পিঁপড়া: কীটপতঙ্গের পরিবার

পিঁপড়া বা পিপীলিকা হল ফর্মিসিডি (Formicidae) গোত্রের অন্তর্গত সামাজিক কীট বা পোকা। পিঁপড়া এদের ঘনিষ্ঠ প্রজাতি বোলতা ও মৌমাছির মত একই বর্গ হাইমেনপ্টেরার (Hymenoptera) অন্তর্গত। এরা মধ্য-ক্রেটাশাস পর্যায়ে ১১ থেকে ১৩ কোটি বছর পূর্বে বোলতা জাতীয় প্রাণী হতে বিবর্তিত হয় এবং সপুষ্পক উদ্ভিদের উদ্ভবের পর বহুমুখী বিকাশ লাভ করে। এখন পর্যন্ত অনুমান করা ২২,০০০-এরও বেশি পিঁপড়া প্রজাতির মধ্যে ১৫,৭০০ টিরও বেশি প্রজাতি এবং উপ-প্রজাতি শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে। কনুই-সদৃশ শুঙ্গ এবং গ্রন্থির মত যে কাঠামো দিয়ে তার সরু কোমর গঠিত হয় তার মাধ্যমে পিঁপড়াকে সহজেই শনাক্ত করা যায়।

পিঁপড়া
সময়গত পরিসীমা: অন্ত্য ক্রিটেশিয়াস–হলোসিন
কা
পা
ক্রি
প্যা
পিঁপড়া: শ্রেণিবিন্যাস ও বিবর্তন, বন্টন ও অভিযোজন, তথ্যসূত্র
সেনা পিঁপড়াদের সেতু নির্মাণ
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: আর্থ্রোপোডা
শ্রেণী: পতঙ্গ
বর্গ: Hymenoptera
উপবর্গ: Apocrita
মহাপরিবার: Vespoidea
পরিবার: ফর্মিসিডি
Latreille, ১৮০৯
Subfamilies
  • Aenictogitoninae
  • Agroecomyrmecinae
  • Amblyoponinae (incl. "Apomyrmiae")
  • Aneuretinae
  • Cerapachyinae
  • Dolichoderinae
  • Ecitoninae (incl. "Dorylinae" and "Aenictinae")
  • Ectatomminae
  • Formiciinae
  • Formicinae
  • Heteroponerinae
  • Leptanillinae
  • Leptanilloidinae
  • Martialinae
  • Myrmeciinae (incl. "Nothomyrmeciinae")
  • Myrmicinae
  • Paraponerinae
  • Ponerinae
  • Proceratiinae
  • Pseudomyrmecinae
ক্ল্যাডোগ্রাম

Martialinae

Leptanillinae

Amblyoponinae

Paraponerinae

Agroecomyrmecinae

Ponerinae

Proceratiinae

Ecitoninae

Aenictinae

Dorylini

Aenictogitoninae

Cerapachyinae*

Leptanilloidinae

Dolichoderinae

Aneuretinae

Pseudomyrmecinae

Myrmeciinae

Ectatomminae

Heteroponerinae

Myrmicinae

Formicinae

A phylogeny of the extant ant subfamilies.
*Cerapachyinae is paraphyletic

একটি কর্মী পিঁপড়ার রেখাচিত্র
একটি কর্মী পিঁপড়ার রেখাচিত্র

পিঁপড়া উপনিবেশ তৈরি করে বাস করে যা প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্টি হওয়া কয়েক ডজন শিকারী পিঁপড়া থেকে শুরু করে বিশাল এলাকাজুড়ে বাস করা লক্ষ লক্ষ পিঁপড়ার সমন্বয়ে গঠিত হতে পারে। বড় দলগুলি প্রধানত অনুর্বর, পাখাবিহীন নারী পিঁপড়াদের সমন্বয়ে তৈরি হয় যারা কর্মী, সৈন্য এবং অন্যান্য বিশেষায়িত বাহিনীতে বিভক্ত থাকে। প্রায় সব পিঁপড়ার উপনিবেশেই কিছু প্রজননক্ষম পুরুষ পিঁপড়া (ড্রোন) এবং এক বা একাধিক উর্বর নারী পিঁপড়া থাকে, যাদের রাণী পিঁপড়া বলা হয়।

পিঁপড়া: শ্রেণিবিন্যাস ও বিবর্তন, বন্টন ও অভিযোজন, তথ্যসূত্র
শ্রম বিভাগ

পিঁপড়াদের এই উপনিবেশকে কখনো কখনো সুপার-অর্গানিজম বা দলগতস্বত্তাও বলা হয়, কারণ এরা সবাই মিলে কেবল একটি প্রাণীর মত আচরণ করে এবং অস্তিত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ ভাবে সংগ্রাম করে।

পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র পিঁপড়ার দেখা মেলে, একমাত্র এন্টার্কটিকা ও এ ধরনের কিছু এলাকা ছাড়া। পিঁপড়া প্রায় যেকোনো বাস্তুসংস্থানে বিকাশ লাভ করতে পারে এবং এরা ভূমিগত বায়োমাসের প্রায় ১৫-২৫% গঠন করে। তাদের এই সাফল্যের কারণ হল তাদের সামাজিক সংগঠন, দ্রুত বাসস্থান পরিবর্তনের ক্ষমতা, রসদ জোগাড় করার দক্ষতা এবং নিজেদের রক্ষা করার পারদর্শিতা। অন্য প্রাণীদের সাথে তাদের দীর্ঘ দিনের সহবিবর্তনের ফলে অন্য প্রানীর আচরণ নকল/কপি করা, পরাশ্রয়ী, পরজীবী এবং মিথোজোবী সম্পর্কের পত্তন ঘটিয়েছে।

পিপীলিকা সমাজে শ্রমবিভাগ, ব্যক্তিগত পর্যায়ে যোগাযোগ এবং জটিল সমস্যা সমাধানের দক্ষতা রয়েছে। মানুষের সাথে এই সাযুজ্যগুলো তাদেরকে গবেষণার জন্য খুব আকর্ষণীয় প্রাণী করে তুলেছে। অনেক মানব সমাজে আবার পিঁপড়াকে খাদ্য, ঔষধ এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়। পিঁপড়ার কিছু প্রজাতি জৈব কীটনাশক হিসেবেও গুরত্বপূর্ণ। তবে পিঁপড়া মানুষের জন্যে মাঝে মাঝে ক্ষতিরও কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। পিঁপড়া ফসলের ক্ষতি করে এবং দালান-কোঠার ধ্বংস সাধন করে। এর কিছু প্রজাতি যেমন Red imported fire ant কে কোথাও কোথাও আগ্রাসী প্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ এরা ঘটনাচক্রে নতুন কোন পরিবেশে গিয়ে পড়লেও খুব সহজে সেখানে নিজেদের সুপ্রতিষ্ঠিত করে নিতে পারে।

শ্রেণিবিন্যাস ও বিবর্তন

Aculeata

Chrysidoidea

 
 

Vespidae

Rhopalosomatidae

 
 

Pompilidae

Tiphiidae

 

Scolioidea

 

Apoidea

Formicidae

Phylogenetic position of the ফর্মিসিডি

ফর্মিসিডি পরিবারটি হাইমেনপ্টেরা বর্গের অন্তর্ভুক্ত যে বর্গের মধ্যে পিঁপড়া ছাড়াও রয়েছে মৌমাছি, বোলতা এবং সফ্লাই। ভেসপয়েড বোলতাদের একটি বংশধারা থেকে পিঁপড়াদের বিবর্তন ঘটেছে। জীবাশ্মের রেকর্ড থেকে জানা গেছে ১৫ কোটি বছর পূর্বে অর্থাৎ জুরাসিক যুগের শেষদিকেও তাদের অস্তিত্ব ছিল। ১০ কোটি বছর পূর্বে সপুষ্পক উদ্ভিদের বিকাশের পর তারা আরও বৈচিত্র্যময় হয়ে ওঠে এবং আনুমানিক ৬ কোটি বছর পূর্বে বাস্তুতান্ত্রিক প্রতিপত্তি অর্জন করে। ১৯৬৬ সালে ই ও উইলসন ও তার সহকর্মীরা অ্যাম্বারে ফাঁদে আটকে পড়া ক্রিটেশাস যুগের একটি পিঁপড়ার জীবাশ্ম আবিষ্কার করেন যার প্রজাতির নাম Sphecomyrma freyi. ৮ কোটি বছরের পুরনো এই জীবাশ্মটিতে পিঁপড়া ও বোলতা উভয়ের বৈশিষ্ট্যই পাওয়া যায়। স্ফেকোমারমা সম্ভবত ভূপৃষ্ঠে বসবাসকারী সংগ্রাহক ছিল, অনেকে অবশ্য মনে করেন Leptanillinae এবং Martialinae শ্রেণীর প্রাণীদের মত প্রাচীন পিঁপড়ারা মাটির নিচে শিকার করে খেতো।

ক্রেটাশাস যুগে, প্রাচীন কিছু পিপড়ার কিছু প্রজাতি Laurasian সুপারকন্টিনেন্টে (উত্তর গোলার্ধ) ছড়িয়ে পড়ে। অন্য পতঙ্গের তুলনায় তাদের সংখ্যা ছিল অপ্রতুল, পুরো প্রতঙ্গের সংখ্যার তুলনায় ধরলে প্রায় ১% মত। Paleogene যুগের শুরুতে পিঁপড়েরা দ্রুত বিবর্তন ও উপজাতীকরনের কারনে প্রভাবশালী হতে থাকে। ওলিগোসিন এবং মিয়োসিন যুগে এসে তাদের সংখ্যা ২০-৪০% দাড়ায়। ইয়োসিন সময়ে পাওয়া প্রজাতিগুলোর ১০টির মধ্যে একটি প্রজাতি আজও দেখা যায়। যে সমস্ত প্রজাতি বেচে আছে তাদের ৫৬%ই বাল্টিক এমবার (ওলিগোসিনের প্রথম দিক) ফসিলে পাওয়া গিয়েছে এবং ডমিনিকান এমবারে (মিওসিনের প্রথমদিক) ৯২% ফসিল পাওয়া যায়।

Termites উইপোকাও কলোনিতে বাস করে কখনো কখনো এদের সাদা পিঁপড়া বলা হয় কিন্তু উইপোকারা পিঁপড়ে নয়। তারা ইসোপ্টেরার উপ-গোত্র এবং তেলাপোকাকে নিয়ে তারা অন্য একটি গোত্র ব্লাটোডি গঠন করে। পিঁপড়ের মত উইপোকারাও সামাজিক, অনুর্বর কর্মী নিয়ে গঠিত কিনতু তাদের প্রজনণের জিনগত বৈশিষ্ট্য ভিন্নl উইপোকা এবং পিঁপড়ের যে সামাজিক গঠন তার মিলকে কোভারজেন্ট ইভোলুসন বা সমগোত্রীয় কিন্তু স্বাধীন (একটি অপরটির সাথে কোন সম্পর্ক নেই) বলে। ভেলভেট পিঁপড়া দেখতে বড় পিঁপড়ার মত কিন্তু তারা আসলে পাখাবিহীন স্ত্রী বোলতা।

বন্টন ও অভিযোজন

অঞ্চল প্রজাতির সংখ্যা
নিওট্রপিকস 2,162
নিআর্কটিক 580
ইউরোপ 180
আফ্রিকা 2,500
‌এশিয়া 2,080
মেলানেশিয়া 275
অস্ট্রেলিয়া 985
পলিনেশিয়া 42

পিপড়ারা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে আছে। এদের সব মহাদেশেই দেখা যায় শুধুমাত্র এন্টার্কটিক ও কিছু দ্বীপ ছাড়া যেমন গ্রীনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, পলিনেশিয়ার কিছু অংশ এবং হাওয়াইয়ান দ্বীপ। পিঁপড়ারা স্থানভেদে বিভিন্ন বাস্তুসংস্থান গড়ে তোলে এবং বিভিন্ন রকম খাদ্যের উপর নির্ভর করে যা তারা সরাসরি অথবা অন্যান্য শিকারী প্রানী, তৃণভোজী প্রানী বা শিকার করা প্রানীর অবশিষ্টাংশ খেয়ে থাকে এমন প্রানীদের থেকে সংগ্রহ করে। বেশিরভাগ পিঁপড়ার প্রজাতীই হল সর্বভুক কিন্তু কিছু প্রজাতী আছে যারা শুধু বিশেষ খাদ্যাভাসে নির্ভরশীল। স্থানভেদে এদের সংখ্যার তারতম্য দেখা যায়। এদের যেমন কঠিন পরিবেশে পাওয়া যায় তেমনি আর্দ্র গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে প্রচুর পরিমানে দেখতে পাওয়া যায়। বায়োম্যাস (কোন নির্দিষ্ট স্থানে সমগ্র জীবের সমষ্টি ভিত্তিক গনণা) পদ্ধতীতে ২০০৯ সালে কীটতত্ত্ববিদ ই. ও. উইলসন ধারণা করেন পিঁপড়ার মোট সংখ্যা ১ থেকে ১০ কোয়াড্রিলিয়ন এবং এই গনণা অনুসারে ধারণা করা যায় যে পিঁপড়ার বায়োম্যাস ও মানব জাতির বায়োম্যাস প্রায় কাছাকাছি।

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Tags:

পিঁপড়া শ্রেণিবিন্যাস ও বিবর্তনপিঁপড়া বন্টন ও অভিযোজনপিঁপড়া তথ্যসূত্রপিঁপড়া বহিঃসংযোগপিঁপড়া

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্রসমূহের তালিকাবাংলা লিপিআন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসওপেকআমাশয়তক্ষকহজ্জভারতীয় গণ্ডারবিরাট কোহলিনওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানীরশিদ চৌধুরীআবহাওয়াআরবি বর্ণমালাইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাধর্মজিএসটি ভর্তি পরীক্ষাগোত্র (হিন্দুধর্ম)গাঁজা (মাদক)মৌলিক পদার্থের তালিকাসংযুক্ত আরব আমিরাতপুলিশশিবনারায়ণ দাসবাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীভারতের জাতীয় পতাকাহিন্দুধর্মের ইতিহাসপানিচক্রনীল বিদ্রোহআর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলজোট-নিরপেক্ষ আন্দোলনতাপ সঞ্চালন২০২২–২৩ নিউজিল্যান্ড পুরুষ ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফর (ডিসেম্বর ২০২২)সজনেভাষাপাখিইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়চেঙ্গিজ খানসোনাজাতিসংঘজাপানকৃত্তিবাস ওঝাবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সেক্টরসমূহবাংলাদেশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিস্বামী বিবেকানন্দবাংলাদেশের ইউনিয়নহিসাববিজ্ঞানমহাভারতপেপসিপেশাআওরঙ্গজেবরাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)যতিচিহ্নইরাকবাংলা স্বরবর্ণমঙ্গোল সাম্রাজ্যকিশোরগঞ্জ জেলাসিলেট বিভাগবাংলাদেশ নৌবাহিনীতাপপ্রবাহজ্ঞানমিঠুন চক্রবর্তীলোকসভাআলোক বর্ষসাদ্দাম হুসাইনপথের পাঁচালী (চলচ্চিত্র)ঐশ্বর্যা রাইচণ্ডীদাসঅন্নদামঙ্গলজলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবনিপুণ আক্তারআহল-ই-হাদীসবাংলাদেশের সর্বাধিক ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রসমূহের তালিকাকবিতাশ্রাবস্তী দত্ত তিন্নিঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানরাধাবিজয় দিবস (বাংলাদেশ)🡆 More