প্রিন্টার হলো একটি পেরিফেরাল যন্ত্র। যা মানুষের বোধগম্য গ্রাফ, ছবি,লেখা কাগজে (সাধারণত) ছাপায়। সবচেয়ে সাধারণ প্রিন্টার দুটি হলো সাদা-কালো এবং রঙিন প্রিন্টার । সাদা কালো লেজার প্রিন্টারগুলো দিয়ে কাগজপত্রাদি, দলিলাদি প্রিন্ট করা হয়। আর রঙিন ইন্ক জেট প্রিন্টার দিয়ে উচ্চ ও ছবির সমমানের ফলাফল পাওয়া যায়।
পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার প্রিন্টার ছিল ১৯'শতকের চার্লস ব্যবেজ কর্তৃক আবিষ্কৃত ডিফারেন্স ইঞ্জিনের জন্য যন্ত্রটি। এই যন্ত্রটিতে লোহার রডে অক্ষর ছাপা থাকতো আর কাগজগুলো রডের নিচে রাখা হত। এভাবে ছাপার কাজ করা হত। প্রথম বাণিজ্যিক প্রিন্টারগুলো যেমন ইলেক্ট্রিক টাইপরাইটার এবং টেলিটাইপ মেশিন এই পদ্ধতিতে কাজ করত। দ্রুতগতির প্রিন্ট নেয়ার চাহিদা থেকে নতুন ধরনের পদ্ধতি আবিষ্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল, বিশেষ করে কম্পিউটারের সাথে ব্যবহারের জন্য। ১৯৮০ দশকে ব্যপকভাবে ব্যবহৃত যন্ত্রগুলো যেমন ডেইজি হুইল পদ্ধতির মিল ছিল টাইপরাইটারের সাথে। লাইন প্রিন্টার একই ধরনের আউটপুট দিত কিন্তু আরেকটু দ্রুত গতিতে। ডট মেট্রিক্স পদ্ধতি যাতে লেখা এবং গ্রাফ বা ছবি একত্রে প্রিন্ট করা যেত, কিন্তু তা নিম্ন মানের হত। ব্লুপ্রিন্টের মত উচ্চ মানের গ্রাফিক্সের জন্য প্লটার ব্যবহার করা হত।
১৯৮৪ সালে কম খরচে প্রথম এইচপি লেজারজেট লেজার প্রিন্টার পরবর্তী বছর অ্যাপলের পোস্টস্ক্রিপ্ট লেজার রাইটারের মধ্যদিয়ে ডেস্কটপ প্রকাশনা মুদ্রণে বিপ্লব আসে।
১৯৯০ এবং ২০০০ দশকের সময়ে ইন্টারনেট ইমেইলের দ্রুত বিস্তার ও ব্যাপক ব্যবহার মুদ্রণের প্রয়োজনীয়তাকে ম্লান করে দেয়। বিভিন্ন ধরনের বহনযোগ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থার কারণে কাগজে মুদ্রিত লেখার প্রয়োজন কমার অন্য আরেকটি কারণ। এমনকি কাগজে মুদ্রিত লেখা যা অফলাইন (ইন্টারনেটে নয় এমন) পড়ার জন্য যেখানে ব্যবহার করা হত যেমন বিমানযাত্রা বা গণপরিবহনে সেখানেও এখন ইবুক রিডার বা ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়। আজকাল প্রিন্টারগুলো ব্যবহার করা হয় বিশেষ উদ্দেশ্যে যেমন ছবি বা শিল্পকর্ম প্রিন্ট করতে। আগের মত আবশ্যকীয় পেরিফেরাল হিসেবে এখন প্রিন্টার আর ব্যবহার করা হয় না।
২০১০ সালের থেকে ৩য় মাত্রার মুদ্রণে ব্যপক আগ্রহ দেখা গেছে যাতে বাস্তবিক বস্তুর প্রতিরূপ মুদ্রণ সম্ভব যেমনটা আগের লেজার প্রিন্টারে একটি চালান প্রিন্ট করা হত।
ব্যক্তিগত প্রিন্টার বানানো হয়েছে একক ব্যক্তির ব্যবহারের উদ্দেশ্যে যা হয়ত শুধুমাত্র একটি কম্পিউটারেই ব্যবহার করা হবে। এগুলোতে একটি কাগজ মুদ্রণ করতে খুব কম ঝামেলা করতে হয়। প্রিন্টারটি বসাতে তেমন কোন অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় না। এগুলোর নকশা করা হয়েছে কম পরিমাণ মুদ্রণের এবং স্বল্প ক্ষমতার মুদ্রণ কাজের জন্য। তাই এগুলো সাধারণত নিম্ন গতি সম্পন্ন হয় যেমন ৬ থেকে প্রায় ২৫ পাতা প্রতি মিনিটে এবং প্রতি পাতা অনুসারে খরচ বেশি পড়ে। কিছু প্রিন্টার রয়েছে যেগুলো মেমোরি কার্ড বা ডিজিটাল ক্যামেরা বা স্ক্যানার থেকে প্রিন্ট করতে পারে।
নেটওয়ার্ক বা বন্টিত প্রিন্টারের নকশা করা হয়েছে উচ্চ পরিমাণ ও দ্রুত গতির জন্য। এগুলো সাধারণত একই নেটওয়ার্কে থাকা অনেকেই ব্যবহার করে এবং প্রিন্টের গতি ৪৫ থেকে ১০০ পাতা প্রতি মিনিটে। জেরক্স ৯৭০০ প্রতি মিনিটে ১২০ পাতা পর্যন্ত প্রিন্ট করতে পারে।
ভার্চুয়াল প্রিন্টার হল এমন এক প্রিন্টার যা বাস্তবিক প্রিন্টারের মতই আচরণ করে কিন্তু আসলে একটি সফটওয়্যার। একটি থ্রীডি প্রিন্টার হল এমন এক যন্ত্র যা তৃতীয় মাত্রার বস্তু তৈরি করতে পারে থ্রিডি মডেল বা অন্যান্য উৎস থেকে।
খরচের উপর প্রিন্টার প্রযুক্তির বাছাই করার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। এছাড়া কার্য সম্পাদনের খরচ, দ্রুততা, মান এবং কাগজের ব্যবহার ও শব্দের প্রভাবও লক্ষ্য করার মত। কিছু কিছু প্রিন্টার প্রযুক্তি বিশেষ ধরনের মাধ্যমের সাথে কাজ করে না যেমন স্বচ্চ বা কার্বণ কাগজ। পরিবর্তনে বাধা প্রিন্টার প্রযুক্তির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা প্রায়শই উপেক্ষা করা হয়। যেমন তরল কালির প্রিন্টার প্রযুক্তিতে প্রিন্ট করলে কালি কাগজের উপরিভাগে প্রবেশ করে যা পরিবর্তন করা কষ্টকর। কিন্তু টোনার বা সলিড কালিতে এই সমস্যা হয় না।
আধুনিক প্রিন্টারগুলোতে নিম্নোক্ত প্রযুক্তি দেখতে পাওয়া যায়:
একটি লেজার প্রিন্টার দ্রুত উচ্চ মান সম্পন্ন লেখা এবং ছবি ছাপতে পারে। ডিজিটাল ফটোকপিয়ার এবং বহু কার্যের প্রিন্টারগুলোতে জেরোগ্রাফিক প্রিন্টিং প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়। যা আগের এনালগ ফটোকপিয়ার থেকে ভিন্ন কারণ সেগুলোতে ছবি উৎপাদিত হত সরাসরি লেজার বিমের ফটোরিসেপ্টর স্ক্যানের মাধ্যমে।
ক্রেতাদের ব্যবহৃত সবচেয়ে সাধারণ ধরনের প্রিন্টার হল ইঙ্কজেট প্রিন্টার যা তরল কালির প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
ইঙ্কজেট প্রিন্টার একটি কম দামের প্রিন্টার । এই প্রিন্টারের ছাপার খরচ তুলনামূলক বেশি।
এই প্রিন্টারগুলো দিয়ে উচ্চ মানের রঙের কাজ বেশি করা হয়। এগুলো ভাল মানের লেখার জন্য উপযোগি নয়। এতে তাপ দিয়ে রঞ্জককে প্লাস্টিক কার্ড, কাগজ বা ক্যানভাসে ছাপা হয়।
এই প্রিন্টারগুলো তাপকে কাজে লাগিয়ে লেখা ছাপায়। বিশেষ তাপ সংবেদনশীল কাগজে তাপ দিয়ে লেখা ছাপানো হয় এসব তাপীয় প্রিন্টারগুলোতে। একরঙা তাপীয় প্রিন্টারগুলো ব্যবহার করা হয় ক্যাশ রেজিষ্টার, এটিএম, গ্যাসোলিন দোকানে এবং কিছু পুরনো কমদামি ফ্যাক্স মেশিনে। এগুলো সবসময় সাদা কালো হবে এমন নয়, বিশেষ কাগজ এবং তাপের ভিন্নতার মাধ্যমে রং পাওয়া সম্ভব। একটি উদাহরণ হল জিঙ্ক (শূন্য কালি প্রযুক্তি) প্রযুক্তি।
নিচের প্রযুক্তিগুলো অপ্রচলিত বা সীমিতভাবে ব্যবহৃত হয় বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে। এগুলো একসময় হয়ত ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল।
এই প্রিন্টার প্রিন্ট হেড ব্যবহার করে যা কালির রিবনের উপর চাপ দেয় এতে করে রিবনটি কাগজের উপর পড়ে আর লেখা ছাপা হয় (অনেকটা টাইপরাইটারের মত)। অথবা কাগজের পেছনে চাপ দেয় এবং কাগজটি কালির রিবনে গিয়ে লাগে এবং লেখা ছাপা হয়। (আইবিএম ১৪০৩)।
আইবিএমের প্রস্তুতকৃত কম্পিউটার ছাড়া টেলিপ্রিন্টারগুলো খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে কারণ এগুলো সহজে কম্পিউটারের সাথে লাগানো যেত। কিছু মডেলে "টাইপবক্স" ছিল যা এক্স এবং ওয়াই অক্ষে লাগানো থাকত তাতে হাতুড়ির দ্বারা নির্বাচিত কিছু অক্ষরের আকার থাকত।
ডেইজি হুইলগুলো কাজ করে টাইপরাইটারের মত। একটি হাতুড়ির মত যন্ত্র একটি চাকার দলে আঘাত করত। চাকার দলে অক্ষরের সমস্টি থাকত। এগুলোকে অক্ষর মানের প্রিন্টার বলে কারণ এগুলো খুবই সুন্দর এবং পরিষ্কার লেখা ছাপায়। দ্রুতগতির প্রিন্টারটি প্রতি সেকেন্ডে ৩০ অক্ষর প্রিন্ট করতে পারে।
ডট মেট্রিক্স প্রিন্টার আগের দিনের প্রিন্টার। এটি একধরনের ইমপেক্ট প্রিন্টার যা ছোট পিন ব্যবহার করে কালিকে কাগজে ছাপায়। এই প্রিন্টারের সুবিধা হল এতে অক্ষরের সাথে সাথে গ্রাফ বা ছবিও ছাপানো যায়। কিন্তু লেখাগুলোর মান ভাল হয় না।এই প্রিন্টারের ছাপার গতি অনেক কম ।
লাইন প্রিন্টার একবারে একলাইন করে প্রিন্ট করে। এতে চার ধরনের নকশা দেখা যায়:
২০০৫ পর্যন্ত পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় লেজার ও ইঙ্কজেট প্রিন্টার কোম্পানি ছিল এইচপি। যার এখন ৪৬% বিক্রয় আছে ইঙ্কজেটে বাকি ৫৫% বিক্রয় আছে লেজার প্রিন্টারে।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article প্রিন্টার, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.