রাস্তা

রাস্তা বা সড়ক (ইংরেজি: Road) এক টুকরো ভূমিবিশেষ যা দুই বা ততোধিক স্থানের সাথে সংযোগ রক্ষা করে। সাধারণতঃ রাস্তায় সহজে মালামাল পরিবহন, লোক চলাচল বা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে তৈরী করা হয়। গাছ, নালা-নর্দমা, পাহাড়-পর্বত যথাক্রমে কর্তন, ভরাট, সুড়ঙ্গ তৈরী বা মধ্যস্থল আরো সমান্তরাল করে রাস্তার উপযোগী করা হয়। রাস্তা প্রধানত ময়লা-আবর্জনা, নুড়ি পাথর, কংক্রিট বা ইট ইত্যাদির সাহায্যে তৈরী করা হয়।

রাস্তা
বাংলাদেশের একটি অর্ধপাকা রাস্তা

জনগণ বা স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ সময়ের জন্যেই মূলতঃ রাস্তা তৈরী করে। প্রাচীন রোমইনকাদের তৈরী সড়কগুলো নির্মাণশৈলী দুনিয়া জুড়ে প্রসিদ্ধ। কিন্তু নদীপথের যানবাহনগুলো তুলনামূলকভাবে সড়কপথের যানবাহনের চেয়ে সাধারণতঃ সহজ ও দ্রুততম হয়ে থাকে। শিল্প বিপ্লবের সময় যোগাযোগ ব্যবস্থায় রেলওয়ে পরিবহন আবিস্কৃত হয়। এ প্রেক্ষাপটে রেলপথ বিশেষ ধরনের সড়ক পথের স্বীকৃতি পায়। বর্তমানে রাস্তায় চাকাজাতীয় সকল ধরনের যানবাহন পরিচালিত হয়। তন্মধ্যে - গাড়ী, মোটর সাইকেল, সাইকেল, ট্রাম ইত্যাদি অন্যতম।

রাস্তা বিনির্মাণ এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বার্ষিকভিত্তিতে নির্ধারিত হারে কর বা ট্যাক্স প্রদান করতে হয়। এছাড়াও, কিছু রাস্তায় টোল প্রদান করতে হয় যা রাস্তায় যানবাহন চলাচলের সময় প্রদেয়।

সংজ্ঞার্থ নিরূপণ

আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান তুলনা করে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা বা ওইসিডি রাস্তার সংজ্ঞা নির্ণয় করেছে। সংস্থার মতে,

যোগাযোগ ব্যবস্থায় পরিভ্রমণের লক্ষ্যে একটি পথ স্থিরভিত্তির উপর গড়ে উঠবে ও ব্যবহৃত হবে যা রেলপথ বা বিমান পরিচালনার চেয়ে ভিন্নতর। সচরাচর সাধারণ জনগণের জন্য সড়ক পরিচালনা, বিশেষতঃ রাস্তায় চলাচল উপযোগী মোটরচালিত যানবাহন চালনার লক্ষ্যে নির্মিত। এতে সেতু, সুড়ঙ্গ, সহায়ক অবকাঠামো, সংযোগস্থল, ক্রসিং বা চৌমাথা, টোল সড়ক থাকবে কিন্তু সাইকেল চলাচল উপযোগী পথ নয়।

আধুনিক ও যুগোপযোগী রাস্তাগুলো সাধারণত মসৃণ, পাকা অথবা সহজে ভ্রমণের উপযোগী করে তৈরী করা হচ্ছে। ঐতিহাসিকভাবে অনেক রাস্তাই সাধারণ অথচ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত রাস্তার মর্যাদা পেয়েছে যেখানে তেমন কোন আনুষ্ঠানিকভাবে অবকাঠামো তৈরী কিংবা রক্ষণাবেক্ষনের প্রয়োজন পড়েনি।

ইতিহাস

বদ্ধমূল ধারণা যে, প্রথম রাস্তাঘাটের উৎপত্তি হয়েছিল জীব-জন্তুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে। যদিও তা বৈশ্বিকভাবে সর্বস্বীকৃত নয়; কেননা অনেকক্ষেত্রেই জীব-জন্তু সুনির্দিষ্ট পথ ব্যবহার করে না। আবার অনেকে বিশ্বাস করেন যে, কিছু রাস্তার উৎপত্তি ঘটেছে প্রাণীদের পথ চলা থেকে। রাস্তা হিসেবে আইনিল্ড ওয়ে বিশেষ উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ঐ রাস্তায় মানুষ এবং প্রাণী উভয়ই চলাচল করতো। আনুমানিক খ্রীষ্ট-পূর্ব ১০,০০০ বছর পূর্বে কাঁচা সড়কে পথচারীগণ চলাচল করতেন।

  • মিশরে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ পাকা রাস্তা নির্মিত হয়েছে যা খ্রীষ্ট-পূর্ব ২৬০০ থেকে ২২০০ সালের মধ্যে।
  • খ্রীষ্ট-পূর্ব ৪০০০ অব্দে মধ্যপ্রাচ্যের উর শহরে পাথর সহযোগে নির্মিত পাকা রাজপথের সন্ধান পাওয়া গেছে।
  • প্রাচীন ভারতবর্ষে ইটের তৈরী রাস্তা তৈরী হয়েছিল খ্রীষ্ট-পূর্ব ৩০০০ সালে।
  • ১ম দারিয়াস কর্তৃক খ্রীষ্ট-পূর্ব ৫০০ সালে ব্যয়বহুল রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছিল যা পারস্য (ইরান) দেশে অবস্থিত। এ রাস্তার নামকরণ হয়েছিল রয়েল রোড নামে যা ঐ সময়ের সবচেয়ে সুন্দর মহাসড়কের মর্যাদা পেয়েছিল। রোমান সাম্রাজ্য পরবর্তীকালেও রাস্তাটির ব্যবহার হয়েছিল।

আনুমানিক ৩১২ খ্রীষ্ট-পূর্বাব্দে রোমান সাম্রাজ্যে সোজা, মজবুত পাথর দিয়ে রোমান রোড তৈরী করে। এ রাস্তাটি ইউরোপ এবং উত্তর আফ্রিকার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে সাম্রাজ্যের সামরিক প্রচারণায় ব্যবহৃত হয়। ২৯টি প্রধান রাস্তার সাথে সংযোগ ঘটিয়ে ৭৮,০০০ কিলোমিটার বা ৫২,৯৬৪ রোমান মাইল পাকা সড়ক নির্মিত হয়।

৮ম শতকে আরব সাম্রাজ্যে খলিফাদের দ্বারা অনেক রাস্তা নির্মিত হয়। প্রধান রাস্তাগুলো ইরাকের বাগদাদে আলকাতরা ব্যবহার করে পাকা করা হয়। এ অঞ্চলের তৈলক্ষেত্রে উৎপাদিত পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থ থেকে আলকাতরার উৎপত্তি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী সাধারণ জনগণের ব্যবহার্থে রাস্তা সরকার কর্তৃক পরিচালিত হয়। অন্যদিকে ব্যক্তি উদ্যোগে নির্মিত রাস্তা ব্যক্তিগতভাবেই নিয়ন্ত্রিত হয়।

নকশা প্রণয়ন

রাস্তা 
স্তর নিরূপণকারী যন্ত্রাদি সহকারে সার্ভেয়ার বা জরীপকারী রাস্তা নির্মাণে কাজ করছেন।

স্ট্রাকচারাল রোড ডিজাইন এক ধরনের রাস্তার বিজ্ঞানসম্মত নকশা। এ নকশার মাধ্যমে পরিবেশের সাথে খাঁপ খাইয়ে রাস্তার দীর্ঘস্থায়ীত্ব বৃদ্ধিসহ রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণের খরচ কমাতে সাহায্য করে। শেল প্যাভমেন্ট ডিজাইন পদ্ধতি বিশ্বের অনেক দেশের নতুন আলকাতরার মত তরল পদার্থ সহযোগে প্রস্তুত এসফাল্ট রাস্তায় ব্যবহার করা হয়।

রাস্তার অবকাঠামো বিনির্মাণে রাস্তার উভয় পার্শ্বে অতিরিক্ত ভূমি, ভৌগোলিক বাঁধা-বিপত্তি অতিক্রমণ এবং নির্দিষ্ট ওজনসীমা নিয়ে গাড়ী চলাচল এবং হাঁটার ব্যবস্থা রাখা হয়। অনেকক্ষেত্রে আইনের সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড ও সরকারি দপ্তরের পরিচালনাকারী নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে তৈরী করা হয়।

অবকাঠামোগত রাস্তার নকশা প্রণয়ন, অনুমতির স্তর অতিক্রমণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন, বৈধ স্বত্ত্বা এবং প্রতিবেশগত নীতি অনুসরণকে প্রধান মানদণ্ড বিচার-বিশ্লেষণ করে রাস্তা নির্মাণে সার্ভেয়ার বা জরীপকারী প্রেরণ করা হয়।

রক্ষণাবেক্ষণ

রাস্তা 
"রাস্তার কাজ চলছে" শিরোনামীয় প্রকাশ্যে বিজ্ঞাপনচিত্রের প্রয়োগ সাধারণতঃ ইউরোপে প্রচলিত

অন্যান্য অবকাঠামোগত স্থায়ী স্থাপনার ন্যায় রাস্তারও জীবনকাল রয়েছে এবং মেয়াদান্তে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। রাস্তা নষ্ট ও ক্ষতিগ্রস্ততার জন্য প্রধানত যানবাহনের মাত্রাতিরিক্ত ওজন গ্রহণই এর জন্যে দায়ী। এছাড়াও, কুয়াশা, তুষারপাত, অতিরিক্ত তাপ এবং অম্লজানমিশ্রিত ধাতব পদার্থ রাস্তার ক্ষতিতে অংশগ্রহণ করে থাকে।

সাধারণ জনগণের ব্যবহার্থে ফুটপাতের নকশা তৈরী করা হয় রাস্তার গুরুত্ব, সেবা প্রদানের নমুনা অথবা রাস্তার নকশা প্রণয়নের উপর। যুক্তরাজ্যের কিছু দেশে বিটুমিন ও কংক্রিট সহযোগে ফুটপাতের আয়ুস্কাল ধরা হয় ৪০ বছর। সেক্ষেত্রে রাস্তার আয়ু ধার্য্য করা হয় ১০, ২০ কিংবা ৩০ বছর।

রাস্তার জীবনকাল নির্ধারণে ৮-, ১৫-, ৩০- এবং ৬০- বছরের উপযোগী করে নকশা প্রণীত হয়। যখন ফুটপাতের আয়ুস্কাল বেশি দিন টিকে, তখন স্বাভাবিকভাবে ধরে নিতে হবে যে এটি পুনরায় তৈরী করা হয়েছে এবং এর খরচ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। যখন সাধারণ সময়ের চেয়ে ফুটপাত কম টিকে তখন চুক্তি অনুযায়ী রাস্তা নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান পুনরায় নির্মাণ করে দেয় এবং ব্যয় পুনরায় নির্ধারণ করে। ১৯৫০-এর দশকে অনেক কংক্রিটের তৈরী রাস্তা স্বাভাবিক সময়ে তুলনায় কম টিকেছিল।

তথ্যসূত্র

Tags:

রাস্তা সংজ্ঞার্থ নিরূপণরাস্তা ইতিহাসরাস্তা নকশা প্রণয়নরাস্তা রক্ষণাবেক্ষণরাস্তা তথ্যসূত্ররাস্তাRoadইংরেজি ভাষাইটগাছভূমিভ্রমণ

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থাসৌদি আরববাণাসুরভারতীয় জনতা পার্টিআব্বাসীয় খিলাফতমুঘল সাম্রাজ্যআবদুল মোনেম লিমিটেডরাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)বৃত্তবিজ্ঞানবাইতুল হিকমাহরক্তশূন্যতাইউক্রেনে রুশ আক্রমণ (২০২২-বর্তমান)কালেমামুঘল সম্রাটবাংলাদেশের পৌরসভার তালিকাসুদীপ মুখোপাধ্যায়মিয়া খলিফানোরা ফাতেহিমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, ২০২৪উমর ইবনুল খাত্তাবঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়বটইসলামলোকসভাবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সেক্টরসমূহপথের পাঁচালীহারুনুর রশিদধর্ষণমুহাম্মাদবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলরয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুফরিদপুর জেলামৈমনসিংহ গীতিকাআমাশয়সৌরজগৎঊষা (পৌরাণিক চরিত্র)বর্তমান (দৈনিক পত্রিকা)আশারায়ে মুবাশশারাজেরুসালেমবাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাযৌনসঙ্গমইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়নিউটনের গতিসূত্রসমূহসাকিব আল হাসানবিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমআইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপণত্ব বিধান ও ষত্ব বিধানসজনেযতিচিহ্নবৈশাখী মেলাইসলাম ও হস্তমৈথুনসানি লিওনলক্ষ্মীবাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধানভৌগোলিক নির্দেশকপান (পাতা)আইজাক নিউটনটেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রামেটা প্ল্যাটফর্মস২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপউপন্যাসপশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ব্যবস্থাঅকাল বীর্যপাতডাচ্-বাংলা ব্যাংক পিএলসি২০২২–২৩ নিউজিল্যান্ড পুরুষ ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফর (ডিসেম্বর ২০২২)গায়ত্রী মন্ত্রমানুষজরায়ুবিভিন্ন দেশের মুদ্রাব্রিক্‌সমিশরআল্লাহর ৯৯টি নামরামপরিমাপ যন্ত্রের তালিকাপুলিশ🡆 More