মতিউর রহমান নিজামী

মতিউর রহমান নিজামী (৩১ মার্চ ১৯৪৩ - ১১ মে ২০১৬) ছিলেন একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ। ২০১৬ সালের ১১ই মে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসিতে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর দলনেতা বা আমীর ছিলেন। তিনি মূলত ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী। এছাড়াও চট্টগ্রামের দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি আল বদর নামের আধা-সামরিক বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাকাণ্ডে আল-বদর সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করে, এবং ১৪ই ডিসেম্বরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পেছনেও তাদের প্রধান ভূমিকা ছিল।

মতিউর রহমান নিজামী
মতিউর রহমান নিজামী
মতিউর রহমান নিজামী
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এর আমীর
কাজের মেয়াদ
২০০০ – ২০১৬
পূর্বসূরীগোলাম আজম
উত্তরসূরীমকবুল আহমদ
বাংলাদেশের কৃষি মন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১০ অক্টোবর ২০০১ – ২২ মে ২০০৩
প্রধানমন্ত্রীখালেদা জিয়া
উত্তরসূরীএম কে আনোয়ার
বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
২২শে মে ২০০৩ – ২৮শে অক্টোবর ২০০৬
প্রধানমন্ত্রীখালেদা জিয়া
পূর্বসূরীএম কে আনোয়ার
পাবনা-১ আসনের
সংসদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
১লা অক্টোবর ২০০১ – ২৮শে অক্টোবর ২০০৬
পূর্বসূরীঅধ্যাপক আবু সাইয়িদ
উত্তরসূরীশামসুল হক টুকু
সংখ্যাগরিষ্ঠ১৩৫,৯৮২ (৫৭.৬৮%)
কাজের মেয়াদ
২৭শে ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ – ১৬ই ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬
উত্তরসূরীঅধ্যাপক আবু সাইয়িদ
সংখ্যাগরিষ্ঠ৫৫,৭০৭ (৩৬.৮৫%)
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(১৯৪৩-০৩-৩১)৩১ মার্চ ১৯৪৩
পাবনা , বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি , ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে বাংলাদেশ)
মৃত্যু১১ মে ২০১৬(2016-05-11) (বয়স ৭৩)
পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, ঢাকা
মৃত্যুর কারণফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর
নাগরিকত্বমতিউর রহমান নিজামী ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
মতিউর রহমান নিজামী পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
মতিউর রহমান নিজামী বাংলাদেশ
জাতীয়তাবাংলাদেশী
রাজনৈতিক দলবাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী
দাম্পত্য সঙ্গীশামসুন্নাহার নিজামী
প্রাক্তন শিক্ষার্থীঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
জীবিকারাজনীতিবিদ
ধর্মইসলাম

যদিও হিউম্যান রাইটস্‌ ওয়াচ, বিভিন্ন রাজনৈতিক পক্ষ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা এই বিচারকে স্বাগত জানিয়েছিল কিন্তু নভেম্বর ২০১১ সালে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মামলার তদন্তের অগ্রগতি, স্বচ্ছতার অভাব এবং প্রতিপক্ষের আইনজীবী ও সাক্ষীদের হয়রানির বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরে সরকারের সমালোচনা করেন।

তিনি জামায়াতে ইসলামীর সমর্থনে ১৯৯১২০০১ সালে সংসদ সংসদ নির্বাচিত হন এবং বাংলাদেশ সরকারের কৃষি (২০০১-০৩) ও শিল্প মন্ত্রনালয়ের (২০০৩-০৬) মন্ত্রী হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে মৃত্যুদন্ডাদেশ পাওয়ার পর ২০১৬ সালের ১১ই মে বুধবার রাত ১২টা ১০ মিনিটে পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।

দ্যা রয়েল ইসলামিক ষ্ট্র্যাটেজিক ষ্টাডিজ সেন্টার নামক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ৫০০ জন মুসলমান ২০১৩/২০১৪ সংস্করণের তালিকায় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে তিনি স্থান লাভ করেন।

ব্যক্তিগত জীবন

নিজামী ১৯৪৩ সালের ৩১শে মার্চ পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার মনমথপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৩ সালে কামিল এবং ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তার পিতার নাম লুৎফর রহমান খান। ব্যক্তিগত জীবনে নিজামী সামসুন্নাহারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সামসুন্নাহার ঢাকার মানারাত ইন্টারন্যাশনাল কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই দম্পত্তির চার পুত্র ও দুই কন্যা রয়েছে।

রাজনৈতিক জীবন

মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টে ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৬১ সালে তৎকালীন পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের (বর্তমান ইসলামী ছাত্র শিবির) সাথে যুক্ত হন। পরপর তিন বছর (১৯৬৬-৬৯) তিনি পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন । এরপর দুইবার তিনি গোটা পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান জামায়াতে ইসলামী এবং এর অনেক সদস্যকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন কারণ দলটি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান বাহিনীকে সমর্থন দিয়েছিল। এ সময় মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এবং দলের আরো কয়েকজন প্রধান নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশ ত্যাগ করেন।

১৯৭৫ সালে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের হাতে শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পর ১৯৭৭ সালে একটি অভ্যূত্থানের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন। তিনি ১৯৭৮ সালে শীর্ষ জামায়াত নেতা যেমন, গোলাম আযম ও নিজামীকে বাংলাদেশে ফিরে আসার অনুমতি দেন; তারা পুনরায় জামায়াতে ইসলামীকে পুনরুজ্জীবিত করেন এবং এটি দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী রাজনৈতিক দলে পরিনত হয়। মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী দলের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন এবং জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরকে সংগঠিত করেন। ১৯৭৮-১৯৮২ তিনি ঢাকা মহানগরীর আমীর ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৩-১৯৮৮ পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৮৮ সালের ডিসেম্বরে সেক্রেটারী জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব নেন এবং আমীর নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত (২০০০) দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯১ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামীর হয়ে সংসদীয় আসন পাবনা-১ (সাঁথিয়া-বেড়া) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৯৪ পর্যন্ত সংসদে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে তিনি তার প্রার্থীতা হারান এবং আওয়ামী লীগের অধ্যাপক আবু সাঈদ তার আসন থেকে নির্বাচিত হন।

জামায়াতে ইসলামীর আমীর

২০০১ সালে গোলাম আযমের উত্তরসূরী হিসেবে নিজামী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর হিসেবে দায়িত্ব পান। একই বছর নিজামী বিএনপির সাথে চারদলীয় ঐক্যজোট গঠন করেন এবং তার নির্বাচনি এলাকা পাবনা-১ থেকে ৫৭.৬৮% ভোট পেয়ে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১-২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি কৃষিমন্ত্রী ও ২০০৩-২০০৬ সাল পর্যন্ত শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে পাবনা-১ আসন থেকে চার দলীয় ঐক্যজোটের পক্ষে পুনরায় নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের মো: শামসুল হকের কাছে পরাজিত হন। নিজামী নির্বাচনে ৪৫.০৬% ভোট অর্জন করেন। আওয়ামী লীগ সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ আসন লাভ করে।

বিতর্ক

দুর্নীতির অভিযোগ

মে ২০০৮ সালে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন নিজামীসহ আরো কয়েকজন রাজনীতিবিদের নামে গেটকো দুর্নীতি মামলা করেন, এতে বলা হয় তিনিসহ অন্যরা অবৈধভাবে স্থানীয় গেটকো ফার্মের সাথে কন্টেইনার ডিপো সংক্রান্ত একটি চুক্তি করেছিলেন। নিজামীসহ আরো ১২ জনের নামে এই মামলায় ২০০৮ সালে ১৫ই মে গ্রেফতারি পরোয়ানা জাড়ি করেন আদালত।

নিজামীসহ অন্যদের বিরোদ্ধে অভিযোগ ছিল, কোম্পানিটি শর্ত না পূরণ করা সত্ত্বেও আসামীরা তাদের টেন্ডার গ্রহণ করেছিলেন। আর এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশ সরকারের ১০০ মিলিয়ন টাকার উপরে ক্ষতি হয়েছিল। নিজামী অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং বলেন মামলাটি রাজনৈতিকভাবে করা হয়েছে। তিনি দুই মাস পর জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন।

ধর্মীয় মামলা

২০১০ সালের ১৭ই মার্চ একটি জনসভায় ঢাকা মহানগর জামায়াতের আমির রফিকুল ইসলাম নিপীড়নের কথা উল্লেখ করে নিজামীর জীবনকে নবী মুহাম্মদ-এর সাথে তুলনা করেন। ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুভূতিতে আঘাত করেছে, এমন অভিযোগে ২১শে মার্চ বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, ঢাকা মহানগর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম খাঁন ও ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) ছাত্রশিবিরের সভাপতি আ স ম ইয়াহিয়ার নামে মামলা করেন।

২৯ জুন, ২০১০ তারিখে রমনা থানা পুলিশ প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মতিউর রহমান নিজামীসহ আরো তিনজন সিনিয়র জামায়াত নেতাকে গ্রেপ্তার করে। তিনি পরের দিন জামিনের জন্য আবেদন করেন এবং ১৪ই ফেব্রুয়ারি ২০১১ সালে মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য আবেদন করেন। ২০১১ সালের মার্চে উচ্চ আদালত মামলাটি চার মাসের জন্য মুলতুবি ঘোষণা করেন।

দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা

২০১১ সালের ৪ই মে নিজামীকে ভারতের আসামের বিদ্রোহী সংগঠন উলফার জন্য অস্ত্র চোরাচালান মামলায় গ্রেফতার করা হয়। ৭ই সেপ্টেম্বর ২০১১ সালে তার জামিন আবেদন আদালত নাকচ করে দেন।

৩০শে জানুয়ারি ২০১৪ সালে নিজামীসহ আরো ১৩ জন আসামীকে অস্ত্র চোরাচালান মামলায় অভিযুক্ত প্রমাণিত হওয়ার পর আদালত ফাঁসির দন্ডাদেশ দেন।

যুদ্ধাপরাধের বিচার

মতিউর রহমান নিজামী 
নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে মে ০৪, ২০১৬-এ গণজাগরণ মঞ্চের অবস্থান কর্মসূচি।

১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচার বিষয়ে ২০০৯ সালের ২৯শে জানুয়ারি জাতীয় সংসদে একটি প্রস্তাব পাশ হয়। সংসদে গৃহীত প্রস্তাবের বাস্তবায়নে সরকার বিদ্যমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ অনুযায়ী অভিযুক্তদের তদন্ত এবং বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং সরকারের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত ঘোষণাটি আসে ২০০৯ সালের ২৫শে মার্চ।

২০১০ সালের ২৯ জুন অন্য একটি মামলায় গ্রেফতার নিজামীকে একই বছরের ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। এরপর ২০১১ সালের ১১ ডিসেম্বর জামায়াতের আমিরের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উপস্থাপন করে ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষ। ২৮ ডিসেম্বর আদালত অভিযোগ আমলে নেয়। ২০১২ সালের ২৮ মে থেকে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে হত্যা, লুট, ধর্ষণ, উস্কানি ও সহায়তা, পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার মতো ১৬টি অভিযোগে নিজামীর মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-এ বিচার করা হয়।

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগসমূহ

রাষ্ট্রপক্ষ মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের যেসব অভিযোগ আনেন সেগুলো হলো,

  1. পাবনা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাওলানা কছিমুদ্দিনকে ১৯৭১ সালের ৪ জুন পাকিস্তানি সেনারা অপহরণ করে নূরপুর পাওয়ার হাউসের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে নিজামীর উপস্থিতিতে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। ১০ জুন তাকে ইছামতী নদীর পাড়ে আরো কয়েকজনের সঙ্গে হত্যা করা হয়।
  2. ১৯৭১ সালের ১০ মে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়ি গ্রামের রূপসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানীয় শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকারদের একটি সভায় নিজামী উপস্থিত ছিলেন। সভায় পরিকল্পনা করে ১৪ মে পাকিস্তানি সেনারা দুইটি গ্রামের প্রায় সাড়ে ৪৫০ জনকে হত্যা করে এবং রাজাকাররা প্রায় ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ করে।
  3. ১৯৭১ সালের মে মাসের শুরু থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণের ঘটনায় নিজামীর সম্পৃক্ততা রয়েছে কারণ তিনি ঐ ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত করতেন।
  4. করমজা গ্রামে হত্যা, ধর্ষণ ও লুটের ঘটনায় তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ।
  5. ১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল নিজামীর সহযোগিতায় পাকিস্তানি সেনারা ঈশ্বরদী উপজেলার আড়পাড়া ও ভূতের বাড়ি গ্রামে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় ২১ জন নিরস্ত্র মানুষ হত্যা করা হয়।
  6. নিজামী ১৯৭১ সালের ২৭ নভেম্বর ধুলাউড়া গ্রামে ৩০ জনকে হত্যায় নেতৃত্ব দেন ও তার সম্পৃক্ততা ছিল।
  7. ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর সোহরাব আলী নামক এক ব্যক্তিকে নির্যাতন ও হত্যা করেন।
  8. ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট নিজামী নাখালপাড়ার পুরোনো এমপি হোস্টেলে গিয়ে আটক রুমী, বদি, জালালদের হত্যার ঘটনায় পাকিস্তানি সেনাদের প্ররোচনা দেন।
  9. ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর হিন্দু অধ্যুষিত বিশালিখা গ্রামে ৭০ জনকে গণহত্যা করেন।
  10. নিজামীর নির্দেশে রাজাকাররা পাবনার সোনাতলা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা অনিল চন্দ্র কুণ্ডুর বাড়িতে আগুন দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
  11. ১৯৭১ সালের ৩ আগস্ট চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউটে ইসলামী ছাত্রসংঘ আয়োজিত সভায় নিজামী উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন।
  12. ২২ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক একাডেমি হলে আল মাদানীর স্মরণসভায় উস্কানিমূলক বক্তব্যের জন্য ১২ নম্বর অভিযোগ গঠন করা হয়।
  13. ৮ সেপ্টেম্বর প্রতিরক্ষা দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে ছাত্রসংঘের সভায় বক্তব্যের জন্য ১৩ নম্বর অভিযোগ গঠন করা হয়।
  14. ১০ সেপ্টেম্বর যশোরে রাজাকারদের প্রধান কার্যালয়ে উস্কানিমূলক বক্তব্যের জন্য ১৪ নম্বর অভিযোগ গঠন করা হয়।
  15. ১৯৭১ সালের মে মাস থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাঁথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে অবস্থিত রাজাকার ক্যাম্পে নিজামী ও রাজাকার সামাদ মিয়ার ষড়যন্ত্রে সেখানে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়।
  16. ১৯৭১ সালের ১৮ই ডিসেম্বর জামায়াতের তৎকালীন ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ ও আলবদর বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেন এবং আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে নিজামীর বিরোদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়।

দন্ড

ট্রাইব্যুনালের রায়ে নিজামীর বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগের মধ্যে ৮টি প্রমাণিত হয়। ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর রায়ে প্রমাণিত অভিযোগের ৪টিতে নিজামীকে ফাঁসির আদেশ প্রদান করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ঐ রায়ের বিরুদ্ধে ৬ই জানুয়ারি তিনি আপিল করলে ট্রাইব্যুনালের দেয়া দণ্ড বহাল রাখে আপিল বিভাগ। এরপর তিনি ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করেন। যা ৫ মে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ আবেদনটি খারিজ করে দেয়।

ফাঁসি

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়ার পর ২০১৬ সালের ১১ই মে বুধবার রাত ১২টা ১০ মিনিটে পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

প্রকাশিত গ্রন্থাবলি

  • এক পরাশক্তির অন্যায় যুদ্ধ আতঙ্কিত করেছে বিশ্বের মানুষকে
  • মুসলিম উম্মাহর দায়িত্ব ও কর্তব্য
  • গণতন্ত্র গণবিপ্লব ও ইসলামী আন্দোলন
  • ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহ
  • স্মৃতির পাতা থেকে
  • কুরআনের আলোকে মু'মিনের জীবন
  • নারী সমাজে দাওয়াত ও সংগঠন সম্প্রসারণের উপায়
  • কারাগারের স্মৃতি
  • রাসূলুল্লাহর (সাঃ) মক্কার জীবন
  • ইসলাম ও সন্ত্রাসবাদ
  • ৮ম জাতীয় সংসদের ৪টি ভাষণ
  • রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলের সংস্কার
  • مسؤولية الامة الاسلامية ومهمتها (ইসলামী জাতির দায়িত্ব ও লক্ষ্য)
  • রাজনীতির স্বার্থে ধর্ম বনাম ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি
  • ইসলামী আন্দোলন : সমস্যা ও সম্ভাবনা
  • কুরআনের আলোকে মু'মিনের জীবন
  • ইসলাম ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ
  • দ্বীন প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব
  • কুরআন রমযান তাকওয়া
  • কুরআন ও হাদীসের আলোকে রাসূল মুহাম্মদ স.
  • ইসলামী আদাবে জিন্দেগী
  • আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়
  • আল-কোরআনের পরিচয়
  • ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠন

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

রাজনৈতিক দপ্তর
পূর্বসূরী
গোলাম আযম
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর
২০০১–২০১৬
উত্তরসূরী
মকবুল আহমদ

Tags:

মতিউর রহমান নিজামী ব্যক্তিগত জীবনমতিউর রহমান নিজামী রাজনৈতিক জীবনমতিউর রহমান নিজামী বিতর্কমতিউর রহমান নিজামী যুদ্ধাপরাধের বিচারমতিউর রহমান নিজামী দন্ডমতিউর রহমান নিজামী ফাঁসিমতিউর রহমান নিজামী প্রকাশিত গ্রন্থাবলিমতিউর রহমান নিজামী আরও দেখুনমতিউর রহমান নিজামী তথ্যসূত্রমতিউর রহমান নিজামী বহিঃসংযোগমতিউর রহমান নিজামীআল বদরবাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ১৯৭১ বাংলাদেশি বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়চতুর্থ শিল্প বিপ্লবমেসোপটেমিয়াঅষ্টাঙ্গিক মার্গজানাজার নামাজএইচআইভি/এইডসকৃত্তিবাসী রামায়ণশবনম বুবলিসূরা ইয়াসীনউত্তম কুমারকলকাতাগঙ্গা নদীঝড়বদরের যুদ্ধবিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সবাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরলাইসিয়ামআলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ঢাকা মেট্রোরেলের স্টেশনের তালিকাদুরুদবিশ্ব বই দিবসপাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারশেংগেন অঞ্চলবঙ্গবন্ধু-১সানি লিওনঅলিউল হক রুমিআয়াতুল কুরসিহারুনুর রশিদরক্তশূন্যতাকান্তনগর মন্দিরইসলামে যৌনতাসৈয়দ শামসুল হকতাজমহলআবু হানিফামৌলিক পদার্থের তালিকাইহুদি ধর্মপ্রধান পাতামেঘনা বিভাগইসলামে বিবাহমোশাররফ করিমবাংলাদেশের নদীবন্দরের তালিকানামসার্বজনীন পেনশনরাঙ্গামাটি জেলামাওলানাবাংলাদেশের মেডিকেল কলেজসমূহের তালিকাশক্তিভারতের সংবিধানবাংলা ব্যঞ্জনবর্ণকমনওয়েলথ অব নেশনসস্বাধীনতা দিবস (ভারত)দৈনিক যুগান্তরভারতের রাষ্ট্রপতিঐশ্বর্যা রাইফ্রান্সহৃৎপিণ্ডব্যঞ্জনবর্ণনরসিংদী জেলাশনি (দেবতা)আস-সাফাহতানজিন তিশাহিন্দুধর্মবাংলাদেশের উপজেলার তালিকাস্বামী বিবেকানন্দঅসহযোগ আন্দোলন (ব্রিটিশ ভারত)প্রথম বিশ্বযুদ্ধলিঙ্গ উত্থান ত্রুটিবাংলাদেশের মন্ত্রিসভাকৃষ্ণরামকৃষ্ণ পরমহংসমিজানুর রহমান আজহারীএশিয়াজন্ডিসউহুদের যুদ্ধসামাজিক লিঙ্গসত্যজিৎ রায়সূর্যগ্রহণটেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা🡆 More