বিমানবন্দর: অবতরণ ও উড্ডয়ন যান

বিমানবন্দর অবতরণ ও উড্ডয়ন যান - বিমান, হেলিকপ্টার এবং অন্যান্য আকাশ যানের ক্ষেত্রস্থল হিসেবে পরিচিত। এটি বিমানবহর সংরক্ষণ, মেরামতের স্থান হিসেবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। শুধুমাত্র একটি অতি প্রয়োজনীয় বিষয় হিসেবে বিমানের অবতরণ ও অবস্থানের জন্য রানওয়ে কিংবা বৃহৎ আকৃতির জলাশয় নির্মাণের মাধ্যমেই বিমানবন্দর গড়ে ওঠা সম্ভবপর। এছাড়াও সহায়ক স্থাপনা হিসেবে রয়েছে প্রয়োজনীয় দালান-কোঠা, কন্ট্রোল টাওয়ার এবং টার্মিনাল ভবন।

বিমানবন্দর: উৎপত্তি, অবকাঠামো, অবতরণ ক্ষেত্র
জাপানের নাগোয়া বিমানবন্দর

বৃহৎ আকারের বিমানবন্দরগুলোয় ফিক্সড বেস অপারেটর সার্ভিস, জলের উপর থেকে উঠা-নামার বিমান বা সীপ্লেন ও মেরামত কারখানা এবং র‍াম্প, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল, বিমানযাত্রীদের সুবিধার্থে রেস্তোরাঁ ও লাউঞ্জ বা বিশ্রামাগার, জরুরী সেবা প্রভৃতি সুবিধাদি থাকে।

প্রায় প্রত্যেক দেশেই আকাশসীমা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে বিশেষ একটি বাহিনী যা বিমানবাহিনী নামে পরিচিত। সামরিক বাহিনীর জন্য নির্ধারিত বিমানবন্দরটি এয়ারবেজ বা বিমানঘাঁটি কিংবা এয়ার স্টেশন নামে পরিচিত।

বিমানবন্দর: উৎপত্তি, অবকাঠামো, অবতরণ ক্ষেত্র
২০০৮ সালে বৈশ্বিক বিমানবন্দর স্থাপনার দৃশ্য

উৎপত্তি

বিমানবন্দর শব্দের পরিভাষা হিসেবে এয়ারোড্রোম, বিমানঘাঁটি এবং এয়ারস্ট্রিপকেও নির্দেশ করা হয়। সাধারণ অর্থে এয়ারপোর্ট এবং এয়ারোড্রোম একে-অপরের সমার্থক। কিন্তু বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের বিষয়ে এয়ারপোর্ট যে মর্যাদা পায়, তা এয়ারোড্রোমের ক্ষেত্রে অনুপস্থিত।

আইন মোতাবেক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ক্ষেত্রে বৈধ পন্থায়, আন্তর্জাতিক সনদ গ্রহণ এবং নিবন্ধিত হতে হয়। কিন্তু এ্যারোড্রোমের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র জাতীয় বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সভায় নির্দিষ্ট শর্তাবলীর আলোকে বা নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তক্রমে অভ্যন্তরীণভাবে বিমান চলাচলের অনুমতি প্রদান করা হয়ে থাকে।

বলা হয়ে থাকে যে - সকল এয়ারপোর্ট বা বিমানবন্দরই এয়ারোড্রোম বা বিমানঘাঁটি; কিন্তু সকল এয়ারোড্রোম বা বিমানঘাঁটিই এয়ারপোর্ট বা বিমানবন্দর নয়। উভয়ের মধ্যে কর্তৃত্বের বিষয়ে তেমন পার্থক্য বিরাজমান না থাকলেও বিমানঘাঁটি মূলত বাণিজ্যধর্মী কর্মকাণ্ডেই ব্যবহৃত হয়।

অবকাঠামো

বিমানবন্দর: উৎপত্তি, অবকাঠামো, অবতরণ ক্ষেত্র 
আধুনিক বিমানবন্দরের অবকাঠামোগত নমুনা চিত্র

বিমানবন্দরের প্রাথমিক অবকাঠামো হিসেবে রানওয়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষুদ্রতম অথবা স্বল্পোন্নত বিমানবন্দরের যেগুলো বিরাট গুরুত্ব বহন করে সেগুলো প্রায়শঃই ১০০০ মিটার (৩,৩০০ ফুট) বা এর কম হয়ে থাকে। কিন্তু, বৃহত্তর বিমানবন্দরগুলোয় বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে রানওয়ের দৈর্ঘ্য সচরাচর ২০০০ মিটারের (৬,৬০০ ফুট) বা তার বেশি হয়ে থাকে।

অনেক ক্ষুদ্রাকারের বিমানবন্দরগুলোর রানওয়ে আলকাতরার মত কালো পদার্থবিশেষ দিয়ে তৈরী অ্যাস্ফ্যাল্ট অথবা কংক্রিটের পাশাপাশি ঘাস অথবা ময়লা-আবর্জনা, নুড়ি-পাথর ইত্যাদি লক্ষ্য করা যায়।

বিমান অবতরণের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিমানবন্দর নির্মাণে সর্বনিম্ন শর্ত হিসেবে শুষ্ক ও শক্ত ভূমিতে রানওয়ে নির্মাণ করা হয়। মূলতঃ ভারী বিমান অবতরণের জন্যই বৃহৎ আকৃতির রানওয়ে নির্মাণের প্রয়োজন পড়ে।

২০০৯ সালের তথ্য মোতাবেক সিআইএ দাবী করেছে যে, বিশ্বব্যাপী প্রায় চুয়াল্লিশ হাজার বিমানবন্দর কিংবা বিমানঘাঁটি আকাশ থেকে শনাক্ত করা গেছে। তন্মধ্যে একমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই রয়েছে ১৫,০৯৫টি বিমানবন্দর। সংখ্যার দিক থেকে তা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

অবতরণ ক্ষেত্র

কতকগুলো পরস্পর নির্ভরশীল উপাদানের উপর বিমানবন্দরের স্থান নির্বাচন নির্ভর করে। সমতল ভূমি, আশেপাশের বিমান উঠা-নামায় কোনরূপ প্রতিবন্ধকতা না থাকা এবং জনবসতি অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ প্রভৃতি নিয়ামকে জলবায়ুর সরাসরি সম্পর্ক নেই। তবে, সমতল ভূমি এবং প্রতিবন্ধকার সাথে বাতাস ও দৃষ্টিগোচরতার সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। প্রশস্ত উপত্যকায় বিকিরণজনিত কুয়াশা সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা খুব বেশি। বিমানবন্দর যদি শিল্পকেন্দ্রের অনুবাত অঞ্চলে অবস্থিত থাকে, তাহলে ধোঁয়া এবং অন্যান্য নোংরা পদার্থ দৃষ্টিগোচরতা কমিয়ে দেয়। জলবায়ু সংক্রান্ত জ্ঞানের আলোকে সর্বনিম্ন আবহাওয়ার প্রতিবন্ধকতা স্থান নির্বাচন করা সম্ভব। আবহাওয়ার প্রতিবন্ধকতা বা দুর্যোগ বলতে অতি অল্প দৃষ্টিগোচরতা, নিম্নস্তরের মেঘ, বায়ুর উত্তাল প্রবাহ, বায়ুপ্রবাহের দিক পরিবর্তন এবং বজ্রঝড়কে বোঝায়। স্থানীয় বায়ু প্রবাহের দিকের প্রাধান্যের উপর বিমান অবতরণ ক্ষেত্রের দিক নির্ভর করে। বায়ুপ্রবাহের গড় গতিবেগ এবং বায়ুপ্রবাহের দিককে সেজন্য গুরুত্বের সাথে গণ্য করা হয়। কোন কোন দিক থেকে প্রবাহিত বায়ুর বেগ এত হাল্কা হতে পারে যে বিমান অবতরণ ও উড্ডয়নের এর কোন প্রভাবই পরিলক্ষিত হয় না।

উড্ডয়নের উচ্চতামাপন

যদি কোন বিমান সমুদ্র সমতলে অবস্থিত বিমানবন্দরে দণ্ডায়মান থাকে তবে এর উচ্চতা হবে শূন্য। আদর্শ বায়ুমণ্ডলের বায়ুচাপ অপেক্ষা যদি বিমানবন্দরের বায়ুচাপ বেশি হয় (উদাহরণস্বরূপঃ ১০৩০ মিলিবার), তাহলে উচ্চতামাপন যন্ত্রে দেখা যাবে যে - বিমানটি সমুদ্র উপকূল থেকে ১৪০ মিটার (৪৫০ ফুট) নিচে অবস্থান করছে। আবার যদি বায়ুচাপ ১০০০ মিলিবার হয় তবে বিমানটি ১১০ মিটার (৩৬০ ফুট) উপরে অবস্থান করছে বলে নির্দেশ করবে। অতএব, এরূপ মারাত্মক বিভ্রান্তিপূর্ণ তথ্যকে অবশ্যই সংশোধন করতে হবে। উচ্চতামাপন যন্ত্র বা আল্টিমিটারের মাধ্যমে উচ্চতা সংশোধনের ব্যবস্থা রয়েছে। উপর্যুক্ত উদাহরণে উচ্চচাপের ক্ষেত্রে সংশোধন করতে হবে +৪৫০ ফুট এবং নিম্নচাপের ক্ষেত্রে -৩৬০ ফুট। উচ্চতামাপনে পার্থক্য দেখা দেয় যাত্রা স্থানে এবং গন্তব্য স্থানে। যদি সমুদ্র সমতলে অবস্থিত কোন বিমানবন্দরে বায়ুচাপ ১০৩০ মিলিবার হয় এবং সেখান থেকে বিমান যাত্রা করে ১০০০ মিলিবার বায়ুচাপযুক্ত সমুদ্র সমতলে অবস্থিত অন্য কোন বিমানবন্দরে অবতরণ করে তখনও উচ্চতামাপন যন্ত্রে ৮৫০ ফুট উচ্চতা নির্দেশ করবে যদি পথে উচ্চতা সংশোধন করা না হয়ে থাকে।

পৃথিবীর প্রায় সবদেশেই বিমান চালনায় সুবিধার জন্য আবহাওয়াবিষয়ক তথ্য বেতারের মাধ্যমে সম্প্রচারের ব্যবস্থা রয়েছে। এর সাহায্যে একজন বৈমানিক তার পরিচালনায় বিমানের উচ্চতামাপন যন্ত্রে প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে পারেন।

বিমানের উচ্চতামাপন যন্ত্রের সাহায্যে কেবল বিমানবন্দরের উচ্চতা নির্ণয় করা হয় - সমুদ্র সমতলে শূন্য এবং যদি বিমানবন্দর সমুদ্র সমতলের উপরে অবস্থান করে তবে ঐ উচ্চতা নির্দেশ করবে। পথিমধ্যে বিমানের উচ্চতা নির্ণয় করা সম্ভব নয়। বায়ুতাপের সাথে বায়ুচাপের পরিবর্তন হয় বলে বায়ুর ঘনত্বেও পরিবর্তন দেখা দেয়। ফলে ভূ-পৃষ্ঠের ঊর্ধ্বে উচ্চতামাপন যন্ত্রের সাহায্যে প্রকৃত উচ্চতা নির্ণয় করা যায় না।

দীর্ঘতম রানওয়ে

সাধারণ্যের ব্যবহারের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় রানওয়ের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন। দেশটির তিব্বতে অবস্থিত ক্যামডো বাংদে এয়ারপোর্টটি দৈর্ঘ্যে ৫,৫০০ মি (১৮,০৪৫ ফু)। অন্যদিকে রাশিয়া'র ওলিয়ানোভস্ক ভোস্টোচনি এয়ারপোর্ট বিশ্বের সবচেয়ে প্রশস্ত রানওয়ের মর্যাদা পেয়েছে। ১০৫ মি (৩৪৪ ফু) প্রস্থে এর স্থান প্রথম।

পরিচালনা

বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই বিমানবন্দর পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে স্ব-স্ব দেশের স্থানীয়, আঞ্চলিক কিংবা জাতীয় সংস্থা। তারা বেসরকারী সংস্থাগুলোর কাছে বিমানবন্দর পরিচালনার লক্ষ্যে লীজ প্রদান করে। পরবর্তীতে বেসরকারী সংস্থাগুলোই বিমানবন্দরের দেখ-ভাল করে। যেমনঃ বিএএ লিমিটেড যুক্তরাজ্যের ৭টি বাণিজ্যিক বিমানবন্দর পরিচালনা করে থাকে। পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের বাইরেও অনেক বিমানবন্দর পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে প্রতিষ্ঠানটি। জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমানবন্দর পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে প্রায় বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ফ্রাপোর্ট

বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় ব্যাগেজ পরীক্ষা একটি অত্যাবশ্যকীয় প্রক্রিয়া। পাশাপাশি প্রত্যেক ব্যক্তিকে ধাতব বস্তুর মাধ্যমে পরীক্ষান্তে বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে কিংবা বাইরে যাবার অনুমতি দেয়া হয়। এছাড়াও, দেশের নিয়ম-কানুনসহ নির্দিষ্ট সীমারেখার বাইরে মালামাল পরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয় শুল্কাদি প্রদান করতে হয়। নাইন-ইলাভেনে বিমান আক্রমণের প্রেক্ষিতে বৈশ্বিক বিমানবন্দরগুলোয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রায় সকল বিমানবন্দরেই আলোকোজ্জ্বল পরিবেশ সৃষ্টি করে থাকে। এরফলে রাত, বৃষ্টি কিংবা কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশেও বিমানগুলো নিরাপদের ও সহজেই রানওয়ে ব্যবহার করতে পারে। রানওয়েতে সবুজ বাতির মাধ্যমে অবতরণের জন্য নির্দেশনামা প্রদান করে। লাল বাতি রানওয়ের শেষপ্রান্ত নির্দেশ করে। রানওয়ের উভয়প্রান্তের কিনারা নির্দেশনার লক্ষ্যে সাদা বাতির প্রয়োগ করতে দেখা যায়।

বাংলাদেশ

বিমানবন্দর: উৎপত্তি, অবকাঠামো, অবতরণ ক্ষেত্র 
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকা, বাংলাদেশের ভিআইপি টার্মিনালের বহিঃভাগ

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এবং দেশের বাইরে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে বাংলাদেশে আকাশপথে যাতায়াতের ব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকার কুর্মিটোলায় অবস্থিত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বাংলাদেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। চট্টগ্রাম এবং সিলেটে আরো দু'টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা হলো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ নং ১২৬ অনুসারে ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স গঠিত হয়। এদিন বাংলাদেশ বিমানবাহিনী থেকে একটি ডিসি-৩ বিমান নিয়ে জাতির বাহন হিসেবে বাংলাদেশ বিমান যাত্রা শুরু করে। বিশ্বের ১৮টি শহর ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সংস্থাটি তাদের সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে।

ভারত

ভারতের যৌথ মূলধনী প্রতিষ্ঠান হিসেবে জিএমআর গ্রুপ ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিচালনা করে। ব্যাঙ্গালুরু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং ছত্রপতি শিবাজী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দু'টি জিভিকে গ্রুপ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। বাদ-বাকী সকল বিমানবন্দরই ভারতীয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।

সামরিক বিমানঘাঁটি

দেশ প্রতিরক্ষা কার্যক্রমে বিমানবন্দর ব্যবহৃত হলে তা এয়ারবেজ বা সামরিক বিমানঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত হয়। এয়ারবেজকে কখনো কখনো এয়ার স্টেশন বা এয়ারফিল্ড হিসেবে উল্লেখ করা হয়। মূলতঃ সামরিক বাহিনীর আকাশযানকে সংরক্ষণ ও সহায়তা কার্যক্রমই সামরিক বিমানঘাঁটিতে হয়ে থাকে।

কিছু বিমানঘাঁটির অবস্থান সাধারণ বিমানবন্দরের সাথেই তৈরী করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে এটি একই এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল, রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে এবং জরুরী সেবাগুলো একত্রে গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে পৃথক টার্মিনাল, পার্কিং এবং হ্যাঙ্গার পৃথকভাবে ব্যবহার করে। নরওয়ের বার্দুফোস বিমানবন্দর এবং বার্দুফোস এয়ার স্টেশন তেমনি একটি উদাহরণ।

যুদ্ধচলাকালীন সময়ে আধুনিক যুদ্ধ জাহাজের অন্যতম অংশ হচ্ছে বিমানবাহী যুদ্ধ জাহাজ। মূলতঃ যুদ্ধজাহাজগুলো ভ্রাম্যমাণ বিমানবহর নিয়ে সাগর-মহাসাগরে টহল দিয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে বিমানবাহী যুদ্ধ জাহাজগুলো নৌশক্তি প্রদর্শনের অংশ হিসেবে উড্ডয়নের জন্য স্থানীয় বিমানঘাঁটির উপর নির্ভরশীল থাকে না। ১ম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে বিমানবাহী যুদ্ধ জাহাজগুলোর প্রভূতঃ উন্নয়ন ঘটে। সাবেকী ধরনের যুদ্ধজাহাজের পরিবর্তে ২য় বিশ্বযুদ্ধচলাকালীন সময়ে আধুনিক যুদ্ধজাহাজগুলোয় বিমানবহরকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল।

নামকরণ

আইএটিএ এবং আইসিএর এয়ারপোর্ট কোড অনুসরণের মাধ্যমে দেশসমূহের বিমানবন্দরগুলোর নামকরণ করা হয়। সচরাচর অধিকাংশ বিমানবন্দরের নামকরণ করা হয় স্থান অনুসারে। অনেক বিমানবন্দরের নামকরণ সাধারণত বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিবিদ, আধ্যাত্মিক সাধকদের সম্মানে করা হয়। যেমনঃ প্যারিস-চার্লস দ্য গল এয়ারপোর্ট। এছাড়াও, বিমানের চালনার ইতিহাসে বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের নামেও নামকরণ করা হয়েছে। যেমনঃ উইল রজার্স ওয়ার্ল্ড এয়ারপোর্ট।

কিছু বিমানবন্দরের নামের পূর্বে ইন্টারন্যাশনাল বা আন্তর্জাতিক শব্দ প্রয়োগ করা হয়। এতে বোঝা যায় যে বিমানবন্দরটিতে আন্তর্জাতিক বিমান পরিচালনায় সক্ষমতা রয়েছে বা অর্জন করেছে।

আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

বিমানবন্দরে যদি আন্তর্জাতিক বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের সুযোগ-সবিধাদি থাকে তাহলে তা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বীকৃতি পেয়ে থাকে। উন্নত ধরনের কাস্টম এবং ইমিগ্রেশন সুবিধাদি এখানে বর্তমান। এ ধরনের বিমানবন্দরগুলো সাধারণতঃ বৃহৎ আকৃতির হয়ে থাকে। এটি বড় ধরনের রানওয়ে এবং বৃহৎ আকারের বিমান উড্ডয়ন-অবতরণ ক্ষেত্র হিসেবে আন্তর্জাতিক কিংবা আন্তঃমহাদেশীয় পর্যায়ে বিমান পরিবহনের কেন্দ্রস্থল।

দেশ অবস্থান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আইএটিএ কোড আন্তর্জাতিক যাত্রী অভ্যন্তরীণ যাত্রী
বিমানবন্দর: উৎপত্তি, অবকাঠামো, অবতরণ ক্ষেত্র  চীন বেইজিং বেইজিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর PEK ৯৫,৭৮৬,২৯৬
বিমানবন্দর: উৎপত্তি, অবকাঠামো, অবতরণ ক্ষেত্র  ভারত দিল্লি ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর DEL ৬৫,৬৯১,৬৬২
বিমানবন্দর: উৎপত্তি, অবকাঠামো, অবতরণ ক্ষেত্র  ভারত মুম্বাই ছত্রপতি শিবাজী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর BOM ৪৫,১৫৪,৩৪৫
বিমানবন্দর: উৎপত্তি, অবকাঠামো, অবতরণ ক্ষেত্র  ভারত কলকাতা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
বিমানবন্দর: উৎপত্তি, অবকাঠামো, অবতরণ ক্ষেত্র  ভারত কোচিন কোচি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর COK
বিমানবন্দর: উৎপত্তি, অবকাঠামো, অবতরণ ক্ষেত্র  বাংলাদেশ ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর DAC ১১,৪৬২,৫৮০
বিমানবন্দর: উৎপত্তি, অবকাঠামো, অবতরণ ক্ষেত্র  বাংলাদেশ চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর CGP
বিমানবন্দর: উৎপত্তি, অবকাঠামো, অবতরণ ক্ষেত্র  বাংলাদেশ সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ZYL

কুয়াশায় প্রতিবন্ধকতা

বিমান উঠা-নামায় কুয়াশা চরম প্রতিবন্ধিকতার পরিবেশ সৃষ্টি করে। দেখা গেছে যে, স্বাভাবিকভাবে কুয়াশার জলকণা বাষ্পীভবনের ফলে উড়ে যায়। এ থেকে বোঝা যায় যে, কৃত্রিম উপায়ে উত্তাপ সঞ্চার করতে পারলে কুয়াশা দ্রুত বাষ্পীভূত হতে পারে। বিস্তৃত অঞ্চলে কৃত্রিম উপায়ে উত্তাপ সঞ্চার করা অর্থনৈতিক কারণে মোটেই সম্ভব নয়। কিন্তু চুল্লীর সাহায্যে বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকে কুয়াশা তাড়ানো সম্ভবপর।

২য় মহাযুদ্ধের সময়কালে ব্রিটিশেরা রানওয়ের উভয় পার্শ্বে সচ্ছিদ্র পাইপের মধ্য দিয়ে জ্বালানী তেল পুড়িয়ে কুয়াশা তাড়ানোর ব্যবস্থা করেছিল। এ ব্যবস্থার নাম ছিল এফআইডিও (ফগ ইনভেস্টিগেশন এন্ড ডিসপোজাল অপারেশন)। এজন্য প্রচুর উত্তাপ সঞ্চারের প্রয়োজন হয়। হিসেব করে দেখা গেছে যে, মাঝারি আয়তনের বিমান অবতরণ ক্ষেত্র থেকে কুয়াশা বিতাড়নের জন্য গড়ে ১ লক্ষ গ্যালন জ্বালানী তেলের প্রয়োজন পড়ে। নিঃসন্দেহে এ প্রক্রিয়া অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

কুয়াশার জন্য জলাকর্ষী কণা ছিটানোর মাধ্যমে কুয়াশা কণাগুলোর মধ্যে মিলন ঘটিয়ে বর্ষণ ঘটানো যায়। এতে বায়ু কুয়াশামুক্ত হয়ে আসে। বর্ষণ ঘটানোর জন্য ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম ক্লোরাইড, অ্যামোনিয়া ইত্যাদিকে জলাকর্ষী কণা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এরূপভাবে কুয়াশা তাড়ানো অনেক ব্যয়বহুল এবং ব্যবহৃত জলাকর্ষী কণা উদ্ভিজ্জ ও বিমান অবতরণ ক্ষেত্রের যন্ত্রপাতির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। জলবিন্দু ছিটিয়েও আংশিকভাবে কুয়াশাকে তাড়ানো সম্ভব। জলবিন্দু নিচের দিকে নামার সময় কুয়াশা কণাকে সঙ্গে নিয়ে অবতরণ করার ফলে কুয়াশা ক্রমে হাল্কা হয়ে আসে। সকল প্রকার কুয়াশার মধ্যে বিকিরণজাত কুয়াশাকে সাফল্যজনকভাবে বিতাড়ন করা দুরূহ ব্যাপার। কোনক্রমে কুয়াশার মধ্যে ফাঁকা জায়গা তৈরী করা সম্ভব হলেও ঘণ্টায় ১০ থেকে ২০ বা তদূর্ধ্ব গতিসম্পন্ন বায়ু সহজেই ঐ ফাঁকা স্থানটিকে সরিয়ে নিয়ে যায়। এছাড়াও বায়ুর উত্তাল প্রবাহে ঐ ফাঁকা স্থানটি ক্রমে সঙ্কুচিত হয়ে আসে। বিকিরণজাত কুয়াশায় বিমান উঠা-নামা করার মত ফাঁকা স্থান তৈরী করা সম্ভব।

যথেষ্টসংখ্যক বিমান উড্ডয়ন-অবতরণ করলে কুয়াশা বিতাড়নের ব্যয় পুষিয়ে নেয়া যায়। কুয়াশা বিতাড়নের সম্পূর্ণ সাফল্য অর্জিত না হলেও কুয়াশাপ্রধান অঞ্চলে অবস্থিত ব্যস্ত বিমানবন্দরে কুয়াশা বিতাড়নের কাজ সকল করা হয়ে থাকে।

পরিবেশে প্রভাব

বিমানবন্দর: উৎপত্তি, অবকাঠামো, অবতরণ ক্ষেত্র 
একটি বোয়িং ৭৪৭-৪০০ লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণের পূর্বে লোকালয়ের খুব কাছ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে

বিমানের প্রচণ্ড আওয়াজের ফলে বিমানবন্দর এলাকার আশেপাশে ব্যাপক শব্দ দূষণগত পরিবেশের সৃষ্টি করে। রাতে এবং ভোরে যদি বিমান চালনা করা হয় তখন ব্যক্তির ঘুমের চরম ব্যাঘাত ঘটে। শুধুমাত্র অবতরণ কিংবা উড্ডয়নের জন্যই বিমানের আওয়াজ সৃষ্টি হয় না; পাশাপাশি বিমান মেরামত ও পর্যবেক্ষণের জন্য এরূপ হয়ে থাকে। এরফলে ব্যক্তির শব্দদূষণগত শারীরিক ও মানসিক বিকাশেও ব্যাপক প্রভাব সৃষ্টি করে থাকে।

বিমানবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য বিরাট জায়গার প্রয়োজন হয়। এতে স্থানীয় আবহাওয়া ও জীববৈচিত্র্যে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। কিছু বিমানবন্দরের প্রশাসন বার্ষিক পরিবেশ প্রতিবেদন প্রস্তুত ও প্রকাশ করে থাকে। তাতে পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা এবং বিমানবন্দর পরিচালনার জন্য পরিবেশ রক্ষার সহায়ক বিষয়াবলী তুলে ধরে।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

গ্রন্থপঞ্জি

  • Bluffield, Robert. 2009. Imperial Airways - The Birth of the British Airline Industry 1914-1940. Ian Allan আইএসবিএন ৯৭৮-১-৯০৬৫৩৭-০৭-৪
  • Salter, Mark. 2008. Politics at the Airport. University of Minnesota Press. This book brings together leading scholars to examine how airports both shape and are shaped by current political, social, and economic conditions.

বহিঃসংযোগ

Tags:

বিমানবন্দর উৎপত্তিবিমানবন্দর অবকাঠামোবিমানবন্দর অবতরণ ক্ষেত্রবিমানবন্দর উড্ডয়নের উচ্চতামাপনবিমানবন্দর দীর্ঘতম রানওয়েবিমানবন্দর পরিচালনাবিমানবন্দর সামরিক বিমানঘাঁটিবিমানবন্দর নামকরণবিমানবন্দর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কুয়াশায় প্রতিবন্ধকতাবিমানবন্দর পরিবেশে প্রভাববিমানবন্দর আরও দেখুনবিমানবন্দর তথ্যসূত্রবিমানবন্দর গ্রন্থপঞ্জিবিমানবন্দর বহিঃসংযোগবিমানবন্দরবিমানরানওয়েহেলিকপ্টার

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

মাটিচিয়া বীজআমর ইবনে হিশামচিকিৎসকসায়মা ওয়াজেদ পুতুলমমতা বন্দ্যোপাধ্যায়বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের তালিকাবাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রমতৃণমূল কংগ্রেসপদ (ব্যাকরণ)বুর্জ খলিফাপাল সাম্রাজ্যহামপ্যারাডক্সিক্যাল সাজিদমিজানুর রহমান আজহারীসূরা ফালাকরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্মবাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডহরিচাঁদ ঠাকুরকোষ বিভাজনইসলামে বিবাহনারীপ্রীতি জিনতাসিলেট সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ডসমূহইউটিউবনিউমোনিয়াবাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিরূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্ররোডেশিয়াপশ্চিমবঙ্গে ভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়পশ্চিমবঙ্গের জেলাআলিকোপা আমেরিকাইসলামের ইতিহাসবাংলার শাসকগণআসমানী কিতাবমারমাখালেদা জিয়াইসরায়েল–হামাস যুদ্ধব্যঞ্জনবর্ণক্যাসিনোবিশ্ব থিয়েটার দিবসরাগ (সংগীত)লোটে শেরিংবিজ্ঞানবাঙালি সংস্কৃতিমালয়েশিয়ারঙের তালিকানিউটনের গতিসূত্রসমূহসৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতাসালোকসংশ্লেষণলামিনে ইয়ামালদৈনিক ইত্তেফাকমোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনছিয়াত্তরের মন্বন্তরহাদিসমাইটোকন্ড্রিয়ামসজিদে হারামখালিদ বিন ওয়ালিদঅপু বিশ্বাসস্বামী স্মরণানন্দবাংলাদেশের উপজেলাকাফিরগোলাপ০ (সংখ্যা)খেজুরলগইনহায়দ্রাবাদ রাজ্যআবু বকরযক্ষ্মাজনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় (বাংলাদেশ)বাংলাদেশের বিভাগসমূহবিভিন্ন দেশের মুদ্রাভিটামিনবাংলাদেশ রেলওয়েপেশা🡆 More