মাশরুম (ইংরেজি: Mushroom) এক ধরনের ছত্রাক এবং এদের অধিকাংশই ব্যাসিডিওমাইকোটা এবং কিছু অ্যাসকোমাইকোটার অন্তভুক্ত। অন্যান্য উদ্ভিদের ন্যায় মাশরুমের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্য তৈরীর জন্য সূর্য থেকে আলোর প্রয়োজন পড়ে না। চীন, কোরিয়াসহ বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশসমূহে কয়েক ধরনের খাদ্যোপযোগী মাশরুম রান্না করার মাধ্যমে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বাংলাদেশেও আধুনিক খাবার হিসেবে মাশরুমের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটছে। যে-সকল ব্যক্তি মাশরুম সংগ্রহ করে খায়, তারা মাইকোফেজিস্টস বা 'মাশরুম খাদক' হিসেবে পরিচিত হন। মাশরুম খোঁজার প্রক্রিয়াকে সাধারণতঃ মাশরুমিং বা মাশরুম শিকারী নামে অভিহিত করা হয়।
গণপ্রজাতন্ত্রী চীন বিশ্বের সর্ববৃহৎ খাবার উপযোগী মাশরুম উৎপাদনকারী দেশরূপে পরিচিতি পেয়েছে। দেশটি বিশ্বের মোট উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক মাশরুম উৎপাদনকারীরূপে স্বীকৃত। প্রতি বছর এক বিলিয়নেরও অধিক জনগোষ্ঠীর জন্য মাথাপিছু ২.৭ কিলোগ্রাম (৬.০ পা) উৎপাদন করে।
বন-জঙ্গল থেকে সঠিক ধরনের মাশরুম সংগ্রহ করা খুবই কঠিন কাজ। কারণ, অধিকাংশ প্রজাতির মাশরুমই একই ধরনের দেখতে। সেজন্যে মাশরুম সংগ্রহকারীকে রাসায়নিক উপাদান সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন থাকতে হয়। খাবার উপযোগী মাশরুম বিভিন্ন সংস্কৃতিতে বিভিন্নভাবে রান্না করে খেতে হয়। এ ধরনের মাশরুম সাধারণতঃ খামারে চাষাবাদ করা হয়। তবে, বিশ্বের অনেক স্থানের সাধারণ জনগণ শৈশবকাল থেকেই ভক্ষণযোগ্য ও সুস্বাদু প্রকৃতির বুনো মাশরুমের সাথে পরিচিত থাকেন।
পৃথিবীতে এ পর্যন্ত প্রায় চৌদ্দ হাজার প্রজাতির মাশরুমের কথা জানা যায়। অনেক প্রজাতির মাশরুমই এক রাতের মধ্যেই উৎপাদিত হতে দেখা যায়। অর্থাৎ, খুব দ্রুততার সাথে এর বৃদ্ধি ও প্রসার ঘটতে পারে। তবে অধিকাংশই ধীরে ধীরে বড় হয়। আবাদকৃত মাশরুম আকারে ক্ষুদ্রাকৃতির হয়ে থাকে। খাবার উপযোগী অংশটি অল্প কিছুদিন সতেজ থাকে। বিশ্বের অধিকাংশ মাশরুমেই একটি দণ্ড এবং ছাতার ন্যায় একটি টুপি থাকে। কখনো কখনো ছত্রাকজাতীয় অপুষ্পক উদ্ভিদের টুপির নিম্নাংশে বীজ কিংবা অঙ্কুর থাকে।
আরমিলারিয়া সোলিডিপেস (সাবেক আরমিলারিয়া ওস্টোয়ে) প্রজাতির মাশরুমের আবাসস্থল হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মালহিউর ন্যাশনাল ফরেস্টে দেখা যায় যা প্রায় ২,৪০০ বছরের পুরনো ও প্রাচীনতমরূপে আখ্যায়িত। প্রায় ২,২০০ একর (৮.৯ কিমি২) আয়তনে বিস্তৃত হয়ে আছে।
প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স)-এ পুষ্টিমান | |
---|---|
শক্তি | ১১৩ কিজু (২৭ kcal) |
৪.১ g | |
০.১ g | |
২.৫ g | |
ভিটামিন | পরিমাণ দৈপ%† |
থায়ামিন (বি১) | ৯% ০.১ মিগ্রা |
রিবোফ্লাভিন (বি২) | ৪২% ০.৫ মিগ্রা |
নায়াসিন (বি৩) | ২৫% ৩.৮ মিগ্রা |
প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫) | ৩০% ১.৫ মিগ্রা |
ভিটামিন সি | ০% ০ মিগ্রা |
খনিজ | পরিমাণ দৈপ%† |
ক্যালসিয়াম | ২% ১৮ মিগ্রা |
কপার | ২৫% ০.৫ মিগ্রা |
ফসফরাস | ১৭% ১২০ মিগ্রা |
পটাশিয়াম | ১০% ৪৪৮ মিগ্রা |
সোডিয়াম | ০% ৬ মিগ্রা |
জিংক | ১২% ১.১ মিগ্রা |
| |
†প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য মার্কিন সুপারিশ ব্যবহার করে শতাংশ অনুমান করা হয়েছে। উৎস: ইউএসডিএ ফুডডাটা সেন্ট্রাল |
কাঁচা অথবা রান্নাকৃত মাশরুম স্বল্প-ক্যালরীযুক্ত খাদ্য হিসেবে স্বীকৃত। কাঁচা অবস্থায় এতে ভিটামিন বি খাদ্যপ্রাণ থাকে যাতে রিবোফ্লোবিন, নায়াসিন এবং প্যান্টোথেনিক এসিড থাকে। এছাড়াও, প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান যথা - সেলেনিয়াম, কপার এবং পটাশিয়াম থাকে। চর্বি, শর্করা এবং ক্যালরীযুক্ত উপাদানের মাত্রা কম রয়েছে। তবে, ভিটামিন সি এবং সোডিয়ামজাতীয় উপাদানের অনুপস্থিতি রয়েছে।
অতিবেগুনী রশ্মির প্রতিফলনে মাশরুমে ভিটামিন ডি২ তৈরী হয়।
নিরামিষভোজী বিশ্বে মাশরুম মাংস হিসেবে পরিচিত। খাবার উপযোগী মাশরুম সাধারণতঃ চীনা, কোরিয়ান, ইউরোপীয়ান এবং জাপানি রান্নায় ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।
সুপারমার্কেটে বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম বিক্রয় করা হয়ে থাকে। অধিকাংশ মাশরুমই খামারে উৎপাদন করা হয়। সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রজাতির মাশরুমরূপে আগারিকসা বিসপোরাস পরিচিত। এটি অধিকাংশ লোকের কাছে নিরাপদ মাশরুমরূপে বিবেচ্য। কেননা, এটি নিয়ন্ত্রিত পন্থায়, উপযোগী পরিবেশে জন্মানো হয়। এ. বিসপোরাস প্রজাতির কয়েক ধরনের মাশরুম রয়েছে যা বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হয়। তন্মধ্যে - হুয়াইটস, ক্রিমিনি এবং পোর্টোবেলো অন্যতম। অন্যান্য চাষযোগ্য প্রজাতির মাশরুম হিসেবে শিটেক, মাইটেক অথবা হেন-অব-দি-উডস, অয়স্টার মাশরুম এবং ইনোকি রয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আহারের বৈচিত্র্যতা ও ক্রমবর্ধমান খাদ্যের চাহিদা মেটাতে মাশরুম চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এতে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকেরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বীতা অর্জন করছে।
পশমে রংকরণসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক তন্তুতে মাশরুমের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। মাশরুমের রঙে রাসায়নিক যৌগিক উপাদান রয়েছে যা শক্ত ও উজ্জ্বল রঙ উৎপাদনে সক্ষম। সকল ধরনের রঙের বর্ণালি মাশরুমের রঙে বিদ্যমান। কৃত্রিম রঙ আবিষ্কারের পূর্বে মাশরুম ছিল অনেক টেক্সটাইলে রঙের প্রধান উৎসস্থল।
Field Guides database
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article মাশরুম, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.