্ন নামশিব ের পুত্রশিব অবতারশিব উৎসবশিব মন্দিরশিব তান্ডব স্তোত্রশিব আরও দেখুনশিব পাদটীকাশিব তথ্যসূত্রশিবআইএএসটিআইএসও ১৫৯১৯গণেশচিত্র:Shiva pronounce.oggদুর্গাপঞ্চদেবতা পূজাশৈবধর্মসংস্কৃত ভাষাসাহায্য:সংস্কৃতের জন্য আইপিএসূর্য (দেবতা)স্মার্তবাদ

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

গাজীপুর জেলাগোলাপঅর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগরেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাভালোবাসাআর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলবাংলাদেশবাঙালি হিন্দু বিবাহপেশাচণ্ডীমঙ্গলমানিক বন্দ্যোপাধ্যায়দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থাজয়া আহসানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন (১৮৬১–১৯০১)কানাডাবাংলাদেশের নদীবন্দরের তালিকাদ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনচন্দ্রগুপ্ত মৌর্যইহুদি গণহত্যাআয়তন অনুযায়ী ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহের তালিকাভূমিকম্পবাংলাদেশের ইউনিয়নকুতুব মিনারক্রিকেটসমাজকর্মশামসুর রাহমানদৈনিক ইনকিলাবমহাভারতনেপালএস এম শফিউদ্দিন আহমেদবাল্যবিবাহঈদুল আযহালোকনাথ ব্রহ্মচারীমৌলিক পদার্থের তালিকামোশাররফ করিমলক্ষ্মীপুর জেলাআইসোটোপহরে কৃষ্ণ (মন্ত্র)শেখ মুজিবুর রহমানশব্দ (ব্যাকরণ)টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাসেলজুক সাম্রাজ্যপ্রাকৃতিক দুর্যোগমাযহাবঅপারেশন সার্চলাইটমোবাইল ফোনথানকুনিমৌসুমীইসলাম ও হস্তমৈথুনধর্মীয় জনসংখ্যার তালিকাগোপাল ভাঁড়ঢাকা বিভাগকৃত্তিবাস ওঝাবাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিশেখ হাসিনাঅশ্বত্থসংস্কৃতিবাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীদের তালিকামিজানুর রহমান আজহারীদুর্নীতি দমন কমিশন (বাংলাদেশ)কারকদৌলতদিয়া যৌনপল্লিবাংলাদেশের স্থল বন্দরসমূহের তালিকাসূরা নাসগাজওয়াতুল হিন্দতামিম বিন হামাদ আলে সানিঅণুজীবআগ্নেয় শিলামহাদেশআসমানী কিতাবজাতীয় স্মৃতিসৌধরাজশাহী বিভাগনোয়াখালী জেলাম্যালেরিয়াবেদ🡆 More