নূর জাহান

নূর জাহান (ফার্সি: نور جهان ) (১৫৭৭ - ১৬৪৫) একজন মুঘল সম্রাজ্ঞী যাঁর পিতৃদত্ত নাম ছিল মেহের উন নিসা । ইনি মুঘল সম্রাজ্ঞী ও সম্রাট জাহাঙ্গীরের প্রধান মহিষী ছিলেন। একজন বলিষ্ঠ, সম্মোহনী ও উচ্চশিক্ষিতা নারী হওয়ায় তাকে ১৭শ শতাব্দীর সবচেয়ে প্রভাবশালী নারী ভাবা হয় । ইনি সম্রাট জাহাঙ্গীরের বিশতম ও সর্বাপেক্ষা প্রিয়া স্ত্রী ছিলেন যিনি মুঘল সাম্রাজ্যের সর্বোৎকৃষ্ট পর্যায়ে রাজত্ব করেন। সম্রাট জাহাঙ্গীর ছিলন তাঁর দ্বিতীয় স্বামী। তাদের ভালোবাসা অনেক কিংবদন্তির (প্রায়শ প্রশ্নসাপেক্ষ) জন্ম দিয়েছে ।

নূর জাহান
نور جهاں
নূর জাহান
সম্রাজ্ঞী নূর জাহানের প্রতিকৃতি
মুঘল সম্রাজ্ঞী
কার্যকাল২৫ মে ১৬১১ – ৮ নভেম্বর ১৬২৭
জন্ম৩১ মে ১৫৭৭
কান্দাহার,বর্তমান আফগানিস্তান
মৃত্যু১৭ ডিসেম্বর ১৬৪৫(1645-12-17) (বয়স ৬৮)
লাহোর,বর্তমান পাকিস্তান
সমাধি
দাম্পত্য সঙ্গীশের আফগান কুলি খান
জাহাঙ্গীর
বংশধরলাডলি বেগম এবং আরও ২ জন
পূর্ণ নাম
মেহের উন নিসা
রাজবংশতৈমুর বংশীয় (বিবাহসূত্রে)
পিতামির্জা গিয়াস বেগ
মাতাআসমত বেগম
ধর্মশিয়া ইসলাম

তাঁর দ্বিতীয় স্বামী সম্রাট জাহাঙ্গীরের মদ্য ও আফিমের প্রতি তীব্র আসক্তি থাকায় নূর জাহান একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজকীয় ভূমিকা পালন করেন, যাকে সিংহাসনের পেছনের মূল শক্তি ধরা হয় । তিনি শুধু ঐতিহাসিকভাবে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারিণীই ছিলেন না সেই সাথে ভারতীয় সংস্কৃতি, দাতব্য কাজ, বৈদেশিক বাণিজ্য ও লৌহমানবীর ন্যায় ক্ষমতা পালনের জন্য বিখ্যাত ছিলেন । তিনি সম্রাজ্ঞী মমতাজ মহলের ফুফু ছিলেন, যাঁর জন্য সম্রাট শাহজাহান তাজমহল তৈরি করেন। এছাড়াও তিনিই একমাত্র মুঘল সম্রাজ্ঞী, যাঁর নাম রৌপ্যমুদ্রায় অঙ্কিত আছে ।

পরিচয়

নুরজাহান বা জগতের আলো(জন্মঃ ৩১ মে, ১৫৭৭ – মৃত্যুঃ ১৭ ডিসেম্বর, ১৬৪৫) হচ্ছে সম্রাট জাহাঙ্গীর এর দেয়া নাম। তার আসল নাম ছিল মেহেরুন্নিসা। মেহেরের বাবা ছিল গিয়াস বেগ। তার বাবা ইতিমাদ দৌলা ও মা যখন তেহেরান থেকে ভাগ্যের সন্ধানে হিন্দুস্তান আসছিলেন তখন পথের মধ্যেই নির্জন মরু প্রান্তে এক বাবলা গাছের তলায় জন্ম হয় মেহেরুন্নিসার। গল্প আছে যে এই সময় গিয়াস বেগ ও তার পত্নী এমন দুর্দশায় পরেছিলেন যে মেয়ে কে বাঁচাবার কোন উপায় না পেয়ে তারা পথের মাঝেই কচি মেয়েকে শুইয়ে রেখে রওয়ানা হন। আশা ছিল কোন সহৃদয় ব্যক্তি যদি তাকে পায় নিয়ে আশ্রয় দিবে। কিছুদূর যাবার পর ই শিশু কন্যার কান্না শুনে তারা আর থাকতে পারলেন না। ফিরে এসে মেয়েকে বুকে চেপে নিঃসহায় , নিঃসম্বল গিয়াস বেগ এসে পৌঁছালেন লাহোরে। এবার তার ভাগ্য পরিবর্তন হল। আকবর বাদশার সুনজরে পরলেন তিনি, আর ছোট মেয়ে মেহেরের স্থান হল হেরেমে।

সম্রাজ্ঞী নূরজাহান

নূরজাহান শারীরিকভাবে শক্তিশালী ছিলেন। তিনি প্রায়ই সম্রাটের সাথে বাঘ শিকারে জেতেন।শক্তিশালী বাঘ শিকারি হিসেবে তার খ্যতি ছিল। কথিত আছে তিনি ৬ টি গুলি দিয়ে ৪ টি বাঘ শিকার করেছিলেন।তার বীরত্বের কবিতাও লিখেছেন অনেক কবি।

নূর জাহান 
জাহাঙ্গীরের আমলে নূর জাহানের নামাঙ্কিত রূপার মুদ্রা (১৬২৭/১৬২৮)। পাটনার টাকশালে মুদ্রিত

ইংরেজ দূত টমাস রো লিখে গেছেন মেহের আসলে দেশ শাসন করত। জাহাঙ্গীর ছিল নাম কেওয়াস্তে সম্রাট। সেই সময়কার মুদ্রাতে জাহাঙ্গীর এর সঙ্গে নুরজাহানের ছবিও ছাপা হত। তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে রাজ্য পরিচালনা করতেন। জাহাঙ্গীর এর রাজত্তের শেষ দিকে যখন তার ছেলে খুররম ও সেনাপতি মহাব্বত খা বিদ্রোহ করেন তখন বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেন নুরজাহান।

বিয়ে

প্রথম বিয়ে

মেহেরের বিয়ে ঠিক হয় তুর্কিস্তানে শের আলি কুলি বেগ এর সঙ্গে। আলি কুলি ছিলেন অত্যন্ত সাহসী, নির্ভীক ও সচ্চরিত্র যুবক। একলা খালি হাতে বাঘ মারার জন্য তার নাম হয় শের আফগান। শোনা যায় মেহের একবার যুবরাজ সেলিমের নজরে পড়ে জান। সেলিম ও অমনি খেপে উঠলো মেহের কে বিয়ে করার জন্য। বাদশাহ আকবর এর কাছে আর্জি পউছে গেলো তার বিয়ের। কিন্তু নিজের বংশ মর্যাদার কথা ভেবে সেলিমকে নিষেধ করে আলি কুলির সঙ্গে মেহেরের বিয়ে দেন। মেহেরের বয়স তখন ষোল। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে চলে যান বর্ধমান।

সম্রাট জাহাঙ্গীরের সাথে বিয়ে

শেরের মৃত্যুর পর মেহেরকে আগ্রাতে নিয়ে আসা হয়। তখন মেহেরের বয়স তেত্রিশ। ওই বয়স এও তিনি অপূর্ব রূপসী ছিলেন। মোঘল হেরেমে থেকেও দীর্ঘ চার বছর সম্রাটকে দেখেননি। তারপর আর পারলেন না সম্রাটকে ফেরাতে। সাইত্রিশ বছর বয়সে বিয়ে(২৫ মে, ১৬১১ খ্রিষ্টাব্দ) করেন জাহাঙ্গীরকে। জাহাঙ্গীর তার নাম দিলেন নুরজাহান বা জগতের আলো।

মৃত্যু

নূর জাহান 
নূরজাহানের সমাধিসৌধ, লাহোর

নূরজাহানের শেষ জীবন সুখের হয় নি। তার বিরাট উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল সেজন্য দায়ী। জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পর নূরজাহানও লাহোরেই থেকে যান শেষ পর্যন্ত। অবশেষে বাহাত্তর বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ওই লাহোরেই। তার কবরের গাঁয়ে তার রচিত দুটি লাইন দেখতে পাওয়া যায়, ফারসিতে লেখা। কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলায় অনুবাদ করেন:

"গরীব গোরে দ্বীপ জেলো না,

ফুল দিও না কেউ ভুলে, শ্যামা পোকার না পোড়ে পাখ,

দাগা না পায় বুলবুলে।"

উৎস

Tags:

নূর জাহান পরিচয়নূর জাহান সম্রাজ্ঞী নূরজাহাননূর জাহান বিয়েনূর জাহান মৃত্যুনূর জাহান উৎসনূর জাহানজাহাঙ্গীরফার্সি ভাষামুঘলসম্রাজ্ঞী১৫৭৭১৬৪৫

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

ঐশ্বর্যা রাইমেষ রাশি (জ্যোতিষ শাস্ত্র)স্নায়ুযুদ্ধঈদুল আযহাপ্রাকৃতিক দুর্যোগমুঘল সম্রাটবাংলাদেশের উপজেলার তালিকাযুক্তফ্রন্টহোয়াটসঅ্যাপবগুড়া জেলামহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রআব্বাসীয় স্থাপত্যশাকিব খান অভিনীত চলচ্চিত্রের তালিকাবাংলাদেশের ইতিহাসদীন-ই-ইলাহিচট্টগ্রাম জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থানজাপানইহুদি ধর্মপেপসিতুরস্ক২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপনাদিয়া আহমেদব্যঞ্জনবর্ণবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়সিফিলিসমহেন্দ্র সিং ধোনি২০২২–২৩ নিউজিল্যান্ড পুরুষ ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফর (এপ্রিল ২০২৩)উদ্ভিদফেনী জেলাচ্যাটজিপিটিগোপালগঞ্জ জেলামোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকোকা-কোলাঅমর্ত্য সেনপৃথিবীভূগোলগর্ভধারণমঙ্গল গ্রহজনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় (বাংলাদেশ)খুলনা বিভাগপরমাণুছোটগল্পখলিফাদের তালিকাভারতনিউটনের গতিসূত্রসমূহ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপচুয়াডাঙ্গা জেলাফারাক্কা বাঁধবিশ্বের মানচিত্রঢাকাকৃত্তিবাসী রামায়ণহজ্জবাংলাদেশের জেলাসমূহের তালিকাগণতন্ত্রনিম০ (সংখ্যা)ভাষাজনসংখ্যা অনুযায়ী সার্বভৌম রাষ্ট্র ও নির্ভরশীল অঞ্চলসমূহের তালিকাকম্পিউটার কিবোর্ডকাজী নজরুল ইসলামমাহিয়া মাহিশীর্ষে নারী (যৌনাসন)আর্দ্রতাবিদ্যাপতিমাইটোসিসমিয়ানমাররামপ্রসাদ সেনঅমর সিং চমকিলাঅবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরচীনবাংলাদেশের কোম্পানির তালিকামুস্তাফিজুর রহমানমহাভারতআন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসজনগণমন-অধিনায়ক জয় হেইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খলজিক্লিওপেট্রানেপাল🡆 More