বেগম খালেদা জিয়া (জন্ম: আগস্ট ১৫ ১৯৪৫), জন্মগত নাম খালেদা খানম পুতুল, একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যিনি ১৯৯১-১৯৯৬ সাল এবং ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী রূপে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর মাঝে দ্বিতীয় মহিলা সরকারপ্রধান (বেনজির ভুট্টোর পর)। তার স্বামী জিয়াউর রহমানের শাসনকালে তিনি ফার্স্ট লেডি ছিলেন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপার্সন ও দলনেত্রী, যা তার স্বামী জিয়াউর রহমান কর্তৃক ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
বেগম খালেদা জিয়া | |
---|---|
বাংলাদেশের ১২তম প্রধানমন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ১০ অক্টোবর ২০০১ – ২৯ অক্টোবর ২০০৬ | |
রাষ্ট্রপতি | শাহাবুদ্দিন আহমেদ একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী জমিরুদ্দিন সরকার (ভারপ্রাপ্ত) ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ |
পূর্বসূরী | লতিফুর রহমান (তত্বাবধায়ক) |
উত্তরসূরী | ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ (তত্বাবধায়ক) |
কাজের মেয়াদ ২০ মার্চ ১৯৯১ – ৩০ মার্চ ১৯৯৬ | |
রাষ্ট্রপতি | শাহাবুদ্দিন আহমেদ (অস্থায়ী) আবদুর রহমান বিশ্বাস |
পূর্বসূরী | কাজী জাফর আহমেদ |
উত্তরসূরী | মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান (তত্বাবধায়ক) |
জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা | |
কাজের মেয়াদ ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ – ৯ জানুয়ারি ২০১৪ | |
পূর্বসূরী | শেখ হাসিনা |
উত্তরসূরী | রওশন এরশাদ |
কাজের মেয়াদ ২৩ জুন ১৯৯৬ – ১৫ জুলাই ২০০১ | |
পূর্বসূরী | শেখ হাসিনা |
উত্তরসূরী | শেখ হাসিনা |
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসন | |
দায়িত্বাধীন | |
অধিকৃত কার্যালয় ১০ মে ১৯৮৪ - বর্তমান | |
পূর্বসূরী | জিয়াউর রহমান |
জাতীয় সংসদের মেম্বার | |
কাজের মেয়াদ ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ – ৯ জানুয়ারী ২০১৪ | |
পূর্বসূরী | সাঈদ ইস্কান্দার |
উত্তরসূরী | শিরীন আখতার |
সংসদীয় এলাকা | ফেনী-১ |
কাজের মেয়াদ ১ অক্টোবর ২০০১ – ২৯ অক্টোবর ২০০৬ | |
পূর্বসূরী | জাফর ইমাম |
সংসদীয় এলাকা | বগুড়া-৬ |
কাজের মেয়াদ ২০ মার্চ ১৯৯১ – ১৫ জুলাই ২০০১জমির উদ্দিন সরকার | |
পূর্বসূরী | জাফর ইমাম |
উত্তরসূরী | সাঈদ ইস্কান্দার |
সংসদীয় এলাকা | ফেনী-১ |
বাংলাদেশের ফার্স্ট লেডি | |
কাজের মেয়াদ ২১ এপ্রিল ১৯৭৭ – ৩০ মে ১৯৮১ | |
রাষ্ট্রপতি | জিয়াউর রহমান |
পূর্বসূরী | মিসেস খুরশিদ চৌধুরী |
উত্তরসূরী | রওশন এরশাদ |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | খালেদা খানম পুতুল ১৫ আগস্ট ১৯৪৫ দিনাজপুর, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে বাংলাদেশ) |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত) পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
রাজনৈতিক দল | বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (১৯৮১–বর্তমান) |
অন্যান্য রাজনৈতিক দল | চার দলীয় জোট (১৯৯৯–২০১২) বিশ দলীয় জোট (২০১২–বর্তমান) |
দাম্পত্য সঙ্গী | জিয়াউর রহমান (বি. ১৯৬০–১৯৮১) |
সন্তান | তারেক রহমান (পুত্র) আরাফাত রহমান কোকো (পুত্র; মৃত) |
মাতা | তৈয়বা মজুমদার |
পিতা | ইস্কান্দার মজুমদার |
ধর্ম | ইসলাম |
১৯৮২ সালে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বে পরিচালিত সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে ১৯৯০ সালে সামরিক স্বৈরশাসক হিসেবে এরশাদের পতনের পূর্ব পর্যন্ত খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের জন্য চলমান আন্দোলনে নেতৃত্বদানের মাধ্যমে সহায়তা করেন। ১৯৯১ এর নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হওয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৯৬-এর স্বল্পস্থায়ী সরকারেও তিনি দায়িত্বপালন করেন,যখন কিনা অন্য দলগুলো উক্ত নির্বাচনকে বর্জন করেছিল। ১৯৯৬ সালের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। খালেদা জিয়ার দল পুনরায় ক্ষমতায় আসে ২০০১ সালে। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি নিজস্ব ৫টি সংসদীয় আসনের সবগুলোতেই জয়ী হন। ফোর্বস সাময়িকীর বিশ্বের ১০০ ক্ষমতাবান নারী নেতৃত্বের তালিকায় ২০০৪ সালে জিয়ার অবস্থান ১৪তম, ২০০৫ সালে ২৯তম, ও ২০০৬ সালে ৩৩তম।
২০০৬ সালে তার সরকারের নির্ধারিত শাসনকাল শেষ হওয়ার পর, ২০০৭ সালে নির্ধারিত নির্বাচন রাজনৈতিক সহিংসতা ও অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে বিলম্বিত হয়, ফলশ্রুতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক সামরিক পদ্ধতিতে রক্তপাতবিহীন ক্ষমতা অধিগ্রহণ করা হয়। উক্ত সরকারের সময়কালে, খালেদা জিয়া তার দুই সন্তানসহ দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হন।
গত দুই দশকের অধিকাংশ সময়ে, খালেদা জিয়ার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৯১ সাল থেকে তারা অনুক্রমিকভাবে প্রধানমন্ত্রী হয়ে আসছেন।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারিতে, খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে পাঁচ বছরের কারাবাসের দণ্ডপ্রাপ্ত হন। এতে তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন একটি এতিমখানা ট্রাস্ট গঠনের সময় অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন।
বেগম খালেদা জিয়ার প্রকৃত নাম খালেদা খানম পুতুল। আগস্ট ১৫, ১৯৪৫ সালে দিনাজপুরে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। তিন বোন এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়। ভাইয়েরা সবার ছোট। তার পিতামহ হাজী সালামত আলী, মাতামহ জলপাইগুড়ির তোয়াবুর রহমান। বাবা জনাব ইস্কান্দর মজুমদার এবং মা বেগম তৈয়বা মজুমদার। দিনাজপুর শহরের মুদিপাড়া। আদি পৈতৃকনিবাস ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের মজুমদার বাড়ী। বাবা জনাব ইস্কান্দর মজুমদার ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। ইস্কান্দার মজুমদার ১৯১৯ সালে ফেনী থেকে জলপাইগুড়ি যান। বোনের বাসায় থেকে মেট্রিক পাস করেন ও পরে চা ব্যবসায়ে জড়িত হন। ১৯৩৭ সালে জলপাইগুড়িতে বিয়ে করেন। জলপাইগুড়ির নয়াবস্তি এলাকায় ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত বসবাস করেন এবং ১৯৮৪ সালের ১৫ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। মা বেগম তৈয়বা মজুমদার ছিলেন একান্তভাবে একজন গৃহিণী । তিনি বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গেই থাকতেন। খালেদা পাঁচ বছর বয়সে দিনাজপুরের মিশন স্কুলে ভর্তি হন এরপর তিনি দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন একই বছর তিনি জিয়াউর রহমানকে বিয়ে করেন। এরপর থেকে তিনি খালেদা জিয়া বা বেগম খালেদা জিয়া নামে পরিচিতি লাভ করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] তিনি স্বামীর সাথে পশ্চিম পাকিস্তান এ বসবাসের পূর্বে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত দিনাজপুরের সুরেন্দ্রনাথ কলেজ এ পড়াশোনা করেন।
তার স্বামী বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি লেফটেন্যান্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান বীরউত্তম।১৯৬০ সালের আগস্ট মাসে জিয়াউর রহমানের সাথে তার বিয়ে হয়। জিয়া তখন ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন। ডি এফ আই এর কর্মকর্তা রূপে তখন দিনাজপুরে কর্মরত ছিলেন। তার এক ভাই মেজর(অবঃ) সাঈদ এস্কান্দার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল থেকে ফেনী-১ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। তার দুই ছেলের মধ্যে বড় তারেক রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তার কনিষ্ঠ ছেলে আরাফাত রহমান কোকো ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি মালায়া হাসপাতালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। আরাফাত রহমান একজন ব্যবসায়ী ছাড়াও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ও সিটি ক্লাবের সাথে যুক্ত ছিলেন।
১৯৬৫ সালে খালেদা জিয়া স্বামীর সাথে পশ্চিম পাকিস্তানে (বর্তমানে পাকিস্তান)যান। ১৯৬৯ সালের মার্চ পর্যন্ত করাচিতে স্বামীর সাথে ছিলেন। এরপর ঢাকায় চলে আসেন। কিছুদিন জয়দেবপুর থাকার পর চট্টগ্রামে স্বামী কর্মহেতু স্থানান্তরিত হলে তার সঙ্গে সেখানে এবং চট্টগ্রামের ষোলশহর অঞ্চলে বসবাস করেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রারম্ভকালে খালেদা জিয়া কিছুদিন আত্মগোপন করে থাকার পর ১৬ মে নৌপথে ঢাকায় চলে আসেন। বড় বোন খুরশিদ জাহানের বাসায় ১৭ জুন পর্যন্ত থাকেন। ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল জামশেদের অধীনে বন্দী ছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে তিনি মুক্তি পান। রাজনীতিতে আসার আগ পর্যন্ত বেগম জিয়া একজন সাধারণ গৃহবধূ ছিলেন। মূলত দুই পুত্রকে লালন পালন ও ঘরের কাজ করেই সময় কাটাতেন। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি থাকাকালীনও রাজনীতিতে বেগম জিয়ার উপস্থিতি ছিল না।
২০২১ সালের এপ্রিলে খালেদা জিয়া করোনা আক্রান্ত হন। তার বাসা ফিরোজার আরো ৮ জনের করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। ২০২২ সালে তিনি খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে।
১৯৮১ সালের ৩০ মে এক সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান নিহত হন। এরপর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা কর্মীদের আহ্বানে তিনি ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এরশাদ বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। বেগম জিয়া এর বিরোধিতা করেন। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন। ১৯৮৩ সালের ১ এপ্রিল দলের বর্ধিত সভায় তিনি প্রথম বক্তৃতা করেন। বিচারপতি সাত্তার অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালের ১০ মে দলের চেয়ারপার্সন নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বেই মূলত বিএনপির পূর্ণ বিকাশ হয়।
১৯৮৩ সালের বেগম জিয়ার নেতৃত্বে সাত দলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়। একই সময় এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন আরম্ভ হয়। বেগম জিয়া প্রথমে বিএনপিকে নিয়ে ১৯৮৩ এর সেপ্টেম্বর থেকে ৭ দলীয় ঐক্যজোটের মাধ্যমে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সূচনা করেন। একই সময় তার নেতৃত্বে সাত দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন পনেরো দলের সাথে যৌথভাবে আন্দোলনের কর্মসূচির সূত্রপাত করে। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ দফা আন্দোলন চলতে থাকে। কিন্তু ১৯৮৬ সালের ২১ মার্চ রাতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এরশাদের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে বাধার সৃষ্টি হয়। ১৫ দল ভেঙে ৮ দল ও ৫ দল হয়। ৮ দল নির্বাচনে যায়। এরপর বেগম জিয়ার নেতৃত্বে ৭ দল, পাঁচ দলীয় ঐক্যজোট আন্দোলন চালায় এবং নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে। ১৯৮৭ সাল থেকে খালেদা জিয়া "এরশাদ হটাও"শীর্ষক এক দফার আন্দোলনের সূত্রপাত করেন। এর ফলে এরশাদ সংসদ ভেঙে দেন। তারপর পুনরায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের উপক্রম হয়। অবশেষে দীর্ঘ আট বছর অবিরাম, নিরলস ও আপোসহীন সংগ্রামের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বিএনপি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। সেই নির্বাচনে খালেদা জিয়া মোট পাঁচটি আসনে অংশ নিয়ে পাঁচটিতেই জয়লাভ করেন।
১৯৯১ সালের ১৯ মার্চ বেগম খালেদা জিয়া পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। তার সরকার দেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রতিষ্ঠিত করে। ২ এপ্রিল তিনি সংসদে সরকারের পক্ষে এই বিল উত্থাপন করেন। একই দিন তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ কে স্বপদে ফিরে যাবার ব্যবস্থা করে একাদশ সংশোধনী বিল আনেন। ৬ আগস্ট ১৯৯১ সালের সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে দুটি বিল পাশ হয়।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। যা পরবর্তীতে ৯৬ এর একদলীয় নির্বাচন হিসেবে গণ্য হয়। সকল বিরোধীদলের আপত্তির পর ও খালেদা জিয়া ও তার দল এই একক নির্বাচন করেন। আওয়ামী লীগ সহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বয়কট করে। এই সংসদ মাত্র ১৫ দিন স্থায়ী হয়। খালেদা জিয়া এই সংসদের ও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। প্রবল গণ আন্দোলন ও বর্হিবিশ্বের চাপে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাস হয় এবং খালেদা জিয়া পদত্যাগ করেন।
১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মোট ১১৬ আসনে জয় লাভ করে, যা সরকার গঠনে যথেষ্ট ছিল না। আওয়ামী লীগ মোট ১৪৭ আসন লাভ করে, তারা জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে। বিএনপি সপ্তম সংসদে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বেগম খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগের পাঁচ বছর শাসনকালে সংসদে বিরোধী দলনেত্রী ছিলেন ।
অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট ও জাতীয় পার্টির সাথে চারদলীয় ঐক্যজোট গঠন করে। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় ঐক্যজোট বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। খালেদা জিয়া এই সংসদেও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর এই সংসদের মেয়াদ শেষ হয়।
২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চারদলীয় ঐক্যজোট বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়। মহাজোটের প্রায় ২৬০ টি আসনের বিপরীতে চার দলীয় ঐক্যজোট মাত্র ৩২টি আসন লাভ করে।
১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য রূপে দলে যোগ দেবার পর থেকে মোট পাঁচ বার তিনি আটক হন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে, ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর আটক হন।
তিনি ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর ৩ তারিখে দুর্নীতির অভিযোগে পুত্রসহ আটক হন। ২০০৮ সালের ১১ই সেপ্টেম্বার তিনি সর্বোচ্চ বিচারালয়ের নির্দেশে মুক্তিলাভ করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক বন্দী হবার পর দীর্ঘ এক বছর সাত দিন কারাগারে অবস্থানকালে তার বিরুদ্ধে চলতে থাকা কোন অভিযোগেরই উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি হয়নি এবং চলতে থাকা তদন্তে তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগই প্রমাণিত হয়নি। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২ কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের দায়ে তার ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়। এরপরই তাকে বন্দী করে পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগার কাশিমপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।
১৩ নভেম্বর ২০১০ বেগম জিয়া তার ২৮ বছরের আবাসস্থল ছেড়ে যান। তিনি অভিযোগ করেন যে তাকে বলপ্রয়োগে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। তবে সরকারি পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তিনি স্বেচ্ছায় বাড়ি ত্যাগ করেছেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সাল থেকে অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হিসেবে জিয়াউর রহমানের সাথে শহীদ মইনুল সড়কের ৬ নম্বর বাড়িতে ওঠেন খালেদা জিয়া। ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়া চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হলে ১২ জুন তৎকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার সেনানিবাসের ওই বাড়িটি খালেদার নামে বরাদ্দ দেন।
২০১২ সালে বেগম খালেদা জিয়া একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিদেশ সফর করেন। আগস্টে তিনি রাজ পরিবারের আমন্ত্রণে সৌদি আরবে যান এবং পবিত্র ওমরাহ পালন করেন। এই সফরে তিনি সৌদি রাজপুত্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের সাথে সাক্ষাত করেন। তাদের বৈঠকে দ্বিদেশীয় সম্পর্ক ও সৌদি আরবে বাংলাদেশের শ্রম বাজারের সংকট উত্তরণের বিষয়ে আলোচনা হয়।
অক্টোবরে খালেদা জিয়া চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সফর করেন। সফরকালে তিনি চীনের রাষ্ট্রীয় ও দলীয় ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দের সাথে দেখা করেন। চীনের উপ-রাষ্ট্রপতি ও ভবিষ্যত একচ্ছত্র নেতা শি চিনফিংয়ের সাথে বৈঠকে তিনি বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও পদ্মা সেতু নির্মাণে বিনিয়োগের ব্যাপারে আলোচনা করেন। বৃহত্তর অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক বিষয়াবলিও তাদের আলোচনায় উঠে আসে। শি চিনফিং ছাড়াও খালেদা জিয়া কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিষয়ক প্রধান ওয়াং চিয়ারুইয়ের সাথে দেখা করেন। উল্লেখ্য এ বছরের মাঝামাঝিতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের সম্ভাব্য মূল অর্থদাতা বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশ সরকারের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনলে বিশ্ব ব্যাংককে অনুসরণ করে একাধিক দাতা সংস্থা ঋণদান থেকে সরে দাঁড়ায় ও প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়।
বেগম জিয়ার চীন সফর সম্পন্ন হওয়ার একদিন পর তার রাজনৈতিক দল বিএনপি ঘোষণা দেয় যে চীনা নেতৃবৃন্দ দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে চীন সরকারের বিনিয়োগের বিষয়ে খালেদা জিয়াকে নিশ্চিত করেছেন।
একই মাসে খালেদা জিয়া ভারত সরকারের আমন্ত্রণে ভারত সফরে যান। সফরের শুরুতে তিনি ভারতের কেন্দ্রীয় বিরোধী দলীয় প্রধান ও বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজের সাথে বৈঠক করেন। সফরকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রী সালমান খুরশিদ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশংকর মেনন ও পররাষ্ট্র সচিব রঞ্জন মাথাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করেন । খালেদা জিয়ার ভারত সফরের আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে ছিল দ্বিদেশীয় সম্পর্ক, সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা, তিস্তা পানি চুক্তি এবং বৃহত্তর অঞ্চলের ভূরাজনীতি ও নিরাপত্তা।
জিয়া ১৫ ই আগস্টকে তাঁর জন্মদিন হিসাবে দাবি করেছেন, যা বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বিতর্কের বিষয়। ১৫ই আগস্ট হল সেদিন যেদিন জিয়ার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হয়েছিল। যার ফলে, ১৫ ই আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের জাতীয় শোক দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয়। জিয়া সরকারের কোন শনাক্তকরণ নথিতেই তার জন্মদিন ১৫ই আগস্ট হিসেবে পাওয়া যায় না। তার ম্যাট্রিক পরীক্ষার সার্টিফিকেটে ১৯৪৫ সালের ৯ই আগস্টের জন্মের তারিখ তালিকাভুক্ত করা হয়। তার বিবাহের শংসাপত্রে ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৪৫ কে জন্মতারিখ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। খালেদা জিয়ার পাসপোর্টে ১৯ আগস্ট ১৯৪৫ কে তার জন্ম তারিখ হিসেবে নির্দেশ করে। খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক মিত্র কাদের সিদ্দিকী ১৫ই আগস্টে তাকে জন্মদিন উদ্যাপন না করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। এই বিষয়ে হাইকোর্ট জিয়ার বিরুদ্ধে একটি পিটিশন দায়ের করেছিল। সর্বশেষ বেগম খালেদা জিয়া করোনা টেস্টের জন্য তার জন্মদিন ৮ মে ১৯৪৬ উল্লেখ করেছিলেন।
২০১১ সালের ২৪ শে মে নিউ জার্সি স্টেট সিনেটে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ’ফাইটার ফর ডেমোক্রেসি’ পদক প্রদান করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট সিনেট কর্তৃক কোন বিদেশিকে এ ধরনের সম্মান প্রদানের ঘটনা এটাই ছিল প্রথম।
পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই তাকে ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ সম্মাননা দেয় কানাডিয়ান হিউম্যান রাইটস ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (সিএইচআরআইও) নামের একটি সংগঠন। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি উক্ত দাবি করার পাশাপাশি কানাডার এই প্রতিষ্ঠানটির দেওয়া ক্রেস্ট ও সনদপত্র সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করে।
আওয়ামী লীগ শাসনামলে জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলা ও নাইকো দুর্নীতি সহ বিভিন্ন মামলায় তার নামে আসে।
পূর্বসূরী: বিচারপতি লতিফুর রহমান | বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী (প্রথম বার) মার্চ ২০, ১৯৯১ - ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬ (দ্বিতীয় বার)মার্চ, ১৯৯৬ - এপ্রিল ৩, ১৯৯৬ (তৃতীয় বার)অক্টোবর ১০, ২০০১ - অক্টোবর ২৯, ২০০৬ | উত্তরসূরী: ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ |
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article খালেদা জিয়া, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.