জাতি হচ্ছে একটি সম্প্রদায় যা একটি সাধারণ ভাষা, অঞ্চল, ইতিহাস, জাতিগততা ও সংস্কৃতির ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। স্পষ্টতই, জাতি উপজাতি হতে অধিক রাজনৈতিক। সাধারণভাবে একে বলা যায়, জাতি হচ্ছে একত্রিত ও প্রতিষ্ঠিত উপজাতি সম্প্রদায়। কিছু জাতি উপজাতি গোষ্ঠীর সমান বলে বিবেচ্য আবার কিছু জাতি গড়ে ওঠে সামাজিক ও রাজনৈতিক কিছু নির্দিষ্ট সংবিধান অনুসরণ করে। জাতির অন্য একটি সংজ্ঞা হচ্ছে, এটি একটি সম্প্রদায়, যে সম্প্রদায়ের জনগণ নিজেদের স্বায়ত্তশাসন, ঐক্য ও অন্যান্য অধিকারের ব্যাপারে সচেতন। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে, একটি জাতি হলো একটি ভূ-খন্ডের স্বাধীন ও সার্বভৌম অঞ্চল।
আমেরিকান রাজনৈতিক বিজ্ঞানী বেনেডিক্ট এন্ডারসন জাতিকে একটি কাল্পনিক সম্প্রদায় হিসেবে আখ্যায়িত করেন। আর অস্ট্রেলিয়ান পণ্ডিত পল জেমস জাতিকে কোনো একটি সম্প্রদায়ের খন্ড হিসেবে দেখেন। যে হিসেবে জাতিকে কাল্পনিক সম্প্রদায় হিসেবে ধরা হয় তার পেছনের কারণ হলো এই যে, একটি জাতির সকল ব্যক্তি একে অপরকে চিনে না এবং ব্যাপারটি এমন যে হয়ত তাদের কখনো দেখাও হবে না। অর্থাৎ তারা সকলেই একে অপরের কাছে আগন্তুক৷ এজন্য "আগন্তকদের জাতি" বাক্যাংশটি উদ্ভূত হয় যা বিভিন্ন লেখক তাঁদের লেখায় লিখে গেছেন। এর মধ্যে একজন হলেন আমেরিকান সাংবাদিক ভ্যান্স প্যাকার্ড। সেই হিসেবে "জাতি" একটি ইন্টারসাব্জেক্টিভ বাস্তবতা এবং শব্দটির অর্থ ও অস্তিত্ব কেবলমাত্র নাগরিকদের চিন্তা-ভাবনায় বিদ্যমান। এমনকি কোনো ব্যক্তি যদি চিন্তা করেন যে জাতি বলতে কিছু নেই তবুও সেই জাতির তাতে বিন্দুমাত্র ক্ষতি হবেনা কেননা "জাতি" কোনো সাব্জেক্টিভ বাস্তবতা নয় যে এটি শুধুমাত্র একটি মানুষের চিন্তাধারায় বিরাজমান। তবে যদি একটি বিশালসংখ্যক মানুষ বিশ্বাস করা শুরু করে যে জাতির অস্তিত্ব থাকা উচিত নয় এবং জাতি বিষয়টিকে প্রত্যাখ্যান করে তবে জাতির অস্তিত্ব বিরাজ করা সম্পূর্ণরূপে থেমে যাবে।
জাতি (ইংরেজি: Nation, উচ্চারণঃ ন্যাশন) শব্দটি এসেছে প্রাচীন ফ্রেঞ্চ ভাষার শব্দ nacion বা naissance থেকে যার অর্থ হলো জন্ম, উৎপত্তির অবস্থান। এর উৎপত্তি ফ্রেঞ্চ ভাষার natio শব্দ হতে আক্ষরিক অর্থে যার অর্থ হচ্ছে "জন্ম"।
ব্ল্যাক'স ল ডিকশনারি অনুসারে "জাতি" কে নিম্নোক্তভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়ঃ
nation, n (14c) ১. (জাতি হলো) মানুষদের একটি বিশাল গোষ্ঠী যাদের একটি সাধারণ মূল, ভাষা, ঐতিহ্য এবং সাধারণত একটি সংবিধান রয়েছে। • যখন একটি জাতি একটি রাষ্ট্রের সাথে মিলিত হয় তখন সেটাকে প্রায়শই জাতিরাষ্ট্র হিসেবে অভিহিত করা হয়।...
...
২. কতিপয় মানুষদের বিচরণ যা একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলব্যাপী এবং তা কোনো স্বাধীন সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত; অর্থাৎ, একটি সার্বভৌম রাজনৈতিক রাষ্ট্র।
তবে "জাতি" শব্দটির কিছু প্রতিশব্দ রয়েছে যা সচরাচর ব্যবহার করা হয়। যেমনঃ
তাই, “বিশ্বের জাতিসমূহ” বলতে বোঝায় উঁচু স্তরের সরকার ব্যবস্থা, বিভিন্ন বিশাল ভৌগোলিক অঞ্চল ও পৃথিবীর বৃহৎ ও বিচিত্র উপজাতি গোষ্ঠী।
“জাতি” শব্দটির ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে, জাতিরাষ্ট্র শব্দটি ব্যবহার করা হয় ছোট শহর রাষ্ট্রকে বৃহৎ রাষ্ট্র থেকে পৃথক করার জন্য কিংবা বহুজাতিক রাষ্ট্রকে ছোট ছোট একক উপজাতি গোষ্ঠী হতে পৃথক করার জন্য।
ব্রিটিশ ইতিহাসবেত্তা সুসান রেয়নল্ড তার বই কিংডম এন্ড কমিউনিটিজ ইন ওয়েস্টার্ন ইউরোপ ৯০০-১৩০০ তে বর্ণনা করেছেন যে, কিছু ইউরোপীয়ান সাম্রাজ্য আধুনিক যুক্তি অনুসারে তখনকার সময়ে জাতি হিসেবে ছিল। তবে জাতীয়তাবাদে রাজনৈতিক অধিকার শুধুমাত্র কিছু শিক্ষিত ও উন্নত শ্রেণির মানুষদের নাগালে ছিল। রোমান ধর্মযাজক আদ্রিয়ান হ্যাস্টিংস দ্য কন্সট্রাকশন অফ ন্যাশনহুডঃ এথনিসিটি, রিলিজিওন এন্ড ন্যাশনালিজম বইতে উল্লেখ করেছেন যে, ইংল্যান্ডের এংলো স্যাক্সন রাজা বিপুল মানুষকে একত্র করে জাতীয়তাবাদের উত্থান করেছিলেন নোর্সদের আক্রমণ বিতাড়িত করার জন্য। তিনি যুক্তি দেন যে, ওয়েস্ট স্যাক্সনের রাজা আলফ্রেড দ্য গ্রেট বাইবেলীয় জাতীয়তাবাদের উপর ভিত্তি করে তার আইনি কোডে বাইবেলীয় ভাষা যুক্ত করে দেন এবং তার শাসনামলে বাইবেলের কিছু অংশ ইংরেজিতে অনুবাদিত হয় যেন ইংরেজরা অনুপ্রাণিত হয়ে নোর্স আক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। ওয়াইক্লিফ সার্কেলের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বাইবেল ইংরেজিতে অনুবাদ করে হ্যাস্টিংস ইংরেজ জাতীয়তাবাদের একটি শক্ত নতুন যুক্তি তুলে ধরে। তাঁর মতামত, এগারো শতকে ইংল্যান্ডের সেনাদের নর্ম্যান বিজয় এর মধ্য দিয়ে ইংরেজ জাতি গঠিত হয় এবং সেই থেকে এই জাতি টিকে আছে।
মধ্যযুগীয় জাতীয়তাবাদের আরেকটি ভালো উদাহরণ হচ্ছে আরব্রোথের ঘোষণা, একটি দলিল যা স্কটিশ পণ্ডিত ও পাদ্রিদের দ্বারা লিখিত হয়েছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়। দলিলটির উদ্দেশ্য ছিল পাদ্রিকে দেখানো যে, স্কটল্যান্ড নিজের মৌলিক সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ভাষার কারণে নিজেই একটি জাতি এবং অবশ্যই জাতিটি ইংল্যান্ডের থেকে পুরোনো। দলিলটি ন্যায়সঙ্গত কিনা তা যাচাইয়ের জন্য স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুসের কাছে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে রবার্ট ব্রুসের অধীনে স্কটল্যান্ডের সেনাদেরকে ইংরেজ সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাঠানো হয় ইংরেজদের বিতাড়িত করার উদ্দেশ্যে কারণ ইংরেজরা অন্যায়ভাবে স্কটল্যান্ডের সার্বভৌমত্ব কেড়ে নিতে চেয়েছিল। এর ফলে ব্রুসের অধীনে মিলিটারি ক্যাম্প গড়ে ওঠে এবং সেই সময়ে ইংরেজ-স্কটল্যান্ডের যে যুদ্ধ হয় তা ব্যানকবার্নের যুদ্ধ নামে পরিচিতি লাভ করে। এ যুদ্ধের ফলে স্কটল্যান্ড ইংল্যান্ডের দখলমুক্ত হয় এবং স্কটল্যান্ড স্বাধীন হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এই ঘটনাটি স্কটিশ জাতীয়তাবাদ ও বিখ্যাত সার্বভৌমত্বের ঘটনার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
গ্রিক ইতিহাসবিদ অ্যানথোনি কালদেলিস হেলেনিজম ইন বায়জান্তিয়াম বইতে নিশ্চিত করেন যে, বর্তমান বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য যা একসময় রোমান সাম্রাজ্য ছিল তা মধ্যযুগীয় সময়ে জাতিরাষ্ট্রে রূপান্তরিত হয়।
পণ্ডিত আজার গাত যুক্তি দেন যে, চীন, কোরিয়া ও জাপান ইউরোপীয় মধ্যযুগ থেকেই জাতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে আসছে।
কিছু মধ্যযুগীয় বিশ্ববিদ্যালয় তথা প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীকে- যারা একই ভাষা ও একই নিয়ম-নীতির আওতায় পড়ে তাদেরকে ন্যাশিও নামে ডাকা হয়। বর্তমান সময়ে যা কোনো কোনো দেশে শাখা নামে পরিচিত। ১৯৮৩ ও ১৯৮৪ সালে জিন গ্যারিসন প্যারিসে ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে অধ্যয়ন করার সময় দুইবার ফ্রেঞ্চ ন্যাশিও এর ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হন। চার্লস বিশ্ববিদ্যালয় যা প্রাগ বিশ্ববিদ্যালয় নামেও পরিচিত, শিক্ষার্থীদের দলগুলোকে ন্যাশন বা জাতিতে বিভক্ত করেছিল- স্টেডিয়াম জেনারেলে (ইউরোপের মধ্যযুগীয় বিশ্ববিদ্যালয়) বহেমিয়ান, বেভারিয়ান, স্যাক্সন ও সিলেশিয়ান এই চারটি জাতি বা ন্যাশন্স ছিল।
একইভাবে মধ্যযুগীয় ক্যাথলিক মিলিটারি বর্গ নাইটস হসপিটালার জাতিতে বিভক্ত ছিল যারা গ্রিসের সর্ববৃহৎ ডোডেকানিজ দ্বীপ রোডস এর হোস্টেল রক্ষণাবেক্ষণ করতো৷ এই হোস্টেলসমূহ থেকেই তারা তাদের নাম গ্রহণ করেছে। হোস্টেলগুলোর ব্যাপারে স্প্যানিশ পর্যটক পেড্রো টাফুর বলেন যে, হোস্টেলসমূহ ছিল এমন জায়গা যেখানে বিদেশীরা খেতে আসে ও একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ করতে আসে, এক জাতি অপর জাতি হতে বিভক্ত থেকে এবং একজন নাইট এদের সবার উপরে কর্তৃত্ব স্থাপন করেন ও নিবাসীদের ধর্মানুযায়ী তাদেরকে সকল প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহ করেন।
আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী ফিলিপ এস. গোরস্কি তার নিবন্ধ দ্য মোজাইক মোমেন্টঃ এন আর্লি মডার্নিস্ট ক্রিটিক অফ দ্য মডার্নিস্ট থিওরি অফ ন্যাশনালিজম এ বলেন যে ডাচ প্রজাতন্ত্র হচ্ছে সর্বপ্রথম আধুনিক জাতি যা বাইবেলীয় জাতীয়তাবাদের উপর ভিত্তি করে সম্পূর্ণ আধুনিক রাজনৈতিক জাতীয়তাবাদের ফলে সৃষ্টি হয়। ডায়ানা মুর এপেলবাউম ২০১৩ সালের একটি নিবন্ধ বাইবলিকাল ন্যাশনালিজম এন্ড দ্য সিক্সটিন্থ সেঞ্চুরি স্টেটস তে গোরস্কির বর্ণনা বিস্তৃতি করে নতুন, প্রতিবাদী ও ষোড়শ শতকের জাতিরাষ্ট্রের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন। একইভাবে, যদিও একটু বিস্তৃত করে, ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী অ্যানথোনি ডি. স্মিথ ও একই যুক্তিগুলোই তুলে ধরেন তাঁর বই চুসেন পিপলঃ স্যাক্রেড সোর্সেস অফ ন্যাশনাল আইডেন্টিটি এন্ড মিথ্স এন্ড মেমরিজ অফ দ্য ন্যাশন এ।
জাতীয়তাবাদের একজন মহৎ ইতিহাসবেত্তা লিয়াহ গ্রিনফিল্ড তাঁর বই ন্যাশনালিজমঃ ফাইভ রোডস টু মডার্নিটি তে উল্লেখ করেন যে, জাতীয়তাবাদ সর্বপ্রথম শুরু হয় ১৬০০ সালে, ইংল্যান্ডে। গ্রিনফিল্ডের মতানুযায়ী, ইংল্যান্ড এই বিশ্বের সর্বপ্রথম জাতি।
২০ শতকের শেষের দিকে সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন যে দুই ধরনের জাতি বিদ্যমান। একটি হলো নাগরিক জাতি যার প্রধান উদাহরণ হলো ফ্রান্স ও অপরটি হলো উপজাতীয় জাতি যার উদাহরণ হলো জার্মান জাতিগোষ্ঠী। উনিশ শতকে জোহান গতিলেব ফিশট এর মতো জার্মান দার্শনিকদের উদ্ভবের ফলে জার্মান ঐতিহ্যটি পরিচিতি লাভ করে যা নির্দেশ করে জার্মানদের একই সাধারণ ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও উপজাতীয় উৎপত্তি, যা জার্মানদেরকে অন্যান্য জাতি হতে পৃথক করে৷ অন্যদিকে নাগরিক জাতি বিষয়টি সামনে আসে ফরাসি বিপ্লব এর পর থেকে এবং এর ধারণা দেন ১৮ শতকের ফরাসি দার্শনিকগণ। সব জনগণের একসাথে কেন্দ্রীভূত হয়ে থাকার ব্যাপারটি বোঝা গিয়েছিল এবং এর থেকেই জাতি গঠিত হয়। এটি ফরাসি প্রাচ্যবিদ আর্নেস্ট রেনান এর মতামত।
জাতীয় পরিচয় বা জাতীয়তা এর উদ্ভব কীভাবে হয় তা জানার জন্য বর্তমান সময়ের গবেষণাকে সামাজিক ও ইতিহাসবিদ্যার দিকে ঝুঁকে থাকার প্রবণতা দেখা যায়। এর উদ্দেশ্য হলো স্বতন্ত্র কিংবা মিলিত গঠন পদ্ধতি শনাক্ত করা যা হতে পারে সতর্ক কিংবা অসতর্ক, ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃতভাবে। গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাষ্ট্র একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা যা কিনা আংশিকভাবে অর্থনৈতিক বিষয়বস্তুর আওতায় পড়ে, এটিও যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে।
জাতিসমূহের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি বিতর্ক চলমান এবং তা হলো জাতিসমূহ সামনেও বর্তমানের মতই টিকে থাকবে নাকি জাতিসমূহের বদলে কোনো টেকসই বিকল্প আসবে।
জাতি ভাঙ্গন তত্ত্বটি সরাসরি কসমোপলিটান বিষয়ের উপরে আলোকপাত করে তৈরি। কসমোপলিটন বা বিশ্বনাগরিকত্ব ধারণামতে, এই পৃথিবীতে মানুষের মেলবন্ধন আরো বাড়ানোর উদ্দেশ্যে জাতি ও রাষ্ট্রের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। রাজনৈতিক বিজ্ঞানী স্যামুয়েল পি. হান্টিংটন এর মতে, মানুষের সংস্কৃতি ও ধর্মগত পরিচয় আগামী দিনে স্নায়ুযুদ্ধ এর প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
তত্ত্বটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে ১৯৯২ সালে আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইন্সটিটিউট এর একটি বক্তৃতায় যা পরবর্তীতে বিকশিত হয় ১৯৯৩ সালে আমেরিকান ম্যাগাজিন ফরেইন অ্যাফেয়ার্স এর একটি নিবন্ধে যার শিরোনাম ছিল "দ্য ক্ল্যাশ অফ সিভিলাইজেশ্যন্স?" আমেরিকান রাজনৈতিক বিজ্ঞানী ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা এর বই দি এন্ড অফ হিস্টরি এন্ড দ্য লাস্ট ম্যান (১৯৯২) এর জবাবে হান্টিংটন তাঁর দ্য ক্ল্যাশ অফ সিভিলাইজেশ্যন্স এন্ড দা রিমেকিং অফ ওয়ার্ল্ড অর্ডার বইতে ১৯৯৬ সালে তাঁর গবেষণামূলক প্রবন্ধের (থিসিস) সম্প্রসারণ ঘটান।
হান্টিংটন বিগত স্নায়ুযুদ্ধের সময়ের বৈশ্বিক রাজনীতির বিচিত্র তত্ত্ব নিরীক্ষা করে তাঁর চিন্তা শুরু করেন। কিছু তাত্ত্বিক ও লেখক যুক্তি দিয়েছেন যে মানবাধিকার, অসাম্প্রদায়িক গণতন্ত্র, পুঁজিবাদী মুক্ত বাজার অর্থনীতি স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার জাতিদের একমাত্র ভাবাদর্শগত বিকল্প হিসেবে ছিল। বিশেষভাবে, ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা দ্য এন্ড অফ হিস্টোরি এন্ড দ্য লাস্ট ম্যান বইতে লিখেছেন যে এই বিশ্ব ইতিহাসের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
হান্টিংটন বিশ্বাস করেছিলেন যে সেই ভাবাদর্শ শেষ হওয়ার পরেও সাংস্কৃতিক দ্বন্দের ফলে পৃথিবী শুধুমাত্র একটি সাধারণ অবস্থায় এসেছে। তাঁর থিসিসে তিনি উল্লেখ করেছেন যে আগামী ভবিষ্যতে দ্বন্দের মেরুদণ্ড হবে সাংস্কৃতিক ও ধার্মিক বিষয়বস্তুসমূহ।
অ-জাতীয়তাবাদ একটি প্রক্রিয়া কিংবা রীতি যার ফলে জাতিরাষ্ট্র ও জাতীয় পরিচয় তাঁদের প্রয়োজনীয়তা হারিয়ে ফেলে অধিজাতীয় ও বৈশ্বিক সত্তার প্রভাবে। কিছু বিশেষ কারণ এটিকে সমৃদ্ধশালী করে তোলে যেমন অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন, বহুজাতিক সংস্থার প্রয়োজনীয়তা, অর্থনৈতিক বাজারের আন্তর্জাতিকীকরণ, শাসকগোষ্ঠীর সমাজ-রাজনৈতিক ক্ষমতা অধিজাতীয় সত্তার নিকট স্থানান্তর (যেমনঃ ইউনাইটেড ন্যাশন্স, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন) এবং ইন্টারনেটের মতো নতুন নতুন তথ্য ও সাংস্কৃতিক প্রযুক্তির আগমন। যা হোক, নাগরিকত্ব ও জাতীয় পরিচয় ব্যাপারটি প্রায়ই দরকার পড়ে৷
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যান জিয়েলংকা বিবৃতি দেন যে "ভবিষ্যতের রাজনৈতিক শক্তির নীতি ও প্রয়োগ ওয়েস্টফালিয়ার (ঐতিহাসিক এলাকা, ডিউকের জমিদারি এলাকা) মতো না হয়ে বেশি হবে মধ্যযুগীয় নীতির মতো।" রাজনৈতিক শক্তির সম্পৃক্ততা থাকবে "ক্ষমতায় একাগ্রতা, সার্বভৌমত্ব, সুস্পষ্ট পরিচয় এবং নব্য মধ্যযুগীয়তা যার বৈশিষ্ট্য হলো একাধির কর্তৃপক্ষ, বিভাজিত সার্বভৌমত্ব, একাধিক পরিচয় ও সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং অস্পষ্ট সীমান্ত" এসব বিষয়ের সাথে।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article জাতি, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.