শিল্পকলা

দৃশ্য বা অদৃশ্য কোনো ভাবরূপ শিল্পীর চিত্তরসে নবরূপায়িত হয়ে যে স্থিতিশীল রূপপ্রকাশ ঘটে তাকে শিল্পকলা বা সংক্ষেপে শিল্প বলে।

শিল্পকলা
উপরের বাম থেকে ঘড়ির কাঁটা অনুযায়ী: ভিনসেন্ট ভ্যান গখের আত্ম-প্রতিকৃতি; Chokwe শিল্পী কর্তৃক নারীমূর্তি; শান্ড্রো বটিসেলি কর্তৃক বার্থ অফ ভেনাস থেকে একাংশ এবং একটি জাপানি শিসা সিংহ।

কলা মানব ক্রিয়াকলাপের বৈচিত্রপূর্ণ এক দৃশ্য প্রকাশ এবং এ ধরনের কার্যক্রমের ফলে প্রাপ্ত পণ্য বা উৎপাদন।

দৃশ্য বা সার্বিকভাবে বোধ্য শিল্প কলারই অজস্র রূপ

চিত্রকলা, ভাস্কর্য, ছাপচিত্র, আলোকচিত্র এবং অন্যান্য দৃশ্য মাধ্যম ক্ষেত্রে সৃষ্ট চিত্র বা বস্তু সম্পর্কিত আলোকপাত রয়েছে। সাধারণ দৃশ্যমান জগতে আমরা যে চিরায়ত লীলার অভিজ্ঞতা লাভ করি তাকে প্রকৃতি হিসেবে অভিহিত করা হয়, তা শিল্প নয়। এই প্রকৃতির সৌন্দর্য্য অবলোকন করে মানব মন যখন বিমুগ্ধ, বিস্মিত ও বিমূঢ় হয়ে যায় তখন সে তাকে নিজের মধ্যে আপন করে পেতে চায়। এরই ধারাবাহিকতায় সে চায় এই নৈসর্গিকতাকে একটি স্বাভাবিক রুপ দিতে। আর এর মাধ্যমেই জন্ম হয় শিল্পের। অর্থাৎ :

এই নিবন্ধটি মূলত দৃশ্যশিল্প,চিত্রকর্ম, ভাস্কর্য, ছাপচিত্র, আলোকচিত্র এবং অন্যান্য দৃশ্যশিল্পের উপর আলোকপাত করা হয়েছে। স্থাপত্য অনেকসময় দৃশ্যশিল্পের উপর পড়ে অনেকটা সাজানো শিল্পের মতো। সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত যেকোন বিষয়ের উপর দক্ষতাকেই শিল্প বলা হতো। এটি বিজ্ঞান কিংবা ক্রাপ্টের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলনা। সপ্তদশ শতকের পরেই চারুকলাকে বিভক্ত করা হয়েছে সাধারণ বিষয়সমূহ থেকে, যেখানে সাজানোর বিষয় মূখ্য। রোমান্টিক যুগের পর শিল্পকে দেখা যায় মানব চিন্তায় যা ধর্ম এবং বিজ্ঞান দ্বারা চিহ্নিত করা হয়

এর অপর নাম চারুশিল্প, কারুশিল্প, ললিতকলা, চারুকলা ইত্যাদি। যে শিল্পের এই সৌন্দর্য্য সৃষ্টি করে সে হচ্ছে শিল্পী বা Artist। শিল্পী মাত্রই রূপ-বিলাসী এবং তার সৃষ্ট রূপই হল শিল্প। শিল্পের চরিত্র সত্যকে, অনুভূতিকে ও অন্যান্য গুণকে তুলে ধরা। শিল্পের প্রকৃতি নির্ভর করে কনসেপ্ট ও দর্শণের উপর যা একটি তাত্ত্বিক মাত্রা দেয়।

সৃজনশীল শিল্প এবং চারুকলা

শিল্পকর্ম নান্দনিক সত্য বা অনুভূতি প্রকাশ করতে সক্ষম। প্যানোরামা পদর্শিত অ্যা থাউজ্যান্ড লাই অফ মাউন্টেনস এ্যন্ড রিভার্স, চিত্রটি সং রাজবংশের শিল্পী ওয়াং জিমেঙ্গ কর্তৃক অঙ্কিত দ্বাদশ শতাব্দীর একটি পেইন্টিং।

পরিচয়বোধ সঞ্চার

প্রকৃতপক্ষে প্রথম মানুষ যখন প্রকৃতির অপার রূপ-রস-গন্ধ-শব্দ ও এর সৌন্দর্য্যের স্রোতকে উপলব্ধি করেছিল তখনই সে চেয়েছিল এই অনুভূতিকে বিশ্বসৃষ্টির সামনে দাঁড়িয়ে অন্যের মনে সঞ্চারিত করতে আর তারই সূত্র ধরে প্রেম মোহিত প্রতিটি সৃষ্টির সম্মিলন ঘটাতে; কারণ মানৃষের স্বাভাবিক প্রকৃতির এটিই দাবী। কিন্তু প্রকৃতি মানুষে মানুষে এ ধরনের সম্মিলন ঘটানোর জন্য বিশেষায়িত নয় বরং প্রকৃতি কেবল সবার মনে তার রসবোধের সঞ্চার ঘটাতে পারে, আর তাও একেকজনের ক্ষেত্রে একেক ধরনের হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। এজন্যই এই অনুভূতি সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার নিমিত্তে তাকে সৃষ্টি করতে হয়েছে শিল্পের। মানুষ না থাকলে শিল্পের সৃষ্টির প্রশ্নই উঠত না এবং শিল্পের ইতিহাস ও মানবসন্তানের ইতিহাস একই ধারায় প্রবাহিত। এই শিল্প মানুষে মানুষে কেবল অনুভূতির সঞ্চার ঘটিয়েই ক্ষান্ত থাকলে এই সম্মিলন সম্ভব ছিলনা। তাই শিল্পের মূল উদ্দেশ্য এখানে পরিস্ফূটিত হয়েছে আর তা হল পরিচয়বোধ-সঞ্চার যাকে ইংরেজিতে Transmission of Understanding বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ শিল্পের মাধ্যমে শিল্পীমন ও দ্রষ্টার মনের পরিচয় হয়ে যায় এবং তা হয় অত্যন্ত গভীর। এর ফলে দেখা যায় শিল্পের সৌন্দর্য্য দেখে দ্রষ্টা শিল্পীমনের অতি কাছাকাছি আসে এবং এর ফলে আত্মপরিচিতি আবিষ্কারের পথ খুঁজে পায়।

শিল্পের বৈশিষ্ট্য ও উদ্দেশ্য

  • মানুষ একান্তই অনুকরণপ্রিয়। সাধারণ মতে এই অনুকরণের প্রবৃত্তি হতেই শিল্পের জন্ম। তবে অনেকের মত গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর মতে একে কেবল অনুকরণাত্মক বলা যুক্তিসঙ্গত নয়। শিল্পীর মনের স্পর্শবিহীন অনুকরণ কেবলই যান্ত্রিক, তা কখনই শিল্প হতে পারেনা। শিল্পীর অন্যতম উদ্দেশ্য যেহেতু বাহিরকে আপন অন্তরে বন্দী করা এবং নিজের অন্তরকে বাহির করা তাই এর সাথে মনের সংযোগ অবশ্যম্ভাবী। এটি শিল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
  • যা অদৃশ্য ও অনধিগম্য শিল্প তাকে দৃশ্যমান অধিগম্য করে। শিল্প ক্ষণস্থায়ী জীবনের চঞ্চল স্রোতকে ক্ষণ-সৌন্দ্যর্যের মাঝে বন্দী করে স্থিতিশীলতা দান করে; কারণ জীবনে থাকে চঞ্চলতা আর শিল্পে স্থিতি। জীবন শেষ হয়ে যায় কিন্তু শিল্প এই সসীম জীবনের ক্ষণ-সৌন্দ্যর্যটিকে শান্ত শ্রী দান করে চিরদিনের করে রাখে। সুতরাং শিল্প চলমান জীবনের স্থিতিমান মুহূর্তের চিরন্তন প্রকাশ। রবীন্দ্রনাথের একটি পদ্যাংশ কীভাবে চিরায়ত রূপ লাভ করেছে তা এখানে দেখা যেতে পারে:

শিল্পের বিশেষত্ব ও সম্পর্ক

বিশেষ ও নির্বিশেষ

দ্রষ্টা যখন কোন রূপসৌন্দর্য্যকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে গ্রহণ করে তখনই রূপবন্ধ বা Form এর আবির্ভাব ঘটে। একে মানব মনের Answering quality বলা হয়। মূলত শিল্পীর একটি গুণের কারণেই এ ধরনের গুণগত মানের সৃষ্টি হয়। এই গুণটিই হল শিল্পীর মনের বিশেষত্ব এবং নির্বিশেষ মনোভূমি। শিল্পী চান দ্রষ্টা হিসেবে প্রথমে তিনি যে অনুভূতি আপন অন্তরে একান্তভাবে গ্রহণ করেছিলেন তাকে অন্তরের বাইরে স্থিতি বা সত্তা প্রদান করতে। কারণ সেই অনুভূতিগুলো একান্তই তার ব্যক্তিগত নয় বরং এর একটি সর্বজনীনতা আবশ্যক। এখানে ব্যক্তিগত আবেগ অনুভূতির সঞ্চারণই হল বিশেষ আর তাকে ছড়িয়ে দেয়াই হল শিল্পের নির্বিশেষ পরিচয়। একে অন্যভাবেও চিহ্নিত করা যায়; শিল্পের সৃষ্টি তখনই হয় যখন বাস্তব জীবনের কোন একটি উপকরণের অসংখ্য নির্বিশেষ রূপবন্ধের মধ্যে কেবল একটি বিশেষ রূপবন্ধের বিশেষায়িত আলোচনা সম্ভব হয় এবং এই বিশেষের মাধ্যমেই নির্বিশেষের ব্যঞ্জনা লভিত হয়। অর্থাৎ শিল্পে নির্বিশেষ বলতে উপকরণগত সাধারণত্ব বুঝায়না বরং বিশেষের শৈল্পিক স্থিতির একটি সাধারণ ব্যঞ্জনা বুঝায়।

প্রকারভেদ

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Tags:

শিল্পকলা সৃজনশীল শিল্প এবং চারুকলাশিল্পকলা পরিচয়বোধ সঞ্চারশিল্পকলা শিল্পের বৈশিষ্ট্য ও উদ্দেশ্যশিল্পকলা শিল্পের বিশেষত্ব ও সম্পর্কশিল্পকলা প্রকারভেদশিল্পকলা আরও দেখুনশিল্পকলা তথ্যসূত্রশিল্পকলা বহিঃসংযোগশিল্পকলাভাবনারসরূপশিল্পী

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

মুস্তাফিজুর রহমানজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়চীনঐশ্বর্যা রাইআন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসহিন্দুধর্মআল্লাহর ৯৯টি নামআসিয়ানযক্ষ্মাভারতীয় জনতা পার্টিযাকাতফরাসি বিপ্লবের কারণনামফিলিস্তিনের ইতিহাসভারতের প্রধানমন্ত্রীদের তালিকাঅপু বিশ্বাসবাংলাদেশের অর্থনীতিফুটবলদিল্লি ক্যাপিটালসবাংলাদেশের নদীর তালিকাশায়খ আহমাদুল্লাহশ্রীকৃষ্ণকীর্তনভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসসমাজবিজ্ঞানচিয়া বীজসূরা ফালাকরূপান্তরিত লিঙ্গইহুদি ধর্মশেংগেন অঞ্চলকোষ বিভাজনথ্যালাসেমিয়াউইলিয়াম শেকসপিয়রপূর্ণিমা (অভিনেত্রী)মুঘল সাম্রাজ্যণত্ব বিধান ও ষত্ব বিধানবাংলাদেশের পৌরসভার তালিকামৌলিক পদার্থের তালিকাবাগদাদকাতারলিভারপুল ফুটবল ক্লাবদেব (অভিনেতা)রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়তুলসীসমাসনিমরাজ্যসভাআন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসশেখ মুজিবুর রহমানমেঘনা বিভাগমুজিবনগরটিকটকতুরস্ক২০২৪ কোপা আমেরিকানূর জাহানকোকা-কোলামাশাআল্লাহচাঁদযৌতুকজলাতংকবেনজীর আহমেদত্রিভুজজান্নাতুল ফেরদৌস পিয়াআয়িশাঅনাভেদী যৌনক্রিয়াইসতিসকার নামাজলগইনধর্মীয় জনসংখ্যার তালিকাআকবরশেখ হাসিনামুহাম্মাদের বংশধারাবিড়ালতাপ সঞ্চালনরক্তের গ্রুপপায়ুসঙ্গমব্রাহ্মসমাজভগবদ্গীতাজাতীয় সংসদ ভবন🡆 More