সুশি (জাপানী: すし, 寿司, 鮨) হচ্ছে এক প্রকার জাপানী খাবার যা ভিনেগার দেওয়া ভাত (鮨飯 সুশি-মেশি), সামুদ্রিক মাছ 'নেতা' (ネタ), সবজি ও নানারকমের ফল দিয়ে তৈরি করা হয়। এটি জাপানে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়।
সুশি সাধারণত বাদামি অথবা সাদা ভাত দিয়ে তৈরি হয়। এতে একধরনের সামুদ্রিক মাছ দেওয়া হয় যা সাধারনত কাঁচা অবস্থায় থাকে; কিন্তু কখনও কখনও সুশিতে ভাজা মাছও দেওয়া হয়ে থাকে।
সুশি পরিবেশন করা হয় সাধারনত আদা, মুলা, সয়া সস, ইত্যাদি দিয়ে।
বর্তমান সুশি খাবারটির সম্ভাব্য উৎস নারে-জুশি( 馴れ寿司, 熟寿司) নামক একধরনের খাবার, যা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় তৈরি হয়। এতে নুনে জারিত মাছ এমনকী কয়েক মাস পর্যন্ত ফারমেন্টেড ভাতের মধ্যে সংরক্ষিত করা হত। ভাতের ল্যাক্টো-ফারমেন্টেশন মাছকে নষ্ট হওয়ার থেকে রক্ষা করত। কিন্তু মাছটি খাবার আগে ঐ ভাত ফেলে দিতে হত। সম্ভবত মেকং নদী্র তীর অঞ্চল এই রান্নার উৎপত্তিস্থল। এইধরনের প্রাচীন সুশি একটাসময় জাপানীদের কাছে প্রোটিনের এক গুরুত্বপূর্ণ উৎসে পরিণত হয়। সুশি শব্দটির উৎস প্রাচীন একটি জাপানী শব্দ, যার অর্থ 'টক'। এইধরনের মাছের স্বাদ খানিকটা টক টক হয় বলেই সম্ভবত এই বিশেষ রান্নার নাম 'সুশি'। তবে বর্তমান 'সুশির' সাথে এই 'নারে-জুশি'র মিল যৎসামান্যই। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে 'নারে-জুশি' রান্নাটি এখনও জাপানে চালু আছে।
এখনকার সুশির এক উল্লেখযোগ্য উপাদান ভিনেগার। যতদূর জানা যায়, জাপানের মুরোমাচি আমলে (১৩৩৬ -১৫৭৩ খ্রিঃ) নারে-জুশি'র সঙ্গে ভিনেগার যোগ করা শুরু হয়। এর ফলে একদিকে যেমন খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি পায়, অন্যদিকে খাদ্যের সংরক্ষণও আরও দীর্ঘস্থায়ী হয়। ভাতের সাথে ভিনেগার মেশানো শুরু হতে টক স্বাদ আনার উদ্দেশ্যে ভাতের ফারমেন্টেশন ঘটানোর প্রয়োজনিয়তা কমে যেতে ধীরে ধীরে এর পরে সুশি রান্নার পদ্ধতিতে ফারমেন্টেশন ঘটানোর প্রক্রিয়াটি পরিত্যক্ত হয়। এরপরে জাপানের ওসাকা অঞ্চলে ধীরে ধীরে সুশি বানানোর পদ্ধতিতে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য যোগ হয় যার ফলে তা আধুনিক সুশির অনেকটাই কাছাকাছি এসে পড়ে। এর মধ্যে অন্যতম হল সামুদ্রিক খাদ্য ও ভাতের মিশ্রণকে একটি কাঠের, মূলত বাঁশের খাপে চাপ দিয়ে ভরে একটা রোলের মতো আকৃতিপ্রদান করা। এইধরনের সুশি "ওশি-জুশি' নামে পরিচিত।
আজকের দিনে 'সুশি' প্রস্তুতির ক্ষেত্রে ভিনেগারে ভেজানো ভাতের উপরে যে টাটকা মাছ দেওয়ার চল, তা বাস্তবে এডো যুগের (১৬০৩ - ১৮৬৮ খ্রিঃ) আগে আরম্ভ হয়নি। বর্তমানে যে পদ্ধতিতে নিগিরিজুশি প্রস্তুত করা হয়, তা ১৮২০ - ৩০'এর দশকের তৎকালীন এডো (বর্তমান টোকিও) শহরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কথিত আছে, সে' সময়ে শহরের প্রখ্যাত শেফ হানায়া ইয়োহেই রিওগোকু অঞ্চলে অবস্থিত তাঁর রেস্তোরাঁতে ১৮২৪ সালে প্রথম এই খাদ্যের প্রচলন করেন। টোকিও উপসাগর বা এডো-মায়ে থেকে ধরা টাটকা মাছ দিয়ে এইধরনের সুশি বানানো হত বলে সেইসময় এর আরেক জনপ্রিয় নাম দাঁড়ায় এডোমায়েজুশি; নামটি এখনও কোথাও কোথাও সুশির একটি প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, জাপানী ভাষার রেনডাকু ব্যঞ্জনরীতি অনুসারে 'সুশি' শব্দটির সামনে যখনই কোনও উপসর্গ যুক্ত হয়, তখনই তার উচ্চারণ কিছুটা পালটে গিয়ে দাঁড়ায় '-জুশি'। যেমন - ওশি-জুশি বা নিগিরিজুশি।
সব ধরনের সুশি তৈরিতেই ভিনেগার ভাত দরকার হয়। ঐতিহ্যের ভিত্তিতে এটি বিভিন্ন ভাবে তৈরি করা যায়।
চিরাশিসুশি (ちらし寿司, "scattered sushi") হচ্ছে এক বাটি সুশি ভাত যার উপরে কাঁচামাছ দেয়া থাকে। সাথে থাকে ভিনেগার , সবজি ও ফল।
ইনারিসুশি (稲荷寿司) হচ্ছে ভাজা তফু যা সাধারনত সুশি ভাত থেকে তৈরি হয়।
মাকিসুশি (巻き寿司, "rolled sushi") তে বিভিন্ন রকম রোল দেয়া থাকে। সাথে ডিম ভাজা ও নরি দেয়া হয়ে থাকে।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article সুশি, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.