রবের্তো বাজ্জো: ইতালীয় ফুটবলার

রবের্তো বাজ্জো ( ইতালীয়: Roberto Baggio; জন্ম ১৮ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৭, কালদোনিও, ভেনেতো, ইতালি) একজন সাবেক ইতালীয় ফুটবলার। তাকে ৯০ দশকের এবং ২০০০ দশকের প্রথমার্ধের বিশ্বের অন্যতম কুশলী এবং প্রতিভাধর খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনা করা হয় । ইতালির পক্ষে ৩টি বিশ্বকাপে তিনি অংশ নেন এবং ৩টি বিশ্বকাপেই গোল করা একমাত্র ইতালীয় খেলোয়াড় হিসেবে ইতিহাসে নাম লেখান।

রবের্তো বাজ্জো
রবের্তো বাজ্জো: জীবনী, আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার, ধর্ম
২০১৩ সালে বাজ্জো
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম রবের্তো বাজ্জো
জন্ম ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৭
জন্ম স্থান কালডগনো, ইতালি
উচ্চতা ১৭৪ সেমি (৫ ফুট ৮.৫ ইঞ্চি)
মাঠে অবস্থান ফরোয়ার্ড
জ্যেষ্ঠ পর্যায়*
বছর দল ম্যাচ (গোল)
১৯৮১-১৯৮৫
১৯৮৫-১৯৯০
১৯৯০-১৯৯৫
১৯৯৫-১৯৯৭
১৯৯৭-১৯৯৮
১৯৯৮-২০০০
২০০০-২০০৪
ভিসেনজা
ফিওরেন্টিনা
জুভেন্টাস
এসি মিলান
বোলোনিয়া
ইন্টার মিলান
ব্রেসিয়া
(৩৬)(১৩)
(৯৪)(৩৯)
(১৪১)(৭৮)
(৫১)(১২)
(৩০)(২২)
(৪১)(৯)
(৯৫)(৪৩)
জাতীয় দল
১৯৮৮-২০০৪ ইতালি (৫৬) (২৭)
* কেবল ঘরোয়া লিগে ক্লাবের হয়ে ম্যাচ ও গোলসংখ্যা গণনা করা হয়েছে

জীবনী

রবের্তো বাজ্জো উত্তর ইতালির ভিচেন্‌জার নিকটবর্তী ক্যালডোগনো, ভেনেটোতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি মাতিলদে এবং ফ্লোরিন্দো বাজ্জোর ছেলে। ৮ ভাইবোনের মধ্যে বাজ্জো তার পিতা-মাতার ৬ষ্ঠতম সন্তান। বাজ্জো শৈশব থেকেই ফুটবলের প্রতি ভীষণ আকর্ষণ অনুভব করতেন এবং স্থানীয় একটি যুবদলে ৯ বছর খেলেন। একটি ম্যাচে ৬ গোল করার পর আন্তোনিও মোরা তাকে ভিচেন্‌জা ক্লাবে খেলার প্রস্তাব দেন। তার ছোট ভাই এডি বাজ্জো একজন ফুটবলার ছিলেন যিনি সেরি বি তে ৮৬টি ম্যাচ খেলেছিলেন। বাজ্জো ইতালির হয়ে সর্বমোট ৫৬টি ম্যাচ খেলেছেন এবং ২৭টি গোল করেছেন। তিনি আলেসান্দ্রো দেল পিয়েরোর সাথে জাতীয় দলের হয়ে যৌথ চতুর্থ-সর্বোচ্চ গোলদাতা নির্বাচিত হয়েছিলেন।

ক্লাব ফুটবল

১৯৮২ সালে ভিচেন্‌জার হয়ে সেরি সি লীগে অংশ নিয়ে তিনি পেশাদারী ফুটবল জীবন শুরু করেন। ১৯৮৫ সালে ফিওরেন্তিনা তাকে কিনে নেয়। ভিসেনজায় তার চুড়ান্ত মৌসুমের শেষের দিকে রিমিনির বিপক্ষে খেলার সময়ে বাজ্জো একটি স্লাইড ট্যাকল করার চেষ্টা করলে (৫ই মে ১৯৮৫) দাঁ ডান হাঁটুর মেনিস্কাস ভেঙ্গে ফেলেন। ফিওনেন্টিনায় ট্রান্সফার চুক্তিটি চুড়ান্ত হওয়ার দুই দিন পুর্বেই বাজ্জো ইনজুরিতে পড়ে। এই ইনজুরি তার ক্যারিয়ার কে মারাত্মক হুমকিতে ফেলে দেয়। ডাক্তাররা আশঙ্কা করেছিল যে তার ফুটবল ক্যারিয়ার শেষ। তবে ফিওরেন্টিনা বাজ্জোর প্রতি আস্থা বজায় রেখেছিল। তারা তার সাথে প্রতিশ্রুতি বজায় রাখতে সম্মত ছিলেন। তার অস্ত্রোপচার ও অন্যান্ন চিকিৎসার জন্য তারা তহবিল গঠন করেন।

সাম্পাদোরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের মধ্য দিয়ে ১৯৮৬ সালে তার "সেরি আ" লীগে অভিষেক হয়। ১৯৮৭ সালের ১০ মে নাপোলির বিপক্ষে সেরি আ ক্যারিয়ারের প্রথম গোল করেন। উল্লেখ্য, সে বছর নাপোলি স্কুদেত্তি জয় করেছিল।

১৯৯০ সালে তৎকালীন রেকর্ড ১৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ফিওরেন্তিনা তাকে জুভেন্টাসের কাছে বেচে দেয়। এ ঘটনায় ফ্লোরেন্সের রাস্তায় পুলিশের সাথে সমর্থকদের ব্যাপক দাঙ্গা সংঘটিত হয়।

১৯৯৩ সালে জুভেন্টাসের হয়ে তিনি উয়েফা কাপ জয় করেন । তার ক্যারিয়ারে এটি একমাত্র ইউরোপীয় শিরোপো। এ টুর্নামেন্টে তার উজ্জ্বল উপস্থিতি তাকে "ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার" এবং "ইউরোপিয়ান প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার"-এর সম্মান এনে দেয়।

১৯৯৫ সালে জুভেন্টাসের হয়ে এবং ১৯৯৬ সালে এসি মিলানের হয়ে তিনি স্কুডেট্টি জয় করেন । ১৯৯৭ এ তার ফর্মের অবনতি হলে ক্যারিয়ার বাঁচাতে তিনি বোলোনিয়া ক্লাবে যোগ দেন এবং ২২ গোল করে দারুণভাবে ফর্মে ফিরে আসেন। এটি তাকে ১৯৯৮-এর ফ্রান্স বিশ্বকাপগামী দলে জায়গা করে দেয়। বিশ্বকাপে ফর্মে থাকা বাজ্জোর বদলে আলেস্‌সান্দ্রো দেল পিয়েরো,-কে বেশি সুযোগ দেয়ায় তৎকালীন কোচ সেজার মালদিনি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন। ইতালি সেবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নেয় ।

৯৮ বিশ্বকাপের পর তিনি ইন্টার মিলানে যোগ দেন। কিন্তু কোচ মার্চেল্লো লিপ্পির সুনজর কাড়তে ব্যর্থ হন। ফলশ্রুতিতে জাতীয় দলে তার জায়গা হারান।

২০০২ সালের বিশ্বকাপের পূর্বে দলে জায়গা পেতে বাজ্জো ব্রেসিয়া ক্লাবে যোগ দেন।ইনজুরি কাটিয়ে বিশ্বকাপের পূর্বে নাটকীয়ভাবে তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন, পাশাপাশি ফর্মে থাকারও ইঙ্গিত দেন । জিওভানি ত্রাপাত্তোনি শেষ পর্যন্ত তাকে দলভুক্ত করেননি।

২০০৪ সালে অবসর নেয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি ব্রেসিয়া ক্লাবের হয়ে খেলে যান ।১৬ মে , ২০০৪ তিনি এসি মিলানের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের শেষ লীগ ম্যাচটি খেলেন । তার করা ২০৫ গোল সিরি এ লীগের ইতিহাসে পঞ্চম সর্বোচ্চ ।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার

১৯৯০ বিশ্বকাপ

রবের্তো বাজ্জো: জীবনী, আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার, ধর্ম 
১৯৯০ সালে ইতালির সাথে বাজ্জো

এ বিশ্বকাপে ইতালি তৃতীয় স্থান অর্জন করে । অধিকাংশ ম্যাচে বাজ্জো বদলি খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামেন । চেকোস্লোভাকিয়ার বিরুদ্ধে করা তার গোলটি "গোল অফ দ্য টুর্নামেন্ট" এর মর্যাদা লাভ করে।

১৯৯৪ বিশ্বকাপ

প্রথম রাউন্ডে দুর্বল পারফর্মেন্স কাটিয়ে উঠে ইতালি শেষ পর্যন্ত রানার্স-আপ হয়। নক আউট পর্বে বাজ্জো অসাধারণ পারফর্মেন্স প্রদর্শন করে ৫টি গোল করেন। নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ শেষ হওয়ার দুই মিনিট আগে তার গোলে ইতালি সমতা আনে । পরবর্তীতে তার করা গোল্ডেন গোলে ইতালি ম্যাচ জয় করে। স্পেনের বিপক্ষে ম্যাচ শেষ হওয়ার ৩ মিনিট আগে জয়সূচক গোল আসে তার পা থেকে। সেমিফাইনালে বুলগেরিয়ার বিপক্ষে তার করা জোড়া গোলে ইতালি জয়ী হয়। ফাইনালে সম্পূর্ণ সুস্থ না থাকা সত্ত্বেও ব্রাজিলের বিপক্ষে মাঠে নামেন। ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত টাই-ব্রেকারে গড়ালে ইতালির ফ্রাংকো বারেসি ও ডানিয়েল মাসারোর সাথে বাজ্জো গোল করতে ব্যর্থ হন; শিরোপা তুলে নেয় ব্রাজিল।

১৯৯৮ বিশ্বকাপ

চিলির বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে বাজ্জোর দক্ষতায় শেষ মূহুর্তে ইতালি পেনাল্টি অর্জন করে। পেনাল্টিতে গোল করে বাজ্জো খেলায় সমতা আনেন। ম্যাচটি ২-২ এ ড্র হয়। অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে জয়সূচক গোলটিও আসে তার পা থেকে। কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধে তাকে নামানো হয়। ম্যাচে ইতালির সবচেয়ে সম্ভাবনাময় আক্রমণটির রূপকার ছিলেন তিনি। অতিরিক্ত সময় শেষে ম্যাচটি পেনাল্টিতে গড়ায়। বাজ্জো গোল করলেও ব্যর্থ হন ডি বিয়াজো। ইতালি টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয়। ফর্মের শিখরে থাকা সত্ত্বেও দেল পিয়েরোকে বাজ্জোর চাইতে বেশি সুযোগ দেয়ায় কোচ সেজার মালদিনিকে ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়।

অবসর পরবর্তী জীবন

ধর্ম

বাজ্জো উত্তারাধিকার সূত্রে ক্যাথলিক ছিলেন । পরে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হন।

রেকর্ড

  • ইতালির পক্ষে বিশ্বকাপের মূলপর্বে ১৬ ম্যাচে ৯ গোল করেন, যা একটি ইতালীয় রেকর্ড ।
  • "সেরি আ" লীগে ৮৬ ভাগ পেনাল্টি সফলভাবে নিয়েছেন । ১২২ পেনাল্টির মধ্যে ১০৬ টিতেই গোল করেছেন ।
  • বাজ্জোর অংশগ্রহণ করা তিনটি বিশ্বকাপে ইতালি মাত্র একটি ম্যাচ হেরে যায়। সেটি ১৯৯৪ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। ১৯৯০ সালে আর্জেন্টিনা, ১৯৯৪ সালে ব্রাজিল, ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সের বিপক্ষে ইতালি পেনাল্টি শুট-আউটে বিদায় নেয়।


Tags:

রবের্তো বাজ্জো জীবনীরবের্তো বাজ্জো আন্তর্জাতিক ক্যারিয়াররবের্তো বাজ্জো ধর্মরবের্তো বাজ্জো রেকর্ডরবের্তো বাজ্জোইতালিইতালীয় ভাষা১৮ই ফেব্রুয়ারি

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

আইজাক নিউটনদুধপানিপথের প্রথম যুদ্ধপশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন, ২০২১মহাত্মা গান্ধীবাংলাদেশের রাজনৈতিক দলসমূহের তালিকালক্ষ্মীঅক্ষয় তৃতীয়াআনারসনিউটনের গতিসূত্রসমূহস্মার্ট বাংলাদেশসম্প্রদায়আসিয়ানশাকিব খানদুর্গাপূজাশিব নারায়ণ দাসমুঘল সম্রাটশিল্প বিপ্লবসত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রসুকুমার রায়ব্রিক্‌সকুরআনের সূরাসমূহের তালিকাওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবত্রিপুরাজ্বীন জাতিসাধু ভাষাবৈশাখী মেলামাযহাববাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধানকৃষ্ণছোটগল্পপশ্চিমবঙ্গের জেলাজাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দাকিশোরগঞ্জ জেলাপশ্চিমবঙ্গে ভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪হস্তমৈথুনের ইতিহাসআর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলতাপমাত্রাবাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের বিচারকবৃন্দতাসনিয়া ফারিণবিদ্রোহী (কবিতা)রক্তবিশ্বায়নবৃত্তদীপু মনিপ্রধান পাতাবিশেষ্যমিঠুন চক্রবর্তীবাংলাদেশের স্থল বন্দরসমূহের তালিকাদেশ অনুযায়ী ইসলামশাহ জাহানশাকিব খান অভিনীত চলচ্চিত্রের তালিকামান্নাভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪গাঁজাডিএনএঅমর সিং চমকিলাপেপসিবাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়বাঙালি হিন্দু বিবাহজি২০হৃৎপিণ্ডমৃত্যু পরবর্তী জীবনহামলিভারপুল ফুটবল ক্লাবঅস্ট্রেলিয়াবাংলাদেশ সরকারবাংলাদেশের ইউনিয়নের তালিকাউমাইয়া খিলাফতটুইটারমাইকেল মধুসূদন দত্তনোরা ফাতেহিপ্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণখাদ্যইরানচিয়া বীজদৈনিক ইনকিলাবপশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ব্যবস্থা🡆 More