মাইটোকন্ড্রিয়া

মাইটোকন্ড্রিয়া হলো দুই স্তর বিশিষ্ট আবরণ বা ঝিল্লি দ্বারা আবৃত একটি সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণু । যা প্রোটিন এবং লিপিড দিয়ে তৈরি । মাইটোকন্ড্রিয়ার বাইরের আবরণটি মসৃণ কিন্তু ভেতরের আবরণটি স্থানে স্থানে ভাজ হয়ে ভেতরে দিকে ঝুলে থাকে। এ ভাঁজগুলোকে ক্রিস্টি বলা হয়। মাইটোকন্ড্রিয়ার ভেতরের অর্ধতরল দানাদার পদার্থকে ম্যাট্রিক্স বলা হয়। একটু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, মাইটোকন্ড্রিয়ার নিজস্ব ডিএনএ আছে, যা সেগুলোর ম্যাট্রিক্স এ অবস্থান করে। একটি কোষে মাইটোকন্ড্রিয়ার সংখ্যা কয়েক শত থেকে কয়েক হাজার পর্যন্ত হতে পারে। Class 7 science book

মাইটোকন্ড্রিয়া
Two mitochondria from mammalian lung tissue displaying their matrix and membranes as shown by electron microscopy
মাইটোকন্ড্রিয়া
মানুষের মাইটোকন্ড্রিয়া

আবিষ্কার

মাইটোকন্ড্রিয়ার আবিষ্কার নিয়ে মতভেদ আছে। বিজ্ঞানী কলিকার ১৮৫০ সালের প্রথম মাইটোকন্ড্রিয়ার পর্যবেক্ষণ করেন। একটি মতে, বিজ্ঞানী অল্টম্যান ১৮৮৬(মতান্তরে ১৮৯৪) সালে ইহা আবিষ্কার করেন। আবার কারও মতে, গ্রিক বিজ্ঞানী সি. বেন্ডা ১৮৯৮ সালে মাইটোকন্ড্রিয়া আবিষ্কার করেন। এন্ডোসিম্বায়োটিক থিওরী অনুযায়ী মাইটোকন্ড্রিয়া, প্লাস্টিড বহু আগে মুক্তজীবি ব্যাক্টেরিয়া ছিল। যারা এন্ডোসিম্বায়োন্ট হিসেবে অন্য কোষের মধ্যে ঢুকে পরে এবং একসময় কোষেরই অংশ হয়ে যায়। বিজ্ঞানীদের ধারণা, মাইটোকন্ড্রিয়া এসেছে প্রোটিওব্যাক্টেরিয়া থেকে এবং প্লাস্টিড এসেছে সায়ানোব্যাক্টেরিয়া থেকে। কারণঃ

  • ১) ব্যাক্টেরিয়ার মেমব্রেনের সাথে এই অঙ্গানুগুলোর মেমব্রেনের অনেক মিল রয়েছে।
  • ২) নতুন মাইটোকন্ড্রিয়া অথবা প্লাস্টিড যেই প্রকৃয়ায় আসে, ব্যাক্টেরিয়ার ক্ষেত্রেও এমন ঘটে যাকে বলে বাইনারি ফিশন। এটা এক ধরনের অযৌন প্রজনন।
  • ৩) এরা যে ধরনের রাইবোজম(70S) বহন করে, ব্যাক্টেরিয়াতেও তা রয়েছে।
  • ৪) ব্যাক্টেরিয়ার বাহিরের মেমব্রেনে ‘পোরিন’ নামের এক ধরনের ট্রান্সপোর্ট প্রোটিন পাওয়া যায়, যা মাইটোকন্ড্রিয়া এবং প্লাস্টিডের বাহিরের মেমব্রেনেও রয়েছে।
  • ৫) যদি কোষের থেকে মাইটোকন্ড্রিয়া অথবা ক্লোরোপ্লাস্ট সরিয়ে ফেলা হয়, কোষের ভেতর তারা আবার তৈরি হয়না।
  • ৬) তবে সবচেয়ে আকর্ষনীয় যেটা তা হল ডিএনএ। মাইটোকন্ড্রিয়া এবং প্লাস্টিড উভয়েরই নিজস্ব ডিএনএ রয়েছে যা সংস্লিষ্ট ব্যাক্টেরিয়ার সাথে তুলনা করলে বিশাল মিল পাওয়া যায়।মাইটোকন্ড্রিয়া

এক প্রকার কোষীয় অঙ্গানু। একটি কোষের মধ্যে ২০০-১০০০ মাইটোকন্ড্রিয়া থাকতে পারে।এখন প্রশ্ন হলো, মাইটোকন্ড্রিয়া কীভাবে কোষের মধ্যে ঢুকে পড়ল? এটা নিয়ে দুটো মত চালু আছে। একটি স্বয়ংক্রিয় মতবাদ আর অন্যটি এন্ডোসিমবায়োটিক মতবাদ। প্রথম মতবাদ অনুযায়ী ইউক্যারিওটিক কোষের নিউক্লিয়াস অঙ্গাণু থেকে ডিএনএর একটি অংশ পৃথক হয়। তারপর সেই অংশ আবরণী দ্বারা আবদ্ধ হয়ে মাইটোকন্ড্রিয়া গঠন করে। দ্বিতীয় মতবাদ অনুযায়ী, মাইটোকন্ড্রিয়া লাখো বছর আগে মুক্তজীবী ব্যাকটেরিয়া ছিল। এগুলো এন্ডোসিমবায়েন্ট হিসেবে কোষের মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং পরে কোষের অংশ হয়ে যায়। সময়ের সঙ্গে এন্ডোসিমবায়োটিক মতবাদটি বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে।

অবস্থান

মাইটোকন্ড্রিয়া 

লোহিত রক্তকণিকা এবং সীভনল ব্যতীত সকল প্রকার শক্তিউৎপাদী কোষের প্রোটোপ্লাজম এ সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গানু হিসেবে মাইটোকন্ড্রিয়া থাকে।

আয়তন ও সংখ্যা

আকারভেদে মাইটোকন্ড্রিয়ার আয়তন বিভিন্ন রকম।বৃত্তাকার মাইট্রোকন্ড্রিয়ার ব্যাস ০.২ µm থেকে ২ µm। সূত্রাকার মাইটোকন্ড্রিয়ার দৈর্ঘ্য ৪০ µm থেকে ৭০ µm।দন্ডাকার মাইটোকন্ড্রিয়ার দৈর্ঘ্য ৯ µm থেকে এবং প্রস্থ ০.৫ µm হতে পারে।

সাধারণত প্রতি কোষে এর সংখ্যা ৩০০-৪০০'র মত থাকে। যকৃৎ কোষে ১০০০ বা ততোধিক থাকে।

উভচরের ডিম্বাণুতে মাইটোকন্ড্রিয়া সংখ্যা তিন লক্ষ মানুষের শুক্রাণুতে মাইটোকন্ড্রিয়া সংখ্যা বিশ

বৃদ্ধি

বিভাজনের মাধ্যমে এদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। মাইটোকন্ড্রিয়াতে তার ব্যাকটেরিয়া পূর্বপুরুষের মত ডিএনএ রক্ষনাবেক্ষনের যন্ত্রপাতি থাকেনা। যার ফলে এতে খুব দ্রুত মিউটেশন ঘটে। একটা মাইটোকন্ড্রিয়াতে একই জিনোমের কয়েকশ কপি থাকে, আবার একটি কোষে কয়েকশ মাইটোকন্ড্রিয়া থাকতে পারে। প্রতি মুহুর্তেই এই মিউটেশনের ফলে মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএর বৈচিত্র্য পরিবর্তিত হচ্ছে। আমরা একাধিক মাইটোকন্ড্রিয়াল ভেরিয়েশন নিয়ে জন্মাই, যেই ভেরিয়েশন নিষেকের সময় ডিম্বকে তৈরি হয়। বিভিন্ন মাইটোকন্ড্রিয়াল জিনোম মৌলিক কোষীয় ক্রিয়া গুলোকে প্রভাবিত করে বিভিন্ন পরিবেশে টিকে থাকতে সাহায্য করে। স্কট উইলিয়াম এবং তার দল কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবকের দশ ধরনের টিস্যু থেকে মাইটোকন্ড্রিয়া সংগ্রহ করে দেখেন যে প্রতি টিস্যুতে মাইটোকন্ড্রিয়ার জিনোমে নির্দিষ্ট কিছু মিউটেশন ঘটেছে যা ব্যক্তিভেদে খুব একটা পার্থক্য দেখায়নি। বিভিন্ন ধরনের কোষের ব্যাতিক্রমি চাহিদা পূরনের জন্য এই মিউটেশনগুলো ঘটেছে।

গঠন

1) মাইটোকন্ড্রিয়া বিভিন্ন আকারের হতে পারে। একটি মাইটোকন্ড্রিয়ন ফসফোলিপিড বাইলেয়ার এবং প্রোটিন দ্বারা গঠিত বাইরের ঝিল্লি এবং ভিতরের ঝিল্লি ধারণ করে। দুটি ঝিল্লির আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই দ্বিস্তরি হওয়ার কারণে, একটি মাইটোকন্ড্রিয়নের পাঁচটি স্বতন্ত্র অংশ রয়েছে:

  • বহিঃআবরন বা আউটার মেমব্রেন
  • ইন্টারমেমব্রেন স্পেস (বাহ্যিক এবং ভিতরের আবরনের মধ্যবর্তী স্থান),
  • অন্তঃআবরন বা ইনার মেম্ব্রেন
  • ক্রিস্টি
  • ম্যাট্রিক্স (অভ্যন্তরীণ ঝিল্লির মধ্যে স্থান) যা একটি তরল।


2) মাইটোকন্ড্রিয়া দুটি এককপর্দা দিয়ে গঠিত,যাদের প্রত্যেকটির বেধ ৬০Å। ভিতরেরটিকে অন্তঃআবরণী(Inner Membrane)এবং বাইরেরটিকে বহিরাবরণী(Outer Membrane)বলা হয়। দুটি এককপর্দার মধ্যবর্তী স্থানকে পেরিমাইটোকন্ড্রিয়াল স্পেস (৬০-৯০Å) বলে। প্রতিটি এককপর্দা লাইপোপ্রোটিন(P-L-P)নির্মিত। 3) অন্তঃপর্দা ভিতরের দিকে ভাঁজ হয়ে যে বিভেদক প্রাচীর সৃষ্টি করে তাকে ক্রিস্টি(Cristae) বলে। অন্তঃপর্দার ভিতরে অর্ধতরল ধাত্র বা ম্যাট্রিক্স বর্তমান।এই ধাত্রে বিভিন্ন প্রকার উৎসেচক বর্তমান। বহিঃপর্দার বহিঃগাত্রকে C-তল (Cytoplasmic Surface)এবং অভ্যন্তরীণ তলকে M-তল(Matrix surface)বলে। ক্রিস্টির গাত্রে অসংখ্য সবৃন্তক কণা বর্তমান,একে অক্সিজোম বা F1 বা ফার্নান্ডেজ-মোরান অধঃএকক বলে।

3) প্রতিটি অক্সিজোম পরস্পর থেকে ১০০Å দূরে থাকে। বহিঃপর্দার বহিঃগাত্রে কিছু অবৃন্তক কণা বর্তমান,এদের পারসনের অধঃএকক বলে। মাইটোকন্ড্রিয়ার ম্যাট্রিক্সে ৩-৫টি চক্রাকার DNA বর্তমান,একে মাইটোকন্ড্রিয়াল DNA বলে।

কাজ

  • সবাত শ্বসনের তৃতীয় পর্যায় ক্রেবস চক্র ও চতুর্থ পর্যায় ইলেক্ট্রন ট্রান্সপোর্ট চেইনের বিক্রিয়া সমূহ মাইটোকন্ড্রিয়াতে সংঘটিত হয়। এর মাধ্যমে ATP(Adenosine Triphosphate)অণু সংশ্লেষ করে যা সকল শক্তির উৎস বলে মাইটোকন্ড্রিয়াকে Powerhouse of Cell বা কোষের শক্তিঘর বলে।
  • ইহা লেসিথিন এবং ফসফাটাইডাইল-ইথানলামিন নামক দুটি ফ্যাট সংশ্লেষে সহায়তা করে। ইহা ফ্যাটি অ্যাসিড বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে।
  • ইহা জীবদেহে জৈবদ্যুতি (Bio luminescence)ঘটায়। অর্থাৎ মাইটোকন্ড্রিয়া জোনাকির দেহে লুসিফেরন নামক প্রোটিনকে লুসিফেরেজ নামক উৎসেচক দ্বারা জারিত করে ফসফরাসের বিয়োজন ঘটায় যা আলোক সৃষ্টি করে। এখানে হিমোগ্লোবিন এবং মায়োগ্লোবিনের হিম (Haem)অংশ সংশ্লেষিত হয়।
  • কিছু পরিমাণ RNA ও DNA উৎপন্ন করতে পারে।
  • প্রয়োজনে কোষের সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটিয়ে কাজে সহায়তা করে।
  • প্রাণিদেহে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
  • কোষের বিভিন্ন অংশে ক্যালসিয়াম আয়নের (Ca²+)সঠিক ঘনত্ব রক্ষা।
  • শুক্রাণু ও ডিম্বাণু গঠনে অংশগ্রহণ করে।
  • মাইটোকন্ড্রিয়া স্মৃতিশক্তিকে প্রভাবিত করে।
  • মাইটোকন্ড্রিয়া আমাদের কোষের জন্য শক্তি তৈরির সাথে সাথে এক ধরনের আয়নিত অণুর সৃষ্টি করে যাকে ফ্রী রেডিকেল বলে। তারা স্টেম সেল-এর পরিণত হওয়া এবং ভাইরাসের আক্রমণে নিরাপত্তা প্রতিক্রিয়া তৈরিতেও কাজ করে।
  • রক্ত কণিকা ও হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করা।
  • বিভিন্ন ধরনের পদার্থ , যেমন- Ca, K এর সক্রিয় পরিবহনে সক্ষম।

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

টেমপ্লেট:Organelles টেমপ্লেট:Mitochondrial enzymes

Tags:

মাইটোকন্ড্রিয়া আবিষ্কারমাইটোকন্ড্রিয়া অবস্থানমাইটোকন্ড্রিয়া আয়তন ও সংখ্যামাইটোকন্ড্রিয়া বৃদ্ধিমাইটোকন্ড্রিয়া গঠনমাইটোকন্ড্রিয়া কাজমাইটোকন্ড্রিয়া তথ্যসূত্রমাইটোকন্ড্রিয়া বহিঃসংযোগমাইটোকন্ড্রিয়াডিএনএ

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

সাদ্দাম হুসাইনহুনাইন ইবনে ইসহাকব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দলবাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিবৃক্ষদারাজমানবজমিন (পত্রিকা)ইন্সটাগ্রামহাদিসবাংলা সাহিত্যের ইতিহাসওবায়দুল কাদেরদুরুদসিরাজউদ্দৌলাক্রিয়েটিনিনঅন্ধকূপ হত্যাকক্সবাজারসৈয়দ সায়েদুল হক সুমনগ্রীষ্মএইচআইভি/এইডসপথের পাঁচালী (চলচ্চিত্র)নামাজের সময়সমূহবাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসবঙ্গবন্ধু সেতুআল-মামুনশিব নারায়ণ দাসকোষ (জীববিজ্ঞান)দৌলতদিয়া যৌনপল্লিসুলতান সুলাইমানভারতের রাষ্ট্রপতিদের তালিকাবাঙালি জাতিবিরাট কোহলিবাইতুল হিকমাহঢাকারামমোহন রায়তানজিন তিশাময়মনসিংহ জেলাপ্রাকৃতিক সম্পদআদমযৌতুকইসতিসকার নামাজবাংলাদেশের জাতিগোষ্ঠীবাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, ২০২৩ধানবাবরশর্করাগণতন্ত্র১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনপৃথিবীর ইতিহাসপ্রাচীন ভারতবাংলাদেশের স্থল বন্দরসমূহের তালিকাক্রিস্তিয়ানো রোনালদোঢাকা মেট্রোরেলবাংলাদেশ ছাত্রলীগএ. পি. জে. আবদুল কালামকুষ্টিয়া জেলাদুর্গাপূজাভারত ছাড়ো আন্দোলন২০২২–২৩ নিউজিল্যান্ড পুরুষ ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফর (ডিসেম্বর ২০২২)১৮৫৭ সিপাহি বিদ্রোহদৈনিক যুগান্তরবাংলা ব্যঞ্জনবর্ণঅর্থ (টাকা)ভূমিকম্পপ্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণবিশ্ব ব্যাংকবায়ুদূষণআবদুল হামিদ খান ভাসানীইউরোপীয় ইউনিয়নপারমাণবিক ভরের ভিত্তিতে মৌলসমূহের তালিকাবাংলা ভাষা আন্দোলনকাতারঅরুণ জেটলি ক্রিকেট স্টেডিয়ামফুটবলতাপ সঞ্চালনবিতর নামাজগজনভি রাজবংশযকৃৎ🡆 More