পৃথিবী: সৌরজগতের তৃতীয় গ্রহ

পৃথিবী সূর্য থেকে দূরত্ব অনুযায়ী তৃতীয়, সর্বাপেক্ষা অধিক ঘনত্বযুক্ত এবং সৌরজগতের আটটি গ্রহের মধ্যে পঞ্চম বৃহত্তম গ্রহ। সূর্য হতে এটির দূরত্ব প্রায় ১৫ কোটি কি.মি।এটি সৌরজগতের চারটি কঠিন গ্রহের অন্যতম। পৃথিবীর অপর নাম বিশ্ব বা নীলগ্রহ। ইংরেজি ভাষায় পরিচিত আর্থ (Earth) নামে, গ্রিক ভাষায় পরিচিত গাইয়া (Γαῖα) নামে, লাতিন ভাষায় এই গ্রহের নাম টেরা (Terra)।

পৃথিবী 🜨
অ্যাপোলো ১৭ থেকে দেখা পৃথিবীর একটি রঙিন চিত্র
অ্যাপোলো ১৭ থেকে দেখা পৃথিবীর একটি রঙিন চিত্র
পৃথিবীর বিখ্যাত "নীল মার্বেল" চিত্র, ১৯৭২ সালে চন্দ্র অভিযানের সময় এপোলো ১৭ থেকে তোলা
বিবরণ
বিশেষণপার্থিব
কক্ষপথের বৈশিষ্ট্য
যুগ জে২০০০
অপসূর১৫২,১০০,০০০ কিমি
(৯৪,৫০০,০০০ মাইল; ১.০১৬৭৩ এইউ)
অনুসূর১৪৭,০৯৫,০০০ কিমি
(৯১,৪০১,০০০ মাইল; ০.৯৮৩ ২৭ এইউ)
অর্ধ-মুখ্য অক্ষ১৪৯,৫৯৮,০২৩ কিমি
(৯২,৯৫৫,৯০২ মাইল; ১.০০০ ০০১ ০২ এইউ)
উৎকেন্দ্রিকতা০.০১৬ ৭০৮৬
কক্ষীয় পর্যায়কাল৩৬৫.২৫৬ ৩৬৩ ০০৪ দিন
(১.০০০ ০১৭ ৪২০ ৯৬ বছর)
গড় কক্ষীয় দ্রুতি২৯.৭৮ কিমি/সে
(১০৭,২০০ কিমি/ঘ)
গড় ব্যত্যয়৩৫৮.৬১৭°
নতি৭.২৫° সৌর বিষুবরেখার সাথে
১.৫৭৮৬৯° স্থির তলের সাথে
০.০০০০৫° জে২০০০ সৌর কক্ষপথের সাথে
উদ্বিন্দুর দ্রাঘিমা-১১.২৬০ ৬৪°
অনুসূরের উপপত্তি১১৪.২০৭ ৮৩°
উপগ্রহসমূহ১ টি প্রাকৃতিক উপগ্রহ (চন্দ্র);
৫টি আপাতদৃষ্টিতে উপগ্রহ
>১ ৮০০ কার্যরত কৃত্রিম উপগ্রহ
>১৬ ০০০ মহাকাশের জঞ্জাল
ভৌত বৈশিষ্ট্যসমূহ
গড় ব্যাসার্ধ৬৩৭১.০ কিমি (৩৯৫৮.৮ মাইল)
বিষুবীয় ব্যাসার্ধ৬,৩৭৮.১ কিমি (৩৯৬৩.২ মাইল)
মেরু ব্যাসার্ধ৬,৩৫৬.৮ কিমি (৩৯৪৯.৯ মাইল)
সমরূপতার০.০০৩৩৫২৮
১/২৯৮.২৫৭২২২১০১ ইটিআরএস৮৯
পরিধি৪০০৭৫.০১৭ কিমি নিরক্ষরেখা বরাবর (২৪৯০১.৪৬১ মাইল)
৪০০০৭.৮৬ কিমি পৃথিবীর মধ্যরেখা বরাবর (২৪৮৫৯.৭৩ মাইল)
পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল৫১০,০৭২,০০০ কিমি
(১৯৬ ৯৪০ ০০০ মাইল)
১৪৮ ৯৪০ ০০০ কিমি ভূমি
(৫৭৫ ১০০ ০০ বর্গমাইল; ২৯.২%)
৩৬১ ১৩২ ০০০ কিমি পানি
(১৩৯ ৪৩৪ ০০০ বর্গ মাইল; ৭০.৮%)
আয়তন১.০৮৩ ২০৭ ৩×১০১২ কিমি
(২.৫৯৮ ৭৬ × ১০১১ কিউবিক মাইল)
ভর৫.৯৭ ২৩৭×১০২৪ কিলোগ্রাম
১.৩১ ৬৬৮ × ১০২৫ পাউন্ড)
(৩.০×১০−৬ M) সৌর ভর
গড় ঘনত্ব৫.৫১৪ গ্রাম/সেমি
(০.১৯৯২ পাউন্ড/কিউবিক ইঞ্চি)
বিষুবীয় পৃষ্ঠের অভিকর্ষ৯.৮০৭ মি/সে (৩২.১৮ ফিট/সে)
মুক্তি বেগ১১.১৮৬ কিমি/সে
(৪০ ২৭০ কিমি/ঘণ্টা; ২৫ ০২০ মাইল/ঘণ্টা)
নাক্ষত্রিক ঘূর্ণনকাল০.৯৯৭ ২৬৯ ৬৮ দিন;
(২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ৪.১০০ সেকেন্ড)
বিষুবীয় অঞ্চলে ঘূর্ণন বেগ০.৪৬৫১ কিমি/সে
(১৬৭৪.৪ কিমি/ঘণ্টা; ১০৪০.৪ মাইল/ঘণ্টা)
অক্ষীয় ঢাল২৩.৪৩৯ ২৮১১°
উত্তর মেরুর বিষুবাংশঅসংজ্ঞায়িত°
উত্তর মেরুর বিষুবলম্ব+৯০°
প্রতিফলন অনুপাত০.৩৬৭ জ্যামিতিক
০.৩০৬ বন্ড
পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ন্যূন মধ্যক সর্বোচ্চ
কেলভিন ১৮৪ কে ২৮৮ কে ৩৩০ কে
সেলসিয়াস -৮৯.২ °সে ১৫ °সে ৫৬.৭ °সে
বায়ুমণ্ডল
পৃষ্ঠের চাপ১০১.৩২৫ কিলো প্যাসকেল (সমুদ্র সমতলের ক্ষেত্রে)
গঠন৭৮.০৮% নাইট্রোজেন (N2; শুষ্ক বাতাসের ক্ষেত্রে)
২০.৯৫% অক্সিজেন (O2)
০.৯৩% আর্গন
০.০৪০২% কার্বন ডাই অক্সাইড
~১% জলীয় বাষ্প
(জলবায়ু পরিবর্তনশীল)

পৃথিবী হলো মানুষ সহ কোটি কোটি প্রজাতির আবাসস্থল। পৃথিবী এখন পর্যন্ত পাওয়া একমাত্র মহাজাগতিক স্থান যেখানে প্রাণের অস্তিত্বের কথা বিদিত। ৪৫৪ কোটি বছর আগে পৃথিবী গঠিত হয়েছিল। এক বিলিয়ন বছরের মধ্যেই পৃথিবীর বুকে প্রাণের আবির্ভাব ঘটে। পৃথিবীর জীবমণ্ডল এই গ্রহের বায়ুমণ্ডল ও অন্যান্য অজৈবিক অবস্থাগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। এর ফলে একদিকে যেমন বায়ুজীবী জীবজগতের বংশবৃদ্ধি ঘটেছে, অন্যদিকে তেমনি ওজন স্তর গঠিত হয়েছে। পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের সঙ্গে একযোগে এই ওজোন স্তরই ক্ষতিকর সৌর বিকিরণের গতিরোধ করে গ্রহের বুকে প্রাণের বিকাশ ঘটার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছে। পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ ও এর ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস ও কক্ষপথ এই যুগে প্রাণের অস্তিত্ব রক্ষায় সহায়ক হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, আরও ৫০ কোটি বছর পৃথিবী প্রাণধারণের সহায়ক অবস্থায় থাকবে।

পৃথিবীর উপরিতল একাধিক শক্ত স্তরে বিভক্ত। এগুলিকে ভূত্বকীয় পাত বলা হয়। কোটি কোটি বছর ধরে এগুলি পৃথিবীর উপরিতলে এসে জমা হয়েছে। পৃথিবীতলের প্রায় ৭১% লবণাক্ত জলের মহাসাগর দ্বারা আবৃত। অবশিষ্টাংশ গঠিত হয়েছে মহাদেশ ও অসংখ্য দ্বীপ নিয়ে। স্থলভাগেও রয়েছে অজস্র হ্রদ ও জলের অন্যান্য উৎস। এগুলি নিয়েই গঠিত হয়েছে বিশ্বের জলভাগ। জীবনধারণের জন্য অত্যাবশ্যকীয় তরল জল এই গ্রহের ভূত্বকের কোথাও সমভার অবস্থায় পাওয়া যায় না। পৃথিবীর মেরুদ্বয় সর্বদা অ্যান্টার্কটিক বরফের চাদরের কঠিন বরফ বা আর্কটিক বরফের টুপির সামুদ্রিক বরফে আবৃত থাকে। পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগ সর্বদা ক্রিয়াশীল। এই অংশ গঠিত হয়েছে একটি আপেক্ষিকভাবে শক্ত ম্যান্টেলের মোটা স্তর, একটি তরল বহিঃকেন্দ্র (যা একটি চৌম্বকক্ষেত্র গঠন করে) এবং একটি শক্ত লৌহ আন্তঃকেন্দ্র নিয়ে গঠিত।

মহাবিশ্বের অন্যান্য বস্তুর সঙ্গে পৃথিবীর সম্পর্ক বিদ্যমান। বিশেষ করে সূর্য ও চাঁদের সঙ্গে এই গ্রহের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। বর্তমানে পৃথিবী নিজ কক্ষপথে মোটামুটি ৩৬৫.২৬ সৌর দিনে বা এক নক্ষত্র বর্ষে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। পৃথিবী নিজ অক্ষের ৬৬.১/২ ডিগ্রি কোণে হেলে রয়েছে। এর ফলে এক বিষুবীয় বছর (৩৬৫.২৪ সৌরদিন) সময়কালের মধ্যে এই বিশ্বের বুকে ঋতুপরিবর্তন ঘটে থাকে। পৃথিবীর একমাত্র বিদিত প্রাকৃতিক উপগ্রহ হল চাঁদ। ৪.৩৫ বিলিয়ন বছর আগে চাঁদ পৃথিবী প্রদক্ষিণ শুরু করেছিল। চাঁদের গতির ফলেই পৃথিবীতে সামুদ্রিক জোয়ারভাঁটা হয় এবং পৃথিবীর কক্ষের ঢাল সুস্থিত থাকে। চাঁদের গতিই ধীরে ধীরে পৃথিবীর গতিকে কমিয়ে আনছে। ৩.৮ বিলিয়ন থেকে ৪.১ বিলিয়ন বছরের মধ্যবর্তী সময়ে পরবর্তী মহাসংঘর্ষের সময় একাধিক গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষে গ্রহের উপরিতলের পরিবেশে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল।

গ্রহের খনিজ সম্পদ ও জৈব সম্পদ উভয়ই মানবজাতির জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য। এই গ্রহের অধিবাসীরা প্রায় ২০০টি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে সমগ্র গ্রহটিকে বিভক্ত করে বসবাস করছে। এই সকল রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক কূটনৈতিক, পর্যটন, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক বিদ্যমান। মানব সংস্কৃতি গ্রহ সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণার জন্মদাতা। এই সব ধারণার মধ্যে রয়েছে পৃথিবীকে দেবতা রূপে কল্পনা, সমতল বিশ্ব কল্পনা এবং পৃথিবীকে মহাবিশ্বের কেন্দ্ররূপে কল্পনা। এছাড়া একটি সুসংহত পরিবেশ রূপে বিশ্বকে কল্পনা করার আধুনিক প্রবণতাও লক্ষিত হয়। এই ধারণাটি বর্তমানে প্রাধান্য অর্জন করেছে।

নাম ও ব্যুৎপত্তি

"পৃথিবী" শব্দটি সংস্কৃত। এ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত पृथिवी থেকে। এর অপর নাম "পৃথ্বী"। পৃথ্বী ছিল পৌরাণিক "পৃথুর" রাজত্ব। এর সমার্থক শব্দ হচ্ছে- বসুধা, বসুন্ধরা, ধরা, ধরনী, ধরিত্রী, ধরাতল, ভূমি, ক্ষিতি, মহী, দুনিয়া ইত্যাদি।

পৃথিবীর কালানুক্রমিক ইতিহাস

উৎপত্তি

সৌরজগৎ সৃষ্টির মোটামুটি ১০০ মিলিয়ন বছর পর একগুচ্ছ সংঘর্ষের ফল হলো পৃথিবী। আজ থেকে ৪.৫৪ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবী নামের গ্রহটি আকৃতি পায়, পায় লৌহের একটি কেন্দ্র এবং একটি বায়ুমণ্ডল। সাড়ে ৪০০ কোটি বছর আগে দুটি গ্রহের তীব্র সংঘর্ষ হয়েছিল। সংঘর্ষের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, এ সময় জুড়ে যায় গ্রহ দুটি। পৃথিবী নামক গ্রহের সঙ্গে চরম সংঘর্ষ হয়েছিল থিয়া নামে একটি গ্রহের। সংঘর্ষের সময় পৃথিবীর বয়স ছিল ১০ কোটি বছর। সংঘর্ষের জেরে থিয়া ও পৃথিবীর জুড়ে যায়, তৈরি হয় নতুন গ্রহ। সেই গ্রহটিতেই আমরা বাস করছি। তিনবার চন্দ্র অভিযানে পাওয়া চাঁদের মাটি এবং হাওয়াই অ্যারিজোনায় পাওয়া আগ্নেয়শিলা মিলিয়ে চমকে যান গবেষকরা। দুটি পাথরের অক্সিজেন আইসোটোপে কোনও ফারাক নেই। গবেষকদলের প্রধান অধ্যাপক এডওয়ার্ড ইয়ংয়ের কথায়, চাঁদের মাটি আর পৃথিবীর মাটির অক্সিজেন আইসোটোপে কোনও পার্থক্য পাইনি। থিয়া নামক গ্রহটি তখন পরিণত হচ্ছিল। ঠিক সেই সময়েই ধাক্কাটি লাগে এবং পৃথিবীর সৃষ্টি হয়।

পৃথিবী: নাম ও ব্যুৎপত্তি, পৃথিবীর কালানুক্রমিক ইতিহাস, গাঠনিক বৈশিষ্ট্য 
শিল্পীর দৃষ্টিতে প্রথম দিকের সৌর জগৎ ও এর গ্রহসমূহের চাকতি।

সৌরজগতের ভেতরে অবস্থিত সবচেয়ে পুরনো পদার্থের বয়স প্রায় ৪.৫৬ শত কোটি বছর। আজ থেকে ৪.৫৪ শত কোটি বছর আগে পৃথিবীর আদিমতম রূপটি গঠিত হয়। সূর্যের পাশাপাশি সৌরজগতের অন্যান্য মহাজাগতিক বস্তুগুলিও গঠিত হয় ও এগুলোর বিবর্তন ঘটতে থাকে। তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে, একটি আণবিক মেঘ থেকে একটি সৌর নীহারিকা মহাকর্ষীয় ধসের মাধ্যমে কিছু আয়তন বের করে নেয়, যা ঘুরতে শুরু করে এবং চ্যাপ্টা হয়ে তৈরি হয় পরিনাক্ষত্রিক চাকতিতে, এবং এই চাকতি থেকেই সূর্য এবং অন্যান্য গ্রহের উৎপত্তি ঘটে। একটি নীহারিকাতে বায়বীয় পদার্থ, বরফকণা এবং মহাজাগতিক ধূলি (যার মধ্যে আদিম নিউক্লাইডগুলিও অন্তর্ভুক্ত) থাকে। নীহারিকা তত্ত্ব অনুযায়ী সংযোজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অতিক্ষুদ্র গ্রহগুলি গঠিত হয়। এভাবে আদিম পৃথিবীটি গঠিত হতে প্রায় ১ থেকে ২ কোটি বছর লেগেছিল।

চাঁদের গঠন নিয়ে বর্তমানে গবেষণা চলছে এবং বলা হয় চাঁদ প্রায় ৪.৫৩ বিলিয়ন বছর পূর্বে গঠিত হয়। একটি গবেষণারত অনুমানের তথ্য অনুসারে, মঙ্গল গ্রহ আকারের বস্তু থিয়ার সাথে পৃথিবীর আঘাতের পরে পৃথিবী থেকে খসে পড়া বস্তুর পরিবৃদ্ধি ফলে চাঁদ গঠিত হয়। এই ঘটনা থেকে বলা হয়ে থাকে যে, থিয়া গ্রহের ভর ছিল পৃথিবীর ভরের প্রায় ১০%, যা পৃথিবীকে আঘাত করে কৌনিক ভাবে, এবং আঘাতের পরে এটির কিছু ভর পৃথিবীর সাথে বিলীনও হয়ে যায়। প্রায় ৪.১ থেকে ৩.৫ বিলিয়ন বছরের মধ্যে অজস্র গ্রহাণুর আঘাত যা ঘটে, যার ফলে চাঁদের বৃহত্তর পৃষ্ঠতলের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে, আর এর কারণ ছিল পৃথিবীর উপস্থিতি।

ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস

পৃথিবী: নাম ও ব্যুৎপত্তি, পৃথিবীর কালানুক্রমিক ইতিহাস, গাঠনিক বৈশিষ্ট্য 
একটি প্রাকৃতিক শিলাগঠিত খিলান, শিলার স্তর প্রদর্শন করছে।

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ও সাগরসমূহ আগ্নেয়গিরির উৎগিরণ ও জলীয় বাষ্প সমৃদ্ধ গ্যাসের অতিনির্গমনের (Outgassing) ফলে সৃষ্টি হয়েছে। গ্রহাণুপুঞ্জ, ক্ষুদ্র গ্রহ, ও ধুমকেতু থেকে আসা ঘনীভূত জল ও বরফের সম্মিলনে পৃথিবীর সাগরসমূহের উৎপত্তি হয়েছে। ফেইন্ট ইয়ং সান প্যারাডক্স মডেলে বলা হয়, যখন নব গঠিত সূর্যে বর্তমান সময়ের চেয়ে মাত্র ৭০% সৌর উজ্জ্বলতা ছিল তখন বায়ুমণ্ডলীয় "গ্রিনহাউজ গ্যাস" সাগরের পানি বরফ হওয়া থেকে বিরত রাখে। ৩.৫ বিলিয়ন বছর পূর্বে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র গঠিত হয়, যা সৌর বায়ুর ফলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে উড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।

পৃথিবীর শক্ত বহিরাবণ সৃষ্টি হয়েছে যখন পৃথিবীর গলিত বাইরের অংশ ঠাণ্ডা হয়ে শক্ত হয়। দুটি মডেলে ব্যাখ্যা করা হয় যে, ভূমি ধীরে ধীরে বর্তমান অবস্থায় এসেছে, বা পৃথিবীর ইতিহাসের শুরুতে দ্রুত পরিবর্তিত হয়েছে এবং পরবর্তীতে ধীরে ধীরে মহাদেশীয় অঞ্চলসমূহ গঠিত হয়েছে। মহাদেশসমূহ পৃথিবীর অভ্যন্তরে লাগাতার তাপ হ্রাস পাবার ফলে ভূত্বকীয় পাত গঠিত হয়েছে। ভূতাত্ত্বিক সময় শত-মিলিয়ন বছর যাবত চলে এবং এ সময়ে মহামহাদেশসমূহ একত্রিত হয়েছে ও ভেঙ্গে আলাদাও হয়েছে। প্রায় ৭৫ কোটি বছর পূর্বে সবচেয়ে প্রাচীন মহামহাদেশ রোডিনিয়া ভাঙ্গতে শুরু করে। মহাদেশটি পরে পুনরায় ৬০ কোটি বছর থেকে ৫৪ কোটি বছর পূর্বে একত্রিত হয়ে প্যানোটিয়া, পরবর্তীতে প্যানজিয়ায় একত্রিত হয়, যাও পরে ১৮ কোটি বছর পূর্বে ভেঙ্গে যায়।

বরফ যুগের বর্তমান রূপ শুরু হয় প্রায় ৪ কোটি বছর পূর্বে এবং ৩০ লক্ষ বছর পূর্বে প্লেইস্টোসিন সময়ে তা ঘনীভূত হয়। ৪০,০০০ থেকে ১০০,০০০ বছর পূর্বে হিমবাহ ও বরফ গলার কারণে উচ্চ-অক্ষাংশ অঞ্চলসমূহের উচ্চতা কমতে থাকে। শেষ মহাদেশীয় হিমবাহ শেষ হয় ১০,০০০ বছর পূর্বে।

জীবনের আবির্ভাব ও বিবর্তন

জীবন সময়রেখা
-৪৫০ —
-৪০০ —
-৩৫০ —
-৩০০ —
-২৫০ —
-২০০ —
-১৫০ —
-১০০ —
-৫০ —
০ —
প্রথম জল
প্রবল উল্কাবর্ষণ
প্রথম যৌন জনন
ক্যাম্ব্রিয়ান বিস্ফোরণ
পোঙ্গোলা
হিউরোনিয়ান
ক্রায়োজিনিয়ান
আন্দিয়ান
কারু
কোয়াটার্নারি
অক্ষের স্কেল: কোটি বছরপৃথিবী: নাম ও ব্যুৎপত্তি, পৃথিবীর কালানুক্রমিক ইতিহাস, গাঠনিক বৈশিষ্ট্য 
বামপ্রান্তে কমলা রঙে জানা তুষার যুগ চিহ্নিত।
আরও দেখুন: মানব সময়রেখাপ্রকৃতি সময়রেখা
পৃথিবী: নাম ও ব্যুৎপত্তি, পৃথিবীর কালানুক্রমিক ইতিহাস, গাঠনিক বৈশিষ্ট্য 
আরআরএনএ বিশ্লেষণের ভিত্তিতে পৃথিবীতে জীবনের কাল্পনিক ফাইলোজেনেটিক ট্রি।

রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে প্রায় ৪০০ কোটি বছর পূর্বের প্রথম অণুর সন্ধান পাওয়া যায়। আরও ৫০ কোটি বছর পরে, সকল জীবের শেষ একক পূর্বপুরুষের সন্ধান মিলে। সালোকসংশ্লেষণের বিবর্তনের ফলে সৌর শক্তি সরাসরি জীবের জীবনধারণ ও বংশবৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে অক্সিজেন (O2) বায়ুমণ্ডলে একীভূত হয় এবং সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির সাথে মিথষ্ক্রিয়ার কারণে এ থেকে পৃথিবীকে রক্ষার জন্য বায়ুমণ্ডলের উপরে রক্ষাকারী ওজোন স্তর (O3) সৃষ্টি হয়। বৃহৎ কোষের সাথে ক্ষুদ্র কোষের একত্রিত হওয়ার ফলে জটিল কোষ গঠিত হয় যাকে সুকেন্দ্রিক বলা হয়। কলোনির মধ্যে কোষসমূহ আরও বিশেষায়িত হতে থাকলে বহুকোষী জীব গঠিত হয়। ওজোন স্তরে ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মির বিকিরণ শোষণের ফলে ভূপৃষ্ঠে জীবসমূহ একত্রিত হতে থাকে। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত সবচেয়ে প্রাচীন জীবের জীবাশ্মসমূহ হল পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় প্রাপ্ত ৩.৪৮ বিলিয়ন বছর পূর্বের স্যান্ডস্টোন মাইক্রোবায়াল ম্যাট জীবাশ্ম, পশ্চিম গ্রিনল্যান্ডে প্রাপ্ত ৩.৭ বিলিয়ন বছর পূর্বের মেটাসেডিমেন্ট জৈব গ্রাফাইট, পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় প্রাপ্ত জৈব শিলার অংশবিশেষ।

৭৫ থেকে ৫৮ কোটি বছর পূর্বে নিউপ্রোটেরোজোয়িক সময়ে, পৃথিবীর বেশিরভাগ অংশ বরফাচ্ছাদিত ছিল বলে ধারণা করা হয়। এই ধারণাকে "স্নোবল আর্থ" বলা হয় এবং এর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে কারণ এর পরে যখন জটিলভাবে বহুকোষী জীব গঠিত হওয়া শুরু হয় তখন ক্যাম্ব্রিয়ান বিস্ফোরণ হয়েছিল। ক্যাম্ব্রিয়ান বিস্ফোরণের পরে ৫৩৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে আরও পাঁচটি বড় ধরনের বিস্ফোরণ হয়। সবচেয়ে সাম্প্রতিক বিস্ফোরণ হল ক্রেটাশাস-টার্টিয়ারি বিলুপ্তি, যা ৬৬ মিলিয়ন বছর পূর্বে সংগঠিত হয়। এ সময়ে গ্রহাণুর প্রভাবে যেসব ডাইনোসর উড়তে পারে না এবং অন্যান্য বৃহৎ সরীসৃপসমূহ বিলুপ্ত হতে থাকে, কিন্তু ছোট প্রজাতির প্রাণীকুল, যেমন স্তন্যপায়ী প্রাণীসমূহ বেঁচে যায়। ৬৬ মিলিয়ন বছর পূর্ব পর্যন্ত, স্তন্যপায়ীদের জীবনে ভিন্নতা দেখা দেয় এবং আরও কয়েক মিলিয়ন বছর পূর্বে আফ্রিকান বানর-সদৃশ্য প্রাণী, যেমন অরোরিন টিউজেনেন্সিস সোজা হয়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা লাভ করে। কৃষিকাজের উন্নয়ন এবং পরে সভ্যতার উন্নয়নের ফলে পরিবেশ ও প্রকৃতির উপর মানুষের প্রভাব বাড়তে থাকে এবং বর্তমান অবস্থায় আসে।

পৃথিবীর ভবিষ্যৎ

পৃথিবীর প্রত্যাশিত দীর্ঘ-মেয়াদি ভবিষ্যৎ সূর্যের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। আগামী ১.১ বিলিয়ন বছরের মধ্যে (১ বিলিয়ন বছর= ১০ বছর) সূর্যের আলোর উজ্জ্বলতা আরো ১০% বৃদ্ধি পেতে পারে এবং আগামী ৩.৫ বিলিয়ন বছরের তা আরও ৪০% বৃদ্ধি পেতে পারে। পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠের ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা অজৈব কার্বন চক্রকে ত্বরান্বিত করবে, যার ফলশ্রুতিতে বায়ুতে এটির ঘনত্ব উদ্ভিদের জন্য মারাত্নক ভাবে কমে আসবে (সি৪ ফটোসিন্থেসিসে মাত্র ১০পিপিএম হবে) প্রায় ৫০০ - ৯০০ মিলিয়ন বছর পরে (১ মিলিয়ন বছর= ১০ বছর)। উদ্ভিদহীনতার কারণে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন থাকবে না, এবং প্রাণী জগৎ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। পরবর্তী বিলিয়ন বছরের মধ্যে ভূ-পৃষ্ঠের উপরের সকল পানি শুকিয়ে যাবে এবং সারা পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা গিয়ে দাঁড়াবে প্রায় ৭০°সে (১৫৮°ফা)। এই সময়ের পর থেকে, আশা করা হয় পরবর্তী ৫০০ মিলিয়ন বছর পৃথিবী বসবাসযোগ্য থাকবে, এটা ২.৩ বিলিয়ন বছর পর্যন্তও সম্ভব যদি বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেন না থাকে। এমনকি যদি সূর্য শাশ্বত ও স্থিতিশীল থাকে, আধুনিক মহাসাগরগুলোতে থাকা ২৭% পানি ভূ-অভ্যন্তরের গুরুমন্ডল স্তরে হারিয়ে যাবে, এটির কারণ সাগরের মধ্যে অবস্থিত শৈলশ্রেণী থেকে নির্গত হওয়া বাষ্পের পরিমাণ কমে যাওয়া।

৫ বিলিয়ন বছরের মধ্যে সূর্যের আকারের পরিবর্তন হয়ে একটি রেড জায়ান্ট বা লোহিত দানবে পরিনত হবে। বিভিন্ন মডেল থেকে এটা অনুমান করা যায় সূর্যের আকৃতি বৃদ্ধি পাবে প্রায় ১ এইউ (১৫,০০,০০,০০০ কি.মি), যা এটির বর্তমান পরিধির তুলনায় ২৫০ গুন বেশি। পৃথিবীর ভাগ্য খুব ভালভাবে পরিষ্কার এই সময়ে। লোহিত দানব হিসাবে, সূর্য এই সময় তার ভরের প্রায় ৩০% হারাবে। তাই, জোয়ার-ভাটা বিহীন পৃথিবী, একটি কক্ষপথে সূর্যকে প্রায় ১.৭ এইউ দূরত্বে প্রদক্ষিণ করবে, এই সময় নক্ষত্রটি তার সর্বোচ্চ পরিধিতে পরিণত হবে। বেঁচে থাকা বাকি জীব বৈচিত্র্যে বেশিরভাগ গুলো, কিন্তু সব নয় সূর্যের বাড়তে থাকা উজ্জ্বলতা কারণে মারা যাবে (উজ্জ্বলতার সর্বোচ্চ সীমা বর্তমান সীমার থেকে ৫,০০০ গুণ বেশি হবে)। ২০০৮ সালে করা একটি সিমুলেশনের ফলাফল ইঙ্গিত দেয় যে, জোয়ার-ভাটার প্রভাব না থাকার কারণে পৃথিবীর কক্ষপথ এক সময় হ্রাস পাবে এবং সূর্য এটিকে টেনে নিবে নিজের দিকে, ফলাফলস্বরূপ পৃথিবী সূর্যের পরিমণ্ডলে প্রবেশ করবে এবং এক সময় বাষ্পে পরিণত হবে।

গাঠনিক বৈশিষ্ট্য

আকৃতি

পৃথিবী দেখতে পুরোপুরি গোলাকার নয়, বরং কমলালেবুর মত উপর ও নিচের দিকটা কিছুটা চাপা এবং মধ্যভাগ (নিরক্ষরেখার কাছাকাছি) স্ফীত। এ'ধরনের স্ফীতি তৈরি হয়েছে নিজ অক্ষকে কেন্দ্র করে এটির ঘূর্ণনের কারণে। একই কারণে বিষুব অঞ্চলের ব্যাস মেরু অঞ্চলের ব্যাসের তুলনায় প্রায় ৪৩ কি.মি. বেশি।

পৃথিবী: নাম ও ব্যুৎপত্তি, পৃথিবীর কালানুক্রমিক ইতিহাস, গাঠনিক বৈশিষ্ট্য 
পৃথিবীর আকৃতি। ভূ-পৃষ্ঠের উপরিতল হতে ভূ-ভরকেন্দ্রের দূরত্ব দেখানো হয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকার আন্দাস পর্বত শৃঙ্গকে দেখানো হয়েছে উঁচু জায়গা হিসাবে। তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে পৃথিবী২০১৪ বিশ্ব ভূ-চিত্র মডেল থেকে।

পৃথিবীর আকৃতি অনেকটাই কমলাকার উপগোলকের মত। ঘূর্ণনের ফলে, পৃথিবীর ভৌগোলিক অক্ষ বরাবর এটি চ্যাপ্টা এবং নিরক্ষরেখা বরাবর এটি স্ফীত। নিরক্ষরেখা বরাবর পৃথিবীর ব্যাস মেরু থেকে মেরুর ব্যাসের তুলনায় ৪৩ কিলোমিটার (২৭ মা) বৃহৎ। তাই, পৃথিবী পৃষ্ঠের উপর পৃথিবীর ভরকেন্দ্র থেকে সর্বোচ্চ দূরত্বটি হল নিরক্ষরেখার উপর অবস্থিত চিম্বরাজো আগ্নেয়গিরির সর্বোচ্চ শৃঙ্গটি। আদর্শ মাপের উপগোলকের গড় ব্যাস হল ১২,৭৪২ কিলোমিটার (৭,৯১৮ মা)। স্থানীয় ভূসংস্থানে ব্যাসের মান আদর্শ উপগোলকের ব্যাসের মানের চেয়ে ভিন্ন হয়, যদিওবা সারা বিশ্বের কথা বিবেচনা করলে পৃথিবীর ব্যাসার্ধের তুলনায় এই বিচ্যুতির মান যৎ সামান্য: সর্বোচ্চ পরিমাণ বিচ্যুতির মান হল মাত্র ০.১৭%, যা পাওয়া যায় মারিয়ানা খাতে (যা ১০,৯১১ মিটার (৩৫,৭৯৭ ফু) সমুদ্র পৃষ্ঠতল থেকে নিচে), আর অপরদিকে মাউন্ট এভারেস্টে (৮,৮৪৮ মিটার (২৯,০২৯ ফু) যা সমুদ্র পৃষ্ঠতলের থেকে উঁচুতে) বিচ্যুতির মান ০.১৪%।

জিওডেসি প্রকাশ করে যে, পৃথিবীতে সমুদ্র তার প্রকৃত আকার ধারণ করবে যদি ভূমি ও অন্যান্য চাঞ্চলতা যেমন ঢেউ ও বাতাস না থাকে, আর একে সংজ্ঞায়িত করা হয় জিওইড দ্বারা। আরো স্পষ্ট ভাবে, জিওইডের পরিমাণ হবে গড় সমুদ্র পৃষ্টতলের উচ্চতায় অভিকর্ষীয় মানের সমান।

রাসায়নিক গঠন

ভূত্বকের রাসায়নিক গঠন
যৌগ সমূহ রাসায়নিক

সংকেত

গঠন
মহাদেশীয় মহাসাগরীয়
সিলিকা SiO2 ৬০.২% ৪৮.৬%
অ্যালুমিনা Al2O3 ১৫.২% ১৬.৫%
লাইম CaO ৫.৫% ১২.৩%
ম্যাগনেসিয়া MgO ৩.১% ৬.৮%
আয়রন (II) অক্সাইড FeO ৩.৮% ৬.২%
সোডিয়াম অক্সাইড Na2O ৩.০% ২.৬%
পটাশিয়াম অক্সাইড K2O ২.৮% ০.৪%
আয়রন (III) অক্সাইড Fe2O3 ২.৫% ২.৩%
পানি H2O ১.৪% ১.১%
কার্বন ডাই অক্সাইড CO2 ১.২% ১.৪%
টাইটেনিয়াম ডাই অক্সাইড TiO2 ০.৭% ১.৪%
ফসফরাস পেন্টা অক্সাইড P2O5 ০.২% ০.৩%
মোট ৯৯.৬% ৯৯.৯%

পৃথিবীর ভর হল প্রায় ৫.৯৭ × ১০২৪ কিলোগ্রাম (৫,৯৭০ ইয়াটোগ্রাম)। এটি গঠিত যে সকল উপাদান দিয়ে তার মধ্যে সবচাইতে বেশি হল লোহা (৩২.১%), অক্সিজেন (৩০.১%), সিলিকন (১৫.১%), ম্যাগনেসিয়াম (১৩.৯%), সালফার (২.৯%), নিকেল (১.৮%), ক্যালসিয়াম (১.৫%), এবং অ্যালুমিনিয়াম (১.৪%), এ ছাড়া বাকি ১.২% এর মধ্যে রয়েছে অন্যান্য বিভিন্ন উপাদানের উপস্থিতি। ভরের পৃথকীকরণ ঘটার ফলে, অনুমান করা হয় পৃথিবীর কেন্দ্র অঞ্চলটি প্রধানত গঠিত লোহা (৮৮.৮%) দ্বারা, এর সাথে অল্প পরিমাণে রয়েছে নিকেল (৫.৮%), সালফার (৪.৫%), এবং এছাড়া অন্যান্য উপাদানের উপস্থিতি রয়েছে ১% এরও কম।

সাধারণত পৃথিবীর ভূত্বকের শিলাগুলোর উপাদানসমূহের সবগুলোই হয়ে থাকে অক্সাইড ধরনের: তবে এর গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রম হল এতে ক্লোরিন, সারফার, এবং ফ্লোরিনের উপস্থিতি এবং সাধারণত কোন শিলায় এগুলোর পরিমাণ হয়ে থাকে মোট পরিমাণের ১% এরও কম। মোট ভূত্বকের ৯৯% গঠিত হয়ে থাকে ১১ ধরনের অক্সাইড দ্বারা, যার মধ্যে প্রধান উপাদানগুলো হল সিলিকা, অ্যালুমিনা, আয়রন অক্সাইড, লাইম, ম্যাগনেসিয়া (ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড), পটাশ এবং সোডা।

অভ্যন্তরীণ কাঠামো

পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কাঠামো অন্যান্য বহুজাগতিক গ্রহের মত বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত, স্তরগুলোর গঠন এগুলোর রাসায়নিক ও ভৌত (রিওলজি) বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে। সবচেয়ে বাইরের স্তরটি রাসায়নিকভাবে স্বতন্ত্র নিরেট সিলিকেট ভূত্বক, যার নিচে রয়েছে অধিক সান্দ্রতা সম্পন্ন নিরেট ম্যান্টেল বা গুরুমণ্ডল। ভূত্বকটি গুরুমণ্ডল থেকে পৃথক রয়েছে মোহোরোভিচিক বিচ্ছিন্নতা (Mohorovičić discontinuity) অংশ দ্বারা। ভূত্বকের পুরুত্ব মহাসাগরে নিচে প্রায় ৬ কিলোমিটার এবং মহাদেশের ক্ষেত্রে প্রায় ৩০-৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়ে থাকে। ভূত্বক এবং এর সাথে ঠান্ডা, দৃঢ় উপরের দিকের উর্দ্ধ গুরুমণ্ডলকে একসাথে বলা হয়ে থাকে লিথোস্ফিয়ার এবং লিথোস্ফিয়ার সেই অংশ যেখানে টেকটনিক প্লেটগুলো সংকুচিত অবস্থায় থাকে। লিথোস্ফিয়ারের পরের স্তরটি হল অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার, এটা এর উপরের স্তর থেকে কম সান্দ্রতা সম্পন্ন, এবং এর উপরে অবস্থান করে লিথোস্ফিয়ার নড়াচড়া করতে পারে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪১০ কি.মি. থেকে ৬৬০ কি.মি. গভীরতার মধ্যে গুরুমণ্ডলের ক্রিস্টাল কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন দেখা যায়, এখানে রূপান্তর অঞ্চলের একটি বিস্তারে পাওয়া যায়, যা উর্দ্ধ গুরুমণ্ডল ও নিম্ন গুরুমণ্ডলকে পৃথক করে। গুরুমণ্ডলের নিচে, অত্যন্ত সান্দ্রতা পূর্ণ একটি তরল বহিঃ ভূকেন্দ্র থাকে, যা একটি নিরেট অন্তঃ ভূকেন্দ্রের উপরে অবস্থান করে। পৃথিবীর অন্তঃ ভূকেন্দ্রের ঘূর্ণনের কৌণিক বেগ বাদবাকি ভূখন্ডের তুলনায় সামান্য বেশি হতে পারে, এটি প্রতি বছর ০.১–০.৫° বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। অন্তঃ ভূকেন্দ্রের পরিধি পৃথিবীর পরিধির তুলনায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ হয়ে থাকে।

পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক স্তর সমূহ
পৃথিবী: নাম ও ব্যুৎপত্তি, পৃথিবীর কালানুক্রমিক ইতিহাস, গাঠনিক বৈশিষ্ট্য 
পৃথিবীর অভ্যন্তরীন বিন্যাস

পৃথিবীর কাঁটা অংশ বিশেষ কেন্দ্র থেকে এক্সোস্ফিয়ার পর্যন্ত

স্কেল অনুসারে আঁকা নয়।

গভীরতা
কি.মি.
স্তরগুলোর নাম ঘনত্ব
গ্রাম/সেমি
০–৬০ লিথোস্ফিয়ার
০–৩৫ ভূত্বক ২.২–২.৯
৩৫–৬০ উর্দ্ধ গুরুমণ্ডল ৩.৪–৪.৪
  ৩৫–২৮৯০ গুরুমণ্ডল ৩.৪–৫.৬
১০০–৭০০ অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার
২৮৯০–৫১০০ বহিঃ ভূকেন্দ্র ৯.৯–১২.২
৫১০০–৬৩৭৮ অন্তঃ ভূকেন্দ্র ১২.৮–১৩.১

বাহ্যিক গঠন

পৃথিবীর উৎপত্তির সময় এটি ছিল একটি উত্তপ্ত গ্যাসের পিন্ড। উত্তপ্ত অবস্থা থেকে এটি শীতল ও ঘনীভূত হয়। এ সময় ভারী উপাদানগুলো এটির কেন্দ্রের দিকে জমা হয় আর হালকা উপাদানগুলো ভরের তারতম্য অনুসারে নিচ থেকে উপরে স্তরে স্তরে জমা হয়। পৃথিবীর এ সকল স্তর এক একটি মণ্ডল নামে পরিচিত। সবচেয়ে উপরে রয়েছে অশ্মমণ্ডল স্তর। অশ্মমণ্ডলের উপরের অংশকে ভূত্বক বলে। ভূত্বকের নিচের দিকে প্রতি কি.মি. বৃদ্ধিতে ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। ভূত্বকের উপরের ভাগে বাহ্যিক অবয়বগুলো যেমন -পর্বত, মালভূমি, সমভূমি ইত্যাদি থেকে থাকে। পৃথিবীর বাহ্যিক গঠন পৃথিবীর উপরিভাগের বৈচিত্রময় ভূমিরুপসমূহ নিয়ে সজ্জিত। পৃথিবীর প্রধান ভূমিরূপগুলো ভূপৃষ্ঠে সর্বত্র সমান নয়। আকৃতি, প্রকৃতি এবং গঠনগত দিক থেকে বেশকিছু পার্থক্য রয়েছে। ভূপৃষ্ঠে কোথাও রয়েছে উঁচু পর্বত, কোথাও পাহাড়, কোথাও মালভূমি। ভৌগোলিক দিক থেকে বিচার করলে পৃথিবীর সমগ্র ভূমিরূপকে ৩টি ভাগে ভাগ করা যায়।

এগুলো হলোঃ (১) পর্বত (২) মালভূমি (৩) সমভূমি।

সমুদ্রতল থেকে অন্তত ১০০০ মিটারের বেশি উঁচু সুবিস্তৃত ও খাড়া ঢালবিশিষ্ট শিলাস্তূপকে পর্বত বলে। সাধারণত ৬০০ থেকে ১০০০ মি. উঁচু স্বল্প সুবিস্তৃত শিলাস্তূপ কে পাহাড় বলে। পর্বতের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কয়েক হাজার মিটার পর্যন্ত হতে পারে। পর্বতের ভূপ্রকৃতি সাধারণত বন্ধুর প্রকৃতির হয়ে থাকে, এগুলোর ঢাল খুব খাড়া এবং সাধারণত চূড়াবিশিষ্ট হয়ে থাকে। পূর্ব আফ্রিকার কিলিমাঞ্জারোর মত কিছু পর্বত বিছিন্নভাবে অবস্থান করে। আবার হিমালয় পর্বতমালার মত কিছু পর্বত অনেকগুলো পৃথক শৃঙ্গসহ ব্যাপক এলাকা জুড়ে অবস্থান করে।

পর্বতের থেকে উঁচু কিন্তু সমভূমি থেকে উঁচু খাড়া ঢালযুক্ত ঢেউ খেলানো বিস্তীর্ণ সমতলভূমি কে মালভূমি বলে। মালভূমির উচ্চতা শত মিটার থেকে কয়েক হাজার মিটার পর্যন্ত হতে পারে। পৃথিবীর বৃহত্তম মালভূমির উচ্চতা ৪,২৭০ থেকে ৫,১৯০ মিটার।

সমুদ্রতল থেকে অল্প উঁচু মৃদু ঢালবিশিষ্ট সুবিস্তৃত ভূমিকে সমভূমি বলে। বিভিন্ন ভূপ্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যেমন -নদী, হিমবাহ ও বায়ুর ক্ষয় ও সঞ্চয় ক্রিয়ার ফলে সমভূমির সৃষ্টি হয়েছে। মৃদু ঢাল ও স্বল্প বন্ধুরতার জন্য সমভূমি কৃষিকাজ, বসবাস, রাস্তাঘাট নির্মাণের জন্য খুবই উপযোগী। তাই সমভূমিতে সবচেয়ে বেশি ঘন জনবসতি গড়ে উঠেছে।

তাপ

পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ তাপের উৎপত্তি হয় গ্রহের পরিবৃদ্ধির (প্রায় ২০%) ফলে সৃষ্ট তাপের অবশিষ্ট অংশ এবং তেজস্ক্রিয়তার (৮০%) ফলে সৃষ্ট তাপের সংমিশ্রণে। পৃথিবীতে থাকা সবচেয়ে বেশি তাপ উৎপাদনকারী আইসোটোপ গুলো হল পটাশিয়াম-৪০, ইউরেনিয়াম-২৩৮ এবং থোরিয়াম-২৩২ পৃথিবীর কেন্দ্রে তাপমাত্রা হতে পারে ৬,০০০ °সে (১০,৮৩০ °ফা) বা তারও বেশি, এবং চাপ গিয়ে পৌছাতে পারে ৩৬০ গিগা প্যাসকেল। যেহেতু অধিকাংশ তাপ সৃষ্টির মূল কারণ তেজস্ক্রিয়তা, তাই বিজ্ঞানীরা দাবি করেন যে পৃথিবীর ইতিহাসের শুরুর দিকে, তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ গুলোর অর্ধ-জীবন হ্রাসপাওয়ার পূর্বে, পৃথিবীর তাপ উৎপাদন ক্ষমতা আরও বেশি ছিল। প্রায় ৩ বিলিয়ন বছর আগে, বর্তমান সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুন তাপ উৎপন্ন হত, ফলাফলস্বরূপ গুরুমণ্ডলীয় পরিচলন ও ভূত্বকীয় পাতসমূহের গঠন প্রক্রিয়া দ্রুততর হয়েছিল, এবং একই সাথে কিছু বিরল আগ্নেয় শিলা যেমন কোমাটিটে তৈরি হয়েছিল, যা বর্তমানে কদাচিৎই তৈরি হয়।

বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বেশি তাপ উৎপন্নকারী আইসোটোপ সমূহ
আইসোটোপ তাপ উৎপন্ন
+ওয়াট/কেজি আইসোটোপ
অর্ধ-জীবন
বছর
গড় ম্যান্টেল কেন্দ্রীভূতকরণ
+কেজি আইসোটোপ/কেজি গুরুমণ্ডল
তাপ উৎপন্ন
+ওয়াট/কেজি গুরুমণ্ডল
২৩৮U ৯৪.৬ × ১০−৬ ৪.৪৭ × ১০ ৩০.৮ × ১০−৯ ২.৯১ × ১০−১২
২৩৫U ৫৬৯ × ১০−৬ ০.৭০৪ × ১০ ০.২২ × ১০−৯ ০.১২৫ × ১০−১২
২৩২Th ২৬.৪ × ১০−৬ ১৪.০ × ১০ ১২৪ × ১০−৯ ৩.২৭ × ১০−১২
৪০K ২৯.২ × ১০−৬ ১.২৫ × ১০ ৩৬.৯ × ১০−৯ ১.০৮ × ১০−১২

পৃথিবীর থেকে গড় তাপ হ্রাসের পরিমাণ হল ৮৭ মিলি ওয়াট/মিটার, সারা বিশ্বের তাপ হ্রাসের মান যেখানে ৪.৪২ × ১০১৩ওয়াট। কেন্দ্রের তাপীয় শক্তির একটি অংশ ভূত্বকের দিকে পরিবাহিত হয় গুরুমণ্ডলীয় তাপীয় শিলা দ্বারা, এটা হল এক ধরনের পরিচলন পদ্ধতিতে উচ্চতাপমাত্রার পাথরের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের উপরের দিকে তাপের প্রবাহ। এই তাপীয় শিলাগুলো হটস্পট এবং আগ্নেয় শিলার বন্যার সৃষ্টি করতে পারে। পৃথিবীর তাপ আরও নিঃসৃত হয় টেকটনিক প্লেটগুলোর ফাটলের মধ্য দিয়ে, মধ্য-সমুদ্র রিগের যে সকল স্থানের ক্ষেত্রে গুরুমণ্ডল উপরের দিকে ওঠে গেছে। তাপ হ্রাসের সর্বশেষ মাধ্যম হল লিথোস্ফিয়ার দিয়ে পরিবহন পদ্ধতিতে, আর এটির অধিকাংশটাই হয় সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে যেহেতু মহাদেশীয় ভূত্বকের তুলনায় সমুদ্রের ভূত্বকের পুরুত্ব কম হয়ে থাকে।

পৃথিবীর প্রধান ভূত্বকীয় পাত
পৃথিবী: নাম ও ব্যুৎপত্তি, পৃথিবীর কালানুক্রমিক ইতিহাস, গাঠনিক বৈশিষ্ট্য 
পাতের নাম এলাকা
১০ কি.মি.
  প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাত
১০৩.৩
  আফ্রিকার পাত
৭৮.০
  উত্তর আমেরিকার পাত
৭৫.৯
৬৭.৮
  এন্টার্কটিকার পাত
৬০.৯
৪৭.২
  দক্ষিণ আমেরিকার পাত
৪৩.৬

ভূত্বকীয় পাতসমূহ

পৃথিবীর কাঠামোর বাহিরের দিকের দৃঢ় অনমনীয় স্তর, যা লিথোস্ফিয়ার নামে পরিচিত, বেশ কিছু টুকরায় বিভক্ত, এগুলো হল টেকটনিক পাত বা ভূত্বকীয় পাত। এই পাতগুলি হল সুদৃঢ় অংশবিশেষ যা নড়াচড়া করতে পারে একটির সাপেক্ষে আরেকটি, মোট তিন ধরনের যে কোন এক ধরনের পাত সীমার মধ্যে থেকে, এই পাত সীমা গুলো হল: অভিসারমুখী সীমা, এ ক্ষেত্রে দুটি পাত একটি অপরটির দিকে পরস্পরগামী ভাবে অগ্রসর হয়, বিমুখগামী সীমা এ ক্ষেত্রে দুটি পাত পরস্পরের বিপরীতমুখী ভাবে অগ্রসর হতে থাকে এবং পরিবর্তক সীমা, দুটি টেকটনিক পাত যখন সমান্তরাল ভাবে একে অন্যের বিপরীতে সরতে থাকে। ভূমিকম্প, অগ্নুৎপাত, পর্বত গঠন, এবং মহাসাগরীয় খাতের গঠন প্রক্রিয়া ঘটে থাকে এই তিনটি ধরনের পাত সীমার ক্রিয়ার ফলে। ভূত্বকীয় পাতগুলো চলাচল করে অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার অঞ্চলের উপরে, এটি উর্দ্ধ গুরুমণ্ডলের কঠিন কিন্তু কম সান্দ্রতাপূর্ণ অংশ, যা সঞ্চালিত হতে পারে ও নড়াচড়া করতে পারে পাতগুলোর সাথে।

পৃথিবী: নাম ও ব্যুৎপত্তি, পৃথিবীর কালানুক্রমিক ইতিহাস, গাঠনিক বৈশিষ্ট্য 
পর্বত গড়ে ওঠে যখন ভূত্বকীয় পাতসমূহ একে অন্যের দিকে এগিয়ে যায়, ফলশ্রুতিতে পাতের উপরের দিকে থাকা শীলা উপরের দিকে উঠে যায়। পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত হল মাউন্ট এভারেস্ট

ভূত্বকীয় পাতগুলোর এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সঞ্চালনের সাথে সাথে, মহাসাগরীয় ভূত্বকে সাবডাকশন ঘটে অভিসারমুখী সীমায় ক্রিয়ারত পাতগুলোর সম্মুখভাগের চাপে। ঠিক একই সময়ে, গুরুমণ্ডলের উপাদানের প্রবাহের ফলে মধ্য-সমুদ্র রিগের সৃষ্টি হয় বিমুখগামী সীমার ক্রিয়ার ফলে। এই প্রক্রিয়াগুলির সংমিশ্রণ মহাসাগরীয় ভূত্বকের রিসাইকেল করে আবার গুরুমণ্ডলে পাঠিয়ে দেয়। এই রিসাইকেলের ফলে, মহাসাগরীয় ভূত্বকের বেশিরভাগের বয়স ১০০ মিলিয়ন বছরের বেশি নয়। সবচেয়ে পুরাতন মহাসাগরীয় ভূত্বকটির অবস্থান ওয়েস্টার্ন প্যাসিফিকে যার অনুমানিক বয়স ২০০ মিলিয়ন বছর। তুলনা করা হলে যেখানে সবচেয়ে পুরাতন মহাদেশীয় ভূত্বকের বয়স প্রায় ৪০৩০ মিলিয়ন বছর।

সাতটি প্রধান টেকটনিক বা ভূত্বকীয় পাত হল প্রশান্ত মহাসাগরীয়, উত্তর আমেরিকান, ইউরেশীয়, আফ্রিকান, অ্যান্টার্কটিক, ইন্দো-অস্ট্রেলীয়, এবং দক্ষিণ আমেরিকান। অন্যান্য কিছু অপ্রধান পাত হল, আরবীয় পাত, ক্যারিবীয় পাত, নাজকা পাত যা দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত এবং দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের স্কটিয়া পাত। ৫০ থেকে ৫৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে অস্ট্রেলীয়ান পাতটি ভারতীয় পাতটির সাথে সুদৃঢ় ভাবে সংযুক্ত হয়ে যায়। সবচেয়ে দ্রুত সঞ্চলনশীল পাত হল মহাসাগরীয় পাত, যেমন কোকোস পাত, এটি সঞ্চালিত হচ্ছে ৭৫ মিলি/বছর বেগে ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাত, যা সঞ্চালিত হচ্ছে ৫২–৬৯ মিলি/বছর বেগে। অপর দিকে, সবচেয়ে ধীর সঞ্চালনশীল পাত হল ইউরেশীয় পাত, এটির সঞ্চালনের সাধারণ গতি বেগ হল ২১ মিলি/বছর।

ভূপৃষ্ঠ

পৃথিবী: নাম ও ব্যুৎপত্তি, পৃথিবীর কালানুক্রমিক ইতিহাস, গাঠনিক বৈশিষ্ট্য 
বর্তমান সময়ের পৃথিবীর উচ্চতামিতি এবং বাথীমেট্রি। তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে ন্যাশনাল জিওফিজিক্যাল ডাটা সেন্টার থেকে।
পৃথিবী: নাম ও ব্যুৎপত্তি, পৃথিবীর কালানুক্রমিক ইতিহাস, গাঠনিক বৈশিষ্ট্য 
বর্তমান পৃথিবীটি দেখতে এই রকম - যদি এতে পানি না থাকে। (ক্লিক করুন/কিংবা বড় করুন ৩ডি গ্লোব আকারে এর "ঘূর্ণন" দেখতে।

পৃথিবীর মোট পৃষ্ঠতলের আকার হল প্রায় ৫১০ মিলিয়ন বর্গ কি.মি. (বা ১৯৭ মিলিয়ন বর্গ মাইল)। যার মধ্যে, ৭০.৮%, বা ৩৬১.১৩ মিলিয়ন বর্গ কি.মি. (১৩৯.৪৩ মিলিয়ন বর্গ মাইল), হল সমুদ্র পৃষ্ঠতলের নিচে ও এই অংশ সমুদ্রের পানি দ্বারা আচ্ছাদিত। সমুদ্র পৃষ্ঠতলের নিচেই রয়েছে অধিকাংশ মহীসোপান, পর্বতমালা, আগ্নেয়গিরি, সামুদ্রিক খাত, ডুবো গিরিখাত, সামুদ্রিক মালভূমি, গভীর সামুদ্রিক সমতল, এবং সারা পৃথিবী ব্যাপী বিসৃত মধ্য-সমুদ্র রিগ সিস্টেম। আর বাকি ২৯.২% অংশ বা ১৪৮.৯৪ বর্গ কি.মি. (বা ৫৭.৫১ মিলিয়ন বর্গ মাইল) যা পানি দ্বারা আচ্ছাদিত নয় ভূখণ্ডটি স্থানে স্থানে পরিবর্তিত এবং এতে রয়েছে পর্বত, মরুভূমি, সমতল, মালভূমি ও অন্যান্য ভূমিরূপ। অপসারণ ও অবক্ষেপণ, বিভিন্ন আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, বন্যা, মৃত্তিকা আবহবিকার, হিমবাহ ক্ষয়ীভবন, প্রবালপ্রাচীরের বৃদ্ধি এবং উল্কা পিন্ডের আঘাত ইত্যাদি হল সেই সকল ক্রিয়াশীল প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের আকার পরিবর্তন ঘটছে ভূতাত্ত্বিক সময় যাওয়ার সাথে সাথে।

মহাদেশীয় ভূত্বকে কম ঘনত্বের উপাদান পাওয়া যায়, আগ্নেয় শিলা যেমন: গ্রানাইট ও অ্যান্ডেসাইট। সবচেয়ে কম পাওয়া যায় ব্যাসল্ট, যা হল অধিক ঘনত্বের আগ্নেয় শিলা, এটি হল মহাসাগরীয় ভূত্বক গঠনের মূল উপাদান। পাললিক শিলা গঠনের ক্ষেত্রে, পলি ক্রমানয়ে সঞ্চিত হয়ে এক সময় অন্য শিলার চাপে দেবে যায় এবং এরপর এক সাথে জমাট বাঁধে যায়। মহাদেশীয় ভূত্বকের প্রায় ৭৫% পাললিক শিলা দ্বারা আচ্ছাদিত, যদিও তা পৃথিবীর মোট ভূত্বকের মাত্র ৫% অংশ। আর পৃথিবীতে পাওয়া যাওয়া তৃতীয় ধরনের শিলা হল রূপান্তরিত শিলা, উচ্চ চাপে, উচ্চ তাপে কিংবা উভয়ের একসাথে ক্রিয়ার ফলে আগ্নেয় শিলা ও পাললিক শিলা রূপান্তরিত হয়ে এটি গঠিত হয়। পৃথিবীতে অজস্র পরিমাণে পাওয়া যাওয়া যে সকল সিলিকেট খনিজ সেগুলোর মধ্যে রয়েছে কোয়ার্জ, ফেল্ডস্পার, অ্যাম্ফিবোল, মাইকা, পাইরক্সিন এবং অলিভিন। সাধারণত পাওয়া যাওয়া কার্বনেট খনিজ গুলোর মধ্যে রয়েছে ক্যালসাইট (যা পাওয়া যায় চুনাপাথর) ও ডলোমাইট উভয়ে।

পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা পরিবর্তিত হতে পারে সর্বনিম্ন ৪১৮ মিটার যার অবস্থান মৃত সাগর এবং সর্বোচ্চ উচ্চতা হতে পারে ৮,৮৪৮ মিটার হিমালয় পর্বতের চূড়ায়। সমুদ্র পৃষ্ঠতলের উপরে পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা ৮৪০ মিটার।

প্যাডোস্ফিয়ার হল পৃথিবীর মহাদেশীয় পৃষ্ঠের বাইরের সর্বোচ্চ স্তর এবং এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত মাটি ও মাটির গঠন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত বিষয়। মোট ভূপৃষ্ঠের ১০.৯% ভূমি হল আবাদী জায়গা, এর মধ্যে ১.৩% হল স্থায়ী শস্যভূমি। পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের প্রায় ৪০% অংশ ব্যবহার করা হয় শষ্যভূমি ও চরণভূমি হিসাবে, আবার অরেকটি হিসাব থেকে জানা যায় ১.৩ × ১০ কি.মি. হল শষ্যভূমি ও ৩.৪ × ১০ কি.মি. হল চরণভূমি।

জলমণ্ডল

পৃথিবী: নাম ও ব্যুৎপত্তি, পৃথিবীর কালানুক্রমিক ইতিহাস, গাঠনিক বৈশিষ্ট্য 
পৃথিবী পৃষ্ঠের উচ্চতার হিস্টোগ্রাম

পৃথিবী পৃষ্ঠে পানির প্রাচুর্য হল সেই অনন্য বৈশিষ্ট্য যা সৌর জগতের অন্যান্য গ্রহ থেকে এই "নীল গ্রহটি"কে পৃথক করেছে। পৃথিবীর জলমণ্ডলের মধ্যে বিশেষভাবে অন্তর্ভুক্ত মহাসাগরগুলো, কিন্তু যৌক্তিকভাবে পৃথিবী পৃষ্ঠের সকল পানি জলমণ্ডলের অন্তর্ভুক্ত, এটির মধ্যে রয়েছে ভূমির ভেতর দিকে থাকা সমুদ্র, লেক, নদী এবং এমনকি মাটির নিচের ২,০০০ মিটার নিচে থাকা পানিও এটার অন্তর্ভুক্ত। পৃষ্ঠতলের নিচে থাকা পানির সবচেয়ে গভীরতমটি হল প্রশান্ত মহাসাগরে থাকা মারিয়ানা খাতের চ্যালেঞ্জার ডিপ যার গভীরতা হল ১০,৯১১.৪ মিটার।

মহাসাগরগুলোর অনুমানিক ভর হল প্রায় ১.৩৫×১০১৮ মেট্রিক টন যা মোটামুটি পৃথিবীর মোট ভরের ১/৪৪০০ অংশ। মহাসাগরগুলোর মোট পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল হল ৩.৬১৮×১০ কি.মি., আর গড় গভীরতা হল ৩৬৮২ মিটার, ফলাফল হিসাবে এটির আয়তন হল ১.৩৩২×১০ কি.মি.। যদি পৃথিবীর সমুদ্র উপকূলের পৃষ্ঠের উচ্চতা সব জায়গায় সমান হত মসৃণ উপগোলকের মত, তাহলে পৃথিবীর মহাসাগরগুলোর গভীরতা হত ২.৭ থেকে ২.৮ কি.মি.

পৃথিবীর মোট পানির প্রায় ৯৭.৫% হল লবণাক্ত; আর বাদবাকি ২.৫% হল মিঠা পানি। বেশিরভাগ মিঠা পানি, প্রায় ৬৮.৭%, উপস্থিত রয়েছে বরফ হিসাবে আইস ক্যাপে এবং হিমবাহ রূপে।

পৃথিবীর মহাসাগরগুলোর গড় লবণাক্ততা হল প্রায় ৩৫ গ্রাম লবণ প্রতি কিলোগ্রাম লবণাক্ত পানিতে (৩.৫% লবণ)। এই লবণের বেশিরভাগ পানিতে সংযুক্ত হয়েছে অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনার ফলে বা নির্গত হয়েছে ঠান্ডা আগ্ন্যেয় শীলা থেকে। মহাসাগরগুলি দ্রবীভূত বায়ুমণ্ডলীয় গ্যাসগুলোর একটি আধারও বটে, যেগুলো অত্যন্ত অত্যাবশ্যকীয় বিভিন্ন জলজ জীবন ধারণের জন্য। সাগরের পানি বিশ্বের জলবায়ুর উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে, যেখানে এটি কাজ করে একটি বৃহৎ তাপীয় আধার হিসাবে। মহাসাগরের তাপমাত্রার বণ্টনের ক্ষেত্রে যে কোন পরিবর্তন উল্লেখযোগ্য ভাবে পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তন করতে পারে, উদাহারণস্বরূপ এল নিনো।

বায়ুমণ্ডল

পৃথিবী: নাম ও ব্যুৎপত্তি, পৃথিবীর কালানুক্রমিক ইতিহাস, গাঠনিক বৈশিষ্ট্য 
নাসার মোডারেট-রেজোলিউশন ইমেজিং স্পেকট্রোরেডিওমিটার ব্যবহার করে উপগ্রহ থেকে তোলা পৃথিবীর মেঘাচ্ছন্ন ছবি

বায়ুমণ্ডল গ্যাসের একটি আস্তরণ যা পর্যাপ্ত ভরসম্পন্ন কোন বস্তুর চারদিকে ঘিরে জড়ো হয়ে থাকতে পারে। বস্তুটির অভিকর্ষের কারণে এই গ্যাসপুঞ্জ তার চারদিকে আবদ্ধ থাকে। বস্তুর অভিকর্ষ যদি যথেষ্ট বেশি হয় এবং বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা যদি কম হয় তাহলে এই মণ্ডল অনেকদিন টিকে থাকতে পারে। গ্রহসমূহের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের গ্যাস জড়ো হতে দেখা যায়। এ কারণে গ্রহের বায়ুমণ্ডল সাধারণ অপেক্ষাকৃত ঘন এবং গভীর হয়। পৃথিবীর চারপাশে ঘিরে থাকা বিভিন্ন গ্যাস মিশ্রিত স্তরকে পৃথিবী তার মধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা ধরে রাখে, একে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল বা আবহমণ্ডল বলে। এই বায়ুমণ্ডল সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে পৃথিবীতে জীবের অস্তিত্ব রক্ষা করে। এছাড়ও তাপ ধরে রাখার মাধ্যমে (গ্রীনহাউজ প্রতিক্রিয়ায়) ভূপৃষ্টকে উওপ্ত রাখে এবং দিনের তুলনায় রাতের তাপমাত্রা হ্রাস রোধ করে।

৮.৫ কি.মি. উচ্চতা স্কেলযুক্ত বায়ুমণ্ডল পৃথিবী পৃষ্ঠে গড় বায়ুমণ্ডলীয় চাপ প্রয়োগ করছে ১০১.৩২৫ কিলো প্যাসকেল। এটা গঠিত হয়েছে ৭৮% নাইট্রোজেন এবং ২১% অক্সিজেন দ্বারা, এর সাথে সামান্য পরিমাণে রয়েছে জলীয় বাষ্প, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য গ্যাসীয় উপাদান। ট্রপোস্ফিয়ারের উচ্চতার পরিবর্তন হয় অক্ষাংশ পরিবর্তনের সাথে সাথে, যার মান হতে পারে মেরু অংশে ৮ কি.মি. ও নিরক্ষরেখার ক্ষেত্রে ১৭ কি.মি.। তবে এই মানের কিছু বিচ্যুতি হয়ে থাকে আবহাওয়া ও ঋতু পরিবর্তনের কারণে।

পৃথিবীর জীবমণ্ডল উল্লেখযোগ্যভাবে এটির বায়ুমণ্ডলের পরির্তন সাধন করেছে। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় অক্সিজেনের উৎপাদন বিকাশ লাভ করে ২.৭ বিলিয়ন বছর আগে, গঠন করে আজকের মূল নাইট্রোজেন-অক্সিজেন বায়ুমণ্ডল। এর ফলশ্রুতিতে বায়ুজীবী জীবদের বিকাশ লাভ ত্বরান্বিত হয় এবং পরোক্ষভাবে, এটি ওজোন স্তর গঠন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে, এটির কারণ হল পরবর্তীতে ঘটা বায়ুমণ্ডলীয় O2 থেকে O3 তে পরিবর্তন। ওজন স্তর সৌর বিকিরণের অতিবেগুনী রশ্মিকে আটকিয়ে দিয়ে, ভূমিতে প্রাণের বিকাশে সহায়তা করে। অন্যান্য বায়ুমণ্ডলীয় কর্মকাণ্ড যা জীবন ধারণের জন্য জরুরি তার মধ্যে রয়েছে জলীয় বাষ্পের সঞ্চালন, অতিপ্রয়োজনীয় গ্যাসগুলির সরবরাহ, ছোট উল্কাপিন্ড পৃথিবী পৃষ্ঠে আঘাত হানার পূর্বে তা পুড়িয়ে ফেলা এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা। সর্বশেষ কর্মকান্ডটি পরিচিত গ্রীনহাউজ প্রতিক্রিয়া নামে: বায়ুমণ্ডলের চিহ্নিত কিছু গ্যাসীয় অণু ভূ-পৃষ্ঠ হতে বিকীর্ণ তাপ শক্তি শোষন করে পুনরায় বায়ুমণ্ডলের অভ্যন্তরে বিকিরিত করে, বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা বাড়িয়ে তোলে। জলীয় বাষ্প, কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, এবং ওজন হল বায়ুমণ্ডলের মূল গ্রীনহাইজ গ্যাস। এই তাপ ধারণের ঘটনাটি না থাকলে, ভূ-পৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা হত −১৮ °সে, বিপরীত দিকে বর্তমান তাপমাত্রা হল +১৫ °সে, এবং এটা এর বর্তমান অবস্থায় না থাকলে পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ ঘটত না। মে ২০১৭ সালে, কক্ষপথে থাকা একটি স্যাটেলাইট থেকে এক মিলিয়ন মাইল দূরে হঠাৎ ক্ষণিকের জন্য একটি আলোর ঝলকানি দেখা যায়, পরে জানা যায় বায়ুমণ্ডলে থাকা বরফ স্ফটিক থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে এটি ঘটেছিল।

আবহাওয়া এবং জলবায়ু

আবহাওয়া হলো কোনো স্থানের স্বল্প সময়ের বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থা। সাধারণত এক দিনের এমন রেকর্ডকেই আবহাওয়া বলে। আবার কখনও কখনও কোনো নির্দিষ্ট এলাকার স্বল্প সময়ের বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থাকেও আবহাওয়া বলা হয়। আবার কোনো স্থানের দীর্ঘ সময়ের আবহাওয়ার উপাত্তের ভিত্তিতে তৈরি হয় সে স্থানের জলবায়ু। আবহাওয়া নিয়ত পরিবর্তনশীল একটি চলক।

হ্যারিকেন ফেলিক্স, পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথ থেকে তোলা ছবি, সেপ্টেম্বর, ২০০৭।
মাউন্ট ডিসকভারির কাছে চাপযুক্ত শৈলশ্রেণীর সাথে লেন্স আকার মেঘ, অ্যান্টার্কটিকা, নভেম্বর ২০১৩।
মযেভা মরুভূমির উপরে ভারী মেঘমালা, ফেব্রুয়ারি ২০১৬।

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের কোন সুনির্দিষ্ট সীমানা নেই, ধীরে ধীরে পাতলা এবং হালকা হয়ে বহিঃমহাকাশের সাথে মিশে গেছে। বায়ুমণ্ডলের তিন চতুর্থাংশের ভর রয়েছে এটির মোট অংশের প্রথম ১১ কিমি (৬.৮ মা) এর মধ্যে। এর সবচেয়ে নিচের স্তরটির নাম হল ট্রপোস্ফিয়ার। সূর্য থেকে আসা তাপের প্রভাবে এই স্তরটি এবং এর নিচে থাকা ভূ-পৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয়, ফলশ্রুতিতে বাতাসের সম্প্রসারণ ঘটে। এই নিম্ন ঘনত্বের বাতাস উপরের দিকে উঠে যায় এবং এটির জায়গা দখল করে ঠান্ডা, উচ্চ ঘনত্বের বাতাস। ফলে বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয়, যা তাপমাত্রার পুনঃবিন্যাস করে আবহাওয়া ও জলবায়ুকে বিভিন্ন স্থানে সঞ্চালিত করে।

মূল বায়ুপ্রবাহের ধারার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত অয়ন বায়ু (Trade Wind), নিরক্ষীয় অঞ্চলের ৩০° অক্ষাংশ নিচে এবং পশ্চিমা বায়ু (westerlies) মধ্য-অক্ষাংশ বরাবর ৩০° থেকে ৬০° এর মধ্যে। মহাসাগরীয় স্রোত জলবায়ু নির্ধারণের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক, থার্মোহ্যালাইন প্রবাহ (thermohaline circulation) যা তাপ শক্তিকে বিতরণ করে নিরক্ষীয় সমুদ্র অঞ্চল থেকে ঠান্ডা মেরু অঞ্চলে।

ভূ-পৃষ্ঠ থেকে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে যে জলীয় বাষ্প উৎপন্ন হয় তা কিছু বিন্যাস অনুসরন করে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্থানে সঞ্চালিত হয়। যখন বায়ুমণ্ডলীয় পরিবেশ গরম, আদ্রর্তাযুক্ত বাতাসকে, উপরের দিকে উঠার সুযোগ করে দেয়, তখন এই পানি ঘনীভূত হয় এবং ভূ-পৃষ্ঠের দিকে অধ:ক্ষিপ্ত ভাবে পতিত হয়। বেশির ভাগ পানি এরপর নিম্নভূমির দিকে ধাবিত হয় নদী নালার মাধ্যমে এবং সাগরে পুনরায় পৌছায় কিংবা এটি জমা হয় কোন হ্রদে। ভূমিতে জীবন ধারণের জন্য এই পানি চক্রটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া এবং কোন একটি ভূতত্ত্বিক সময়ের মধ্যে ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন গঠনের ভূমিক্ষয়ের জন্য এটি মূল কারণ। বৃষ্টিপাত পতনের বিন্যাস পরিবর্তিত হয় ব্যাপক ভাবে, যার মাত্রা হতে পারে প্রতি বছর কয়েক মিটার থেকে এক মিলিমিটারের থেকেও কম। বায়ুপ্রবাহ, অবস্থানগত বৈশিষ্ট্য ও তাপমাত্রার পার্থক্য - নির্ধারন করে কোন অঞ্চলে পতিত হওয়া গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ।

পৃথিবী পৃষ্ঠে সৌর শক্তির পরিমাণ কমতে থাকে অক্ষাংশের মান বাড়তে থাকার সাথে সাথে। উচ্চ অক্ষাংশে, সূর্যের আলো ভূ-পৃষ্ঠে পৌছায় নিম্ন কোণে, এবং এটিকে পার করতে হয় বায়ুমণ্ডলের পুরু স্তর। ফলাফলস্বরূপ, নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে প্রতি ডিগ্রী অক্ষাংশ পরিবর্তনে সমুদ্র সমতল থেকে গড় বার্ষিক বায়ুর তাপমাত্রা হ্রাস পায় প্রায় ০.৪ °C (০.৭ °F)। পৃথিবী পৃষ্ঠকে কিছু সুনির্দিষ্ট অক্ষ রেখায় উপবিভাজন করা যায় যেখানে মোটামুটি একই রকম জলবায়ু বিরাজ করে। নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চল পর্যন্ত বিরাজমান এই জলবায়ুগুলো হল ক্রান্তীয় জলবায়ু (বা নিরক্ষীয়),উপক্রান্তীয় জলবায়ু (subtropical), নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু এবং পৃথিবীর মেরু অঞ্চলের জলবায়ু।

এই অক্ষাংশ নিয়মের কিছু ব্যতয় রয়েছেঃ

  • জলবায়ু নিয়ন্ত্রিত হয় যদি কাছাকাছি কোথায় সমুদ্র থাকে। উদাহারণস্বরূপ, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান পেনিনসুলায় (Scandinavian Peninsula) অনেক সহনীয় জলবায়ু এটির সমগোত্রীয় উত্তর অক্ষাংশে অবস্থিত উত্তর কানাডার তুলনায়।
  • বায়ু সহনীয় পরিবেশ বজায় রাখতে সহায়তা করে। ভূমির বায়ুবাহিত দিক এটির বায়ুপ্রবাহ বিহীন দিকের তুলনায় অনেক সহনীয় অবস্থা অনুভব করে। পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে, বাতাস প্রবাহিত হয় পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে, এবং পশ্চিম তীর কোমল হয়ে থাকে পূর্ব তীরের তুলনায়। এটা দেখা যায় উত্তর আমেরিকার পূর্বাংশে এবং পশ্চিম ইউরোপে, সমুদ্রের উভয় দিকে পাশাপাশি কোমল জলবায়ু থাকলেও অন্যদিকে বন্ধুর জলবায়ু দেখা যায় এটির পূর্ব তীরের দিকে। দক্ষিণ গোলার্ধে, বাতাস প্রবাহিত হয় পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে, এবং পূর্ব তীরের জলবায়ু কোমল হয়ে থাকে।
  • সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব পরিবর্তিত হয়। পৃথিবী সূর্যের সবচাইতে কাছে থাকে (অণুসূরবিন্দুতে) জানুয়ারি মাসে, যেটা দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল। পৃথিবী সূর্য থেকে সবচাইতে দূরে থাকে (অপদূরবিন্দুতে) জুলাই মাসে, যেটা উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল, এবং অনুসূরবিন্দুর তুলনায় সূর্য থেকে আসা সৌর বিকিরণের মাত্র ৯৩.৫৫% পতিত হয় ভূমির কোন নিদির্ষ্ট বর্গ এলাকায়। এটা সত্ত্বেও, উত্তর গোলার্ধে ভূমির আকার অনেক বড়, যা সমদ্রের তুলনায় অনেক সহজে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সুতরাং, গ্রীষ্মকাল ২.৩ °C (৪ °F) উষ্ম হয়ে থাকে উত্তর গোলার্ধে, দক্ষিণ গোলার্ধের তুলনায় অনুরূপ পরিবেশ থাকা শর্তেও।
  • সমুদ্র সমতল থেকে অধিক উচ্চ ভূমির ক্ষেত্রে জলবায়ু অনেক ঠান্ডা থাকে কারণ সেখানে বাতাসের ঘনত্ব কম থাকে।

বহুল ব্যবহৃত কোপ্পেন জলবায়ু শ্রেণিবিভাগ (Köppen climate classification) পাঁচটি বৃহৎ ভাগে বিভক্ত (আর্দ্র ক্রান্তীয়, শুষ্ক, আর্দ্র মধ্য অক্ষাংশ, মহাদেশীয় এবং ঠান্ডা মেরু), যা পরবর্তীতে আরও বিভাজন করা হয় বিভিন্ন উপভাগে। কোপ্পান ব্যবস্থায় বিভিন্ন ভূ-অঞ্চলের মান প্রদান করে তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের উপর পর্যবেক্ষণ করে।

পৃথিবীতে বায়ুর সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয়েছিল ৫৬.৭ °সে (১৩৪.১ °ফা) ফুরনেসা ক্রিক, ক্যালিফর্নিয়ার, ডেথ ভ্যালিতে, ১৯১৩ সালে। পৃথিবীতে কখনো সরাসরি মাপা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল −৮৯.২ °সে (−১২৮.৬ °ফা) ভোস্টোক স্টেশন ১৯৮৩ সালে। কিন্তু উপগ্রহে থাকা রিমোট সেন্সর ব্যবহার করে পরিমাপ করা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল −৯৪.৭ °সে (−১৩৮.৫ °ফা) পূর্ব অ্যান্টারর্টিকা। এই তাপমাত্রার রেকর্ড হল শুধুমাত্র কিছু পরিমাপ যা আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ২০শ শতকের শুরু থেকে মান নেয়া শুরু করা হয় এবং সৌভাগ্য বশত এটা পৃথিবীর তাপমাত্রা পূর্ণ মাত্রা প্রকাশ করে না।

উচ্চতর বায়ুমণ্ডল

পৃথিবী: নাম ও ব্যুৎপত্তি, পৃথিবীর কালানুক্রমিক ইতিহাস, গাঠনিক বৈশিষ্ট্য 
পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে দেখা যাওয়া এই পূর্ণ চাঁদটিকে আংশিকভাবে আচ্ছন্ন করে রেখেছে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল।

ট্রপোমণ্ডলের উপরের বায়ুমণ্ডলকে সাধারণত স্ট্রাটোমণ্ডল, মেসোমণ্ডল ও তাপমণ্ডলে ভাগ করা হয়ে থাকে। প্রতিটি স্তরের ভিন্ন ভিন্ন ল্যাপস রেট থাকে, যা দ্বারা উচ্চতা পরিবর্তনের সাথে তাপমাত্রার পরিবর্তন নির্দেশ করে। এরপর থেকে এক্সোমণ্ডল হালকা হতে হতে চৌম্বকমণ্ডলে মিলিয়ে যায়, যেখানে ভূ-চৌম্বকীয় ক্ষেত্রসমূহ সৌরবায়ুর সাথে মিথষ্ক্রিয়া করে থাকে। স্ট্রাটোমণ্ডলের মধ্যে রয়েছে ওজন স্তর, এটা হল সেই উপাদান যা ভূ-পৃষ্ঠকে সূর্যের অতিবেগুণী রশ্মির হাত হতে প্রকৃত পক্ষে রক্ষা করে এবং তাই, পৃথিবী প্রাণী জগতের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কার্মান রেখা, টিকে সংজ্ঞায়িত করা যায় এভাবে, এটি পৃথিবী পৃষ্ঠ হতে ১০০ কি.মি. উপরে থাকে, এবং এটা হল পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল এবং মহাকাশের মধ্যে কার্যকর সীমা রেখা।

তাপশক্তির কারণে বায়ুমণ্ডলের বাইরের প্রান্তে থাকা কিছু অনুর ভেতর গতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং এক পর্যায়ে এগুলো পৃথিবীর অভিকর্ষ শক্তিকে ছিন্ন করে মহাকাশে বেড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়। এই ঘটনার ফলে ধীরে কিন্তু নিয়মিতভাবে বায়ুমণ্ডল মহাকাশে হারিয়ে যায়। যেহেতু মুক্ত হাইড্রোজেনের আণবিক ভর সবচাইতে কম, এটা অতি দ্রুত নির্দ্ধিধায় মুক্তিবেগ অর্জন করতে পারে, এবং এটির অন্যান্য গ্যাসের তুলনায় অধিক হারে বাইরের মহাকাশে বহির্গমন ঘটে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের পরিবর্তনের পিছনে মহাকাশে হাইড্রোজেন গ্যাসের হারিয়ে যাওয়া একটি অন্যতম কারণ এবং এটা প্রাথমিকভাবে ঘটে একটি জারণ বিক্রিয়া থেকে এটির বর্তমান বিজারণ বিক্রিয়ায় আসায়। সালোকসংশ্লেষনের ফলে অক্সিজেনের সৃষ্টি হয়, কিন্তু ধারণা করা হয় জারণের ফলে নির্গত উপাদান যেমন হাইড্রোজেন হল বায়ুমণ্ডলে ব্যাপক হারে অক্সিজেনের সঞ্চয়নের পেছনে মূল পূর্বশর্ত। অতএব, হাইড্রোজেনের বায়ুমণ্ডল থেকে মুক্ত হওয়ার ঘটনা হয়তোবা পৃথিবীতে প্রাণের যে বিকাশ ঘটেছে তার গতি-প্রকৃতির উপর প্রভাব রেখেছে। বর্তমানে অক্সিজেন সমৃদ্ধ বায়ুমণ্ডলের বেশিরভাগ হাইড্রোজেন পরিণত হয় পানিতে, এটি বায়ুমণ্ডল থেকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবার আগেই। এটির বদলে, হারিয়ে যাওয়া বেশিরভাগ হাইড্রোজেন উৎপন্ন হয় উচ্চতর বায়ুমণ্ডলে পুড়ানো মিথেনের ফলশ্রুতিতে।

অভিকর্ষজ ক্ষেত্র

পৃথিবী: নাম ও ব্যুৎপত্তি, পৃথিবীর কালানুক্রমিক ইতিহাস, গাঠনিক বৈশিষ্ট্য 
নাসা জিআরএসিই নিরীক্ষার মাধ্যমে পৃথিবীর অভিকর্ষজ বলের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, এখানে যা প্রদর্শন করছে তাত্ত্বিক মাধ্যাকর্ষণের সাথে স্থানীয় মাধ্যাকর্ষণের পার্থক্য। সুষম, স্ট্যান্ডার্ড মানের থেকে লাল অংশগুলোতে মাধ্যাকর্ষণ বলের মাত্রা অনেক শক্তিশালী এবং অপরদিকে নীল অংশগুলোতে এটি দূর্বল।

পৃথিবীর অভিকর্ষজ বল হল সেই ত্বরণ যা পৃথিবীর সাথে কোন একটি বস্তুর উপর ক্রিয়া করে বস্তুটির ভরের কারণে। ভূ-পৃষ্ঠের উপর, অভিকর্ষজ ত্বরণ হল প্রায় ৯.৮ মি/সে (৩২ ফুট/সে)। কোন স্থানের ভূসংস্থান, ভূতত্ত্ব এবং গভীর ভূত্বকীয় গঠনের পার্থক্যের কারণে স্থানীয় ও বৃহৎ অঞ্চলের পৃথিবীর অভিকর্ষজ বলের মানের পরিবর্তন হয়ে থাকে, যাকে বলা হয়ে থাকে মাধ্যাকর্ষীয় ব্যত্যয়।

চৌম্বক ক্ষেত্র

পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের মূল অংশটি উৎপন্ন হয় এর ভূ-কেন্দ্রে, ডায়নামো প্রক্রিয়ার, তাপীয় ভাবে ও গাঠিনিক ভাবে উৎপন্ন গতিশক্তির পরিবর্তন ঘটে পরিচলন পদ্ধতিতে পরিবাহিত হয় তড়িৎ শক্তি ও চৌম্বক শক্তিতে। চৌম্বক ক্ষেত্রটি ভূ-কেন্দ্রে থেকে পৃথিবীর বাইরের দিকে ছড়িয়ে যায়, গুরুমণ্ডল ভেদ করে, পৃথিবীর পৃষ্ঠ পর্যন্ত, যেখানে এটা মোটামুটি একটি ডাইপোল। ডাইপোলের মেরুগুলোর অবস্থান পৃথিবীর ভৌগোলিক মেরুর কাছাকাছি। ভূ-পৃষ্ঠের উপর নিরক্ষরেখা বরাবর, চৌম্বক ক্ষেত্রটির চৌম্বক শক্তির পরিমাণ হল ৩.০৫ × ১০−৫ টেসলা, একই সাথে বৈশ্বিক চৌম্বকীয় ডাইপোল মোমেন্ট হল ৭.৯১ × ১০১৫ টেসলা মিটার। ভূ-কেন্দ্রে হতে পরিচলন পদ্ধতিতে প্রবাহিত চৌম্বক শক্তি সুশৃঙ্খল ভাবে চারিদিকে ছড়ায় না; চৌম্বকীয় মেরুর স্থান পরিবর্তন হয় এবং পর্যায়ক্রমে এটির অ্যালাইনমেন্টের পরিবর্তন ঘটে। এর ফলশ্রুতিতে স্যাকুলার পরিবর্তন ঘটে মূল চৌম্বক ক্ষেত্রের এবং চৌম্বক ক্ষেত্রের বিপর্যয় ঘটে একটি অনিয়মিত সময়ের ভেতরে, গড়ে প্রতি মিলিয়ন বছরে একবার। সবচেয়ে কাছাকাছি সময়ে ঘটা বিপর্যয়টি হয়েছিল প্রায় ৭০০,০০০ বছর আগে।

চৌম্বকমণ্ডল

পৃথিবী: নাম ও ব্যুৎপত্তি, পৃথিবীর কালানুক্রমিক ইতিহাস, গাঠনিক বৈশিষ্ট্য 
পৃথিবীর চৌম্বকমণ্ডলের রূপরেখা। সৌর বায়ু বাম থেকে ডানদিকে প্রবাহিত হয়।

মহাকাশে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের বিস্তৃতি দ্বারা চৌম্বকমণ্ডলকে সংজ্ঞায়িত করা হয়। সৌর বায়ুর আয়ন এবং ইলেকট্রনগুলি পৃথিবীর চৌম্বকমণ্ডল দ্বারা বাধাগ্রস্ত হয়; সৌর বায়ুর চাপে দিনের আলোর দিকে থাকা চৌম্বকমণ্ডলের দৈর্ঘ্য সংকুচিত হয়, প্রায় পৃথিবীর ব্যাসার্ধের ১০ গুণ পর্যন্ত এবং অন্ধকারের দিকের চৌম্বকমণ্ডলটি লম্বা করে প্রসারিত করে তোলে। এর কারণ হল তরঙ্গ যে বেগে সৌর বায়ুর দিকে অগ্রসর হয় তার থেকে সৌর বায়ুর গতিবেগ অনেক বেশি, একটি সুপারসনিক প্রচন্ড-আঘাত দিনের আলোর দিকে থাকা চৌম্বকমণ্ডলকে সৌর বায়ুর মধ্যে মিশিয়ে দেয়। চৌম্বকমণ্ডল আধানযুক্ত কণাগুলোকে ধারণ করে; প্লাসমামণ্ডলটিকে সংজ্ঞায়িত করা যায় এভাবে, এটি নিম্ন শক্তি সম্পন্ন কণা দ্বারা পূর্ণ থাকে যা পৃথিবীর ঘূর্ণনের সাথে সাথে চৌম্বকমণ্ডলের রেখাগুলোকে অনুসরণ করে; রিং কারেন্টকে সংজ্ঞায়িত করা হয় এভাবে, এটি মধ্যম-শক্তির কণা দ্বারা পূর্ণ থাকে যা পৃথিবীর ভূচৌম্বক ক্ষেত্রের সাথে তাল মিলিয়ে প্রবাহিত হয়, কিন্তু তা স্বত্তেও এটির প্রবাহ পথের উপর আধিপত্য রাখে চৌম্বক ক্ষেত্রটি, এবং ভ্যান এলেন রেডিয়েশন বেল্ট গঠিত হয় উচ্চ-শক্তি সম্পন্ন কণা দ্বারা, যার গতি প্রধানত এলোমেলো ধরনের হয়, কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে এটির অবস্থান চৌম্বকমণ্ডলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।

চৌম্বকীয় ঝড় ও সাবস্ট্রোম যখন ঘটে, তখন বাইরের দিকের চৌম্বকমণ্ডল থেকে এবং বিশেষ করে ম্যাগনিটোটেইল থেকে আধানযুক্ত কণাগুলো বেরিয়ে যায়, যার দিক হতে পারে আয়নমণ্ডলের দিকে, যেখানে বায়ুমণ্ডলীয় অনুগুলো হয়ে থাকে উত্তেজিত ও আধানযুক্ত, এর ফলশ্রুতিতে সৃষ্টি হয় আরোরা।

বার্ষিক ও আহ্নিক গতি

আহ্নিক গতি

পৃথিবী: নাম ও ব্যুৎপত্তি, পৃথিবীর কালানুক্রমিক ইতিহাস, গাঠনিক বৈশিষ্ট্য 

পৃথিবী: নাম ও ব্যুৎপত্তি, পৃথিবীর কালানুক্রমিক ইতিহাস, গাঠনিক বৈশিষ্ট্য 
পৃথিবীর আহ্নিক গতির ছবি নেয়া হয়েছে ডিএসকভার এপিক থেকে ২৯ মে, ২০১৬ সালে, অয়তান্ত-বিন্দুতে পৌছানোর কিছু সপ্তাহ আগে।

পৃথিবী নিজের অক্ষের চারিদিকে ঘূর্ণনকে পৃথিবীর আহ্নিক গতি বলে। এই গতি পশ্চিম থেকে পূর্বের দিকে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত অভিমুখে হয়ে থাকে। পৃথিবীর আহ্নিক গতির অক্ষ উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠকে ছেদ করে।

সূর্যের সাপেক্ষে পৃথিবীর ঘূর্ণনের সময়কালকে — এটির গড় সৌর দিন বলা হয়—এটা হল ৮৬,৪০০ সেকেন্ড গড় সৌর সময় (৮৬,৪০০.০০২৫ এস আই সেকেন্ড)। এর কারণ হল পৃথিবীর সৌর দিন আজ সামান্য বড় ১৯ শতকের তুলনায় যার কারণ হল টাইডাল মন্দন, প্রতিটি দিন পরিবর্তিত হয়ে বড় হয়ে থাকে ০ থেকে ২ এস আই মিলি সেকেন্ড পর্যন্ত।

পৃথিবীর আহ্নিক গতির পর্যায়কাল হিসাব করা হয় স্থির নক্ষত্র সমূহের সাপেক্ষে, যেটাকে ইন্টারন্যাশনাল আর্থ রোটেশন এন্ড রেফারেন্স স্টিস্টেম সার্ভিস (আই.ই.আর.এস) কর্তৃক বলা হয় এটির নাক্ষত্রিক দিন (stellar day), যা হল ৮৬,১৬৪.০৯৮৯ সেকেন্ড গড় সৌর দিন (ইউটি১), বা ২৩ঘণ্টা ৫৬মিনিট ৪.০৯৮৯সেকেন্ড। অয়নকাল বা ঘূর্ণনরত গড় মহাবিষুবকালের সাপেক্ষে পৃথিবীর ঘূর্ণনের সময়কালকে, পূর্বে ভুলনামে প্রচলিত ছিল নাক্ষত্র দিন (sidereal day) হিসাবে, যার মান হল ৮৬,১৬৪.০৯০৫ সেকেন্ড গড় সৌর সময় (ইউটি১) (২৩ঘণ্টা ৫৬মিনিট ৪.০৯০৫সেকেন্ড) ১৯৮২-এর হিসাব অনুযায়ী হতে। ফলাফল স্বরূপ, নাক্ষত্র দিন নাক্ষত্রিক দিনের তুলনায় ছোট প্রায় ৮.৪ মিলিসেকেন্ড। আই.ই.আর.এস কর্তৃক গড় সৌর দিনের দৈর্ঘ্যের মানের হিসাব এস.আই এককে পাওয়া যায় ১৬২৩ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত এবং ১৯৬২ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত।

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উল্কাপিন্ড ও নিম্ন কক্ষীয় স্যাটেলাইট ছাড়া, জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুর (celestial bodies) আপাত মূল গতি লক্ষ্য করা যায় পৃথিবীর আকাশের পশ্চিম দিকে যার গতির হার হল ১৫°/ঘণ্টা = ১৫'/মিনিট। বস্তু যেগুলো খ-বিষুবের (celestial equator) কাছাকাছি থাকে, তা সূর্য বা চাঁদের আপাত পরিধির সমান হয়ে থাকে প্রতি দুই মিনিট অন্তর অন্তর; পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে, সূর্য ও চাঁদের আপাত মাপ প্রায় সমান হয়ে থাকে।

বার্ষিক গতি

পৃথিবী: নাম ও ব্যুৎপত্তি, পৃথিবীর কালানুক্রমিক ইতিহাস, গাঠনিক বৈশিষ্ট্য 
ভয়েজার ১ মহাকাশযান থেকে ১৯৯০ সালে তোলা ছবি "ক্ষীণ নীলচে বিন্দু" যাতে পৃথিবীকে দেখা যাচ্ছে (ছবির কেন্দ্রের ডান দিকে), যা তোলা হয়েছে প্রায় ৬.৪ বিলিয়ন কিমি (৪ বিলিয়ন মা) দূর থেকে।

যে গতির ফলে পৃথিবীতে দিনরাত ছোট বা বড় হয় এবং ঋতু পরিবর্তিত হয় তাকে পৃথিবীর বার্ষিক গতি বলে। পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে প্রায় ১৫০ নিযুত কিমি (৯৩ নিযুত মা) গড় দূরত্বে প্রতি ৩৬৫.২৫৬৪ গড় সৌর দিন পরপর, বা এক সৌর বছরে। এর মাধ্যমে অন্যান্য তারার সাপেক্ষে পূর্বদিকে সূর্যের অগ্রসর হওয়ার একটি আপাত মান পাওয়া যায় যার হার হল প্রায় ১°/দিন, যা হল সূর্য বা চাঁদের আপাত পরিধি প্রতি ১২ ঘণ্টায়। এই গতির কারণে, গড়ে প্রায় ২৪ ঘণ্টা লাগে—একটি সৌর দিনে—পৃথিবীকে তার অক্ষ বরাবব একটি পূর্ণ ঘূর্ণন সম্পন্ন করতে, যাতে করে সূর্য আবার মেরিডিয়ানে ফেরত যেতে পারে। পৃথিবীর গড় কক্ষীয় দ্রুতি হল ২৯.৭৮ km/s (১,০৭,২০০ কিমি/ঘ; ৬৬,৬০০ মা/ঘ), যা যথেষ্ট দ্রুত, এই গতিতে পৃথিবীর পরিধির সমান দূরত্ব, প্রায় ১২,৭৪২ কিমি (৭,৯১৮ মা), মাত্র সাত মিনিটে অতিক্রম করা যাবে, এবং পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব ৩,৮৪,০০০ কিমি (২,৩৯,০০০ মা), অতিক্রম করা যাবে প্রায় ৩.৫ ঘণ্টায়।

চাঁদ ও পৃথিবীর ঘূর্ণন করে একই বেরিকেন্দ্রকে অনুসর করে, প্রতি ২৭.৩২ দিনে এটির আশেপাশের তারাগুলোর সাপেক্ষে একবার চাঁদের প্রদক্ষিণ সম্পন্ন হয়। যখন সূর্যের চারিদিকে পৃথিবী ও চাঁদের যৌথ সাধারণ কক্ষপথ হিসাব করা হয়, এই সময়কালকে বলা চঁন্দ্র মাস, একটি পূর্ণিমা হতে অপর পূর্ণিমা পর্যন্ত, যা হল ২৯.৫৩ দিন। যদি খ-উত্তর মেরুর সাপেক্ষে হিসাব করা হয়, তাহলে পৃথিবীর গতি, চাঁদের গতি, এবং এদের কক্ষীয় নতি হবে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে। যদি সূর্য বা পৃথিবীর উপরের কোন সুবিধাজনক অবস্থান থেকে দেখা হয়, তাহলে মনে হবে, পৃথিবী ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিক দিয়ে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। ঘূর্ণন তল এবং অক্ষীয় তল পরিপূর্ণভাবে সরলরৈখিক ভাবে সারিবদ্ধ নয়: পৃথিবীর অক্ষ বাঁকা রয়েছে প্রায় ২৩.৪৪ ডিগ্রী পৃথিবী-সূর্যের পরিক্রম পথ (ক্রান্তিবৃত্ত) থেকে উলম্ব বরাবর, এবং পৃথিবী-চাঁদের তল বাঁকা রয়েছে প্রায় ±৫.১ ডিগ্রী পর্যন্ত পৃথিবী-সূর্যের তলের তুলনায়। যদি এই বাঁকা ভাব না থাকত, তাহলে প্রতি দুই সপ্তাহে একটি করে গ্রহণ ঘটত, হয় চঁদ্রগ্রহণ হত, নয়তবা সূর্যগ্রহণ হত।

হিল স্ফিয়ার, বা পৃথিবীর মহাকর্ষীয় শক্তির প্রভাবের ব্যাসার্ধ হল প্রায় ১.৫ নিযুত কিলোমিটার (৯,৩০,০০০ মা)। এটা হল সর্বোচ্চ দূরত্ব যেখান পর্যন্ত পৃথিবীর মহাকর্ষীয় প্রভাব আরও দূরে থাকা সূর্য ও অন্যান্য গ্রহের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। এই ব্যাসার্ধের মধ্যে থাকা প্রতিটি বস্তু পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে বাধ্য, অথবা তারা সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ বলের কারণে ছিটকে যেতে পারে।

পৃথিবী, এবং একই সাথে সৌর জগৎ, অবস্থান করছে মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সিতে এবং এর কেন্দ্রে থেকে প্রদক্ষিণ করছে প্রায় ২৮,০০০ আলোক বর্ষ জুড়ে। এটার অবস্থান অরিয়ন আর্মের গ্ল্যাক্‌টিক তল হতে প্রায় ২০ আলোক বর্ষ উপরে।

কক্ষের নতি এবং ঋতু পরিবর্তন

পৃথিবী: নাম ও ব্যুৎপত্তি, পৃথিবীর কালানুক্রমিক ইতিহাস, গাঠনিক বৈশিষ্ট্য 
পৃথিবীর অক্ষীয় ঢাল (বা ক্রান্তিকোণ) এবং ঘূর্ণনের অক্ষ ও কক্ষের তলের সাথে এটির সম্পর্ক।

পৃথিবীর অক্ষীয় ঢালের পরিমাণ হল প্রায় ২৩.৪৩৯ ২৮১°, যার কক্ষতলের অক্ষটি, সর্বাদা খ-মেরুর দিকে তাক হয়ে থাকে। পৃথিবীর অক্ষীয় ঢাল বা অক্ষ রেখাটি হেলানো থাকার কারণে, কোন একটি নির্দিষ্ট স্থানে যে পরিমাণ সূর্যের আলো আসে, তা সারা বছর ধরে সমান থাকে না, এর মান পরিবর্তিত হয়। এর ফলশ্রুতিতে প্রকৃতি তথা জলবায়ুতে ঋতুর পরিবর্তন হয়, উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকালের সূচনা হয় যখন সূর্য সরাসরি কর্কটক্রান্তি রেখার দিকে তাক হয়ে থাকে এবং একই জায়গায় শীতকালের সূচনা ঘটে সূর্য যখন দক্ষিণ গোলার্ধে থাকা মকরক্রান্তি রেখার দিকে তাক হয়ে থাকে। গ্রীষ্মকালে, দিনগুলো অনেক লম্বা হয়, ও সূর্য আকাশের অনেক উপরের দিকে থাকে। অপরদিকে শীতকালে, জলবায়ু ঠান্ডা হয়ে যায় ও এ সময় দিনগুলো হয় ছোট। উত্তরের নাতিশীতোষ্ণ অক্ষাংশে, গ্রীষ্মকালের অয়তান্ত-বিন্দু অংশে সূর্য উদয় হয় উত্তরের সঠিক পূর্ব দিকে এবং অস্ত যায় উত্তরের সঠিক পশ্চিম দিকে, যার ঠিক বিপরীত ঘটনা ঘটে শীতকালে। গ্রীষ্মকালের অয়তান্ত-বিন্দু অংশে সূর্য উদয় হয় দক্ষিণের সঠিক পূর্ব দিকে, দক্ষিণের নাতিশীতোষ্ণ অক্ষাংশে এবং অস্ত যায় দক্ষিণের সঠিক পশ্চিম দিকে।

আর্কটিক সার্কেলের উপরে, একটি চরম অবস্থা দাঁড়ায় যেখানে বছরের কিছু সময় দিনের আলো পৌছায় না, শুধুমাত্র উত্তর মেরুতেই প্রায় ৬ মাসের উপরে এই অবস্থা থাকে, এটি মেরু রাত্রি নামে পরিচিত। দক্ষিণ গোলার্ধে, এই সময় এই ঘটনাটি সম্পূর্ণ বিপরীত থাকে, দক্ষিণ মেরুর অবস্থান ও দিওক এসময় উত্তর মেরুর অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে থাকে। ছয় মাস পরে, এই মেরুটি অনুভব করে মধ্যরাতের সূর্য (midnight sun), যেখানে এক একটি দিন হয় ২৪ ঘণ্টা লম্বা, একই সময় বিপরীত ঘটনা ঘটে দক্ষিণ মেরুতে।

জ্যোতির্বিজ্ঞানের রেওয়াজ থেকে, অয়তান্ত-বিন্দু অনুসারে চারটি ঋতুর হিসাব করা যায়—এটা হল সেই বিন্দু যা থেকে পৃথিবীর অক্ষ রেখার অক্ষীয় ঢাল সূর্যের কত কাছে রয়েছে বা সূর্য থেকে কত দূরে রয়েছে তার হিসাব পাওয়া যায়—এবং বিষুব অনুসারে, যখন অক্ষীয় ঢালের দিক ও সূর্যের দিক সমান্তরালে থাকে। উত্তর গোলার্ধে, শীতকালীন অয়তান্ত-বিন্দু (winter solstice) বর্তমানে হয়ে থাকে ২১ ডিসেম্বর; গ্রীষ্মকালীন অয়তান্ত-বিন্দু হয়ে থাকে ২১ জুনের কাছাকাছি সময়ে, বসন্ত বিষুব হয়ে থাকে ২০ মার্চের কাছাকাছি এবং হেমন্তকালীন বিষুব হ্যে থাকে ২২ বা ২৩ সেপ্টেম্বর। দক্ষিণ গোলার্ধে এর বিপরীত ঘটনা ঘটে থাকে, যেখানে গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন অয়তান্ত-বিন্দু গুলো নিজের মধ্যে পাল্টিয়ে যায় এবং বসন্ত বিষুব ও শারদীয় বিষুবের দিনও নিজেদের মধ্যে পাল্টিয়ে যায়।

পৃথিবীর অক্ষীয় ঢালের মান আপেক্ষিকভাবে অনেক লম্বা সময় ধরে অপরিবর্তনীয় রয়েছে। গড়ে ১৮.৬ বছরে পৃথিবীর অক্ষীয় ঢালের অক্ষবিচলন ঘটে, সাধারণত অতি সামান্য, অনিয়মিত গতি পরিলক্ষিত হয়। এছাড়াও পৃথিবীর অক্ষের অভিমুখ (এর কোণের মান নয়) সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়, এটির অয়নচলনের বৃত্তটি পরিপূর্ণভাবে শেষ হয় প্রতি ২৫,৮০০ বছরে একবার; এই অয়নচলন গতিটি নাক্ষত্র বছর থেকে ট্রপিক্যাল বছর পৃথক হবার কারণ হিসাবে কাজ করে। এই উভয় গতি সৃষ্টি হয় পৃথিবীর নিরক্ষরেখার স্ফীতি বরাবর সূর্য ও চঁন্দ্রের ভিন্ন ধর্মী আকর্ষণের কারণে। মেরু দুটিও ভূপৃষ্ঠের জুড়ে কয়েক মিটার স্থানন্তরিত হতে পারে। এই মেরু গতির বেশ কিছু, পর্যায়ক্রমিক উপাদান রয়েছে, যেগুলোকে একসাথে বর্ণনা করা যায় কোয়াসিপিরিওডিক গতি হিসাবে। এই গতির বার্ষিক উপাদান ছাড়াও, ১৪ মাস সাইকেলের আরো একটি উপাদান রয়েছে যা চ্যান্ডলার উবল নামে পরিচিত। পৃথিবীর বার্ষিক গতির কারণে দিন-রাত্রি ছোট বড় হবার ঘটনাও ঘটে থাকে।

বর্তমান সময়ে, পৃথিবী অণুসূরবিন্দুতে অবস্থান করে ৩রা জানুয়ারির কাছাকাছি সময়ে, এবং অপসূরবিন্দুতে ৪ঠা জুলাইয়ের কাছাকাছি সময়ে। অয়নচলনের কারণে ও অক্ষীয় বিভিন্ন ঘটনার কারণে সময়ের সাথে সাথে এই দিনগুলো পরিবর্তিত হয়, যা চক্রাকার একটি প্যাটার্ন অনুসরণ করে যা মিলানকোভিটচ সাইকেল নামে পরিচিত। পৃথিবী ও সূর্যের এই পরিবর্তনশীল দূরুত্বের কারণে পৃথিবী পৃষ্ঠে পৌছানো সৌর শক্তি প্রায় ৬.৯% বৃদ্ধি পায় অণুসুরের অপেক্ষা অপসূরে। এর কারণ দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের দিকে ঝুকে থাকে ঠিক যখন পৃথিবী ও সূর্যের সবচাইতে কাছাকাছি বিন্দুতে পৌছায়, সারা বছর ব্যাপী পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ এটির উত্তর গোলার্ধের থেকে কিছুটা বেশি তাপ গ্রহণ করে সূর্য থেকে। এই ঘটনাটির তাৎপর্য পৃথিবীর অক্ষীয় ঢালের কারণে মোট শক্তির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার তুলনায় খুবই যৎসামান্য, এবং বেশিরভাগ অতিরিক্ত শক্তি গ্রহণ করে দক্ষিণ গোলার্ধে বেশি পরিমাণে থাকা সমুদ্রের পানি।

বাসযোগ্যতা

পৃথিবী: নাম ও ব্যুৎপত্তি, পৃথিবীর কালানুক্রমিক ইতিহাস, গাঠনিক বৈশিষ্ট্য 
কানাডার রকি পর্বতমালার সামনে মোরেইন লেকের একটি সামুগ্রিক দৃশ্য।

যে গ্রহে প্রাণী-জগৎ টিকে থাকতে পারে বসবাসযোগ্য বলা হয়, যদিওবা সেই গ্রহে প্রাণের সঞ্চার না ঘটে তাহলেও। পৃথিবীতে রয়েছে পানির প্রাচুর্য্য যা জটিল জৈব যৌগের পরস্পরের সাথে সংযুক্তি ও সংমিশ্রণের জন্য একটি সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করে, ও একই সাথে বিপাক প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করে। পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব, একই সাথে এর অক্ষীয় উপকেন্দ্রীকতা, কক্ষীয় ঘূর্ণনের গতি, অক্ষীয় ঢাল, ভূ-প্রাকৃতিক ইতিহাস, সহনীয় বায়ুমণ্ডল, ও চৌম্বকক্ষেত্র সবগুলো একসাথে ভূ-পৃষ্ঠের সামুগ্রিক বর্তমান জলবায়ু ও পরিবেশ বজায় থাকার পিছনে কাজ করছে।

জীবমণ্ডল

জীবমণ্ডল হচ্ছে পৃথিবীর সমগ্র ইকোসিস্টেমগুলির যোগফল। এটিকে বলা যেতে পারে পৃথিবীর জীবনের এলাকা, একটি সংযুক্ত প্রক্রিয়া (পৃথিবীর অভ্যন্তরের সৌর এবং মহাবৈশ্বিক রেডিয়েশন এবং তাপ থেকে বিযুক্ত) এবং বৃহত্তরভাবে স্বনিয়ন্ত্রিত। অন্য কথায় পৃথিবীর বাইরের স্তরে অবস্থিত বায়ু, ভূমি, পানি ও জীবিত বস্তুসমূহের সমষ্টিকে জীবমণ্ডল বোঝায়। জীবনের অস্তিত্বের সঙ্গেই জীবমণ্ডলের সম্পর্ক। জীবমণ্ডলের বিস্তৃতি ওপর-নিচে ২০ কিলোমিটারের মতো ধরা হলেও মূলত অধিকাংশ জীবনের অস্তিত্ব দেখা যায় হিমালয় শীর্ষের উচ্চতা থেকে ৫০০ মিটার নিচের সামুদ্রিক গভীরতার মধ্যেই। এখানে জীবকুল ৪.১ বিলিয়ন বছর পূর্বে বসবাস শুরু করে।

গ্রহের প্রাণী জগৎ একটি বাসযোগ্য বাস্তুতন্ত্র গড়ে তোলে, কখন কখনও এই সবগুলোকে একসাথে বলা হয়ে থাকে "জীবমণ্ডল"। ধারণা করা হয়ে থাকে পৃথিবীর জীবমণ্ডলের গঠন শুরু হয় প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন বছর আগে। এই জীবমণ্ডলটি বেশ কিছু বায়োম দ্বারা বিভক্ত, প্রচুর পরিমাণে একই ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণি একই বায়োমে বসবাস করে। ভূমিতে, মূলত বায়োমকে বিভক্ত করা যায় অক্ষাংশের পার্থক্য থেকে, সমুদ্রতল থেকে উচ্চতা থেকে এবং আর্দ্রতা থেকে। সুমেরু অঞ্চলের বা অ্যান্টারর্টিক বৃত্তের স্থলজ বায়োসের ক্ষেত্রে, অধিক উঁচু অক্ষাংশে বা অত্যন্ত শুষ্ক এলাকায় প্রাণি ও উদ্ভিদ তুলনামুলকভাবে নেই বললেই চলে বা এগুলো হল বিরান অঞ্চল; প্রজাতির বৈচিত্র্য সবচাইতে বেশি পরিমাণ দেখা যায় নিরক্ষীয় অঞ্চলের আদ্রতাপূর্ণ নিম্নভূমিতে।

জুলাই ২০১৬তে, বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর সকল জীবিত জীবের উপর নিরীক্ষা চালিয়ে ৩৫৫ সেট জিনকে চিহ্নিত করেছেন লাস্ট ইউনিভার্সাল কমন এনসেস্টর হিসাবে।

প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ভূমি ব্যবহার

আনুমানিক মানুষের ভূমি ব্যবহার, ২০০০ সালে।
ভূমি ব্যবহার মেগাহেক্টর
শষ্যভূমি ১,৫১০–১,৬১১
চারণভূমি ২,৫০০–৩,৪১০
প্রাকৃতিক বনভূমি ৩,১৪৩–৩,৮৭১
রোপনকৃত বনভূমি ১২৬–২১৫
শহর এলাকা ৬৬–৩৫১
অব্যবহৃত, উৎপাদনযোগ্য ভূমি ৩৫৬–৪৪৫

মানুষ পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করেছে। এদের মধ্যে যেগুলিকে অনবায়নযোগ্য সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয়, যেমন জীবাশ্ম জ্বালানি, এগুলি কেবল মাত্র ভূতাত্ত্বিক সময়ের নিরিখে পুনর্নবায়িত হয়।

ভূত্বকে জীবাশ্ম জ্বালানির বিশাল ভাণ্ডার আহরণ করা হয়। এগুলির মধ্যে কয়লা, পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস উল্লেখযোগ্য। এই মজুদগুলি মানুষ কেবল শক্তি উৎপাদন নয়, রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবেও ব্যবহার করে। এছাড়া আকরিক সৃষ্টি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূত্বকে খনিজ আকরিক মজুদও গঠিত হয়েছে। লাভা, ভূমিক্ষয় এবং পাতভিত্তিক ভূত্বকীয় গঠনের ফলে এই আকরিকগুলি তৈরি হয়েছে। এই আকরিক মজুদগুলি অনেক ধাতু এবং অন্যান্য উপকারী মৌলিক পদার্থের ঘনীভূত উৎস হিসেবে গণ্য হয়।

পৃথিবীর জীবমণ্ডল মানুষের জন্য প্রচুর জীবতত্ত্বিক উপাদান তৈরি করে, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত খাদ্য, কাঠ, ঔষধপত্র, অক্সিজেন, এবং বিভিন্ন জৈব বর্জ্যকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলে। ভূমি ভিত্তিক বাস্তুতন্ত্র নির্ভর করে মাটির উপরের দিকের উপর ও পরিষ্কার পানির উপর, এবং সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র নির্ভর করে এতে মিশ্রিত নিউট্রিয়েন্টের উপর যা ভূমি থেকে ধুয়ে সমুদ্রের পানিতে পৌছায়। ১৯৮০ সালের হিসাব অনুসারে, ৫,০৫৩ মেগাহেক্টর (৫০.৫৩ মিলিয়ন কি.মি.) পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠের এলাকা জুড়ে ছিল বনভূমি ও বনাঞ্চল, ৬,৭৮৮ মেগাহেক্টর (৬৭.৮৮ মিলিয়ন কি.মি.) এলাকা ছিল তৃণভুমি ও চরণভুমি, এবং ১,৫০১ মেগাহেক্টর (১৫.০১ মিলিয়ন কি.মি.) এলাকা ছিল খাদ্যশষ্য চাষের শষ্যভূমি। আনুমানিক সেচ ভূমির পরিমাণ ১৯৯৩ সালে ছিল ২৪,৮১,২৫০ বর্গকিলোমিটার (৯,৫৮,০২০ মা)। মানুষ ভূমিতে বসবাস করার জন্য নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে বাড়ি ঘর তৈরি করে।

প্রাকৃতিক এবং পরিবেশগত সমস্যা

পৃথিবী: নাম ও ব্যুৎপত্তি, পৃথিবীর কালানুক্রমিক ইতিহাস, গাঠনিক বৈশিষ্ট্য 
বায়ুমণ্ডলে গরম ছাই ছড়াচ্ছে অগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের সময়।

পৃথিবী পৃষ্ঠের একটি বৃহত্তম এলাকায় চরম আবহাওয়া যেমন উষ্ণমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়, হ্যারিকেন, বা টাইফুন দেখা যায়, যা ঐ সকল এলাকার জীবনযাত্রার উপর গাঢ় প্রভাব ফেলে। ১৯৮০ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত, এই ধরনের ঘটনায় প্রতি বছর গড়ে ১১,৮০০ জন মারা যায়। অসংখ্য স্থান রয়েছে যেখানে প্রায়শই ভূমিকম্প, ভূমিধ্বস, সুনামি, অগ্নুৎপাত, টর্নেডো, ভূমি চ্যুতি, প্রবল তুষারপাত, বন্যা, খরা, দাবানল ও অন্যান্য জলবায়ুর পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ ঘটে।

বিভিন্ন স্থানের বাতাস ও পানির দূষণ মানব সৃষ্ট দূষণ ঘটে থাকে, ফলে সৃষ্টি হয় অ্যাসিড বৃষ্টি ও বিষাক্ত উপাদান, বনভূমি ধ্বংসের কারণে (অধিক পশুচারণ ভূমি, অরণ্যবিনাশ, মরুকরণ, বণ্যপ্রাণীর বিনাশ, প্রজাতির বিলুপ্তি, মাটির অধঃপতন, ভূমির বিনাশ ও ভূমিক্ষয়।

একটি বৈজ্ঞানিক ঐক্যমত্য রয়েছে মানব জাতির শিল্পায়নের ফলে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের কারণে বৈশ্বিক ভূমণ্ডলীয় উষ্ণতা বৃদ্ধি ঘটছে। ধারণা করা হয় যে এর ফলশ্রুতিতে জলবায়ুর পরিবর্তন যেমন হিমবাহ এবং বরফের স্তর গলে যাচ্ছে, আরও চরম তাপমাত্রার সীমা দেখা যাচ্ছে, একইসাথে আবহাওয়ারও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটছে এবং বিশ্বব্যাপী গড় সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মানবীয় ভূগোল

পৃথিবী: নাম ও ব্যুৎপত্তি, পৃথিবীর কালানুক্রমিক ইতিহাস, গাঠনিক বৈশিষ্ট্য 
পৃথিবীর সাতটি মহাদেশ

মানচিত্রাঙ্কনবিদ্যা, মানচিত্র তৈরির অধ্যয়ন ও অনুশীলনের একটি বিদ্যা এবং ভূগোল হল ভূমি, বৈশিষ্ট্য, বাসবাসকারী এবং পৃথিবীর ঘটনাসমূহের অধ্যয়ন, একই সাথে এটি ঐতিহাসিকভাবে পৃথিবীকে চিত্রিত করার একটি নিয়মে পরিনত হয়েছে। মাপজোপ (Surveying), হল অবস্থান ও দুরত্বের পরিমাপ ব্যবস্থা, এবং ন্যাভিগেশন হল সুক্ষ পরিমাপ ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে অবস্থান ও দিক পরিমাপ করা যায়, মানচিত্রাঙ্কনবিদ্যা ও ভূগোলের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা এবং যথাযথভাবে নির্ণয়ের জন্য এটির উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে।

৩১ অক্টোবর ২০১১ তারিখ পর্যন্ত পৃথিবীতে মানব সংখ্যার পরিমাণ আনুমানিক গিয়ে দাঁড়িয়েছে সাত বিলিয়ন। ভবিষ্যত বাণীগুলি ইঙ্গিত দেয় যে, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যার পরিমাণ ৯.২ বিলিয়ন হবে। ধারণা করা হয় সবচাইতে বেশি জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। মানুষের জনসংখ্যার ঘনত্ব বিশ্বের সব জায়গায় সমান নয়, কিন্তু একটি বেশির ভাগ অংশ বাস করে এশিয়া মহাদেশে। ২০২০ সাল নাগাদ, আশা করা হয় বিশ্বের ৬০% মানুষ বাস করবে শহর এলাকায়, গ্রাম্য এলাকায় না থেকে ।

হিসাব করা যায় যে, পৃথিবীর পৃষ্ঠের আট ভাগের এক ভাগ জায়গা মানুষের বসবাসের জন্য উপযুক্ত – যেহেতু পৃথিবীর উপরিভাগের চার ভাগের তিন ভাগ সমুদ্র দ্বারা পরিবেষ্টিত, এর ফলে এর মাত্র এক ভাগ অংশ হল ভূমি। এই ভূমির অর্ধেক স্থান জুড়ে রয়েছে মরুভূমি (১৪%), উচ্চ পর্বতমালা (২৭%), বা অন্যান্য অনুপযুক্ত খাদ এলাকা। পৃথিবীর সর্বোচ্চ উত্তর দিকের স্থায়ী স্থাপনাটি রয়েছে এলার্টে, যা নুনাভুট, কানাডার এললেসমেয়ার আইল্যান্ডে অবস্থিত (৮২°২৮′ উত্তর), পৃথিবীর সর্বোচ্চ দক্ষিণ দিকের স্থায়ী স্থাপনাটি হল আমুন্ডসেন- স্কট সাউথ পোল স্টেশন, অ্যান্টারটিকায়, একেবারেই প্রায় দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি, (৯০°দক্ষিণ)।

পৃথিবী: নাম ও ব্যুৎপত্তি, পৃথিবীর কালানুক্রমিক ইতিহাস, গাঠনিক বৈশিষ্ট্য 
নিউ ইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত জাতিসংঘ সদর দপ্তর

স্বাধীন সার্বভৌম দেশগুলো শুধু মাত্র কিছু অংশ বাদ দিয়ে গ্রহটির প্রায় পুরো ভূমির সবটাই নিজেদের বলে দাবী করে, বাদ দেয়া অংশ গুলোর মধ্যে হল অ্যান্টারটিকার কিছু অংশ, দানিউব নদীর পশ্চিম তীর বরাবর কয়েক খন্ড জমি, মিশর ও সুদানের সীমান্তের অদাবীকৃত এলাকা "বির টাউইল"। ২০১৫-এর হিসাব অনুযায়ী, ১৯৩ টি সার্বভৌম রাষ্ট্র রয়েছে পৃথিবীতে যা জাতিসংঘের সদস্য দেশ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত, এছাড়াও দুটি পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র ও ৭২ টি নির্ভরশীল অঞ্চল এবং সীমিত স্বীকৃতিপ্রাপ্ত রাষ্ট্র রয়েছে। পৃথিবীতে কখনই একটি একক সার্বভৌম সরকার তৈরি হয়নি যার পুরো বিশ্বের উপর কর্তৃত ছিল, যদিও বা কিছু জাতি-রাষ্ট্র বিশ্ব আধিপত্যের জন্য যুদ্ধ করেছে এবং ব্যর্থ হয়েছে।

জাতিসংঘ বিশ্ব ব্যাপী আন্ত-রাষ্ট্রীয় সংস্থা হিসাবে কাজ করে, এটা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে দেশগুলো মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার লক্ষ্যে নিয়ে, সশস্ত্র বিরোধ যাতে না ঘটে। ইউএন প্রধানত আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও আন্তর্জাতিক আইনের ফোরাম হিসাবে কাজ করে। যদি সদস্য রাষ্ট্র সমূহ সম্মতি প্রদান করে, এটি সশস্ত্র হস্তক্ষেপের জন্যও ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করা প্রথম মানুষ হলেন ইউরি গ্যাগারিন, ১২ এপ্রিল ১৯৬১ সালে। ৩০ জুলাই ২০১০ (2010-07-30)-এর হিসাব অনুযায়ী, সর্বমোট, প্রায় ৪৮৭ জন মানুষ মহাকাশে ও পৃথিবীর কক্ষপথে ভ্রমণ করেছেন, এবং, এদের মধ্যে, বার জন চাঁদের মাটিতে হেঁটেছেন। সাধারণ ভাবে, বর্তমানে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অবস্থান করা মানুষরাই একমাত্র মহাকাশের অবস্থান করা মানুষ। এই স্টেশনের কর্মীদলটি, গঠন করা হয় ৬ জন মানুষ নিয়ে, যাদের প্রতি ৬ মাস অন্তর অন্তর পরিবর্তন করা হয়। পৃথিবী থেকে মানুষ সবচাইতে দূরের দূরত্ব ভ্রমণ করেছে ৪০০,১৭১ কি.মি., যা অর্জন করা হয়েছে অ্যাপোলো ১৩ অভিযানে ১৯৭০ সালে।

চাঁদ

বৈশিষ্ট্য
পৃথিবী: নাম ও ব্যুৎপত্তি, পৃথিবীর কালানুক্রমিক ইতিহাস, গাঠনিক বৈশিষ্ট্য 
পৃথিবীর উত্তরায়নকালে দৃষ্ট পূর্ণ চাঁদ
ব্যাস ৩,৪৭৪.৮ কিলোমিটার
ভর ×১০২৪ কিলোগ্রাম
অর্ধ-মুখ্য অক্ষ ৩৮৪,৪০০ কিলোমিটার
আবর্তন কাল ২৭ দিন ৭ ঘণ্টা ৪৩.৭ মিনিট

পৃথিবীর প্রায় এক চতুর্থাংশ ব্যাসার্ধ-বিশিষ্ট চাঁদ একটি অপেক্ষাকৃত বড় শিলাময় প্রাকৃতিক উপগ্রহ। গ্রহের আকার বিবেচনায় এটিই সৌরজগতের বৃহত্তম চাঁদ; যদিও ক্যারন তার বামন গ্রহ প্লুটো থেকে আপেক্ষিকভাবে বৃহত। পৃথিবীর ন্যায় অন্যান্য গ্রহের প্রাকৃতিক উপগ্রহগুলোকেও "চাঁদ" হিসেবেও অভিহিত করা হয়।

চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ এবং সৌর জগতের পঞ্চম বৃহৎ উপগ্রহ। পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে চাঁদের কেন্দ্রের গড় দূরত্ব হচ্ছে ৩৮৪,৪০৩ কিলোমিটার (২৩৮,৮৫৭ মাইল) যা পৃথিবীর ব্যাসের প্রায় ৩০ গুণ। চাঁদের ব্যাস ৩,৪৭৪ কিলোমিটার (২,১৫৯ মাইল) যা পৃথিবীর ব্যাসের এক-চতুর্থাংশের চেয়ে সামান্য বেশি। এর অর্থ দাড়াচ্ছে, চাঁদের আয়তন পৃথিবীর আয়তনের ৫০ ভাগের ১ ভাগ। এর পৃষ্ঠে অভিকর্ষ বল পৃথিবী পৃষ্ঠে অভিকর্ষ বলের এক-ষষ্ঠাংশ। পৃথিবী পৃষ্ঠে কারও ওজন যদি ১২০ পাউন্ড হয় তা হলে চাঁদের পৃষ্ঠে তার ওজন হবে মাত্র ২০ পাউন্ড। এটি প্রতি ২৭.৩ দিনে পৃথিবীর চারদিকে একটি পূর্ণ আবর্তন সম্পন্ন করে। প্রতি ২৯.৫ দিন পরপর চন্দ্রকলা ফিরে আসে অর্থাৎ একই কার্যক্রিয় আবার ঘটে। পৃথিবী-চাঁদ-সূর্য তন্ত্রের জ্যামিতিতে পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের কারণেই চন্দ্রকলার এই পর্যানুক্রমিক আবর্তন ঘটে থাকে।

বেরিকেন্দ্র নামে পরিচিত একটি সাধারণ অক্ষের সাপেক্ষে পৃথিবী এবং চন্দ্রের ঘূর্ণনের ফলে যে মহাকর্ষীয় আকর্ষণ এবং কেন্দ্রবিমুখী বল সৃষ্টি হয় তা পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটা সৃষ্টির জন্য অনেকাংশে দায়ী। জোয়ার-ভাটা সৃষ্টির জন্য যে পরিমাণ শক্তি শোষিত হয় তার কারণে বেরিকেন্দ্রকে কেন্দ্র করে পৃথিবী-চাঁদের যে কক্ষপথ রয়েছে তাতে বিভব শক্তি কমে যায়। এর কারণে এই দুইটি জ্যোতিষ্কের মধ্যে দূরত্ব প্রতি বছর ৩.৮ সেন্টিমিটার করে বেড়ে যায়। যতদিন না পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটার উপর চাঁদের প্রভাব সম্পূর্ণ প্রশমিত হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত চাঁদ দূরে সরে যেতেই থাকবে এবং যেদিন প্রশমনটি ঘটবে সেদিনই চাঁদের কক্ষপথ স্থিরতা পাবে।

পৃথিবী ও চাঁদের মহাকর্ষীয় বলের ক্রিয়ার ফলে পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটা তৈরি হয়। এই সমরূপ ঘটনার ফলে চাঁদের টাইডাল লকিং তৈরি হয়: চাঁদের নিজের অক্ষে ঘূর্ণনের জন্য যে সময় লাগে সেই একই পরিমাণ সময় প্রয়োজন হয় পৃথিবীর কক্ষপথে আবর্তনের জন্য। যার ফলে পৃথিবীর দিকে সব সময় এটির একই পৃষ্ঠ থাকে। চাঁদের পৃথিবীকে আবর্তনের সময়, এটির বিভিন্ন অংশ সূর্যের আলো দ্বারা আলোকিত হয়, ফলশ্রুতিতে তৈরি হয় চন্দ্রকলার; এটির অন্ধকারচ্ছন্ন অংশটি আলোকিত অংশ থেকে পৃথক হয়ে থাকে সৌর টারমিনেটর দ্বারা।

পৃথিবী: নাম ও ব্যুৎপত্তি, পৃথিবীর কালানুক্রমিক ইতিহাস, গাঠনিক বৈশিষ্ট্য 
পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যে থাকা ব্যবস্থার বিস্তারিত চিত্র, যেখানে পৃথিবী ও চাঁদের বেরিকেন্দ্র ও তাদের ব্যসার্ধ্য দেখা যাচ্ছে। চাঁদের অক্ষটি নির্ধারণ করা হয়েছে ক্যাসিনির তৃতীয় সূত্র অনুসারে।

পৃথিবী ও চাঁদের আকর্ষণ ক্রিয়ায় সৃষ্ট জোয়ার-ভাটার ঘটনার ফলে, চাঁদ প্রতি বছর প্রায় ৩৮ মিমি/বছর হারে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যায়। মিমিয়ন বছর ধরে, এই ক্ষুদ্র পরিবর্তনের ফলে—এবং পৃথিবীর দিন বৃদ্ধি পাওয়া ২৩ মাইক্রোসেকেন্ড/বছর—পরিশেষে বৃহত্তর পরিবর্তন করেছে। ডেভোনিয়ান সময় কালে, উদাহারণস্বরূপ (প্রায় ৪১০ মিলিয়ন বছর আগে) এক বছর পূর্ণ হতে ৪০০ দিন লাগত, যেখাবে প্রতিটি দিন ছিল ২১.৮ ঘণ্টার।

পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন সাধনে সহায়তা করে, এতে প্রাণের বিকাশ ঘটাতে চাঁদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। জীবাশ্ম থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও কম্পিউটার সিমুলেশন থেকে জানা যায় যে, চাঁদের সাথে জোয়ার-ভাটার ঘটনার কারণে পৃথিবীর অক্ষীয় ঢালটি সুস্থির রয়েছে। কিছু ত্বাত্তিক এটি ধারণা করে যে, পৃথিবীর নিরক্ষীয় স্ফিতি বরাবর অন্যান্য গ্রহ ও সূর্য দ্বারা প্রয়োগ করা সুস্থির টর্ক না থাকলে, পৃথিবীর ঘূর্ণনের অক্ষটি এলোমেলো ও অস্থির প্রকৃতির হত, প্রতি মিলিয়ন বছরে বিশৃঙ্খল পরিবর্তন নজরে আসত, যেটা দেখা যায় মঙ্গল গ্রহের ক্ষেত্রে।

পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে দেখা হলে, চাঁদ ও সূর্য প্রায় সম দূরত্বে থাকা প্রায় একই আকারের গোলাকার চাকতির মত দেখায়। এই দুটি বস্তুর কৌনিক আকার (বা ঘনকোণ) মিলে যায় কারণ, যদিও বা সূর্যের চাঁদের তুলনায় প্রায় ৪০০ গুণ বড়, একই সাথে সূর্য চাঁদের তুলনায় পৃথিবী থেকে ৪০০ গুণ দূরে অবস্থিত। এর ফলে পৃথিবীতে পূর্ণ এবং বলয়াকার (আংটির মত) সূর্য গ্রহণ হয়ে থাকে।

চাঁদের গঠন সম্পর্কে প্রচলিত সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য তত্ত্বটি হলো বৃহদায়তন-প্রভাব তত্ত্ব, যেখানে বলা হয়েছে যে এটি গঠিত হয়েছে মঙ্গল গ্রহের সমান আকৃতির 'থিয়া' নামক একটি মহাজাগতিক কণার সাথে সংঘর্ষের ফলে। এই মতবাদটি ব্যাখ্যা করে (অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে) চাঁদে লৌহ এবং অস্থির উপাদানগুলির আপেক্ষিক অভাব এবং এর গঠন প্রকৃতি পৃথিবীর ভূত্বকের প্রায় অনুরূপ।

গ্রহাণু এবং কৃত্রিম উপগ্রহ

গ্রহাণু হল প্রধানত পাথর দ্বারা গঠিত বস্তু যা তার তারাকে কেন্দ্র করে আবর্তন করে। আমাদের সৌরজগতে গ্রহাণুগুলো ক্ষুদ্র গ্রহ (Minor planet অথবা Planetoid) নামক শ্রেণীর সবচেয়ে পরিচিত বস্তু। এরা ছোট আকারের গ্রহ যেমন বুধের চেয়েও ছোট। বেশিরভাগ গ্রহাণুই মঙ্গল এবং বৃহস্পতি গ্রহের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত গ্রহাণু বেল্টে থেকে নির্দিষ্ট উপবৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্যকে আবর্তন করে। ধারণা করা হয় গ্রহাণুগুলো ভ্রূণগ্রহীয় চাকতির (Protoplanetary disc) অবশিষ্টাংশ। বলা হয় গ্রহাণু বেল্টের অঞ্চলে সৌরজগতের গঠনের প্রাথমিক সময় যেসকল ভ্রূণগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিলো তাদের অবশিষ্টাংশ বৃহস্পতির আবেশ দ্বারা সৃষ্ট মহাকর্ষীয় অক্ষ বিচলনের কারণে গ্রহের সাথ মিলিত হবার সুযোগ পায়নি। আর এই অবশিষ্টাংশই গ্রহাণু বেল্টের উৎপত্তির কারণ। কিছু গ্রহাণুর চাঁদও রয়েছে।

“৩৭৫৩ ক্র্যুইথন” (3753 Cruithne) এবং “২০০২ এএ২৯” (2002 AA29) গ্রহাণুসহ পৃথিবীর রয়েছে অন্তত পাঁচটি সহ-কক্ষীয় গ্রহাণু। সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর কক্ষপথে স্বাধীন ক্রিকৌণিক বিন্দীয় পথে “২০১০ টিকে” (2010 TK7) সহযোগে একটি ট্রোজান গ্রহাণু “এল৪” (L4) পথে আবর্তন করছে।

প্রতি বিশ বছর অন্তর ক্ষুদ্রতর নিকটতর-পৃথিবীর গ্রহাণু “২০০৬ আরএইচ১২০” (2006 RH120) পৃথিবী-চঁন্দ্র পদ্ধতিকে জটিল করে তোলে। এই প্রক্রিয়া চলাকালীন, এটি পৃথিবীকে প্রযোজ্য সময়ের চেয়েও সংক্ষিপ্তকালে আবর্তন করতে পারে।

কৃত্রিম উপগ্রহ হলো মহাকাশে উৎক্ষেপিত বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় উদ্ভাবিত উপগ্রহ। এটা চাঁদের মতোই কিন্তু পার্থক্য কেবল এই যে চাঁদ প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত আর কৃত্রিম উপগ্রহ মানুষ তৈরি করেছে। জুন ২০১৬-এর হিসাব অনুযায়ী, পৃথিবীর কক্ষপথে ১,৪১৯টি মানব কর্তৃক সৃষ্ট কার্যকরী কৃত্রিম উপগ্রহ ছিল। এছাড়াও সেখানে বর্তমানে আরো আছে সবচেয়ে প্রাচীন কৃত্রিম উপগ্রহ ভ্যানগার্ড-১ সহ ১৬,০০০ খন্ড অক্ষম উপগ্রহ এবং মহাকাশের জঞ্জাল। পৃথিবীর সর্ববৃহত কৃত্রিম উপগ্রহটি হচ্ছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র।

সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি

পৃথিবী: নাম ও ব্যুৎপত্তি, পৃথিবীর কালানুক্রমিক ইতিহাস, গাঠনিক বৈশিষ্ট্য 
অ্যাপোলো-৮ থেকে তোলা পৃথিবীর উদয়
পৃথিবী: নাম ও ব্যুৎপত্তি, পৃথিবীর কালানুক্রমিক ইতিহাস, গাঠনিক বৈশিষ্ট্য 
🜨

পৃথিবীর আদর্শ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক প্রতীক হল বৃত্তের অভ্যন্তরে একটি ক্রস চিহ্ন, পৃথিবী: নাম ও ব্যুৎপত্তি, পৃথিবীর কালানুক্রমিক ইতিহাস, গাঠনিক বৈশিষ্ট্য ; যা পৃথিবীর চার কোণকে নির্দেশ করে।

মানব সংস্কৃতিতে এই গ্রহকে নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ প্রচলিত রয়েছে। পৃথিবীকে কখনো কখনো শ্বর হিসেবে ব্যক্তিরূপে প্রকাশ করা হয়। অনেক সংস্কৃতিতে পৃথিবী হল দেবমাতা, যা সন্তান জন্মদানের প্রাথমিক শ্বর হিসেবে বিবেচিত হয়, এবং বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে, গাইয়া তত্ত্বে পৃথিবীর পরিবেশ ও জীবনকে একক স্ব-নিয়ন্ত্রণকারী জীবের সাথে তুলনা করা হয় যা বসবাসযোগ্যতার স্থায়িত্বের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অনেক ধর্মের সৃষ্ট পুরাণে বলা হয় একজন অতিপ্রাকৃত শ্বর বা শ্বরবৃন্দ পৃথিবী সৃষ্টি করেছে।

বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের ফলে এই গ্রহ সম্পর্কিত মানবীয় মতামতসমূহের কতক সাংস্কৃতিকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। পশ্চিমে সমতল পৃথিবীর ধারণা পরিবর্তিত হয়ে গোলাকার পৃথিবী ধারণা সৃষ্টি হয়েছে; যা খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে পিথাগোরাস কর্তৃক প্রবর্তিত। এছাড়া ১৬শ শতাব্দীর পূর্বে পৃথিবীকে ভূকেন্দ্রিক মডেল-এ মহাবিশ্বের কেন্দ্র বলে বিশ্বাস করা হত; পরবর্তীকালে বিজ্ঞানীরা প্রথম তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখান যে এটি একটি আবর্তনকারী বস্তু এবং সৌর জগতের অন্যান্য গ্রহের সাথে তুলনীয়। বাইবেলের বংশতালিকা বিশ্লেষণ করে পৃথিবীর বয়স নির্ণয়-কারী জেমস উশার এবং আরো কয়েকজন খ্রিস্টান পণ্ডিত ও পাদ্রীর কারণে ১৯শ শতাব্দীর পূর্ব-পর্যন্ত পশ্চিমারা ধারণা করতো যে, পৃথিবীর বয়স কয়েক হাজার বছর। ১৯শ শতাব্দীতে এসে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন যে পৃথিবীর বয়স কমপক্ষে কয়েক মিলিয়ন বছর। ১৮৬৪ সালে লর্ড কেলভিন তাপগতিবিজ্ঞান ব্যবহার করে হিসাব করে দেখান যে পৃথিবীর বয়স ২০ মিলিয়ন থেকে ৪০০ মিলিয়ন বছর, যা বিতর্কের জন্ম দেয়; কিন্তু পরবর্তীতে ১৯শ শতাব্দীর শেষের দিকে ও ২০শ শতাব্দীর প্রথম দিকে পৃথিবীর বয়স নির্ধারণের নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি রেডিওএক্টিভিটি ও রেডিওমেট্রিক ডেটিং আবিষ্কারের পর প্রমাণিত হয় পৃথিবীর বয়স বিলিয়ন বছরেরও বেশি। পৃথিবী সম্পর্কিত মানুষের ধারণা পুনরায় পরিবর্তন হয় যখন ২০শ শতাব্দীতে মানুষ প্রথম কক্ষপথ থেকে পৃথিবীকে দেখে এবং বিশেষত অ্যাপোলো মহাশূন্য মিশনে তোলা ছবিগুলো দেখার পর।

আরও দেখুন

টীকা

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

Tags:

পৃথিবী নাম ও ব্যুৎপত্তিপৃথিবী র কালানুক্রমিক ইতিহাসপৃথিবী গাঠনিক বৈশিষ্ট্যপৃথিবী বার্ষিক ও আহ্নিক গতিপৃথিবী বাসযোগ্যতাপৃথিবী মানবীয় ভূগোলপৃথিবী চাঁদপৃথিবী গ্রহাণু এবং কৃত্রিম উপগ্রহপৃথিবী সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গিপৃথিবী আরও দেখুনপৃথিবী টীকাপৃথিবী তথ্যসূত্রপৃথিবী আরও পড়ুনপৃথিবী বহিঃসংযোগপৃথিবী

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

বাংলাদেশের জাতিগোষ্ঠীমোশাররফ করিমভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহইন্টার মায়ামি ফুটবল ক্লাববাংলাদেশের রেলওয়ে স্টেশনের তালিকাধর্মপাল (পাল সম্রাট)জলচর পাখিজাতিসংঘকাজী নজরুল ইসলামের রচনাবলিমুজিবনগরট্রাভিস হেডব্র্যাকপাকিস্তানউপসর্গ (ব্যাকরণ)দোয়া কুনুতজলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবহযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরবিরাট কোহলিটাইফয়েড জ্বরভীমরাও রামজি আম্বেদকরবিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমলোকনাথ ব্রহ্মচারীবিভিন্ন ধর্ম ও বিশ্বাসের তালিকাশামসুর রাহমানআমার দেখা নয়াচীনতাপপ্রবাহবাংলা ব্যঞ্জনবর্ণফরাসি বিপ্লবআবুল কাশেম ফজলুল হকশাবনূর অভিনীত চলচ্চিত্রের তালিকাবিশ্বের মানচিত্রমিশকাতুল মাসাবীহমিল্ফবাংলা স্বরবর্ণবাংলাদেশের নদীর তালিকাবাংলাদেশের ইউনিয়নদেয়ালের দেশতেজস্ক্রিয়তাআর্দ্রতাব্রহ্মপুত্র নদবাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পদবিআল্লাহর ৯৯টি নামলোকসভাশ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়বাংলা বাগধারার তালিকাবাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন২০২২–২৩ নিউজিল্যান্ড পুরুষ ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফর (ডিসেম্বর ২০২২)রবীন্দ্রসঙ্গীতজর্ডানমহেন্দ্র সিং ধোনিরশিদ চৌধুরীডায়াজিপামবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধমালয়েশিয়াবিজয় দিবস (বাংলাদেশ)বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরভূমণ্ডলীয় উষ্ণতা বৃদ্ধিসূরা ইয়াসীনঢাকা বিভাগহিন্দুধর্মের ইতিহাসবাংলাদেশ ব্যাংকহাদিসউমর ইবনে আবদুল আজিজপশ্চিমবঙ্গ মধ্য শিক্ষা পর্ষদবাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমৌলিক সংখ্যাঅরণ্যদেববাংলার প্ৰাচীন জনপদসমূহঅমর্ত্য সেনসিন্ধু সভ্যতাবটখালেদা জিয়াপ্লাস্টিক দূষণনারায়ণগঞ্জ জেলামীর মশাররফ হোসেনস্পিন (পদার্থবিজ্ঞান)কানাডাজগদীশ চন্দ্র বসু🡆 More