সাংহাই বা শাংহাই (চীনা: 上海; ফিনিন: Shànghǎi; আ-ধ্ব-ব: ; ⓘ; ষাংখ়াই; জ়াঁহে) গণচীনে অবস্থিত প্রদেশের সমমর্যাদাবিশিষ্ট ও সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারশাসিত চারটি পৌরসভার একটি। মূল শহরের জনসংখ্যার বিচারে এটি কেবল চীন নয়, সমগ্র বিশ্বের বৃহত্তম শহর। সাংহাই একটি অতিমহানগরী, যার জনসংখ্যা ২ কোটি ৪১ লক্ষেরও বেশি। সাংহাই মধ্য চীনের একটি বৃহৎ, জনবহুল ও অর্থনৈতিকভাবে উৎপাদনশীল পৌর অঞ্চল গঠন করেছে। এটি চীনের আর্থ-বাণিজ্যিক খাতের কেন্দ্রবিন্দু, অন্যতম বৃহৎ শিল্পোৎপাদন কেন্দ্র ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর। সাংহাই একটি বিশ্বমানের শহর; আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, সংস্কৃতি, গণমাধ্যম, পোশাকশৈলী, প্রযুক্তি ও পরিবহনে এটি ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে আছে। এটি সমগ্র বিশ্বের অন্যতম প্রধান আর্থ-বাণিজ্যিক কেন্দ্র এবং জাহাজের মালামালের বাক্স তথা কন্টেইনারের হিসেবে বিশ্বের ব্যস্ততম সমুদ্রবন্দর। এছাড়া বর্তমানে উচ্চশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রেও এটি চীনের অন্যতম অগ্রগণ্য কেন্দ্র।
সাংহাই 上海市 | |
---|---|
কেন্দ্রশাসিত পৌরসভা ও অতিমহানগরী | |
সাংহাই | |
ব্যুত্পত্তি: 上海浦 (শাংহাই ফু Shànghăi Pǔ) "হুয়াংফু নদীর আদি নাম।" | |
চীনে সাংহাই পৌরসভার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক (জনতার চত্বর): ৩১°১৩′৪৩″ উত্তর ১২১°২৮′২৯″ পূর্ব / ৩১.২২৮৬১° উত্তর ১২১.৪৭৪৭২° পূর্ব | |
দেশ | গণচীন |
বসতি স্থাপন | আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ অব্দ |
প্রতিষ্ঠাকাল - ছিংলুং শহর | ৭৪৬ |
- সাংহাই কাউন্টি | ১২৯১ |
- পৌরসভা | ৭ জুলাই ১৯২৭ |
বিভাগসমূহ - কাউন্টি-স্তর - শহর- স্তর | ১৬টি পৌরজেলা ২১০টি শহর ও উপপৌরজেলা |
সরকার | |
• ধরন | পৌরসভা |
• Party Secretary | লি ছিয়াং |
• নগরপাল | ইং ইউং |
• কংগ্রেস সভাপতি | ইন ইৎসুই |
• পৌরসভা চীজরাপস সভাপতি | তুং ইউনহু[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] |
আয়তন | |
• পৌরসভা | ৬,৩৪১ বর্গকিমি (২,৪৪৮ বর্গমাইল) |
• জলভাগ | ৬৯৭ বর্গকিমি (২৬৯ বর্গমাইল) |
• পৌর এলাকা (২০১৮) | ৪,০০০ বর্গকিমি (১,৫৫০ বর্গমাইল) |
উচ্চতা | ৪ মিটার (১৩ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০১৭) | |
• পৌরসভা | ২,৪১,৮৩,৩০০ |
• ক্রম | ১ম |
• জনঘনত্ব | ৩,৮০০/বর্গকিমি (৯,৯০০/বর্গমাইল) |
• পৌর এলাকা (২০১৮) | ২,৪১,১৫,০০০ |
• পৌর এলাকার জনঘনত্ব | ৬,০০০/বর্গকিমি (২০,০০০/বর্গমাইল) |
• মহানগর (২০১০) | ৩ কোটি ৪০ লক্ষ |
বিশেষণ | সাংহাই |
সময় অঞ্চল | চীমাস (CST) (ইউটিসি+৪) |
ডাক কোড | 200000–202100 |
এলাকা কোড | 21 |
আইএসও ৩১৬৬ কোড | CN-SH |
নামমাত্র স্থূঅউ (জিডিপি) | ২০১৮ |
- সর্বমোট | ¥৩২৭০ লক্ষ কোটি ($৪৯৪ শত কোটি)(১১তম) |
- মাথাপিছু | ¥১,৩৫,২১২ $২০,৪২৫ (২য়) $৩৮,৯৩৯ ক্রক্ষস (পিপিপি) |
- প্রবৃদ্ধি | ৬.৬% |
মাউস (২০১৭) | ০.৮৬৩ (4th) – অতি উচ্চ |
Licence plate prefixes | 沪A, 沪B, 沪D-沪H, 沪J-沪N 沪C (outer suburbs) |
Abbreviation | SH / 沪 (hù) |
নগর ফুল | ইউলান ম্যাগনোলিয়া |
ভাষাসমূহ | উ (সাংহাই), ম্যান্ডারিন |
ওয়েবসাইট | www |
সাংহাই | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
চীনা | 上海 | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
আক্ষরিক অর্থ | "Upon-the-Sea" | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
|
সাংহাই শব্দটির অর্থ "সাগরের উপরে"। ভৌগোলিকভাবে শহরটি পূর্ব-মধ্য চীনের উপকূলে, ছাং চিয়াং (ইয়াংসে) নদীর ব-দ্বীপ অববাহিকাতে, ছাং চিয়াং নদীর মোহনার দক্ষিণপ্রান্তে এবং হাংচৌ উপসাগরের উত্তরে, ছাং চিয়াং নদীর একটি উপনদী হুয়াংফু নদীর তীরে অবস্থিত। এই বন্দরশহরটি ইয়াংসে নদীর অববাহিকাতে মূল প্রবেশপথ। হুয়াংফু নদীর বদৌলতে মহাসমুদ্রগামী জাহাজগুলি এর বন্দরে ভিড়তে পারে। সাংহাই পৌরসভার সাথে উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমে চিয়াংসু ও চচিয়াং প্রদেশের সীমান্ত আছে। শহরের পূর্বসীমায় রয়েছে পূর্ব চীন সাগর। মূল সাংহাই শহর, একে ঘিরে থাকা উপশহরগুলি এবং পশ্চাৎভূমিতে অবস্থিত একটি কৃষি অঞ্চল নিয়ে সাংহাই মহানগর এলাকাটি গঠিত হয়েছে। সাংহাইয়ের আয়তন প্রায় ৬২০০ বর্গকিলোমিটার।
উত্তর (পেই) সুং রাজবংশের শাসনামলে (৯৬০-১১২৭ খ্রিষ্টাব্দ) এখানে একটি শহর প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর মিং রাজবংশের শাসনামলে এখানে নিবিড় তুলা চাষ করা হত। সাংহাই বহু শতাব্দী ধরেই একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক, নৌপরিবহন ও বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল। ১৯শ শতকে এসে ইউরোপীয়রা বন্দরটির সুবিধাজনক ভৌগোলিক অবস্থান এবং এর অর্থনৈতিক সম্ভাবনার ব্যাপারে সচেতন হয়ে উঠলে শহরটির গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পায়। প্রথম আফিমের যুদ্ধে চীনের বিরুদ্ধে ব্রিটিশদের জয়লাভের পর যে ৫টি চীনা বন্দরকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত করতে বাধ্য করা হয়, তাদের মধ্যে সাংহাই ছিল একটি। ১৮৪২ সালের নানচিংয়ের চুক্তির ফলে সাংহাই আন্তর্জাতিক বসতিটি প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেওয়া হয়। ১৮৪৪ সালে আরেকটি চুক্তি একটি ফরাসি-শাসিত ছিটমহলও প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর থেকে শহরটি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনকারী একটি বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে বিকশিত হতে থাকে এবং চীনদেশের অর্থনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করা শুরু করে। ১৯২১ সালে এখানে চীনা সাম্যবাদী দল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৩০-এর দশকে এসে সাংহাই এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে আবির্ভূত হয়। ১৯৩৭-৪৫ সালে চীনা-জাপানি যুদ্ধের সময় এখানে গুরুতর যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানিরা শহরটি দখল করে। কিন্তু ১৯৪৯ সালে চীনা সাম্যবাদী দল চীনের মূল ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ দখল করার পর সাংহাইয়ের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে বন্দরটি আন্তর্জাতিক প্রভাব বহুল হ্রাস পায়। ১৯৯০-এর দশকে এসে প্রধানমন্ত্রী তেং শিয়াওফিংয়ের অর্থনৈতিক সংস্কারগুলির ফলস্বরূপ সাংহাইয়ে পুনরায় জোরদার উন্নয়নকাজ আরম্ভ হয়। শহরটিতে বিদেশী বিনিয়োগ ও অর্থলগ্নির পরিমাণ আবারও বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে বাজার মূলধনায়নের ভিত্তিতে সাংহাইয়ের শেয়ার বাজার বিশ্বের বৃহত্তম শেয়ার বাজারগুলির একটিতে পরিণত হয়েছে।
সাংহাইয়ে পর্যটকদের জন্য অনেক আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে। দ্য বুন্ড নামের নদীতীরস্থ পথচারীদের হাঁটার রাস্তার উপরে উপনিবেশ আমলের বিভিন্ন ভবন সারি ধরে দাঁড়িয়ে আছে। নদীর অপর তীরে শহরের ফুতুং এলাকার সুউচ্চ আধুনিক অট্টালিকার সসারিগুলি লুচিয়াৎসুই দিগন্ত রূপরেখাটি গঠন করেছে, যাকে মূল চীনা ভূখণ্ডের উদীয়মান অর্থনীতির একটি প্রদর্শনী হিসেবে গণ্য করা হয়। এদের মধ্যে ৬৩২ মিটার উঁচু সাংহাই টাঔয়ার এবং ওরিয়েন্টাল পার্ল টেলিভিশন টাওয়ার সবচেয়ে চোখে পড়ার মত। বিশাল ইউ উদ্যানে ঐতিহ্যবাহী ঘর, মিনার ও পুষ্করিণীর দেখা মেলে। নানচিং সড়কটী বহুদিন ধরে শহরের প্রধানতম কেনাকাটার জায়গা; এখানকার দোকানপাটগুলি গভীর রাত পর্যন্ত আলোয় ঝলমল করে। এই সড়ক ধরে এগুলে জনতার উদ্যানে পৌঁছালে চোখে পড়বে সাংহাই জাদুঘর, যেখানে খোদাইকরা জেড পাথর, চীনা হস্তলিপিশিল্প ও অন্যান্য শিল্পকলার বিভিন্ন নিদর্শন সংরক্ষিত আছে। লুংহুয়া মন্দির স্থাপনাসমবায়টি সুং রাজবংশের শাসনামলে নির্মিত কারুকাজখচিত বৌদ্ধ প্যাগোডার জন্য পরিচিত। ফরাসি ছাড় নামের ছিটমহলটি (যেখানে ১৮৪৯ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত ফরাসি ও অন্যান্য বিদেশীরা বাস করত) বৃক্ষশোভিত রাস্তা, "আর দেকো" স্থাপত্য ঘরানার ভবন, আধুনিক দোকান, কফিঘর ও বারে পূর্ণ। সাংহাইয়ের স্থানীয় রন্ধনশৈলীর নিদর্শনের মধ্যে সিয়াওলুংপাও (ভাপে রান্না করা ময়দার ফুলুরি), "রোমশ কাঁকড়া" ও "মাতাল মুরগি" অন্যতম।
সাংহাইয়ের গ্রীষ্মকাল উষ্ম ও বৃষ্টিবহুল, অন্যদিকে শীতকাল শুষ্ক ও শীতল। দৈনিক গড় তাপমাত্রা ২৫° থেকে ৩২°সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করে। জুলাই মাসে সবচেয়ে বেশি গরম পড়ে। অন্যদিকে জানুয়ারি মাস সবচেয়ে ঠাণ্ডা মাস, যখন দৈনিক গড় তাপমাত্রা ১° থেকে ৮° সেলসিয়াস হতে পারে।.সাংহাইয়ে বাৎসরিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১১০০ মিলিমিটার। জুন মাসে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি পড়ে। অন্যদিকে ডিসেম্বর সবচেয়ে শুকনো মাস। গ্রীষ্মকাল ও শরৎকালে কদাচিৎ টাইফুন ঘূর্ণিঝড় হতে পারে।
সাংহাইয়ের প্রকৃত জনসংখ্যা নির্ণয় করা কঠিন, কেননা এখানে অনেক অভিবাসী ও অস্থায়ী অধিবাসী বাস করে, যাদের মোট সংখ্যা ৭০ লক্ষেরও বেশি হতে পারে। সাংহাইয়ের প্রায় সমস্ত অধিবাসী নৃতাত্ত্বিকভাবে হান চীনা জাতির লোক। তবে এখানে স্বল্পসংখ্যক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকও আছে যারা হান জাতির নয়। সাংহাইয়ে চীনের সমস্ত অঞ্চল থেকে আগত লোক এবং বহু বিদেশী লোকের দেখা মেলে। সাংহাইয়ের অধিবাসীরা চীনা ভাষা পরিবারেরর অন্তর্গত উ ভাষার সাংহাই উপভাষায় কথা বলে। তবে বেশিরভাগ অধিবাসী ফুতুংহুয়া বা ম্যান্ডারিন নামক প্রমিত কথ্য চীনা ভাষাতেও কথা বলতে পারে।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article সাংহাই, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.