পঠনবিকার একটি দীর্ঘস্থায়ী স্নায়বিক বিকার যাতে আক্রান্ত ব্যক্তি স্বাভাবিক বুদ্ধিমত্তার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও কোনও কিছু পড়তে বা বানান করতে অক্ষম হয় বা এসব কাজ করতে বড় ধরনের ঝামেলার শিকার হয়। একে ইংরেজি পরিভাষায় ডিসলেক্সিয়া (Dyslexia) বা রিডিং ডিজর্ডার (Reading disorder) বলে। পঠনবিকারের মাত্রা একেকজন আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য একেক রকম হয় এতে আক্রান্ত ব্যক্তি চিত্রলৈখিক প্রতীক, বিশেষ ভাষিক প্রতীক যেমন বর্ণ, অক্ষর, ইত্যাদি শনাক্ত করতে ও মস্তিষ্কে প্রক্রিয়াজাত করতে বাধাগ্রস্ত হয়। অত্যন্ত নিম্নমানের পঠন দক্ষতা, শব্দের বানান করতে সমস্যা, স্বাভাবিক দ্রুতিতে পঠনে অক্ষমতা, লেখার সময় শব্দ ও বর্ণের ক্রম উলটে ফেলা, অপাঠ্য হাতের লেখা, মনে মনে শব্দ উচ্চারণ করায় অপারগতা, উচ্চস্বরে পড়ার সময় উচ্চারণে সমস্যা, পঠিত বিষয়বস্তুর অর্থ না বোঝা, ইত্যাদি এই বিকারের কিছু লক্ষণ, যেগুলি সাধারণত প্রাথমিক শৈশবকালীন বছরগুলিতে বিদ্যালয়ে প্রকাশ পায়।
পঠনবিকার | |
---|---|
প্রতিশব্দ | শব্দান্ধতা |
গ্রিক ভাষার পঠনবিকারগ্রস্ত ব্যক্তির হাতের লেখা | |
বিশেষত্ব | স্নায়ুরোগবিজ্ঞান, শিশুরোগবিজ্ঞান |
লক্ষণ | পড়তে সমস্যা |
রোগের সূত্রপাত | বিদ্যালয়গামী বয়সে |
প্রকারভেদ | পৃষ্ঠদেশীয় পঠনবিকার |
কারণ | বংশাণুগত ও পরিবেশত উপাদানের আন্তঃক্রিয়া |
ঝুঁকির কারণ | পারিবারিক ইতিহাস, মনোযোগের অভাবজনিত অতিসক্রিয়তা বিকার |
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি | স্মৃতি, দৃষ্টিশক্তি, বানান ও পঠনদক্ষতার উপরে ধারাবাহিক কিছু পরীক্ষা |
পার্থক্যমূলক রোগনির্ণয় | শ্রুতি বা দৃষ্টি সমস্যা, অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ |
চিকিৎসা | শিক্ষণ পদ্ধতির অভিযোজন |
সংঘটনের হার | ৩–৭% |
পঠনবিকার অনৈচ্ছিক, এই বিকারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শেখার স্বাভাবিক আগ্রহ থাকে। পঠনবিকারগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে স্বাভাবিকের চেয়ে উচ্চহারে মনোযোগের অভাবজনিত অতিসক্রিয়তা বিকার (Attention deficit hyperactivity disorder, সংক্ষেপে ADHD), বিকাশমূলক ভাষাবিকার (Developmental language disorder), ও সংখ্যা গণনায় সমস্যা (Dyscalculia) পরিলক্ষিত হয়।
বংশাণুগত ও পরিবেশগত উপাদানসমূহের মধ্যকার আন্তঃক্রিয়ার কারণে পঠনবিকার ঘটে বলে বিশ্বাস করা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই বিকারটি বংশানুক্রমে উত্তরাধিকার সূত্রে অর্জিত হতে পারে। এর বিপরীতে যদি কোনও চোটজনিত মস্তিষ্ক জখম (traumatic brain injury), সন্ন্যাসরোগ (stroke), বা চিত্তভ্রংশের (dementia) কারণে পঠনবিকার ঘটে, তাহলে সেটিকে "অর্জিত পঠনবিকার" (Acquired dyslexia) বলে। পঠনবিকারগ্রস্ত ব্যক্তিদের মস্তিষ্কের পঠন-সংক্রান্ত ও ভাষিক প্রক্রিয়াজাতকরণ সংক্রান্ত স্নায়ুপথগুলিতে অস্বাভাবিকতার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। স্মৃতি, দৃষ্টিশক্তি, বানান ও পঠনদক্ষতার উপরে ধারাবাহিক কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে পঠনবিকার নির্ণয় করা হয়। শ্রুতি সমস্যা বা দৃষ্টি সমস্যা, অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ বা সুযোগের অভাবের কারণে সৃষ্ট পঠনে অসুবিধা থেকে পঠনবিকার পৃথক একটি বৈকল্য।
আগেভাগে শনাক্ত হলে এবং পঠন শিক্ষণে বিশেষায়িত দৃষ্টিভঙ্গির সহায়তা নিলে বেশিরভাগ পঠনবিকারগ্রস্ত শিশুকেই পঠন শেখানো সম্ভব। এজন্য পঠনবিকারগ্রস্ত ব্যক্তিটির চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষণ পদ্ধতিতে অভিযোজন ঘটাতে হয় (খাপ খাইয়ে নিতে হয়)। যদিও এতে পঠনবিকারের মূলগত কারণের সমাধা হয় না, তা সত্ত্বেও এর ফলে এ-সংক্রান্ত উপসর্গগুলির মাত্রা বা ক্ষতি হ্রাস পেতে পারে। দৃষ্টিকে লক্ষ্য করে প্রদত্ত চিকিৎসাগুলি কার্যকর হয় না। পঠনবিকার অতিসাধারণ একটি শিখন প্রতিবন্ধিতা (learning disability) যা বিশ্বের সর্বত্র বিরাজমান। যেকোনও জনসমষ্টির ৩-৭% ব্যক্তি এর শিকার হয়ে থাকে। তবে কোনও জনসম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ ২০% (প্রতি ৫ জনে ১ জন) কোনও না কোনও মাত্রায় পঠনবিকারজনিত লক্ষণ-উপসর্গ প্রকাশ করতে পারে। পুরুষদের মধ্যে পঠনবিকার বেশী ধরা পড়লেও বিশেষজ্ঞদের মতে এটি পুরুষ ও নারী উভয়কেই সমভাবে আক্রান্ত করে। কারও কারও মতে পঠনবিকারকে বৈকল্য বা বিকার হিসেবে গণ্য না করে একটি ভিন্ন উপায়ে শিখন হিসেবে গণ্য করাই শ্রেয়, যার সুবিধা-অসুবিধা দুই=ই বিদ্যমান।
যখন কোনও অতীতে স্বাভাবিকভাবে পঠনক্ষম ব্যক্তি পঠনক্ষমতা হারায়, তখন তাকে "শব্দান্ধতা" বা "শব্দবোধহীনতা" (ইংরেজি: Alexia অ্যালেক্সিয়া) বলে।
শ্রেণীবিন্যাস | |
---|---|
বহিঃস্থ তথ্যসংস্থান |
|
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article পঠনবিকার, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.