বেউলফ: প্রাচীন ইংরেজি মহাকাব্য

বেউলফ (/ˈbeɪəwʊlf/; প্রাচীন ইংরেজি: Bēowulf ‎ টেমপ্লেট:IPA-ang)) হল প্রাচীন ইংরেজি ভাষায় রচিত একটি মহাকাব্য। এটি ৩১৮২ চরণের একটি অনুপ্রাসযুক্ত দীর্ঘ কবিতা। সম্ভবত এটিই প্রাচীন ইংরেজিতে রচিত সবচেয়ে পুরনো কবিতা যেটি অদ্যাবধি টিকে আছে। এটিকে সাধারণভাবে প্রাচীন ইংরেজি সাহিত্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রচনা বলে অভিহিত করা হয়। ইংল্যান্ডে খ্রিস্টীয় ৮ম থেকে ১১শ শতাব্দীর প্রথম ভাগের মধ্যবর্তী কোনো এক সময়ে এটি রচিত হয়। এই মহাকাব্যের রচয়িতা কোনো এক অজ্ঞাতনামা অ্যাংলো-স্যাক্সন কবি। গবেষকরা এঁকে ‘বেউলফের কবি’ নামে চিহ্নিত করেন।

বেউলফ
বেউলফ: ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, সারসংক্ষেপ, রচয়িতা ও রচনাকাল
বেউলফ-এর প্রথম পৃষ্ঠা, কটন ভাইটেলিয়াস, এ. পনেরো-এ
Full titleঅজ্ঞাত
Author(s)অজ্ঞাত
ভাষাপ্রাচীন ইংরেজির পশ্চিম স্যাক্সন উপভাষা
তারিখ৭০০-১০০০ খ্রিস্টাব্দ (কাব্যের তারিখ), ৯৭৫-১০২৫ (পাণ্ডুলিপির তারিখ)
State of existence১৭৩১ সালে একটি অগ্নিকাণ্ডে পাণ্ডুলিপিটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়
Manuscript(s)কটন ভাইটেলিয়াস, এ. পনেরো
First printed editionথরকেলিন (১৮১৫)
ধরনমহাকাব্যিক বীরত্বব্যঞ্জক কাব্য
Verse formঅনুপ্রাসযুক্ত কাব্য
দৈর্ঘ্য৩১৮২ চরণ
বিষয়গেটিশ যোদ্ধা বেউলফের যৌবন ও বার্ধক্যের যুদ্ধ
Personagesবেউলফ, হাইগেলাক, হ্রথগার, ওয়েলথথিও, হ্রথহাফ, Æschere, আনফার্থ, গ্রেন্ডেল, গ্রেন্ডেলের মা, উইগলাফ, হাইল্ডবার.

মহাকাব্যের পটভূমি স্ক্যান্ডিনেভিয়া। গেটস জাতীয় যোদ্ধা বেউলফ ডেনসদের রাজা হ্রথগারের সাহায্যার্থে আসেন। হ্রথগারের হেওরট-স্থিত মিড হলে গ্রেন্ডেল নামে এক দৈত্য হানা দিচ্ছিল। বেউলফ তাকে হত্যা করেন। তারপর গ্রেন্ডেলের মা তাকে আক্রমণ করে। বেউলফ তাকেও পরাজিত করেন। জয় লাভ করে বেউলফ গেটল্যান্ডে (অধুনা সুইডেনের গোটল্যান্ড) নিজের বাড়িতে ফিরে যান। পরে তিনি গেটস জাতির রাজা হন। পঞ্চাশ বছর পর বেউলফ এক ড্রাগনকে পরাজিত করেন। কিন্তু এই যুদ্ধে তিনি গুরুতর আহত হয়ে মারা যান। তার মৃত্যুর পর তার অনুচরেরা তাকে গেটল্যান্ডে একটি সমাধিস্তুতে সমাধি দেন।

সম্পূর্ণ কবিতাটি ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে রক্ষিত নোওয়েল কোডেক্স নামে একটি পাণ্ডুলিপিতে পাওয়া যায়। মূল পাণ্ডুলিপিতে কবিতাটির কোনো শিরোনাম ছিল না। তবে এটি কাব্যের প্রধান চরিত্রের নামা নামাঙ্কিত হয়। ১৭৩১ সালে লন্ডনের অ্যাশবার্নহাম হাউস থেকে আগত একটি আগুনে পাণ্ডুলিপিটি বিশ্রীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উক্ত বাড়িটিতে স্যার রবার্ট ব্রুস কটনের সংগৃহীত একাধিক মধ্যযুগীয় পাণ্ডুলিপি ছিল। ১৮শ শতাব্দীর শেষ ভাগের আগে কবিতাটি পঠিত হয়নি। ১৮১৫ সালের আগে এটি সম্পূর্ণ প্রকাশিতও হয়নি। ওই বছর জোহান বুলো একটি লাতিন অনুবাদ খুঁযে পান। আইসল্যান্ডীয়-ড্যানিশ গবেষক গ্রিমার জনসন থরকেলিন ওই অনুবাদটি করেছিলেন। থরকেলিনের সঙ্গে প্রবল বিতর্কের পর বুলো ড্যানিশ ভাষায় একটি নতুন অনুবাদে সাহায্য করতে রাজি হন। অনুবাদটি করেন এন. এফ. এস. গ্রুনডটভিগ। Bjovulfs Drape শিরোনামে ১৮২০ সালে প্রকাশিত এই অনুবাদটি হল মহাকাব্যের প্রথম আধুনিক ভাষায় অনুবাদ।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

বেউলফ: ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, সারসংক্ষেপ, রচয়িতা ও রচনাকাল 
বেউলফ মহাকাব্যে উল্লিখিত উপজাতিগুলির আনুমানিক বসতি। এখানে এঙ্গেলনে এঙ্গেলস উপজাতির বসতি প্রদর্শিত হয়েছে। ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে স্ক্যান্ডিনেভিয়ার রাজনৈতিক খণ্ডগুলির বিস্তারিত বিবরণের জন্য দেখুন স্ক্যান্ডিনেভিয়া নিবন্ধটি।

খ্রিস্টীয় ৫ম শতাব্দীর শেষ ভাগে এঙ্গেলস ও স্যাক্সন উপজাতি ইংল্যান্ডে অনুপ্রবেশ শুরু করে। খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীর গোড়ার দিকে অ্যাংলো-স্যাক্সন জাতি হয় উত্তর জার্মানি, স্ক্যান্ডিনেভিয়া ও সম্ভবত ইংল্যান্ডে তাদের জার্মানিক স্বজাতীয়দের কাছে হয় নতুন নয় ঘনিষ্ঠতা রেখে বাস করছিল। বেউলফ মহাকাব্যে বর্ণিত ঘটনা এই দুই সময়ের মধ্যবর্তী কোনো এক সময়ের। সম্ভবত গেটিস উপজাতি থেকে উদ্ভূত লোকেরা এই মহাকাব্যটিকে ইংল্যান্ডে নিয়ে আসেন। গবেষকদের মতে, খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে পূর্ব অ্যাংলিয়ার রেন্ডেলশ্যামে এই মহাকাব্য রচিত হয়। কারণ সুটন হু শিপ-বেরিয়াল থেকে স্ক্যান্ডিনেভিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ইঙ্গিতবাহী। এছাড়াও পূর্ব অ্যাংলিয়ার রাজবংশ উফিংসেরা সম্ভবত গেটিস উলফিংদের বংশধর। অন্য গবেষকরা এই মহাকাব্যটিকে রাজা অ্যালফ্রেডের রাজসভার সঙ্গে যুক্ত করেন। কারও কারও মতে, এটি রাজা নাটের রাজসভার সঙ্গে যুক্ত।টেমপ্লেট:Pages needed

বেউলফ: ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, সারসংক্ষেপ, রচয়িতা ও রচনাকাল 
ওথারের ঢিপি

বিনোদনের জন্য রচিত এই মহাকাব্যে কিংবদন্তিই মুখ্য। এখানে কল্পকাহিনি ও প্রকৃত ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্যে কোনো বিভাজনরেখা টানা হয়নি। যেমন, রাজা হাইহগেলাকের ফ্রিসিয়া অভিযান এর দৃষ্টান্ত। গবেষকরা সাধারণভাবে একমত যে, বেউলফ মহাকাব্যের অনেক চরিত্রই স্ক্যান্ডিনেভীয় সূত্রগুলিতে পাওয়া যায়। এটি শুধুমাত্র ব্যক্তিবিশেষের (যেমন, হিলডেন, হ্রথগার, হালগা, হ্রউলফ, এডগিলস ও ওথের) ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়, বরং গোষ্ঠী (যেমন, সিলডিং, সিলফিং ও উলফিং) এবং কিছু কিছু ঘটনার (যেমন, ভ্যানার্ন হ্রদে বরফের উপর যুদ্ধ) ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। মহাকাব্যে বর্ণিত ঘটনাগুলির সালতারিখের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে সমাধিস্তুপগুলিতে খননকার্য চালিয়ে। স্নোরি স্টারলুসন ও সুইডিস প্রথা অনুসারে এই সময়কাল নির্ধারিত হয়েছে। যেমন সুইডেনের আপল্যান্ডে ওথেরের সমাধির সময়কাল ৫৩০ খ্রিষ্টাব্দ এবং তার পুত্র এডগিলসের সমাধিটি ৫৭৫ খ্রিষ্টাব্দের।

ডেনমার্কের লেজরেতে সাম্প্রতিককালে একটি পুরাতাত্ত্বিক খননকার্যের ফলে জানা গিয়েছে সেখানে সেখানে সিলডিংদের (অর্থাৎ, হেওরট) একটি স্ক্যান্ডিনেভীয় প্রথার কেন্দ্র ছিল। জানা গিয়েছে মধ্য-৬ষ্ঠ শতাব্দীতে সেখানে একটি হল নির্মিত হয়েছিল। এটি একেবারে বেউলফ-এর সমসাময়িক। খননকার্যের ফলে তিনটি হল পাওয়া গিয়েছে। প্রত্যেক হলের দৈর্ঘ্য ৫০ মিটার (১৬৪ ফুট)।

বেউলফ: ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, সারসংক্ষেপ, রচয়িতা ও রচনাকাল 
এডগিলসের ঢিপি থেকে প্রাপ্ত বস্তু। সুইডেনের আপসালায় খননকার্যটি হয়েছিল ১৮৭৪ সালে। এটির থেকে বেউলফ ও কিংবদন্তির প্রমাণ পাওয়া যায়। ডানদিকে অঙ্গেনফিউর সমাধিস্তুপটি খননকার্য চালানো হয়নি।

অধিকাংশ গবেষকের মতে, বেউলফ মহাকাব্যের রাজা হ্রথগার বা সিলডিং জাতির ভিত্তি ৬ষ্ঠ শতাব্দীর স্ক্যান্ডিনেভিয়ার কিছু ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব। ফিনসবার্গ ফ্র্যাগমেন্ট ও একধিক ক্ষুদ্রকার প্রাপ্তব্য কবিতার মতো বেউলফ-ও এডগিলস ও হাইগেলিক প্রমুখ স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ব্যক্তিত্ব এবং মহাদেশীয় এঙ্গেলসের রাজা ওফফা প্রমুখ মহাদেশীয় জার্মানিক ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে তথ্যের একটি সূত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

১৯শ শতাব্দীর পুরাতাত্ত্বিক প্রমাণ হয়তো বেউলফ উপাখ্যানের কিছু ঘটনার প্রমাণ। স্নোরি স্টারলুসনের মতে, এডগিলসকে সমাধিস্থ করা হয়েছিল গামলা আপসালায়। ১৮৭৪ সালে এডগিলসের ঢিপি (ছবিতে বাঁদিকে) খননকার্য চালিয়ে যা পাওয়া যায়, তা থেকে বেউলফ ও কিংবদন্তিগুলির সমর্থন পাওয়া যায়। এই সমাধিক্ষেত্র খনন করে দেখা গিয়েছে, ৫৭৫ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ এখানে কোনো এক শক্তিশালী পুরুষকে একটি ভাল্লুকের চামড়া, দুটি কুকুর ও মূল্যবান সমাধি দ্রব্যাদির সঙ্গে সমাহিত করা হয়েছিল। এই জিনিসগুলির মধ্যে আছে একটি সোনায় মোড়া ফ্র্যাঙ্কিশ তরবারি, তামড়ি ও গজদন্তে নির্মিত রোমান ঘুঁটি সহ একটি টাফল গেম। সোনার সুতোর কাজ করা ফ্র্যাঙ্কিশ দামি কাপড় ছিল এই ব্যক্তিটির পরনে। তিনি একটি দামি কোমরবন্ধও পরে ছিলেন। মধ্যপ্রাচ্যের চারটি খোদাই-করা মূর্তিযুক্ত মণি ছিল, এগুলি সম্ভবত কৌটোর অংশ ছিল। প্রাচীন নর্স সূত্র অনুসারে, এগুলি এক ধনশালী রাজার সমাধিবেশ। অঙ্গেনফেউর সমাধিস্তুপটি (ছবিতে ডানদিকে) খনন করা হয়নি।

সারসংক্ষেপ

মহাকাব্যের প্রধান চরিত্র বেউলফ হলেন গেটস জাতীয় এক যোদ্ধা। তিনি ডেনস রাজা হ্রথগারকে সাহায্য করতে আসেন। হ্রথগারের বিশাল প্রাসাদ হেওরটে গ্রেন্ডেল নামে এক দৈত্য হানা দিচ্ছিল। বেউলফ গ্রেন্ডেলকে খালি হাতে হত্যা করেন। তারপর দৈত্যের বাসা থেকে পাওয়া এক তরবারির সাহায্যে তিনি গ্রেন্ডেলের মাকে হত্যা করেন।

পরবর্তী জীবনে বেউলফ গেটসদের রাজা হন। এক ড্রাগন তার রাজ্যে হানা দিতে শুরু করে। একটি সমাধিস্তুপে রক্ষিত এই ড্রাগনের ধনসম্পত্তি চুরি গিয়েছিল। নিজের ভৃত্যদের সাহায্যে বেউলফ ড্রাগনটিকে আক্রমণ করলেন। কিন্তু তারা সফল হলেন না। বেউলফ ড্রাগনটির পিছু নিয়ে আর্নানিসে তার বাসায় গেলে। তার সঙ্গে কেউ যেতে চাইলেন না। শুধু তার তরুন সুইডিশ আত্মীয় উইগলাফ তার সঙ্গে গেলেন। ‘উইগলাফ’ নামের অর্থ ‘বীরত্বের অবশিষ্টাংশ’। অবশেষে বেউলফ ড্রাগনটিকে হত্যা করতে সক্ষম হলেন। কিন্তু যুদ্ধে তিনি গুরুতর আহত হয়ে মারা গেলেন। সমুদ্রের ধারে একটি সমাধিস্তুপে তাকে সমাধিস্থ করা হল।

বেউলফ-কে একটি মহাকাব্য মনে করা হয়। এই কাব্যের নায়ক নিজের শক্তিমত্তা প্রমাণ করার জন্য বহুদূর পর্যন্ত যাত্রা করেন এবং দৈত্য ও দানবীয় পশুর অতিলৌকিক ক্ষমতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। কাব্যটি শুরু হয়েছে মাঝখান থেকে। এটি প্রাচীন মহাকাব্যগুলির একটি লক্ষণ। যদিও বেউলফের আগমনে এই কাব্যের শুরু, তবু গ্রেন্ডেলের হানা তখন চলছিল। চরিত্রগুলির বিস্তারিত ইতিহাস, বংশলতিকা, পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্ক, ঋণ ও ঋণশোধ এবং কীর্তিকলাপের কথা এখানে ব্যাখ্যাত হয়েছে। যোদ্ধারা এখানে ‘কমিট্যাটাস’ নামে একধরনের ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। এই বন্ধন সকল বাক্য ও কাজকর্মের নৈতিক ভিত্তি।

প্রথম যুদ্ধ: গ্রেন্ডেল

বেউলফ মহাকাব্য শুরু হয়েছে রাজা হ্রথগারের কাহিনি দিয়ে। তিনি তার স্বজাতীয়দের জন্য হেওরট নামে এক বিশাল প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন। এই প্রাসাদে তিনি, তার স্ত্রী ওলেথথিউ ও তার যোদ্ধারা গান গেয়ে ও আনন্দ করে সময় কাটাতেন। এই আওয়াজে গ্রেন্ডেল নামে এক ট্রোল-আকৃতির দৈত্য বিরক্ত হল। সে ছিল বাইবেলের চরিত্র কেইনের বংশধর। সে প্রাসাদটিকে আক্রমণ করে হ্রথগারের ঘুমন্ত যোদ্ধাদের অনেককে হত্যা করে খেয়ে ফেলল। হ্রথগার ও তার অবশিষ্ট যোদ্ধারা গ্রেন্ডেলকে পরাজিত করতে না পেরে হতাশ হয়ে হেওরট ছেড়ে চলে গেলেন।

গেটল্যান্ডের তরুণ যোদ্ধা বেউলফ হ্রথগারের সমস্যার কথা শুনে তার নিজের রাজার অনুমতি নিয়ে হ্রথগারকে সাহায্য করতে এলেন।

বেউলফ ও তার লোকেরা রাতে হেওরটে রইলেন। বেউলফ নিজেকে গ্রেন্ডেলের সমকক্ষ মনে করতেন, তাই তিনি কোনোরকম অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করতে রাজি হলেন না। বেউলফ ঘুমের ভান করে গ্রেন্ডেলকে আকর্ষিত করল। গ্রেন্ডেল তার কাছে এলেই সে খপ করে তাকে ধরে বসল। দুজনের মধ্যে এমন যুদ্ধ হল যে মনে হচ্ছিল প্রাসাদটা ভেঙেই পড়বে। বেউলফের সঙ্গীরা তরবারি উঁচিয়ে তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এল। কিন্তু তাদের তরবারি গ্রেন্ডেলের শরীর খণ্ডিত করতেই পারল না। শেষে বেউলফ গ্রেন্ডেলের হাতটা কাঁধের কাছ থেকে ছিঁড়ে নিলেন। গ্রেন্ডেল জলায় নিজের ডেরার দিকে দৌড় দিল এবং আস্তে আস্তে মরে গেল।

দ্বিতীয় যুদ্ধ: গ্রেন্ডেলের মা

পরদিন রাতে গ্রেন্ডেলের পরাজয় উপলক্ষে উৎসব উদযাপিত হওয়ার পর হ্রথগার ও তার যোদ্ধারা হেওরটে ঘুমিয়ে পড়লেন। ছেলের শাস্তিতে ক্রুদ্ধ হয়ে গ্রেন্ডেলের মা সেই রাতে প্রাসাদে হানা দিল। গ্রেন্ডেলের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে সে হ্রথগারের সবচেয়ে বিশ্বস্ত যোদ্ধা ইসচেরকে হত্যা করল।

হ্রথগার, বেউলফ ও তাদের লোকজন একটি হ্রদে গ্রেন্ডেলের মায়ের আস্তানার সন্ধান পেল। বেউলফ যুদ্ধের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করল। আনফার্থ নামে এক যোদ্ধা বেউলফের সাফল্য সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে তাকে হ্রান্টিং নামে একটি তরবারি উপহার দিয়ে শুভেচ্ছা জানালেন। হ্রথগার তার মৃত্যু হলে কি হবে তা নিয়ে কয়েকটি নির্দেশ দিলেন। এর মধ্যে ছিল তার আত্মীয়দের ব্যবস্থা এবং বেউলফের এস্টেটের উত্তরাধিকার আনফার্থকে দান। এরপর বেউলফ হ্রদের জলে ঝাঁপ দিলেন। বেউলফ সহজেই গ্রেন্ডেলের মায়ের সন্ধান পেলেন। বেউলফের গায়ে শক্ত বর্ম থাকায় গ্রেন্ডেলের মা তার কোনো ক্ষতি করতে পারল না। সে বেউলফে টেনে নিয়ে গেল হ্রদের একেবারে তলায়। একটি গুহায় গ্রেন্ডেলের দেহটা রাখা ছিল। সেই সঙ্গে তার হত্যা করা দুজনের দেহও ছিল। গ্রেন্ডেলের মা ও বেউলফের মধ্যে ঘোরোতর যুদ্ধ শুরু হল।

প্রথম দিকে গ্রেন্ডেলের মায়েরই জয় হচ্ছিল। বেউলফ দেখলেন হ্রান্টিং দিয়ে শত্রুকে বধ করা যাচ্ছে না। তিনি রেগে গেলেন। আবারও বেউলফের বর্ম তাকে রক্ষা করল। গ্রেন্ডেলের মায়ের ধনসম্পদের মধ্যে থেকে বেউলফ একটি জাদু তরবারি টেনে নিলেন এবং সেটি দিয়ে তার মাথা কেটে ফেললেন। আস্তানার আরও গভীরে গিয়ে বেউলফ দেখলেন গ্রেন্ডেলের দেহে তখনও প্রাণ আছে। তিনি গ্রেন্ডেলেরও মাথা কেটে ফেললেন। গ্রেন্ডেলের বিষাক্ত রক্তের স্পর্শ লাগতেই জাদু তরবারিটি বরফের মতো গলে গেল। শুধু হাতলটি অবশিষ্ট রইল। বেউলফ সেই হাতল আর গ্রেন্ডেলের মাথা নিয়ে গুহা থেকে বেরিয়ে এসে হেওরটে ফিরে সেগুলি হ্রথগারকে উপহার দিলেন। হ্রদের উপরে যখন বেউলফ উঠলেন তখন সময় ‘নবম ঘণ্টা’ (বিকেল ৩টে প্রায়)। হেওরটে হ্রথগার বেউলফকে অনেক উপহার দিলেন। তার মধ্যে ছিল (সম্ভবত) তার বংশগত উত্তরাধিকার নিগলিং তরবারি। যে হাতলটি বেউলফ এনেছিলেন সেটি দেখে রাজা দীর্ঘ ভাষণ দেন। এটিকে কখনও কখনও ‘হ্রথগারের উপদেশ’ বলা হয়। এই ভাষণে তিনি বেউলফকে নিজের গর্ব সম্পর্কে সাবধানী হতে বলেন এবং তার থেনদের পুরস্কার দিতে বলেন।

তৃতীয় যুদ্ধ: ড্রাগন

বেউলফ দেশে ফিরে এল এবং পরবর্তীকালে সে স্বজাতির রাজা হল। গ্রেন্ডেল ও তার মাকে হত্যা করার ৫০ বছর পরে একদিন এক ক্রীতদাস আর্নানেসে এক অনামা ড্রাগনের আস্তানা থেকে একতা সোনার পাত্র চুরি করে। ড্রাগন যখন দেখল যে তার পাত্র চুরি গেছে, সে রেগে যুদ্ধ করতে বের হল। বেউলফ তার লোকজনকে বললেন যে তিনি একাই ড্রাগনটির সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারবেন। তারা যেন টিলায় তার জন্য অপেক্ষা করে। বেউলফ ড্রাগনটির সঙ্গে যুদ্ধ করতে নামলেন। কিন্তু দেখলেন ড্রাগন তার থেকে অনেক শক্তিশালী। এই দেখে বেউলফের লোকজন প্রাণভয়ে ভীত হয়ে বনের মধ্যে পালিয়ে গেল। কিন্তু সিগলাফ নামে তাদের একজন বেউলফের সমস্যা দেখে তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এল। দুজনে মিলে ড্রাগনটিকে হত্যা করলেন বটে। কিন্তু যুদ্ধে গুরুতর আহত হয়ে বেউলফ মারা গেলেন। বেউলফের মৃত্যুর পর, গেটল্যান্ডে একটি বিশাল চিতায় তাকে দাহ করা হল। তার লোকজনেরা তার জন্য শোকপালন করল। তারপর সমুদ্র থেকে দৃষ্ট একটি টিলায় বেউলফের দেহাবশেষের উপর তার সমাধিসৌধ নির্মিত হল। (বেউলফ, চরণ ২৭১২-৩১৮২)।

রচয়িতা ও রচনাকাল

ইংল্যান্ডে রচিত হলেও বেউলফ মহাকাব্যের প্রেক্ষাপট স্ক্যান্ডিনেভিয়া। এই মহাকাব্যের রচনাকাল গবেষকরা যথেষ্ট আলোচনা করেছেন। কাব্যটি খ্রিস্টীয় ৮ম থেকে ১১শ শতাব্দীর গোড়ার মাঝামাঝি কোনো সময়ে রচিত। সাম্প্রতিক গবেষকরা এই বিষয়ে যে মত প্রকাশ করেছেন, একজন পর্যবেক্ষক তাকে বলেছেন, "বেউলফ-এর প্রাচীনত্বের একটি সুসঙ্গত ও বাধ্য করার ঘটনা।" যদিও কাব্যটি এটির প্রতিলিপির সমসাময়িক না ৮ম শতাব্দীতে প্রথম রচিত তা নিয়ে দ্বিমত আছে। কারও কারও মতে কাব্যটি সম্ভবত তারও আগে রচিত (সম্ভবত বিয়ারস সন টেলস গল্পমালার একটি হিসেবে) এবং বহু বছর ধরে মুখে মুখে প্রচলিত ছিল। পরে তা লিপিবদ্ধ হয়। অ্যালফ্রেড লর্ড দৃঢ়ভাবে মনে করেন, পাণ্ডুলিপিটি কোনো অভিনয়ের প্রতিলিপি। যদিও এটি একাধিক সিটিং-এর পর লিপিবদ্ধ। জে.আর. আর. টলকিন মতে, এই মহাকাব্য আংলো-স্যাক্সন প্যাগান ধর্মের একটি বিশ্বস্ত স্মৃতি। ৭০০ খ্রিষ্টাব্দে ইংল্যান্ডের খ্রিস্টীয়করণের কয়েক প্রজন্ম পরে এটি রচিত হয়। টলকেইনও কাব্যটিকে ৮ম শতাব্দীতে রচিত বলে মনে করেন। তার মত সমর্থন করেন টম শিপি ও অন্যান্যরা।

কোনো কোনো গবেষকের মতে ভাষাতাত্ত্বিক, প্রত্নতাত্ত্বিক ও অনোম্যাস্টিক প্রমাণ থেকে অনুমিত হয় এটি ৮ম শতাব্দীর প্রথমার্ধ্বে রচিত। বিশেষ করে কাব্যটির ব্যুৎপত্তি গত দৈর্ঘ্যের পার্থক্য (কালুজার বিধি) থেকে এটিকে ৮ম শতাব্দীর প্রথমার্ধ্বের বলে অনুমান করা হয়। যদিও এই বিষয়ে কিছু মতান্তর আছে।

পাদটীকা

বহিঃসংযোগ

টেমপ্লেট:Beowulf টেমপ্লেট:Old English poetry টেমপ্লেট:Anglo-SaxonPaganism

Tags:

বেউলফ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটবেউলফ সারসংক্ষেপবেউলফ রচয়িতা ও রচনাকালবেউলফ পাদটীকাবেউলফ বহিঃসংযোগবেউলফঅ্যাংলো-স্যাক্সনইংল্যান্ডপ্রাচীন ইংরেজিপ্রাচীন ইংরেজি সাহিত্যসাহায্য:আধ্বব/ইংরেজি

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

বাংলা বাগধারার তালিকাশাহরুখ খানবাঙালি জাতিহিসাববিজ্ঞানটুইটারমাওলানামমতা বন্দ্যোপাধ্যায়বেল (ফল)বিশেষ শাখা (বাংলাদেশ পুলিশ)মুমতাজ মহলবাংলাদেশের জাতীয় পতাকাচট্টগ্রামবাংলাদেশের ইউনিয়নসুকান্ত ভট্টাচার্যভগবদ্গীতাসার্বিয়াভাইরাসবিজ্ঞানবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাফাতিমাবাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসচট্টগ্রাম জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থানস্বরধ্বনিদাজ্জালনিজামিয়াকালেমাবৃত্তচট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রচৈতন্যচরিতামৃতইসলামকামরুল হাসানদীপু মনিশ্রীকৃষ্ণকীর্তনলালনবাংলাদেশ পুলিশআমার দেখা নয়াচীনকিশোর কুমারআশারায়ে মুবাশশারাঅন্ধকূপ হত্যাঅনাভেদী যৌনক্রিয়ালোহিত রক্তকণিকাথ্যালাসেমিয়াআসামনিমঅপারেশন সার্চলাইটনকশীকাঁথা এক্সপ্রেসঅ্যান্টিবায়োটিক তালিকাদ্বিতীয় মুরাদদৈনিক ইত্তেফাকবিভিন্ন ধর্ম ও বিশ্বাসের তালিকাতক্ষকবিটিএসশিক্ষাসাঁওতালআহসান মঞ্জিলকৃষ্ণচূড়াসূরা ফাতিহাপেপসিবিশেষ্যএইচআইভি/এইডসবীর্যঅরিজিৎ সিংরংপুরমহাভারতক্লিওপেট্রালিঙ্গ উত্থান ত্রুটিবাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবযক্ষ্মাগজলনরসিংদী জেলাযুক্তফ্রন্টবাংলাদেশী টাকাসিরাজগঞ্জ জেলাবাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়🡆 More