বিদিত লাল দাস

বিদিত লাল দাস (১৫ জুন, ১৯৩৬ – ৮ অক্টোবর, ২০১২) ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক, বিশিষ্ট লোকসংগীতশিল্পী, সুরকার, লোকগবেষক এবং সঙ্গীত পরিচালক তথা সংগঠক সিলেটে জন্ম নেয়া এই লোকসংগীতের মুকুটহীন সম্রাট, সিলেটের সুরমা নদীকে খুব বেশি ভালোবাসতেন। সুরমার তরঙ্গের মতোই যেনো দূলায়িত তাঁর সুরের ভূবন। প্রিয় এই নদীর বুকে ভেসে ভেসে অসংখ্য গান তিনি সুর করেছেন। বিদিত লাল দাস বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দলের সদস্য হয়ে চীন, সুইডেন, নরওয়ে, হংকং, ডেনমার্ক এবং ইংল্যান্ড সফর করেন। বিদিত লাল দাস ও তার দল নামক সেই দলটি সত্তরের দশকের এক জনপ্রিয় দল ছিলো। সেই দলে ছিলেন আকরামুল ইসলাম, সুবীর নন্দী, রামকানাই দাশ, হিমাংশু বিশ্বাস, হিমাংশু গোস্বামী, দুলাল ভৌমিক প্রমুখ অনেকেই। বিদিত লাল দাসই ছিলেন সেই দলের দলনেতা। বাংলা লোকগানের কিংবদন্তী এই সুরকার হাছন রাজা, রাধারমণ দত্ত, শীতালং ফকির ও গিয়াস উদ্দিনসহ অনেক গীতিকবিদের গানে সুর করেছেন। তার সুরকৃত উল্লেখযোগ্য গানসমূহ হল মরিলে কান্দিসনে আমার দায়, সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী, প্রান কান্দে মন কান্দে রে, কারে দেখাবো মনের দুঃখ গো , বিনোদিনী গো তর বৃন্দাবন কারে দিয়ে যাবি, ও আমি কেমন করে পত্র লিখি।

বিদিত লাল দাস
বিদিত লাল দাস
জন্ম(১৯৩৬-০৬-১৫)১৫ জুন ১৯৩৬
মৃত্যু৮ অক্টোবর ২০১২(2012-10-08) (বয়স ৭৬)
স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা, বাংলাদেশ
জাতীয়তাবাংলাদেশী
শিক্ষাইংরেজি সাহিত্য
পেশাস্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী, লোকসংগীতশিল্পী, গায়ক, সুরকার ও সূর সংগ্রাহক তথা সুর গবেষক
দাম্পত্য সঙ্গীকনক রানী দাস (বি. ১৯৬৮)
সন্তানবিশ্বজিৎ লাল দাস নীলম (৪ বছর বয়সেই মৃত্যু, সন ১৯৮৪), বিশ্বদীপ লাল দাস বাসু
পিতা-মাতাবিনোদ লাল দাস (পিতা)
প্রভা রানী দাস (মাতা)

প্রাথমিক জীবন

বিদিত লাল দাস ১৯৩৬ সালের ১৫ জুন সিলেটের - উ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। এই পরিবারটির সিলেট আগমণ তথা বাংলাদেশে আজ থেকে আড়াইশো বছর পূর্বে বৃটিশ আমে পূর্বপুরুষেরা ভারতের কাশ্মীর থেকে আসেন মুর্শিদাবাদে। এরপর উনার সিলেটে আসেন অষ্টাদশ শতাব্দীতে, পেশায় বনিক ছিলেন। সর্বপ্রথম বলরাম বাবু আসেন কাশ্মীর থেকে মুর্শিদাবাদে। মুর্শিদাবাদ থেকে উনার ছেলে বুনচাঁদ বাবু নবাব সিরাজদৌল্লার আমলে সিলেটের ছাতকে আসেন চুনাপাথরের ব্যবসা। যা পরবর্তীতে বানছারাম বাবুর ছেলে ব্রজগোবিন্দবাবু সিলেটে আসেন অষ্টাদশ শতাব্দীতে। এরপর উনারা এই সিলেটের জমিদারি কিনে শেখঘাটের বাড়ি থেকে শুরু করে লালা নিধীর পাছ, মির্জাজাঙ্গাল, বন্দরবাজার, মাছুদিঘীর পাড়, লালবাজার, তালতলা থেকে শুরু করে মহাপরি চালিবন্দর দিকেও বিস্তৃত ছিল। এছাড়াও বিশ্বনাথ, ব্রহ্মময়ী বাজার এলাকায় জমিদারি ছিল। ব্রজগোবিন্দবাবুর ছেলে বঙ্কবাবু ছিলেন প্রসিদ্ধ জমিদার । তিনিই এই জমিদারি বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে দেন। বঙ্কবাবুর কনিষ্ঠ পুত্র অবিভক্ত বাংলার প্রাজ্ঞ বিদগ্ধ রাজনীতিবিদ শ্রী বিনোদ লাল দাস মহাশয়ের এর দ্বিতীয় পুত্র হচ্ছেন এই বিদিত লাল দাস।

সিলেটকে একসময় পরিচয় পাইয়ে দেয়ার জন্যে অনেকটা প্রবাদ বাক্যের মতো একটি বাক্য বহুল প্রচলিত ছিলো। আর সেটি হলো, আলী আমজাদের ঘড়ি, বঙ্ক বাবুর দাড়ি আর চাঁদনী ঘাটের সিঁড়ি।

বিনোদ লাল দাস ছিলেন উদাহরণ দেয়া সেই লম্বা দাড়িওয়ালা উঁচু গড়নের ফিটফাট জমিদার বঙ্ক বাবুর চতুর্থ সন্তান। বঙ্ক বাবুর ছিলেন ৪ সন্তান। মুর্শিদাবাদ থেকে ব্রিটিশ আমলে আসা এতদাঞ্চলের বিশিষ্ট দু এক পরিবারের মধ্যে উঁনাদের পরিবার ছিলো অগ্রগণ্য। তা সে ধনেই হোক কিংবা মানে অথবা গুণে। রাজনীতি প্রবর বঙ্ক বাবু'র চার সন্তানের সবাই ছিলেন তৎকালীন রাজনীতির সাথে ওতোপ্রোতভাবে যুক্ত। প্রথম সারির একজন প্রথিতযশা রাজনীতিবিদ ছিলেন বিনোদ লাল দাস। তিনি আসাম কংগ্রেসের রাজ্যসভারও মেম্বার ছিলেন। MLC পদে তিনি নির্বাচিত হন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর বড় দাদা সরস বোসকে পরাজিত করে। রাজনীতির সাথে এই পরিবারটি এতোটাই সংশ্লিষ্ট ছিলেন যে, ব্রিটিশ আমলে দেশ ভাগের ঠিক পূর্বমুহুর্তে ভারতের তৎকালীন কংগ্রেস নেতা জহর লাল নেহেরু শেখঘাটস্থ লাল ব্রাদার্স বাড়িতে রাজনৈতিক সফরে রাত্রিযাপন করেন, এবং তারই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীকালে বিনোদ লাল দাস আসামের কংগ্রেস পার্টিতে যোগ দেন ও নমিনেশন পান।

বিদূষী প্রভা রানী দাস ছিলেন বিনোদ লাল দাস এর সহধর্মিণী। জমিদারী দেখভালের পাশাপাশি সাংসারিক বিষয়াদিতেও ছিলো তাঁর তীক্ষ্ণ নজর। উল্লেখ্য বিনোদ লাল দাস খুবই দক্ষ একজন পাখোয়াজ শিল্পী ছিলেন। আর প্রভা রানী দাস ছিলেন অন্যতম একজন সেতার শিল্পী।

এই পরিবারেই ১৯৩৮খ্রীস্টাব্দের ১৫ ই জুন জন্ম গ্রহণ করেন যমজ দু পুত্রসন্তান। হেয়ালি করেই বাবা মা, আদুরে নাম রাখেন 'আলু' এবং 'পটল'। উভয়ের জন্মের সময়গত পার্থক্য ছিলো মাত্র মিনিট দু'তিন। সিলেটের লাল ব্রাদার্স বাড়িতে মুখেভাতের সময় বড় সন্তানের নাম রাখা হয় 'বিজিত লাল দাস আলু' এবং ছোট সন্তানের নাম রাখা হয় 'বিদিত লাল দাস পটল'। জমজ দু'পুত্র সন্তানের পূর্বে এ ঘর আলো করে আসেন আরো তিন কন্যা। যাঁদের বিবাহও পরবর্তীতে সিলেট অঞ্চলেরই অন্য কয়েক জমিদার পরিবারে সাথে সম্পন্ন হয়।

পরবর্তী তে তাঁদের ঘর আবার আলোকিত হয় যখন সবার কনিষ্ট পুত্র 'বিনিত লাল দাস বুলু' এর জন্ম হয়। চাঁদের হাট বসে লাল ব্রাদার্স বাড়িতে। কে জানতো সেই ছোট্ট 'পটল' ই একদিন ভুবনজয়ী হয়ে উঠবেন?

বঙ্কবাবুর জমিদারী সিলেটের অনেকখানিতেই বিস্তৃত ছিলো। বিনোদ লাল দাস সেই জমিদারী বৃদ্ধি করে ভারতের শিলং ও করিমগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত করেন। অসুস্থ থাকাবস্থায়, শ্রী বিনোদ লাল দাস তাঁর স্বোপার্জিত সম্পত্তি উঁনার তিন ছেলেকে অত্যন্ত সুষমভাবে বন্টন করে দেন। ফলে ভাইয়েদের মধ্যে পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে কোনরূপ মনোমালিন্য বা বিরোধিতা করার কোন সুযোগই ছিলো না।

বড় ছেলে 'বিজিত লাল দাস আলু'কে শিলং এর সমুদয় সম্পত্তি প্রদান করেন, যার মধ্যে বিশাল "লাল ভিলা" নামক বাড়ি ছিলো।

ছোট ছেলে 'বিনিত লাল দাস বুলু'কে দেন, করিমগঞ্জ এর সম্পত্তি, সেখানে "চিত্রবানী" নামক সিনেমাহল ছিলো।

আর সিলেটের সমুদয় সম্পত্তি পান 'বিদিত লাল দাস'। যার মধ্যে সিলেটের অত্যন্ত সুপরিচিত এবং বিখ্যাত দুটি সিনেমা হল "লালকুঠি" এবং "রংমহল" ছাড়াও বেশ কিছু জায়গাজমি ছিলো।

ছোটবেলা 'আলু' আর 'পটল' দু'ভাই খুব ডানপিটে ছিলেন, দুরন্তপনা ছিলো দু'ভাইয়ের নিত্যসাথী। পড়াশুনার জন্যে দু'ভাইকে একসময় ভর্তি করিয়ে দেয়া হলো সিলেটের তৎকালীন সময়ের নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ' দি এইডেড হাই স্কুলে'।

দু'ভাইয়ের চেহারার নূন্যতম কোন পার্থক্য-আপন পর কারো পক্ষেই বুঝা ছিলো ভীষণ দু:সাধ্য। একই চেহারা, একই হাসি, একই রকম তাকানো, একইভাবে কথাবার্তা বলার ধরণ এবং চলাফেরার স্টাইল এতোটাই অবিকল ছিলো যে, স্কুলের মাস্টারমশাইয়েরা রীতিমত ভীত থাকতেন যে, কে দোষ করছে আর কাকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে! তা নিয়ে।

স্কুলে দুষ্টুমি করেছিলেন একবার দু'ভাই তখন 'আলু' ও 'পটল' দুই ভাইকেই দাঁড় করালেন মাষ্টারমশাই।

"পটল কে?" মাস্টারমশাই জিজ্ঞেস করতেই পটল, 'আলুকে' দেখিয়ে দিলেন। এদিকে 'আলু' ও ' পটলের দিকে ইংগিত করে বললেন, ' সেই ই 'পটল'। তখন মাষ্টার মশাই পড়লেন মহাবিপাকে। কাকে শাস্তি দেবেন তিনি? অগত্যা মাস্টারমশাই উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের জন্যে ডেকে আনলেন একই স্কুলে পড়ুয়া উঁনাদের আরেক জ্যাঠাতো ভাই 'মানু বাবু' কে।

মানুবাবু আসতেই পটল বাবু পিছন থেকে মানুবাবুকে চোখ টিপা দিলেন। এরপর মাষ্টার মশাই এর প্রশ্ন শুনে মানুবাবুও সঠিকভাবে বললেন না যে, 'কে পটল?' শেষমেশ 'আলু' ও 'পটল' দুই ভাইকেই বেত এর আঘাত সহ্য করতে হলো। এই ছিলো তাঁদের ছেলেবেলা। এমন আরো অনেক অনেক মজার কাহিনী রয়েছে দুই ভাইয়ের।

তবে এই দুরন্তপনার দিন শেষ হয়ে গেলো বাবা বিনোদ লাল দাস যখন দুরন্তপনার জন্যে দু'ভাইকে (আলু, পটল) শিলং এর বোর্ডিং স্কুলে পাঠানোর দৃঢ়সিদ্ধান্ত নিলেন।

শিলং এর সুবিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান 'সেইন্ট এডমান্ড'স কলেজে' পাঠানো হলো দুই ভাইকে ( St. Edmund's College, often abbreviated as SEC, is an educational institute of the Congregation of Christian Brothers located in Shillong, Meghalaya, India. It is the oldest college in Meghalaya and second oldest in Northeast India behind Cotton College, Guwahati)

শিলং পড়তে গিয়েই ধীরে ধীরে দু'ভাইয়ের মধ্যে ধীরতা স্থিরতা আসতে শুরু করলো। পড়াশুনার ফাঁকে এক ভাই ঝুঁকে গেলেন ব্যবসা বাণিজ্যের দিকে আরেক ভাই সংগীতের দিকে। আর যাবেনই না কেনো, ব্যবসা আর গান উভয়টাই যে বংশপরম্পরায় তাঁদের সম্পত্তি।

শিলং এ পড়াকালীন সময়ে বিজিত লাল দাস শিলং এর বাঙালি সুবিখ্যাত শিল্পী শ্রী পরেশ চক্রবর্তীর কাছেই প্রথম গানের তালিম নিতে শুরু করেন।

তবে তাঁদের শিলংয়ে থাকা বেশিদিন হয়ে উঠে নি। বাবা বিনোদ লাল দাসের রেক্টাম ক্যান্সার ধরা পড়ায় উভয়েই পুনরায় স্থায়ীভাবে সিলেটে চলে আসেন।

সিলেট এসে তিঁনি ওস্তাদ ফুল মোহাম্মদের কাছে উচ্চাঙ্গসংগীতের তালিম নিতে শুরু করেন। ওস্তাদ ফুল মোহাম্মদ খাঁন তখন সিলেটের সুপ্রসিদ্ধ শাস্ত্রীয় সংগীত শিল্পী একাধারে সেতার বাজানোতে সিদ্ধহস্ত। রাগ প্রধান গান বিশেষ করে ঠুমরিতে বাগা বাগা ওস্তাদের সমতুল্য উঁনার নিবেদন। নিরংকারী এ ওস্তাদ অনেকটাই নিভৃতচারী ছিলেন বসবাস করতেন, শেখঘাটের 'লাল ব্রাদার্স' বাড়ির সামনেই খুলিয়াপাড়ায়।

এরপর বিদিত লাল দাস বহু দিন তৎকালীন সময়ের সিলেটের আরেক বিখ্যাত সংগীত শিল্পী 'সুরসাগর প্রাণেশ দাশ' এর কাছে গানে তালিম নিতে থাকেন। ঝাঁকড়া চুলের অধিকারী 'প্রাণেশ দাশ' তখন এতদাঞ্চলের এক প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ। দাড়িয়াপাড়াস্থ নিম্বার্ক আশ্রমের পেছনেই ছিলো এই সংগীতজ্ঞের নিজ বাসভবন।

 

কর্মজীবন

বিদিত লাল ১৯৬০ এর দশকের একজন অন্যতম বেতার গায়ক। বনেদী পরিবারের এক সন্তান বিদিত লাল দাস। জমিদারীর জমিজামা দেখে হেসে খেলেই যাঁর জীবন কাটতো অনাবিল স্বাচ্ছন্দ্যে। সোনার চামচ মুখে নিয়ে যাঁর জন্ম তাকে কি আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়? কিন্তু বিদিত লাল দাস জমিদারীকে তুচ্ছজ্ঞান করে এক গানবাজনার প্রতি এক উদাসী সত্ত্বায় লীন হয়েছিলেন ছোট বেলা থেকে। সিলেট শেখঘাটস্থ 'লালব্রাদার্স' বাড়িটি সেই আমল থেকে আজো এক ঐত্যিহিক বাড়ি হিসেবে এতদাঞ্চলে সুবিদিত। বিদিত লাল দাস এই পরিবারেরই এক যোগ্য সন্তান। পারিবারিকভাবে গানের চর্চা ছিলো। যেহেতু বনেদী পরিবার, সেহেতু গানবাজনা রক্তের সাথে মিশে যাওয়া এক প্রকার নেশাই ছিলো অনেকের কাছে সে আমলে। সৌখিনতাই হোক আর বেঁচে থাকার রসদই হোক, বিদিত লাল দাসও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। গানের প্রতি তীব্র আসক্তি তাঁকে গান বাজনার প্রতি বিশেষ দূর্বল করে তোলে। সুরের মানুষ হিসেবে তাঁর ভূবনজোড়া পরিচিতি থাকলেও ডাক নাম,‘পটল বাবু’ নামে সিলেটে সবাই চেনে। তিনি যখন ৯ বছরের শিশু, তখন সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে ভাগ হয় ভারতবর্ষ। কিন্তু দাস পরিবারের সদস্যরা সাম্প্রদায়িকতাকে উপেক্ষা করে থেকে গেলেন জন্মমাটিতে। দেশকে ভালোবাসার অমোঘ মন্ত্রে তখনই দীক্ষিত হন বিদিত লাল দাস। বেড়ে উঠার সময়ে তিনি প্রত্যক্ষ করলেন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, সাংস্কৃতিক বৈরীতা; অনুভব করলেন পরাধীনতার বৃত্তে বন্দি থাকার যাতনা। সেই পরিস্থিতিই তাঁর শিল্প সত্বাকে জাগ্রত করে। অন্ধকার দূর করার মাধ্যম হিসেবে তিনি বেছে নেন সঙ্গিতকে। ব্রাতী হন নিজস্ব সংস্কৃতিকে বিশ্ব পরিমন্ডলে পরিচিত করার। এগিয়ে যেতে থাকেন আপন প্রত্যয়ে।মাত্র ৭ বছর বয়সে সংগীতকে জীবনসাথী করে নিয়েছিলেন বিদিত লাল দাস। সেই থেকে সংগীত ও সুরসাগরে ভেসে ভেড়ানো। হাসনরাজা, রাধারমন, গিয়াস উদ্দিনসহ অনেক গীতিকারের গান তিনি সুর করেছেন। মরমী কবিদের গান ছাড়াও তিনি সিলেটের বিলুপ্তপ্রায় লোকসংগীত সংগ্রহ ও প্রচারে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেন। জারী, সারী, ভাটিয়ালী ও ধামাইল গান সংগ্রহে নিয়োজিত ছিলেন আজন্ম। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ও তিনি ছিলেন সোচ্চার। সেই সময়কার জনপ্রিয় শিল্পীদের নিয়ে তিনি ভারতে একটি সংগীত দল গঠন করেন। এই দল বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অর্থ উপর্জন করে তা মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সাহার্য্যার্তে ব্যয় করে। ১৯৪৬ সালে আসামে চলে যান। সেখানে তার শিক্ষা শুরু হয়।তার সংগীত শেখার গুরু তাঁর ওস্তাদ ফুল মোহাম্মদ। বিখ্যাত শিলং সেইন্ট অ্যাডভান্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। ১৯৫৯ সালে বাবার অসুস্থতার খবর শুনে সিলেট ফিরে আসেন। তারপর আর শিলংয়ে যাওয়া হয়নি। বাবা বিনোদাল মাসের রেন্টাম ক্যান্সার ধরা পড়ায় তিনি সিলেটে চলে আসেন। সঙ্গে উনার ওখানে ফুল মোহাম্মদ খানও আসেন। দীর্ঘ তিনি ফুল মোহাম্মদ খানের কাছে উচ্চাঙ্গসংগীতের তালিম নিয়েছেন। শেখঘাটের লাল ব্রাদার্স ঠিক সামনেই খুলিয়াপাড়ায় থাকতেন ওস্তাদ ফুল মোহাম্মদ খান। ১৯৫৬ সালে যখন বিদিত লাল দাস মুসলিম সাহিত্য সংসদে যোগ দেন তখন মরহুম নুরুল হক উনাকে একটি খাতা বের করে দিলেন। ১০-১২টি গান, হাতে লেখা। এই গান সুর করে তিনি আমাদের দেশের বিশিষ্ট শিল্পী আরতি ধরকে শিখিয়ে দিতেন। আর এগুলো ঢাকাতে বিভিন্ন প্রোগ্রামে পরিবেশন করতেন। তখনও বিদিত লাল দাগ রেডিওতে গান করার সুযোগ পাননি। ১৯৬১ সনে রেডিওর সাবেক পরিচালক মনোয়ার আলম উনাকে ঢাকাতে লোকসংগীত বিষয়ে এক প্রতিযোগিতায় নিয়ে যান, সেখানে ওস্তাদ আয়াত আলী , ওস্তাদ আবুল কালাম আজাদ বিচারক ছিলেন। সেই অনুষ্ঠানে উনার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেছিলেন রথিন্দ্রনাথ রায়ের বাবা হরলাল রায়, এছাড়াও দিনাজপুরের আফতাবউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। এ প্রতিযোগিতায় তিনি প্রথম হয়ে যান। তখন বিচারক উনাকে পরের দিন রেডিওতে যোগদানের ফরম আনতে বললেন। পরেরদিন সকালে তিনি ঢাকা রেডিওতে গিয়ে করেন। এভাবেই ১৯৬১ তে উনার ঢাকা রেডিওতে যোগ দেওয়া প্রারম্ভে রেডিওতে হাসন রাজার গান সংগৃহীত হিসেবে গাওয়া হতো। তিনি ও আরতী ধরই হাসন রাজার গানগুলো রেডিওতে গাওয়া শুরু করেন। ১৯৭১ সালের সেই রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি চলে যান আসামে। সেখানে তিনি, সুজেয় শ্যাম, আরতী ধর, হেমচন্দ্র ভট্টাচার্যসহ অনেকে মিলে শিলচরে বাংলাদেশ গণমুক্তি শিল্পী গোষ্ঠী' নামে একটা সংগঠনে যুক্ত হন। তারা মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে সীমান্তে নির্মিত প্রশিক্ষণ শিবিরে দেশপ্রেমের গান শুনিয়ে উদ্বুদ্ধ করতেন। ভারত জুড়ে গান গেয়ে প্রাপ্ত সব অর্থ অসুস্থ ও আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য নিতেন তারা।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে লোকসংগীতের প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে গঠন করা বিদিতলাল দাস ‘বিদিতলাল দাস ও সঙ্গীরা’ নামের সংগীত দলটি সেই সময় বাংলাদেশ ও ভারতে বিভিন্ন সময় সংগীত পরিবেশন করে সংগীতপিপাসুদের অকুণ্ঠ প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হয়। তাঁর দলের অংশগ্রহন করা উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠানগুলো হচ্ছে-প্রথম সার্ক সম্মেলনে সঙ্গীত পরিবেশন, কলকাতার লোকভারতী আয়োজিত অনুষ্ঠান (১৯৮৮), কাছাড়ে অনুষ্ঠিত নিখিল বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনে সংগীত পরিবেশন (১৯৮৯) প্রভৃতি। এই দলের সদস্যদের মধ্যে অন্যতমরা হচ্ছেন, সুবীর নন্দী, হিমাংশু গোস্বামী, একে আনাম, আরতী ধর, হিমাংশু বিশ্বাস, ফজল মাহমুদ, দুলাল ভৌমিক, জামালউদ্দিন হাসান বান্না। গানের দল বিদিত লাল ও তার দল গঠন করেন। তার সেই দলে ছিলেন সুবীর নন্দী, রাসবিহারী চক্রবর্তী, রামকানাই দাশ, আকরামুল ইসলাম, হিমাংশু গোস্বামী, দুলাল ভৌমিক, রাখাল চক্রবর্তী, একে আনাম, জামালউদ্দিন হাসান বান্না, হিমাংশু বিশ্বাস, সুবল দত্ত প্রমুখ অনেকেই। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার দলকে বঙ্গভবনে সেখানে তার দলের গান শুনে তিনি অভিভূত হয়ে পড়েন। তখন বিদিত লাল দাস "আমি কেমন করে পত্র লিখি রে" এই গানটি যখন গাইছিলেন, তখন মঞ্চে উঠে দর্শকের সারিতে বসে থাকা পল্লীকবি জসিম উদ্দিন, তিনি বিদিত লাল দাসের গানের কন্ঠে শাশ্বত সুন্দর রূপ খুঁজে পান এবং নিজের গলার ফুলের মালা খুলে তাঁর গলায় পরিয়ে দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরেন।

রাণী এলিজাবেথ’র স্বামী এডিনবার্ক ডিউকের বাংলাদেশ আগমন উপলক্ষেও তিনি এবং তাঁর দল সংগীত পরিবেশন করেন। বিদিতলাল প্রসঙ্গে সেই দলের অন্যতম এক সদস্য দেশনন্দিত কণ্ঠশিল্পী সুবির নন্দীর ভাষ্য –

‘মরমি সাধক কবিদের গানে সুরারোপ করে এবং অন্য সুরকারের গান নিজে গেয়ে তিনি যেমন বাংলাদেশের সংগীত আকাশে জনপ্রিয় হয়েছেন ঠিক তেমনি অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীকে নিজ হাতে শিখিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন যারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত। আমাকেও তিনি নিজ হাতে লোকগীতির কবিও সমও টেকনিক এবং উপস্থাপনা শিখিয়েছেন। তাঁর কাছে এ বিষয়ে আমি চিরজীবন ঋণী। লোকগানে তিনিই আমার সংগীতগুরু।’৪

বিদিত লাল দাস বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দলের সদস্য হয়ে চীন, সুইডেন, নরওয়ে, হংকং, ডেনমার্ক এবং ইংল্যান্ড সফর করেন। একজন সংগীত শিল্পী হিসেবে যেভাবে মঞ্চ কাঁপিয়েছেন ঠিক সেভাবেই তিনি শত শত গানে সুর করে সাধক কবিদের সৃষ্টিকে পড়িয়েছেন অমরত্বের তিলক। তাঁর সুরা করা গানগুলো সব বয়সের মানুষের কাছে সমান জনপ্রিয়। তাঁর সুর করা অসংখ্য জনপ্রিয় গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৬ টি গানের প্রথম পংক্তি এখানে উল্লেখ করা হলো-

১. সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী ২. মরিলে কান্দিস না আমার দায় রে যাদুধন ৩. সিলেট প্রথম আজান ধ্বনি বাবায় দিয়াছে ৪. কারে দেখাবো মনের দুঃখ গো ৫. বিনোদিনী গো তোর বৃন্দাবন কারে দিয়ে যাবি ৬. আমি কেমন করে পত্র লিখিরে বন্ধু ৭. প্রাণ কান্দে মন কান্দেরে ৮. ভ্রমর কইয়ো গিয়া ৯. প্রেমের মর জলে ডোবেনা ১০. হাসন রাজা বলে ও আল্লা ১১. আমি যাইমু গো যাইমু আল্লারি সঙ্গে ১২. সোনা দিদি ১৩. মরণ কথা স্মরণ হইলো না তোর ১৪. তুমি রহমতের নদীয়া ১৫. প্রেমের মর জলে ডুবে না ১৬. শেষ বিয়ার সানাই ইত্যাদি ছাড়াও কিছু নবীন গীতিকারদের গানও তিনি সুর করেছেন এবং তাঁর ছাত্রছাত্রীদের শিখিয়ে গেছেন। ওবায়দুল মুন্সী নামে পাইকাপন, দরগাপাশা,শান্তিগঞ্জ, সুনামগঞ্জের এক তরুণ গীতিকারের অনেকগুলো গান সুর করেছেন এবং সেগুলো সংগ্রহে রেখেছিলেন ড. মৃদুল কান্তি চক্রবর্তীকে দিয়ে স্বরলিপি সহকারে আরেকটি গানের বই বের করার জন্য। ওবায়দুল মুন্সীর লেখা যেসব গান তিনি সুর করেছিলেন- 'বাউল দেশের মানুষ আমি', 'এই দেশ এই মাটি', তোমরা দেখরে আইয়া দেখরে চাইয়া', নীলাকাশ চাঁদেরে হারায়ে কাঁদে', 'আঁধার মনের ভরসা তুমি', 'আল্লাহ তুমি মেহেরবান', ভাইরে সুবল কইও রাধারে', পঞ্চমির এই পূণ্য প্রভাতে', ইত্যাদি।

বিদিত লাল দাসের সুর করা কবি গিয়াস উদ্দিনের লেখা ‘মরিলে কান্দিস না আমার দায়’ গানটি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কথা সাহিত্যিক প্রয়াত হুমায়ূন আহমদের বদৌলতে আকাশছোয়া জনপ্রিয়তা অর্জন করে। হুমায়ূন আহমেদ অসম্ভব ভালোবাসতেন গানটিকে। জীবদ্দশায় গানটি প্রসঙ্গে হুমায়ূন আহমদ বলেছিলেন, ‘সময় আসবে। আমি মারা যাব। আমার পরিবারের সবাইকে বলে রেখেছি, আমি মারা যাওয়ার পরপরই কোরান শরীফ, সূরা ইউনুছের আগেও যেন বাজানো হয় ‘মরিলে কান্দিস না আমার দায়…’ গানটি।’

বিদিত লাল দাস বেশ কয়েকটি নাটক ও নৃত্যনাট্যের পরিচালনা করেছেন। তন্মধ্যে ‘সিরাজ-উদ-দৌলা’, দিপান্তর’,‘তাপসী’, ‘প্রদীপ শিখা’, ‘বিসর্জন’, ‘সুরমার বাঁকে বাঁকে’ উল্লেখযোগ্য। চলচ্চিত্রেরও সংগীত পরিচালনা করেছেন। তিনি ‘সোনার কাজল’ ছবির পরিচালক এবং ‘হাসন রাজা’ চলচ্চিত্রের সংগীত উপদেষ্টা ছিলেন। চলচ্চিত্র শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতায়ও নিবেদিত ছিলেন বিদিত লাল দাস। তাদের পারিবারিকভাবে প্রতিষ্ঠিত লালকুঠি ও রংমহল সিনেমা হল দুটি সিলেটের প্রথমদিককার প্রেক্ষাগৃহ, বিদিত লাল দাসই পারিবারিকভাবে এই প্রেক্ষাগ্রহদুটির মালিক ছিলেন। তিনি একজন সূর সংগ্রাহকও ছিলেন। সিলেট অঞ্চলের সাতানব্বই জন মরমি কবির গান তিনি সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। যখনই সুযোগ পেয়েছেন তখই আত্মনিয়োগ করেছেন সংগ্রহের কাজে। প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে বেড়িয়েছেন। পাঁচদশকের প্রচেষ্টায় তিনি গড়ে তুলেছেন সংগীতের এক অমূল্য ভান্ডার। বাড়ির সামনে ঘরেই ‘নীলম লোকসংগীতালয়’ নামে একটি সংগীতের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন তিনি। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যে ক`জন শিল্পী দীর্ঘদিন ধরে লোকসঙ্গীত চর্চা করছেন এবং লোকসঙ্গীতের ওপর গবেষণা চালিয়ে গেছেন তাদের মধ্যে বিদিত লাল দাস ছিলেন অন্যতম। হাসন রাজার গানে অনুপ্রানিত হয়ে সঙ্গীতের ভূবনে অভিযাত্রা শুরু করা এই শিল্পীর সঙ্গীত চর্চাও শুরু হয় হাসনের গান দিয়েই। যে সময়টাতে হাসন রাজার গান পাওয়া দূরহ ছিল সেই সময়টাতে তিনি তার গান সংগ্রহ করে নিজে গেয়েছেন, অন্যকে দিয়েও গাইয়েছেন। হাসন রাজার গানকে জনপ্রিয় করতে দেশের যে ক’জন শিল্পী অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন বিদিত লাল দাস তাদের মধ্যে অন্যতম। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার স্বপ্ন ছিলো সিলেটে হাসন রাজার উপর একটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় অথবা মরমীকবিদের নিয়ে একটি সংগ্রহশালা করা। সুরমা পারের গান নামে তার একটি বইও বেরিয়েছে। জাতীয় পুরস্কার না পেলেও জনমানুষের ভালোবাসা তিনি পেয়েছেন ঠিকই। সম্মানিতও হয়েছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর গুণীজন সম্বর্ধনা ছাড়াও তিনি দেশে-বিদেশে অসংখ্য পুরস্কার, সংবর্ধনা ও সম্মাননা লাভ করেছেন।

পারিবারিক জীবন

পারিবারিক পরিবেশ তাঁর সঙ্গীত চর্চায় কখনো প্রতিবন্ধকতার কারন হয়ে দাঁড়ায়নি। জীবনের শুরুতে বাবা-মা, ভাইবোন এবং আত্মীয়-স্বজন তাঁকে অগ্রসর হতে আকুণ্ঠ সহায়তা করেছেন। ১৯৬৮ সালে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ে করেন সংগীত অনুরাগী কুমিল্লার মেয়ে কনক রানী দাসকে। বিদিত লাল দাসের বর্তমান পর্যায়ে আসতে জীবনসঙ্গীনি কনক রানী দাসের অবদান অনেকখানি। তাঁর আকাশ ছোঁয়া সাফল্যের পেছনে প্রেরণাদাত্রী তিনি। এই দম্পতির প্রথম সন্তান বিশ্বজিৎ লাল দাস নীলম চার বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করে। এরপর একমাত্র ছেলে বিশ্বদীপ লাল দাসকে তিনি গড়ে তুলেছেন যোগ্য উত্তসূরি হিসেবে।

বড় ছেলে নীলমের মৃত্যু মেনে নিতে পারেন নি বিদিতলাল দাস। তার স্মৃতি তাকে বেদহত করতো অহর্নিশ। ছেলের প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ ২০০২ সালে তিনি সিলেট নগরীর শেখঘাট এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘নীলম লোক সঙ্গীতালয়’। লোক সংগীতের সুস্থ ধারাকে প্রবাহিত করার লক্ষ্যেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন এই বিদ্যালয়। জীবনের শেষ দিকটায় ছাত্র-ছাত্রীদের সান্নিধ্যেই কাটিয়েছেন অধিকাংশ সময়। এই সংগীত স্কুলটিকে কলেজ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন ছিলো তাঁর।

মৃত্যু

বিদিত লাল মুত্রথলী ও ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হন। ২০১২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর অবস্থায় তাকে সিলেটের এলাইড ক্রিটিক্যাল কেয়ার হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছিল। অবস্থার অবনতি ঘটলে ২১ সেপ্টেম্বর তাকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৪ অক্টোবর থেকে তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। ২০১২ সালের ৮ অক্টোবর তিনি ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের পর চালিবন্দরস্থ শশানে তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়।

সম্মাননা

  • বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি গুণীজন পুরস্কার
  • কলকাতায় ভারতীয় লোক সংবর্ধনা
  • সিলেট লোকসঙ্গীত পরিষদ পুরস্কার
  • নজরুল একাডেমি পুরস্কার
  • রাগীব রাবেয়া ফাউন্ডেশন একুশে পদক
  • বাংলাদেশ শিল্পকলাএকাডেমি গুনীজন সংবর্ধনা
  • জাতীয় রাধারমণ দত্ত পদক (মরনোত্তর)
  • হাসন রাজা পদক (মরনোত্তর)
  • একুশে পদক ২০২৪ (মরনোত্তর)

তথ্যসূত্র

Tags:

বিদিত লাল দাস প্রাথমিক জীবনবিদিত লাল দাস কর্মজীবনবিদিত লাল দাস পারিবারিক জীবনবিদিত লাল দাস মৃত্যুবিদিত লাল দাস সম্মাননাবিদিত লাল দাস তথ্যসূত্রবিদিত লাল দাসরাধারমণ দত্তহাছন রাজা

🔥 Trending searches on Wiki বাংলা:

এম. জাহিদ হাসানমানবজমিন (পত্রিকা)হিন্দুধর্মবাংলাদেশের ইউনিয়নডায়াচৌম্বক পদার্থজন্ডিসফারাক্কা বাঁধবাংলাদেশ ছাত্রলীগঅক্ষয় তৃতীয়াদর্শনখিলাফতর‍‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নরেওয়ামিলজলবায়ুসুকুমার রায়উৎপাদন ব্যয় হিসাববিজ্ঞানম্যানচেস্টার সিটি ফুটবল ক্লাবইশার নামাজবাংলাদেশের পৌরসভার তালিকাযৌনসঙ্গমসাকিব আল হাসানফুলশিব নারায়ণ দাসপূর্ণিমা (অভিনেত্রী)অমর সিং চমকিলাভারতের রাষ্ট্রপতিদের তালিকাজাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকালো জাদুপাগলা মসজিদঅনাভেদী যৌনক্রিয়ামহাস্থানগড়এল নিনো০ (সংখ্যা)বাংলাদেশে পালিত দিবসসমূহউমর ইবনুল খাত্তাবইব্রাহিম (নবী)দারুল উলুম দেওবন্দরাজ্যসভাসালমান শাহ২০২২–২৩ নিউজিল্যান্ড পুরুষ ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফর (ডিসেম্বর ২০২২)টাঙ্গাইল জেলাহরপ্পাআন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলতাপমাত্রাকাজী নজরুল ইসলামের রচনাবলিমুর্শিদাবাদ জেলাবক্সারের যুদ্ধবাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টবাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলবাংলাদেশের সংবিধানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্মদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ইউক্রেনপর্যায় সারণিহৃৎপিণ্ডবাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকাদাজ্জালঅষ্টাঙ্গিক মার্গআবু হানিফাস্মার্ট বাংলাদেশনগরায়নবাউল সঙ্গীতপ্রথম মালিক শাহগীতাঞ্জলিপর্নোগ্রাফিপ্রথম বিশ্বযুদ্ধসূরা কাফিরুনইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ঊষা (পৌরাণিক চরিত্র)শীর্ষে নারী (যৌনাসন)বাংলাদেশের সিটি কর্পোরেশনের তালিকাহামাসমহাদেশ অনুযায়ী সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং নির্ভরশীল অঞ্চলসমূহের তালিকাবাংলাদেশ আনসারনকশীকাঁথা এক্সপ্রেসজি২০কুষ্টিয়া জেলাবাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড🡆 More