বাংলা একাডেমি (বাংলা উচ্চারণ: ) হল বাংলাদেশের ভাষানিয়ন্ত্রক সংস্থা। এটি ১৯৫৫ সালের ৩রা ডিসেম্বর (১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৩৬২ বঙ্গাব্দ) প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা, গবেষণা ও প্রচারের লক্ষ্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশে) এই একাডেমিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠার দাবি ওঠে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন বর্ধমান হাউজে এই একাডেমির সদর দপ্তর স্থাপিত হয়। একাডেমির বর্ধমান হাউজে একটি “ভাষা আন্দোলন জাদুঘর” আছে।
সংক্ষেপে | বাএ |
---|---|
উচ্চারণ | |
নামকরণ | আকাদেমি ফ্রঁসেজ |
গঠিত | ৩ ডিসেম্বর ১৯৫৫ |
ধরন | স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান |
আইনি অবস্থা | রাষ্ট্রীয় ভাষানিয়ন্ত্রক সংস্থা |
উদ্দেশ্য | বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির গবেষণা, প্রকাশনা ও অনুবাদের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত জ্ঞানভিত্তিক এবং ঐতিহ্যমণ্ডিত সংস্কৃতিমনস্ক জাতি গঠন |
সদরদপ্তর | বর্ধমান হাউস |
অবস্থান |
|
যে অঞ্চলে কাজ করে | বাংলাদেশ |
দাপ্তরিক ভাষা | বাংলা |
মহাপরিচালক | মুহম্মদ নূরুল হুদা |
সেলিনা হোসেন | |
প্রধান প্রতিষ্ঠান | সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় |
ওয়েবসাইট | banglaacademy |
বশীর আল-হেলালের মতে, বাংলা একাডেমির মতো প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও সংগঠনের চিন্তা ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ প্রথম করেন। ড. শহীদুল্লাহ ৩১ ডিসেম্বর, ১৯৪৮ এ পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনে ভাষা সংক্রান্ত একটি একাডেমি প্রতিষ্ঠার দাবি করেন। এছাড়া দৈনিক আজাদ পত্রিকা বাংলা একাডেমি গঠনে জনমত সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। ১৯৫২ সালের ২৯ এপ্রিল পত্রিকাটি "বাংলা একাডেমী" প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা জানিয়ে এ প্রসঙ্গে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সে সময় কিছু প্রচেষ্টা নেয়। ১৯৫৪ সালে এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তাবও গ্রহণ করা হয়। কিন্তু অর্থাভাবে প্রস্তাবটি বাস্তবায়িত হয়নি। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হলে শিক্ষামন্ত্রী সৈয়দ আজিজুল হক নির্দেশ দেন,
প্রধানমন্ত্রী বর্ধমান হাউজের বদলে অপেক্ষাকৃত কম বিলাসের বাড়িতে বাসস্থান নির্দিষ্ট করিবেন এবং বর্ধমান হাউজকে আপাতত ছাত্রাবাস ও পরে বাংলা ভাষার গবেষণাগারে পরিণত করা হইবে।
অবশেষে ১৯৫৫ সালে ৩ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আবু হোসেন সরকার উদ্বোধন করেন "বাংলা একাডেমি"। বাংলা একাডেমির প্রথম সচিব মুহম্মদ বরকতুল্লাহ। তার পদবি ছিল "স্পেশাল অফিসার"। ১৯৫৬ সালে একাডেমির প্রথম পরিচালক নিযুক্ত হন অধ্যাপক ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হক। বাংলা একাডেমির প্রথম প্রকাশিত বই আহমদ শরীফ সম্পাদিত দৌলত উজির বাহরাম খান রচিত লায়লী-মজনু। স্বাধীনতার পর থেকে একাডেমি চত্বরে স্বল্প পরিসরে বইমেলা শুরু হয় এবং ১৯৭৪ সাল থেকে বড়ো আকার ধারণ করে। ২০০৯-২০১১ খ্রিষ্টাব্দে একাডেমির বর্ধমান হাউজ ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় ভাষা আন্দোলন জাদুঘর স্থাপিত হয়েছে।
দেশজ সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সমকালীন শিল্প ও সাহিত্য সংরক্ষণ এবং গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে জাতির মানসিক বিকাশ ও উৎকর্ষ সাধন।
বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বাংলা একাডেমি একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। একাডেমির কার্যনির্বাহী প্রধান হিসেবে রয়েছেন একজন মহাপরিচালক। এর প্রথম মহাপরিচালক ছিলেন মযহারুল ইসলাম, যিনি ২ জুন ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দ তারিখ থেকে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। বর্তমান মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন মুহম্মদ নূরুল হুদা। তিনি ১২ই জুলাই ২০২১-এ দায়িত্বগ্রহণ করেন।
বাংলা একাডেমির বর্তমান সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন সেলিনা হোসেন। ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২ তাকে সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
বাংলা একাডেমির বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য ৪টি বিভাগ রয়েছে। এই বিভাগগুলো হচ্ছে:
সভাপতিদের নাম নিম্নে দেওয়া হল:
নাম | কার্যকাল |
---|---|
পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষা মন্ত্রীগণ (পদাধিকারবলে) | ১০–০৮–১৯৫৭ থেকে ২৫–০৭–১৯৬০ |
মোহাম্মদ আকরম খাঁ | ১৯৬১ |
মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ | ১৯৬২ থেকে ১৯৬৩ |
মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদা | ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৫ |
সৈয়দ মুর্তাজা আলী | ০৯–০৮–১৯৬৯ থেকে ০৮–০৮–১৯৭১ |
জয়নুল আবেদিন | ২১–১১–১৯৭২ থেকে ২০–১১–১৯৭৪ |
সৈয়দ মুর্তাজা আলী | ০৮–০৩–১৯৭৫ থেকে ০৭–০৩–১৯৭৭ |
সৈয়দ আলী আহসান | ১০–১০–১৯৭৭ থেকে ০৯–১০–১৯৭৯ |
আবদুল হক ফরিদী | ১৪–০৭–১৯৮০ থেকে ১৩–০৭–১৯৮২ |
ড. আবু মহামেদ হবিবুল্লাহ | ১৯–০৯–১৯৮২ থেকে ০৩–০৬–১৯৮৩ (আমৃত্যু) |
আবদুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দিন | ১৩–১১–১৯৮৬ থেকে ১৩–১১–১৯৯০ |
গাজী শামছুর রহমান | ১৪–১১–১৯৯০ থেকে ১৩–১১–১৯৯২ |
বিচারপতি আবদুর রহমান চৌধুরী | ১৪–০৫–১৯৯৩ থেকে ১১–০১–১৯৯৪ (আমৃত্যু) |
গাজী শামছুর রহমান | ২৮–০৫–১৯৯৪ থেকে ২৭–০৫–১৯৯৬ |
শামসুর রাহমান | ১৯–০৮–১৯৯৬ থেকে ১৮–০৮–১৯৯৯ |
আনিসুজ্জামান | ১৯–০৮–১৯৯৯ থেকে ৩১–০১–২০০২ (পদত্যাগ) |
ওয়াকিল আহমদ | ১২–০২–২০০২ থেকে ১১–০২–২০০৬ |
মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ | ০৪–০২–২০০৭ থেকে ০৩–০২–২০০৯ |
কবীর চৌধুরী | ২২–০২–২০০৯ থেকে–১৩.১২.২০১১ (আমৃত্যু) |
আনিসুজ্জামান | ১৩–১২–থেকে ২৯–০৬–২০২০ |
শামসুজ্জামান খান | ২৯–০৬–২০২০ থেকে ১৪–০৪–২০২১ |
রফিকুল ইসলাম | ০১–০৬–২০২১ থেকে ৩০–১১–২০২১ |
সেলিনা হোসেন | ৩.০২.২০২২ থেকে চলমান |
গ্রন্থমেলায় আগ্রহী কথাসাহিত্যিক ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সাবেক পরিচালক সরদার জয়েনউদ্দীন আন্তর্জাতিক গ্রন্থবর্ষ উপলক্ষে ১৯৭২ সালে ডিসেম্বর মাসে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি আন্তর্জাতিক গ্রন্থমেলার আয়োজন করেন। সেই থেকেই বাংলা একাডেমিতে বইমেলার সূচনা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলা একাডেমির একুশের অনুষ্ঠানে কোনো বইমেলা হয় নি। তবে বাংলা একাডেমির দেয়ালের বাইরে স্ট্যান্ডার্ড পাবলিশার্সের রুহুল আমিন নিজামী সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রগতি প্রকাশনের কিছু বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেন। তাঁর দেখাদেখি মুক্তধারা প্রকাশনীর চিত্তরঞ্জন সাহা এবং বর্ণমিছিলের তাজুল ইসলামও ওভাবেই তাদের বই নিয়ে বসে যান। ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে একটি বিশাল জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই মেলার উদ্বোধন করেন। সে উপলক্ষে নিজামী, চিত্তরঞ্জন এবং বর্ণমিছিলসহ সাত-আটজন প্রকাশক একাডেমির ভেতরে পূর্ব দিকের দেয়ালঘেঁষে বই সাজিয়ে বসে যান। সে বছরই প্রথম বাংলা একাডেমির বইয়েরও বিক্রয়কেন্দ্রের বাইরে একটি স্টলে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়।
প্রতি বছর পুরো ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে বাংলা একাডেমি একটি জাতীয় বই মেলার আয়োজন করে যা অমর একুশে গ্রন্থমেলা নামে আখ্যায়িত হয়। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখ বাংলা ভাষার জন্য আত্মোৎসর্গের যে করুণ ঘটনা ঘটে, সেই স্মৃতিকে অম্লান রাখতেই এই মাসে আয়োজিত এই বইমেলার নামকরণ করা হয় "অমর একুশে গ্রন্থমেলা"। ১৯৮৪ সাল থেকে বাংলা একাডেমি আয়োজিত বইমেলাকে অমর একুশে গ্রন্থমেলা নামকরণ করা হয়।
বাংলা একাডেমি থেকে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সাল পর্যন্ত মোট ৫৪৮১ টি পুস্তক ও পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে। এতে রয়েছে কথাসাহিত্য, কবিতা, সাধারণ অভিধান, পরিভাষা অভিধান, বিভিন্ন লেখক-কবির রচনাবলি, সাহিত্য গবেষণা, সাহিত্য সমালোচনা, দর্শন, ইতিহাস, ভূগোল, গণিত, বিজ্ঞান, সাংবাদিকতা, ভাষা-আন্দোলন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, শিশু-কিশোর সাহিত্য, অনুবাদ, ধর্ম, সংস্কৃতি, জীবনী ইত্যাদি বিষয়ের গ্রন্থাবলি।
বাংলা একাডেমির প্রথম প্রকাশনা “বাংলা একাডেমি পত্রিকা” প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় ১৯৫৭-র জানুয়ারি মাসে।
বাংলা একাডেমির একটি নিজস্ব মুদ্রণ ব্যবস্থা রয়েছে।
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বাংলা ভাষার অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ সাহিত্য পুরস্কার। এটি ছাড়াও বাংলা একাডেমি কয়েকটি পুরস্কার প্রদান করে থাকে। এগুলো হল:
১৯৬০ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়। বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বিভিন্ন শাখায় বছরে ৯ জনকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বছরে ২ জনকে এই পুরস্কার প্রদানের নিয়ম করা হলেও, পরবর্তীতে, ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে চারটি শাখায় পুরস্কার দেয়া শুরু হয়।
শিল্পচর্চায় অনন্য অবদানের জন্য ২০১০ সালে বাংলাদেশের “সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার” হিসাবে পরিচিত “স্বাধীনতা পুরস্কার” প্রদান করা হয় এই প্রতিষ্ঠানটিকে।তাছাড়াও বাংলা একাডেমিকে আনন্দ পুরস্কার দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলা একাডেমি তা প্রত্যাখ্যান করে।
বাংলা একাডেমি নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের গুণী, পণ্ডিত ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি বছর সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে। এছাড়া বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্তগণও ফেলো হিসেবে গণ্য হন। বাংলা একাডেমির সাধারণ পরিষদের বার্ষিক সভায় সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করা হয়। সম্মানসূচক ফেলোশিপপ্রাপ্তদের সম্মাননাপত্র ও সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অমর্ত্য সেনকেও এই সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করা হয়।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article বাংলা একাডেমি, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.