লিঙ্গপুরাণ

লিঙ্গপুরাণ (लिङ्ग पुराण, IAST: Liṅga Purāṇa) হলো আঠারোটি মহাপুরাণের মধ্যে একটি এবং হিন্দুধর্মের অন্যতম শাখা শৈবধর্মের গ্রন্থ। শিরোনাম হিসাবে ব্যবহৃত লিঙ্গ শব্দটি দ্বারা শিবের প্রতীককে বুঝানো হচ্ছে।

লিঙ্গপুরাণ
লিঙ্গপুরাণ পান্ডুলিপি হতে নেয়া একটি পাতা (সংস্কৃত, দেবনগরী)

লিঙ্গপুরাণের লেখক (গণ) এবং সময়কাল সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি এবং অনুমান করা হয় যে মূল গ্রন্থটি আনুমানিক ৫ম থেকে ১০ম শতাব্দীর মধ্যেবর্তী কোনো একসময় রচিত হয়েছে। গ্রন্থটির অনেকগুলি বৈসাদৃশ্যপূর্ণ সংস্করণের দেখা পাওয়া যায় এবং সম্ভবতঃ সময়ের সাথে সাথে পুনঃ পুনঃ সংশোধিত হয়ে হয়ে এটি প্রচারিত হয়েছে। মূল গ্রন্থটি দুটি অংশ নিয়ে গঠিত যাতে সর্বমোট ১৬৩টি অধ্যায় রয়েছে।

গ্রন্থটিতে যেসকল বিষয়বন্তু রয়েছে সেগুলো হলো: মহাজাগতিক বিষয়াবলী, পৌরাণিক কাহিনী, ঋতু সম্পর্কিত, উত্‌সব সম্পর্কিত, ভূগোল, তীর্থযাত্রার জন্য একটি ভ্রমণ নির্দেশিকা, শিবলিঙ্গ এবং নন্দীর নকশা ও পবিত্রতার জন্য একটি অনুসরণীয় নিয়মাবলী, স্তুথি, এই প্রতীকগুলির গুরুত্ব, যোগের বর্ণনা এবং এর বিভিন্ন সুবিধার বিবরণ।

সময়কাল এবং কাঠামো

পণ্ডিতদের মধ্যে লিঙ্গপুরাণের প্রাচীনতম মূল রচনার আনুমানিক সময়কাল পঞ্চম শতাব্দী থেকে দশম শতাব্দী পর্যন্ত ঠিক কোন সময়টি তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে।

অন্যান্য সকল পুরাণের মতোই লিঙ্গপুরাণেরও একটি জটিল কালানুক্রমিক রয়েছে। কর্নেলিয়া ডিম্মিট এবং জে. এ. বি. ভ্যান বুয়েনেন মত দিয়েছেন যে, প্রতিটি পুরাণই রীতি অনুসারে এক একটি বিশ্বকোষীয় বিবরণ এবং এটি কখন, কোথায়, কেন এবং কাদের দ্বারা রচিত হয়েছিল তা নির্ধারণ করা কঠিন:

আজ যেভাবে তাদের অস্তিত্ব রয়েছে, সেটি অনুসারে পুরাণগুলি একটি স্তরিভূত সাহিত্য। প্রতিটি শিরোনামকৃত অধ্যায়ে এমন উপাদান রয়েছে যা ক্রমাগত বহু ঐতিহাসিক যুগে সংখ্যার হিসাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে, কোনও পুরাণের রচনার একক সময়কাল নেই। (...) এটি এমন যেমন লাইব্রেরিগুলিতে ঘটে থাকে, যেখানে নতুন সংখ্যক অবিচ্ছিন্নভাবে সংযোজিত করা হয়, এটি কেবল কোনো তাকের শেষে করা হয় না, বরং এলোমেলোভাবে যুক্ত করা হয়।

(As they exist today, the Puranas are a stratified literature. Each titled work consists of material that has grown by numerous accretions in successive historical eras. Thus no Purana has a single date of composition. (...) It is as if they were libraries to which new volumes have been continuously added, not necessarily at the end of the shelf, but randomly.)

— Cornelia Dimmitt and J. A. B. van Buitenen, Classical Hindu Mythology: A Reader in the Sanskrit Puranas

লিঙ্গপুরাণের বহু সংস্করণে টিকে আছে, যা দুটি অংশ নিয়ে গঠিত – ১০৮টি অধ্যায় নিয়ে গঠিত পূর্ব-ভাগ (পুরোনো অংশ, কখনও কখনও পূর্বার্ধ নামে পরিচিত) এবং ৫৫টি অধ্যায় নিয়ে গঠিত উত্তর-ভাগ (পরে অংশ, কখনও কখনও উত্তরার্ধ নামেও পরিচিত)। যদিও, গ্রন্থটির পাণ্ডুলিপির ২.৫৫.৩৭ অংশে দাবি করা হয়েছে যে উত্তর-ভাগের কেবল ৪৬টি অধ্যায় রয়েছে, যা থেকে বুঝা যাচ্ছে যে গ্রন্থটি সময়ের সাথে সম্প্রসারিত হয়েছে। কিছু পণ্ডিত মত দেন যে পুরো উত্তর-ভাগ অংশটিই পরবর্তীকালে সন্নিবেশিত বা সংযুক্তি হিসাবে যুক্ত করা হয়ে থাকতে পারে।

গ্রন্থটিকে এর মূল বিষয়বস্তু অনুসারে নামকরণ করা হয়েছে যেহেতু এটি লিঙ্গের উপাসনা সম্পর্কিত এবং গ্রন্থটিতে মূলতঃ মহাশক্তিধর হিসাবে শিবের প্রতি দৃষ্টিনিবদ্ধ করা হয়েছে। তবে, শিব সম্পর্কিত বিষয়াবলীর পাশাপাশি লিঙ্গপুরাণে বৈদিক ধর্ম সম্পর্কিত বিষয়াবলীর সাথে বিষ্ণু এবং ব্রহ্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে উত্‌সর্গকৃত অধ্যায়ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

বিষয়বস্তু

অ্যালান দানিয়ালু-এর মতে লিঙ্গ হচ্ছে প্রতীক। এটি হিন্দু গ্রন্থগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, যেখানে লিঙ্গা হলো প্রকাশিত চিহ্ন এবং কারও বা কোনও কিছুর প্রকৃতি। এটি ব্রহ্ম ধারণার সাথে সংযুক্ত, যা অদৃশ্য চিহ্নহীন এবং অস্তিত্বের নীতি হিসাবে নিরাকার বা প্রতীক বা লিঙ্গহীন। লিঙ্গপুরাণে বলা হয়েছে, "শিব চিহ্নহীন, বর্ণহীন, স্বাদহীণ, গন্ধহীন, শব্দ বা স্পর্শের বাইরে, গুণহীন, গতিহীন এবং পরিবর্তনহীন"। মহাবিশ্বের উত্‌স হলো চিহ্নহীন এবং মহাবিশ্বের সমস্ত কিছুর প্রকাশরূপ হলো লিঙ্গ, যা চির অপরিবর্তনীয় মূলনীতি এবং পরিবর্তিত প্রকৃতির একটি সংযুক্ত প্রতিরূপ। লিঙ্গ পুরাণ গ্রন্থটি এই ভিত্তির উপর লিখিত।

তথ্যসূত্র

Tags:

লিঙ্গপুরাণ সময়কাল এবং কাঠামোলিঙ্গপুরাণ বিষয়বস্তুলিঙ্গপুরাণ তথ্যসূত্রলিঙ্গপুরাণ বহিঃসংযোগলিঙ্গপুরাণIASTপুরাণশিবশিবলিঙ্গশৈবধর্মহিন্দুধর্ম

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খলজিমহাদেশ অনুযায়ী সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং নির্ভরশীল অঞ্চলসমূহের তালিকাশাকিব খান অভিনীত চলচ্চিত্রের তালিকাইতালিআর্দ্রতাফুসফুসমোবাইল ফোননাটকবিভিন্ন ধর্ম ও বিশ্বাসের তালিকাবিদ্যাপতিপরিমাপ যন্ত্রের তালিকাবাংলাদেশের সংবাদপত্রের তালিকাবাংলা একাডেমিমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রগাজওয়াতুল হিন্দঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনরক্তশূন্যতাকুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টসুকুমার রায়বন্ধুত্বসোমালিয়াপদ্মা নদীরংপুরমৌলিক সংখ্যাবক্সারের যুদ্ধইসতিসকার নামাজআরসি কোলামুসাবাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীদের তালিকাসাদ্দাম হুসাইননগরায়নআবু হানিফাডিএনএসম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিসিন্ধু সভ্যতাজয়া আহসানহযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরপ্যারাচৌম্বক পদার্থপাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারঅমর্ত্য সেনবাংলাদেশের একাডেমিক গ্রেডিং পদ্ধতিবিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সশুক্রাণুহৃৎপিণ্ডফিলিস্তিনের ইতিহাসকানাডাআনারসরাজশাহী বিভাগভৌগোলিক আয়তন অনুযায়ী সার্বভৌম রাষ্ট্র ও নির্ভরশীল অঞ্চলসমূহের তালিকাসূরা ইয়াসীনহস্তমৈথুনের ইতিহাসযক্ষ্মাইসলামে বিবাহপাট্টা ও কবুলিয়াতব্রাজিলঊষা (পৌরাণিক চরিত্র)বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমউজবেকিস্তানবাংলাদেশের রাজনৈতিক দলসমূহের তালিকাবিশ্ব ব্যাংকঅলিউল হক রুমিন্যাটোবাংলা সাহিত্যের ইতিহাসঅনাভেদী যৌনক্রিয়ারবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঅন্ধকূপ হত্যাসাহারা মরুভূমিইউক্রেনে রুশ আক্রমণ (২০২২-বর্তমান)কলকাতা নাইট রাইডার্সযোগাসনঅর্শরোগসাধু ভাষাদর্শনবিদ্রোহী (কবিতা)পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমভারতীয় জনতা পার্টিচন্দ্রযান-৩🡆 More