বৃহৎ হ্যাড্রন সংঘর্ষক

বৃহৎ হ্যাড্রন সংঘর্ষক পৃথিবীর বৃহত্তম ও সবচেয়ে শক্তিশালী কণা ত্বরক এবং মানবনির্মিত বৃহত্তম যন্ত্র। একে ইংরেজিতে লার্জ হ্যাড্রন কলাইডার (Large Hadron Collider সংক্ষেপে LHC) ও ফরাসি ভাষায় গ্রঁ কোলিজিওন্যর দ্য আদ্রোঁ (Grand collisionneur de hadrons) নামে ডাকা হয়। ইউরোপীয় নিউক্লীয় গবেষণা সংস্থা সার্ন এবং ১০০টি দেশের ১০০০০-এরও অধিক বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী এই ত্বরক নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করেছেন। এছাড়া অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাগার এই যন্ত্রের নির্মাণ প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেছে। যন্ত্রটিকে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরের কাছে, ফ্রান্স-সুইজারল্যান্ড সীমান্তের প্রায় ১৭৫ মিটার নিচে ২৭ কিলোমিটার পরিধির একটি সুড়ঙ্গের মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে।

লার্জ হ্যাড্রন কলাইডার
(এলএইচসি)
বৃহৎ হ্যাড্রন সংঘর্ষক
এলএইচসি পরীক্ষা
এটিএলএএসA Toroidal LHC Apparatus
সিএমএসকম্প্যাক্ট মিউওন সলিনয়েড
LHCbLHC-beauty
ALICEএকটি বড় আয়ন কলাইডার পরীক্ষা
TOTEMTotal Cross Section, Elastic Scattering and Diffraction Dissociation
LHCfLHC-forward
MoEDALMonopole and Exotics Detector At the LHC
LHC preaccelerators
p এবং PbLinear accelerators for protons (Linac 2) and Lead (Linac 3)
(চিহ্নিত না)Proton Synchrotron Booster
পিএসProton Synchrotron
এসপিএসSuper Proton Synchrotron
হ্যাড্রন কলাইডার
ইন্টারসেক্টিং স্টোরেজ রিংসসার্ন, ১৯৭১–১৯৮৪
প্রোটন-অ্যান্টিপ্রোটন কলাইডার (এসপিএস)সার্ন, ১৯৮১–১৯৯১
ইজাবেলবিএনএল, ১৯৮৩ সালে বাতিল
টেভাট্রনফার্মিল্যাব, ১৯৮৭–২০১১
সুপারকন্ডাক্টিং সুপার কলিডার১৯৯৩ সালে বাতিল
রিলেটিভিস্টিক হেভি আয়ন কলাইডারবিএনএল, ২০০০–বর্তমান
লার্জ হ্যাড্রন কলাইডারসার্ন, ২০০৯–বর্তমান
ফিউচার সার্কুলার কলাইডারপ্রস্তাবিত
বৃহৎ হ্যাড্রন সংঘর্ষক
সিএমএস ডিটেক্টরে প্রকাশিত হিগস বোসন কণা।

ত্বরকটিকে ৯ টেরা ইলেকট্রন ভোল্টের প্রোটনসমৃদ্ধ রশ্মির মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে। এ ধরনের সংঘর্ষ ঘটানোর মূল উদ্দেশ্য পদার্থবিজ্ঞানের প্রমিত মডেলের সত্যতা ও সীমাবদ্ধতা নির্ণয় করা। কণা পদার্থবিজ্ঞানে বর্তমানে এই প্রমিত মডেলই সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য তাত্ত্বিক মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়।

২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের ১০ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো পুরো এলএইচসি-তে প্রোটন রশ্মি চালনা করা হয়। এর আগে -১১ আগস্টের মধ্যে এতে প্রাথমিক কণা রশ্মি ঢোকানো হয়, তাপমাত্রা ধীরে ধীরে ১.৯ কেলভিনে (-২৭১.২৫° সেলসিয়াস) নামিয়ে আনা হয়। এর মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম উচ্চশক্তির সংঘর্ষ ঘটানো হয় ২১ অক্টোবর। তাই ২১ অক্টোবরকেই এলএইচসি'র উদ্বোধন দিবস বলা হচ্ছে।

পুরোপুরি কার্যকর হওয়ার পর সংঘর্ষকটির ভেতরে হিগ্‌স বোসন তৈরি হওয়ার কথা। এই কণাকে "ঈশ্বর কণা" বলা হয়। এটাই একমাত্র মৌলিক কণা যাকে এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা যায়নি। এই পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে পদার্থবিজ্ঞানের প্রমিত মডেল-এর অজানা তথ্য সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করা যাবে। এছাড়া মৌল কণাগুলো কীভাবে ভর বা এধরনের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য লাভ করে তাও এর মাধ্যমে জানা যাবে।

এর আগেও অনেকগুলো হ্যাড্রন-সংঘর্ষক তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এলএইচসি-র মত অন্য কোনোটিই এতো আলোচিত হয়নি। এর কারণ এলএইচসি'র উচ্চশক্তি। এর মধ্যকার সংঘর্ষের মাধ্যমে মহাবিশ্বের জন্মলগ্ন বা মহাবিষ্ফোরণের ঠিক পরের শর্তগুলো তৈরি করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। অবশ্য এক্ষেত্রে শর্তগুলো খুব ছোট মাপে কাজ করবে।

অনেকেই এই পরিকল্পিত পরীক্ষার নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অনেকে বলছেন, এর মাধ্যমে বিশাল ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। কিন্তু বিজ্ঞানী মহল় এ ধরনের কোনো নিরাপত্তাহীনতার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন।

নির্মাণের কারণ

পদার্থবিজ্ঞানীগণ লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারের মাধ্যমে পদার্থবিজ্ঞানের কিছু মৌলিক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবার আশা করছেন। এদের মধ্যে মৌলিক কণাসমূহ, স্থানকালের গঠন, মহাবিশ্বকে পরিচালনাকারী মৌলিক নিয়মসমষ্টি, বিশেষত কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান ও সাধারণ আপেক্ষিকতার সেইসব ক্ষেত্রসমূহ যেখানে জ্ঞান অজানা, অস্বচ্ছ, কিংবা এরা কোনভাবেই খাটে না তা অন্তর্গত। এছাড়া লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার কিছু নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তরের জন্যও নির্মাণ করা হয়েছে। যেমন

• হিগস্‌ মেকানিজামে বর্ণিত ইলেক্ট্রোউইক সিমেট্রি ব্রেকিং পদ্ধতিতে কি মৌলিক কণার ভরসমূহ আদৌ পাওয়া সম্ভব কিনা ? লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার দ্বারা আশা করা হচ্ছে যে এটি পদার্থবিজ্ঞানের সোনার হরিণ হিগস বোসন বা ঈশ্বর কণার অস্তিত্ব প্রমাণ করবে বা বাদ দেবে যার ফলে পুরো সাধারণ মডেল বাতিল বলে গণ্য হবে।

• অতিপ্রতিসাম্য বা সুপার সিমেট্রি যা সাধারণ মডেলের একটি বর্ধিত অংশ এবং পোয়াঁকারে প্রতিসাম্য Poincaré symmetry) যা প্রকৃতিতে দেখা যায়। সকল জ্ঞাত কণার কি অতিপ্রতিসম জোড় আছে ?

• রজ্জু তত্ত্ব বা স্ট্রিং থিয়োরির ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন মডেল যে অতিরিক্ত মাত্রার ভবিষ্যদ্বাণী করেছে তা আদৌ আছে কিনা কিংবা থাকলে আমরা কি তা আলাদা ভাবে নির্ণয় করতে পারি ?

তমোপদার্থের ( Dark Matter ) ধর্ম কি যার পরিমাণ মহাবিশ্বের মোট ভরের প্রায় ২৩% ?

অন্যান্য প্রশ্ন সমূহ হচ্ছে, তড়িচ্চৌম্বক বল, সবল নিউক্লীয় বল, এবং দুর্বল নিউক্লীয় বল কি আসলে একই বলের বিভিন্ন প্রকাশ, যেমনটি মহা একীকরণ তত্ত্বে কল্পনা করা হয়েছে ?

• কেন মহাকর্ষ অন্যান্য মৌলিক বলের তুলনায় অত্যন্ত দুর্বল ?

• সাধারণ মডেলের বাইরে আর কি কোনও কোয়ার্ক মিশ্রণ (Quark Flavor Mixing ) আছে  ?

• কেন পদার্থ এবং প্রতি পদার্থের সিমেট্রির( Matter & Anti-Matter Symetry ) মাঝে গরমিল দেখা যায় ?

• মহাবিশ্বের প্রারম্ভে কোয়ার্ক-গ্লুওন প্লাজমার ( Quark-Gluon Plasma ) ধর্ম কি রকম ছিল ?

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

ওয়েবসাইট

সংবাদ

ভিডিওচিত্র

Tags:

বৃহৎ হ্যাড্রন সংঘর্ষক নির্মাণের কারণবৃহৎ হ্যাড্রন সংঘর্ষক তথ্যসূত্রবৃহৎ হ্যাড্রন সংঘর্ষক বহিঃসংযোগবৃহৎ হ্যাড্রন সংঘর্ষককণা ত্বরকগবেষণাগারবিশ্ববিদ্যালয়সুইজারল্যান্ড

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

মুতাজিলানেপালদৈনিক যুগান্তরবিড়ালটাইফয়েড জ্বরভাষা আন্দোলন দিবসমহাস্থানগড়বাংলাদেশের কোম্পানির তালিকাদোয়া কুনুতচিরস্থায়ী বন্দোবস্তপাবনা জেলাপশ্চিমবঙ্গ মধ্য শিক্ষা পর্ষদহিন্দুধর্মের ইতিহাসবাংলা ব্যঞ্জনবর্ণভূগোলচাঁদপুর জেলাহিন্দি ভাষাআশালতা সেনগুপ্ত (প্রমিলা)উমাইয়া খিলাফতউপন্যাসযোনিমিয়ানমারগঙ্গা নদীদ্য কোকা-কোলা কোম্পানিকোষ বিভাজনমাইকেল মধুসূদন দত্তবাংলাদেশের ইতিহাসশেখ হাসিনাআর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলজীববৈচিত্র্যদি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশদ্বাদশ জাতীয় সংসদ সদস্যদের তালিকাবগুড়া জেলাবাঁশতাপ সঞ্চালনবাস্তুতন্ত্রকুরআনবীর শ্রেষ্ঠনাটকতাপমাত্রাসাদ্দাম হুসাইনবাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শকগাণিতিক প্রতীকের তালিকাশ্রীলঙ্কাবাল্যবিবাহজিয়াউর রহমানবাংলাদেশী অভিনেত্রীদের তালিকাটুইটারমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসমাসধর্মীয় জনসংখ্যার তালিকাতরমুজজয় চৌধুরীমুসাফিরের নামাজমহেন্দ্র সিং ধোনিমুহাম্মাদের স্ত্রীগণহেপাটাইটিস বিটাঙ্গাইল জেলাজেরুসালেমনীল বিদ্রোহশেখ মুজিবুর রহমানমাহরামহিন্দুধর্মআল মনসুরপ্রথম মালিক শাহজাতীয় সংসদ ভবনইংরেজি ভাষারবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন (১৮৬১–১৯০১)ট্রাভিস হেডইস্তেখারার নামাজরংপুরপূরণবাচক সংখ্যা (ভাষাতত্ত্ব)গজনভি রাজবংশআল-আকসা মসজিদপানিবাইতুল হিকমাহরশিদ চৌধুরী🡆 More