লুকোচুরি খেলা

লুকোচুরি খেলা হল শিশুদের একটা জনপ্রিয় খেলা যে খেলায় সবচেয়ে কম দুজন খেলোয়াড় (সাধারণত কমপক্ষে তিন জন) দরকার, একটা সাজানো পরিবেশে তারা নিজেদের লুকিয়ে রাখে, তাদের মধ্যে এক বা একাধিককে অন্যদের খুঁজে পেতে হয়। এই খেলায় একজন খেলোয়াড়কে বাছাই করা হয় ('এই নামে' খেলোয়াড় নির্দিষ্ট হল) যখন সে তার চোখ বন্ধ করে এবং পূর্বনির্ধারিত সংখ্যায় গণনা করে তখন অন্য খেলোয়াড়রা লুকিয়ে পড়ে। পুরো সংখ্যা গোনার পরে, 'এই নামের' খেলোয়াড়, ডাকে 'প্রস্তুত কি না, আমি আসছি!' অথবা 'আসছি, তৈরি হও বা না হও!' তারপরে সে সব লুকোনো খেলোয়াড়কে খুঁজে বার করার চেষ্টা করে।

লুকোচুরি খেলা
লুকোচুরি খেলা
উনিশ শতকের এক ছবিতে তিনজন শিশু একটা বনে লুকোচুরি খেলছে (ফ্রেডরিক এডুয়ার্ড মেয়ারহেইম)
বয়সসীমা৩+
ঘুঁটি সাজানোর সময়কালপ্রায় ৯০ সেকেন্ড
খেলার সময়অপরিসীম
দৈবসুযোগখুব নিচু
প্রয়োজনীয় দক্ষতাদৌড়োনো, খোঁজা, লুকোনো, পর্যবেক্ষণ, নীরব থাকার যোগ্যতা

বিভিন্ন উপায়ের যে কোন একটাতে এই খেলা শেষ হতে পারে। খুব সাধারণ নিয়মে খেলা শেষ হয় যখন একজন 'দাগি' খেলোয়াড় সকলকে খুঁজে পেয়ে যায়। যাকে প্রথম দেখা হয় সে-ই হয় হেরো এবং তাকে পরের খেলার 'দাগি' খেলোয়াড় হিসেবে বাছাই করা হয়ে থাকে। যে খেলোয়াড় সকলের শেষে ধরা পড়ে সে বিজয়ী হয়। অন্য একটা সাধারণ বৈচিত্র্য হল 'খুঁটি'তে পৌঁছোনো। লুকোনো ব্যক্তিরা লুকিয়ে থেকে যেতে পারে অথবা লুকোনো জায়গা থেকে বেরিয়ে একটি নির্দিষ্ট খুঁটি পর্যন্ত দৌড়োতে পারে; একবার যদি সে সেটা ছুঁতে পারে, তবে সে 'বেঁচে' গেল এবং তাকে আর দাগি করা যাবেনা। ওহিওতে একজন লুকোনো ব্যক্তিকে খুঁটিকে ছুঁয়ে অবশ্যই 'মুক্ত' বলে চিৎকার করতে হবে, নাহলে তাকে দাগি করা যাবে। খুঁটি পর্যন্ত পৌঁছনোর আগে যদি কোনো দাগি খেলোয়াড় লুকোনো খেলোয়াড়কে মার্কা করে তখন সেই ব্যক্তি 'দাগি' অথবা 'খুঁজতে থাকা ব্যক্তি' হয়ে যায়।

এই খেলা মৌখিক মাধ্যমেই পরবর্তী প্রজন্মে প্রবাহিত হয়, কারণ এই খেলা সাধারণত শিশুদের দ্বারাই অগ্রসর হয়।

বৈচিত্র্যসমূহ

লুকোচুরি খেলা 
শিশুরা লুকোচুরি খেলছে

সারা বিশ্বে খেলার বৈচিত্র্য অনুযায়ী বিভিন্ন নামে লুকোচুরি খেলা চলে।

এক রকম খেলার নাম হল 'ছদ্মবেশী', যে লুকোচুরি খেলায় একজন মাত্র লুকোবে অন্যেরা হন্যে হয়ে তাকে খুঁজে বেড়াবে। একটা টিনের মধ্যে সার্ডিন মাছ যেভাবে থাকে, লুকোবার জায়গাগুলো তেমন খুবই আবদ্ধ হয়। যে খেলোয়াড় লুকোনো গোষ্ঠীকে সকলের শেষে দেখবে সে হবে হেরো, এবং পরের রাউন্ডের জন্যে সে হবে লুকোনো ব্যক্তি। এ এম বুরেজ ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে তাঁর একই নামে ভূতের গল্পের বইতে এই খেলাকে 'স্মী' বলেছেন।

লুকোচুরি খেলা 
লুকোচুরি খেলা (চিত্রশিল্প ১৮৮১)

লুকোচুরি খেলার কিছু সংস্করণ অনুযায়ী প্রথম লুকোনো ব্যক্তি ধরা পড়া কিংবা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কোনো অন্য খেলোয়াড়ের দেখা না-পেলে খুঁজতে থাকা ব্যক্তি পূর্ব নির্ধারিত একটা গৎ (যেমন, 'যারা বাইরে আছে তারা সকলেই বিনা শাস্তিতে চলে আসতে পারো', অথবা বলা যায় 'সবাই এলো, সবাই এলো, সকলে বেরিয়েছে প্রত্যেকে মুক্ত') বলে অন্যান্য লুকোনো ব্যক্তিদের পরের রাউন্ডের জন্যে খেলাঘরে ফিরে আসতে সংকেত দেয়। অন্য এক সংস্করণে যখন যে লুকোনো ব্যক্তিরা ধরা পড়ে যায়, তারা খুঁজতে থাকা ব্যক্তিকে বাকিদের শনাক্ত করার জন্যে সাহায্য করে।

অন্য রকমের খেলায় একবার সকল লুকোনো ব্যক্তি শনাক্ত হলে খেলাটা তখন মার্কা দেওয়ার খেলা হয়ে যায়, যেখানে খুঁজতে থাকা ব্যক্তি অবশেষে অন্যান্যদের তাড়া করে এবং মার্কা দেওয়া প্রথম ব্যক্তি পরবর্তী রাউন্ডের জন্যে খুঁজতে থাকা ব্যক্তি হয়ে যায়।

আরো একটা খেলায় লুক্কায়িতরা বাকিদের ধরার জন্যে রাস্তা দেখিয়ে দেয়, কিন্তু প্রথম দেখা ব্যক্তিকে পরের রাউন্ডে খুঁজতে থাকা ব্যক্তি হতেই হয়।

অন্য আর একটা বৈচিত্র্যে এই খেলাকে বলা হয় 'পশ্চাদ্ধাবন'। এটা দলবদ্ধ খেলা এবং সন্ধ্যার পর অনুষ্ঠিত হয়। দুটো দল—লুক্কায়িত এবং সন্ধানকারী—প্রত্যেক দলে দুই অথবা তার বেশি খেলোয়াড় থাকে। একটা কেন্দ্রীয় খেলাঘর থাকে (বলা হয় নিরাপদ) যেখান থেকে সন্ধানকারী গোনা হয় এবং লুক্কায়িতরা অবশ্যই সন্ধানকারী দ্বারা দাগি না-হয়ে এখানে ফিরে আসতে হবে যাতে 'মুক্ত' হয়ে আবার লুকোতে পারে। সকল খেলোয়াড় কালো পোশাক পরে। কোনো উজ্জ্বল আলো স্বীকৃত নয়। খেলার জায়গায় শুধু রাস্তার বাতি থাকে বা বলা ভালো সাধারণ আলো অনুমোদিত হয়। লুক্কায়িতদের লক্ষ্য হল চারিদিকের ছায়া থেকে ছদ্মবেশের সুবিধে নেওয়া। খেলাটার মজা হল লুকিয়ে চুরিয়ে থাকা। যখন একজন লুক্কায়িত ধরা পড়ে—সন্ধানকারীর দ্বারা দাগি হয়—লুক্কায়িত আর লুকোতে চায়না এবং খেলাঘরে থেকে যায়। যদি একজন লুক্কায়িত দাগি না-হয়ে 'মুক্ত' হয়ে খেলাঘরে ফেরে তাহলে সে আবার তার দলকে প্রতিনিধিত্ব করে লুকিয়ে যেতে পারে। যখন সমস্ত লুক্কায়িতরা ধরা পড়ে তারা হয়ে যায় সন্ধানকারী এবং সন্ধানকারীরা হয়ে যায় লুক্কায়িত। লুক্কায়িতরা খেলার চত্বরের সীমানা ছাড়তে পারেনা, যদি সীমানা টপকায় তবে তাহলে 'ধরা' পড়ে এবং রাউন্ড থেকে 'বাহির' হয়ে যায়। খেলার এই সংস্করণের উদ্ভব হয়েছে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে গ্রিসে, নিউ ইয়র্কে, এবং ১৯৮৯ খ্রিস্টাবের শেষে এটা বিরাটভাবে অনুসৃত হয়। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের দশকে এর জনপ্রিয়তা হ্রাস পেতে থাকে, কেননা, মা বাবারা রাতে বয়ঃসন্ধিকালে খেলায় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়েছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

অন্য একটা বৈচিত্র্যে আছে লুক্কায়িতদের দেখার পরে সন্ধানকারীদের ফেরার আগে অবশ্যই 'খেলাঘরে' ফিরে আসতে হবে। অন্যদিকে, সন্ধানকারীরা তাদের দেখা ও ফিরে আসার আগে লুক্কায়িতদের অবশ্যই 'খেলাঘরে' ফিরে আসতে হবে।

অস্ট্রেলিয়ার কিছু অংশে এই খেলাকে '৪৪ ঘর' বলা হয়। সন্ধানকারীরা না-দেখা পর্যন্ত লুক্কায়িতরা লুকিয়ে থাকে, যারা বলে, 'চল্লিশ,চল্লিশ, আমি তোমাকে দেখছি' (কখনো সংক্ষেপে 'চল্লিশ, চল্লিশ, তোমাকে দেখছি')। একবার দেখে নিলে লুক্কায়িত অবশ্যই 'খেলাঘরে' দৌড়োবে (যেখানে সন্ধানকারী গুনছিল যখন অন্য খেলোয়ড়রা লুকিয়ে) এবং সন্ধানকারী তাকে 'ইঙ্গিত' (দাগি করবে অথবা ছোঁবে) করার আগে সেখানে পৌঁছাবে। যদি দাগি করে তাহলে লুক্কায়িত ব্যক্তি নতুন সন্ধানকারী হয়ে যায়।

উত্তর ভারতে ভিন্নভাবে লুকোচুরি খেলা হয়—যদি লুক্কায়িতদের কেউ চিহ্নিত করা ছাড়া 'ধাপ্পা' বলে সন্ধানকারীকে ছুঁয়ে দেয়, তখন সন্ধানকারীকে রাউন্ড আবার শুরু ও আবার গুনতি করতে হয়; এবং সন্ধানকারী লুক্কায়িতকে চিহ্নিত করার সময় বলে 'আমি গুপ্তচর'। চিহ্নিত করা প্রথম লুক্কায়িত পরের রাউন্ডে সন্ধানকারী হয়ে যায়। বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন বাক্যাংশ ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যেমন, 'চাপ্পা', এবং 'আমি গুপ্তচর', অথবা অন্যথা হয় সন্ধানকারী যখন ছুঁতে পারে (উদাহরণস্বরূপ গুনতি করার সময়)। সন্ধানকারীকে অনেক সময় বলা হয় 'দিয়ানের' (বিপরীত)।

ব্রাজিল এবং রাশিয়ায় যখন সন্ধানকারী একজন লুক্কায়িতকে চিহ্নিত করে, যেখানে সন্ধানকারী আসলে গুনতি করছিল সেখানে দুজনেই দৌড়োতে থাকে; যে খেলোয়াড় জায়গাটা প্রথম স্পর্শ করে সে-ই খেলাটা জেতে।

লুকোচুরি খেলা অনেক সময় রাতে একটা পার্ক, মাঠ অথবা বাড়িতে আলো নিভিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা

লুকোচুরি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ সরকারিভাবে নামকরণ 'ন্যাস্কন্ডিনো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ' হল অনন্য এক আন্তর্জাতিক লুকোচুরি প্রতিযোগিতা, একটা দল বড়োদের জন্যে অবিবিধ লিঙ্গ অনুসারে বিভাগসমূহে খেলে। ২০১০ খ্রিস্টাব্দে ইতালির বার্গ্যামো শহরে এই খেলার জন্ম; এটা ইতালিতে প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে অনুষ্ঠিত হয়। ইতালীয় সংস্করণে ব্যুৎপন্ন এই লুকোচুরি খেলার নাম 'ন্যাস্কন্ডিনো' (ইতালীয় ভাষায় লুকোচুরি), এবং খোলা আকাশের নিচে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে, এর জন্যে তৈরি হয় কৃত্রিম এবং প্রাকৃতিক আস্তানা। ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে ১১টা দেশের ৭০টা দল নিয়ে এই খেলার সপ্তম প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

তথ্যসূত্র

Tags:

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

বাংলাদেশের ইতিহাসইস্তেখারার নামাজরক্তফাতিমাটাঙ্গাইল জেলাঅস্ট্রেলিয়ান্যাটোঅবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরমাহরামপান (পাতা)সন্ধিজাপানবাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকবিতাপারমাণবিক ভরের ভিত্তিতে মৌলসমূহের তালিকাপ্রাকৃতিক দুর্যোগইসলামদ্বাদশ জাতীয় সংসদ সদস্যদের তালিকারাজশাহীকুরআনের সূরাসমূহের তালিকামানব দেহজাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দামাওলানাআর্কিমিডিসের নীতিআডলফ হিটলারশর্করাবাংলা ব্যঞ্জনবর্ণউমাইয়া খিলাফতপ্লাস্টিক দূষণআবদুল মোনেমমানব শিশ্নের আকারমিয়ানমারদ্বৈত শাসন ব্যবস্থাবাংলাদেশের জেলাসমূহের তালিকাদারাজরাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড স্কুল এন্ড কলেজবিদায় হজ্জের ভাষণব্যঞ্জনবর্ণগায়ত্রী মন্ত্রপথের পাঁচালী (চলচ্চিত্র)ভৌগোলিক নির্দেশকশ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসতাপ সঞ্চালনবাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরইবনে বতুতাগাঁজা (মাদক)রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসিযোনি পিচ্ছিলকারকমাইটোসিসমালদ্বীপমুমতাজ মহলদ্বিতীয় মুরাদঅর্থ (টাকা)ইউক্রেনভারত বিভাজনপ্রিয়তমাপ্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরশিল্প বিপ্লবঅমর্ত্য সেনজনি সিন্সবাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিইউরোপীয় দেশগুলো ও অধীনস্থ ভূভাগের তালিকাগজলইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিদীপু মনিবাস্তুতন্ত্রপলাশীর যুদ্ধবাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকাশিশ্ন বর্ধনমিঠুন চক্রবর্তীঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরমহাত্মা গান্ধীরাজনীতিডায়ানা, প্রিন্সেস অব ওয়েলসখুলনা জেলাফুসফুস🡆 More