উচ্চতা একটি বহু-অর্থবোধক পরিভাষা। প্রথমত, এটি দিয়ে কোনও সমতল স্থানে খাড়া দণ্ডায়মান কোনও জীব বা জড় বস্তুর নিম্নপ্রান্ত বা পাদবিন্দু থেকে ঊর্ধ্বপ্রান্ত বা শীর্ষবিন্দু পর্যন্ত উল্লম্ব দৈর্ঘ্যকে (অর্থাৎ ঐ জীব বা বস্তু কতটুকু লম্বা বা উঁচু) বোঝাতে পারে। যেমন বলা হতে পারে যে একটি ভবনের উচ্চতা হল ৫০ মিটার। মানুষের ক্ষেত্রে মানুষের উচ্চতা (Human height) পরিভাষাটি ব্যবহার করা হয়, যা দিয়ে দণ্ডায়মান কোনও ব্যক্তির পায়ের তলা থেকে মাথার উপরিপৃষ্ঠ পর্যন্ত পরিমাপকৃত উল্লম্ব দৈর্ঘ্যকে বোঝায়। যেমন বলা হতে পারে যে একজন ব্যক্তির উচ্চতা ৬ ফুট।
আবার উচ্চতা বলতে কোনও প্রসঙ্গতলের (সাধারণত ভূপৃষ্ঠতল বা সমুদ্র সমতল) সাপেক্ষে কোনও বিন্দু বা বস্তু উপরের দিকে কতটুকু উল্লম্ব দূরত্বে অবস্থিত (অর্থাৎ ঐ তল থেকে কত "উঁচুতে" অবস্থিত), সেটিকে বোঝানো হতে পারে। এটিকে ইংরেজিতে সাধারণত "অ্যালটিচিউড" (Altitude) নামের একটি বিশেষ পরিভাষা দিয়ে নির্দেশ করা হয়। যেমন বলা হতে পারে যে "সমুদ্র সমতল থেকে একটি বিমানের উচ্চতা প্রায় ১০,০০০ মিটার"। এ বিষয়ে আরও জানতে উচ্চতা (উল্লম্ব দূরত্ব) নিবন্ধটি দেখুন। সাধারণত বিমানচালনা, ক্রীড়া, বায়ুমণ্ডলের চাপ পরিমাপ, ইত্যাদি ক্ষেত্রে উচ্চতার এই ধারণাটি প্রয়োগ করা হয়।
অধিকন্তু ভূগোলবিদ্যায় ভূপৃষ্ঠের স্থলভাগের কোনও স্থানের উচ্চতা বলতে সমুদ্র সমতল থেকে ঐ স্থানটির উল্লম্ব দূরত্বকে বোঝায়। এটিকে ইংরেজিতে সাধারণত "এলিভেশন" (Elevation) নামের একটি বিশেষ পরিভাষা দিয়ে নির্দেশ করা হয়। যেমন বলা হতে পারে যে "সমুদ্র সমতল থেকে এভারেস্ট পর্বতের উচ্চতা ৮৮৪৮ মিটার।" এ বিষয়ে আরও জানতে উচ্চতা (ভৌগোলিক স্থান) নিবন্ধটি দেখুন।
জ্যামিতিশাস্ত্রের আলোচনায় একটি দ্বি-মাত্রিক (x ও y দুইটি অক্ষবিশিষ্ট) কার্তেসীয় স্থানাংক ব্যবস্থায় অনুভূমিক x-অক্ষের সাপেক্ষে উল্লম্ব y-অক্ষ বরাবর কোনও বিন্দুর দূরত্বকে সেই বিন্দুটির উচ্চতা বলে। অন্যদিকে একটি ত্রি-মাত্রিক (x, y ও z তিনটি অক্ষবিশিষ্ট) কার্তেসীয় স্থানাংক ব্যবস্থায় z-অক্ষটিকে উল্লম্ব ধরা হয় এবং অনুভূমিক x-y তল থেকে উল্লম্ব z-অক্ষ বরাবর কোনও বিন্দুর দূরত্বকে সেই বিন্দুটির উচ্চতা বলে।
বাংলা ভাষায় উচ্চতা শব্দটির ব্যুৎপত্তি ঘটেছে উচ্চ থেকে।
কোনও একটি শূন্যস্থানের প্রাথমিক মডেলের ক্ষেত্রে, উচ্চতাকে ধরা যেতে পারে, তৃতীয় মাত্রা হিসাবে, অপর দুটি মাত্রা হচ্ছে, দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ। উচ্চতা সাধারণত দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ -এর তলের সাথে লম্বভাবে থাকে।
উচ্চতাকে আরও ব্যবহার করা হয়, কিছু বিমূর্ত সংজ্ঞা প্রদানের জন্য। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত:
অন্যান্য ব্যবহারের মধ্যে রয়েছে বিনিময় বীজগণিত এবং উপস্থাপনা তত্ত্ব প্রভৃতিতে।
পার্থিব জগতের উচ্চতা হিসাব করার জন্য যদিওবা উচ্চতাকে একটি প্রসঙ্গ তলের সাপেক্ষে পরিমাপ করা হয়, একটি শূন্য মানের পৃষ্ঠতলের উপর ভিত্তি করে, যা সমুদ্র পৃষ্ঠতল নামে পরিচিত। উভয় অ্যালটিটূড ও এলিভেশন হল উচ্চতার প্রতিশব্দ, যা সাধারণত সংজ্ঞায়িত করা হয় গড় সমুদ্র পৃষ্ঠতল থেকে কোন বিন্দুর অবস্থানে মান। যে কেউ সমুদ্র পৃষ্ঠতলকে একটি মহাদেশের নিচে সম্প্রসারিত করে কল্পনা করতে পারে, সহজভাবে, যে কেউ মহাদেশের ভিতর দিয়ে যাওয়া অনেক সংকীর্ণ খালের কথা কল্পনা করতে পারে। কিন্তু বাস্তবে, মহাদেশের নিচে সম্প্রসারিত করা সমুদ্র পৃষ্ঠতলকে নির্ণয় করা হয় মাধ্যাকর্ষীয় পরিমাপ থেকে, এবং কিছুটা ভিন্ন গাণিতিক পদ্ধতির মাধ্যমে; দেখুন ভূগণিত, উচ্চতা।
সমুদ্র পৃষ্ঠতল থেকে পরিমাপের পরিবর্তে ভূগণিতবিদগণ প্রয়োশই উচ্চতাকে সংজ্ঞায়িত করতে পছন্দ করেন একটি রেফারেন্স উপবৃত্তের পৃষ্ঠ থেকে, দেখুন ভূগণিতিক পদ্ধতিতে উলম্ব উপাত্ত নির্ণয়।
কোনও একটি ভৌগোলিক স্থানের উচ্চতার সংজ্ঞা প্রদানের জন্য একটি প্রসঙ্গবিন্দু বা প্রসঙ্গতলের প্রয়োজন পরে। উদাহরণস্বরূপ, সমুদ্র সমতলকে প্রসঙ্গতল হিসেবে গণ্য করে নির্ণীত ভৌগোলিক উচ্চতা বা "এলিভেশন" অনুসারে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গটি হল এভারেস্ট পর্বত, যা নেপাল ও চীনের তিব্বতের সীমান্তে অবস্থিত। তবে পাদদেশকে প্রসঙ্গতল হিসেবে গণ্য করে থেকে চূড়া পর্যন্ত উচ্চতা পরিমাপ করলে সর্বোচ্চ পর্বত হল প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মাউনা কিয়া (Mauna Kea) পর্বত।
বিমান চলাচলে উচ্চতার তিনটি পৃথক ধারণা ব্যবহৃত হয়, যেগুলিকে ইংরেজি ভাষায় "হাইট", "অ্যালটিচিউড" ও "এলিভেশন" এই তিনটি স্বতন্ত্র পরিভাষা দিয়ে নির্দেশ করা নয়। সাধারণত একটি বিমানের সমুদ্র সমতল থেকে কত উঁচুতে রয়েছে, সেই উচ্চতাটিকে নির্দেশ করতে "অ্যালটিচিউড" পরিভাষাটি ব্যবহার করা হয়। অপরদিকে বিমানের নিচে অবস্থিত ভূ-সমতল থেকে এটির উচ্চতাকে নির্দেশ করতে "হাইট" পরিভাষাটি ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে সমুদ্র সমতল থেকে বিমানের নিচে অবস্থিত ভৌগোলিক স্থানটির উচ্চতা নির্দেশ করতে "এলিভেশন" পরিভাষাটি ব্যবহার করা হয়। সুতরাং, বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে কোনও বিমানের "হাইট"-এর সাথে এর নিচে অবস্থিত ভৌগোলিক অবস্থানটির "এলিভেশন" যোগ করলে বিমানটির "অ্যালটিচিউড" পাওয়া যাবে। তবে এটি একটি সরলীকৃত বর্ণনা। বাস্তব বিশ্বে বিমান চলাচলে উচ্চতা বোঝাতে বিভিন্ন রকমের পরিভাষা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
মানবমিতি (Anthropometry) নামক বিজ্ঞানে মানুষের উচ্চতা বা দৈহিক উচ্চতা নিয়ে অধ্যয়ন করা হয়। যদিও মূলত বংশাণুগত কারণে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির উচ্চতার পার্থক্য হয়ে থাকে, অনেক ক্ষেত্রে পরিবেশগত কারণেও উচ্চতার পার্থক্য হতে পারে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
উন্নয়নশীল দেশগুলির জনগণের পুষ্টিমানের পরিবর্তন নিরীক্ষণের জন্য জাতিসংঘ দৈহিক উচ্চতার পরিবর্তনের পরিসংখ্যান (অন্যান্য পরিসংখ্যানের মধ্যে) ব্যবহার করে থাকে। কোনও মানব জনসমষ্টির গড় উচ্চতা থেকে সেটির সদস্যদের জন্ম, লালন-পালন, সামাজিক শ্রেণী, খাদ্যাভাস এবং স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা সম্পর্কে বহু জটিল তথ্য পাওয়া যায়।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article উচ্চতা, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.