জীবাশ্ম জ্বালানি

জীবাশ্ম জ্বালানি হল এক প্রকার জ্বালানি যা বায়ুর অনুপস্থিতিতে অবাত পচন প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়। মৃত গাছের পাতা, মৃতদেহ ইত্যাদি জীবনের উপাদান হাজার হাজার বছর ধরে মাটির নিচে চাপা পড়ে এ জ্বালানি তৈরি হয়। এ প্রক্রিয়ায় জ্বালানি তৈরি হতে মিলিয়ন বছর লাগে, সাধারণত ৬৫০ মিলিয়ন বছর বা ৬৫০০০০০০০ বছর সময় লাগে। জীবাশ্ম জ্বালানিতে উচ্চ পরিমাণে কার্বন থাকে। কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, খনিজ তেল ইত্যাদি জীবাশ্ম জ্বালানি। জীবাশ্ম জ্বালানি পৃথিবীর সকল জায়গায় পাওয়া যায় না। যে দেশে পাওয়া যায় তার ওপর অন্যান্য দেশ নির্ভর করে ।

জীবাশ্ম জ্বালানি
জীবাশ্ম জ্বালানির মধ্যে অন্যতমঃ কয়লা

প্রধান প্রধান জীবাশ্ম জ্বালানি

জীবাশ্ম জ্বালানি 
জীবাশ্ম জ্বালানি পৃথিবীর কিছু স্থানেই পাওয়া যায় ও অন্যান্য দেশ জ্বালানির জন্য এই দেশের ওপর নির্ভর করে।

কয়লা

জীবাশ্ম জ্বালানির মধ্যে কয়লার ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। কয়লা একটি জৈব পদার্থ। পৃথিবীতে একসময় অনেক গাছপালা ছিল। বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ও প্রাকৃতিক পরিবর্তনে সেই সব গাছপালা মাটির নিচে চাপা পড়ে যায় এবং জমতে থাকে। গাছের পাতা ও কাণ্ড রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে কয়লায় পরিণত হয়।

প্রাকৃতিক গ্যাস

প্রাকৃতিক গ্যাস শক্তির একটি অতি পরিচিত উৎস। প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায় ভূগর্ভে। পৃথিবীর অভ্যন্তরের প্রচন্ড চাপতাপ এই উপাদান সৃষ্টির প্রধান কারণ। পেট্রোলিয়াম কূপ থেকেও প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায়। এই গ্যাসের প্রধান উপাদান মিথেন। প্রাকৃতিক গ্যাসের শতকরা ৬০-৯৫ ভাগ হল মিথেন।এছাড়া ইথেন শতকরা ৭ ভাগ, প্রোপেন ৬ ভাগ, আইসোবিউটেন ও বিউটেন ৪ ভাগ এবং পেন্টেন ৩ ভাগ থাকে।

খনিজ তেল

জীবাশ্ম জ্বালানি 
ইংল্যান্ডের একটি পেট্রোলিয়াম নিষ্কাশন কেন্দ্র।

পেট্রোলিয়াম একটি ল্যাটিন শব্দ। এই শব্দটি এসেছে দুটি ল্যাটিন শব্দ পেট্রোঅলিয়াম মিলে। 'পেট্রো' অর্থ পাথর ও 'অলিয়াম' শব্দের অর্থ তেল। অর্থাৎ পেট্রোলিয়াম শব্দের অর্থ পাথরের তেল। টারশিয়ারি যুগে অর্থাৎ আজ থেকে ৫-৬ কোটি বছর পূর্বে পাথরের স্তরে স্তরে গাছপালা ও সামুদ্রিক প্রাণী জমা পড়ে। কালে কালে তারাই খনিজ তেলে পরিণত হয়। আজকের স্থলভাগের অনেকটাই পূর্বে সমুদ্রের অন্তর্গত ছিল।

প্রয়োজনীয়তা

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান উপাদান কয়লাকয়লা পুড়িয়ে সরাসরি তাপ পাওয়া যায়। এটি একটি অতি পরিচিত জ্বালানি। তবে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার ছাড়াও এর আরো নানা ব্যবহার রয়েছে। কয়লা থেকে অনেক প্রয়োজনীয় উপাদান পাওয়া যায়। এদের মধ্যে রয়েছে কোলগ্যাস, আলকাতরা, বেনজিন, অ্যামোনিয়া, টলুয়িন প্রভৃতি। রান্না করতে ও বাষ্পীয় ইঞ্জিন চালাতে ব্যবহৃত হয় কয়লা। একসময় কয়লা জল পরিশোধনের জন্য ব্যবহৃত হত।

প্রাকৃতিক গ্যাস একসময় একটি অপ্রয়োজনীয় পদার্থ হিসেবে চিহ্নিত হত, যা পেট্রোলিয়ামের সাথে উৎপাদিত হত। তবে বর্তমানে এটি একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পদার্থ। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার খুবই ব্যাপক। এর প্রধান ব্যবহার জ্বালানি হিসেবে। রান্নার কাজে এর ব্যবহার রয়েছে। তবে সিলিন্ডারে করে যে গ্যাস সরবরাহ করা হয় তা প্রধানত বিউটেন। অনেক সার কারখানায় এর ব্যবহার রয়েছে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রেও এর ব্যবহার রয়েছে।

শক্তির অন্যতম পরিচিত উৎস খনিজ তেল বা পেট্রোলিয়াম। বর্তমান সভ্যতায় এর ব্যবহার অনেক ব্যাপক। গ্রামের কুঁড়েঘর থেকে শুরু করে আধুনিক সভ্যতার পরিবহন ব্যবস্থা-সর্বত্রই এর অবদান রয়েছে। পেট্রোলিয়াম থেকে নিষ্কাশিত তেল পেট্রোল। পাকা রাস্তার ওপর দেয়া পিচ্‌, কেরোসিন ও চাষবাসের জন্য এর ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। তবে এর প্রধান ব্যবহার জ্বালানি হিসেবে। পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যের প্রধান ব্যবহার তড়িৎ ও যান্ত্রিক শক্তির উৎপাদনে। পেট্রোলিয়াম থেকে আরো পাওয়া যায় নানান রকম প্রসাধনী যেমনঃ ক্যাশমিলন, পলিয়েস্টার, টেরিলিন।

ঊনবিংশ শতাব্দি থেকে খনিজ তেলের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় এবং তা ব্যবহৃত হয় তিমি মাছের তেলের পরিবর্তে।

পরিমাণ

জীবাশ্ম জ্বালানি 
মেক্সিকো উপসাগর-এর নিকট একটি খনিজ তেলের কূপ।

প্রাথমিক শক্তির উৎস হচ্ছে মাটির নিচ থেকে পাওয়া বিভিন্ন জ্বালানি। এই জ্বালানির সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উৎস হল কার্বন নির্ভর জ্বালানি। ২০০২ সাল নাগাদ কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস-এর উৎপাদন ছিল প্রায় (৩৪.৯+২৩.৫+২১.২) মিলিয়ন টন।

২০০৫-০৬ সাল পর্যন্ত সঞ্চিত পরিমাণ (প্রমাণিত)

এতে চলবেঃ

জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ও পরিবেশ দূষণ

জীবাশ্ম জ্বালানি 
১৮০০-২০০৭ সাল পর্যন্ত কার্বন ক্ষয়। নোটঃ কার্বন টেমপ্লেট:Co2-এর মোট ভরের মাত্র ২৭%
জীবাশ্ম জ্বালানি 
শিল্প বিপ্লবের পর থেকে গত ৪০০,০০০ বছরে কার্বন ডাইঅক্সাইড বৃদ্ধির হার

জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারে পরিবেশ দূষণ খুব বেশি ঘটে। একটি পরিসংখ্যান থেকে দেখা গেছে কয়লা থেকে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে তড়িৎ আহরণে কর্মীদের মৃত্যুর হার পারমাণবিক রিয়াক্টরে কর্মীর মৃত্যুর হারের সমান।

গাড়ি, এরোপ্লেন, জাহাজট্রেন চালাতে যে জ্বালানি ব্যবহৃত হয় তা প্রধানত জীবাশ্ম জ্বালানি (খনিজ তেলপ্রাকৃতিক গ্যাস)। মোটর গাড়ি ও কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া পরিবেশ দূষিত করে। এছাড়া কার্বন ডাইঅক্সাইড-এর পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যায়। এছাড়া ঐ অঞ্চলের জীববৈচিত্রের ওপরও তা প্রভাব ফেলে।

তথ্যসূত্র

  • তেল নিষ্কাশন কেন্দ্র
  • জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানিকারক
  • কার্বন বুদ্‌বুদ্‌
  • কার্বন নির্ভর জ্বালানি
  • ক্লিংকার (বর্জ্য)
  • তেল সঞ্চয়ঘর

Tags:

জীবাশ্ম জ্বালানি প্রধান প্রধান জীবাশ্ম জ্বালানি প্রয়োজনীয়তাজীবাশ্ম জ্বালানি পরিমাণজীবাশ্ম জ্বালানি র ব্যবহার ও পরিবেশ দূষণজীবাশ্ম জ্বালানি তথ্যসূত্রজীবাশ্ম জ্বালানি আরও দেখুনজীবাশ্ম জ্বালানিকয়লাকার্বনখনিজ তেলপৃথিবীপ্রাকৃতিক গ্যাসমিলিয়ন

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

যোনি পিচ্ছিলকারকপরীমনিমির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরবাংলা বাগধারার তালিকানিষ্ক্রিয় গ্যাসও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদতারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ভাষা আন্দোলন দিবসবিশ্ব দিবস তালিকাসন্ধিঅপারেশন সার্চলাইটদ্বৈত শাসন ব্যবস্থাজাতিসংঘের মহাসচিবসমাসমদিনাফিলিস্তিনকৃষ্ণযোনিলালবাগের কেল্লালোকসভাশীর্ষে নারী (যৌনাসন)শিবমহাদেশইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্মসোভিয়েত ইউনিয়নঐশ্বর্যা রাইগরুপলাশপ্রথম বিশ্বযুদ্ধতাশাহহুদহামইউটিউবতাকওয়াহরমোনবাংলাদেশী জাতীয় পরিচয় পত্রসূরা কাফিরুনবাংলাদেশ সেনাবাহিনীমুজিবনগর সরকারর‍‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নবাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীবাংলাদেশের ইউনিয়নধর্মীয় জনসংখ্যার তালিকাশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ঢাকাকোস্টা রিকা জাতীয় ফুটবল দলকামরুল হাসানসাধু ভাষালগইনওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবএন্দ্রিক ফেলিপেইহুদিমতিউর রহমান নিজামীকপালকুণ্ডলাবৌদ্ধধর্মের ইতিহাসতরমুজআবু হুরাইরাহবিশেষ্যবাংলা ভাষাশিক্ষাকোষ নিউক্লিয়াসদ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনব্রাহ্মী লিপিনাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন, ২০১৯বাংলাদেশের জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২কানাডাবাংলাদেশের নদীবন্দরের তালিকাফুটবলকুরআনঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনমিয়া খলিফারামকৃষ্ণ মিশনপদ্মা নদীমঙ্গল গ্রহবিশ্ব থিয়েটার দিবসতথ্যসুন্দরবন🡆 More