আনি এরনো

আনি এরনো (ফরাসি: Annie Ernaux; জন্মনাম আনি দ্যুশেন Annie Duchesne; জন্ম ১লা সেপ্টেম্বর ১৯৪০) একজন ফরাসি লেখিকা ও সাহিত্যের অধ্যাপিকা। ২০২২ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

আনি এরনো
আনি এরনো
জন্মআনি দ্যুশেন
(1940-09-01) ১ সেপ্টেম্বর ১৯৪০ (বয়স ৮৩)
লিলবন, সেন-মারিতিম, ফ্রান্স
পেশাঔপন্যাসিক, দিনিলিপিকার
ভাষাফরাসি ভাষা
জাতীয়তাফরাসি
শিক্ষারুঅঁ বিশ্ববিদ্যালয়
বর্দো বিশ্ববিদ্যালয়
সময়কাল১৯৭৪ -
ধরনআত্মজীবনীমূলক উপন্যাস
বিষয়ফরাসী মানুষ ও সমাজ
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিলে জানে (বাংলায়: কাল। ২০০৮)
দাম্পত্যসঙ্গীফিলিপ এরনো
সন্তানদুই ছেলে এরিক ও ডেভিড

এরনোর সাহিত্যকর্ম মূলত আত্মজীবনীমূলক এবং এর সাথে সমাজবিজ্ঞানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। তিনি তাঁর লেখায় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সাথে বৃহত্তর সামাজিক ইতিহাসের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। ১৯৭৪ সালে রচিত তাঁর প্রথম উপন্যাস লে জার্মোয়ার ভিদ ("শূন্য আলমারিগুলি") তাঁর আত্মজৈবনিক লেখালিখির বুনিয়াদ গঠন করে। লা প্লাস ("এক পুরুষের জগৎ") ও লা ওঁত ("লজ্জা") গ্রন্থে তাঁর বাবা-মার সামাজিক আরোহণ, লা ফাম জ্যলে ("বরফশীতল নারী") গ্রন্থে তাঁর বিয়ে, পাসিওঁ সাঁপল ("সরল কামনা"), স্য পের্দ্র ("নিজেকে হারানো") ও লোক্যুপাসিওঁ ("দুশ্চিন্তা") গ্রন্থে তাঁর যৌনচিন্তা ও প্রেম, জুর্নাল দ্য দ্যঅর ("বাইরের রোজনামচা"), লা ভি এক্সতেরিয়র ("বাইরের জীবন") গ্রন্থে তাঁর চারপাশের পরিবেশ, লেভেনমঁ ("একটি ঘটনা") গ্রন্থে তাঁর গর্ভপাত, জ্য ন্য সুই পা সর্তি দ্য মা নুই ("এখনও আঁধারে") রচনাতে তাঁর মায়ের আলৎসহাইমার রোগ, উ্যন ফাম ("এক নারীর গল্প") গ্রন্থে তাঁর মায়ের মৃত্যু, ল্যুজাজ দ্য লা ফোতো ("আলোকচিত্রের ব্যবহার") গ্রন্থে তাঁর নিজের স্তন ক্যানসার, ইত্যাদি ব্যাপারগুলি সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ফুটে উঠেছে এবং তাঁর লেখাগুলিকে একই সাথে আত্মজৈবনিক ও সামাজিক ঐতিহাসিক মাত্রা দিয়েছে। এরনোর রচনাশৈলীকে সরলতা, স্বচ্ছতা, সংযম ও নৈতিকতা দ্বারা উদ্বুদ্ধ নান্দনিকতা দ্বারা চরিত্রায়িত করা হয়েছে। আর তাঁর লেখনীস্বর নিরপেক্ষ ও বেনামী।

এরনো ২০২২ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। "ব্যক্তিগত স্মৃতির শেকড়, বিচ্ছেদ ও সামষ্টিক বাধাগুলি উন্মোচিত করার সাহস ও চিকিৎসকসম সূক্ষ্ণতা প্রদর্শনের জন্য" তাঁকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রথম ফরাসি নারী সাহিত্যিক; তাঁর আগে যে ১৫ জন ফরাসি সাহিত্যিক নোবেল জয় করেন, তারা সবাই পুরুষ ছিলেন। নোবেল সাহিত্য পুরস্কার প্রদানকারী সমিতি বলে যে এরনোর সুদীর্ঘ ৫০ বছরের সাহিত্যসমগ্র "বিরাট সামাজিক লিঙ্গগত, ভাষাগত ও শ্রেণীগত বৈষম্যের দ্বারা চিহ্নিত এক জীবনের" "আপসহীন" অনুসন্ধান। সমিতির প্রধান আন্ডার্স ওলসন বলেন যে এরনো "সাহসিকতা ও ডাক্তারি সূক্ষ্মতার সাথে" "সামাজিক অভিজ্ঞতাগুলির পারস্পরিক বিরোধিতা" উন্মোচন করেছেন এবং "লজ্জা, অবমাননা, ঈর্ষা কিংবা নিজের স্বরূপ দেখার অক্ষমতার মতো ব্যাপারগুলি বর্ণনা করেছেন"।

সাহিত্য জীবন

এরনো ১৯৪০ সালে উত্তর ফ্রান্সের নরমঁদি (নরম্যান্ডি) অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন শ্রমিক শ্রেণীর এক পরিবারের সন্তান। তাঁর বাবা-মা একটি কফিঘর ও মুদির দোকান চালাতেন। সেখানে যেসব মধ্যবিত্ত মেয়েরা কেনাকাটা করতে আসত, তাদের সাথে সাক্ষাতের মাধ্যমে এরনো তাঁর শ্রমিক-শ্রেণী বাবা-মা ও তাঁদের সামাজিক পরিবেশ নিয়ে প্রথমবারের মতো লজ্জার অনুভূতি লাভ করেন, যা পরবর্তীতে তাঁর লেখা নানা কাহিনীর উপজীব্যে পরিণত হয়। কৈশোরেই এরনো নিয়মিত দিনলিপি লিখতে শুরু করেন আর নিজের লেখালেখির সক্ষমতা সম্যক অনুভব করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্যে পড়াশোনা করেন, এরপর লন্ডনে "ও প্যার" হিসেবে কাজ করেন। এরপর বিয়ে করে দুই সন্তানের জন্ম দেন ও একটি ফরাসি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষিকা হিসেবে চাকুরি করা শুরু করেন।

১৯৭২ সালে একদিন তিনি উপন্যাস লিখতে বসে যান। উপন্যাস লিখবেন শুনে তার স্বামী ফিলিপ এরনো ব্যঙ্গের হাসি হেসেছিলেন। তাই স্বামীকে সম্পূর্ণ লুকিয়ে লুকিয়ে প্রথম উপন্যাসটি লেখেন। যখন একটি নামকরা প্রকাশক উপন্যাসটি প্রকাশে সম্মত হলো তখন তার স্বামী বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন।‌ এভাবে ১৯৭৪ সালে লে জার্মোয়ার ভিদ (Les armoires vides, "শূন্য আলমারিগুলি") নামের গ্রন্থটি প্রকাশের মাধ্যমে সাহিত্যজগতে আনি এরনোর যাত্রা শুরু হয়। তার জীবনের অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এবং অনিবার্য গর্ভপাতের কাহিনী, অপমান ও লোকলজ্জার ঘটনাকে অবলম্বন করেছেন তিনি এ উপন্যাসে।

তবে সাহিত্যগগনে তারকা হিসেবে তাঁর প্রকৃত উদয় ঘটে ১৯৮৩ সালে, যে বছর তিনি তাঁর চতুর্থ গ্রন্থ লা প্লাস (La place, "এক পুরুষের জগৎ") প্রকাশ করেন। এই আত্মজীবনীভিত্তিক কল্পসাহিত্য গ্রন্থটিতে মাত্র একশত পৃষ্ঠাতে এরনো তাঁর প্রয়াত বাবার জীবন ও যে সামাজিক পরিবেশে তাঁর বাবার চরিত্র গঠন লাভ করেছিল, তার এক নিরাবেগ চিত্র অঙ্কন করেন। এর কয়েক বছর পরে এরনো তাঁর মাকে উপজীব্য করে একই রকম, আরও ছোট একটি গ্রন্থ লেখেন, যার নাম উ্যন ফাম (Une femme "এক নারীর গল্প"), এবং যাতে কল্পকাহিনী, সমাজবিদ্যা ও ইতিহাসের মেলবন্ধন ঘটেছে। এই দুইটি বইয়ে এরনো সামাজিক পরিবর্তন ও সামাজিক শ্রেণী আনুগত্যের পরিবর্তনের কারণে তাঁর প্রজন্ম ও তাঁর বাবা-মায়ের প্রজন্মের সম্পর্কের টানাপড়েনের ব্যাপারটি তুলে ধরেন এবং এভাবে ফরাসি সমাজে শ্রেণীবৈষম্যের ব্যাপারটি পরোক্ষভাবে ফুটিয়ে তোলেন।

আনি এরপর ধারাবাহিকভাবে আরও অনেকগুলি আত্মজীবনীমূলক কল্পসাহিত্য গ্রন্থ রচনা করেন। পরবর্তী ৫ দশকে একে একে তিনি সর্বমোট ২৪টি গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। ২০২২ সালে প্রকাশ করেছেন নতুন উপন্যাস ল্য জ্যনম ("এক যুবকের গল্প")। এগুলির বাইরেও তার অসংখ্য লেখালিখি রয়েছে।

তবে আনি এরনোর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বিলম্বিত হয়েছে। ফ্রান্স ও অন্যান্য ফরাসিভাষী দেশে এবং ইউরোপে পরিচিত নাম হলেও পৃথিবীর অন্যান্য আনি এরনো দীর্ঘ কাল অবধি পরিচিত হয়ে ওঠেননি। তিনি ১৯৯১ সালে প্রকাশ করেছিলেন তার উপন্যাস সহজ কামনা (পাসিওঁ সাঁপল)। ইংরেজিতে অনূদিত হয়ে এটি প্রকাশিত হয় ১৯৯৩ সালে। নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় এ বইটির আলোচনা প্রসঙ্গে লেখা হয়েছিল: কেবল ফ্রান্সেই এ রকম একটি ক্ষুদ্রাবয়ব আত্মজৈবনিক উপন্যাস পাঠকের কাছে সমাদৃত হতে পারে। উপন্যাসটি ফরাসি পাঠকদের কাছে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, এমনকি ইংরেজিভাষী বিশ্বে তেমন কদর লাভ করেনি। আলোচনায় আরও উল্লেখ করা হয়েছিল: তার অপরাপর দুটি উপন্যাস যথা ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত এক পুরুষের জগৎ এবং ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত এক নারীর গল্প ফ্রান্সে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তেমন কোনো সাড়া জাগায়নি।

২০০০ সালে এরনো তাঁর সাহিত্যিক জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কর্মটি রচনা করেন, যার নাম লেভেনমঁ (L’événement "ঘটনা")। এটিতে তিনি ডাক্তারি সংযমের সাথে ভাষার ব্যবহার করে একটি ২৩ বছর বয়সী যুবতীর নিজ দৃষ্টিকোণ থেকে একটি অবৈধ গর্ভপাতের কাহিনী বর্ণনা করেন। ২০২১ সালে এই উপন্যাসটিকে ভিত্তি করে একই নামে একটি ফরাসি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়।

২০০৮ সালে এরনো তাঁর সাহিত্যিক জীবনের সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী কর্মটি প্রকাশ করেন, যার নাম লেজানে (Les années, "বছরগুলি")। এই সাহিত্যকর্মটি তাঁর জন্য আন্তর্জাতিক সুখ্যাতি ও বহু ভক্ত-অনুরাগী ও সাহিত্যিক শিষ্যের জন্ম দেয়। লেজানে-কে "প্রথম সামষ্টিক আত্মজীবনী" নামে অভিহিত করা হয়েছে। জার্মান কবি ডুর্স গ্র্যুনবাইন এটিকে সমসাময়িক পশ্চিমা বিশ্বের একটি নতুন পথ সৃষ্টিকারী "সমাজবৈজ্ঞানিক মহাকাহিনী" হিসেবে প্রশংসা করেছেন। গ্রন্থটি দি ইয়ারস নামে ইংরেজিতে অনূদিত হয় ও ২০১৯ সালে ইন্টারন্যাশনাল ম্যান বুকার পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত প্রার্থীতালিকায় জায়গা করে নেয়। বুকার পুরস্কারের বিচারকেরা বইটিকে একটি "সাহিত্যের শ্রেণীর ধারণাটিকে দুমড়ে-মুচড়ে দেওয়া এক অত্যুৎকৃষ্ট সাহিত্যকর্ম" হিসেবে বর্ণনা করেন এবং বলেন এই বইটিতে "আত্মজীবনীকে এমন একটি নতুন রূপ দেওয়া হয়েছে, যা একই সাথে ব্যক্তিনিষ্ঠ ও নৈর্ব্যক্তিক, এবং একই সাথে ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক"।

যুক্তরাজ্যের টাইমস লিটারেরি সাপ্লিমেন্ট নামক সাহিত্য ক্রোড়পত্রটিতে তাঁকে ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় একজন লেখিকা হিসেবে বর্ণনা করেছে। কথাসাহিত্যিক জন ব্যানিভল বলেছেন যে সাহিত্যজগতে এরনোর লেখালেখি একটি বিপ্লবের মতো, কারণ যে পদ্ধতিতে তিনি লিখে থাকেন, তার কোনো পূর্বজ নেই। তার রচনার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আত্মজৈবনিকতা। অতীতের বাস্তব অভিজ্ঞতাকে তিনি অবলম্বন করেছেন গ্রন্থের প্রধান উপজীব্য হিসেবে। কিন্তু অতীতকে তিনি দেখেছেন একজন সমাজতাত্ত্বিকের চোখে। তার দেজানে গ্রন্থটি ইউরোপের বাইরে বিশেষ সমাদর লাভ করেছে। মার্কিন দৈনিক পত্রিকা দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস লেখা হয় যে এটি এমন একটি আত্মজীবনী, যার মতো আগে কখনও লেখা হয়নি। এতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী ফরাসি সমাজের যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা তুলনারহিত।

সাহিত্য দর্শন ও আত্মজৈবনিকতা

ফ্রান্সে এরনো বহু দশক ধরেই বিখ্যাত। সেখানে তাঁকে আলবের কাম্যু, সিমন দ্য বোভোয়ার, ফ্রঁসোয়াজ সাগঁ ও এদুয়ার লুইয়ের সাথে তুলনা করা হয়। আনি এরনোর অন্যতম পরিচয় এই যে তিনি একজন আত্মজৈবনিক ঔপন্যাসিক। প্রতিটি উপন্যাসের উপজীব্য স্বীয় জীবনের কড়কড়ে অভিজ্ঞতা এবং পর্যবেক্ষণ। তিনি নিজের জীবনের গোপন এবং প্রকাশ্য খুঁটিনাটি নানা বিষয়কে এক-একটি উপন্যাসের জন্য উপজীব্য করেছেন নিঃসংকোচ সাহসিকতায়। তাঁর বইগুলি সংক্ষিপ্ত, বাহুল্যবর্জিত, অনমনীয় ও নির্বিকারভাবে উদাসীন।

ষাটের দশকে, যখন তার বয়স কুড়ি থেকে পঁচিশ, তখন ভার্জিনিয়া উলফ পড়ে পড়ে এরনোর মধ্যে লেখালেখির তীব্র ইচ্ছা ঘনিয়ে উঠেছিল। কাছাকাছি সময়ে অঁদ্রে ব্র্যতোঁ-র অধিবাস্তবতাবাদের প্রথম ইশতেহার পড়ে জীবন এবং লেখালেখির ও জীবনযাপনের একটি পথরেখার সন্ধান পেয়েছিলেন। জারমেইন গ্রিয়ারের দা ফিমেইল ইউনাক বইটি তার দার্শনিক চিন্তায় নারীর সামাজিক অবস্থানকে প্রবিষ্ট করে দিয়েছিল। ১৯৬৫তে প্রকাশিত হয় জর্জ পেরেকের ষাটের গল্প: বিষয়আশয়। জর্জ পেরেকের রচনাকৌশল তাকে ভাবিয়েছিল। এই সবকিছু তাকে চেনা-পরিচিত জগতকে নতুন করে উপলব্ধির দিকনির্দেশনা দিয়েছিল। ভার্জিনিয়া উলফের মতো তারও মনে হয়েছিল লিখতে হলে প্রথমে বর্ণনাতীত বাস্তবকে তীব্রভাবে অনুভব করে নিতে হবে। লেখালেখির লক্ষ্য হবে হৃদয়ের গভীরে অনুভূত বাস্তবকে সাহিত্যের নতুন কোনো ভাষায় উত্থাপন করা। বিশেষ কোনো কাহিনী কল্পনা ফাঁদার প্রয়োজন নেই; উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিশেষ কতগুলি চরিত্রচিত্রণের প্রয়োজন নেই। বরং নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা ও অনুভবের মধ্যেই সুপ্ত রয়েছে যা কিছু দরকার। এভাবেই তিনি আত্মজৈবনিক কাহিনী রচনার দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তার রচনা আত্মজৈবনিকতা অতিক্রম করে হয়ে উঠেছে সর্বজনীন উপন্যাস। তার রচনার পরিসরে স্মৃতি ও স্মৃতিচারণ, অতীতের আবেগ ও উপলব্ধি, স্বপ্ন ও কল্পনা কখন একে অপরের সীমান্ত অতিক্রম করেছে তা বলা কঠিন। তবে সব লেখলেখির নোঙ্গর বাস্তব জীবনে প্রোথিত রেখেছেন তিনি। সাধারণ মানুষের জীবনের আকাঙ্ক্ষা ও ব্যর্থতা, আদর্শ ও দুর্বলতা, উত্থান ও পতন, দুঃখ ও লজ্জা, অর্জন ও অপমান সবই তার উপন্যাসের কাহিনীতে স্থান পেয়েছে। জীবনের রূঢ় বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তোলার বিষয়ে তার পক্ষপাত রয়েছে।

১৯৮৮ সালে আনি এরনো সোভিয়েত রাশিয়ায় গেলে লেনিনগ্রাদে একজন তরুণ রুশ কূটনৈতিকের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। তখন ঐ তরুণ রুশ কূটনৈতিকের কর্মস্থল ছিল প্যারিস। এরনোর বয়স ৪৮, নতুন প্রেমিকের বয়স পঁয়ত্রিশ। তাদের আঠারো মাস স্থায়ী প্রেমের কাহিনী নিয়ে ২০০১ সালে তিনি প্রকাশ করেন স্য পের্দ্র ("নিজেকে হারানো")। ঘনিষ্ঠ মিলনের বর্ণনায় তিনি অকপট যেমন তিনি লিখেছেন, “তিন ঘণ্টায় চারবার করেছি আমরা”; “বাৎসায়নের কামসূত্রে আছে এমন কিছু করতে আমরা বাকী রাখিনি”, “ওর বীর্যমাখা একটি জি-স্ট্রিং আমি আমার বালিশের নিচে রেখে দেব”। একস্থানে আমরা পড়ি: "হঠাৎ খেয়াল করে দেখি আমি আমার একটি কনট্যাক্ট লেন্স হারিয়ে ফেলেছি। ওর পুরুষাঙ্গের মাথায় খুঁজে পেলাম অবশেষে।" অকপটভাবে এরনো লিখেছেন: "ও আসে, চোদে, ভদকা টানে আর স্তালিনকে নিয়ে বকবক করে।" ─ দিনলিপিতে লিখে রাখা এই কাহিনীই তিনি উপজীব্য করেছিলেন উপরোল্লিখিত "সহজ কামনা" (পাসিওঁ সাঁপল) উপন্যাসে।

এক তরুণীর গল্প শিরোনামীয় উপন্যসটি তার কুমারীত্ব বিসর্জনের কাহিনী। তিনি একটি সাক্ষাৎকার বলেছেন, এটি কোনো ধর্ষণের ঘটনা ছিল না। ধর্ষণের ঘটনা হলে হয়তো অনেক আগেই এ নিয়ে লিখে ফেলতাম। তিনি বলেছেন, "আমি বাধা দেই নি, এ কথা স্পষ্ট মনে পড়ে।" — কার্যত নিজ জীবনের সব কিছুই তিনি তার সাহিত্যের উপজীব্য করেছেন।

তথ্যসূত্র

Tags:

ফরাসি ভাষা

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

ইসলামে যৌনতাপহেলা বৈশাখরাবণকোষ বিভাজনগণতন্ত্ররোমানিয়াবাংলা ভাষাবাংলাদেশে পালিত দিবসসমূহআয়নিকরণ শক্তিহনুমান চালিশাশ্রীকান্ত (উপন্যাস)বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলওবায়দুল কাদেরশেখ হাসিনারামকৃষ্ণ পরমহংসবুর্জ খলিফাউমাইয়া খিলাফতমার্কসবাদগজজৈন ধর্মলাইকিষাট গম্বুজ মসজিদসুব্রহ্মণ্যন চন্দ্রশেখরহস্তমৈথুনের ইতিহাসপদার্থের অবস্থাদোলোর ই গ্লোরিয়াসূরা মাউনকলমসেজদার আয়াতযাকাতসমকামী মহিলাচোখসেশেলসগ্রীন-টাও থিওরেমসোনালী ব্যাংক লিমিটেডবিশেষ্যবাংলাদেশের একাডেমিক গ্রেডিং পদ্ধতিজীববৈচিত্র্যনেইমারবাংলাদেশের ব্যাংকসমূহের তালিকাফোরাতবাংলাদেশ ব্যাংকউইকিপ্রজাতিমহাভারতমিয়া খলিফামেসোপটেমিয়াইলমুদ্দিনডিজিটাল বাংলাদেশবাংলা টিভি চ্যানেলের তালিকাসুবহানাল্লাহফেরেশতাবাংলাদেশের মেডিকেল কলেজসমূহের তালিকাউইকিবইবাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনভারতরমাপদ চৌধুরীরনি তালুকদারঢাকা জেলাক্রিটোবাংলাদেশের ইউনিয়নচিঠিক্যান্টনীয় উপভাষাজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়দুর্গালাহোর প্রস্তাব২০২৩ তুরস্ক–সিরিয়া ভূমিকম্পএ. পি. জে. আবদুল কালামগুগলহিন্দি ভাষাহরে কৃষ্ণ (মন্ত্র)শেখ মুজিবুর রহমানকোষ (জীববিজ্ঞান)আবুল কাশেম ফজলুল হকইন্দোনেশিয়াবর্ডার গার্ড বাংলাদেশতক্ষকনামাজের নিয়মাবলীনরসিংদী জেলা🡆 More