মারিয়ানা খাত বা মারিয়ানা ট্রেঞ্চ হলো প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশের একটি খাত বা পরিখা। এটি বিশ্বের গভীরতম সমুদ্র খাত। এটি প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্তে মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের ঠিক পূর্বে অবস্থিত। মারিয়ানা খাত একটি বৃত্তচাপের আকারে উত্তর-পূর্ব থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রায় ২৫৫০ কিমি ধরে বিস্তৃত। এর গড় বিস্তার ৭০ কিমি। অধোগমন নামক এক ভৌগোলিক প্রক্রিয়ায় এই খাতটি গঠিত হয়েছে। খাতটির দক্ষিণ প্রান্তসীমায় গুয়াম দ্বীপের ৩৪০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে পৃথিবীপৃষ্ঠের গভীরতম বিন্দু অবস্থিত। এই বিন্দুর নাম চ্যালেঞ্জার ডিপ এবং এর গভীরতা প্রায় ১১,০৩৩ মিটার। বিন্দুটি এইচ এম এস চ্যালেঞ্জার ২ জাহাজের নামে নামকরণ করা হয়েছে; এই জাহাজের নাবিকেরাই বিন্দুটি ১৯৪৮ সালে আবিষ্কার করে।
১৯৬০ সালের জানুয়ারি মাসে সুইস মহাসাগর প্রকৌশলী জাক পিকার ও মার্কিন নৌবাহিনীর লিউট্যান্যান্ট ডোনাল্ড ওয়াল্শ ফরাসি-নির্মিত বাথিস্কাফ ত্রিয়েস্ত-এ করে চ্যালেঞ্জার ডিপে অবতরণ করেন। জাক পিকারের বাবা ওগুস্ত পিকার বাথিস্কাফ উদ্ভাবন করেন। জাক ও ডোনাল্ড ১০,৯১৫ মিটার গভীরতায় ত্রিয়েস্তকে নিয়ে যেতে সক্ষম হন। এটি ইতিহাসের সবচেয়ে গভীরতম ডুব।
মারিয়ানা ট্রেঞ্চের নামকরণ করা হয়েছে নিকটবর্তী মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের নামে, যার নামকরণ স্পেনের চতুর্থ ফিলিপ এর বিধবা রাণী মারিয়ানা অফ অস্ট্রিয়ার সম্মানে লাস মারিয়ানা করা হয়েছিল। খাদটির পশ্চিম দিকে দ্বীপগুলি একটি দ্বীপের আর্কের অংশ যা একটি টেকটোনিক প্লেটের উপর গঠিত, যাকে বলা হয় মারিয়ানা প্লেট (দ্বীপগুলির জন্য এমন নামকরণ করা হয়েছে)।
খাদটি প্রায় ২ হাজার ৫৫০ কিলোমিটার (১ হাজার ৫৮০ মাইল) দীর্ঘ। চওড়ায় এটি মাত্র ৬৯ কিলোমিটার (৪৩ মাইল)। এখনো পর্যন্ত খাদের সর্বোচ্চ গভীরতা জানা গেছে প্রায় ১১ কিলোমিটার (প্রায় ৩৬ হাজার ৭০ ফুট)। অবশ্য গভীর সাগরের তলদেশে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে এখনো রয়ে গেছে নানা সমস্যা। ফলে বিজ্ঞানীদের ধারণা খাদের গভীরতা আরো বেশি হতে পারে। সে জন্যই তাঁরা চালাচ্ছেন নিত্যনতুন অভিযান। পুরো মাউন্ট এভারেস্টকেও যদি তুলে এনে এই জায়গায় ডুবিয়ে দেয়া হয়, তাও তার মাথার ওপর আরও জায়গা বেঁচে যাবে। মারিয়ানা ট্রেঞ্চের সবচেয়ে গভীর অংশটি শেষ হয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরের নিচে 'চ্যালেঞ্জার ডিপ' নামের একটি উপত্যকায় গিয়ে। খাদের শেষ অংশে পানির চাপ এতটাই যে, সমুদ্রপৃষ্ঠের স্বাভাবিক বায়ুচাপের তুলনায় তা ১০০০ গুণেরও বেশি। এ কারণেই এখানে স্বাভাবিকের চেয়ে পানির ঘনত্বও প্রায় ৫ শতাংশ বেশি। খাদের সবচেয়ে নিচু জায়গা 'চ্যালেঞ্জার ডিপ' নামটি রাখা হয়েছে জলযান এইচএমএস চ্যালেঞ্জার-২-এর নাম থেকে নিয়ে। স্থানটির তাপমাত্রা এতই কম যে, বিজ্ঞানীরা বলেন সাগর তলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার স্থান এটিই। কখনো হাইড্রোজেন সালফাইডসহ বিভিন্ন ধরনের খনিজ সমৃদ্ধ গরম পানিও বের হয় চ্যালেঞ্জার ডিপের ছিদ্রপথ দিয়ে। এগুলো প্রধান খাদ্য ব্যারোফিলিকজাতীয় ব্যাকটেরিয়ার। এসব ব্যাকটেরিয়াকেই আবার খায় শক্তিশালী অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখতে হয় এমন কতগুলো ছোট ছোট জীব। এদের খেয়ে বেঁচে থাকে মাছেরা। এভাবেই সাগরতলের এত গভীরেও জীবনের চক্র কিন্তু ঠিকই চলতে থাকে, যেমনটি চলে সাগরের ওপর। অতি ক্ষুদ্র কিছু ব্যাকটেরিয়ারও দেখা মেলে মারিয়ানা খাদে। সাধারণত সমুদ্রতলের গভীরে মৃত প্রাণীর কঙ্কাল, খোলস জমা পড়তে থাকে। মারিয়ানার তলও আলাদা নয়। এখানকার পানির রঙ সে জন্যই খানিকটা হলুদ।
This article uses material from the Wikipedia বাংলা article মারিয়ানা খাত, which is released under the Creative Commons Attribution-ShareAlike 3.0 license ("CC BY-SA 3.0"); additional terms may apply (view authors). বিষয়বস্তু সিসি বাই-এসএ ৪.০-এর আওতায় প্রকাশিত যদি না অন্য কিছু নির্ধারিত থাকে। Images, videos and audio are available under their respective licenses.
®Wikipedia is a registered trademark of the Wiki Foundation, Inc. Wiki বাংলা (DUHOCTRUNGQUOC.VN) is an independent company and has no affiliation with Wiki Foundation.