সংখ্যা ০: সংখ্যা এবং অঙ্ক

০ (উচ্চারণ:- শূন্য) হলো একাধারে একটি সংখ্যা এবং অঙ্ক। এটি এককভাবে মানের অস্তিত্বহীনতা ও অন্যান্য সংখ্যার পিছনে বসে তাদের যুত পরিচয় প্রদান করে। এছাড়াও দশমিকের ডানে বসে এটি বিভিন্ন সংখ্যার দশমাংশ প্রকাশ করে। অঙ্ক হিসেবে ০ (শূন্য) একটি নিরপেক্ষ অঙ্ক এবং সংখ্যার স্থানধারক হিসেবে কাজ করে। শূন্য(০) একটি স্বাভাবিক পূর্ণ সংখ্যা। শূন্য ধনাত্মক, ঋণাত্মক কোনটিই নয়। '০' (শূন্য) কে সাহায্যকারী অঙ্ক বলা হয়। নিজের কোন মান নেই। সর্বপ্রথম ভারতীয় উপমহাদেশের আর্যভট্ট (৪৭৫-৫৫০ খ্রিঃ) '০' (শূন্য)-এর প্রথম ধারণা দেন বলে প্রচলিত থাকলেও ব্যাবীলনীয় সভ্যতা,মায়ান ও বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতায় এর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। ব্রহ্মগুপ্ত (৫৯৮-৬৬৫ খ্রিঃ) শূন্য আবিষ্কার না করলেও উল্লেখযোগ্য ম্যাথম্যাটিকাল ইউজ দেখান এবং এই শূন্যকে ব্যাপকভাবে আলোচনার শীর্ষে নিয়ে আসেন। সর্বোপরি, ব্রহ্ম্যগুপ্ত শূন্যের আবিষ্কারক নন,বরং তিনি এর গাণিতিক ব্যবহারে অবদান রাখেন ও শূণ্যের গুরুত্ব স্পষ্ট করতে সহায়ক হন।

−১
১০ ২০ ৩০ ৪০ ৫০ ৬০ ৭০ ৮০ ৯০
অঙ্কবাচকশূন্য, নেই
পূরণবাচক০তম
(শূন্যতম)
ভাজকসব সংখ্যা
বাইনারি
টাইনারি
কোয়াটারনারি
কুইনারি
সেনারি
অকট্যাল
ডুওডেসিমেল১২
হেক্সাডেসিমেল১৬
ভাইজেসিমেল২০
বেজ ৩৬৩৬
আরবি অঙ্ক٠,0
ইংরেজি0
দেবনাগরী
চীনা অঙ্ক零, 〇দ
জাপানি অঙ্ক零, 〇
খেমের
থাই অঙ্ক
কামের অঙ্ক
সংখ্যা ০: উৎপত্তি, ইতিহাস, তথ্যসূত্র
সবুজ পটভূমিতে সংখ্যা 20000

উৎপত্তি

ইংরেজিতে জিরো (ইং: zero) শব্দটি এসেছে ভেনিশিয় শব্দ জিরো (zero) থেকে যা আবার ইতালিয় জিফাইরো (zefiro জেফিরো) থেকে পরিবর্তিত হয়ে এসেছিল। ইতালীয় জিফাইরো শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ "সাফাইর" বা "সাফাইরা" (صفر) থেকে যার অর্থ "সেখানে কিছু ছিল না"।এই শব্দটি প্রথমে ভারতীয় সংস্কৃত শ্যুন্যোয়া শব্দ হতে অনুদিত হয়েছে।সংস্কৃত শব্দ শ্যুন্যেয়া (শ্যূন্য) যার অর্থ খালি বা ফাঁকা। ইংরেজি শব্দ জিরোর প্রথম ব্যবহার পাওয়া যায় ১৫৯৮ খ্রিষ্টাব্দে। শূন্য আবিষ্কার বহূকাল পূর্বে হলেও,গণিতে ‘শূন্য’ আবিষ্কার ভারতবর্ষে হয়েছিলো।এবং ভারতবর্ষের সংস্কৃত শব্দ শ্যুন্যেয়া (শ্যূন্য)’ আরবের ‘সিফর’ হয়ে ধীরে ধীরে পশ্চিমে ‘জিরো’তে পরিণত হলো।

ইতিহাস

ভারত

ভারতীয় গণিতের ইতিহাস অতি প্রাচীন। গণনা থেকে যে গণিতের উৎপত্তি সেই গণনা কার্য কে কবে শুরু করেছিলেন তার ইতিহাস আমাদের জানা নেই। এমনকী জানা নেই, শূন্য আবিষ্কারের ক্ষেত্রে মূল অবদানটি কার। তবে এটা যে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মৌলিক আবিষ্কার তা আজ আর অস্বীকার করার উপায় নেই। শূন্য আবিষ্কার না হলে মানবসভ্যতার দ্রুত অগ্রগতি সম্ভব হত কিনা সে ব্যাপারে প্রশ্ন থেকে যায়। গণিতে ‘শূন্য’ আবিষ্কার যে ভারতবর্ষে হয়েছিল এ ব্যাপারে আজ আর দ্বিমত নেই। প্রাচীনকাল থেকেই ভারতবর্ষে, মিশরে, ব্যাবিলনে ও চিনে দশ ধরে গণনা করার পদ্ধতির প্রচলন ছিল। তবে যে সকল সঙ্কেতের সাহায্যে মিশরীয়রা, ব্যাবিলনীয়েরা বা গ্রিকরা সংখ্যা প্রকাশের চেষ্টা করত তাতে শূন্যের কোনো ধারণা ছিল না(গাণিতিকভাবে যদিও তারা শূন্য চিহ্নের ব্যবহার করেছিলেন)। এই সকল সংকেতের সাহায্যে ক্ষুদ্র সংখ্যা প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা না হলেও বৃহৎ সংখ্যা প্রকাশের ক্ষেত্রে খুবই অসুবিধা হত। শূন্য ধরে মাত্র দশটি সঙ্কেতের সাহায্যে হিন্দু পণ্ডিতদের আবিষ্কৃত অঙ্কপাতন পদ্ধতি এক নতুন যুগের সূচনা করে। এই নিয়ম আবিষ্কৃত হওয়ার ফলেই সংখ্যার ঘরগুলি একক, দশক, শতক, শহস্র ইত্যাদি ভাগে ১০ গুণ করে ভাগ করা হয় (দক্ষিণ থেকে বামে)। আর্যভট, বরাহমিহির প্রমুখ বিজ্ঞানীদের রচিত গাণিতিক ও জ্যোতিষীয় রচনার এই পদ্ধতির বহুল ব্যবহার দৃষ্ট হয়। তাই অনুমান করা যায় আর্যভট্টের (আনুমানিক খ্রিস্টাব্দ ৪৯৯) সময়কালের বহুপূর্ব থেকেই এ দেশে এই পদ্ধতির প্রচলন ছিল। এটা সহজেই অনুমেয় যে শূন্য আবিষ্কৃত না হলে দশমিক স্থানিক অঙ্কপাতন পদ্ধতির উদ্ভব সম্ভব হত না। এছাড়াও একক, দশক, শতক ইত্যাদি ভাগে ৫০২ সংখ্যাটি লিখতে হলে দশকের ঘরের ফাঁক (শূন্যস্থান) কোনো প্রতীকের সাহায্যে ভারাট করার প্রয়োজন হয়। তাই মনে হয় আর্যভটের সময়কালের বহুপূর্বেই সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে হিন্দুরা শূন্যকে সংখ্যা হিসেবে গ্রহণ করেছিল। ‘ছন্দসূত্রের’ রচনাকাল খ্রিস্টপূর্ব ২০০। পিঙ্গল কর্তৃক এই রচনায় শূন্যের ব্যবহার দৃষ্ট হয়। আর্যভট কর্তৃক বর্গমূল নির্ণয় পদ্ধতি দশমিক স্থানিক অঙ্কপাতন ও শূন্যের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। বৃহৎসংহিতা ও পঞ্চসিদ্ধান্তিকা প্রভৃতি গ্রন্থে বরাহমিহির (খ্রিস্টাব্দ ৫০৫) বারবার শূন্যের উল্লেখ করেছেন। বরাহমিহিরের সমসাময়িক জিনভদ্রতানির রচনায় শূন্যের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। তিনি তাঁর রচনায় বৃহৎ বৃহৎ সংখ্যা লেখার সময় একাধিক শূন্যের ব্যবহার করেছেন। বর্তমানে শূন্যের যে প্রতীক ব্যবহৃত হয় প্রথমদিকে তা ছিল না। সে সময় এর প্রতীক ছিল একটি বিন্দু [•]। শূন্যের প্রতীক কবে বিন্দু থেকে ছোট বৃত্তের আকারে উন্নিত হয় তা অনুমানের উপর নির্ভর করা ছাড়া উপায় নেই। নানাঘাটে যে লিপি আবিষ্কৃত হয় তাতে সংখ্যা (দশ, কুড়ি ইত্যাদি) প্রকাশের ক্ষেত্রে শূন্যের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। টলেমি তাঁর ‘অ্যালমাজেষ্ট’ গ্রন্থে শূন্যস্থানের জন্য গ্রিক বর্ণ ‘ওমিক্র্ন’ [০]ব্যবহার করেন।সপ্তম শতাব্দীতে ভারতে ১, ২, ৩, ৪,...০ অঙ্ক সৃষ্ট লিখনপদ্ধতি মধ্যপ্রাচ্যের গণিতবিদ আল খোয়ারিজমি এবং আল কিন্দির হাত ধরে ইউরোপে প্রবেশ করে। ইউরোপে দ্বাদশ শতাব্দী থেকে দশ অঙ্ক নিয়ে গণনা শুরু হয়ে যায়। বিশ্বের মান্য গণিতজ্ঞরা সেই জন্য এগুলিকে ‘হিন্দু-আরাবিক নিউমেরালস’ বলেছেন। আলবেরুনি ভারত ভ্রমণের সময়ে এক একটি প্রদেশে ১ থেকে ৯ প্ৰদেশভিত্তিক সংখ্যাচিহ্ন ও ০-র লিপির উল্লেখ করেছেন।

প্রাচীন মিশর

প্রাচীন মিশরীয় সংখ্যাগুলো ছিল দশ ভিত্তিক। তাদের সংখ্যাগুলো স্থানভিত্তিক না হয়ে চিত্র ভিত্তিক ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ১৭৪০ সালের দিকে মিশরিয়রা আয়কর ও হিসাবরক্ষণের জন্য শূন্যের ব্যবহার করত। তাদের চিত্রলিপিতে একটি প্রতীক ছিল যাকে "নেফর" বলা হতো, যার অর্থ হল "সুন্দর"। এই প্রতীকটি তারা শূন্য এবং দশকের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করত। প্রাচীন মিশরীয় পিরামিড ও অন্যান্য স্থাপনায় এধরনের সংখ্যার ব্যবহার পাওয়া যায়।

মেসোপটেমীয় সভ্যতা

খৃষ্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দের মাঝামাঝি সময়ে ব্যাবিলনীয় গণিতবিদরা ছয়ভিত্তিক সংখ্যা ব্যবস্থার প্রবর্তন ও উন্নয়ন করে। শূন্য সংখ্যাটির অভাব তারা ছয়ভিত্তিক সংখ্যার মধ্যে একটি খালি ঘর রেখে পূরণ করত। খৃষ্টপূর্ব ৩০০ অব্দের দিকে দুটি যতিচিহ্ন প্রতীক এই ফাঁকা যায়গা দখল করে নেয়। প্রাচীন মেসোপটেমীয় শহর সুমের থেকে প্রাপ্ত একত্ব শিলা লিপি থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় যে প্রাচীন লেখক বেল বেন আপ্লু তার লেখায় দুটি যতিচিহ্ন প্রতীক ব্যবহারের বদলে একই "হুক" দিয়ে শূন্যকে প্রকাশ করেছেন।

ব্যাবিলনীয় শূন্যটি প্রকৃতপক্ষে শূন্য হিসেবে গন্য করা সমীচীন হবে না কারণ এই প্রতীকটিকে স্বাধীনভাবে লিখা সম্ভব ছিল না কিংবা এটি কোন সংখ্যার পিছনে বসে কোন দুই অঙ্ক বিশিষ্ট অর্থবোধক সংখ্যা প্রকাশ করত না।

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ


Tags:

সংখ্যা ০ উৎপত্তিসংখ্যা ০ ইতিহাসসংখ্যা ০ তথ্যসূত্রসংখ্যা ০ বহিঃসংযোগসংখ্যা ০ভারতীয় উপমহাদেশ

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

আয়াতুল কুরসিমুদ্রাস্ফীতিরামায়ণমুর্শিদাবাদ জেলাতামিম বিন হামাদ আলে সানিপ্রযুক্তিলোকসভা কেন্দ্রের তালিকাবাংলাদেশ ব্যাংককৃত্তিবাস ওঝাকৃষ্ণইনডেমনিটি অধ্যাদেশপানিপথের তৃতীয় যুদ্ধআলালের ঘরের দুলালএপ্রিলবাঙালি হিন্দুদের পদবিসমূহশবনম বুবলিনিমগৌতম বুদ্ধপথের পাঁচালী (চলচ্চিত্র)সৌরজগৎনারী ক্ষমতায়নসোনালী ব্যাংক পিএলসিব্র্যাকমেঘনাদবধ কাব্যসূরা ইয়াসীনবাংলাদেশে পেশাদার যৌনকর্মবাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমহাসাগরশিক্ষাবিজ্ঞাপনবাংলাদেশের জাতীয় পতাকামঙ্গলকাব্যইসরায়েলবইহানিফ সংকেতবাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীসুকান্ত ভট্টাচার্যআকবরইসলামি সহযোগিতা সংস্থাপশ্চিমবঙ্গফুলভিসাকাঁঠালইতিহাসশিশ্ন বর্ধনঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়উইলিয়াম শেকসপিয়রবিজ্ঞানউসমানীয় খিলাফত২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগমনোবিজ্ঞানকারকসিলেটমালয়েশিয়াবিকাশপশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ব্যবস্থাসজনেইউক্যালিপটাসগোত্র (হিন্দুধর্ম)ব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দলভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪চাঁদপুর জেলাকৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাশুক্রাণুদোয়া কুনুতমহাভারতসূরা ইখলাসবঙ্গভঙ্গ আন্দোলনবাংলাদেশের প্রশাসনিক অঞ্চলজীবনবাঁশশনি (দেবতা)ষাট গম্বুজ মসজিদলালনমঙ্গোল সাম্রাজ্যভারতের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০দৈনিক ইনকিলাবদিনাজপুর জেলা🡆 More