বজ্রপাত বলতে আকাশের আলোর ঝলকানিকে বোঝায়। এই সময় উক্ত এলাকার বাতাসের প্রসারন এবং সংকোচনের ফলে আমরা বিকট শব্দ শুনতে পাই। এ ধরনের বৈদ্যুতিক আধানের নির্গমন দুটি মেঘের মধ্যে অথবা একটি মেঘ এবং ভূমির মধ্যেও হতে পারে।বজ্রপাতে ডিসি কারেন্ট তৈরী হয়।
এই নিবন্ধটিকে উইকিপিডিয়ার জন্য মানসম্পন্ন অবস্থায় আনতে এর বিষয়বস্তু পুনর্বিন্যস্ত করা প্রয়োজন। (আগস্ট ২০২৩) |
বজ্রপাতে যেহেতু প্রচুর পরিমানে বিদ্যুৎ ভূগর্ভে চলে যায় সেহেতু এর প্রভাবে ভূগর্ভে অনেক মূলবান পদার্থের খনি বা আকড় হওয়ার সম্ভবনাকে নসাৎ করে।
বায়ুমন্ডলের উপরের অংশে নিচের তুলনায় তাপমাত্রা কম থাকে। এ কারণে অনেক সময় দেখা যায় যে, নিচের দিক থেকে উপরের দিকে মেঘের প্রবাহ হয়। এ ধরনের মেঘকে থান্ডার ক্লাউড বলে। অন্যান্য মেঘের মত এ মেঘেও ছোট ছোট জলের কনা থাকে। আর উপরে উঠতে উঠতে জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ ভাবে বৃদ্ধি পেতে পেতে জলের পরিমাণ যখন ৫ মিঃমিঃ এর বেশি হয়, তখন জলের অণুগুলো আর পারস্পারিক বন্ধন ধরে রাখতে পাড়ে না। তখন এরা আলাদা হয়ে যায়। ফলে সেখানে বৈদ্যুতিক আধানের এর সৃষ্টি হয়। আর এ আধানের মান নিচের অংশের চেয়ে বেশি হয়। এরকম বিভব পার্থক্যের কারণেই ওপর হতে নিচের দিকে বৈদ্যুতিক আধানের নির্গমন হয়। এ সময় আমরা আলোর ঝলকানি বা বজ্রপাত দেখতে পাই।
এর মূল কারণ হল আলো এবং শব্দের বেগের পার্থক্য। আলোর বেগ শব্দের বেগের চেয়ে অনেক অনেক বেশি।
আমরা জানি আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে 300000 কিলোমিটার (প্রতি সেকেন্ডে 3 × 10 ^ 8 মিটার)। অন্যদিকে 0 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় শব্দের গতি প্রতি সেকেন্ডে 332 মিটার। গতির এই পার্থক্যের কারণে বজ্রপাতের শব্দ বিদ্যুৎ চমকানোর একটু পরে শোনা যায়।
প্রতি বছর বাংলাদেশে বজ্রপাতের কারণে অনেক লোক মারা যায়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০১০-২০১৯ দশ বছরে দেশে বজ্রপাতে মোট মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ৮১। তবে ২০১৮ সালে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটে, ৩৫৯ জন।
বজ্রপাতের হাত থেকে রক্ষা পেতে নিম্নলিখিত সতর্কতাগুলো বিশেষ ভাবে অনুকরণীয়-
১। বজ্রপাতের সময় সবচেয়ে নিরাপদ হল কোন দালান বা পাকা ভবনের নিচে আশ্রয় নেওয়া। ঘন ঘন বজ্রপাতের সময় কোনভাবেই ঘর থেকে বাইরে যাওয়া উচিত নয়।
২। বজ্রপাতের সময় কখনো বাইরে বা খোলা জায়গায় থাকা উচিত নয়। খোলা ও উঁচু জায়গায় বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই এমন অবস্থা দেখা দিলে খোলা বা উঁচু স্থান থেকে সরে নিরাপদ কোন স্থানে আশ্রয় নিতে হবে।
৩। বজ্রপাতের সময় গাছের নিচে আশ্রয় নেওয়া নিরাপদ নয়। নিরাপদ থাকতে হলে সবসময় বিদ্যুৎ লাইন ও উঁচু গাছপালা থেকে দূরে থাকা উচিত। এসব জায়গায় বজ্রপাতের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। বিশেষ করে বড় কোন খোলা জায়গায় গাছ থাকলে সেখানে বজ্রপাতের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে । তাই এসব স্থানে আশ্রয় নেওয়া একদমই উচিত নয়।
৪। গাড়ির ভেতরে থাকা অবস্থায় বজ্রঝড় শুরু হলে বাইরে বের হওয়া উচিত নয়। কারণ গাড়ির চাকায় ব্যাবহৃত টায়ার বিদ্যুৎ অপিরিবাহি অর্থাৎ বিদ্যুৎ পরিবহন করে না। এটি গাড়িকে ভূমি থেকে আলাদা করে রাখে। এতে করে বজ্রপাতের সময় গাড়ির মধ্য দিয়ে ভূমিতে আধান প্রবাহের কোন পথ তৈরি হয় না। তবে নিকটে যদি কোন কংক্রিটের ছাউনি থাকে তাহলে গাড়িতে না থেকে সেখানে আশ্রয় নেওয়াই ভাল। ঘন ঘন বজ্রপাতের সময় গাড়িতে না থাকাই ভাল। তবে টিন বা লোহার কোন ছাউনির নিচে আশ্রয় নেওয়া উচিত নয়। আর খেয়াল রাখতে হবে গাড়ি থেকে নেমে ঐ স্থানে যেতে যেন পাঁচ কদমের বেশি ফেলতে না হয়।
যদি গাড়িতেই থাকতে হয় তাহলে বেশ কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। পায়ে জুতা খুলে রাখলে দ্রুত জুতা পড়ে নিতে হবে। বেশি ভাল হয় পা সিটের উপর তুলে বসলে। খেয়াল রাখবেন কোন ভাবেই যেন শরীর গাড়ীর বডি বা ধাতব কোন কিছু স্পর্শ না করে থাকে। গাড়ির কাচে হাত দেবেন না।
৫। ঘরে থাকলে কখনোই জানালার আছে থাকবেন না। ভাল করে জানালা বন্ধ রাখুন এবং জানালা থেকে যথেষ্ট দূরে থাকুন।
৬। বজ্রপাতের সময় ঘরে থাকলে কোথাও কোন ধাতব বস্তু স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় সিঁড়ির রেলিং, বাড়ির ধাতব কল, ধাতব পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। টিভি কেবল, ল্যান্ড লাইন টেলিফোন ইত্যাদি স্পর্শ করবেন না। বজ্রপাতের সময় এগুলো স্পর্শ করা থেকে আহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৭। বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রপাতি সম্পর্কে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। এসব যন্ত্রপাতিকে বজ্রপাতের সময় বৈদ্যুতিক সংযোগ-বিহীন করে রাখা ভাল। ঝড় ও বজ্রপাতের শঙ্কা দেখা দিলে এসব যন্ত্রপাতির প্লাগ খুলে দিন। ফ্রিজ, টিভি, কম্পিউটার সহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়া অবস্থায় থাকলে বজ্রপাতে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং এ থেকে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি বন্ধ করা থাকলেও হাত দিয়ে ধরবেন না।
৮। বজ্রপাতের প্রচণ্ড শব্দ শ্রবণ শক্তি নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। বজ্রপাতের সময় কানে আঙুল দিয়ে চেপে ধরা ভাল একটি অভ্যাস যা কানকে সুরক্ষা দেবে।
৯। বজ্রপাতের সময় পানি থেকে সর্বদা দূরে থাকুন। পানি খুব ভালো বিদ্যুৎ পরিবাহী হওয়ায় বজ্রপাতের সময় পানিতে থাকা অত্যন্ত বিপজ্জনক। বজ্রপাতের সময় যদি ছোট কোন পুকুরে সাঁতার কাটেন বা জলাবদ্ধ স্থানে থাকেন তাহলে সেখান থেকে উঠে আসুন।
১০। উঁচু কোন স্থানে গিয়ে আশ্রয় নেবেন না। বজ্রপাতের সময় কোন খোলা জায়গা যেমন ধানক্ষেত বা বড় মাঠে থাকলে তাড়াতাড়ি নিচু হয়ে বসে পড়ুন। বাড়িতে কোন উঁচু স্থান যেমন বাড়ির ছা্দে থাকলে দ্রুত সেখান থেকে নেমে যান।
১১। যদি কোন খোলা জায়গায় থাকতে হয় তাহলে নিচু হয়ে বসে পড়ুন,তবে শুয়ে পড়বেন না। যদি কয়েকজন থাকেন তাহলে পরস্পর দূরে থাকুন এবং প্রত্যেকে ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরে সরে যান। কখনোই সবাই একসাথে জড়ো হয়ে থাকবেন না।
১২। অনেকসময় বজ্রপাতের পূর্বে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়।বিদ্যুতের প্রভাবে চুল খাড়া হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও ত্বক শিরশির করা বা বিদ্যুৎ অনুভূত করার মত ঘটনা ঘটতে পারে। আবার অনেকসময় আশপাশে থাকা কোন ধাতব পদার্থ কাঁপতে পারে, মনে রাখবেন, এমন লক্ষণ প্রকাশ পেলে বুঝে নিতে হবে সন্নিকটেই বজ্রপাত হবে। দ্রুত সতর্ক হোন এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিরাপদ স্থানে চলে যান।
১৩। গ্রামে কাঁচা ঘরে থাকার সময় সরাসরি মাটির উপর না থেকে বিছানার উপর উঠে বসে থাকুন। কোন কারণে যদি মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তাহলে রাবারের জুতা পড়ুন। চামড়ার জুতা পড়ে বা খালি পায়ে থাকলে বজ্রপাতের সম্ভাবনা থাকে। এ সময় বিদ্যুৎ অপরিবাহী রাবারের জুতা সবচেয়ে নিরাপদ।
১৪। বজ্রপাতের হাত থেকে রক্ষা পেতে বাড়িকে সুরক্ষিত করুন। এজন্য বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়ার সময় আর্থিং সংযুক্ত রড বাড়িতে স্থাপন করতে হবে। দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারের পরামর্শ নিয়ে সঠিকভাবে আর্থিং সংযোগ দিতে হবে। ভুলপদ্ধতি অবলম্বন বজ্রপাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে।
১৫। বজ্রপাতে কেউ আহত হলে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতো করেই চিকিৎসা করতে হবে। তবে সবচেয়ে ভাল হয় দ্রুত চিকিৎসক ডেকে চিকিৎসা করালে। প্রয়োজন হলে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। বজ্রাহত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃৎস্পন্দন আছে কি না তৎক্ষণাৎ পরিক্ষা করতে হবে এবং না থাকলে আনার জন্য প্রয়োজনীয় চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
বজ্রপাতের ফলে এক বিশাল পরিমাণে শক্তি উৎপন্ন হয়। মেঘ থেকে ভূমিতে হওয়া একটি সাধারণ বজ্রপাতে প্রায় ১ বিলিয়ন জুল শক্তি উৎপন্ন হয়।
একটি সাধারণ বজ্রপাতের ফ্ল্যাশ প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ভোল্ট এবং প্রায় ৩০,০০০ এম্পিয়ার এর বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। সাধারণ বাসাবাড়িতে যেখানে ২২০ ভোল্ট এর বিদ্যুৎ ব্যাবহার করা হয়ে থাকে।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article বজ্রপাত, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.