ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএএ) ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর ভারতের সংসদে পাস হওয়া একটি আইন। এটি ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের মাধ্যমে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে আগত নিপীড়িত সংখ্যালঘু হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি এবং খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী অভিবাসীদের ভারতীয় নাগরকিত্ব পাওয়ার সুযোগ প্রদান করে । উল্লেখিত তিনটি দেশে মুসলিম সংখ্যালঘু না হওয়ার, তাদের জন্য এই বিলের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ রাখা হয়নি। ভারতীয় আইনের আধারে প্রথমবারের মত ধর্মীয় পরিচয়কে নাগরিকত্ব লাভের শর্ত হিসাবে যুক্ত করা হয়েছে।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (২০১৯) | |
---|---|
ভারতের সংসদ | |
দীর্ঘ শিরোনাম
| |
সূত্র | ২০১৯-এর আইন নং ৪৭ |
প্রণয়নকারী | লোকসভা |
গৃহীত হয় | ১০ ডিসেম্বর ২০১৯ |
প্রণয়নকারী | রাজ্যসভা |
গৃহীত হয় | ১১ ডিসেম্বর ২০১৯ |
সম্মতির তারিখ | ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ |
স্বাক্ষরকাল | ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ |
স্বাক্ষরকারী | রাম নাথ কোভিন্দ ভারতের রাষ্ট্রপতি |
কার্যকরণ তারিখ | ১০ জানুয়ারি ২০২০ |
বিধানিক ইতিহাস | |
লোকসভা-এ বিল উপস্থাপন | নাগরিকত্ব (সংশোধন) বিল, ২০১৯ |
বিলের সূত্র | ২০১৯-এর বিল নং ৩৭০ |
বিলের প্রকাশনাকাল | ৯ ডিসেম্বর ২০১৯ |
উপস্থাপনকারী | অমিত শাহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী |
প্রথম পঠন | ৯ ডিসেম্বর ২০১৯ |
দ্বিতীয় পঠন | ১০ ডিসেম্বর ২০১৯ |
তৃতীয় পঠন | ১১ ডিসেম্বর ২০১৯ |
সংশোধন করে | |
নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫৫ | |
অবস্থা: বলবৎ |
ভারতে সরকার পদে অধিষ্ঠিত বর্তমান রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) তাদের পুর্বোক্ত নির্বাচনী ইসতেহারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, প্রতিবেশী দেশগুলোর নিপীড়িত হিন্দু সংখ্যালঘুদের তারা নাগরিকত্ব দেবে। সংশোধিত বিল অনুযায়ী, এসব ধর্মের লোকজনকে অবশ্যই ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ এর আগে ভারতে প্রবেশ করতে হবে এবং সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে "ধর্মীয় নিপীড়নের" শিকার অথবা ধর্মীয় নিপীড়নের ভীতি প্রদর্শন করলে তবেই ভারতের নাগরিকত্ব অর্জন করতে পারবেন। ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য ১২ মাস টানা ভারতে থাকার নিয়মের সঙ্গে বিগত ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর ভারতবাস জরুরি ছিল। নতুন সংশোধনীতে দ্বিতীয় অংশে পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে। উপরিউক্ত দেশগুলি থেকে আনা নির্দিষ্ট ৬টি ধর্মাবলম্বীদের জন্য ১১ বছর সময়কালটিকে নামিয়ে আনা হয়েছে ৫ বছরে। ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর মতে এই বিলের মাধ্যমে শুধুমাত্র ৩১,৩১৩ জন উপকৃত হবে। যাদের মধ্যে আছে ২৫,৪৪৭ জন হিন্দু, ৫৮০৭ জন শিখ, ৫৫ জন খ্রিষ্টান, ২ জন বৌদ্ধ ও ২ জন পার্সি।
বিভিন্ন জায়গা থেকে এই সংশোধনী বিল পাসের পরপরই সমালোচনা শুরু হয়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর মতে সংশোধনী বিল মুসলিমদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। ভারতে নতুন নাগরিকত্ব আইনকে মুসলমানদের জন্য বৈষম্যমূলক হিসেবে বর্ণনা করে তা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানায় জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর। সমালোচকদের উদ্বিগ্নচিত্ত এই কারণে যে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন এবং এই বিল ব্যবহার করে মুসলিম অভিবাসীদের রাজ্যহারা করা হবে। বিশ্লেষকরা তিব্বত, শ্রীলঙ্কা এবং মায়ানমারের মত প্রতিবেশী দেশগুলোর সংখ্যালঘুদের নিয়ে বিলে নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ভারত সরকারের বিবৃতি মতে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ হচ্ছে মুসলিম অধ্যুষিত দেশ যেখানে সাম্প্রতিক দশকে সাংবিধানিক ভাবে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং তাই সেসব দেশগুলোতে মুসলিমরা ধর্মীয় কারণে নিপীড়িত হবে এমনটা মানা সম্ভব নয় এবং তাদেরকে নিপীড়িত সংখ্যালঘু হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। বিশেষজ্ঞদের বর্ণনামতে এসব দেশগুলোতে হাজারা এবং আহমেদীয়ারা ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিসেবে বিবেচিত এবং প্রায়সই নিপীড়িত হয়।
এই বিল পাশের পর ভারতজুড়ে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। এই বিল পাসের ফলে আসাম এবং উত্তর পূর্ব রাজ্যগুলোতে অমুসলিমরা নাগরিকত্ব পাওয়ার কারণে বাঙালি অধ্যুষিত হয়ে পরবে এবং স্থানীয় সংস্কৃতি হারিয়ে যাবে- এই আশঙ্কায় আসাম এবং অন্যান্য উত্তর পূর্ব রাজ্যে বিক্ষোভ শুরু হয়। ভারতের অন্য প্রান্তে বিক্ষোভকারীদের মতে এই বিলের মাধ্যমে মুসলিমদের প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে। তাই তাদের দাবী- ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার বিধান মুসলিম অভিবাসী এবং রাজনৈতিক উদ্বাস্তুদের জন্যও রাখা হোক। ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বড় বড় বিক্ষোভ সংঘটিত হয়েছে। আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় এবং জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার শিক্ষার্থীদের অভিযোগ পুলিশ তাদের ওপর পাশবিক কায়দায় নির্যাতন চালিয়েছে। বিক্ষোভের সময় কিছু বিক্ষোভকারী নিহত হন কিছু বিক্ষোভকারী এবং কয়েকজন পুলিশ আহত হন। ব্যক্তি এবং জনসম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সহস্রাধিক মানুষ গ্রেফতার হয় এবং কিছু এলাকায় স্থানীয় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হয়। কিছু রাজ্য ঘোষণা করে তারা এই আইন বাস্তবায়ন হতে দেবে না। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিবৃতি দিয়ে বলেন, প্রয়োজনে রাজ্যের ক্ষমতা হ্রাস করে এই ক্যাব বাস্তবায়ন করা হবে।
১৯৫০ সালের কার্যকর হওয়া ভারতের সংবিধান অনুসারে সে দেশের বাসিন্দারা সবাই ভারতের নাগরিক। স্বাধীন হওয়ার সাত বছর পর ভারত সরকার ১৯৫৫ সালে নাগরিকত্ব আইন পাস করে। এই আইন এবং তার পরবর্তী সংশোধনী অনুসারে অবৈধ অভিবাসীরা ভারতের নাগরিকত্ব পাবে না। এই আইনে অবৈধ অভিবাসীদের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ১) যদি পাসপোর্ট বা ভিসা ছাড়া কেউ দেশে প্রবেশ করে থাকেন অথবা ২) বৈধ নথি নিয়ে প্রবেশ করার পর নির্দিষ্ট সময়কালের বেশি ভারতে বাস করে থাকেন, তাহলে তিনি বিদেশি অবৈধ অভিবাসী বলে গণ্য হবেন। সেসব অভিবাসীদের হয় দেশে ফেরত পাঠানো হবে নতুবা জেলে প্রেরণ করার বিধান রাখা হয়।
১৯৫১ সালে জাতিসংঘের কনভেনশনে ভারত সই করে নি। ফলে আশ্রয়প্রার্থীদের নিয়ে কোনো জাতীয় নীতি ভারতের নেই। সব আশ্রয়প্রার্থীদের "অবৈধ অভিবাসী" হিসেবে ভারতে উল্লেখ করা হয়। যদিও ভারতের অন্যতম ঐতিহ্য হলো তারা আশ্রয়প্রার্থীদের গ্রহণ করে এবং এর শুরু হয়েছিল জওহরলাল নেহেরু থেকে। তার নীতি ছিল এইসমস্ত আশ্রয়প্রার্থীদের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। ইউএস কমিটি ফর রিফিউজি এন্ড ইমিগ্রান্টের হিসাব মতে ভারতে ৪,৫৬,০০০ এর চেয়ে বেশি অভিবাসী বাস করছে। ইউএনসিএইচআরের মতে ভারতে ২ লক্ষ আশ্রয়প্রার্থী অবস্থান করছে।)
২০১৪ সালে ভারতের জাতীয় নির্বাচনে হিন্দুত্ব জাতীয়তবাদী দল বিজেপি বিজয়ী হয়। তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ছিল হিন্দু আশ্রয়প্রার্থীদের ভারতে আজীবন থাকার ব্যবস্থা করা হবে। ২০১৫ সালে ভারত এইসমস্ত আশ্রয়প্রার্থীদের দীর্ঘসময় ধরে থাকার ভিসা বৈধ করে। তারা আরো ঘোষণা করে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের "সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত" নাগরিকতা ভারতের "পাসপোর্ট আইন" ও "ফরেইনার আইন" এর ঝুটঝামেলা থেকে মুক্তি পাবে। ভারত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অংশ হিসেবে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-জৈন-পার্সি-শিখ কে তালিকাভুক্ত করেছে। তারা যদি ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার অথবা ধর্মীয় নিপীড়নের শিকারের ভীতিজনিত কারণে আশ্রপ্রার্থী হয়ে থাকে, তবে ভারতে আশ্রয় পাবে। যারা ভারতে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ সালের পূর্বে এসেছে তারা পাসপোর্ট সংশ্লিষ্ট ঝামেলা থেকে রেহাই পাবে দীর্ঘকালীন ভিসা প্রাপ্তির উপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হবে।
বিজেপি সরকার ২০১৬ সালে এই বিল লোকসভায় পেশ করে। সেখানে বলা হয় বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের অমুসলিম অভিবাসীরা নাগরিকত্ব পাবে। এই বিল ভারতের নিম্নকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ লোকসভায় পাস হলেও উত্তরপূর্ব ভারতে বিক্ষোভ এবং রাজনৈতিক বিরোধিতার দরুণ সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় তা মুলতবী করা হয়।উত্তরপূর্ব ভারতের স্থানীয়দের বিরোধিতাকারীদের আশঙ্কা ছিল, এতে বাংলাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক হিন্দু অভিবাসীর ঢল নামবে।
২০১৯ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় সংশোধনী বিল পাস করার পুনরায় আশ্বাস দেয়। ভারতে বিশাল সংখ্যক অবৈধ মুসলিম অভিবাসী বাস করে এজাতীয় বিশ্বাসকে প্রচারণায় তারা ব্যবহার করেছিল। বিজেপি সরকার আসামে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনকে (এনআরসি) হালনাগাদ করে। এর মুল লক্ষ্য ছিল মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্ত করা। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে এই হালানাগাদের লক্ষ্য হচ্ছে মুসলিম অভিবাসীদের বাছাই করা। আগস্ট ২০১৯ এ প্রকাশিত নিবন্ধনের তালিকায় প্রায় উনিশ লক্ষ বাসিন্দার নাম সেখানে ছিল না, যারা নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে ছিলেন। যাদের নাম তালিকায় আসে নি, তাদের সিংহভাগ বাঙালি হিন্দু হওয়ায়, বিজেপি হালনাগাদ নিবন্ধন প্রকাশের আগে তাদের সমর্থন সংক্ষিপ্ত পরিসরে তুলে নেয়। কারণ এই হিন্দুরা নাগরিকত্ব হারালে খোদ বিজেপিরই ভোট ব্যাংকে সংকট সৃষ্টি হবে। উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলির আশঙ্কা ও উদ্বেগকে গুরুত্ব দিয়ে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল কার্যকরের ক্ষেত্রে অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মিজোরামের ইনার লাইন পারমিটভুক্ত এলাকা এবং উত্তর পূর্বের ষষ্ঠ তফশিলভুক্ত এলাকাগুলিকে বাদ রাখা হয়েছে। এর ফলে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের আওতায় যাঁরা ভারতীয় নাগরিক হবেন, তাঁরা অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড ও মিজোরামের বাসিন্দা হতে পারবেন না। ইতিমধ্যেই যাঁরা ভারতীয় নাগরিক, তাঁদের ক্ষেত্রেও এই বিধিনিষেধ কার্যকর হবে। একই সঙ্গে আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরার বড় অংশ ষষ্ঠ তফশিলের অন্তর্ভুক্ত হবার কারণে এই বিলের আওতা থেকে বাদ থাকবে।
২০০৪ সালে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনের হালনাগাদ শুরু হওয়ার পর, সর্বোচ্চ আদালতের তত্ত্বাবধানে বিজেপি সরকার ২০১৩ সালে আসাম রাজ্যের জন্য এই হালনাগাদের কাজ সমাপ্ত করে। একই সাথে ১৯৯৫ সালের নাগরিকত্ব বিলের সংশোধনী প্রকাশ করে। বহু বছর ধরে আসাম বাসীর অভিযোগ লক্ষ লক্ষ বাংলাভাষী আসামে অবৈধভাবে বসবাস করছে। সেখানকার রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বহুদিনের আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে; ১৯৮৫ সালে ক্ষমতাসীন রাজিব গান্ধী সরকার তাদের সঙ্গে আসাম চুক্তি করতে বাধ্য হয়। এতে বলা হয়, নাগরিকপঞ্জিতে ঠাঁই পেতে হলে বাসিন্দাদের প্রমাণ করতে হবে, তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরুর আগে অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের আগে রাজ্যে আবাস গেঁড়েছে। ২০১৯ সালের আগস্টে জাতীয় নাগরিক পঞ্জির চূড়ান্ত হালনাগাদকৃত তালিকা প্রকাশিত হয়। সে তালিকায় প্রায় ১৯ লক্ষ অভিবাসীর নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল না; যারা নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছে। অন্তর্ভুক্ত না হওয়া এসব অভিবাসীদের সিংহভাগ হিন্দু; যারা আবার বিজেপি সরকারের অন্যতম ভোট ব্যাংক। কিন্তু ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব বিলে যে সংশোধনী আনা হয়েছে; তা আসামের অমুসলিম অন্তর্ভুক্ত না হওয়া অভিবাসীদের জন্য একটা প্রতিরক্ষা ঢাল হিসেবে কাজ করবে; যার ফলে ভারত সরকার অমুসলিম অন্তর্ভুক্ত না হওয়া অভিবাসীদের গ্রেফতার, দেশ থেকে বিতাড়ন বা অন্য কোনোভাবে হেনস্তা করতে পারবে না।
২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর ভারতীয় সংসদের রাজ্যসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যসভায় ঘোষণা করেন পুরো দেশজুড়েই জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) কার্যকর হবে। যদিও ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ খ্রিষ্ঠাব্দে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বক্তৃার একপর্যায়ে বলেন, "কোথাও এনআরসি নিয়ে কোনোপ্রকার আলাপ আলোচনা হয় নি, সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক আমাদের শুধু ভারতে এটি কার্যকর করতে হবে।"
ভারতীয় সরকারের নাগরিকত্ব আইনের ৫ এবং ৬ নং ধারা অনুযায়ী কোন ভিনদেশীকে নাগরিকত্ব পেতে হলে ধর্ম পরিচয় ব্যতীত কিছু আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় দাবী করেছে বিগত কিছু বছরে এই বিধানের মাধ্যমে সহস্রাধিক মুসলিম নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছে এবং নাগরিকত্ব পেয়েছে।
১৯ জুলাই, ২০১৬ এ লোকসভায় এই বিল প্রথমবার পেশ করা হয়। সে বছরের ১২ আগস্ট বিল পাঠানো হয় যৌথ সংসদীয় কমিটিতে। কমিটি তার প্রতিবেদন জমা দেয় ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি। পরের দিন, ২০১৯ সালের ৮ জানুয়ারি লোকসভায় সে বিল পাশ হয়। বিরোধী দলীয় রাজনীতিক এবং ভারতের উত্তর পূর্ব অঞ্চলের সাধারণ মানুষের বিরোধিতার মুখে রাজ্যসভায় এই বিল পেশ করা মূলতবী হয়ে যায়। সেখানকার সাধারণ মানুষ বাংলাদেশ থেকে অভিবাসীদের নিতে আগ্রহী নয় কারণ অতিরিক্ত অভিবাসীদের চাপে স্থানীয় সংস্কৃতি হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে তারা ভীত ছিলেন। নিয়মানুযায়ী ষোড়শ লোকসভার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় বিলটি তামাদি বা খারিজ হয়ে যায়।
সপ্তদশ লোকসভা গঠনের পর ২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভাতে এ বিল সংসদে পেশ করানোর জন্য ছাড়পত্র পায়।
২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর ১৭ তম লোকসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংশোধনী বিল উত্থাপন করেন এবং ৭ ঘণ্টা বিতর্ক শেষে ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর তা পাস করা হয়। বিলের পক্ষে ভোট পড়েছে ৩১১ জন সংসদ সদস্যের এবং বিপক্ষে ভোট পড়ে ৮০ জন সংসদ সদস্যের।
২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর রাজ্য সভায় এই বিল পাস হয়। যেখানে পক্ষে ভোট পড়ে ১২৫ টি এবং বিপক্ষে পড়ে ১০৫ টি।
১২ ডিসেম্বর ২০১৯ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতির সম্মতির পর বৃহস্পতিবারই রাষ্ট্রীয় গেজেট প্রকাশের মধ্য দিয়ে আইনটি কার্যকর করা হয়।
অবশেষে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দের ১১ মার্চ প্রায় সাড়ে চার বৎসর পর নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করে এবং দেশজুড়ে নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন বলবৎ হয়।
১৯৯৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনী বিলে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ সালের পূর্বে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তান থেকে আগত হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান, শিখ, জৈন, পার্সি ধর্মের অবৈধ অভিবাসীদের কে নাগরিকত্ব প্রাপ্তির সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এই বিলে মুসলিমদের সংযুক্ত করা হয়নি। ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর নথিমতে, এই বিলের বদৌলতে ৩০,০০০ এর বেশি কিছু মানুষ শুধুমাত্র উপকৃত হবে। ভারতের পূর্বোক্ত ১৯৯৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে ধর্মের মানদণ্ডে বিচার করে কাউকে নাগরিকত্ব প্রদানের সুযোগ ছিল না।
১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী কোন ব্যক্তিকে নাগরিকত্ব পেতে হলে পূর্বের ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর এবং গত এক মাস অবশ্যই ভারতে অবস্থান করতে হবে। সংশোধনী বিলে এগারো বছরকে নামিয়ে আনা হয়েছে পাচঁ বছরে। এই বিল কার্যকর হওয়া থেকে আসাম, মেঘালয় এবং ত্রিপুরাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একই সাথে ইনার লাইন পারমিট ভুক্ত এলাকা যেমন অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম এবং নাগাল্যান্ডেও এই আইন কার্যকর হবে না। ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর মনিপুরকে ইনার লাইন পার্মিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ভারতে অবস্থিত বিদেশী নাগরিকদের কেও যদি ভারতীয় বংশোদ্ভূত কিংবা কোনও ভারতীয়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় তবে তাঁরা ১৯৫৫ এর নাগরিকত্ব আইনের বিধান অনুযায়ী ওভারসিজ সিটিজেনশিপ অব ইন্ডিয়া (ওসিআই) নামক ছাড়পত্র পায়, যার ফলে ভারতে তারা থাকতে পারেন, যেকোনো স্থানে ঘুরতে পারেন, যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়তে এবং যেকোনো জায়গায় কাজ করতে পারেন। তবে নতুন সংশোধনী অনুসারে ‘ওসিআই’ কার্ড প্রাপকদের এই সুবিধাগুলি বজায় রাখলেও কোনও আইন লঙ্ঘন করলে ‘ওসিআই’ কার্ড বাতিল করতে পারে কেন্দ্র। তবে বাতিল করার পূর্বে আত্মপক্ষ সমর্থন করার সু্যোগ সংশোধনীতে রাখা হয়েছে।
নতুন আইন অনুযায়ী পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানের মুসলিমরা নাগরিকত্ব পাবেন না। সমালোচকরা এই ব্যতিক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলে। এই সংশোধনী শুধুমাত্র ভারতের প্রতিবেশী মুসলিম অধ্যুষিত দেশের জন্য প্রযোজ্য এবং দ্বিতীয়ত, পাকিস্তানের আহমেদিয়া এবং আফগানিস্তানের হাজারা সম্প্রদায় যেখানে নিজদেশে সংখ্যালঘু ও তারা নিপীড়িত হয়, তাদের নিয়ে কোনো কথা নেই। এই দুই সম্প্রদায়ের অনেকেই উদ্বাস্তু হিসেবে ভারতে অবস্থান করছে, তাদের ভবিষ্যত নিয়েও কোন শব্দ বাক্য সংশোধনী আইনে নেই।
ভারতীয় সরকারের মত অনুযায়ী আফগানিস্তান পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ হচ্ছে মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। সাম্প্রতিক দশকে তারা তাদের সংবিধান কে এমন ভাবে হালনাগাদ করেছে যেখানে ইসলামকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং তাই ইসলামিক এই দেশগুলোতে মুসলিমরা ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হবে এমন সম্ভাবনা কম। ভারত সরকারের বিবৃতি অনুযায়ী মুসলিম অধ্যুষিত দেশে মুসলিমরা "নিপীড়িত সংখ্যালঘু হিসেবে বিবেচিত" হতে পারে না। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এইসব দেশগুলোর সংবিধানে অমুসলিমদের স্বার্থরক্ষার বিধান রাখা হয়েছে, রাখা হয়েছে ধর্মীয় বিশ্বাস স্বাধীনভাবে চর্চা করার অধিকারের বিধান। কিন্তু এখানে অমুসলিমরা বৈষম্য এবং ধর্মীয় নিপীড়নের সম্মুখীন হয়।
বিজেপি সদস্য মীনাক্ষি লেখি দাবী করেছেন, পাকিস্তানের আহমদীয়াদের উপর আক্রমণ ধর্মীয় গত কারণে নয় বরং মুসলিমদের উপদলীয় গত কারণে সৃষ্ট। তিনি আরো দাবী করেন ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের সময় আহমেদীয়ারা ভারত থেকে পাকিস্তানে যাওয়ার পক্ষেই ভোট দিয়েছিল এবং তাদের অনেকেই ভারত বিরোধী।
এই আইনে ভারতের অমুসলিম প্রতিবেশীদের কথা বলা হয়নি। উদাহরণস্বরূপ শ্রীলঙ্কার হিন্দু উদ্বাস্তুদের ব্যাপারে এই আইন নীরব। বিজু জনতা দল এবং শিব সেনার সমর্থক দ্রাবিড় মুন্নেত্র কড়গম শ্রীলঙ্কা থেকে আগত তামিল হিন্দুরা যেন স্বতঃস্ফূর্ত নাগরিকত্ব পেয়ে যায়, তার ইচ্ছা জ্ঞাপন করেছিল।
১৯৫০ থেকে ১৯৬০ এর দশকে শ্রীলঙ্কার সিংহলে সহিংসতাকালীন সময়ে আসা তামিল হিন্দুরা তামিল নাড়ুতে বৈধভাবে বাস করার অনুমতি পায়। এই আইনে তামিল নাড়ুর উদ্বাস্তু শিবিরে বাস করা ২৯,৫০০ "হিল কান্ট্রি তামিল" নিয়ে কোনো কথা নেই। তাদের অনেকেই ভারতীয় নাগরিকদের বিবাহ করেছে তবে নিজেরা ভারতীয় নাগরিক হিসেবে স্বীকৃত নন। ২০১৯ সালে জুন মাসের উচ্চ আদালতের রুল অনুযায়ী তারা চাইলেই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবে এবং নাগরিক হিসেবে নির্বাচিত হবে। তবে সূর্য নারায়ন এর মত অনুযায়ী শ্রীলঙ্কা থেকে আগত তামিল হিন্দু উদ্বাস্তুদের ব্যাপারটা কিছুটা জটিল; কারণ কিছুক্ষেত্রে তাদের অনেকেই ভারতীয় নাগরিকত্ব চায় না বরং শ্রীলঙ্কায় ফিরে যেতে চায়। চীন থেকে আগত তিব্বতের বৌদ্ধ উদ্বাস্তুদের নিয়ে কোনো কথাই এই আইনে নেই। তারা ভারতে ১৯৫০ থেকে ১৯৬০ এর সময়ে আসে। একদশকের বেশি সময় ধরে তারা উদ্বাস্তু হিসেবে অভিহিত হয়েছিল। যদিও একটি উৎস মতে দালাইলামাকে ১৯৫৯ সালে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। ১৯৯২ সালের ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদন অনুযায়ী অবস্থান নেওয়া এসব উদ্বাস্তুদের ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার কোনো অধিকার নেই।
এই বিলে মায়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিয়ে কোন কথা বলা হয়নি। ভারত সরকার রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের জীবনের ঝুঁকি থাকা সত্বেও মায়ানমারে পুনরায় ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে।
এই বিল পাশের পর বিভিন্ন ধরনের সমালোচনা এবং বিক্ষোভ হয়। ভারতের পূর্বাঞ্চলের বিক্ষোভকারীরা উদ্বাস্তু এবং অভিবাসীদের যে কোন প্রকার নাগরিকত্ব দেওয়ার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের মতে এই সংশোধনী বাংলাদেশ থেকে আরও বহু শরণার্থীকে এদেশে চলে আসতে প্রণোদনা দেবে। বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য অনুযায়ী দশক ধরে চলা অভিবাসনের ফলে ইতিমধ্যে স্থানীয় মানুষরা তাদের ভূমি, রাজনৈতিক পরিচয় এবং সাংস্কৃতিক অধিকার ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। তারা আরো জানিয়েছে এই সংশোধনী পূর্বোক্ত আসাম চুক্তির বিরোধী। ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের শিক্ষার্থী এবং রাজনৈতিক বিক্ষোভকারীরা উদ্বিগ্ন যে নতুন আইনটি মুসলমানদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করে এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে ভারতীয় নাগরিকত্বও মুসলিম শরণার্থী এবং অভিবাসীদের পাওয়া উচিত।
২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর এ বিল অনুমোদনের পর আসামের গুয়াহাটিতে এবং অন্যান্য রাজ্যে সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায়ও বিক্ষোভ চলমান থাকে। সংশোধনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলার সময় ছয় জন মানুষ মারা যায় এবং পঞ্চাশ জন আহত হয়। অসমে নারী বিক্ষোভকারীরা বলেছেন যে তারা বাংলাদেশ অভিবাসী নয় বরং শান্তি প্রত্যাশী। এবং অভিবাসনের ঢলের কারণে তাদের সংস্কৃতি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
আসামের বিভিন্ন রাজ্যে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়। বিক্ষোভের কারণে আসাম এবং ত্রিপুরাতে কারফিউ জারি করা হয়। ত্রিপুরার অভিজাত পরিবার ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে একটি পিটিশন দাখিল করে। বিক্ষোভকারীরা এ কারফিউ ভাঙ্গার চেষ্টা করার জন্য সেনাবাহিনীকে তলব করা হয়। রেলওয়ের সরকারী হিসেব মতে গুয়াহাটিতে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের সময় দুইজন মানুষ নিহত হয়
ভারতের কলকাতা, দিল্লী, মুম্বাই, বেঙ্গালুরু, হায়েদ্রাবাদ, এবং জয়পুরের মত মহানগরীতে তীব্র বিক্ষোভ হয়। কেরালা এবং কর্ণাটকের মত উত্তরাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে ছোটপরিসরে মিছিল হয়।
ভারতের রাজধানী দিল্লির মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল গুলোতে সহিংস বিক্ষোভ শুরু হয়; যার মুখপাত্র চৌধুরী মতিন বলেন, "মানুষ বিক্ষোভ করছে কারণ এই সংশোধনীর দ্বারা মুসলিমদের সাথে বৈষম্য করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা দাবি করেন মুসলিম অধিবাসী এবং উদ্বাস্তু দেরকেও ভারতীয় নাগরিকত্ব দিতে হবে। বিক্ষোভ চলাকালে ১৫ ডিসেম্বর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ জোরপূর্বক প্রবেশ করে। পুলিশ ছাত্রদের উপর টিয়ার গ্যাস এবং লাঠিচার্জ করে। শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয় এবং সমপরিমাণ শিক্ষার্থী গ্রেপ্তারকৃত হয়। পুলিশের এই লাঠিচার্জ তীব্রভাবে সমালোচিত হয় এবং আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে পুরো দেশে।
১৬ ডিসেম্বর বিক্ষোভ যখন পৌঁছায় তার পঞ্চম দিনে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার টুইটের সিরিজ প্রকাশ করে সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ করে বলেন "কোন ভারতীয় কে এই আইন নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এই আইন শুধুমাত্র তাদের জন্য যারা বছরের-পর-বছর ধরে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয় এবং যাদের ভারত ব্যতীত আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই"।
১৯ ডিসেম্বর ১৪৪ ধারা জারি করানোর মাধ্যমে পুলিশ ভারতের বিভিন্ন অংশে, ব্যাঙ্গালোরের কর্ণাটক, উত্তরপ্রদেশ দিল্লী বিভিন্ন জায়গায় যে কোন প্রকার সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। চেন্নাইতে পুলিশ সকল প্রকার সমাবেশ-মিছিল এবং বিক্ষোভের অনুমতি কে খারিজ করে দেয়। দিল্লির বিভিন্ন অংশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়। সহস্রাধিক বিক্ষোভকারীদের কে গ্রেফতার করা হয় এবং কিছু বিরোধী রাজনৈতিক দলীয় নেতা ও রামচন্দ্র গুহ, সীতারাম ইয়েছুরি, যোগেন্দ্র জাদব, উমর খালিদ, সন্দীপ দীক্ষিত, তেহসীন পুনাওয়াল এবং ডি রাজার মত বিশিষ্টজনকে গ্রেফতার করা হয়।
২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব মুসলিম এ মাটির সন্তান অর্থাৎ ভারতীয় মুসলিমদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। এ সংশোধনমূলক আইন কোনো ভারতীয় কে কোন প্রকার প্রভাবিত করবে না।
এখন অবধি নাগরিকত্ব না পাওয়া ১৯৬০ এর দশক থেকে আসামের উদ্বাস্তু শিবিরে বসবাস করা বিশাল সংখ্যক উদ্বাস্তু পরিবারগুলো এই সংশোধনীকে আশার বাতি হিসেবে দেখেছে। তারা জানিয়েছে সংশোধনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ এবং সংশোধনী বাতিল করার জন্য যে দাবি তা দেখে তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং ভীত। নয়া দিল্লিতে পাকিস্তান থেকে আগত ৬০০ জন উদ্বাস্তু যারা ছোট খুপরি বানিয়ে বসবাস করতো তারা এই সংশোধনীকে উদযাপন করেছে। তিন দশক পূর্বে আফগানিস্তান থেকে আগত শিখদের একটি প্রতিনিধি দল ভারত সরকারকে আইন সংশোধনের জন্য ধন্যবাদ জানাই। তারা আরো বলে, এই সংশোধনীর জন্য অবশেষে তারা ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে পারবে এবং মূলস্রোতে মিশে যেতে পারবে।
ভারতে থাকা কিছু রোহিঙ্গা মুসলিম এ আইন নিয়ে আশাবাদী হয়নি বরং তাদের ফেরত পাঠানো হবে এই ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পরেছে। অন্যান্য রোহিঙ্গারা ভারতে থাকতে দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। কিন্তু এই সংশোধনী বিষয়ে কোন প্রকার মন্তব্য করতে রাজি হয়নি পাছে তাদেরকে পুনরায় ফেরত পাঠানো হয়। তারা জানায় স্থানীয় পুলিশ তাদের এই সংশোধনীর বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে নিষেধ করেছে।
হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস)-এর ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের সমর্থনে মিছিল বের করে। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি নেতারা সংশোধনী আইনের সমর্থনে মিছিল বের করেন তারা অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির দলের সদস্যরা এ রাজ্যের বাসিন্দাদের নতুন আইন নিয়ে বিভ্রান্ত করছে। রাজস্থানেএকইভাবে প্রায় ১৫০০০ মানুষ বিজেপির বের করা একটি মিছিলে যোগদান করে এই সংশোধনী কে সমর্থন করে। ২০ ডিসেম্বর ২০১৯ সালে কনট প্লেসে (কেন্দ্রীয় উদ্যান) জমা হয়ে কলেজ পড়ুয়া থেকে প্রবীণ নাগরিক জমা হয়ে এনআরসি-নাগরিকত্ব সংশোধনী বিরোধী পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। শতাধিক মানুষ পুনেতে মানবন্ধন করে ২৩ ডিসেম্বর সিএএর সমর্থন করে।
বিজেপি শাসিত নয় এরকম রাজ্যগুলোর মধ্যে মধ্যপ্রদেশ, ছত্রিশগড়, পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব, কেরালা এবং রাজস্থান এবং পুদুচেরীর ইউনিয়ন টেরিটরী- এই আইন কার্যকর করবে না বলে জানায়। রাজ্যগুলো নাগরিকত্ব সংশোধন আইন কার্যকর করবে না এ জাতীয় প্রস্তাবের মুখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বিবৃতিতে বলে, "রাজ্য সরকারগুলির নাগরিকত্ব আইন প্রত্যাখ্যান করার কোনও অধিকার নেই। ওই আইন ইতিমধ্যে সংবিধানের সপ্তম তফশিলের তালিকাভুক্ত হয়েছে। তালিকার কোনও আইন প্রত্যাখ্যানের অধিকার কোনও রাজ্যের নেই।"
ভারতীয় ইউনিয়ন মুসলিম লীগ ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে এই আইনকে অবৈধ ঘোষণা করে পিটিশন দাখিল করে। নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে ত্রিপুরার রাজ পরিবার আবেদন করে। ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ৬০টি আবেদনে সাড়া দিতে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বরে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে একটি নোটিশ ইস্যু করে। বিচারক মণ্ডলি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন স্থগিত রাখার আবেদন খারিজ করে। পরবর্তী শুনানির জন্য ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারী দিন ধার্য করে আদালত।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন, ২০১৯, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.