অ্যাসিড বৃষ্টি বা অম্ল বৃষ্টি হলো একধরণের বৃষ্টিপাত যেক্ষেত্রে পানি অম্লীয় প্রকৃতির হয়। এক্ষেত্রে পানির পি.এইচ ৭ এর চেয়ে কম হয়ে থাকে। এটি এমন এক ধরনের বৃষ্টি যাতে এসিড উপস্থিত থাকে।
বিশ্বকোষীয় পর্যায়ে যেতে এই নিবন্ধে আরো বেশি অন্য নিবন্ধের সাথে সংযোগ করা প্রয়োজন। (মে ২০২১) |
নানাবিধ অম্লধর্মীয় অক্সাইড বা এসিড মিশ্রিত থাকার কারণে এসিড বৃষ্টির সৃষ্টি হয় এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বৃষ্টির পানির pH ৫.৬ এর সমান বা কম হয়ে থাকে। এই বৃষ্টির ফলে গাছপালা, পশু-পাখি, জলজ প্রাণী, জীব-জন্তু, দালান-কোঠা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নানা ধরনের কল-কারখানা থেকে নির্গত সালফার-ডাই-অক্সাইড (SO2), সালফার-ট্রাই-অক্সাইড(SO3).
বর্তমান পৃথিবী খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে, এর অন্যতম প্রধান কারণ শিল্প বিপ্লব। বর্তমানে ব্যাপক হরে শিল্প কারখানা স্থাপন করা হচ্ছে, সেই সাথে পরিবেশ দূষণের মাত্রাও ভয়ঙ্কর রূপে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এই শিল্প কারখানা স্থাপনের ফলে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে এবং সেই সাথে অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে সাথে অ্যাসিড বৃষ্টির পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
১৮৫২ সালে রবার্ট অ্যাঙ্গুস স্মিথ (১৮১৭-১৮৮৪ ) নামের স্কটিশ রসায়নবিদ ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের কিছু শিল্প-নগরীতে বৃষ্টির পানি নিয়ে প্রথম কাজ করার সময় "এসিড বৃষ্টি" শব্দটি ব্যবহার করেন । তার বই Air and Rain: The Beginnings of a Chemical Climatology (১৮৭২) এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল এই এসিড বৃষ্টি। কিন্তু এসিড বৃষ্টি ১৯৬০ এর শেষের দিকে এবং ১৯৭০ এর প্রথম দিকে প্রথম দেখা যায় পশ্চিম ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার পূর্ব দিকে। তবে এসিড বৃষ্টি এশিয়া, আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়াতেও দেখতে পাওয়া যায়।
যেসব এলাকায় বা অঞ্চলে শিল্প-কারখানা বেশি ও বায়ু দূষণ বেশি সেসব স্থানে এসিড বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই প্রবল। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবের ফল হিসেবে এসিড বৃষ্টিকে চিন্তা করা যায়। কেবল পৃথিবীতে নয়, আমরা এসিড বৃষ্টি দেখি তা নয় বরং শুক্র গ্রহের মধ্যে ব্যাপক হারেই এই এসিড বৃষ্টি হওয়ার খবর জানা যায়। এসিড বৃষ্টির কারণে জীবের ক্ষতি হতে পারে বা জীব মারা যেতে পারে।
এসিড বৃষ্টি বা অম্ল বৃষ্টি সৃষ্টির প্রধানত দু ধরনের কারণ রয়েছে। যথাঃ
১. মানবসৃষ্ট কারণ - সালফিউরিক এসিড প্রায় প্রতিটি শিল্প কারখানার জন্য নিত্য ব্যবহার করা রাসায়নিক বস্তুর মধ্যে অন্যতম। বিভিন্ন কলকারখানা থেকে তাই সালফার ডাই অক্সাইড গ্যাস নির্গত হয়। এই সালফার ডাই অক্সাইড (SO2) গ্যাস বাতাসের অক্সিজেন দ্বারা জারিত হয় যার ফলে সালফার ট্রাই অক্সাইড (SO3) গ্যাস উৎপন্ন করে। আবার যানবাহন থেকে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড (NO2) গ্যাস নির্গত হয়। তাছাড়া মানুষের দ্বারা জ্বালানী পোড়ানো ও তাদের শ্বসন প্রক্রিয়া (শ্বাস-প্রশ্বাস) থেকে বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস নির্গত হয়ে থাকে।
N2 + O2 —— > 2NO; (বিদ্যুৎক্ষরণ, ৩০০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস)
2NO + O2 —— > 2NO2;
4NO2 + 2H2O + O2—— > 4HNO3
NO + O3 —— > NO2 + O2;
NO2 + NO3 —— > N2O5, N2O5 +H2O —— > 2HNO3
২. প্রাকৃতিক কারণ- প্রাকৃতিক কারণের মধ্যে বজ্রপাত অন্যতম। বজ্রপাতের ফলে উচ্চ তাপমাত্রায় বাতাসে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়। অগ্নিগিরির অগ্নুৎ্পাতের ফলে খনিস্থ সালফার পুড়ে সালফার ডাই অক্সাইড গ্যাস (SO2) বায়ুমণ্ডলে মুক্ত হয়। এছাড়া গ্রীষ্মের শুষ্কতার জন্য দাবানলের কারণে বনাঞ্চলে অগ্নুৎ্পাতের কারণে বিপুল পরিমাণে কার্বনডাইঅক্সাইড বায়ুমন্ডলে চলে আসে। এইসব গ্যাস বায়ুমন্ডলে বিরাজ করতে থাকে। এইবার যে অঞ্চলের বায়ুস্তরে এই সব গ্যাসের আধিক্য বেশি সেই এলাকায় মেঘ থেকে বৃষ্টির পানি নেমে আসার সময় বায়ুস্তর ভেদ করে নেমে আসে। তখন রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে। এই সব গ্যাসের সাথে বৃষ্টির পানি মিশে তৈরি করে লঘু এসিড এবং তা নেমে আসে পৃথিবীতে বৃষ্টির মাধ্যমে।
CO2 + H2O —— > H2CO3 ( লঘু কার্বনিক এসিড)
2SO2+O2 —— > 2SO3 ( 300 - 400 nm তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট আলোক রশ্মির প্রভাবে বিক্রিয়া )
SO2+O3 —— > SO3+O2, SO3+H2O —— > H2SO4
SO2+1/2 O2 + H2O —— > H2SO4 ( বায়ুর ধূলিকণা প্রভাবক হিসেবে কাজ করে )
SO2+ H2O —— > H2O3; H2SO3 + H2O —— > H2SO4+ H2
NO2 + H2O —— > HNO2 + HNO3 (লঘু নাইট্রাস ও লঘু নাইট্রিক এসিড)
অর্থাৎ কলকারখানা থেকে বিষাক্ত এসিড গ্যাস আকারে যখন বায়ুমণ্ডলের সাথে মিশে গিয়ে বৃষ্টির পানির সাথে বিক্রিয়া করে তখন ঐ বৃষ্টির পানিকে অম্লীয় তথা তার পি এইচ এর মান করে ফেলে ৭ এর চেয়ে কম। যেহেতু এর পিএইচ ৭ এর চেয়ে কম হয়ে থাকে তাই সাধারণভাবেই প্রকৃতির উপর এক বিরুপ প্রভাব ফেলে এটি।
বাতাস সালফিউরিক এসিড নাইট্রিক এসিডের এই সব দ্রবণকে শত মাইল দূরে পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে পারে । আর এতে করে তা ব্যাপক এলাকাজুড়ে ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায়। পরিশেষে এগুলি বৃষ্টি, তুষার বা কুয়াশার আকারে, এমনকি অদৃশ্য অবস্থায় শুষ্ক আকারেও মাটিতে নেমে আসে।
এসিড বৃষ্টি আমাদের পরিবেশের জন্য ব্যাপক হারে ক্ষতি বয়ে আনে। আর এদের মধ্যে অন্যতম হল- মাটির উপর যখন এসিড বৃষ্টি পরে তখন স্বাভাবিকভাবেই মাটির পি এইচ এর মান কমিয়ে দেয় আর এর ফলে মাটি হয়ে উঠে অম্লীয়। এতে করে মাটিতে বিদ্যমান নানা অণুজীবসহ মাটির মধ্যে বিদ্যমান নানা উদ্ভিদ এর জন্য জীবন ধারণ করা কষ্টকর হয়ে উঠে। আর এতে করে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হতে দেখা যায়।
এই এসিড বৃষ্টি গাছপালার পাতা হলুদ করে ফেলে। পুকুর-নদীতে পড়ে পানির পি এইচ কমিয়ে দেয় যার ফলে তা জলাশয়ের নানা উদ্ভিদ ও প্রানিকুল এবং মাছের জন্য খতির কারণ হয়ে দারায়, পশু পাখির ত্বকের ক্ষতি করে, দালান-কোঠার রং নষ্ট করে বিবর্ণ করে। এমনকি তা পাখিদের জন্যও ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায়। লোহার বীম, সেতুর লোহার বডির সাথে বিক্রিয়া করে লোহার লবণ তৈরি করে ক্ষয়সাধন করে।
মানুষের দেহের উপর পরলে তা মানুষের ত্বকের কোষের মধ্যে সমস্যা তৈরি করে। এই বৃষ্টির পানিতে যদি অতিরিক্ত মাত্রায় এসিড থাকে তাহলে তা ক্ষতের সৃষ্টি করতে পারে।
বন-জঙ্গল এর উপর এর তীব্র ক্ষতিকর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। কেননা এর ফলে বড় বড় বনের ভিতরের অসংখ্য গাছ-পালা ধংশ হয়ে যায়, আর এতে করে তা পৃথিবীর বনাঞ্চলের উপর বড় ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে থাকে।
পৃথিবীর অন্যতম আশ্চর্য তাজমহলের নিকটের অনেক কারখানা সরিয়ে ফেলা হয়। কারণ কারখানাগুলি থেকে নির্গত গ্যাসের কারণে এসিড বৃষ্টি হতো ওই এলাকায় যাতে করে তাজমহলের বর্ণ পরিবর্তন হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছিলো।
বিভিন্ন প্রাচীন নিদর্শন এর উপর এই ক্ষতিকর এসিড বৃষ্টির মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব দেখা যায়।
অ্যাসিড বৃষ্টি যেহেতু আমাদের পরিবেশের উপর ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে তাই এর প্রতিকার সকলকে সচেষ্ট হতে হবে। এসিড বৃষ্টি প্রতিকারে যে পদক্ষেপগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সেগুলোর মধ্যে- সালফারযুক্ত জ্বালানীর ব্যবহারের পরিমাণ যতটা সম্ভব কম করতে হবে। এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ব্যবহারের উপর জোর দিতে হবে। জালানি হিসেবে এল এন জি কিংবা প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা যেতে পারে।
ইটের ভাটার কালো ধোঁয়া এই এসিড বৃষ্টি তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে তাই ইটের ভাটার কালো ধোঁয়া পরিশোধনের ব্যবস্থা করতে হবে।
শিল্প কারখানার বর্জ্য গ্যাস নির্গত না করে তা রিসাইক্লিং বা পুনসঞ্চালন করা যেতে পারে। ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরি করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে শিল্পকারখানাগুলোকে সচেষ্ট হতে হবে।
আমাদের আধুকিন এই পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত ব্যাপক হারে দূষণ হচ্ছে আর তাই সে ব্যাপারে সচেষ্ট হতে হবে।
সাধারণ মানুষকে অবশ্যই এই এসিড বৃষ্টির ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে যাতে করে তারা এসিড বৃষ্টি যেন না হয় তার জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। অর্থাৎ গনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। পৃথিবীর প্রতিটি দেশের মধ্যে এই সচেতনতা পৌঁছে দিতে হবে বিশেষ করে শিল্পপ্রধান দেশ সমুহে এই এসিড বৃষ্টির ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সকলকে জানাতে হবে এবং কল-কারখানাগুলোকে এ ব্যাপারে সতর্ক করতে হবে যাতে করে কল-কারখানা থেকে ক্ষতিকর দূষিত বায়ু নির্গত হতে না পারে। প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এতে করে আমাদের পরিবেশ যেমন সুন্দর থাকে পাশাপাশি এসিড বৃষ্টির ভয়ংকর অবস্থা থেকে আমরা হয়ত পরিত্রাণ পাব।
আমাদের ব্যাপক পরিমাণে গাছ রোপণ করতে হবে যাতে করে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article অ্যাসিড বৃষ্টি, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.