আদি শঙ্কর: ৮ম শতাব্দীর হিন্দু ধর্মগুরু ও সাধক

আদি শঙ্কর (সংস্কৃত: आदिशङ्करः) ছিলেন একজন ভারতীয় দার্শনিক। ভারতীয় দর্শনের অদ্বৈত বেদান্ত নামের শাখাটিকে তিনি সুসংহত রূপ দেন। তার শিক্ষার মূল কথা ছিল আত্মা ও ব্রহ্মের সম্মিলন। তার মতে ব্রহ্ম হলেন নির্গুণ।

আদি শংকরাচার্য
আদি শঙ্কর: জীবনী, মঠসমূহ, দর্শন ও ধর্মীয় ভাবনা
আদি শঙ্কর ও তাঁর শিষ্যগণ, রাজা রবি বর্মা (১৯০৪)
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম
শঙ্কর

788 AD(মতান্তর)
কালাডি, কোন্গু চেরা সাম্রাজ্য
(অধুনা কোচিন, কেরল, ভারত)
মৃত্যু
820 ADকেদারনাথ, গুর্জর-প্রতিহার রাজবংশ
(অধুনা উত্তরাখণ্ড, ভারত)
জাতীয়তাভারতীয়
এর প্রতিষ্ঠাতাদশনামী সম্প্রদায়, অদ্বৈত বেদান্ত, ষন্মত
দর্শনঅদ্বৈত বেদান্ত
ঊর্ধ্বতন পদ
গুরুগোবিন্দ ভাগবতপাদ
সাহিত্যকর্মবিবেকচূড়ামণি
সম্মানঅদ্বৈত বেদান্ত ধর্মমতের ব্যাখ্যা ও প্রসার

আদি শঙ্কর অধুনা কেরল রাজ্যের কালাডি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি সারা ভারত পর্যটন করে অন্যান্য দার্শনিকদের সঙ্গে আলোচনা ও বিতর্কে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজের দার্শনিক মতটি প্রচার করেন। তিনি চারটি মঠ প্রতিষ্ঠা করেন। এই মঠগুলি অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনের ঐতিহাসিক বিকাশ, পুনর্জাগরণ ও প্রসারের জন্য বহুলাংশে দায়ী। শঙ্কর নিজে অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনের প্রধান প্রবক্তা হিসেবে খ্যাত। এছাড়া তিনি হিন্দু সন্ন্যাসীদের দশনামী সম্প্রদায় ও হিন্দুদের পূজার সন্মত নামক পদ্ধতির প্রবর্তক।

সংস্কৃত ভাষায় লেখা আদি শংকরাচার্যের রচনাবলির প্রধান লক্ষ্য ছিল অদ্বৈত তত্ত্বের প্রতিষ্ঠা। সেযুগে হিন্দু দর্শনের মীমাংসা শাখাটি অতিরিক্ত আনুষ্ঠানিকতার উপর জোর দিত এবং সন্ন্যাসের আদর্শকে উপহাস করত। আদি শঙ্কর উপনিষদ্‌ব্রহ্মসূত্র অবলম্বনে সন্ন্যাসের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি উপনিষদ্‌, ব্রহ্মসূত্র ও ভগবদ্গীতার ভাষ্যও রচনা করেন। এই সব বইতে তিনি তার প্রধান প্রতিপক্ষ মীমাংসা শাখার পাশাপাশি হিন্দু দর্শনের সাংখ্য শাখা ও বৌদ্ধ দর্শনের মতও খণ্ডন করেন।

জীবনী

প্রচলিত মত অনুসারে, শঙ্কর বিজয়ম নামক বইগুলিতে শঙ্করের জীবনকথা লেখা আছে। এই বইগুলি আসলে মহাকাব্যের আকারে পদ্যে লেখা ইতিহাস-সম্মত জীবনী ও প্রচলিত কিংবদন্তির মিশ্রণ। এই জাতীয় কাব্যধারায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বই হল মাধব শঙ্কর বিজয়ম (মাধবের লেখা, ১৪শ শতাব্দী), চিদবিলাস শঙ্কর বিজয়ম (চিদবিলাসের লেখা, ১৫শ থেকে ১৭শ শতাব্দী) ও কেরলীয় শঙ্কর বিজয়ম (কেরল অঞ্চলে প্রচলিত, রচনাকাল ১৭শ শতাব্দী)।

জন্ম ও শৈশব

আদি শঙ্কর: জীবনী, মঠসমূহ, দর্শন ও ধর্মীয় ভাবনা 
কালাডি গ্রামে আদি শঙ্করের জন্মস্থান

শঙ্কর এক রক্ষণশীল হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার বাবার নাম ছিল শিবগুরু ও মায়ের নাম আর্যাম্বা। তারা অধুনা কেরল রাজ্যের অন্তর্গত কালাডি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জনশ্রুতি, শঙ্করের বাবা-মা অনেক দিন ধরেই নিঃসন্তান ছিলেন। তাই তারা ত্রিশূরের বৃষভচল শিবমন্দিরে পুত্রকামনা করে পূজা দেন। এরপর আর্দ্রা নক্ষত্রের বিশেষ তিথিতে শঙ্করের জন্ম হয়।

শঙ্কর যখন খুব ছোট, তখন তার বাবা মারা যান। এই জন্য শঙ্করের উপনয়নে দেরি হয়। পরে তার মা উপনয়ন করান। শঙ্কর ছেলেবেলা থেকেই খুব বিদ্বান ছিলেন। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি চারটি বেদ আয়ত্ত্ব করে নেন।

সন্ন্যাস

সাত বছর থেকে শঙ্কর সন্ন্যাস গ্রহণের দিকে ঝুঁকেছিলেন। কিন্তু তার মা তাকে অনুমতি দিতে চাইছিলেন না। শেষে তিনি খুব আশ্চর্যজনকভাবে মায়ের অনুমতি পান। কথিত আছে, একদিন তিনি পূর্ণা নদীতে স্নান করছিলেন। এমন সময় একটি কুমির তার পা কামড়ে ধরে। শঙ্করের মাও সেই সময় পূর্ণার তীরে উপস্থিত ছিলেন। তিনি মা-কে বলেন, মা যদি সন্ন্যাস গ্রহণের অনুমতি দেন, তাহলে কুমিরটি তার পা ছেড়ে দেবে। ছেলের প্রাণ বাঁচাতে মা তাকে সন্ন্যাস গ্রহণের অনুমতি দিলেন। তার পর থেকে কোনোদিন পূর্ণা নদীতে কোনো কুমিরকে দেখা যায়নি।

শঙ্কর কেরল ত্যাগ করে গুরুর খোঁজে উত্তর ভারতের দিকে রওনা হলেন। নর্মদা নদীর তীরে ওঙ্কারেশ্বরে তিনি গৌড়পাদের শিষ্য গোবিন্দ ভগবদপাদের দেখা পান। গোবিন্দ শঙ্করের পরিচয় জানতে চাইলে, শঙ্কর মুখে মুখে একটি শ্লোক রচনা করেন। এই শ্লোকটিই অদ্বৈত বেদান্ত তত্ত্ব প্রকাশ করে। গোবিন্দ তা শুনে খুব খুশি হন এবং শঙ্করকে শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন।

গোবিন্দ শঙ্করকে ব্রহ্মসূত্রের একটি ভাষ্য লিখতে এবং অদ্বৈত মত প্রচার করতে বলেন। শঙ্কর কাশীতে আসেন। সেখানে সনন্দন নামে এক যুবকের সঙ্গে তার দেখা হয়ে যায়। এই যুবকটি দক্ষিণ ভারতের চোল রাজ্যের বাসিন্দা ছিল। সে-ই প্রথম শঙ্করের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। কথিত আছে, কাশীতে বিশ্বনাথ মন্দির দর্শন করতে যাওয়ার সময় এক চণ্ডালের সঙ্গে শঙ্করের দেখা হয়ে যায়। সেই চণ্ডালের সঙ্গে চারটি কুকুর ছিল। শঙ্করের শিষ্যরা চণ্ডালকে পথ ছেড়ে দাঁড়াতে বললে, চণ্ডাল উত্তর দেয়, "আপনি কী চান, আমি আমার আত্মকে সরাই না এই রক্তমাংসের শরীরটাকে সরাই?" শঙ্কর বুঝতে পারেন যে, এই চণ্ডাল স্বয়ং শিব এবং তার চারটি কুকুর আসলে চার বেদ। শঙ্কর তাকে প্রণাম করে পাঁচটি শ্লোকে বন্দনা করেন। এই পাঁচটি শ্লোক "মণীষা পঞ্চকম্‌" নামে পরিচিত।

বদ্রীনাথে বসে তিনি তার বিখ্যাত ভাষ্য (টীকাগ্রন্থ) ও প্রকরণগুলি (দর্শনমূলক প্রবন্ধ) রচনা করেন।

মন্দন মিশ্রের সাথে সাক্ষাৎ

আদি শঙ্করের সবচেয়ে বিখ্যাত বিতর্কসমূহের মধ্যে অন্যতম ছিল আচার-অনুষ্ঠান কঠোরভাবে পালনকারী মন্দন মিশ্রের সঙ্গে তর্ক। মন্দন মিশ্র এ দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করতেন যে গৃহস্থের জীবন একজন সন্ন্যাসীর জীবনের থেকে অনেক শ্রেয়। সে সময়ে ভারতব্যাপী এ দৃষ্টিভঙ্গিকে ব্যাপকভাবে সম্মান করা হতো। এতদনুসারে তার সাথে আদি শঙ্করের বিতর্ক করা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মন্দন মিশ্রের গুরু ছিলেন বিখ্যাত মীমাংসা দার্শনিক কুমারিলা ভট্ট। শঙ্কর কুমারিলা ভট্টের সাথে একটি বিতর্ক চান এবং তার সঙ্গে প্রয়াগে দেখা করেন যেখানে তিনি তার গুরুর বিরুদ্ধে করা পাপের জন্য অণুশোচনা করার জন্য নিজেকে একটি মৃদু জ্বলন্ত চিতাতে সমাহিত করেছিলেন: কুমারিলা ভট্ট তার বৌদ্ধ গুরুর নিকট মিথ্যা ছলে বৌদ্ধ দর্শন শিখেছিলেন একে অসত্য/অমূলক বলে প্রতিপন্ন করার জন্য। বেদ অনুসারে কেউ গুরুর কর্তৃত্বের অধীনে থেকে তার অজ্ঞাতসারে কিছু শিখলে তা পাপ বলে বিবেচিত হয়। সুতরাং কুমারিলা ভট্ট তার পরিবর্তে আদি শঙ্করকে মহিসমতিতে (বর্তমানে বিহারের সহরসা জেলার মহিষী নামে পরিচিত) গিয়ে মন্দন মিশ্রের সাথে দেখা করে তার সঙ্গে বিতর্ক করতে বলেন।

পনের দিনের অধিক বিতর্ক করার পর মন্দন মিশ্র পরাজয় স্বীকার করেন, যেখানে মন্দন মিশ্রের সহধর্মিণী উভয়া ভারতী বিচারক হিসেবে কাজ করেন। উভয়া ভারতী তখন আদি শঙ্করকে 'বিজয়' সম্পূর্ণ করার জন্য তার সঙ্গে বিতর্কে প্রতিদ্বন্দ্ব্বিতা করার জন্য আহ্বান জানান। তিনি আদি শঙ্করকে পুরুষ ও মহিলার মধ্যকার যৌন সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্ন করেন - যে বিষয়ে শঙ্করাচার্যের কোন জ্ঞান ছিল না, কারণ তিনি ছিলেন কুমার এবং সন্ন্যাসী। শ্রী শঙ্করাচার্য ১৫ দিনের "বিরতি" চান। লোককাহিনী অনুসারে তিনি "পর-কায়া প্রবেশের" শিল্প (আত্মা এর নিজের দেহ থেকে বের হয়ে অন্যের দেহে প্রবেশ) ব্যবহার করেন এবং তার নিজের দেহ থেকে বের হন, যেটি(দেহ) তিনি তার শিষ্যদের দেখাশোনা করার জন্য বলেন এবং দৈহিকভাবে একজন রাজার মৃতদেহে প্রবেশ করেন। গল্পে আছে যে রাজার দুই স্ত্রীর নিকট তিনি "ভালবাসা শিল্পের" সকল জ্ঞান অর্জন করেন। রানীরা "পুনরুজ্জীবিত" রাজার তীক্ষ্ন মেধা ও প্রবল ভালবাসায় রোমাঞ্চিত হয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন যে তিনি তাদের পুরনো স্বামী ছিলেন না। গল্পটি আরো বলে যে তারা তাদের রাতদিনের কাজের লোকদের "এক যুবক সাধুর প্রাণহীন দেহ অনুসন্ধান করতে এবং তা শীঘ্র দাহ করতে" পাঠান যাতে তাদের "রাজা" (রাজার দেহে শঙ্করাচার্য) তাদের সাথে বাস করা অব্যাহত রাখেন। চাকররা শঙ্করাচার্যের প্রাণহীন দেহ চিতার উপর রেখে এতে আগুন দিতে যাওয়া মাত্রই শঙ্কর তার নিজের দেহে প্রবেশ করেন এবং পুনরায় জ্ঞান ফিরে পান। পরিশেষে তিনি উভয়া ভারতীর সকল প্রশ্নের উত্তর দেন; এবং উভয়া ভারতী বিতর্কের পূর্ব-সম্মত নিয়মানুসারে মন্দন মিশ্রকে সুরেশ্বরাচার্য সন্ন্যাসী-নাম ধারণ করে সন্ন্যাস গ্রহণ করার অনুমতি দেন।

দার্শনিক ভ্রমণ

আদি শঙ্কর: জীবনী, মঠসমূহ, দর্শন ও ধর্মীয় ভাবনা 
শৃঙ্গেরী সারদা পীঠ এ সারদা মন্দির, শৃঙ্গেরী

আদি শঙ্কর তারপর তার শিষ্যদের সাথে নিয়ে মহারাষ্ট্রশ্রীশৈলম ভ্রমণ করেন। শ্রীশৈলে তিনি শিবের প্রতি ভক্তিমূলক স্তোত্রগীত শিবানন্দলাহিড়ী রচনা করেন। মাধবীয়া শঙ্করাবিজয়াম অনুসারে যখন শঙ্কর কপালিকা দ্বারা বলি হতে যাচ্ছিলেন, পদ্মপদাচার্যের প্রার্থনার উত্তরস্বরুপ ভগবান নরসিংহ শঙ্করকে রক্ষা করেন। ফলস্বরুপ আদি শঙ্কর লক্ষ্মী-নরসিংহ স্তোত্র রচনা করেন।

তারপর তিনি গোকর্ণ, হরি-শঙ্করের মন্দির এবং কোল্লুড়ে মুকাম্বিকা মন্দির ভ্রমণ করেন। কোল্লুড়ে তিনি এক বালককে শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন যে বালকটিকে তার পিতামাতা বাকশক্তিহীন বলে মনে করতেন। শঙ্কর তার নাম দেন হস্তামলকাচার্য ("বৈঁচি-জাতীয় ফল হাতে কেউ", অর্থাৎ যিনি নিজেকে পরিষ্কারভাবে উপলব্ধি করেছেন)। পরবর্তীতে তিনি সারদা পীঠ প্রতিষ্ঠা করতে শৃঙ্গেরী ভ্রমণ করেন এবং তোটকাচার্যকে তার শিষ্য বানান।

এরপর আদি শঙ্কর অদ্বৈত দর্শনের বিরোধিতা করা সকল দর্শন অস্বীকারের দ্বারা এর প্রচারের জন্য দিগ্বিজয় ভ্রমণ শুরু করেন। তিনি দক্ষিণ ভারত হতে কাশ্মীর অভিমুখে ভারতের সর্বত্র এবং নেপাল ভ্রমণ করেন এবং পথিমধ্যে সাধারণ মানুষের মাঝে দর্শন প্রচার করেন এবং হিন্দু, বৌদ্ধ ও অন্যান্য পণ্ডিত ও সন্ন্যাসীদের সাথে দর্শন বিষয়ে তর্ক করেন।

মালয়ালী রাজা সুধনভকে সঙ্গী হিসেবে নিয়ে শঙ্কর তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং বিদর্ভের মধ্য দিয়ে যান। এরপর তিনি কর্ণাটকের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন যেখানে তিনি একদল সশস্ত্র কাপালিকের সামনে পড়েন। রাজা সুদনভ তার সঙ্গীদের নিয়ে প্রতিরোধ করেন এবং কাপালিকাদের পরাজিত করেন। তারা নিরাপদে গোকর্ণে পৌঁছান যেখানে শঙ্কর বিতর্কে শৈব পণ্ডিত নীলাকান্তকে পরাজিত করেন।

সৌরাষ্ট্রের (প্রাচীন কম্বোজ) দিকে অগ্রসর হয়ে এবং গিরনার, সোমনাথ ও প্রভাসার সমাধিমন্দিরসমূহ ভ্রমণ শেষে এবং এ সকল স্থানে বেদান্তের শ্রেষ্ঠত্ব ব্যাখ্যা করে তিনি দ্বারকা পৌঁছান। উজ্জয়িনীর ভেদ-অভেদ দর্শনের প্রস্তাবক ভট্ট ভাস্কর হতগর্ব হলেন। উজ্জয়িনীর সকল পণ্ডিত (অবন্তী নামেও পরিচিত) আদি শঙ্করের দর্শন গ্রহণ করলেন।

এরপর তিনি বাহলিকা নামক এক জায়গায় দার্শনিক বিতর্কে জৈনদের পরাজিত করেন। তারপর তিনি কম্বোজ (উত্তর কাশ্মীরের এলাকা), দারোদা ও মরুভূমিটিতে অবস্থিত অনেক এলাকার কয়েকজন দার্শনিক এবং তপস্বীর উপর তার বিজয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রকান্ড পর্বতচূড়া অতিক্রম করে কাশ্মীরে প্রবেশ করেন। পরবর্তীতে তিনি কামরূপে এক তান্ত্রিক নবগুপ্তের সম্মুখীন হন।

সারদা পীঠে আরোহণ

আদি শঙ্কর: জীবনী, মঠসমূহ, দর্শন ও ধর্মীয় ভাবনা 
ভারতের কেদারনাথে কেদারনাথ মন্দিরের পিছনে তাঁর সমাধি মন্দিরে আদি শঙ্কর

আদি শঙ্কর কাশ্মীরে (বর্তমানে পাকিস্তান-দখলকৃত কাশ্মীর) সারদা পীঠ ভ্রমণ করেন। মাধবীয়া শঙ্করাবিজয়ম অনুসারে এ মন্দিরে চারটি প্রধান দিক থেকে পণ্ডিতদের জন্য চারটি দরজা ছিল। দক্ষিণ দরজা (দক্ষিণ ভারতের প্রতিনিধিত্বকারী) কখনই খোলা হয়নি যা নির্দেশ করত যে দক্ষিণ ভারত থেকে কোনো পণ্ডিত সারদা পীঠে প্রবেশ করেনি। সকল জ্ঞানের শাখা যেমন মীমাংসা, বেদান্ত এবং অন্যান্য হিন্দু দর্শনের শাখাসমূহে সকল পণ্ডিতকে বিতর্কে পরাজিত করে আদি শঙ্কর দক্ষিণ দরজা খোলেন; তিনি সে মন্দিরের সর্বোৎকৃষ্ট জ্ঞানের সিংহাসনে আরোহণ করেন।

তার জীবনের শেষদিকে আদি শঙ্কর হিমালয়ের এলাকা কেদারনাথ-বদ্রীনাথে যান এবং বিদেহ মুক্তি ("মূর্তরুপ থেকে মুক্তি") লাভ করেন। কেদারনাথ মন্দিরের পিছনে আদি শঙ্করের প্রতি উৎসর্গীকৃত সমাধি মন্দির রয়েছে। যাহোক, স্থানটিতে তার শেষ দিনগুলির বিভিন্ন পরম্পরাগত মতবাদ রয়েছে। কেরালীয়া শঙ্করাবিজয়াতে ব্যাখ্যাকৃত এক পরম্পরাগত মতবাদ তার মৃত্যুর স্থান হিসেবে কেরালার থ্রিসুরের বদাক্কুন্নাথান মন্দিরকে নির্দেশ করে। কাঞ্চী কামাকোটি পীঠের অণুসারীরা দাবি করেন যে তিনি সারদা পীঠে আরোহণ করেন এবং কাঞ্চীপুরমে (তামিলনাড়ু) বিদেহ মুক্তি লাভ করেন।

মঠসমূহ

আদি শঙ্কর হিন্দু ধর্মের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করার জন্য চারটি মঠ প্রতিষ্ঠা করেন। এগুলো দক্ষিণে কর্ণাটকের শৃঙ্গেরীতে, পশ্চিমে গুজরাটের দ্বারকায়, পূর্বে ওড়িশার পুরীতে গোবর্ধন মঠ এবং উত্তরে উত্তরখন্ডের জ্যোতির্মঠে (যশীমঠে)। হিন্দু পরম্পরাগত মতবাদ বিবৃত করে যে তিনি এসব মঠের দায়িত্ব দেন তার চারজন শিষ্যকে যথাক্রমে: সুরেশ্বরাচার্য, হস্তামলকাচার্য, পদ্মপাদাচার্য এবং তোটকাচার্য। এ চারটি মঠের প্রত্যেক প্রধান প্রথম শঙ্করাচার্যের নামানুসারে শঙ্করাচার্য ("পণ্ডিত শঙ্কর") উপাধি গ্রহণ করেন।

দর্শন ও ধর্মীয় ভাবনা

আদি শঙ্করাচার্য অদ্বৈতবাদী ধারণায় বিশ্বাসী ছিলেন । তিনি বলেন যে , ব্রহ্মই হল একমাত্র সত‍্য - এই জগৎ ব্রহ্মময় । তার মতে , " সঠিক বিদ‍্যা না থাকার ফলে মানুষ ব্রহ্মকে বুঝতে পারে না '' । আত্মাই হল ব্রহ্ম । এই ব্রহ্ম নির্গুণ এবং আনন্দময় । কিন্তু ব্রহ্ম আবার পারমার্থিক দৃষ্টিতে ব্রহ্ম হলেও ব‍্যবহারিক দৃষ্টিতে ঈশ্বর বলে প্রতিভাত হয় । অবিদ‍্যা ব্রহ্মের শক্তিবিশেষ যার ফলে জীব নিজেকে ব্রহ্মের থেকে ভিন্ন মনে করে । প্রকৃতপক্ষে , জীবাত্মা ও পরমাত্মা অভিন্ন ।

ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব

ভারতীয় সাংস্কৃতিক দিক থেকে অদ্বৈত বেদান্ত মতবাদের প্রভাব বেশি । হিন্দু ধর্মকে তিনিই রক্ষা করেছেন । তিনি অষ্টাদশ মহাশক্তিপীঠ এর মাহাত্ম্য প্রচার করেন।

কর্ম

আদি শঙ্করাচার্য অদ্বৈতবাদী দর্শণ শাস্ত্রের প্রবক্তা । তিনি ভারতের প্রধান চারটি ধাম ভ্রমণ করেন এবং সেখানে মঠ প্রতিষ্ঠা করেন । তিনি প্রায় সকল হিন্দু দেব দেবীদের উদ্দেশ‍্যে স্তোত্র রচনা করেন । উদাহরণ:- অষ্টাদশ মহাশক্তিপীঠস্তোত্র

চলচ্চিত্র

শঙ্করাচার্যকে নিয়ে বহু চলচ্চিত্র তৈরী হয়েছে এবং তা বহু ভাষায় ।

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Tags:

আদি শঙ্কর জীবনীআদি শঙ্কর মঠসমূহআদি শঙ্কর দর্শন ও ধর্মীয় ভাবনাআদি শঙ্কর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাবআদি শঙ্কর কর্মআদি শঙ্কর চলচ্চিত্রআদি শঙ্কর তথ্যসূত্রআদি শঙ্কর বহিঃসংযোগআদি শঙ্করঅদ্বৈত বেদান্তআত্মা (হিন্দু দর্শন)ব্রহ্মসংস্কৃত ভাষা

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

বেল (ফল)বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পআয়াতুল কুরসিদৈনিক প্রথম আলোবেদপরীমনিবাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দললোকনাথ ব্রহ্মচারীজয়া আহসানইমাম বুখারীআহসান মঞ্জিলকালীসুনামগঞ্জ জেলাআশালতা সেনগুপ্ত (প্রমিলা)ইউসুফন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালপলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমভারতের রাষ্ট্রপতিসৈয়দ সায়েদুল হক সুমনতেভাগা আন্দোলনঅক্ষয় তৃতীয়াশীর্ষে নারী (যৌনাসন)বাংলাদেশের সংবাদপত্রের তালিকামার্কিন যুক্তরাষ্ট্রমৈমনসিংহ গীতিকাধর্মজান্নাতুল ফেরদৌস পিয়ানিমনারী খৎনাবাংলাদেশের ব্যাংকসমূহের তালিকাআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপশুক্রাণুপ্লাস্টিক দূষণবাগদাদ অবরোধ (১২৫৮)দুরুদবাংলাদেশের ইতিহাসশেখ মুজিবুর রহমানবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সেক্টরসমূহফরিদপুর জেলাসূরা ফালাকমিমি চক্রবর্তীশাকিব খান অভিনীত চলচ্চিত্রের তালিকাআকিজ গ্রুপমমতা বন্দ্যোপাধ্যায়আল্লাহর ৯৯টি নামখুলনাব্যাকটেরিয়াপশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীদের তালিকাআসিয়ানবাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকাদোয়া কুনুতরাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বিরাট কোহলিনিজামিয়ারাষ্ট্রবিজ্ঞানভরিমাইটোসিসবাংলাদেশ নৌবাহিনীভাইরাসসম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিবাণাসুরদক্ষিণবঙ্গগুগলসরকারি বাঙলা কলেজফারাক্কা বাঁধভাষা আন্দোলন দিবসঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরজাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদঅর্শরোগপেশাবাংলাদেশের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাস্মার্ট বাংলাদেশবিজ্ঞানশিব নারায়ণ দাসকানাডাশিবমানব শিশ্নের আকারণত্ব বিধান ও ষত্ব বিধানগায়ত্রী মন্ত্র🡆 More